বিষয়বস্তুতে চলুন

নরওয়ের অর্থনীতি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নরওয়ের অর্থনীতি
পরিসংখ্যান
জিডিপি
  • বৃদ্ধি $৫০৬.৪৭ বিলিয়ন (নমিনাল জিডিপি;২০২৫ সালে আনুমানিক)[]
  • বৃদ্ধি $৫৯৭.৪২ বিলিয়ন (পিপিপি; ২০২৫ সালে আনুমানিক)[]
জিডিপি ক্রম

মুদ্রা অনুল্লেখিত থাকলে তা মার্কিন ডলার এককে রয়েছে বলে ধরে নিতে হবে।
নরওয়ের বন্ড                      ১০ বছর                      ৫ বছর                      ১ বছর                      ৬ মাস                      ৩ মাস
নরওয়ের জিডিপি, ১৯৭৯ থেকে ২০০৪ সাল।

নরওয়ের অর্থনীতি অত্যন্ত উন্নত মিশ্র অর্থনীতির উদাহরণ, যেখানে কৌশলগত ক্ষেত্রে রাষ্ট্রীয় মালিকানা রয়েছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চক্রের দ্বারা বিভিন্ন সময়ে নেতিবাচক ভাবে প্রভাবিত হলেও, শিল্পবিপ্লবের পর থেকেই নরওয়ের অর্থনীতিতে জোরালো প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। অন্যান্য ইউরোপীয় দেশের তুলনায় দেশটির জীবনযাত্রার মান খুবই উচ্চ। নরওয়ের আধুনিক উৎপাদন ও কল্যাণ ব্যবস্থা প্রাকৃতিক সম্পদ, বিশেষ করে উত্তর সাগরের তেল উত্তোলনের মাধ্যমে উৎপাদিত অর্থের উপর নির্ভর করে। [][][][] OECD সদস্য দেশগুলির মধ্যে, নরওয়ের সামাজিক নিরাপত্তা ব্যবস্থা তুলনামূলকভাবে খুবই ভাল; ২০২২ সালে সামাজিক ব্যয় OECD গড়ের নিচে ছিল এবং জিডিপির প্রায় ২০.৭% ছিল। []

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

শিল্প বিপ্লবের পূর্বে

[সম্পাদনা]

নরওয়ে ছিল ভাইকিং যুগে তিনটি স্ক্যান্ডিনেভিয়ান রাজ্যের (অন্য দুটি হলো ডেনমার্ক এবং সুইডেন) মধ্যে সবচেয়ে দরিদ্র।[]

শিল্প বিপ্লবের পূর্বে, নরওয়ের অর্থনীতি মূলত কৃষিকাজ, কাষ্ঠশিল্প এবং মাছ ধরার উপর নির্ভরশীল ছিল। হেডেমার্কেন এবং অস্টফোল্ডের কিছু উর্বর ভূমি ছাড়া অন্য সব জায়গায় কেবল বার্লি, রাই এবং ওটস চাষ হতো; গবাদি পশু ছিল ভেড়া, ছাগল, শূকর, হাঁস-মুরগি ইত্যাদি। মধ্য এবং উত্তর নরওয়ের কিছু এলাকায়, সামি জনগোষ্ঠী রেনডিয়ার পালনের মাধ্যমে জীবিকা নির্বাহ করত। উপকূলের চারপাশে মাছ ধরা ছিল বিপজ্জনক কাজ, যদিও হেরিং, কড, হ্যালিবাট, এবং অন্যান্য ঠান্ডা জলের মাছ প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যেত। ১৮শ শতাব্দীতে কোপেনহেগেনের ধর্মযাজক এবং রাজার প্রচারের পর নরওয়েতে আলুর প্রবর্তন হয়।

নরওয়ের অর্থনৈতিক অবস্থা সামন্ততন্ত্র গঠনের জন্য উপযোগী ছিল না। তা সত্বেও কিছু রাজা তাদের অনুগত প্রজাদের জমিদারিত্ত্ব পুরস্কার হিসেবে দিতেন। স্ব-মালিকানাধীন কৃষকরা ছিলেন—এবং এখনও আছেন—নরওয়ের কৃষিতে কাজের প্রধান একক, কিন্তু ১৯শ শতাব্দীর দিকে কৃষকরা কৃষির জন্য উপলব্ধ জমির অভাবে পড়েন। অনেক কৃষক পরিবার ভূমিহীন কৃষক হিসেবে দারিদ্র্যের মধ্যে পড়ে এবং এদের অনেকেই উত্তর আমেরিকায় চলে যায়।

শিল্প বিপ্লব

[সম্পাদনা]
মূলধন গঠন ১৮৬৫–২০০৩ Source: Statistics Norway

কংসবার্গ, রোরোস, এবং লোকেন-এ খনির কাজ ছাড়াও, শিল্পায়ন এসেছিল ১৯শ শতাব্দীর মাঝামাঝি নরওয়েতে নির্মিত প্রথম টেক্সটাইল মিলের সাথে।

শিল্পগুলি কৃষি খাত থেকে স্থানচ্যুত ব্যক্তিদের জন্যও কর্মসংস্থানের সুযোগ প্রদান করেছিল। শিল্প থেকে প্রাপ্ত মজুরি কৃষি থেকে প্রাপ্ত মজুরির চেয়ে বেশি হওয়ায়, চাষের জমির হ্রাস এবং গ্রামীণ জনসংখ্যার ধরণে দীর্ঘমেয়াদী প্রবণতা শুরু হয়। শ্রমিক শ্রেণি নরওয়েতে স্বতন্ত্র হয়ে ওঠে, যাদের নিজস্ব পাড়া, সংস্কৃতি, এবং রাজনীতি ছিল।

সামাজিক গণতান্ত্রিক সংস্কার

[সম্পাদনা]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, নরওয়েজীয় শ্রমিক দল, এইনার গেরহার্ডসেনের প্রধানমন্ত্রিত্বে, আয় বণ্টন সমান করা, দারিদ্র্যতা নির্মূল, সামাজিক পরিষেবা যেমন অবসর, চিকিৎসা সকলের জন্য নিশ্চিত করা, এবং মূলধনকে জনসাধারণের কল্যাণে ব্যবহারের লক্ষ্যে বেশ কিছু সামাজিক গণতান্ত্রিক সংস্কার শুরু করে।

উচ্চ আয়কর, মূল্য সংযোজন করের প্রবর্তন, এবং বিভিন্ন বিশেষ সারচার্জ এবং কর নরওয়েকে বিশ্বের সবচেয়ে বেশি কর আরোপিত অর্থনীতিগুলির মধ্যে একটি করে তোলে। কর্তৃপক্ষ বিশেষ করে অটোমোবাইল, তামাক, অ্যালকোহল, প্রসাধনী ইত্যাদির উপর অতিরিক্ত কর আরোপ করে।

নরওয়ের দীর্ঘমেয়াদী সামাজিক গণতান্ত্রিক নীতি, তথ্যের ব্যাপক সরকারি ট্র্যাকিং, এবং এর জনসংখ্যার সমরূপতা অর্থনৈতিক অধ্যয়নের জন্য বিশেষভাবে উপযোগী ছিল, এবং নরওয়ে থেকে একাডেমিক গবেষণা এই যুগে ম্যাক্রোইকনমিক্সের ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখতে প্রমাণিত হয়েছিল। যখন নরওয়ে একটি পেট্রোলিয়াম রপ্তানিকারক দেশ হয়ে ওঠে, তখন অর্থনৈতিক প্রভাবগুলি আরও অধ্যয়নের অধীনে আসে।

পেট্রোলিয়াম এবং শিল্পায়ন-পরবর্তী যুগ

[সম্পাদনা]

তেল রপ্তানি

[সম্পাদনা]

১৯৬৩ সালের মে মাসে, নরওয়ে উত্তর সাগরে প্রাকৃতিক সম্পদের উপর সার্বভৌম অধিকার দাবি করে। ১৯ জুলাই ১৯৬৬ ওশান ট্রাভেলার তাদের প্রথম কূপ খনন করে।[] ১৯৬৭ সালে বাল্ডার তৈলক্ষেত্র-এ প্রথম তেল পাওয়া যায়, যা উৎসিরা হাই-এর পাশে, স্টাভাঙ্গার থেকে প্রায় ১৯০ কিমি পশ্চিমে অবস্থিত।[] ওশান ভাইকিং ২১ আগস্ট ১৯৬৯-এ তেল আবিষ্কার করে।[] ১৯৬৯ সালের শেষ নাগাদ, স্পষ্ট বোঝা যায় যে উত্তর সাগরে প্রচুর তেল এবং গ্যাস মজুদ রয়েছে।

ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ না দেওয়ার পক্ষে গণভোটের পটভূমিতে, নরওয়েজীয় শিল্প মন্ত্রণালয়, ওলা স্কিয়াক ব্রেকের নেতৃত্বে দ্রুত একটি জাতীয় শক্তি নীতি প্রতিষ্ঠা করে। নরওয়ে ওপেক-এর বাইরে থাকার, বিশ্ব বাজারের সাথে তেলের দাম সমন্বয় করার, এবং রাজস্ব – যা "মুদ্রা উপহার" নামে পরিচিত – বুদ্ধিমত্তার সাথে ব্যয় করার সিদ্ধান্ত নেয়। নরওয়েজীয় সরকার নিজস্ব তেল কোম্পানি, স্ট্যাটয়েল (এখন ইকুইনর নামে পরিচিত), প্রতিষ্ঠা করে এবং নরস্ক হাইড্রো এবং সদ্যগঠিত সাগা পেট্রোলিয়াম-কে খনন এবং উৎপাদনের অধিকার প্রদান করে। পেট্রোলিয়াম রপ্তানির উপর ৭৮% প্রান্তিক হারে কর আরোপ করা হয় (২৪% স্ট্যান্ডার্ড কর্পোরেট কর, এবং ৫৪% বিশেষ পেট্রোলিয়াম কর)।[১০]

উত্তর সাগর উৎপাদন এবং অনুসন্ধানের জন্য অনেক প্রযুক্তিগত চ্যালেঞ্জ উপস্থাপন করে, এবং নরওয়েজিয়ান কোম্পানিগুলি এই চ্যালেঞ্জগুলি মোকাবেলার জন্য সক্ষমতা তৈরিতে বিনিয়োগ করে। বড় আকারে হারিয়ে যাওয়া জাহাজ নির্মাণ শিল্পের অবশেষ থেকে বেশ কিছু প্রকৌশল এবং নির্মাণ কোম্পানি উদ্ভূত হয়, যারা স্টাভাঙ্গার এবং অসলোর পশ্চিম শহরতলিতে দক্ষতা কেন্দ্র তৈরি করে। স্টাভাঙ্গার অফশোর ড্রিলিং শিল্পের জন্য স্থলভিত্তিক প্রস্তুতি এলাকা হয়ে ওঠে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন সম্পর্কে সংরক্ষণ

[সম্পাদনা]
নরওয়েতে রপ্তানি এবং আমদানি

১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে, নরওয়ের সংসদ নরওয়ের ইউরোপীয় অর্থনৈতিক সম্প্রদায়-এ যোগ দেওয়ার প্রশ্নে গণভোটের আয়োজন করে। প্রস্তাবটি সামান্য ব্যবধানে প্রত্যাখ্যাত হয়। নরওয়েজীয় সরকার ইউরোপীয় বাজারে নরওয়েজীয় কোম্পানির প্রবেশাধিকার দেওয়ার জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে বাণিজ্য চুক্তি নিয়ে আলোচনা শুরু করে। সময়ের সাথে সাথে, নরওয়ে এই চুক্তি পুনর্বিন্যাস এবং পরিমার্জন করে, অবশেষে ইউরোপীয় মুক্ত বাণিজ্য সমিতি এবং ইউরোপীয় অর্থনৈতিক অঞ্চলে যোগ দেয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "World Economic Outlook (October 2024)"imf.orgInternational Monetary Fund 
  2. The economic effects of north sea oil on the manufacturing sector ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে Hilde Christiane Bjørnland
  3. Overview of the Norwegian oil and gas sector ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২৩ মে ২০১৩ তারিখে Embassy of Denmark, Oslo
  4. "Archived copy" (পিডিএফ)। ২০ জুন ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১২-১২-২৮ 
  5. "The rich cousin"The Economist। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩। ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ 
  6. "Social Expenditure – Aggregated data"Organisation for Economic Co-operation and Development 
  7. Bagge, Sverre (২০১০)। From Viking Stronghold to Christian Kingdom: State Formation in Norway, c. 900-1350 (ইংরেজি ভাষায়)। Museum Tusculanum Press। পৃষ্ঠা 70। আইএসবিএন 978-87-635-0791-2 
  8. "Norway's petroleum history"www.norskoljeoggass.no (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৪-১২ 
  9. Riber, Lars; Dypvik, Henning; Sørlie, Ronald (২০১৫)। "Altered basement rocks on the Utsira High and its surroundings, Norwegian North Sea" (পিডিএফ)Norwegian Journal of Geology95 (1): 57–89। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৮ 
  10. "Norway – Corporate – Taxes on corporate income"। ১৪ জানুয়ারি ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-০১-১৪