ধীরে দৌড়ানো (ব্যায়াম)
ব্যায়ামের জন্য ধীরে দৌড়ানো বা জগিং বলতে স্থির ও অলস গতিতে দুলকি চালে দৌড়ানোকে বোঝায়[১], যার প্রধান উদ্দেশ্য হল শরীরের উপর দ্রুত দৌড়ানোর চেয়ে কম কিন্তু হাঁটার চেয়ে বেশি চাপ সৃষ্টি করে শারীরিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করা অথবা দীর্ঘ সময়ের জন্য স্থির গতি বজায় রাখা। দীর্ঘ দূরত্ব ধরে ধীরে দৌড়ানোকে সবাত সহ্যক্ষমতা অনুশীলনের একটি উপায় হিসেবে গণ্য করা হয়।
সংজ্ঞা
[সম্পাদনা]ব্যায়ামের জন্য ধীরে বা মৃদু গতিতে দৌড়ানোর কোনও প্রমিত সংজ্ঞা নেই। সাধারণত এক্ষেত্রে একজন ব্যক্তি ঘণ্টায় ৪ থেকে ৬ মাইল (৬.৪ থেকে ৯.৭ কিলোমিটার) গতিবেগে দৌড়ে থাকেন।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]ইংরেজি ভাষায় জগ শব্দটি ১৬শ শতকের মাঝামাঝি ইংল্যান্ডে উদ্ভূত হয়েছিল।[২] শব্দটির ব্যুৎপত্তি অজানা, তবে এটি শগের সাথে সম্পর্কিত হতে পারে কিংবা একটি নতুন উদ্ভাবিত শব্দ হতে পারে।[৩] ১৫৯৩ সালে উইলিয়াম শেক্সপিয়র তাঁর টেমিং অফ দ্য শ্রু নাটকে লিখেছিলেন, "আপনার বুট সবুজ থাকতে থাকতে আপনি জগিং করতে পারেন"। সেই সময়ে, জগিং বলতে সাধারণত কোনও স্থান থেকে চলে যাওয়া বোঝাতো।[৪]
ব্যায়াম
[সম্পাদনা]দৌড়বিদরা জন্য পূর্ণশক্তিতে ব্যায়াম বা দৌড়ানোর আগে শরীর তাঁতাতে বা ঘামাতে কিংবা পূর্ণশক্তিতে ব্যায়াম বা দৌড়ানোর পরে শক্তির তীব্রতা কমাতে ধীরে দৌড়ানো ব্যবহার করতে পারে। নিবেদিত দৌড়বিদরা সবিরাম অনুশীলনের সময় দেহকে সক্রিয় রেখে পেশীশক্তি পুনরুদ্ধারের একটি উপায় হিসেবে এটিকে ব্যবহার করে। উদাহরণস্বরূপ কোনও দৌড়বিদ যদি অনূর্ধ্ব ৫ মিনিটে ১ মাইল গতিবেগে (৩ মিনিটের কমে ১ কিলোমিটার গতিবেগে) ৪০০ মিটার দৌড়ে একবার মাঠ প্রদক্ষিণ করে, তাহলে সে পেশীশক্তি পুনরুদ্ধার করার জন্য পরবর্তী প্রদক্ষিণের সময় জন্য ৮-মিনিটে ১ মাইল গতিবেগে (৫ মিনিটে ১ কিলোমিটার) নেমে ধীরগতিতে দৌড়াতে (জগিং করতে) পারে।
অধিকতর তীব্র ব্যায়ামের তুলনায় অস্থিসন্ধি ও রক্ত-সংবহনতন্ত্রের উপর চাপ কম দিয়ে শরীরের সহ্যক্ষমতা বাড়ানো এবং হৃৎবাহ-ব্যবস্থার উন্নতি করার জন্য ধীরে দৌড়ানো বা জগিং একটি কার্যকর উপায়।
উপকারিতা
[সম্পাদনা]স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের চিকিৎসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের একটি গবেষণা অনুসারে ধীরে দৌড়ানো মানুষের আয়ু বৃদ্ধিতে এবং বার্ধক্যের প্রভাব কমাতে কার্যকর[৫] ও দেহের সংবহন তন্ত্রের জন্য বিশেষ উপকারী। ধীরে দৌড়ানো অতিস্থূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করতে এবং সুস্থ থাকার জন্য উপকারী।[৬] তবে যারা মোটামুটি বা অত্যন্ত স্থূল বা মেদবহুল, তাদের সতর্কতার সাথে ধীরে দৌড়ানো অনুশীলন করা উচিত, কারণ তাদের ক্ষেত্রে ধীরে দৌড়ানোর কারণেও আঘাতের ঝুঁকি অপেক্ষাকৃত বেশি থাকে।[৭]
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় কর্কটরোগ গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (ন্যাশনাল ক্যানসার ইনস্টিটিউট) গবেষণা থেকে বেরিয়ে এসেছে যে ধীরে দৌড়ানো বা জগিং এবং অন্যান্য ধরনের সবাত (অ্যারোবিক) ব্যায়াম ফুসফুস, বৃহদান্ত্র, স্তন এবং প্রস্থিত গ্রন্থির (প্রোস্টেট) কর্কটরোগ তথা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে পারে।[৮] মার্কিন ক্যান্সার সমাজ পরামর্শ দিয়েছে যে সপ্তাহে পাঁচ দিন কমপক্ষে ৩০ মিনিট ধীরে দৌড়ানো কর্কটরোগ বা ক্যান্সার প্রতিরোধে সহায়তা করতে পারে।[৯]
যদিও পদক্ষেপ-কল (ট্রেডমিল) নামক ব্যায়ামের যন্ত্রে ধীরে দৌড়ালে স্বাস্থ্যের জন্য, যেমন ক্যান্সার প্রতিরোধে ও ওজন কমানোতে উপকার হয়, কিন্তু বিএমসি পাবলিক হেলথ গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশিত একটি গবেষণাতে প্রতিবেদন করা হয়েছে যে বহিরাঙ্গনে ধীরে দৌড়ালে শারীরিক শক্তি অপেক্ষাকৃত বেশি খরচ হয় ও মানসিক মনোযোগও বৃদ্ধি পায়। ব্যায়ামাগারে (জিমে) পদক্ষেপ-কল ব্যবহার করার চেয়ে বহিরাঙ্গনে ধীরে দৌড়ানো শারীরিক শক্তি বাড়ানো এবং মনমেজাজ ভালো করার একটি ভাল উপায়। [১০]
এছাড়া ধীরে দৌড়ানো বয়স বৃদ্ধির সাথে সাথে পেশী এবং হাড়ের যে ক্ষয় হয়, তা প্রতিরোধ করে, হৃৎযন্ত্রের কর্মক্ষমতা বাড়ায়, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং সুষম ওজন বৃদ্ধি সংরক্ষণে সহায়তা করে।
২০১৫ সালে ডেনমার্কে প্রকাশিত সমীক্ষার প্রতিবেদনে জানানো হয় যে "মৃদু" ও "মধ্যম" তীব্রতায় ধীরগতিতে দৌড়ানো তুলনামূলকভাবে ধীরগতিতে না দৌড়ানো এবং "শক্তিক্ষয়মূলক" ধীর দৌড়ানোর তুলনায় অধিকতর সাফল্যের সাথে মৃত্যুহার হ্রাস করে। ঐ গবেষণা অনুযায়ী ধীর দৌড়ানোর কাম্যতম পরিমাণ হল প্রতি সপ্তাহে ১ থেকে ২.৪ ঘন্টা, কাম্যতম সম্পাদন-হার হল প্রতি সপ্তাহে ৩ বার বা তার কম এবং কাম্যতম গতিবেগ ছিল "ধীর" বা "গড়"।[১১] দৌড়ানো/ধীর দৌড়ানে ও মৃত্যুহারের উপর একটি সাম্প্রতিক অধি-বিশ্লেষণে (যাতে ২,৩০,০০-এরও বেশি অংশগ্রহণকারীকে গণনায় ধরা হয়েছে ও যাদেরকে ৫.৫-৩৫ বছর ধরে অনুসরণ করা হয়েছে) বেরিয়ে এসেছে যে দৌড় চর্চাকারীদের মৃত্যুর ঝুঁকি দৌড় পরিহারকারীদের তুলনায় ২৭% কম।[১২]
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- ৫ কিলোমিটার দৌড়
- ব্যায়ামের পোশাক
- জিম ফিক্স
- বিশ্ব দৌড় দিবস
- ম্যারাথন
- দৌড়ের রূপরেখা
- শারীরিক ব্যায়াম
- জগ.এফএম
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "jogging"। Oxford Dictionaries। Oxford University Press। জুলাই ২১, ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ জানুয়ারি ২০১৪।
- ↑ "Jog"। Merriam-Webster Dictionary। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ "jog | Etymology, origin and meaning of jog"। etymonline (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-০৩-০১।
- ↑ Crystal, David. Think On My Words: Exploring Shakespeare's Language, Cambridge University Press, 2008. আইএসবিএন ৯৭৮০৫২১৮৭৬৯৪০ on p. 237 at Google Books
- ↑ Running slows the aging clock, Stanford researchers find ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-০৪-০৩ তারিখে, Stanford School of Medicine Press Release
- ↑ Nutrition and Exercise in Obesity Management (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1007/978-94-011-6719-2.pdf#page=104।
- ↑ Nutrition and Exercise in Obesity Management (ইংরেজি ভাষায়)। ডিওআই:10.1007/978-94-011-6719-2.pdf#page=104।
- ↑ "Physical Activity and Cancer"। National Cancer Institute। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ "American Cancer Society Guidelines on Nutrition and Physical Activity for Cancer Prevention"। cancer.org। ১৬ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ডিসেম্বর ২০১৪।
- ↑ Bowler, Diana E; Buyung-Ali, Lisette M (৪ আগস্ট ২০১০)। "A systematic review of evidence for the added benefits to health of exposure to natural environments": 456। ডিওআই:10.1186/1471-2458-10-456 । পিএমআইডি 20684754। পিএমসি 2924288 ।
- ↑ "Dose of Jogging and Long-Term Mortality The Copenhagen City Heart Study"। ফেব্রুয়ারি ২০১৫। সংগ্রহের তারিখ ৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৫।
- ↑ Pedisic, Z.; Shrestha, N. (২০১৯)। "Is running associated with a lower risk of all-cause, cardiovascular and cancer mortality, and is the more the better? A systematic review and meta-analysis Is running associated with a lower risk of all-cause, cardiovascular and cancer mortality, and is the more the better? A systematic review and meta-analysis" (পিডিএফ): bjsports–2018। ডিওআই:10.1136/bjsports-2018-100493। পিএমআইডি 31685526।
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Bowerman, William J.; Harris, W.E.; Shea, James M. Jogging, New York: Grosset & Dunlap, 1967. LCCN 67016154.
- Fixx, James. The Complete Book of Running (Hardcover), Random House; 1st edition, 12 September 1977. আইএসবিএন ০-৩৯৪-৪১১৫৯-৫.
- Fixx, James. Jim Fixx's Second Book of Running (Hardcover), Random House; 1st edition, 12 March 1980. আইএসবিএন ০-৩৯৪-৫০৮৯৮-X.
- Nilson, Finn; Lundkvist, Erik; Wagnsson, Stefan; Gustafsson, Henrik (২০১৯-১২-১৯)। "Has the second 'running boom' democratized running? A study on the sociodemographic characteristics of finishers at the world's largest half marathon"। Sport in Society। 24 (4): 659–669। আইএসএসএন 1743-0437। ডিওআই:10.1080/17430437.2019.1703687 ।