ধর্ম মান তুলাধর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ধর্ম মান তুলাধর, ১৯৩৫
কাঠমান্ডুর স্বয়ম্ভু স্তূপ, সংস্কারের অব্যবহিত পর, আনুমানিক ১৯২০
কাঠামান্ডুর তনলাছিতে ধর্ম মান তুলাধরের নিবাস

ধর্ম মান তুলাধর (দেবনাগরী: धर्म मान तुलाधर) (৪ আগস্ট ১৮৬২ – ২৪ আগস্ট ১৯৩৮) হলেন একজন নেপাল ব্যবসায়ী এবং সমাজহিতৈষী।[১][২] তিনি নেপালের কাঠমান্ডুর অন্যতম পবিত্র স্থান স্বয়ম্ভু স্তূপের সংস্কারকার্যের জন্য অধিক পরিচিত।[৩]

ধমান সাহু (নেপাল: धमां साहु) নামে সুপরিচিত তুলাধর স্বয়ম্ভুর সংস্কার কাজে নেতৃত্ব দেন, যা ১৯১৮ থেকে ১৯৩১ পর্যন্ত চলমান ছিল।[৪] এটি ছিল ২০১০ সালে স্বয়ম্ভুর পুনর্সংস্কারের পূর্বের সর্বশেষ সম্পূর্ণ সংস্কার প্রকল্প।[৫]

তিব্বতে বাণিজ্য[সম্পাদনা]

ধর্ম মান তুলাধরদের ন্যত (নেপাল: न्यत) বংশভুক্ত ছিলেন। তিনি কাঠমান্ডুর পশিমাঞ্চলের ন্যত অংশে জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯০০ এর দশকের প্রথম দিকে তনলাছিতে (নেপাল: तंलाछि) স্থানান্তরিত হন। তার স্ত্রী লক্ষ্মী তুলাধর। তার পিতা বুদ্ধ বীর সিংহ তুলাধর তিব্বতের লাসায় ছুসিংগিয়ে নামে পরিচিত একটি বাণিজ্য কুঠি এবং এবং গিয়ান্তসে, ফারি এবং ভারতের লাদাখ এবং কোলকাতায় উপবাণিজ্য কুঠি পরিচালনা করতেন।[৬][৭] বাণিজ্যের সাথে যুক্ত হয়ে ধর্ম মান লাসায় গমন করেন এবং সেখানে বেশ কয়েক বছর অতিবাহিত করেন।[৮]

১৮৯৮ খ্রিষ্টাব্দে কাঠমান্ডুতে ফিরে আসার পর তিনি বৌদ্ধদের সমর্থন দিতে থাকেন।[৯] তিনি নেপালে তীর্থযাত্রী হিসেবে আসা তিব্বতীয় লামাদের জন্য ব্যবস্থা করে দিতেন এবং তাদের ধর্মোপদেশ দানের সুবিধা করে দিতেন। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো ১৯২৪ খ্রিষ্টাব্দে কিয়াংতসে লামার কাঠমান্ডু গমন।[১০]

স্বয়ম্ভুর পুনঃপ্রতিষ্ঠা[সম্পাদনা]

তিব্বতী লামা সর্বশ্রী শাক্যশ্রী স্বয়ম্ভূর পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ধর্ম মানকে উপদেশ দেন। ১৯১৮ খ্রিষ্টাব্দে রাজা এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমতিক্রমে তিনি স্বয়ম্ভূর সংস্কারকাজ শুরু করেন। তুলাধর এ কাজের অন্যতম প্রধান অনুদানকারী ছিলেন। এছাড়া নেপাল, তিব্বত, ভুটান এবং সিকিমের লামা ও তীর্থযাত্রীদের ব্যাপক অনুদান করেন।[১১]

সম্পূর্ণ স্তূপটিই পুনর্নির্মাণ করা হয়। সর্পিলাকার কুণ্ডলীটি অপসারণ করে পুনর্প্রতিষ্ঠা করা হয়। কেন্দ্রীয় দণ্ডটির নবায়ন করা হয়।[১২] ধর্ম মান স্তূপের উপরের অংশ নবায়নের খরচ বহন করেন, যেখানে তার ভাই হর্ষ সুন্দর, রাম সুন্দর এবং কাঠমান্ডুর অসন ধলাসিক্বের পুষ্প সুন্দর তুলাধর মূল স্তূপ পাদদেশের চারপাশের নয়টি স্তূপ সংস্কারের খরচ বহন করে।

তাম্রমণ্ডিত গম্বুজে পাঁচটি বৌদ্ধ মন্দির স্থাপন করা হয়, বৈরোচন বুদ্ধের একটি নতুন মূর্তি স্থাপন করা হয় এবং তারার মূর্তি স্থাপনের জন্য আরও চারটি মন্দির নির্মাণ করা হয়। স্তূপের চারপাশে এক সারি প্রার্থনা চক্র স্থাপন করা হয়।[১৩]

সম্পূর্ণ প্রকল্পের প্রধান প্রকৌশলী ছিলেন জোগবীর স্থাপিত। এই সংস্কারকাজ তিন বছর ব্যাপী স্থায়ী ছিল। স্বয়ম্ভূর কাজ শুরু ও সমাপ্তির পর নেওয়ার যাজক এবং তিব্বতী লামারা বেশ কিছু পৃথক ধর্মীয় আচার পালন করেন।[১৪]

কিন্দু বহার সংস্কার[সম্পাদনা]

১৯২৬ খ্রিষ্টাব্দে তুলাধর কিন্দু বহার সংস্কারের পৃষ্ঠপোষকতা করেন। কিন্দু বহা স্বয়ম্ভূ টিলার পাদদেশে অবস্থিত একটি সপ্তদশ শতকের দরবারখানা, যা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছিল। এই মঠটি পরবর্তীতে থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের কেন্দ্রে পরিণত হয়। নেপালে থেরোবাদের পুনর্জাগরণের সূত্রপাত এখান থেকেই ঘটে। সরকার সন্ন্যাসীদের দেশত্যাগে বাধ্য করে আন্দোলন দমনের চেষ্টা করেছিল।[১৫][১৬]

কারাবরণ[সম্পাদনা]

থেরোবাদী বৌদ্ধধর্মের পুনর্জাগরণে তুলাধরের সম্পৃক্ততা সরকারকে ক্ষুব্ধ করে। ১৯৩১ খ্রিষ্টাব্দে তিনি অরক্ষণশীল ধর্ম প্রচারের জন্য ধম্মালোক মহাস্থবির, কবি চিত্তধর হৃদয়, যোগবীত সিং কংসকার প্রমুখ ১১ জন ব্যক্তির সাথে কারবরণ করেন।[১৭]

উত্তরাধিকার[সম্পাদনা]

ধর্ম মান তুলাধর ১৯৩৮ খ্রিষ্টাব্দে স্বগৃহে মৃত্যুবরণ করেন। তার স্মরণে স্বয়ম্ভূর শান্তিপুর মন্দিরের পূর্ব দিকে ১৯৪১ খ্রিষ্টাব্দে একটি শিলা স্তূপ নির্মাণ করা হয়।

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Sankrityayan, Mahapandit Rahul (1934) Tibet Mein Sava Baras. New Delhi: Sharda Mandir. Page 247.
  2. LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005) Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০১৯০৮-৯. Page 27.
  3. Shrestha, Suresh Suras (২০১০)। "People's Involvement in Heritage Conservation: Swayambhu Stupa Conservation" (পিডিএফ)। Cultural Heritage Protection Office, Asia-Pacific Cultural Centre for UNESCO (ACCU)। ২২ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  4. Shakya, Hem Raj. (2004) Sri Svayambhu Mahacaitya. Kathmandu: Svayambhu Vikash Mandala. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৮৬৪-০-৫. Pages 313-319.
  5. "Restoration of Swayambhu Stupa to complete in Feb 2010"The Rising Nepal। ১১ ফেব্রুয়ারি ২০১০। ১০ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৩ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  6. Tuladhar, Sidhartha Man (১৯৯৯)। "Dharma Man Tuladhar and Pratek Man Tuladhar: Nepalese Traders in Tibet" (পিডিএফ)Postal Himal: Quarterly of the Nepal and Tibet Philatelic Study Circle। Nepal and Tibet Philatelic Study Circle। ৬ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১১ নভেম্বর ২০১১  Page 23.
  7. Tuladhar, Kamal Ratna (১০ মার্চ ২০১২)। "Long ago in Ladakh"The Kathmandu Post। সংগ্রহের তারিখ ১৪ মার্চ ২০১২ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  8. LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005) Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০১৯০৮-৯. Page 102.
  9. Mahasthavir, Bhikshu Sudarshan (১৯৯৮)। "Role of Theravada in the Preservation of Newar Buddhism"। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  10. Gellner, David N. (২০০৪)। "Gyanmala Bhajan (Devotional songs)"। Lumbini Nepalese Buddha Dharma Society (UK)। ১৯ মার্চ ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  11. Gutschow, Niels (১৯৯৭)। The Nepalese Caitya: 1500 Years of Buddhist Votive Architecture in the Kathmandu Valley। Edition Axel Menges। পৃষ্ঠা 92। আইএসবিএন 9783930698752। সংগ্রহের তারিখ ৮ এপ্রিল ২০১৪ 
  12. Chitrakar, Anil (আগস্ট ২০১০)। "Celebrating Swayambhu Restoration"ECS। ২২ অক্টোবর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ফেব্রুয়ারি ২০১১ 
  13. Shakya, Hem Raj. (2004) Sri Svayambhu Mahacaitya. Kathmandu: Svayambhu Vikash Mandala. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৮৬৪-০-৫. Page 320.
  14. Shakya, Hem Raj. (2004) Sri Svayambhu Mahacaitya. Kathmandu: Svayambhu Vikash Mandala. আইএসবিএন ৯৯৯৩৩-৮৬৪-০-৫. Pages 315-319.
  15. LeVine, Sarah; Gellner, David N. (২০০৫)। Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepalবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Harvard University Press। আইএসবিএন 0-674-01908-3  Page 103.
  16. Dietrich, Angela (১৯৯৬)। "Buddhist Monks and Rana Rulers: A History of Persecution"Buddhist Himalaya: A Journal of Nagarjuna Institute of Exact Methods। ১ অক্টোবর ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ নভেম্বর ২০১২ 
  17. LeVine, Sarah and Gellner, David N. (2005). Rebuilding Buddhism: The Theravada Movement in Twentieth-Century Nepal. Harvard University Press. আইএসবিএন ০-৬৭৪-০১৯০৮-৩, আইএসবিএন ৯৭৮-০-৬৭৪-০১৯০৮-৯. Pages 40-41.