শ্বেতাদ্রোণ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(ধুলপি থেকে পুনর্নির্দেশিত)

শ্বেতাদ্রোণ
Leucas aspera
বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস
জগৎ: Plantae
শ্রেণীবিহীন: সপুষ্পক উদ্ভিদ
শ্রেণীবিহীন: Eudicots
বর্গ: Lamiales
পরিবার: Lamiaceae
গণ: Leucas
প্রজাতি: L. aspera
দ্বিপদী নাম
Leucas aspera
কেরালার Leucas aspera

শ্বেতাদ্রোণ বা ধুলফি হল লিউকাস গণের লামিয়াসি পরিবারের একটি প্রজাতি। যদিও পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে যেখানে এটি জন্মে, বিভিন্ন নামে পরিচিত। এর বৈজ্ঞানিক নাম Leucas aspera এবং বাংলা ভাষায় একে শ্বেতাদ্রোণ, ধুলফি, দুলপি, দনকলস, ছোট হালকুশা, দন্ডকলসদুলফি শাক, দল কলস, ধুবরি, দোর কলস, কান শিশা, কাউন শিশা, ধুরপ শাক নামে ডাকা হয় ।  মৌলভীবাজার জেলার চা বাগানের মুন্ডা আদিবাসীদের ভেতর এই শাক ডুরপি নামে পরিচিত। নেত্রকোণার হাজং আদিবাসীরা শাকটিকে ডংক্লাই ও দমকলস নামে ডাকেন।[১] বাংলাদেশ ও ভারতে ধুলফি ঔষধি উদ্ভিদ ও আগাছা হিসাবে বেশি পরিচিত।[২] তবে ভারতের ত্রিপুরা ও আসামে এর কচি গাছ শাক হিসাবে খাওয়া হয়।

বিতরণ[সম্পাদনা]

শ্বেতাদ্রোণ সচরাচর ভারত, বাংলাদেশ, ফিলিপাইন সেই সাথে জাভা ও মরিশাসের সমতল ভূমিতে সর্বত্রই পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ও ভারত, ফিলিপাইনে এটি একটি সাধারণ আগাছা।

বর্ণনা[সম্পাদনা]

এই উদ্ভিদ সারা বছরই পাওয়া যায়। তবে বৃষ্টি মৌসুমের পরবর্তী সময়ে এই উদ্ভিদ বেশি দেখা যায় এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন সমতল এলাকার গ্রামে পাওয়া যায়। সাধারণত রবি শস্য (সরিষা) ক্ষেতে এই উদ্ভিদ বেশি জন্মে। এছাড়াও বাড়ির আশেপাশে, রাস্তার ধারেও এই উদ্ভিদ দেখা যায়। সিলেট এলাকায় বাঙালি হিন্দুদের ভেতর শ্যামাপূজার সময়ে ‘আটতিতা’ নামের পর্বে এই শাক অন্য শাকের সাথে মিলিয়ে খাওয়া হয়।

উপকারিতা[সম্পাদনা]

শাক হিসেবে শ্বেতদ্রোণ গ্রামবাংলার মানুষের কাছে অতি পরিচিত একটি উদ্ভিদ। ভেষজ চিকিৎসায় বহুকাল ধরে উদ্ভিদটি বহুল  হয়ে আসছে। সাধারণত কচি কাণ্ডসহ পাতা শাক হিসেবে খাওয়া হয়। ভেষজ চিকিৎসায় পাতা এবং কাণ্ড ব্যবহৃত হয়ে থাকে। জ্বর, সর্দি, কাশি, কৃমি, পেটফাঁপা, বদহজম ও বাতের ব্যথায় শ্বেতদ্রোণের উপকারিতা ও ব্যবহার অনন্য। নানাধরনের ত্বকের রোগ ও এলার্জি কমে শ্বেতদ্রোণের ব্যবহারে। এটি বিভিন্ন পোকামাকড়, সাপ ও বিছার কামড়ের চিকিৎসায় বহুল ব্যবহৃত। মেয়েদের মাসিকের সময় অতিরিক্ত রক্তপাত কমায় এটি। এছাড়া এই শাক শ্বেতপ্রদর(leucorrhoea), অ্যাজমা, সাইনাসের প্রদাহ(Sinusitis) সারায়।

উপাদানসমূহ[সম্পাদনা]

শ্বেতদ্রোণের পাতায় গ্লুকোসাইডস, ট্যানিন, স্যাপোনিন, স্টেরোলস এবং বিভিন্ন ধরনের ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে। শাখায় Aliphatic Kelos betarol রয়েছে। প্রতি ১০০গ্রাম শ্বেতদ্রোণে আছে এনার্জি: ১৬ কিলোক্যালোরি, শর্করা: ৩.৪ গ্রাম; ফ্যাট: ০.১ গ্রাম; প্রোটিন: ১.৩ গ্রাম; ফলেট: ১২মাইক্রোগ্রাম; ভিটামিন- বি-১ (থায়ামিন): ০.০৪৭ মিলিগ্রাম; ভিটামিন- বি-২ (রিবোফ্ল্যাভিন): ০.১১২ মিলিগ্রাম; ভিটামিন- বি-৩ (নায়াসিন):০.৪৮০ মিলিগ্রাম; ভিটামিন- বি-৬: ০.০৭৩ মিলিগ্রাম; ভিটামিন- সি: ২১ মিলিগ্রাম; ভিটামিন- এ: ১৩২০ I.U. (আন্তর্জাতিক একক); সোডিয়াম: ৪৫ মিলিগ্রাম; পটাশিয়াম (K): ৪৯৪ মিলিগ্রাম; ক্যালসিয়াম (Ca): ৬৫ মিলিগ্রাম; ফসফরাস (P): ৪৪ মিলিগ্রাম; ম্যাগনেসিয়াম (Mg): ৬৮মিলিগ্রাম; লৌহ: ১.৯৯ মিলিগ্রাম; জিংক (Zn): ০.১৭ মিলিগ্রাম, সেলেনিয়াম (Se): ০.৯ মাইক্রোগ্রাম, তামা (Cu): ০.১১৩ মিলিগ্রাম, ম্যাঙ্গানিজ (Mn): ০.৩০৩ মিলিগ্রাম।

সতর্কতা[সম্পাদনা]

মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারে জ্বালাপোড়া করে। গর্ভবতীদের খাবার ক্ষেত্রে অভিজ্ঞদের পরামর্শ নেয়া প্রয়োজন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "LEUCAS ASPERA (Willd.) Link."www.mpbd.info (ইংরেজি ভাষায়)। MEDICINAL PLANTS OF BANGLADESH। ২ অক্টোবর ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০ মার্চ ২০১৭ 
  2. [১] ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ জুন ২০১৮ তারিখে, Prajapati MS, Patel JB, Modi K, Shah MB. Leucas aspera: A review. Phcog Rev [serial online] 2010 [cited 2012 Apr 28];4:85-7. Available from: http://www.phcogrev.com/text.asp?2010/4/7/85/65330 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ জুন ২০১৮ তারিখে.