নগ্ন আলোকচিত্রশিল্প

নগ্ন আলোকচিত্রশিল্প বলতে নগ্ন বা অর্ধ-নগ্ন ব্যক্তির চিত্র ধারণকারী যে কোনো ধরনের আলোকচিত্র, বা নগ্নতার ইঙ্গিতপূর্ণ চিত্রসমূহ নর্দিেশ করে। নগ্ন আলোকচিত্র বিভিন্ন উদ্দেশ্যে গ্রহণ করা হয়ে থাকে, যার মধ্যে শিক্ষাগত ব্যবহার, বাণিজ্যিক প্রয়োগ এবং শিল্পকর্মের উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। সাধারণত ব্যক্তিগত ব্যবহার, নির্দিষ্ট বিষয় বা শুধুমাত্র সংশ্লিষ্ট সঙ্গীর উপভোগের উদ্দেশ্যেও নগ্ন আলোকচিত্র গ্রহণ করা হয়ে থাকে। প্রদর্শনী বা নগ্ন আলোকচিত্রের প্রকাশ বিভিন্ন সংস্কৃতি বা দেশে বিতর্কিত হতে পারে, বিশেষত যদি আলোকচিত্রের বিষয়টি অপ্রাপ্তবয়স্ক হয়ে থাকে। অধিকাংশ নগ্ন আলোকচিত্র সাধা্রণত নারী বিষয়ক বৈশিষ্ট্যসম্বলিত হতে দেখা যায়।[১]
শিক্ষাবিষয়ক
[সম্পাদনা]নগ্ন আলোকচিত্র সাধারণত বৈজ্ঞানিক এবং শিক্ষাবিষয়ক উদ্দেশ্যে ব্যবহারের জন্য গ্রহণ করা হয়ে থাকে, যেমন জাতিগত গবেষণা, মানব দেহতত্ব বা যৌনশিক্ষা ইত্যাদি। এই প্রসঙ্গে, আলোকচিত্র গ্রহণে এর বিষয়, বা আলোকচিত্রটির সৌন্দর্য বা যৌনকামনা সৃষ্টির উপর জোর দেওয়া হয় না, বরঙ শিক্ষাগত বা প্রদর্শনমূলক উদ্দেশ্যে আলোকচিত্র তৈরি করা হয়।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]- ডুরিয়ে/দেলাক্রোয়া
- জঁ লুই মারি ইউজিন ডুরিয়ের তোলা আলোকচিত্র
- ইউজিন দেলাক্রোয়ার অঙ্কিত ওডালিস্ক (১৮৫৭)
- জঁ লুই মারি ইউজিন ডুরিয়ে কর্তৃক তোলা পুরুষ নগ্ন আলোকচিত্র, আনু. 1855
উনবিংশ শতাব্দী
[সম্পাদনা]পশ্চিমা সংস্কৃতির প্রারম্ভিক চিত্রকলাভিত্তিক আলোকচিত্রশিল্পীরা, যারা আলোকচিত্রকে একটি উচ্চশিল্প রূপে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছিলেন, তারা প্রায়শই নারীদের আদিরসাত্মক (নগ্ন) চিত্রের বিষয় হিসেবে বেছে নিতেন। এই চিত্রগুলোর ভঙ্গিমা ছিল চিত্রকলা ও ভাস্কর্যের প্রচলিত ধারার অনুসরণে। নগ্ন আলোকচিত্রের পূর্বে, শিল্পকলায় নগ্নতা প্রকাশ পেত প্রাচীন ধ্রুপদি যুগের দেবতা, যোদ্ধা, দেবী ও অপ্সরীদের রূপে। এ সময় আলোকচিত্রে ব্যবহার করা হতো বিশেষ ভঙ্গিমা, আলোকপ্রক্ষেপণ, কোমল ফোকাস, ভিন্যেটিং ও হাতে করা রিটাচিং—যা একে সমসাময়িক অন্যান্য শিল্পরীতির সঙ্গে তুলনীয় করে তুলতো।[২]যদিও উনবিংশ শতাব্দীর অনেক চিত্রশিল্পী ও ভাস্কর জীবন্ত মডেলের পরিবর্তে আলোকচিত্র ব্যবহার করতেন, তবুও অনেক আলোকচিত্র এমনভাবে তোলা হতো যে সেগুলো নিজস্ব শিল্পমান বজায় রেখে একটি স্বতন্ত্র শিল্পকর্ম হিসেবেও স্বীকৃতি পেত—শুধু সাহায্যকারী উপাদান হিসেবে নয়।[২]
- ঐতিহাসিক চিত্রসমূহ
- উনবিংশ শতাব্দীতে গাউদেনৎসিও মারকোনির নগ্ন আলোকচিত্র
- গাউদেনৎসিও মারকোনি (১৮৪১–১৮৮৫) কর্তৃক ধারণকৃত নগ্ন আলোকচিত্র
- ফ্রাঙ্ক ইউজিন এর তোলা আদম ও হাওয়া, ১৮৯৮ সালে ধারণ
আধুনিক
[সম্পাদনা]
প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর, অ্যাভাঁ-গার্দ ধাঁচের আলোকচিত্রশিল্পীরা—যেমন ব্রাসাই, ম্যান রে, হান্স বেলমার, আঁদ্রে কেরতেস এবং বিল ব্রানডট—নগ্নতার উপস্থাপনে আরও পরীক্ষাধর্মী হয়ে ওঠেন। তারা প্রতিফলিত বিকৃতি (reflective distortions) ও মুদ্রণ কৌশল ব্যবহার করে বিমূর্ততা তৈরি করতেন, অথবা ধ্রুপদী উপমা বাদ দিয়ে বাস্তব জীবনের চিত্র তুলে ধরতেন।
আলফ্রেড স্টিগলিট্জ-এর জর্জিয়া ও'কিফ-এর তোলা ছবি ছিল আদিরসাত্মক চিত্রের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রাচীন উদাহরণ, যা আদর্শায়িত বা দূরত্বপূর্ণ উপস্থাপনার পরিবর্তে ঘনিষ্ঠ ও ব্যক্তিগত আবহে উপস্থাপিত হয়েছিল।
এডওয়ার্ড ওয়েস্টন,[৩] ইমোজেন কানিংহ্যাম,[৪] রুথ বার্নহার্ড, হ্যারি ক্যালাহান, এমেট গোউইন এবং এডওয়ার্ড স্টেইকেন এই ধারা অব্যাহত রাখেন।
ওয়েস্টন বিশেষভাবে একটি আমেরিকান নান্দনিকতা গড়ে তোলেন, যেখানে তিনি বড় ফরম্যাট ক্যামেরা ব্যবহার করে প্রকৃতি, প্রাকৃতিক দৃশ্য এবং নগ্ন চিত্র ধারণ করতেন। এভাবে তিনি আলোকচিত্রকে উচ্চশিল্পের মাধ্যম হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেন। ১৯৩৭ সালে তিনি ছিলেন প্রথম আলোকচিত্রী যিনি জন সাইমন গাগেনহেইম স্মারক ফেলোশিপ লাভ করেন।[৫] ওয়েস্টনের বিখ্যাত কাজের একটি উদাহরণ হিসেবে দেখুন: চ্যারিস উইলসন।
অনেক উচ্চশিল্প ভিত্তিক আলোকচিত্রী বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কাজ করেছেন—নগ্নতা ছিল তন্মধ্যে একটি মাত্র অংশ। ডায়ান আর্বাস ছিলেন এমন এক শিল্পী যিনি অস্বাভাবিক পরিবেশে, অস্বাভাবিক মানুষদের প্রতি আকৃষ্ট হতেন—যেমন একটি নগ্নতাবাদী রিসোর্ট (nudist camp)।
অন্যদিকে, লি ফ্রিডল্যান্ডার তুলনামূলক প্রচলিত বিষয় নিয়ে কাজ করতেন, যার মধ্যে একজন ছিলেন ম্যাডোনা—তখন তিনি একজন তরুণী মডেল।[৬]
সমকালীন
[সম্পাদনা]ফাইন আর্ট ও গ্ল্যামার ফটোগ্রাফির মধ্যে পার্থক্য অনেক সময় কেবল বাজারজাতকরণের ওপর নির্ভর করে। ফাইন আর্ট ছবিগুলো সাধারণত শিল্পীর স্বাক্ষরসহ সীমিত সংখ্যক সংস্করণে গ্যালারি বা বিক্রয় প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিক্রি হয়, অপরদিকে গ্ল্যামার ফটোগ্রাফি ব্যাপক গণমাধ্যমে বিতরণ করা হয়। কারও মতে, পার্থক্যটি মডেলের দৃষ্টিতে — গ্ল্যামার মডেল ক্যামেরার দিকে তাকান, অথচ আর্ট মডেল সাধারণত তাকান না।[৭] কিছু গ্ল্যামার ও ফ্যাশন আলোকচিত্রশিল্পী তাঁদের কাজের মাধ্যমে ফাইন আর্ট পর্যায়ে পৌঁছানোর চেষ্টা করেছেন। এরকম একজন ছিলেন ইরভিং পেন, যিনি *ভোগ* ম্যাগাজিন থেকে ক্যারিয়ার শুরু করে পরবর্তীতে কেট মস-এর নগ্ন ছবি তুলেছিলেন। রিচার্ড অ্যাভেডন, হেলমুট নিউটন ও অ্যানি লেইবোভিৎস[৮] প্রখ্যাত ব্যক্তিদের নগ্ন বা আংশিক নগ্ন ছবি তুলে একই পথে চলেছেন।[৯][১০] পোস্ট-মডার্ন যুগে, যেখানে খ্যাতিই ফাইন আর্টের বিষয় হয়ে উঠেছে,[১১] অ্যাভেডনের নাস্তাসিয়া কিনস্কির পাইথনের সঙ্গে তোলা ছবি এবং লেইবোভিৎসের ডেমি মুরের গর্ভাবস্থায় তোলা কভার ফটো ও বডি-পেইন্ট ছবি আইকনিক হয়ে উঠেছে। জয়েস টেনেসনের কাজ উল্টো পথে গেছে — একসময় যিনি নরম আলো ও সূক্ষ্ম শৈলীতে নারীর বিভিন্ন জীবনপর্যায়কে ফাইন আর্টে উপস্থাপন করতেন, তিনিই পরবর্তীতে নামী ব্যক্তিদের প্রতিকৃতি ও ফ্যাশন আলোকচিত্রে মনোনিবেশ করেছেন।
যদিও নগ্ন আলোকচিত্রশিল্পীরা সাধারণত দেহকে এক ধরনের ভাস্কর্যিক বিমূর্ততায় উপস্থাপন করে থাকেন, রবার্ট ম্যাপলথর্প-এর মতো কেউ কেউ সচেতনভাবে আদিরসাত্মক ও শিল্পের সীমানা ঘোলাটে করে কাজ করেছেন।
কিছু আলোকচিত্রশিল্পী অপ্রাপ্তবয়স্কদের নগ্ন ছবি তোলার জন্য বিতর্কিত হয়ে ওঠেন।[১২] ডেভিড হ্যামিলটন প্রায়শই আদিরসাত্মক বিষয়বস্তু ব্যবহার করেছেন।[১৩][১৪][১৫] স্যালি ম্যান ভার্জিনিয়ার একটি প্রত্যন্ত অঞ্চলে বেড়ে ওঠেন, যেখানে নদীতে নগ্ন সাঁতার স্বাভাবিক বিষয় ছিল। তাঁর অনেক বিখ্যাত ছবি নিজের সন্তানদের নগ্নাবস্থায় সাঁতার কাটার মুহূর্তকে কেন্দ্র করে।[১৬] তুলনামূলকভাবে অখ্যাত আলোকচিত্রশিল্পীরা তাঁদের নিজের সন্তানদের ছবি তোলার জন্য অপরাধমূলক অভিযোগের সম্মুখীন হয়েছেন।[১৭]
দেহের চিত্রায়ন নিয়ে অনেক আলোকচিত্রশিল্পী কাজ করছেন, যারা প্রচলিত সৌন্দর্যবোধ থেকে ভিন্ন গড়নের মডেলদের মাধ্যমে এই ধারণাগুলোকে চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছেন।[১৮]
- নিউডস (১৯৮০) — অগুস্তো দে লুকা
- Equus (১৯৮৯) — সেরজিও ভ্যালে দুয়ার্তে
- পুরুষ নগ্নতা (২০০৯) — সাশা কারগাল্টসেভ
- নারীর নগ্ন শিল্প (২০১১) — জঁ-ক্রিস্তফ দেস্তায়েঁ
- অর্ধনগ্ন নারী
- নারী দেহভূমি (২০১৭) — কোস্মে মাদিনি
বাণিজ্যিক
[সম্পাদনা]আদিরসাত্মক
[সম্পাদনা]আলোকচিত্র আবিষ্কারের শুরুর দিক থেকেই নগ্ন দেহ ছিল অনেক আলোকচিত্রীর জন্য এক ধরনের শিল্পীসুলভ অনুপ্রেরণা। তবে সে সময়কার সমাজে এই ধরনের ছবি ছিল নিষিদ্ধ বা গোপনে প্রচারিত, কারণ সেগুলোতে বাস্তব নগ্নতা সরাসরি উঠে আসত। অনেক সংস্কৃতিতে চিত্রকলা বা ভাস্কর্যে নগ্নতা মেনে নেওয়া হলেও, বাস্তব নগ্নতা অনেক সময়ে নিষিদ্ধ বা অস্বস্তিকর মনে করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, কোনো গ্যালারিতে যদি নগ্ন চিত্র প্রদর্শন করা হয়, সেখানেও নগ্ন কোনো দর্শনার্থীকে সাধারণত গ্রহণযোগ্য মনে করা হয় না।[১৯]
আলফ্রেড চেনি জনস্টন (১৮৮৫–১৯৭১) ছিলেন যুক্তরাষ্ট্রের একজন প্রখ্যাত আলোকচিত্রী। তিনি মূলত জিগফেল্ড ফোলিসের মঞ্চনৃত্যশিল্পীদের ছবি তোলার জন্য পরিচিত ছিলেন।[২০] জনস্টন নিজের একটি বাণিজ্যিক স্টুডিও চালাতেন, যেখানে তিনি উচ্চমানের ফ্যাশন ও পণ্যের বিজ্ঞাপনচিত্র তৈরি করতেন। পাশাপাশি তিনি বহু অভিনেত্রী ও প্রদর্শনী-কেন্দ্রিক নৃত্যশিল্পীর নগ্ন আলোকচিত্রও ধারণ করেন। এসব ছবির অনেক মডেল ছিলেন জিগফেল্ড ফোলিস-এর শিল্পী—কখনো নামসহ, কখনো অজ্ঞাত পরিচয়ে। তবে ১৯২০ ও ১৯৩০-এর দশকে এমন খোলামেলা, অপরিবর্তিত ছবি প্রকাশ করা যেত না। ধারণা করা হয়, এই ছবিগুলো জনস্টনের ব্যক্তিগত শিল্পচর্চার অংশ ছিল, অথবা সম্ভবত ফ্লো জিগফেল্ড-এর ব্যক্তিগত সংগ্রহের জন্য তোলা হয়েছিল।
- Ziegfeld Follies-এর শোগার্ল ডরোথি ফ্লাড, আলোকচিত্রী আলফ্রেড চেনি জনস্টন
- অজ্ঞাতনামা মডেল, আলোকচিত্রী আলফ্রেড চেনি জনস্টন
- ফোলি বেরজার-এর শোগার্ল, আলোকচিত্রী স্তানিস্লাভ জুলিয়ান ইগ্নাচি ওস্ত্রোরোগ
- একজন নগ্ন মডেল হাঁটু গেঁড়ে বসে আছেন, খোলা ছাতা দিয়ে শরীর আড়াল করা
গ্ল্যামার
[সম্পাদনা]
গ্ল্যামার আলোকচিত্রে মূলত মডেলের (সাধারণত নারী) রোমান্টিক ও দৃষ্টিনন্দন রূপকে তুলে ধরা হয়—যেখানে তার আকর্ষণীয়তা ও যৌন আবেদনকে শৈল্পিকভাবে উপস্থাপন করা হয়। এই ধরনের ছবিতে মডেল সম্পূর্ণ পোশাক পরা কিংবা আংশিক নগ্ন হতে পারেন। তবে গ্ল্যামার আলোকচিত্র কখনোই উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে দর্শকের যৌন উত্তেজনা সৃষ্টির চেষ্টা করে না এবং তা পর্নোগ্রাফির পর্যায়ে পড়ে না। ১৯৬০-এর দশকের আগে পর্যন্ত, গ্ল্যামার আলোকচিত্রকে সাধারণত আদিরসাত্মক আলোকচিত্র হিসেবেই বিবেচনা করা হতো।
বিজ্ঞাপন
[সম্পাদনা]
আধুনিক বিশ্বে নগ্নতা এবং যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ চিত্রের ব্যবহার বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রসঙ্গে বিস্তৃত হয়েছে। বিশেষত বিপণন, বিজ্ঞাপন এবং গণমাধ্যমে এসব চিত্র ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। নগ্নতা বা যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ ভঙ্গিমা পণ্যের বিক্রয় বৃদ্ধির জন্য একটি প্রচলিত কৌশল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে, যেখানে চিত্রগুলোর মূল উদ্দেশ্য দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ করা।
১৯৬০-এর দশক থেকে পশ্চিমা বিশ্বে যৌন বিপ্লবের প্রভাবে নগ্নতা ও যৌনতা প্রকাশের ক্ষেত্রে অনেক মুক্তমনা মনোভাব গড়ে ওঠে। সেই সময় থেকে বিজ্ঞাপন ও গণমাধ্যমে আধুনিক নগ্নতা ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ চিত্রের ব্যবহার শুরু হয়। এটি এক ধরনের বিপণন কৌশল হিসেবে প্রমাণিত হয়েছে যা পণ্যের সাথে সরাসরি সম্পর্ক না থাকলেও, দর্শকের মনে প্রভাব ফেলে।
বিজ্ঞাপন শিল্পে নগ্নতা ও যৌন ইঙ্গিতপূর্ণ চিত্র ব্যবহার করা হয় মূলত বিক্রয় বৃদ্ধির লক্ষ্যে। বিভিন্ন ধরনের পণ্য যেমন পোশাক, সুগন্ধি, প্রযুক্তি সামগ্রী ইত্যাদির প্রচারে এসব চিত্র ব্যবহার করা হয়। নগ্ন বা আধা-নগ্ন মডেল, গ্ল্যামার আলোকচিত্র এবং আদিরসাত্মক ভঙ্গি বিজ্ঞাপনে সাধারণ দৃশ্য। এর ফলে দর্শকের মনোযোগ আকর্ষণ হয়ে পণ্যের প্রতি আগ্রহ বৃদ্ধি পায়।
তবে এসব চিত্রের ব্যবহার সবসময়ই বিতর্কিত হয়েছে। অনেক সময় এগুলো সামাজিক মূল্যবোধের সঙ্গে সাংঘর্ষিক হয় এবং সেক্ষেত্রে নৈতিকতা, যৌনশিক্ষা, ও সাংস্কৃতিক পার্থক্য নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টি হয়। কিছু দেশ ও সমাজে এসব বিজ্ঞাপন নিষিদ্ধ বা কঠোর নিয়ন্ত্রণে থাকে।
বিনোদন
[সম্পাদনা]
নগ্ন বা আধা-নগ্ন চিত্রাবলী বিনোদনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যা প্রাপ্তবয়স্ক বিনোদন হিসেবে পরিচিত। এর মধ্যে রয়েছে পোস্টকার্ড, পিন-আপ ছবি এবং অন্যান্য বিভিন্ন ফরম্যাট।
মূলধারার ম্যাগাজিনের কভারেও মাঝে মাঝে নগ্ন বা আধা-নগ্ন ব্যক্তিদের ছবি প্রকাশিত হয়। উনবিংশ শতাব্দীর শেষ ভাগে, বিশেষ করে ১৯৯০-এর দশকের শুরুর দিকে, ডেমি মুর ভ্যানিটি ফেয়ার ম্যাগাজিনের দুটি কভারের জন্য নগ্ন অবতারে পোজ দিয়েছিলেন: ডেমির বার্থডে স্যুট এবং মোর ডেমি মুর।
কিছু ম্যাগাজিন, যেমন পুরুষদের ম্যাগাজিনে, নগ্ন বা আধা-নগ্ন চিত্র ব্যবহার একটি স্বাভাবিক বিষয়। এমনকি কিছু ম্যাগাজিন তাদের নগ্ন কেন্দ্রভূমির জন্য বিশেষ খ্যাতি অর্জন করেছে।
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]- নিউরেমবার্গে অনুষ্ঠিত উইকিপিডিয়া ফটোগ্রাফি কর্মশালায় এক নগ্ন মডেল ও আলোকচিত্রশিল্পী, ১০ম উইকিপিডিয়া-ফটোগ্রাফি ওয়ার্কশপে।
- বুদাপেস্টের রাস্তায় পেছন থেকে দেখা একটি নগ্ন নারী; প্রকাশ্য স্থানে মানবদেহের শিল্পভাবনা উপস্থাপন।
- ২০০৭ সালে পন্ডেরোসায় অনুষ্ঠিত নগ্নতাবাদ উৎসবের একটি দৃশ্য; ব্যক্তিগত স্বাধীনতা ও সামাজিক নগ্নতার স্বীকৃতিকে ঘিরে উদযাপন।
- ফ্রান্সের মুলাঁ-এ একজন নগ্ন নারী মডেল দাঁড়িয়ে আছেন; শৈল্পিক নগ্নতা ও প্রকৃতির পটভূমির এক সংমিশ্রণ।
- অন্ধকার পত্র-পল্লবের আবরণে সূর্যকৃষ্ণ ত্বকের নগ্ন রূপ; আলোর ছায়ার মাধ্যমে নারীর দেহশৈলীর বিমূর্ত উপস্থাপন।
- ২০১৫ সালের এক আলোকচিত্র সেশনে ‘টাইগারবেল’ নামের মডেলকে নিয়ে তোলা ছবি; সূর্যালোকের নিখুঁত বিন্যাসে আলোক ও ছায়ার খেলায় নারীর শরীরের শৈল্পিক উপস্থাপন।
- লিজি বাইলিস ও অ্যাঞ্জেলের সঙ্গে আলোকচিত্র সেশন; এক নারী গোসলখানায় নগ্ন বসে আছেন, আরেক নারী লিঙ্গারিতে বাথটাবের পাশে বসে কথা শুনছেন।
- ‘কেইরা এবং ডার্ক রিভার’— এক বিমূর্ত ও রহস্যময় আলোকচিত্র যেখানে নারীর দেহ ও অন্ধকার নদীর মিলন ঘটেছে।
- সাম্প্রতিক এক আলোকচিত্র ইভেন্টে ‘বেক্সি’— জানালার পাশে দাঁড়িয়ে সূর্যালোকের মাঝে দক্ষভাবে মডেলিং করছেন।
টীকা
[সম্পাদনা]- ↑ Weiermair and Nielander
- 1 2 "Naked before the Camera"। Metropolitan Museum of Art। ১২ এপ্রিল ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২৬ অক্টোবর ২০১২।
- ↑ Conger, Amy (২০০৬)। Edward Weston: The Form of Nude। Phaidon Press। আইএসবিএন ০৭১৪৮৪৫৭৩৬।
- ↑ Cunningham, Imogen; Lorenz, Richard (১৯৯৮)। Imogen Cunningham: On the Body। Bullfinch Press। আইএসবিএন ০৮২১২২৪৩৮৭।
- ↑ "Edward Weston Photographs"। Center for Creative Photography at the University of Arizona Libraries। ২৫ জুলাই ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
- ↑ "Nude photo of Madonna goes for $37,500"। CNN। ১২ ফেব্রুয়ারি ২০০৯। ১৭ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ এপ্রিল ২০১৩।
- ↑ Conrad, Donna (২০০০), A Conversation with Ruth Bernhard, খণ্ড ১, PhotoVision, ১৫ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত, সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০০৮
- ↑ "Exhibitions: Annie Leibovitz: A Photographer's Life, 1990–2005"। The Brooklyn Museum। ১৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১০ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Jones, Jonathan (৮ ফেব্রুয়ারি ২০০৬)। "Not naked but nude"। The Guardian। London। ৬ নভেম্বর ২০২১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ "Miley Knows Best"। Vanity Fair। ২০০৮। ২৫ নভেম্বর ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Needham, Alex (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১২)। "Andy Warhol's legacy lives on in the factory of fame"। The Guardian। London। ১৪ জুলাই ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ "Photo Flap"। Reason। ১৯৯৮। ১২ এপ্রিল ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Hamilton, David (১৯৯৫)। The Age of Innocence। Aurum Press। আইএসবিএন ১৮৫৪১০৩০৪০।
- ↑ Sturges, Jock; Phillips, Jayne Anne (১৯৯১)। The Last Day of Summer। Aperture।
- ↑ Sturges, Jock (১৯৯৪)। Radiant Identities: Photographs by Jock Sturges। Aperture। আইএসবিএন ০৮৯৩৮১৫৯৫০।
- ↑ Mann, Sally; Price, Reynolds (১৯৯২)। Immediate family। Aperture। আইএসবিএন ০৮৯৩৮১৫২৩৩।
- ↑ Powell, Lynn (২০১০)। Framing Innocence: A Mother's Photographs, a Prosecutor's Zeal, and a Small Town's Response। The New Press। আইএসবিএন ৯৭৮-১৫৯৫৫৮৫৫১৬।
- ↑ "Leonard Nimoy: The Full Body Project"। R.Michelson Galleries। ৪ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১২।
- ↑ Yoder, Brian K.। "Nudity in Art: A Virtue or Vice?"। ৭ এপ্রিল ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৬ এপ্রিল ২০১৮।
- ↑ Hudovernik, Robert (২০০৬)। Jazz Age Beauties: The Lost Collection of Ziegfeld Photographer Alfred Cheney Johnston। New York: Universe Publishing/Rizzoli International Publications। পৃ. ২৭২।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- Clark, Kenneth (১৯৫৬)। The Nude: A Study in Ideal Form। Princeton: Princeton University Press। আইএসবিএন ০-৬৯১-০১৭৮৮-৩।
{{বই উদ্ধৃতি}}: আইএসবিএন / তারিখের অসামঞ্জস্যতা (সাহায্য) - Conger, Amy (২০০৬)। Edward Weston: The Form of Nude। Phaidon Press। আইএসবিএন ০৭১৪৮৪৫৭৩৬।
- Cunningham, Imogen and Lorenz, Richard (১৯৯৮)। Imogen Cunningham: On the Body। Bullfinch Press। আইএসবিএন ০৮২১২২৪৩৮৭।
{{বই উদ্ধৃতি}}: অজানা প্যারামিটার|লেখকগণ=উপেক্ষা করা হয়েছে (সাহায্য) - Dennis, Kelly (২০০৯)। Art/Porn: A History of Seeing and Touching। Berg। আইএসবিএন ১৮৪৭৮৮০৬৭৩।
- Hamilton, David (১৯৯৫)। The Age of Innocence। Aurum Press। আইএসবিএন ১৮৫৪১০৩০৪০।
- Mann, Sally and Price,Reynolds (১৯৯২)। Immediate family। Aperture। আইএসবিএন ০৮৯৩৮১৫২৩৩।
{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক) - Powell, Lynn (২০১০)। Framing Innocence: A Mother's Photographs, a Prosecutor's Zeal, and a Small Town's Response। The New Press। আইএসবিএন ১৫৯৫৫৮৫৫১৬।
- Sturges, Jock and Phillips, Jayne Anne (১৯৯১)। The Last Day of Summer। Aperture।
{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক) - Sturges, Jock (১৯৯৪)। Radiant Identities: Photographs by Jock Sturges। Aperture। আইএসবিএন ০৮৯৩৮১৫৯৫০।
- Weiermair, Peter and Nielander, Claus। Hidden File: Photographs of the Male Nude in the 19th and 20th Centuries। MIT Press, 1988। আইএসবিএন ০২৬২২৩১৩৭৯।
{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: লেখকগণের তালিকা (লিঙ্ক)
আরো পড়ুন
[সম্পাদনা]- Benjamin, Louis (২০০৯)। The Naked and the Lens: A Guide to Nude Photography। Focal Press। আইএসবিএন ০২৪০৮১১৫৯৩।
- Booth, Alvin and Cotton, Charlotte, সম্পাদক (১৯৯৯)। Corpus: Beyond the Body। Edition Stemmle। আইএসবিএন ৩৯০৮১৬১৯৪০।
{{বই উদ্ধৃতি}}: উদ্ধৃতি শৈলী রক্ষণাবেক্ষণ: একাধিক নাম: সম্পাদকগণের তালিকা (লিঙ্ক) - Dawes, Richard, সম্পাদক (১৯৮৪)। John Hedgecoe's Nude Phtotgraphy। New York: Simon and Schuster।
- De Dienes, André (২০০৫)। Studies of the Female Nude। Twin Palms Publishers। আইএসবিএন ১৯৩১৮৮৫৪৪৩।
- Lewinski, Jorge (১৯৮৭)। The naked and the nude: a history of the nude in photographs, 1839 to the present। Harmony Books। আইএসবিএন ০৫১৭৫৬৬৮৩৪।
- Padva, Gilad. Nostalgic Physique: Displaying Foucauldian Muscles and Celebrating the Male Body in Beefcake. In Padva, Gilad, Queer Nostalgia in Cinema and Pop Culture, pp. 35–57 (Palgrave Macmillan, 2014, আইএসবিএন ৯৭৮-১-১৩৭-২৬৬৩৩-০).