দ্য হার্ডি বয়েজ (রহস্য ধারাবাহিক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
প্রথম হার্ডি বয়েজ রহস্যকাহিনি দ্য টাওয়ার ট্রেজার-এর সংশোধিত সংস্করণের প্রচ্ছদ

দ্য হার্ডি বয়েজ (ইংরেজি: The Hardy Boys) অর্থাৎ ফ্র্যাংকজো হার্ডি নামে দুই ভাই হল শিশু ও কিশোরপাঠ্য বিভিন্ন রহস্যকাহিনি ধারাবাহিকে আবির্ভূত দুই কাল্পনিক চরিত্র। এই ধারাবাহিকগুলির কাহিনি আবর্তিত হয়েছে অপেশাদার কিশোর গোয়েন্দাদের কেন্দ্র করে, যারা তদন্তের মাধ্যমে রহস্য উদ্ঘাটন করে তাদের প্রাপ্তবয়স্ক সহকর্মীদের বিস্মিত কয়ে দেয়। চরিত্র দু’টির স্রষ্টা মার্কিন লেখক তথা বুক-প্যাকেজিং প্রতিষ্ঠান স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠাতা এডওয়ার্ড স্ট্রেটমেয়ার। বইগুলি রচিত হয়েছিল যৌথ ছদ্মনাম ফ্র্যাংকলিন ডব্লিউ ডিক্সনের আড়ালে থাকা বিভিন্ন লেখক-কর্মচারীর দ্বারা।[১]

১৯২৭ সালে প্রথম প্রকাশের পর থেকেই হার্ডি বয়েজ ধারাবাহিকের রহস্যকাহিনিগুলি বিবর্তিত হয়ে আসছে। ১৯৫৯ সাল থেকে শুরু হয় বইগুলির ব্যাপক সংশোধন। এছাড়াও টেলিভিশনের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে বইগুলি অধিকতর সরল শৈলীতে লেখা হতে থাকে।

হার্ডি বয়েজ কেসফাইলস নামে একটি নতুন হার্ডি বয়েজ ধারাবাহিকের প্রকাশ ঘটে ১৯৮৭ সালে। এই নতুন ধারাবাহিকে হত্যা, সহিংসতা ও আন্তর্জাতিক গুপ্তচরবৃত্তির মতো বিষয়গুলি চিত্রিত হয়। মূল "হার্ডি বয়েজ মিস্ট্রি স্টোরিজ" সমাপ্ত হয় ২০০৫ সালে। সেই বছরই "আন্ডারকভার ব্রাদার্স" নামে একটি নতুন ধারাবাহিক শুরু হয়। এই ধারাবাহিকে চরিত্রগুলির একটি হালনাগাদকৃত রূপ চিত্রিত হয় এবং তাদের অ্যাডভেঞ্চারের গল্প বলা হয় উত্তম পুরুষে। আন্ডারকভার ব্রাদার্স সমাপ্ত হয় ২০১২ সালে এবং ২০১৩ সালে তার বদলে দ্য হার্ডি বয়েজ অ্যাডভেঞ্চার্স প্রকাশিত হয়। এই ধারাবাহিকেও গল্পগুলি উত্তম পুরুষে বর্ণিত হয়।

এই সব পরিবর্তনের মধ্যে দিয়ে চরিত্রগুলির জনপ্রিয়তা বজায় থাকে; বছরে বইগুলির দশ লক্ষেরও বেশি কপি বিক্রি হত,[২] প্রতি বছর বেশ কয়েকটি নতুন খণ্ড প্রকাশিত হত এবং অ্যাডভেঞ্চারগুলি অনূদিত হয়েছিল পঁচিশটিরও বেশি ভাষায়। প্রধান দুই চরিত্রকে পাঁচটি টেলিভিশন অনুষ্ঠান ও বেশ কয়েকটি ভিডিও গেমেও দেখা গিয়েছে এবং টিফিনবাক্স ও জিনসের মতো পণ্যের বিজ্ঞাপনেও সাহায্য করেছে। চরিত্রগুলির দীর্ঘায়ুর অনেক ব্যাখ্যাই সমালোচকেরা দিয়েছেন। যেমন, এই ধারাবাহিকটি সহজ ইচ্ছাপূরণের প্রতিরূপ,[৩][৪] বাল্যকাল[৫] ও পৌরুষের[৬] মার্কিন আদর্শ, পরের দিকের বইগুলিতে এক সম্মানিত বাবার সঙ্গে দুই কিশোর গোয়েন্দার সম্পর্ক,[৭] এবং দুষ্টের উপর শিষ্টের জয়ের সম্ভাবনা এই ধারাবাহিকের জনপ্রিয়তার প্রধান কারণ।[৮]

পটভূমি[সম্পাদনা]

"হার্ডি বয়েজ" অর্থাৎ ফ্র্যাংক ও জো হার্ডি হল কাল্পনিক কিশোর দুই ভাই এবং অপেশাদার গোয়েন্দা। ফ্র্যাংকের বয়স আঠারো (পূর্ববর্তী সংস্করণগুলিতে ষোলো) এবং জো-র বয়স সতেরো (পূর্ববর্তী সংস্করণগুলিতে পনেরো)। তারা বাস করে বারমেট উপসাগরের তীরে বেপোর্ট শহরে[৯] তাদের বাবা গোয়েন্দা ফেন্টন হার্ডি, মা লরা হার্ডি[ক] ও তাদের গার্ট্রুড পিসির সঙ্গে। দুই ভাই বেপোর্টের উচ্চ বিদ্যালয়ে একই ক্লাসে পড়ে।[খ] কিন্তু গল্পগুলিতে স্কুলের কথা খুব অল্পই উল্লিখিত হয়েছে এবং রহস্য সমাধানের ক্ষেত্রে স্কুল কখনই বাধাস্বরূপ হয়ে ওঠেনি।[১১] পুরনো গল্পগুলিতে দেখা যায়, দুই ভাইয়ের রহস্যগুলির সঙ্গে প্রায়শই তাদের বাবার গোপন তদন্তগুলির যোগ থাকত। কখনও কখনও তিনি তাদের সহায়তা চাইতেন, কখনও বা তারা অপ্রত্যাশিতভাবেই সংশ্লিষ্ট খলনায়ক বা ঘটনাগুলির সম্মুখীন হয়ে পড়ত। আন্ডারকভার ব্রাদার্স ধারাবাহিকে (২০০৫-২০১২) দেখা যায়, হার্ডি ভ্রাতৃদ্বয় আমেরিকান টিনস এগেইনস্ট ক্রাইম নামে একটি সংগঠনের সদস্য এবং সেই সংগঠনের থেকেই তারা তদন্তভার গ্রহণ করছে। কখনও কখনও রহস্যের সমাধানে হার্ডি ভ্রাতৃদ্বয়কে সাহায্য করেছে তাদের বন্ধু চেট মর্টন, ফিল কোহেন, বিফ হোপার, জেরি গিলরয়টনি প্রিটো; এবং তুলনামূলকভাবে কম কয়েকটি ক্ষেত্রে তাদের প্লেটোনিক প্রেমিকা ক্যালি শআইয়োলা মর্টন (চেটের বোন)।

প্রতিটি উপন্যাসেই হার্ডি ভ্রাতৃদ্বয় রোমাঞ্চকর অভিযান ও সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। প্রায়শই বিপদে পড়লেই দুই ভাই "কখনও সাহস হারায় না … তারা হল কষ্টসহিষ্ণু দুই বালক, আশেপাশের সকলের চেয়ে ভাগ্যবান ও অধিকতর চতুর।"[১২][১৩] তারা বাস করে রহস্য ও ষড়যন্ত্রের এক পরিবেশে: "একটা সাধারণ মার্কিন মফঃস্বলে এত রকমের বিসদৃশ গুরুতর অপরাধ কখনও সংগঠিত হয়নি। খুন, নিষিদ্ধ ড্রাগ বিক্রি, রেসের ঘোড়া অপহরণ, হিরে চোরাচালান, ব্যাংক ডাকাতি, অপহরণ, ডিনামাইট বিস্ফোরণ, চুরি, চিকিৎসা-কেন্দ্রিক অপরাধ, বড়ো ধরনের যন্ত্র চুরি, এমনকি (১৯৪০-এর দশকেও) রণকৌশল-সংক্রান্ত নথিপত্র ছিনতাই ও গুপ্তচরবৃত্তি, বেপোর্টকে কেন্দ্র করে সব কিছুই সংগঠিত হয়েছে।"[১৪][১৫] দুই ভাইয়ের মধ্যে সাদৃশ্য এতটাই যে একজন ভাষ্যকার ঠাট্টাচ্ছলে তাদের বর্ণনা দিতে গিয়ে লেখেন: "দু’টি ছেলের চরিত্রকে মূলত এইভাবে পৃথক করা যায় – ফ্র্যাংকের চুল কালো; জো-এর সোনালি।"[১৬][১৭] যদিও সাধারণভাবে "ফ্র্যাংক ছিল চিন্তাশীল, অন্যদিকে জো ছিল আবেগপ্রবণ, এবং সম্ভবত তুলনামূলকভাবে একটু বেশি খেলোয়াড়-সুলভ।"[১৬][১৮] দুই ভাইয়ের সম্পর্ক সব সময়ই ভালো এবং নিউ হার্ডি বয়েজ কেসফাইলস ধারাবাহিকের উদাহরণটি বাদ দিলে অন্য কোথাও তাদের মধ্যে কোনও ভ্রাতৃসুলভ প্রতিযোগিতাও নেই।[১৯]

ফ্র্যাংক ও জো মোটামুটি ধনী। তারা প্রায়ই যায় দূরবর্তী স্থানগুলিতে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, দ্য মার্ক অন দ্য ডোর (১৯৩৪) কাহিনিতে তারা গিয়েছিল মেক্সিকোতে, দ্য সিক্রেট এজেন্ট অন ফ্লাইট ১০১ (১৯৬৭) কাহিনিতে স্কটল্যান্ডে, দি আর্কটিক প্যাট্রল মিস্ট্রি (১৯৬৯) কাহিনিতে আইসল্যান্ডে, দ্য মামি কেস (১৯৮০) কাহিনিতে মিশরে এবং দ্য মিস্ট্রি অফ দ্য ব্ল্যাক রাইনো (২০০৩) কাহিনিতে কেনিয়াতে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে তারা চলাফেরা করে মোটরসাইকেল, মোটর-বোট, আইসবোট, ট্রেন, বিমান,[২০] ও তাদের নিজস্ব গাড়িতে।[২১]

চরিত্র সৃষ্টি[সম্পাদনা]

১৯২৬ সালে বুক-প্যাকেজিং সংস্থা স্ট্রেটমেয়ার সিন্ডিকেটের প্রতিষ্ঠাতা এডওয়ার্ড স্ট্রেটমেয়ার চরিত্রগুলিকে প্রথম কল্পনা করেন। স্ট্রেটমেয়ার প্রকাশক সংস্থা গ্রসেট অ্যান্ড ডানলপের কাছে ধারাবাহিকটি এগিয়ে দেন এবং বলেন যে ভ্রাতৃদয়ের নাম "কিনি বয়েজ", "স্কট বয়েজ", "হার্ট বয়েজ" বা "বিক্সবি বয়েজ" হবে।[২২] গ্রসেট অ্যান্ড ডানলপের সম্পাদকেরা প্রকল্পটি অনুমোদন করলেন। কিন্তু কোনও অজ্ঞাত কারণে "দ্য হার্ডি বয়েজ" নামটি বেছে নিলেন। প্রথম তিনটি কাহিনি প্রকাশিত হয়েছিল ১৯২৭ সালে এবং তা তৎক্ষণাত সাফল্য অর্জনও করেছিল: ১৯২৯ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত ১১৫,০০০টি বই বিক্রি হয়ে যায়।[২৩] ধারাবাহিকটি এতটাই সাফল্যমণ্ডিত হয় যে স্ট্রেটমেয়ার হার্ডি ভ্রাতৃদ্বয়ের নারী প্রতিরূপ হিসেবে ন্যান্সি ড্রিউ চরিত্রটিও সৃষ্টি করেন।[২৪]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

পাদটীকা[সম্পাদনা]

  1. দ্য মিস্ট্রি অফ দ্য ফ্লাইং এক্সপ্রেস কাহিনিতে শ্রীমতী হার্ডির নাম মাইল্ডরেড বলে উল্লেখ করা হয়।[১০]
  2. নবম খণ্ডে বলা হয়েছে যে, অসুস্থতার কারণে ফ্র্যাংক এক বছর স্কুলে যেতে পারেনি।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ফ্র্যাংকলিন ডব্লিউ. ডিক্সন - স্কলাস্টিক"ডব্লিউডব্লিউডব্লিউ.স্কলাস্টিক.কম 
  2. কার্কপ্যাট্রিক (২০০১).
  3. ক্রস (২০০৪).
  4. কিসমেরিক & হাইফারম্যান (২০০৭).
  5. উড (২০০২).
  6. রিসকা (২০০৬), p. ৬৬.
  7. মরিস (১৯৯৭).
  8. কিসমেরিক & হাইফারম্যান (২০০৭), p. ১৩০.
  9. Hardy Boys Online (2011).
  10. গ্রিনওয়াল্ড (২০০৪), p. ১৪৯.
  11. ওয়েস্টফল (২০০০), p. ৩৪.
  12. কিসমেরিক & হাইফারম্যান (২০০৭), p. ৮.
  13. উদ্ধৃতি: "never lose their nerve ... They are hardy boys, luckier and more clever than anyone around them."
  14. প্রেগার (১৯৭১), pp. ১০৩–১০৪.
  15. উদ্ধৃতি: "Never were so many assorted felonies committed in a simple American small town. Murder, drug peddling, race-horse kidnapping, diamond smuggling, bank robbing, kidnapping, dynamiting, burglaries, medical malpractice, big-time auto theft, even (in the 1940s) the hijacking of strategic materials and espionage, all were conducted with Bayport as a nucleus."
  16. বার্জেস (১৯৯৯).
  17. উদ্ধৃতি: "The boys' characters basically broke down this way – Frank had dark hair; Joe was blond."
  18. উদ্ধৃতি: "Frank was the thinker while Joe was more impulsive, and perhaps a little more athletic."
  19. প্রেগার (১৯৭১), p. ১০৩.
  20. বিলম্যান (১৯৮৬), p. ৮০.
  21. ওয়েস্টফল (২০০০), p. ২২.
  22. কিসমেরিক & হাইফারম্যান (২০০৭), p. ১৮.
  23. রেহাক (২০০৬), p. ১০৮.
  24. জনসন (১৯৯৩), p. ১২.

উল্লেখপঞ্জি[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]