নাথান কমিশন
নাথান কমিশন ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের উদ্দেশ্যে একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য ১৯১২ সালের ২৭ মে বঙ্গীয় সরকার কর্তৃক গঠিত কমিশন। তেরো সদস্য বিশিষ্ট এই কমিশনের প্রেসিডেন্ট ছিলেন আর. নাথানিয়েল, বার-অ্যাট-ল’।[১]
![]() | |
উদ্দেশ্য | ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা |
---|---|
নেতা | আর. নাথানিয়েল |
ইতিহাস[সম্পাদনা]
১৯১১ সালের ১২ ডিসেম্বর বঙ্গভঙ্গ রদের ঘোষণায় পূর্ব বঙ্গের মুসলমানেরা অত্যন্ত অসন্তুষ্ট হয়। তাদের দৃষ্টিতে বঙ্গভঙ্গ রদ ছিল তাদের অগ্রগতির পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করা। ভাইসরয় লর্ড হার্ডিঞ্জ তাঁদের অসন্তোষের কথা উপলব্ধি করে তা প্রশমনের জন্য ঢাকায় আসেন। নবাব স্যার সলিমুল্লাহ, নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী, শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ও অন্যান্য নেতা সমন্বয়ে গঠিত একটি প্রতিনিধি দল ভাইসরয়-এর সাথে দেখা করে তাঁদের আশঙ্কার কথা ব্যক্ত করেন এবং এতদঞ্চলের মুসলমানদের স্বার্থ রক্ষার জন্য তাঁকে অনুরোধ জানান। বঙ্গভঙ্গ রদের ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার জন্য তাঁরা ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের জোরালো দাবি উত্থাপন করেন।
১৯১২ সালের ৪ এপ্রিল প্রেরিত এক পত্রে ভারত সরকার কর্তৃক ঢাকায় একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত ভারত সচিব অনুমোদন করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে ভারত সরকার বঙ্গীয় সরকারকে সম্ভাব্য ব্যয়ের হিসাবসহ একটি পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা পেশ করতে বলে। ঢাকায় আবাসিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে একটি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের ব্যাপারে ভারত সরকারের আগ্রহের কথা সরকারি সিদ্ধান্তে জোর দিয়ে বলা হয়। শহরের কলেজসমূহ কেন্দ্রীয় ধাঁচের এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত থাকবে, কিন্তু শহরের বাইরের কলেজগুলি এর আওতাভুক্ত হবে না।
নাথান কমিটি অত্যন্ত দ্রুততা ও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করে। ২৫টি বিশেষ সাব-কমিটির পরামর্শ নিয়ে ১৯১২ সালের হেমন্তে বঙ্গীয় সরকারের কাছে কমিটি তার রিপোর্ট দাখিল করে। কমিটি সুপারিশ করে যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় হবে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী চালিত এবং সরকারি অর্থায়নে পুষ্ট একটি রাষ্ট্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়। গণশিক্ষা বিভাগের পরিচালক হবেন এর সরকারি পরিদর্শক; সমস্ত কলেজ ও সমস্ত বিভাগ পরিদর্শনের পূর্ণ ক্ষমতা তাঁর থাকবে। এ পরিকল্পনা থেকে বোঝা যায় যে, ঢাকায় আবাসিক ও শিক্ষাদান কার্যক্রম সম্বলিত একটি বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হবে। কলেজ হবে এর একটি ইউনিট এবং তাতে শিক্ষা ও আবাসিক সুবিধাদি থাকবে। প্রতিটি কলেজে ছাত্রসংখ্যা ৬০০-এর মধ্যে সীমিত থাকবে। সাতটি কলেজ মিলে ২৮৯৯ জন ছাত্রের থাকা ও লেখাপড়ার সুযোগ থাকবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ব্যতীত অন্য ছয়টি কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, জগন্নাথ কলেজ, মোহাম্যাডান কলেজ, উইমেন্স কলেজ, বিত্তবানদের জন্য টিচার্স কলেজ। মোহাম্যাডান কলেজ ইসলামি শিক্ষা প্রদান করবে। কলা ও বিজ্ঞান বিভাগে স্নাতকোত্তর শিক্ষাসহ বিজ্ঞান, ইঞ্জিনিয়ারিং, আইন ও চিকিৎসা বিভাগ খোলার সুপারিশ করেছিল নাথান কমিটি। নাথান কমিটির পরিকল্পনায় ইসলামি শিক্ষা বিভাগ একটি বিশেষ স্থান অধিকার করেছিল। এ বিভাগ পুনর্গঠিত মাদ্রাসা ছাত্রদের বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষাদান করবে।
নাথান কমিটি ইতোমধ্যে স্থাপিত ইঞ্জিনিয়ারিং ও মেডিকেল স্কুলকে কলেজে উন্নীত করার প্রস্তাব করেছিল। এ দুটি কলেজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বিভাগ। একইভাবে ইডেন গার্লস স্কুলকে কলেজে রূপান্তরিত করা হবে; অন্যদিকে টিচার্স ট্রেনিং কলেজ হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অঙ্গ। স্কুল পরিদর্শন ও সেগুলিকে স্বীকৃতিদানের বিষয়টি হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের এখতিয়ারভুক্ত।
নাথান কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী আচার্য, উপাচার্য, সমাবর্তন ও কাউন্সিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ গঠিত হবে। বাংলার গভর্নর হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য। সরকার কর্তৃক উপাচার্য নিযুক্ত হবেন এবং তিনিই হবেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান নির্বাহী। বিশ সদস্যের একটি কাউন্সিল থাকবে; এতে চেয়ারম্যান হবেন উপাচার্য এবং এ কাউন্সিল-ই হবে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ নির্বাহী সংস্থা।
সমাবর্তন ও কাউন্সিল-এ মুসলমানদের প্রতিনিধিত্ব থাকবে। রমনায় অবস্থিত পূর্ববঙ্গ ও আসাম সরকারের সিভিল স্টেশন সংলগ্ন ৪৫০ একর জায়গা নিয়ে পরিকল্পিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস স্থাপনের প্রস্তাব করে নাথান কমিটি।
১৯১৩ সালে কমিটির রিপোর্ট প্রকাশিত হয় এবং একই বছরের ডিসেম্বরে তা ভারত সচিবের চূড়ান্ত অনুমোদন লাভ করে। ১৯১৪ সালে প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হওয়ায় এবং তার ফলে সরকারের ব্যয়-সংকোচনের কারণে নাথান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন অসম্ভব হয়ে পড়ে। অবশ্য পরবর্তীকালে একটি সংশোধিত পরিকল্পনা পেশ করা হয় এবং তা ভারত সরকার ও ভারত সচিব উভয়েরই অনুমোদন লাভ করে এবং ১৯২১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপিত হয়।[১]
কমিশনের সদস্যদের তালিকা[সম্পাদনা]
- আর. নাথানিয়েল, বার-অ্যাট-ল'-প্রেসিডেন্ট
- জি.ডব্লিউ কুচলু
- অ্যাডভোকেট রাসবিহারী ঘোষ
- নবাব সৈয়দ নওয়াব আলী চৌধুরী
- নওয়াব সিরাজুল ইসলাম
- শামসুল উলামা আবু নসর ওহীদ
- উকিল আনন্দচন্দ্র রায়
- অধ্যক্ষ সতীশচন্দ্র আচার্য
- মাওলানা মুহাম্মদ আলি
- অধ্যাপক সি ডব্লিউ পিক
- অধ্যক্ষ এইচ.আর জেমস,
- অধ্যক্ষ ডব্লিউ.এ.টি আর্চবোল্ড,
- অধ্যক্ষ ললিত মোহন চ্যাটার্জী
- ডি.এস ফ্রেজার- সেক্রেটারি
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
- ↑ ক খ "নাথান কমিশন - বাংলাপিডিয়া"। bn.banglapedia.org। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-২৬।