দোরলা জনগোষ্ঠী

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দোরলা
দোর কোই
উল্লেখযোগ্য জনসংখ্যার অঞ্চল
বস্তার রাজ্য ভারত
ভাষা
দোরলা ভাষা
ধর্ম
হিন্দু ধর্ম
সংশ্লিষ্ট জনগোষ্ঠী
গোণ্ড উপজাতি

দোরলা, বা দোরাও বলা হয়, মূলত মধ্য ভারতের বস্তার এলাকায় দেখতে পাওয়া একটি উপজাতীয় জনগোষ্ঠী। এরা প্রধানত বর্তমান ছত্তিশগড় রাজ্যের দান্তেওয়াড়া এবং বিজাপুর জেলায় বসবাস করে।[১] তারা বাস্তার বিভাগের সুকমা এবং বিজাপুর জেলায় বসবাসকারী গোণ্ড উপজাতির একটি উপ বিভাগ। তারা তাদের নিজস্ব দোরলি উপভাষায় কথা বলে। তাদের গোষ্ঠী দুটি ভাগে বিভক্ত এবং একই বংশের মধ্যে বিবাহ নিষিদ্ধ। তাদের পরিবার বেশিরভাগই ছোট পরিবার, ৫ থেকে ৬ সদস্য নিয়ে গঠিত। তাদের অর্থনীতি বনজ পণ্য সংগ্রহ, কৃষি, পশুপালন এবং শ্রমের কাজের উপর ভিত্তি করে তৈরি। প্রায় সব পরিবারেরই নিজস্ব জমি আছে। সাধারণত পরিবার প্রতি বার্ষিক আয় ২৫,৩৭৯ টাকা। এই উপজাতিতে, মন্তর সানি নামক ঐতিহ্যবাহী ধাত্রীর সাহায্যে বাড়িতেই শিশু প্রসব করানো হয়। [২]

সামাজিক মর্যাদা[সম্পাদনা]

১৯৫৭ সালে ভারতের নৃতাত্ত্বিক জরিপ দ্বারা দোরলা জনগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি চর্চা গৃহীত হয়েছিল এবং বাস্তারের দোরলাতে উপজাতির বিবরণ সংকলিত হয়েছিল।[৩] তারা আগে দোর কোই বা দোরা কোই নামে পরিচিত ছিল এবং যেহেতু এটি সমাজে একটি সামান্য নিকৃষ্ট মর্যাদা নির্দেশ করে, তাই তারা ধীরে ধীরে নাম পরিবর্তন করে দোরা বা দোরলা করে নিয়েছে।[৪] তারা সাধারণত কৃষিকাজ করে এবং কেবল বনাঞ্চলে বাস করে। তাদের বেশিরভাগই নিরক্ষর এবং তারা অতিপ্রাকৃত শক্তি ও জাদুবিদ্যায় দৃঢ় বিশ্বাস রাখে।[৪] তারা মুত্তা-লাম্মা, গঙ্গাম্মা, গামন, কিরোর ইত্যাদির মতো দেশীয় দেবতা বা দেবীরও পূজা করে এবং হিন্দু ঐতিহ্য অনুসরণ করে।[৪] তারা দোরলি বা দোরলা ভাষায় কথা বলে, যেটি একটি দ্রাবিড় ভাষা এবং সেটি কোয়া ভাষা এর একটি উপভাষা।[৫]

ধর্ম[সম্পাদনা]

দোরলা সম্প্রদায় প্রধানত হিন্দু ধর্ম পালন করে। তাদের গ্রাম দেবতা গামাম, যার মূর্তিটি মহুয়া কাঠ দিয়ে তৈরি করা হয়। তারা মহুয়া পান্ডুম, বেজ পান্ডুম, জিরা পান্ডুম প্রভৃতি উৎসব পালন করে। তারা কোদ্দি পান্ডুম, কোদাটা পান্ডুম ইত্যাদি ধানের উৎসব পালন করে। তারা সর্বপ্রাণবাদ তত্ত্বে বিশ্বাস করে।[২]

সামাজিক আচার[সম্পাদনা]

দোরলাদের মধ্যে সন্তান জন্মের ৬ষ্ঠ দিনে পুরুদ (ছাট্টি) নামক প্রথম অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়। শিশুর তিন মাস বয়স হলে হয় মুণ্ডন অনুষ্ঠান। দোরলা উপজাতির আরও কিছু আচারের একটি হল মুখ কোটানা - এটি হল ৫ থেকে ৬ বছর বয়সী একটি মেয়ের নাক বা কান বেঁধানো। এছাড়া আছে কালা গোকু অনুষ্ঠান - কন্যা সন্তান বয়ঃসন্ধি লাভ করলে এই অনুষ্ঠানটি পালন করা হয়। তারা দূর সম্পর্কের ভাই বোনের মধ্যে বিবাহ অনুমোদন করে। তাদের মধ্যে কনের দামের প্রথাও প্রচলিত আছে। দোরলা সমাজে কোনো ব্যক্তি মারা গেলে গ্রাম থেকে দূরে একটি জায়গায় তার মৃতদেহ সমাধিস্থ করা হয়। মৃত্যু আচার চিন্না বিনাল ৩য় দিনে হয়। আরেকটি আচার পেদ্দা বিনাল ১১ তম দিনে হয়। [২]

সংস্কার[সম্পাদনা]

দোরলা মানুষ বনজ দ্রব্য সংগ্রহ করত, যেমন তেন্দু পাতা যা বিড়ি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। তারা তেন্দু পাতা কেনাবেচা করতে গিয়ে বনের ঠিকাদারদের দ্বারা হয়রানির শিকার হত। তারপরে উপজাতির কিছু সদস্য, তাদের মধ্যে একজন ভদ্রান্না, তাদের সম্প্রদায়ের পক্ষে ন্যায়বিচার পাবার আশায় মাওবাদী দলে যোগ দেয়। ভদ্রান্না মাওবাদীদের হয়ে লড়াই করে এবং আত্মসমর্পণের পর মূল স্রোতে ফিরে আসে কিন্তু আরও কয়েকজন এখনও চালিয়ে যাচ্ছে।[৬]

দোরলা মানুষ খুব ঐক্যবদ্ধ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Being Neutral is Our Biggest Crime": Government, Vigilante, and Naxalite Abuses in India's Chhattisgarh State। Human rights watch। ২০০৮। পৃষ্ঠা 21। 
  2. "ETHNOGRAPHIC_STUDY_OF_DORLA_TRIBE@2015_16.pdf"TRIBAL DIGITAL DOCUMENT REPOSITORY। সংগ্রহের তারিখ ৩ মার্চ ২০২২ 
  3. Vidyarthi, Lalitha Prasad (১৯৭৮)। Rise of Anthropology in India: A Social Science Orientation, Volume 1। Delhi: Concept Publishing Company। পৃষ্ঠা 155। 
  4. Prasad, Sachchidananda, R.R. (১৯৯৫)। Encyclopedic Profile of Indian tribes (1st সংস্করণ)। Columbia, MO: South Asia Books। পৃষ্ঠা 359। আইএসবিএন 9788171412983 
  5. "Koya"। Ethnologue। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৪ 
  6. Pandita, Rahul (১৪ এপ্রিল ২০১৪)। "The war of winning hearts"The Hindu। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১৪