নভেম্বর ২০১৫ প্যারিস আক্রমণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
নভেম্বর ২০১৫ প্যারিস আক্রমণ
ইসলামী সন্ত্রাসবাদের সংকট-এর অংশ
প্যারিস এবং সেন্ট-ডেনিসে আক্রমণের অবস্থান
স্থানফ্রান্স প্যারিসসাঁ-দ্যনি
১. স্তাদ দ্য ফ্রঁন্-এর কাছে
২. রু বিশা ও রু আলিবের্ট
৩. রু দ্য লা ফোঁতেন-ওঁ-রুয়া
৪. বাতাক্লঁ নাট্যশালা
৫. রু দ্য শারোন
তারিখ১৩ নভেম্বর ২০১৫ (2015-11-13) –
১৪ নভেম্বর ২০১৫ (2015-11-14)
২১:১৬ – ০০:৫৮ (কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় সময়)
হামলার ধরনগণহত্যা, বোমাবর্ষণ, আঘাত ও পলায়ন কৌশল, জিম্মি করা, আত্মঘাতী হামলা
ব্যবহৃত অস্ত্র
নিহতঅন্তত ১২৮ জন বেসামরিক নাগরিক[২]
৮ জন আক্রমণকারী[৩][৪]
আহত৩০০+[৩] যেখানে ৮০ জনের অবস্থা গুরুতর[৫]
হামলাকারী দলইসলামিক স্টেট অব ইরাক এন্ড দ্য লেভান্ট জঙ্গি[৬][৭]
অংশগ্রহণকারীর সংখ্যা
অন্তত ৮ জন[৩]
কারণসিরিয়া ও ইরাকে ফ্রান্সের হামলার প্রতিশোধ[৮]

১৩ই নভেম্বর ২০১৫ তারিখের সন্ধ্যায় ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিস ও রাজধানীর ঠিক উত্তরে সাঁ-দ্যনি শহরে ধারাবাহিক ও সমন্বিত সন্ত্রাসী আক্রমণ ঘটে। আক্রমণটি গণহত্যা, আত্মঘাতী বোমা হামলা, বোমা হামলা ও জিম্মি করার সমন্বয়ে করা হয়। কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় সময় ২১:১৬ টার সময়ে, সাঁ দ্যনির শহরের উত্তর শহরতলীতে স্তাদ দ্য ফ্রঁস ক্রীড়াক্ষেত্রের বাইরে তিনটি পৃথক আত্মঘাতী বোমা হামলা এবং কেন্দ্রীয় প্যারিসের কাছাকাছি চারটি ভিন্ন স্থানে গণহত্যা ও আত্মঘাতী বোমা হামলা ঘটে। সবচেয়ে ভয়াবহ হামলাটি হয় বাতাক্লঁ নাট্যশালাতে যেখানে আক্রমণকারীরা সেখানে থাকা নাগরিকদের জিম্মি করে; পরে পুলিশ ভারী অস্ত্রসহ সেখানে অভিযান চালায় যা শেষ হয় ১৪ নভেম্বর ২০১৫ ০০:৫৮ কেন্দ্রীয় ইউরোপীয় সময়ে। ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড লেভান্ট (আইএসআইএল) এই হামলার দায় স্বীকার করে।[৯]

এই হামলায় অন্তত ১২৮ জন নিহত হয়ে, যাদের মধ্যে ৮৯ জন নিহত হন বাতাক্লঁ নাট্যশালাতে। এই হামলায় প্রায় ৪১৫ জন আহতকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়, যার মধ্যে ৮০ জনের অবস্থাকে গুরুতর হিসেবে অভিহিত করা হয়। আক্রমণে নিহতরা ছাড়াও, ৭ জন আক্রমণকারী মারা যায় এবং কর্তৃপক্ষ তাদের কোন সহযোগী রয়েছে কিনা তার জন্য অনুসন্ধান অব্যাহত রাখে। আক্রমণটি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ফ্রান্সে ঘটা সবচেয়ে প্রাণঘাতী ছিল; এটি ২০০৪ সালে মাদ্রিদ বোমাবর্ষণের পর ইউরোপে হওয়া সবচেয়ে প্রাণঘাতী হামলা ছিল।

হামলার জবাবে ফরাসি রাষ্ট্রপতি ফ্রঁসোয়া ওলঁদ ২০০৫-এর দাঙ্গার পর প্রথমবারের মত জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন এবং ফ্রান্সের সীমান্তের উপর অস্থায়ী নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেন। মানুষ এবং বিভিন্ন সংগঠন সামাজিক গণমাধ্যমের মাধ্যমে সংহতি প্রকাশ করে। রাষ্ট্রপতি ফ্রঁসোয়া ওলঁদ বলেন যে আক্রমণটি "ইসলামিক স্টেট অভ্যন্তরীণ সাহায্য নিয়ে" বিদেশ থেকে সংগঠিত করেছে এবং এটিকে তিনি "যুদ্ধের কাজ" হিসেবে অবিহিত করেন।

১৫ নভেম্বর, আক্রমণের প্রতিশোধ হিসেবে আল-রাক্কা, সিরিয়া লক্ষ্য ফ্রান্স তার ইতিহাসের বৃহত্তম একক বিমান হামলায় অপারেশন চাম্মাল শুরু করে, যা আইএসআইএল-বিরোধী বোমা প্রচারাভিযান। আক্রমণের আগে, ফ্রান্স অক্টোবর ২০১৫ সাল থেকে, সিরিয়া সহ মধ্যপ্রাচ্যের বিভিন্ন লক্ষ্যে বোমাবর্ষণ করে। আইএসআইএলের আক্রমণ সিরীয় গৃহযুদ্ধইরাকি গৃহযুদ্ধে ফরাসি সম্পৃক্ততার প্রতিশোধ ছিল। সেই সপ্তাহে আক্রমণ করতে অগ্রসর হওয়ার আগে, আইএসআইএল দুই দিন আগে বৈরুতে দুই আত্মঘাতী বোমা হামলা, এবং ৩১ অক্টোবর কোগালিমাভিয়া ফ্লাইট ৯২৬৮ বিধ্বস্ত করাসহ বেশ কয়েকটি হামলার দায় স্বীকার করে। ফ্রান্স জানুয়ারি ২০১৫-এর আক্রমণের পর থেকে উচ্চ সতর্কতায় ছিল যে আক্রমণে পুলিশ কর্মকর্তা ও বেসামরিক ব্যক্তি সহ ১৭ জন নিহত হয়।

আক্রমণ[সম্পাদনা]

আক্রমণের সময়ক্রম

১৩ নভেম্বর:

  • ২১:১৬ – স্তাদ দ্য ফ্রঁস ক্রীড়াক্ষেত্রে প্রথম আত্মঘাতী হামলা[১০]
  • ২১:২০ – রু বিশা সড়কে গণহত্যা[১১]
  • ২১:৩০ – স্তাদ দ ফ্রঁস-এ দ্বিতীয় আত্মঘাতী হামলা[১০]
  • ২১:৪৫ – বাতাক্লঁ নাট্যশালায় ৪ জন ঢুকে হামলা শুরু করে[১০]
  • ২১:৫০ – রু দ্য শারোন সড়কে হামলা.[১০]
  • ২১:৫৩ – স্তাদ দ্য ফ্রঁন্স-এ তৃতীয় আত্মঘাতী হামলা[১০]
  • ২২:০০ – বাতাক্লঁ নাট্যশালায় বন্দীদের নিয়ে যাওয়া হয়[১০]

১৪ নভেম্বর:

  • ০০:৫৮ফরাসি পুলিশ অবরোধ শেষ করে, যেখানে ৬০ থেকে ১০০ জন জিম্মি (বন্দী) হিসেবে ছিলেন।[১০]

বিচার[সম্পাদনা]

এই হামলায় বেঁচে যাওয়া একমাত্র হামলাকারী সালাহ আবদেসালামকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়। আরও ১৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয়। এর মধ্যে ছয় জন নিহত হয়েছে বলে ধারণা করা হয়ে থাকে। আধুনিক ফ্রান্সের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিচার বিবেচিত হয়েছে এই বিচার। ২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে শুরু হয় এই মামলার বিচার। বিচারের শুরুতে আসামি আবদেসালাম নিজেকে ইসলামিক স্টেট গ্রুপের এক ‘সেনা’ দাবি করে। সে হতাহতদের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে। সমাপনী বক্তব্যে সে বলে, সে ‘খুনি কিংবা হত্যাকারী’ নয়, আর তাকে দণ্ডিত করা হবে ‘অবিচার’। সে আরও দাবি করে নিজের আত্মঘাতী ভেস্ট ওই রাতে সে বিস্ফোরণ ঘটায়নি। এর বদলে প্যারিসের একটি উপকণ্ঠে তা ফেলে দেয়। তবে আদালতে প্রমাণ হয় আত্মঘাতী ওই ভেস্টটি অকার্যকর ছিল। আবদেসালামের যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের অর্থ হচ্ছে ৩০ বছর পর তার প্যারোলে মুক্তি পাওয়ার সামান্য সুযোগ আছে। ফ্রান্সে এটাই সবচেয়ে কঠোর সাজা। আর কোনও আদালতে এই দণ্ড দেওয়ার ঘটনাও বিরল।

প্রতিক্রিয়া  : হামলার ঘটনায় বেঁচে যাওয়া এডিথ সেউরাত বলেন যে এই বিচারে তার ব্যাথা নিরসন হবে না এবং এতে তিনি সন্তুষ্ট নন। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও আমাদের আঘাত এবং আমাদের ট্রমা এবং আমাদের দুঃস্বপ্ন এবং আমাদের ক্ষত নিয়ে বেঁচে আছি। আমাদের এখনও এটি নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে’।[১২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Paris attacks: More than 100 killed in gunfire and blasts, French media say"। CNN। ১৪ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  2. Rawlinson, Kevin (১৩ নভেম্বর ২০১৫)। "Fatal shootings and explosion reported in Paris – live"The Guardian। ২০১৫-১১-১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ নভেম্বর ২০১৫ 
  3. "Paris attacks updates"। BBC News। 
  4. Claire Phipps; Kevin Rawlinson (১৩ নভেম্বর ২০১৫)। "All attackers dead, police say, after shootings and explosions kill at least 150 in Paris – live updates"The Guardian। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  5. "Attaques à Paris : ce que l'on sait des attentats qui ont fait au moins 128 morts" (ফরাসি ভাষায়)। Le Monde.fr। Le Monde.fr। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  6. "Paris attacks: ISIS claims responsibility for gunfire, blasts that killed 128 people"। CNN। ১৪ নভেম্বর ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  7. "হামলার দায় স্বীকার আইএসের"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  8. "Paris attacks: Islamic State says killings were response to Syria strikes." 
  9. "হামলার দায় স্বীকার আইএসের"প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  10. "Hollande : "Un acte de guerre commis par une armée terroriste""Le Figaro। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  11. "Scores killed in Paris terror attacks at six separate sites"USA Today। সংগ্রহের তারিখ ১৪ নভেম্বর ২০১৫ 
  12. "ফ্রান্সের সবচেয়ে কঠোর সাজা পেলো প্যারিসের হামলাকারী, বাংলা ট্রিবিউন, ৩০ জুন ২০২২"। ৩০ জুন ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩০ জুন ২০২২ 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]