দেয়াঙ পাহাড়

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(দেয়াং পাহাড় থেকে পুনর্নির্দেশিত)
দেয়াঙ পাহাড়
দিয়াং
দেয়াঙ পাহাড় বাংলাদেশ-এ অবস্থিত
দেয়াঙ পাহাড়
দেয়াঙ পাহাড়
সর্বোচ্চ বিন্দু
স্থানাঙ্ক২২°১৬′২৫″ উত্তর ৯১°৫০′৫৪″ পূর্ব / ২২.২৭৩৫৫১৯° উত্তর ৯১.৮৪৮৩৯৮১° পূর্ব / 22.2735519; 91.8483981
ভূগোল
অবস্থানআনোয়ারা-কর্ণফুলী
দেশবাংলাদেশ
জেলাচট্টগ্রাম

দেয়াঙ পাহাড় (দিয়াং নামেও পরিচিত) বাংলাদেশের চট্টগ্রামের একটি ঐতিহাসিক পাহাড়। এটি চট্টগ্রামের কর্ণফুলী নদীর দক্ষিণ তীরবর্তী বর্তমান আনোয়ারা-কর্ণফুলীর বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে অবস্থিত। এই অঞ্চলেই আরাকানিদের চাটিগাঁ দুর্গ ও দেয়াঙ কারাগার অবস্থিত ছিল,[১] যে কারাগারে ১৫শ খ্রিষ্টাব্দে মহাকবি আলাওল আরাকানিদের হাতে ধরা পড়ে বন্দী ছিলেন।[২] উনিশ শতকের শুরুর দিকে পর্তুগিজদের আগমনের পর অঞ্চলটি 'ফিরিঙ্গি বন্দর' নামে পরিচিত ছিল।[৩]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিক ভাবে জানা যায় ১৫১৮ সালে পর্তুগিজ বণিকদের চট্টগ্রামে আগমন ঘটে। পরবর্তীতে ১৫৩৭ সালে তারা দিয়াংয়ে বসতি গড়ে তোলে।[৪] আলাওল তার সতীময়না কাব্যে দেয়াঙয়ের কথা বলেছেন:

কর্ণফুলী নদী পূর্বে আছে এক পুরী।
রোসাঙ্গ নগর নাম স্বর্গাবতারি।

— আলাওল, সতীময়না লোরচন্দ্রানী, ১৬৫৯

আরাকান রাজাদের রাজধানী ছিল দেয়াঙ। দেয়াঙ একসময় ত্রিপুরা রাজাদের অধীনেও ছিল। ১৫৩৭ সালে সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ সামরিক সাহায্যের বিনিময়ে পর্তুগিজ বণিকদের দেয়াঙ পাহাড়ে কুঠি ও গির্জা নির্মাণের অনুমতি দেন।[৪] অনেকের মতে ধারণা করা হয় চট্টগ্রামের প্রাচীন পণ্ডিতবিহার বিশ্ববিদ্যালয় এই দেয়াঙ পাহাড়ে অবস্থিত ছিল।[৫][৬] মোগল আমলে আরাকানি সৈন্যরা ফিরিঙ্গি বন্দর ও ফিরিঙ্গি পল্লীর নিকট তিনটি ঘর নির্মাণ করে। প্রে আরাকানিদের পরাজিত করে মোগল সেনারা দিয়াংয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়। ধারণা করা হয়, পণ্ডিতবিহার তখনই ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে থেকে জানা যায় ১৯৪০ সালের ২৮ ডিসেম্বর, কলকাতায় অনুষ্ঠিত জমিয়তে উলামায়ে হিন্দের এক সর্বভারতীয় সম্মেলনে মনিরুজ্জামান ইসলামাবাদী সভাপতির ভাষণে চট্টগ্রাম অঞ্চলে একটি ‘ইসলামিক বিশ্ববিদ্যালয়’ নির্মাণের কথা উপস্থাপন করেন এবং একই লক্ষ্যে তিনি চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার দেয়াঙ পাহাড়ে উক্ত বিশ্ববিদ্যালয় নির্মানের জন্য ভূমি ক্রয় করেছিলেন।[৭][৮]

দেয়াঙ পাহাড়ের পাদদেশে রয়েছে ২০০ বছরের পুরোনো ঐতিহাসিক বড় উঠান মিয়া বাড়ি।[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. জামাল উদ্দিন (নভেম্বর ২৪, ২০১৩)। "কালারপোল যুদ্ধের অজানা অধ্যায় - পোড়োজমিতে মিশে আছে চার শহীদের দেহভস্ম"দৈনিক আজাদী। চট্টগ্রাম: মোহাম্মদ খালেদ। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২২, ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  2. জামাল উদ্দিন (জুলাই ১৬, ২০১৫)। "শাহ সুজা ও পরীবানু"দৈনিক ভোরের কাগজ। চট্টগ্রাম: মোহাম্মদ খালেদ। ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২২, ২০১৬ 
  3. "পর্তুগিজদের চাটিগাম"বণিক বার্তা। চট্টগ্রাম: bonikbarta.com। এপ্রিল ২২, ২০১৬। ২০১৬-০৮-০১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২১, ২০১৬ 
  4. নিজস্ব প্রতিনিধি (১০ ডিসেম্বর ২০২২)। "সাগর, প্রাচীন স্থাপত্য আর পাহাড় একান্তে যেখানে"আনোয়ারা: দৈনিক সুপ্রভাত বাংলাদেশ। ১৬ ডিসেম্বর ২০২২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২৩ 
  5. খালেদ, মোহাম্মদ, সম্পাদক (নভেম্বর ১৯৯৫)। "শিক্ষা"। হাজার বছরের চট্টগ্রাম (৩৫ বর্ষপূর্তি বিশেষ সংখ্যা)। চট্টগ্রাম: এম এ মালেক। 
  6. জামাল উদ্দিন (সেপ্টেম্বর ২২, ২০১৪)। "ভারতবর্ষে বৌদ্ধধর্মের প্রসার ও বিলুপ্তির ইতিহাস- আশ্রয়স্থল চট্টগ্রাম পণ্ডিত বিহার"nirvanapeace.com। nirvanapeace.com। ১২ এপ্রিল ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ আগস্ট ২১, ২০১৬..ঝিওরী গ্রাম থেকে দু’মাইল উত্তরে খিলপাড়া ও কৈনপুরা গ্রামে ১৯৮৩ খ্রিস্টাব্দে আরও কয়েকটি বুদ্ধমূর্তি ও প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ আবিষ্কৃত হয়। এ মূর্তিগুলোই ইতিহাসবিদদের সামনে পণ্ডিতবিহার বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানস্থল যে দেয়াঙ পাহাড় তার প্রমাণ অনেকাংশে নিশ্চিত করে দেয়। 
  7. ফয়েজুল আজিম (২০১২)। "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  8. "চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়"chittagongdiv.gov.bd (ইংরেজি ভাষায়)। chittagongdiv। সংগ্রহের তারিখ জুলাই ১২, ২০১৫ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]
  9. জামান, কাজী আলিম-উজ-জামান (৩১ আগস্ট ২০১৮)। "দেয়াঙ পাহাড়ের জমিদারবাড়ি"। কর্ণফুলী: দৈনিক প্রথম আলো। ২৯ জুন ২০২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ জুন ২০২৩