বিষয়বস্তুতে চলুন

নর্ম্যানদের ইংল্যান্ড বিজয়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
১০৬৬ সালের নর্ম্যান বিজয়ের সময় গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাগুলির স্থান

নর্ম্যান বিজয় (ইংরেজি: Norman Conquest বা the Conquest) ছিল খ্রিস্টীয় একাদশ শতাব্দীতে নর্ম্যান্ডির ডিউক তথা পরবর্তীকালে "দিগ্বিজয়ী" আখ্যাপ্রাপ্ত প্রথম উইলিয়ামের নেতৃত্বে সহস্রাধিক নর্ম্যান, ব্রেটন, ফ্লেমিশ এবং অন্যান্য ফরাসি প্রদেশের অধিবাসীদের এক যৌথ বাহিনীর ইংল্যান্ড আক্রমণ ও অধিকার।

নিঃসন্তান অ্যাংলো-স্যাক্সন রাজা এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের সঙ্গে নিজের পারিবারিক সম্পর্কের ভিত্তিতে উইলিয়াম ইংল্যান্ডের সিংহাসন দাবি করেছিলেন। সম্ভবত এডওয়ার্ডই উইলিয়ামের সিংহাসন লাভের আশাকে উৎসাহ দান করেছিলেন। ১০৬৬ সালের জানুয়ারি মাসে এডওয়ার্ডের মৃত্যু ঘটলে শ্যালক হ্যারোল্ড গডউইনসন সিংহাসনের উত্তরাধিকার প্রাপ্ত হয়েছিলেন। সেই বছরই সেপ্টেম্বর মাসে নরওয়েজিয়ান রাজা হারাল্ড হারড্রাডা উত্তর ইংল্যান্ড আক্রমণ করেন। ২০ সেপ্টেম্বর ফুলফোর্ডের যুদ্ধে তিনি জয়লাভ করলেও ২৫ সেপ্টেম্বর স্ট্যামফোর্ড ব্রিজের যুদ্ধে গডউইনসনের বাহিনীর হাতে হারড্রাদা পরাজিত ও নিহত হন। তিন দিন পরে ২৮ সেপ্টেম্বর সহস্রাধিক লোক ও শতাধিক জাহাজ নিয়ে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের সাসেক্সের পেভেনসেতে উইলিয়ামের বাহিনী অতরণ করে। হ্যারোল্ড উত্তরে নিজের বাহিনীর একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ রেখে স্বয়ং দক্ষিণে একটি সামরিক বাহিনী নিয়ে উপস্থিত হন উইলিয়ামকে আটকাবার জন্য। ১৪ অক্টোবর হেস্টিংসের যুদ্ধে হ্যারোল্ডের বাহিনী উইলিয়ামের নেতৃত্বাধীন আক্রমণকারীদের মুখোমুখী হয়। উইলিয়ামের বাহিনী হ্যারোল্ডকে পরাজিত করে। যুদ্ধে হ্যারোল্ড নিহত হন এবং উইলিয়াম রাজা হন।

উইলিয়ামের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বীরা নির্মূল হলেও পরবর্তী কয়েক বছর তিনি একাধিক বিদ্রোহের সম্মুখীন হন। ১০৭২ সালের পরেই তিনি ইংল্যান্ডের সিংহাসন সুরক্ষিত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। বাধাদানকারী ইংরেজ অভিজাতশ্রেণির ভূসম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করা হয়; কয়েকজন অভিজাত নির্বাসনে পালিয়ে যান। নতুন রাজ্যকে নিয়ন্ত্রণ করার জন্য উইলিয়াম নিজের অনুগামীদের ভূমি দান করেন সারা রাজ্য জুড়ে প্রধান সামরিক ঘাঁটিগুলিতে দুর্গ নির্মাণ করেন। ইংল্যান্ডের অধিকাংশ অংশে এবং ওয়েলসের অংশবিশেষে যে "মহাসমীক্ষা" চালানো হয়েছিল তার পাণ্ডুলিপি নথি ডোমসডে বুক সম্পূর্ণ হয় ১০৮৬ সালে। নর্ম্যান বিজয়ের অন্যান্য ফলশ্রুতির মধ্যে দরবার ও সরকার ব্যবস্থা, অভিজাত শ্রেণির ভাষা হিসেবে নর্ম্যান ভাষার প্রচলন এবং স্বয়ং রাজার কাছ থেকে ভূসম্পত্তি অর্জন করায় উচ্চবিত্ত সমাজের শ্রেণিচরিত্রের পরিবর্তন বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। কৃষিজীবী সমাজ ও গ্রাম্য জীবনেও ধীরে ধীরে পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে থাকে: মনে করা হয় যে প্রধান পরিবর্তনটি ছিল ক্রীতদাস প্রথার আনুষ্ঠানিক নির্মূলীকরণ, যার সঙ্গে নর্ম্যান বিজয়ের যোগ থাকতেও পারে আবার নাও পারে। সরকারের গঠনতন্ত্রে পরিবর্তন সামান্যই ঘটেছিল, কারণ নতুন নর্ম্যান প্রশাসনে অ্যাংলো-স্যাক্সন সরকারের অনেক বিষয়ই গৃহীত হয়েছিল।

ত্রয়োদশ শতাব্দীর চিত্রকলায় রোলো (উপরে) ও তাঁর দুই বংশধর প্রথম উইলিয়াম লংসওয়ার্ডনর্ম্যান্ডির প্রথম রিচার্ড

৯১১ খ্রিস্টাব্দে ক্যারোলিঙ্গিয়ান ফরাসি শাসক চার্লস দ্য সিম্পল সেন্ট-ক্লেয়ার-সার-এপ্টের চুক্তির অংশ হিসেবে এক দল ভাইকিংকে তাদের নেতা রোলোর অধীনে নর্ম্যান্ডিতে বসতি স্থাপন করার অনুমতি দেন। ভূমির বিনিময়ে রোলোর অধীনস্থ নর্সম্যানরা ভবিষ্যৎ ভাইকিং আক্রমণকারীদের হাত থেকে উপকূল অঞ্চলকে রক্ষা করবে বলে ঠিক করা হয়েছিল।[] তাদের বসতিস্থাপন সফল বলে প্রমাণিত হয়েছিল। এই অঞ্চলের ভাইকিংরা "নর্থমেন" (ইংরেজি: Northmen) নামে পরিচিত ছিল। এই "নর্থমেন" থেকেই "নর্ম্যান্ডি" (ইংরেজি: Normandy) ও "নর্ম্যান" (ইংরেজি: Normans) শব্দ দু’টির উৎপত্তি ঘটে।[] ফরাসিরা নর্ম্যানদের নিজ সমাজের অঙ্গীভূত করে নিলে নর্ম্যানরাও দ্রুত স্থানীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করে। পৌত্তলিকতাবাদ পরিত্যাগ করে তারা খ্রিস্টধর্মে ধর্মান্তরিত হয়।[] তারা তাদের নতুন দেশের ল্যাংগ্যু ডি’অইল গ্রহণ করে এবং তাদের নিজস্ব নর্স ভাষা থেকে নানা বৈশিষ্ট্য তাতে সংযোজিত করে সেটিকে নর্ম্যান ভাষায় পরিণত করে। স্থানীয় অধিবাসীদের সঙ্গে তারা বৈবাহিক সম্পর্কে আবদ্ধ হয়[] এবং যে অঞ্চল তাদের দান করা হয়েছিল সেটিকে ভিত্তি করে এবং বেসিন, কোটেনটিন উপদ্বীপঅ্যাভ্রাঞ্চেস সহ কিছু অঞ্চল অধিকার করে তারা ডাচির সীমান্ত পশ্চিম দিকে প্রসারিত করে।[]

১০০২ সালে ইংরেজ রাজা এথেলরেড দি আনরেডি নর্ম্যান্ডির ডিউক দ্বিতীয় রিচার্ডের ভগিনী এমাকে বিবাহ করেন।[] এথেলরেড ও এমার পুত্র এডওয়ার্ড দ্য কনফেসর বহু বছর নর্ম্যান্ডিতে নির্বাসিত জীবন যাপন করার পর ১০৪২ সালে ইংল্যান্ডের সিংহাসনে আরোহণ করেন।[] এর ফলে ইংল্যান্ডের রাজনীতিতে একটি শক্তিশালী নর্ম্যান স্বার্থ প্রতিষ্ঠিত হয়, কারণ এডওয়ার্ড সমর্থন লাভের আশায় তাঁর পূর্বতন প্রজাদের বহুল সংখ্যায় একত্রিত করেছিলেন এবং নর্ম্যান সভাসদ, সৈন্য ও যাজকদের এনে ক্ষমতা প্রদান করেছিলেন। বিশেষত চার্চে এডওয়ার্ড নিজ মনোনীত ব্যক্তিদের বিশেষ গুরুত্ব সহকারে স্থান দিয়েছিলেন। তিনি ছিলেন নিঃসন্তান। সপুত্র গডউইনের (ওয়েসেক্সের আর্ল) সঙ্গে বিবাদে জড়িয়ে পড়ে এডওয়ার্ড হয়তো নর্ম্যান্ডির ডিউক উইলিয়ামের ইংল্যান্ডের রাজা হওয়ার আশাকে উৎসাহিত করেছিলেন।[]

১০৬৬ খ্রিস্টাব্দের গোড়ার দিকে রাজা এডওয়ার্ডের মৃত্যুর পরে স্পষ্ট উত্তরাধিকারের অভাবে ইংল্যান্ডের সিংহাসনের দাবিদারদের মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত ঘটে।[] এডওয়ার্ডের ঠিক পরবর্তী উত্তরসূরি ছিলেন এসেক্সের আর্ল হ্যারোল্ড গডউইনসন। ইংরেজ অভিজাতবর্গের মধ্যে তিনিই ছিলেন সর্বাপেক্ষা ধনী ও সর্বাপেক্ষা শক্তিশালী ব্যক্তি। ইংল্যান্ডের উইটেনাগেমট কর্তৃক তিনিই রাজা নির্বাচিত হন এবং ইয়র্কের আর্চবিশপ এয়াল্ডরেড গডউইনসনের রাজ্যাভিষেক সম্পন্ন করেন। যদিও নর্ম্যান বিবৃতি অনুযায়ী অনুষ্ঠানটি সম্পন্ন করেছিলেন ক্যানন-বহির্ভূতভাবে নির্বাচিত ক্যান্টারবেরির আর্চবিশপ স্টিগ্যান্ড[][১০] অনতিকালের মধ্যেই দুই শক্তিশালী প্রতিবেশী শাসকের প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়েন হ্যারোল্ড। ডিউক উইলিয়াম দাবি করেন যে রাজা এডওয়ার্ড তাঁকে সিংহাসন দেবেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন এবং হ্যারোল্ড এই চুক্তিতে শপথ গ্রহণ করেছিলেন।[১১] এদিকে নরওয়ের রাজা তৃতীয় হ্যারাল্ড (যিনি সাধারণভাবে হ্যারাল্ড হারড্রাডা নামে পরিচিত) দাবি করেন যে, হ্যারাল্ডের পূর্বসূরি ম্যাগনাস দ্য গুড ও পূর্ববর্তী ইংরেজ রাজা হার্থাকনুট এই মর্মে চুক্তি করেছিলেন যে, উভয়ের মধ্যে কেউ যদি নিঃসন্তান অবস্থায় মারা যান, তাহলে অপর জন ইংল্যান্ড ও নরওয়ে উভয় দেশেরই অধিপতি হবেন।[১২][] ইংল্যান্ড আক্রমণ করার জন্য উইলিয়াম ও হ্যারোল্ড উভয়েই কালবিলম্ব না করে বাহিনী ও জাহাজ একত্র করতে শুরু করেন।[১৬][]

টোসটিগের আকস্মিক আক্রমণ ও নরওয়েজিয়ান বহিরাক্রমণ

[সম্পাদনা]

১০৬৬ সালের গোড়ার দিকে হ্যারোল্ডের নির্বাসিত ভ্রাতা টোসটিগ গডউইনসন ফ্লেন্ডারদের একটি নৌবহর জোগাড় করে দক্ষণপূর্ব ইংল্যান্ডে আকস্মিক হামলা চালান। পরে ওর্কনির অন্যান্য জাহাজগুলিও সেই বাহিনীর সঙ্গে যোগ দেয়।[] হ্যারোল্ডের নৌবাহিনীর ভয়ে টোসটিগ উত্তর দিকে সরে আসেন এবং পূর্ব অ্যাংলিয়ালিংকনশায়ারে আকস্মিক হামলা চালান। কিন্তু মার্সিয়ার আর্ল এডউইন ও নর্থামব্রিয়ার আর্ল মোরকার ভ্রাতৃদ্বয় টোসটিগের জাহাজগুলিকে বিতাড়িত করতে সক্ষম হন। অনুগামীদের অধিকাংশ টোসটিগকে পরিত্যাগ করলে তিনি স্কটল্যান্ডে পালিয়ে যান এবং গ্রীষ্মকালটি সেখানে অতিবাহিত করে নতুন বাহিনী সংগ্রহ করতে থাকেন।[২৩][] দক্ষিণ উপকূলে উইলিয়ামের আক্রমণের প্রতীক্ষায় একটি বৃহৎ সৈন্যবাহিনী ও নৌবহর নিয়ে গ্রীষ্ম অতিবাহিত করেন রাজা হ্যারোল্ড। কিন্তু সেই সেনাবাহিনীর একটি বড়ো অংশ সামরিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত হলেও নিয়মিত সেনাবাহিনীর অংশ ছিল না। তাদের ফসল কাটার মরসুম উপস্থিত হওয়ায় ৮ সেপ্টেম্বর হ্যারোল্ড তাদের চলে যাওয়ার অনুমতি দেন।[২৪]

সেপ্টেম্বর মাসের গোড়ার দিকে হারড্রাডা সম্ভবত ১৫,০০০ লোক বহনকারী তিনশোরও বেশি জাহাজ নিয়ে উত্তর ইংল্যান্ড আক্রমণ করেন। টোসটিগের বাহিনী কর্তৃক হ্যারাল্ডের বাহিনী আরও বর্ধিত হয়, কারণ টোসটিগ নরওয়ের রাজার সিংহাসনের দাবিকে সমর্থন জানিয়েছিলেন। ইয়র্কের দিকে অগ্রসর হওয়ার সময় ২০ সেপ্টেম্বর ফুলফোর্ডের যুদ্ধে নরওয়ের বাহিনী এডউইন ও মোরকারের নেতৃত্বাধীন উত্তর ইংল্যান্ডের একটি সেনাবাহিনীকে পরাজিত করে।[২৫] যাতে হ্যারোল্ড দক্ষিণ থেকে এসে উপস্থিত হওয়ার আগেই নরওয়ের বাহিনীকে যুদ্ধে লিপ্ত করে তোলা যায়, সেই জন্য দুই আর্ল ছুটে যান। হ্যারোল্ড গডউইনসন এডউইন ও মোরকারের ভগিনী এয়াল্ডগিথকে বিবাহ করেছিলেন। তা সত্ত্বেও দুই আর্ল সম্ভবত হ্যারোল্ডকে বিশ্বাস করতেন না এবং রাজা টোসটিগকে মোরকারের স্থলাভিষিক্ত করতে পারেন এমন ভয় পেয়েছিলেন। সর্বশেষ ফলশ্রুতিতে দুই আর্লের বাহিনী বিধ্বংস হয় এবং ১০৬৬ সালের অবশিষ্ট অভিযানগুলিতে অংশগ্রহণ করার ক্ষমতা হারায়। দুই আর্ল অবশ্য প্রাণে বেঁচে যান।[২৬]

হারড্রাডা ইয়র্কে উপস্থিত হলে ইয়র্ক আত্মসমর্পণ করে। শহরের প্রধান ব্যক্তিবর্গকে পণবন্দী করার পর ২৪ সেপ্টেম্বর নরওয়েবাসীরা পূর্ব দিকে স্ট্যামফোর্ড ব্রিজ নামে এক ছোটো গ্রামে সরে আসে।[২৭] সম্ভবত সেপ্টেম্বরের মধ্যভাগেই নরওয়ের আক্রমণের কথা জানতে পেরে রাজা হ্যারোল্ড উত্তরে ছুটে গিয়েছিলেন এবং গিয়েই বাহিনী সংগ্রহ করে ফেলেছিলেন।[২৮] রাজকীয় সেনাবাহিনী দৈনিক গড়ে ২৫ মাইল (৪০ কিলোমিটার) পথ অতিক্রম করে লন্ডন থেকে সম্ভবত নয় দিনের মধ্যে ইয়র্কে উপস্থিত হয়েছিল। ২৫ সেপ্টেম্বর ভোরে বাহিনী নিয়ে ইয়র্কে পৌঁছে হ্যারোল্ড নরওয়েবাসীরা কোথায় রয়েছে তা জানতে পারেন।[২৯] এরপর ইংরেজ বাহিনী আক্রমণকারীদের অতর্কিতে আক্রমণ করে স্ট্যামফোর্ডের যুদ্ধে তাদের পরাজিত করে। নরওয়ের হ্যারাল্ড ও টোসটিগ উভয়েই নিহত হন। নরওয়েবাসীদের ক্ষয়ক্ষতি এতটাই হয়েছিল মূল ৩০০টি জাহাজের মাত্র ২৪টির প্রয়োজন পড়েছিল জীবিতদের ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য। অবশ্য ইংরেজদেরও যথেষ্ট ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। হ্যারোল্ডের বাহিনী প্রচণ্ড আঘাতে দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং ইংলিশ চ্যানেল থেকে অনেকটা দূরে থেকে যায়।[২৮]

পাদটীকা

[সম্পাদনা]
  1. হার্থাকনুট ছিলেন রাজা মহামতি কানুট ও নর্ম্যান্ডির এমার পুত্র, এবং সেই সূত্রে এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের সৎ-ভাই। ১০৪০ থেকে ১০৪২ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত রাজ্য শাসন করার পর তিনি মারা যান নিঃসন্তান অবস্থায়।[১৩] হার্থাকনুটের পিতা কানুট ১০১৬ খ্রিস্টাব্দে এথেলরেডের পুত্র এডমন্ড আয়রনসাইডকে পরাজিত করে ইংল্যান্ডের সিংহাসন অধিকার করেছিলেন এবং এথেলরেডের বিধবা পত্নী এমাকে বিবাহ করেছিলেন।[১৪] ১০৪২ খ্রিস্টাব্দে হার্থাকনুটের মৃত্যুর পর ম্যাগনাস ইংল্যান্ড আক্রমণের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে শুরু করেন। কিন্তু ১০৪৭ সালে ম্যাগনাসের মৃত্যু ঘটলে সেই আক্রমণের সম্ভাবনা বিনষ্ট হয়।[১৫]
  2. অপর প্রতিদ্বন্দ্বীরা পরে এগিয়ে এসেছিলেন। প্রথমে আসেন এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের ভ্রাতুষ্পুত্রের পুত্র এডগার এথেলিং, তিনি ছিলেন রাজা এডমন্ড আয়রনসাইডের পিতৃগোত্রজাত এক বংশধর। এডওয়ার্ড আয়রনসাইডের পুত্র এডওয়ার্ড দি এক্সাইল ছিলেন এডগার এথেলিং। কানুট কর্তৃক ইংল্যান্ড বিজয়ের পর এডওয়ার্ড দি এক্সাইল যখন হাঙ্গেরিতে পালিয়ে যান, তখন সেখানেই এডগার এথেলিং-এর জন্ম হয়। পরে এডগারের পরিবারবর্গ ইংল্যান্ডে ফিরে এলে এবং ১০৫৭ খ্রিস্টাব্দে এডওয়ার্ড দি এক্সাইলের মৃত্যু ঘটলে[১৭] সিংহাসনে এডগারের দাবি জোরালো হয়ে ওঠে। কিন্তু এডওয়ার্ড দ্য কনফেসরের মৃত্যুর সময় তিনি ছিলেন তেরো বা চোদ্দো বছরের এক নাবালক। এদিকে পারিবারিক সমর্থনও জোরালো না হওয়ায় এডগারের দাবি উইটেনাগেমোট কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়।[১৮] সুইয়েন ফোর্কবিয়ার্ডের পৌত্র তথা কানুটের ভ্রাতুষ্পুত্র ডেনমার্কের দ্বিতীয় সুয়েন ছিলেন সিংহাসনের অপর দাবিদার।[১৯] কিন্তু তিনি ১০৬৯ সালের আগে নিজের দাবি উত্থাপন করেননি।[২০] ১০৬৬ সালের গোড়ার দিকে টোসটিগ গডউইনসনের আক্রমণ সম্ভবত ছিল সিংহাসনের দাবি উত্থাপনের অন্যতম সূত্রপাত। কিন্তু এডউইনমোরকারের হাতে পরাজিত এবং নিজের অধিকাংশ অনুগামীর দ্বারা পরিত্যক্ত হয়ে তিনি নিজ বাহিনী হ্যারাল্ড হারড্রাডাকে প্রদান করেন।[২১]
  3. ইতিপূর্বে টোসটিগ ছিলেন নর্থামব্রিয়ার আর্ল। ১০৬৫ সালের শেষ দিকে একটি নর্থামব্রিয়ান বিদ্রোহের ফলে তিনি সেই পদ থেকে অপসারিত হয়েছিলেন। রাজা এডওয়ার্ড বিদ্রোহীদের পক্ষ অবলম্বন করলে টোসটিগ ফ্লেন্ডারসে নির্বাসনে চলে যান।[২২]
  4. কথিত আছে, স্কটল্যান্ডের রাজা তৃতীয় ম্যালকম ছিলেন টোসটিগের অন্তরঙ্গ বন্ধু।[২২]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বেটস, নর্ম্যান্ডি বিফোর ১০৬৬, পৃ. ৮–১০
  2. ক্রাউচ, নর্ম্যানস, পৃ. ১৫–১৬
  3. বেটস, নর্ম্যান্ডি বিফোর ১০৬৬, পৃ. ১২
  4. বেটস, নর্ম্যান্ডি বিফোর ১০৬৬, পৃ. ২০–২১
  5. হ্যালাম ও এভারার্ড, ক্যাপেশিয়ান ফ্রান্স, পৃ. ৫৩
  6. উইলিয়ামস, এথেলরেড দি আনরেডি, পৃ. ৫৪
  7. হাসক্রফট, রুলিং ইংল্যান্ড পৃ. ৩
  8. স্ট্যাফোর্ড, ইউনিফিকেশন অ্যান্ড কনকোয়েস্ট পৃ. ৮৬–৯৯
  9. হিয়াম, ডেথ অফ অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ড, পৃ. ১৬৭–১৮১
  10. ওয়াকার, হ্যারোল্ড পৃ. ১৩৬–১৩৮
  11. বেটস, উইলিয়াম দ্য কনকারার, পৃ. ৭৩–৭৭
  12. হিয়াম, ডেথ অফ অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ড পৃ. ১৮৮–১৯০
  13. কিনেস, "হার্থাকনুট", ব্ল্যাকওয়েল এনসাইক্লোপিডিয়া অফ অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ড
  14. হাসক্রফট, নর্ম্যান কনকোয়েস্ট, পৃ. ৮৪
  15. স্টেনটন, অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ড, পৃ. ৪২৩–৪২৪
  16. হাসক্রফট, রুলিং ইংল্যান্ড, পৃ. ১২–১৪
  17. হাসক্রফট, নর্ম্যান কনকোয়েস্ট, পৃ. ৯৬–৯৭
  18. হাসক্রফট, নর্ম্যান কনকোয়েস্ট, পৃ. ১৩২–১৩৩
  19. স্ট্যাফোর্ড, ইউনিফিকেশন অ্যান্ড কনকোয়েস্ট, পৃ. ৮৬–৮৭
  20. বেটস, উইলিয়াম দ্য কনকারার, পৃ. ১০৩–১০৪
  21. টমাস, নর্ম্যান কনকোয়েস্ট, পৃ. ৩৩–৩৪
  22. স্টেনটন, অ্যাংলো-স্যাক্সন ইংল্যান্ড পৃ. ৫৭৮–৫৮০
  23. ওয়াকার, হ্যারোল্ড, পৃ. ১৪৪–১৪৫
  24. ওয়াকার, হ্যারোল্ড, পৃ. ১৪৪–১৫০
  25. ওয়াকার, হ্যারোল্ড, পৃ. ১৫৪–১৫৮
  26. ম্যারেন, ১০৬৬, পৃ. ৬৫–৭১
  27. ম্যারেন, ১০৬৬, পৃ. ৭৩
  28. ওয়াকার, হ্যারোল্ড পৃ. ১৫৮–১৬৫
  29. ম্যারেন, ১০৬৬, পৃ. ৭৪–৭৫

উল্লেখপঞ্জি

[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]

টেমপ্লেট:নর্ম্যানদের ইংল্যান্ড বিজয় টেমপ্লেট:ইংল্যান্ডের সামরিক ইতিহাস টেমপ্লেট:ইংল্যান্ড