নরওয়েতে নৈরাজ্যবাদ
নৈরাজ্যবাদ |
---|
অংশ একটি সিরিজ এর |
![]() |
চিন্তার স্কুল |
সংগঠন |
ব্যক্তিত্ব |
ঘটনা |
নরওয়েতে নৈরাজ্যবাদ প্রথম আবির্ভূত হয় ১৮৭০-এর দশকে। প্রথম স্বঘোষিত নৈরাজ্যবাদীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য আর্নে গার্বর্গ এবং ইভার মর্টেনসন-এগনান্ড। এরা ১৮৭৭-৯১ সালে প্রকাশিত "ফেড্রাহাইমেন" নামক একটি পত্রিকা চালাতেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে পত্রিকাটি আরও বেশি করে নৈরাজ্যবাদ-কেন্দ্রিক হয়ে ওঠে। নৈরাজ্যবাদী লেখক হ্যান্স জেগার ১৯০৬ সালে "নৈরাজ্যের বাইবেল" প্রকাশ করেন। সাম্প্রতিক সময়ে জেনস বিয়র্নেবো নৈরাজ্যবাদ নিয়ে "পুলিশ এবং নৈরাজ্য" নামক বই লিখেছেন।[১]
ইতিহাস
[সম্পাদনা]নরওয়েতে নৈরাজ্যবাদের ইতিহাস ১৮৪৮ সালে শ্রমিক আন্দোলনের সূচনা থেকে শুরু হয়, যখন মার্কাস থ্রেন ড্রামেনে দেশটির প্রথম শ্রমিক ইউনিয়ন শুরু করেন। পরের বছর তিনি "Arbeider-Foreningernes Blad" প্রতিষ্ঠা করেন। পত্রিকাটিতে ফরাসি নৈরাজ্যবাদী পিয়ের-জোসেফ প্রুদোঁ, ভিলহেল্ম ভাইৎলিং , এতিয়েন ক্যাবেট, হেনরি ডি সেন্ট-সাইমন, লুই ব্লঁ এবং অন্যান্য অনেক বামপন্থীদের লেখা ছাপা হতো। থ্রেন প্রুদোঁর ভক্ত ছিলেন, তাকে "তর্কাতীতভাবে আমাদের সময়ের সর্বশ্রেষ্ঠ প্রতিভা" হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন, কিন্তু তিনি নিজেকে নৈরাজ্যবাদী মনে করতেন না। তাকে নরওয়ের প্রথম সমাজতান্ত্রিক এবং সমবায় আন্দোলনের জনক হিসেবে বিবেচনা করা হয়। ১৮৫০ সালের জুন মাসের শেষে, শ্রমিক ইউনিয়নের ২৭৩টি ইউনিয়নে ২০,৮৫৪ জন সদস্য ছিল। ১৮৫১ সালে, থ্রেনকে গ্রেপ্তার এবং কারারুদ্ধ করা হয়। শ্রমিক ইউনিয়নগুলি জোরপূর্বক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। থ্রেন ১৮৫৯ সালে মুক্তি পান এবং ১৮৬৩ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। ১৮৮৪ সালের মে মাসে শিকাগো শহরে হেমার্কেট দাঙ্গার পর নৈরাজ্যবাদী কর্মকাণ্ড থেকে তিনি নিজেকে দূরে সরিয়ে নেন। থ্রেন ব্যক্তিগতভাবে ফাঁসিপ্রাপ্তদের একজনকে চিনতেন।
১৮৬৫ সালে সোরেন জাবাক প্রথম কৃষক বন্ধু সমিতি প্রতিষ্ঠা করেন। এই সমিতি বিকেন্দ্রীকরণ এবং স্থানীয় স্বায়ত্তশাসনের উপর জোর দিত এবং সেইসঙ্গে এদের সাম্যবাদী বা স্থানীয়বাদী প্রবণতাও ছিল। কৃষক-বান্ধব নীতিতে সমবায় আন্দোলন ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান।[২]
আর্নে গারবোর্গ, ইভার মর্টেন্সন-এগনন্ড এবং হ্যান্স জেগার তাদের মধ্যে প্রথম কয়েকজন ছিলেন যারা নিজেদের নৈরাজ্যবাদী হিসাবে উল্লেখ করতেন।[৩] তারা ফেড্রাহাইমেন পত্রিকাটি পরিচালনা করতেন যা ১৮৭৭-৯১ সালে প্রকাশিত হয়েছিল।[৪] গার্বর্গের নৈরাজ্যবাদের প্রতি আগ্রহ ডোলারিংগেনের উপর ভিত্তি করে তৈরি, যা আসমুন্ড ওলাভসন ভিঞ্জে এবং আর্নস্ট সার্সের আশেপাশের পরিবেশে উদ্ভূত হয়েছিল এবং ১৮৬০-এর দশকে নরওয়েতে প্রচলিত রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক জাতীয়তাবাদের প্রতিরূপ ছিল।[৫]
ছাত্র এবং সংবাদপত্রের কর্মী রাসমাস স্টেইনসভিক ছিলেন গার্বর্গের একজন শিক্ষানবিশ এবং ১৮৮৭ সালে তিনি তার নিজ শহর ভোলডায় র্যাডিকাল টার্গেট ম্যাগাজিন ভেস্টম্যানেন প্রতিষ্ঠা করেন। স্টাইনসভিক গ্রামীণ সম্প্রদায়ের ঐক্য ও সহযোগিতার সাথে নৈরাজ্যবাদকে একীভূত করার চেষ্টা করেছিলেন। তিনি মনে করতেন যে ছোট আঞ্চলিক এবং স্থানীয় জনগণের সম্পূর্ণরূপে বিকশিত স্থানীয় গণতন্ত্রের মাধ্যমে নিজেদের শাসন করা উচিত। তিনি একে সরকারের স্বাধীনতা বলেছিলেন।
১৯৬৬/৬৭ সালে ক্রিস্টিয়ানসান্ডে ফেডারেশন অফ অ্যানার্কিস্ট ইয়ুথ (FAU) যাত্রা শুরু করে। ১৯৬৮ সালে প্যারিসে ছাত্র বিদ্রোহের পরই নৈরাজ্যবাদের প্রতি আগ্রহ পুনরুজ্জীবিত হয়। ১৯৬৯ সালে জেন্স বিয়র্নেবো "অরাজকতাকে ভবিষ্যতের রূপে" প্রবন্ধটি লিখেছিলেন। ১৯৭১ সালে তিনি অসলোতে ছাত্র সমাজের মাঝে "নৈরাজ্যবাদ... আজ?" শীর্ষক এক বক্তৃতা প্রদান করেন। নতুন উদীয়মান নৈরাজ্যবাদী আন্দোলনের উপর বিয়োর্নেবোর বিরাট প্রভাব ছিল।[৬][৩]
একবিংশ শতাব্দী
[সম্পাদনা]নিম্নলিখিত প্রকল্পগুলি নৈরাজ্যবাদ বা নৈরাজ্যবাদীদের সাথে সম্পর্কিত:
- হাউসমানিয়া - অনেক নৈরাজ্যবাদী অসলোর কুলতুরহুসেট হাউসমানিয়াতে জড়িত। বই ক্যাফে হুমলা এবং চলচ্চিত্র সংগ্রহশালা স্পিস ডি রাইক এখানে অবস্থিত, এবং ইন্ডিমিডিয়াও সেখানে সভা করত। এছাড়াও, স্বায়ত্তশাসিত আবাসন সমিতি ভেস্টব্রেডেন এবং H42 হাউসমানিয়ার একই কোয়ার্টারে অবস্থিত। এগুলো নৈরাজ্যবাদীদের দ্বারা অধ্যুষিত এবং প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র দ্বারা পরিচালিত।[৩]
- ব্লিটজ - ব্লিটজ অসলোতে একটি স্ব-পরিচালিত যুব কেন্দ্র। এটি মূলত একটি নৈরাজ্যবাদী প্রকল্প।[৩][৭][৮]
- ফ্যাসিবাদ বিরোধী আন্দোলন (AFA) ১৯৯০-এর দশকে নরওয়েতে সবচেয়ে সক্রিয় নৈরাজ্যবাদী সংগঠন ছিল।
- গেটআভিসা – নরওয়ের প্রাচীনতম নৈরাজ্যবাদী সংবাদপত্র।[৯] গেটআভিসার একটি অফিস রয়েছে Hjelmsgate 3-এ। এখানে, লিবার্টি ফোরামও তুলনামূলকভাবে নিয়মিত মিলিত হয়। লিবার্টি ফোরাম হল নৈরাজ্যবাদী এবং স্বাধীনতাবাদী সমাজতান্ত্রিকদের একটি ছোট দল যারা তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা করতে মিলিত হয়। হজেলমসগেটে একটি নৈরাজ্যবাদী বইয়ের ক্যাফেও রয়েছে যার নাম জাপ ভ্যান হুইসম্যানস মিন্ডে।
- ইয়ুথ ফর ফ্রি অ্যাক্টিভিটি (UFFA) ট্রন্ডহাইমে একটি স্ব-পরিচালিত যুব কেন্দ্র যা ১৯৮১ সালে শুরু হয়েছিল, অসলোতে ব্লিটজের ছয় মাস আগে। কর্মীরা বেশিরভাগই নৈরাজ্যবাদী এবং নৈরাজ্যবাদী নীতি দ্বারা পরিচালিত হয়।[৩][১০]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Nerbøvik, Jostein। Norsk historie 1860–1914।
- ↑ Nerbøvik, Jostein (১৯৯৯)। Norsk historie 1860–1914: Eit bondesamfunn i oppbrot। Volume five of Norsk historie (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Det Norske Samlaget। পৃষ্ঠা 110। আইএসবিএন 978-82-521-5186-2।Nerbøvik, Jostein (1999). Norsk historie 1860–1914: Eit bondesamfunn i oppbrot. Volume five of Norsk historie (in Norwegian). Oslo: Det Norske Samlaget. p. 110. ISBN 978-82-521-5186-2.
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ Kuhn, Gabriel (২০০৯)। "Anarchism, Norway" (ইংরেজি ভাষায়)। American Cancer Society: 1–2। আইএসবিএন 9781405198073। ডিওআই:10.1002/9781405198073.wbierp0067। উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>
ট্যাগ বৈধ নয়; আলাদা বিষয়বস্তুর সঙ্গে "Kuhn" নামটি একাধিক বার সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে - ↑ "Fedraheimen"। Store norske leksikon (নরওয়েজীয় ভাষায়)। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। সংগ্রহের তারিখ ২৩ মে ২০১৫।
- ↑ Nerbøvik, Jostein। Norsk historie 1860–1914 (নরওয়েজীয় ভাষায়)। পৃষ্ঠা 196।Nerbøvik, Jostein. Norsk historie 1860–1914 (in Norwegian). Vol. 5. p. 196.
- ↑ Wandrup, Fredrik (১৯৮৪)। Jens Bjørneboe: Mannen, myten og kunsten (নরওয়েজীয় ভাষায়)। Gyldendal। আইএসবিএন 9788205309388। ওসিএলসি 474759180।Wandrup, Fredrik (1984). Jens Bjørneboe: Mannen, myten og kunsten (in Norwegian). Gyldendal. ISBN 9788205309388. OCLC 474759180.
- ↑ "Historien om Blitz"। Blitz। ২৮ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ Ralf Lofstad; Harald S. Klungetveit; Øistein Norum Monsen (২৭ এপ্রিল ২০০৭)। "Politiet stormet Blitz-huset"। Dagbladet। ৫ জুন ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৮ এপ্রিল ২০০৭।
- ↑ A Cultural History of the Avant-Garde in the Nordic Countries 1950–1975। BRILL। ১৭ মার্চ ২০১৬। পৃষ্ঠা 818। আইএসবিএন 978-90-04-31050-6। সংগ্রহের তারিখ ২৩ ডিসেম্বর ২০১৬।
- ↑ "Historikk"। ২৬ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (Norwegian) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মে ২০০৯।