দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র
দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র | |
---|---|
জন্ম | ৯ সেপ্টেম্বর , ১৮৭৮ কলকাতা বেঙ্গল প্রেসিডেন্সি , বৃটিশ ভারত |
মৃত্যু | ২৬ নভেম্বর, ১৯৫০ (বয়স ৭২) কলকাতা |
মাতৃশিক্ষায়তন | মেডিক্যাল কলেজকলকাতা |
পেশা | শল্যচিকিৎসক |
সন্তান | সত্যেন মৈত্র |
পিতা-মাতা | লোকনাথ মৈত্র (পিতা) জগত্তারিণী দেবী(মাতা) |
ডাঃ দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র সংক্ষেপে দ্বিজেন মৈত্র (ইংরেজি: Dr. Dwijendranath Maitra or Dwijen Maitra in short)( জন্ম : ৯ সেপ্টেম্বর , ১৮৭৮- মৃত্যু: ২৬ নভেম্বর ,১৯৫০) এক বিশিষ্ট বাঙালি শল্যচিকিৎসক, সমাজসেবী ও বয়স্ক শিক্ষাদানের একজন পথিকৃৎ । [১]
জন্ম ও প্রারম্ভিক জীবন
[সম্পাদনা]দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্রর জন্ম কলকাতার ব্রাহ্ম সমাজভুক্ত পরিবারে। পরিবারটির আদি নিবাস ছিল বর্তমানে বাংলাদেশের রাজশাহীতে। পিতা লোকনাথ মৈত্র ছিলেন ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের সুহৃদ। তিনি বিদ্যাসাগরের ডাকে সাড়া দিয়ে কায়স্থ বিধবা জগত্তারিণী দেবীকে কাশীতে নিয়ে গিয়ে বিবাহ করেছিলেন। পিতা দক্ষ ইঞ্জিনিয়ার ছিলেন ও পরে হোমিওপ্যাথিক চিকিৎসা করতেন। দ্বিজেন্দ্রনাথ ছাত্রাবস্থায় গভীর মনোযোগের সাথে লেখাপড়া করতেন। ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে কলকাতার মেডিক্যাল কলেজ থেকে এম.বি. পরীক্ষায় প্রথম স্থান অধিকার করেন এবং সেই বৎসরেই প্রথম ভারতীয় আবাসিক সার্জেন হিসাবে মেয়ো হাসপাতালে নিযুক্ত হন। চিকিৎসাশাস্ত্রে ও শল্যচিকিৎসায় আধুনিকতম শিক্ষালাভের জন্য তিনি ১৯১২ খ্রিস্টাব্দে ইয়োরোপ ও পরে আমেরিকা যান। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরও সেই সময় বিলেতে ছিলেন। আমেরিকায় তারা একই সঙ্গে যাত্রা করেন। রবীন্দ্রনাথ সম্পর্কে বিলেতে তিনি নানা আলোচনা করেন। প্রসঙ্গত "গীতাঞ্জলি" র ভূমিকায় আইরিশ কবি ডব্লিউ বি ইয়েটস্ উল্লেখ করেছেন।
সামাজিক ক্রিয়া কলাপ
[সম্পাদনা]১৯১৫ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে জানুয়ারি "বেঙ্গল সোস্যাল সার্ভিস লিগ" এর প্রতিষ্ঠা করেন। ধর্মনিরপক্ষ সমাজসেবামূলক স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠান হিসাবে এটিকে প্রাচীনতম বলা যেতে পারে। এর প্রথম অধিবেশনে রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেন-
-
" দেশে প্রবল শক্তি শিশুবেশে এসেছে ।"
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বহুদিন এর সভাপতি ছিলেন।
সুভাষ চন্দ্র বসুও ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে এর এক সভায় এসে বলেছিলেন-
" সারা দেশ এই সংগঠনের আদর্শ অনুসরণ করুক, এটাই আমার কামনা ।"
আনুষ্ঠানিক ভাবে বেঙ্গল সোস্যাল সার্ভিস লিগ গঠনের আগে অবশ্য শিবনাথ শাস্ত্রী র দেওয়া বাংলা নাম "বঙ্গীয় হিতসাধন মণ্ডলী" হিসাবে পরিচিত ছিল। জগদীশ চন্দ্র বসু, প্রফুল্ল চন্দ্র রায়, লেডি অবলা বসু, সত্যেন্দ্রনাথ দত্ত, ব্রজেন্দ্রনাথ শীল, কালিদাস নাগ সহ প্রায় একশো জন গণ্যমান্য ব্যক্তি এর সদস্য হন। দৃষ্টি-গ্রাহ্য উপকরণের সাহায্যে বয়স্ক শিক্ষাদানের তিনি একজন পথিকৃৎ। সমাজসেবা-কর্মীদের প্রশিক্ষণের জন্য ১৯২৪ খ্রিস্টাব্দে 'স্কুল অব পপুলার এডুকেশন ' চালু করেন। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির উন্নতির জন্য 'ফেলোশিপ ক্লাব' স্থাপন করেন। সমাজ কল্যাণে নিজের অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দে তিনি সোভিয়েত রাশিয়াতে যান। ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দে জাপান ও চীন পরিভ্রমণ করেন। তারই চেষ্টায় ১৯৪৪ খ্রিস্টাব্দে বয়স্ক শিক্ষাকেন্দ্র 'শ্রীনন্দা' স্থাপিত হয়। 'কালচারাল ফেলোশিপ উইথ ফরেন কান্ট্রিজ' তার স্থাপিত অপর এক প্রতিষ্ঠান। তার বহু ভাষণ পুস্তিকাকারে প্রকাশিত হয়েছে। সমাজসেবী ও শিক্ষাব্রতী সত্যেন মৈত্র তার পুত্র ও তার প্রবর্তিত কর্মযজ্ঞের যোগ্য উত্তরসূরি।
মৃত্যু
[সম্পাদনা]দ্বিজেন্দ্রনাথ মৈত্র ৭২ বৎসর বয়সে ১৯৫০ খ্রিস্টাব্দের ২৬ শে নভেম্বর কলকাতায় পরলোক গমন করেন ।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ সুবোধচন্দ্র সেনগুপ্ত ও অঞ্জলি বসু সম্পাদিত, সংসদ বাঙালি চরিতাভিধান, প্রথম খণ্ড, সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, আগস্ট ২০১৬, পৃষ্ঠা ৩১১, আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-৭৯৫৫-১৩৫-৬