নারীবাদ কার প্রয়োজন?
নারীবাদ কার প্রয়োজন? (হু নিডস ফেমিনিজম?) হল একটি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ফটো প্রচারণা, যা ২০১২ সালে ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দ্বারা শুরু হয়েছিল। এই প্রচারণাটি নারীবাদ সম্পর্কে ভুল ধারণার উপর আলোকপাত করার এবং আজকের সমাজে নারীবাদের প্রয়োজনীয়তা এবং প্রাসঙ্গিকতা অন্বেষণ করার চেষ্টা করেছিল। টাম্বলারের মাধ্যমে প্রচারণাটি সবচেয়ে বেশি সফল হয়েছিল, তবে প্রচারণাটি ফেসবুক এবং টুইটারেরও দৃষ্টি আকর্ষণ করেছিল।
উৎপত্তি
[সম্পাদনা]ডিউকের ষোলজন শিক্ষার্থী নারীবাদ কার প্রয়োজন? এই প্রচারণাটি কল্পনা করেছিলেন। ডঃ র্যাচেল সিডম্যানের "উইমেন ইন পাবলিক স্ফিয়ার: হিস্ট্রি, থিয়োরি অ্যাণ্ড প্র্যাকটিস" নামক একটি ক্লাসের চূড়ান্ত প্রকল্প হিসেবে তাঁরা এটি নিয়েছিলেন।[১][২] শিক্ষার্থীরা ডিউকের ক্যাম্পাসে নারীবাদী আন্দোলন এবং আজকের সমাজে এর প্রাসঙ্গিকতা সম্পর্কে ভুল ধারণাগুলির সমাধান করতে চেয়েছিলেন। "গুড ওয়ার্ল্ডওয়াইডের সাথে করা একটি সাক্ষাৎকার অনুসারে জানা যায় "সব ধরণের মানুষের কাছে নারীবাদের প্রাসঙ্গিকতা তুলে ধরার আশায়", ডিউক সম্প্রদায়ের মধ্যে এই বিষয়ে একটি সংলাপ প্রচারের আশাও করেছিলেন তাঁরা।"[৩]
ওয়েবসাইট অনুসারে, সদস্যরা "প্রত্যেককে নারীবাদের নিজস্ব সংজ্ঞা তৈরি করার সুযোগ দিয়ে, নারীবাদ কি তা ব্যাখ্যা করতে চেয়েছিলেন।" তাঁরা ক্যাম্পাসের চারপাশে পোস্টার তৈরি করে কাজ শুরু করেছিলেন। সেখানে বিভিন্ন পটভূমির যুবক-যুবতীদের সাদা বোর্ড ধরে থাকতে দেখা গিয়েছিল, যেখানে লেখা ছিল "আমার নারীবাদ দরকার কারণ...", যাতে দেখানো যায় যে প্রচারণার শিরোনাম পোস্টারে চাপিয়ে দেওয়া কোনও "বিশেষ নারীবাদী" বলে কিছু নেই।[৩] বিভিন্ন লিঙ্গ, বর্ণ, যৌন অভিমুখ এবং পটভূমির ব্যক্তিদের কাছে নারীবাদের গুরুত্ব প্রদর্শনের জন্য বিষয়গুলি বেছে নেওয়া হয়েছিল, যা শিক্ষার্থীদের বিশ্বাসকে প্রতিফলিত করে যে "'সাধারণ নারীবাদীদের' অস্তিত্ব নেই" এবং নারীবাদ সকলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, কেবল মহিলাদের জন্য নয়।[১] পোস্টার নকশা করা এবং টাঙানোর পাশাপাশি, শিক্ষার্থীরা ডিউকের ছাত্র-পরিচালিত সংবাদপত্র দ্য ক্রনিকলের জন্য একটি উপ-সম্পাদকীয়ও লিখেছিলেন, যেখানে প্রকল্প এবং তাদের প্রেরণাগুলি ব্যাখ্যা করা হয়েছিল।[১][৩]
শিক্ষার্থীরা "এই মুহূর্তে কথাটি ছড়িয়ে দেওয়ার সবচেয়ে জনপ্রিয় উপায়" হিসেবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের ওপরও নির্ভর করেছিলেন।[৪] শিক্ষার্থীরা প্রকল্পের জন্য যোগাযোগমূলক টাম্বলার, ফেসবুক এবং টুইটার অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছিলেন। যদিও তাঁরা আশা করেছিলেন যে ফেসবুক অ্যাকাউন্টটি প্রকল্পের প্রচারের জন্য প্রধান সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হিসেবে কাজ করবে, তবে টাম্বলার অ্যাকাউন্টটি "সত্যিই সফল হয়েছে।" একজন শিক্ষার্থী জানিয়েছেন যে ফেসবুক পাতার জন্য প্রয়োজনীয় সংযম ছাড়াই সাইটটি আলোচনাকে উৎসাহিত করে।[৫] "নারীবাদ কাদের প্রয়োজন?" -গোষ্ঠী জানিয়েছে যে প্রকল্পটি চালু হওয়ার ৩৬ ঘন্টার মধ্যে ফেসবুক পাতাটি ৪,২০০টিরও বেশি লাইক পেয়েছে, যেখানে টাম্বলার অ্যাকাউন্টটি ২০০০টিরও বেশি বিভিন্ন শহরে প্রায় ১৩,০০০ মানুষ দেখেছে।[৫]
প্রতিক্রিয়া
[সম্পাদনা]ডিউক বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হওয়া প্রচারণা সারা দেশের অনেক কলেজে ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু প্রচারণাটি আগ্রহ জাগিয়ে তুললেও, এর প্রতিক্রিয়াও দেখা দিয়েছিল। ডিউকের ক্যাম্পাসে, অনেক পোস্টার ছিঁড়ে ফেলা হয়েছিল অথবা ভাঙচুর করা হয়েছিল। কিছু ভাঙচুরকারী পোস্টারে "আমার নারীবাদ দরকার কারণ স্যাণ্ডউইচ নিজে নিজে তৈরি হয় না" বা "আমার নারীবাদ দরকার কারণ তাদের খেলাধুলার চেষ্টা করতে দেখা মজার" লেখা পোস্টার যোগ করেছে।[৬] অনলাইন আউটলেটগুলি আন্দোলনের ওপর সাধারণভাবে করা মন্তব্য এবং ব্যক্তিগত মন্তব্য জমা দেওয়ার ক্ষেত্রেও উল্লেখযোগ্য প্রতিক্রিয়ার সম্মুখীন হয়েছে।[৭][৮] সবচেয়ে বড় প্রতিক্রিয়ার ঘটনাগুলির মধ্যে একটি ছিল নারীবাদের বিরুদ্ধে নারী প্রচারণা, যেটি তৈরি করা হয়েছিল। এই দলটি পোস্টার তৈরির মূল প্রচারণার ধারণাটি গ্রহণ করেছিল এবং শব্দগুলি পরিবর্তন করে "আমার নারীবাদের প্রয়োজন নেই..." লিখে পোস্ট করেছিল।
ছড়িয়ে পড়া
[সম্পাদনা]ডিউকে এটি শুরু হওয়ার পর, বিভিন্ন কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য সংস্থা তাদের নিজস্ব প্রচারণা শুরু করে। "নারীবাদ কার প্রয়োজন?" ডিউকের এই মূল প্রচারণাটি একটি স্টার্ট আপ নির্দেশিকা তৈরি করেছিল অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের প্রচেষ্টাকে বাস্তবায়নে সহায়তা করার জন্য।
কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় ছাড়াও, "নারীবাদ কার প্রয়োজন?" আরও অনেক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থা গ্রহণ করেছে। উদাহরণস্বরূপ, ভারতের নারীবাদীরা তাঁদের নিজস্ব টাম্বলার অ্যাকাউন্ট তৈরি করেছেন যাতে তাঁরা ছবি জমা দিতে উৎসাহিত করতে পারেন। "ফেমিনিজম ইন ইণ্ডিয়া", একটি ডিজিটাল নারীবাদী মিডিয়া মঞ্চ, এটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন গবেষণা পণ্ডিত জপলিন পাসরিচা। পাসরিচা দাবি করেছিলেন যে "এফ-শব্দটি উন্মোচন এবং এর চারপাশের সমস্ত নেতিবাচকতা দূর করার জন্য" এই আন্দোলনের প্রয়োজন ছিল।[৯] ২০১৪ সালের ১৫ই এপ্রিল, পাসরিচা দিল্লির ইন্দিরা গান্ধী ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি এবং আম্বেদকর বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি প্রচারণার আয়োজন করেছিলেন, যেখানে ১০০টি ছবির লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রান্ত হয়েছিল।[১০] নিউজিল্যান্ডের ন্যাশনাল কাউন্সিল অফ উইমেন, নর্থ ইয়র্ক উইমেনস সেন্টার এবং ন্যাশনাল ইয়ং ফেমিনিস্ট লিডার কনফারেন্সের মতো সংগঠনগুলি প্রচারণা শুরু করেছে এবং মূল "হু নিডস ফেমিনিজম?" ফেসবুক পাতার মাধ্যমে ছবিগুলি শেয়ার করেছে। ইউকে ফেমিনিস্টা গ্রুপটি তাদের নিজস্ব টাম্বলার এবং ফেসবুক পাতা শুরু করেছে। তারা গ্লাস্টনবেরি ফেস্টিভ্যালের মতো অনুষ্ঠানে ছবি জমা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিল এবং স্কুল ও কলেজগুলিতে তাদের নিজস্ব প্রচারণা শুরু করতে লোকেদের উৎসাহিত করেছিল।[১১][১২]
মূল প্রচারণার মতো, এই নতুন বিষয়বস্তুর প্রচারণাগুলি সমালোচনা এবং প্রতিক্রিয়া পেয়েছে। আল্ট্রিনচাম গ্রামার স্কুল ফর গার্লস- এর ছাত্রীদের এই প্রচারণায় অংশগ্রহণের প্রচেষ্টার ফলে যখন তাদের ছবি অনলাইনে প্রকাশিত হয়েছিল একজন ছাত্রী কিছু মন্তব্যকে "অপমানজনক এবং স্পষ্টতই যৌন মন্তব্যের ধারা" হিসেবে বর্ণনা করেছে; অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে কয়েকজন হুমকিমূলক বার্তা পেয়েছিল।[১৩] শিক্ষার্থী জিনান ইউনিস স্কুলকে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হওয়ার এবং অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীদের সমর্থন করতে ব্যর্থ হওয়ার অভিযোগ করেছে, অন্যদিকে স্কুল একটি বিবৃতি জারি ক'রে শিক্ষার্থীদের অনলাইনে পোস্ট করা "যা তাদের বা স্কুলের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার সাথে ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে" এমন শব্দ বা ছবি সরিয়ে ফেলার সুপারিশ করেছে।[১৩]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- পারিবারিক সহিংসতা
- কাচের সিলিং
- রাজনৈতিক সমকামিতা
- ধর্ষণ সংস্কৃতি
- বিচ্ছিন্নতাবাদী নারীবাদ
- যৌন হয়রানি
- নারীবাদের বিরুদ্ধে নারী
- ইয়েসঅলউইমেন
- মিটু (হ্যাশট্যাগ)
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 3 Allison Beattie; Michelle Burrows (১২ এপ্রিল ২০১৪)। "Who needs feminism?"। The Duke Chronicle। ২৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ Ma, Julia (২০ জুলাই ২০১২)। "Redefining the F-Bomb: Who Needs Feminism?"। Good.is। ২২ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- 1 2 3 Seidman, Rachel (১১ এপ্রিল ২০১৩)। "Who Needs Feminism? One Year And Going Strong"। Women AdvaNCe। ২৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ Legendary Women, Inc. (২০ এপ্রিল ২০১২)। "Duke Students Ask 'Who Needs Feminism?'"। ২৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- 1 2 Petronzio, Matt (১৩ এপ্রিল ২০১২)। "'Who Needs Feminism?' New Tumblr Promotes Gender Equality"। Mashable। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ Callaway, Patton (১৬ এপ্রিল ২০১২)। "Feminism campaign sparks widespread dialogue, backlash"। The Duke Chronicle। ২৩ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ Seidman, Rachel (২৩ আগস্ট ২০১২)। "After Todd Akin comments: Why women – and men – still need feminism"। The Christian Science Monitor। সংগ্রহের তারিখ ২১ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ Team, F. I. I. (১২ মে ২০১৬)। "'I Need Feminism' Campaign by Feminism in India"। Feminism In India (ব্রিটিশ ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৯ জানুয়ারি ২০২১।
- ↑ Team LBN. (২০ এপ্রিল ২০১৪)। "I Need Feminism – Young Research Scholar Spearheads International Movement In Delhi"। Life Beyond Numbers.। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০১৪।
- ↑ "About UK Feminista"। UK Feminista। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৪।
- ↑ "Run a Who Needs Feminism campaign in your school or college"। UK Feminista। ১৯ ডিসেম্বর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৪।
- 1 2 Younis, Jinan (২০ জুন ২০১৩)। "What happened when I started a feminist society at school"। The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ২৩ এপ্রিল ২০১৪।