দেবী চৌধুরাণী (ব্যক্তি)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দেবী চৌধুরাণী
জন্ম
জয়দুর্গা দেবী

দাম্পত্য সঙ্গীনারায়ণ চন্দ্র চৌধুরী
পিতা-মাতা
  • ব্রজ কিশোর চৌধুরী (পিতা)
  • কাশীশ্বরী দেবী (মাতা)

দেবী চৌধুরাণী ছিলেন একজন নারী ব্রিটিশবিরোধী নেত্রী ও পীরগাছার জমিদার। তিনি ব্যান্ডিট কুইন বা দস্যুরানি নামেও পরিচিত।

পরিচয়[সম্পাদনা]

দেবী চৌধুরানী বাংলাদেশের রংপুরের কাউনিয়া উপজেলায় জন্ম গ্রহণ করেন। তার জন্ম নাম ছিল জয়দুর্গা দেবী। তার বাবার নাম ছিলো ব্রজ কিশোর চৌধুরী এবং মাতার নাম কাশীশ্বরী দেবী।[১]

মন্থনা তথা পীরগাছার জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং সন্ন্যাসী বিদ্রোহের সময় তিনি সেই এলাকার জমিদার ছিলেন। স্বামীর মৃত্যুর পর নিঃসন্তান জয়দুর্গা ১৭৬৫-১৮০১ পর্যন্ত মন্থনা এস্টেটের দায়িত্ব সামলেছিলেন।

তার সময় রংপুর অঞ্চলের কালেক্টর হয়ে আসেন জনাথন গুডল্যাড এবং তার দেওয়ান নিযুক্ত হন দেবীসিংহ। দেওয়ান দেবীসিংহ ও তার কর্মচারী হরে রামের উপর রাজস্ব আদায়ের দায়িত্ব প্রদান করেন। রাজস্ব আদায়ে সময় তাদের অত্যাচারে কৃষক এমনকি জমিদাররাও অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এছাড়াও সেই সময় ইংরেজ নীলকরদের অত্যাচার বেড়ে যায়,তারা জোরপূর্বক উর্বর জমিতে কৃষকদের নীলচাষ করতে বাধ্য করা শুরু করে।তারই পরিপ্রেক্ষিতে দেবী চৌধুরাণী ব্রিটিশদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করে। আর তার কারণে তিনি ব্রিটিশদের রোষানলে পড়ে। তাকে দমন করার জন্য মীর কাশিমের নেতৃত্বে একদল ইংরেজ সৈন্যবাহিনী পাঠায়। এ যুদ্ধে দেবী চৌধুরানীর সাথে রংপুরের নূর উদ্দিন বাকের মুহাম্মদ জং,ভবানী পাঠক এবং দিনাজপুর, রংপুর ও বগুড়া অঞ্চের শত শত কৃষক অংশ নেয়।১৭৬০ সালে ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধ শুরু হয়। যুদ্ধে দেবী চৌধুরাণী জয়লাভ করে। যুদ্ধে ইংরেজ ক্যাপ্টেনসহ অনেকে নিহত হন এবং মীর কাশিম পিছু হটতে বাধ্য হন।দেবী চৌধুরাণীর যুদ্ধে জয়লাভের স্থানটি এখনও মানুষের কাছে "জয়পুর" নামে পরিচিত।

মৃত্যু[সম্পাদনা]

১৭৮৩ সালে এপ্রিল মাসে পহেলা বৃহস্পতিবার (বর্তমান পীরগাছা উপজেলার চন্ডিপুর গ্রাম) লর্ড ওয়ারেন হেস্টিংস এর নেতৃত্বে একদল ইংরেজ বাহিনীর আধুনিক অস্ত্রের সাথে যুদ্ধ করে পরাজিত এবং নিহত হন।এই যুদ্ধে দেবী চৌধুরাণীর সাথে অন্নদানগরের জমিদারও নিহত হন।দেবী চৌধুরাণীর পরাজিত স্থানে বাংলা বৈশাখ মাসের প্রতি বৃহস্পতিবার মেলা বসে। যা "নাপাইচন্ডি" মেলা নামে পরিচিত।

স্মৃতিচিহ্ন[সম্পাদনা]

তার নামে রংপুরে দেবী চৌধুরাণী ডিগ্রী কলেজ, চৌধুরাণী রেলস্টেশন, চৌধুরাণী উচ্চ বিদ্যালয়, চৌধুরাণী বাজার রয়েছে।[২]

তার খননকৃত বিশাল চৌধুরাণী দিঘি, চন্ডিপুর দিঘি এবং মন্থনার রাজবাড়ি আজো টিকে আছে কালের সাক্ষী বহন করে। দেবী চৌধুরানী ক্ষণজন্মা এক জনহিতৈষী নারী ও তেজস্বী বিপ্লবী। তিনি তার জীবনেও যেমন আলোচিত প্রথমে সংসারী ছিলেন পরে সন্নাসী হিসেবে। তাকে নিয়ে করা উপন্যাস, গল্প, সিরিযাল, নাটক ও সিনেমাতে। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার পারুল ইউনিয়ন পার হলে চন্ডীপুর বাজারে নাপাই চন্ডীর বৈশাখি মেলা হয়। এই স্থানটিতে ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে যুদ্ধ করেন দেবী চৌধুরানী। চৌধুরানী বাজারটিও এলাকায় বেশ বড় বাজার হিসেবে পরিচিত। সন্ন্যাসী বিদ্রোহের অন্যতম রূপকার ও খ্যাতিমান নেত্রী দেবী চৌধুরানীর অবাধ বিচরণস্থল ছিল পীরগাছা । নওয়ার দেবীগঞ্জও তার স্মৃতির এলাকা। করতোয়া, তিস্তা, আত্রাই ও কুড়ুম নদীতে ঘেরা এখানকার ঘন বনাঞ্চলে ব্রিটিশদের সাথে তিনি কয়েক দফা যুদ্ধে অবতীর্ণ হয়ে বিজয়ী হন। তার স্মৃতি থেকেই এর নামকরণ হয় দেবীগঞ্জ। তবে এই নামের পেছনে অন্য একটি মতও আছে। এ জনপদটি পূর্বে হিন্দু-অধ্যুষিত ছিল। কেউ কেউ বলেন, তাদের দেব-দেবীর নাম থেকেই দেবীগঞ্জ নামটি আসতে পারে। এছাড়াও রংপুরের দেবী চৌধুরানী রেলস্টেশন, চৌধুরানী ডিগ্রি কলেজ এবং চৌধুরানী বাজার আজও তার স্মৃতি বহন করে চলেছে। ইতিহাস সংরক্ষণ হোক বা না হোক, সময়ে সময়ে দেবী চৌধুরানী, ভবানী পাঠকদের মতো বিপ্লবীদের আবির্ভাব হয়েছে, যারা আড়ালে থেকে অসহায় মানুষদের রক্ষার জন্য অন্যায়ের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেছেন। ইতিহাস থেকে জানা যায়, তৎকালীন জনসাধারণের শ্রদ্ধা, ভালোবাসা এবং জনসমর্থনের কারণে ইংরেজরা ‘দেবী চৌধুরানী’কে মেয়ে ডাকাত হিসেবে চিহ্নিত করলেও শত চেষ্টা করে আটক করতে পারেনি। তবে ইতিহাস অনুসন্ধানী অনেক বিশেষজ্ঞদের মতে, বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় উল্লেখিত প্রফুল্ল নয় বরং ‘দেবী চৌধুরানী’ ছিলেন রংপুরের কাউনিয়া উপজেলার জয়দূর্গাদেবী (ব্রাহ্মণাদেবী) নামের শিবুকুণ্ঠিরাম (বামনপাড়া বা ভুতছড়া) গ্রামের ব্রজ কিশোর রায় চৌধুরী ও কাশিশ্বরী দেবীর মেয়ে।

পীরগাছার জমিদার নারায়ণ চন্দ্র চৌধুরীর সঙ্গে তার বিয়ে হয় এবং সন্যাস বিদ্রোহের সময় তিনি জমিদার ছিলেন। তবে ইংরেজ সরকারের তৎকালীন দলিল দস্তাবেজে ‘দেবী চৌধুরানী’ জমিদার ছিলেন কিনা বা এতে তার সম্পৃক্ততার কোনো প্রমাণ পাওয়া যায় না।

‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাস সম্পর্কে লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় নিজেই বলেছেন, ‘দেবী চৌধুরানী’ গ্রন্থের সঙ্গে ঐতিহাসিক ‘দেবী চৌধুরানী’র মিল বড়ই অল্প। তা শ্রীযদুনাথ উপন্যাসটির ভূমিকায় উল্লেখ করেছেন।

এই অঞ্চলের মানুষের কাছে প্রফুল্লই যে ‘দেবী চৌধুরানী’ ছিলেন সেটাই আজও সর্বজন স্বীকৃত। কিন্তু ‘দেবী চৌধুরানী’র ঐতিহাসিক এ ঘটনার স্থাপনা সংরক্ষণ করা হয়নি আজও। ফলে তার স্মৃতিচিহ্নগুলো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে। দেখার মতো কোনো স্থাপনা টিকে নেই। এখন এখানে শুধু মকসুদ খাঁ গ্রামে দেখতেই পাওয়া যাবে স্থাপনার জায়গায় ইটের টুকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, বগুড়ার সান্তাহার থেকে গাইবান্ধার বোনারপাড়া হয়ে রংপুরের কাউনিয়া রেলরুটের রংপুরের চৌধুরানী স্টেশন থেকে বের হয়ে পাকা রাস্তা ধরে রংপুরের দিকে যেতে হাতের ডান দিক দিয়ে হেঁটে চৌধুরানী বাজারে যেতে সময় লাগবে ৫ মিনিট। বাজারে কৈকুড়ী ইউনিয়ন পরিষদ পার হয়ে যাওয়ার পর হাতের বাম পাশে একটি পাকা রাস্তা পাওয়া যাবে। এই রাস্তাটি গেছে জালালগঞ্জ বাজারের দিকে।

এখান থেকে ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাযোগে জালালগঞ্জ রোডের রামচন্দ্রপাড়ার নুরনবীর দোকানের পেছন দিয়ে গ্রামের আঁকা-বাঁকা মেঠোপথ দিয়ে যেতে হবে পূর্ব মকসুদ খাঁ হাজীপাড়ার আব্দুল মোত্তালেব, চাঁন মিয়া ও আবু দাইয়ানের বাড়ি সংলগ্ন দেবী চৌধুরানীর পুরনো স্থাপনার জায়গায়। চৌধুরানী বাজার থেকে জালালগঞ্জ বাজারের দিকে যাওয়ার সময় রাস্তার দুই পাশে দেখা মিলবে সারি সারি নারিকেল গাছ। যা দেখতে দৃষ্টি কাড়বে সবার।

এই স্থাপনার জায়গাটি থেকে পশ্চিম দিকে ঘাঘট নদীর তীরে পশ্চিম মকসুদ খাঁ ডাক্তারপাড়া গ্রামে ছিল আরেকটি স্থাপনা। এই স্থাপনার জায়গাটি এখন ঘন গাছ-পালায় পরিপূর্ণ। স্থাপনার জায়গা ঘিরে এখনো রয়েছে ‘দেবী চৌধুরানী’র আমলে তৈরি করা একটি খাল। এ ছাড়া চৌধুরানী বাজারের উত্তর পাশে মসজিদ সংলগ্ন ‘দেবী চৌধুরানী’র একটি বিশাল পুকুরের দেখা মিলবে।

গাইবান্ধা শহর থেকে পূর্ব মকসুদ খাঁ হাজীপাড়া ও পশ্চিম মকসুদ খাঁ ডাক্তার পাড়া গ্রামের দূরত্ব প্রায় ৫৬ কিলোমিটার। এ ছাড়া সড়কপথে যাওয়া যাবে রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের চৌধুরানী বাজারে। যেতে হবে গাইবান্ধা শহরের জিরো পয়েন্টের পুরাতন জেলখানা মোড় থেকে ম্যাজিক গাড়িতে। নামতে হবে সুন্দরগঞ্জ উপজেলার বাইপাস রোডে। এখান থেকে রংপুরমুখী বাসগুলো চৌধুরানী বাজারের ওপর দিয়ে যায় রংপুর শহরে।

পূর্ব মকসুদ খাঁ হাজীপাড়া গ্রামে যেখানে ‘দেবী চৌধুরানী’র একটি স্থাপনা ছিল। সে জায়গাটির মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশ জমি এখনো পতিত রয়েছে। সেখানে বাঁশঝাড়, সুপারি, পেয়ারা ও কচুগাছ রয়েছে। জন্মেছে ছোট-বড় আগাছা। ডেবে যাওয়া ওই স্থানের ওপরে ও আশেপাশে ইটের টুকরা দেখতে পাওয়া যায়। পতিত জমির মালিকানায় রয়েছে চারজন। আশেপাশে গড়ে উঠেছে ব্যক্তি মালিকানাধীন অনেক বসতবাড়ি। এসব বাড়ির আঙ্গিনায় দেখা মিলবে সেই সময়ের ইটের টুকরা।

‘দেবী চৌধুরানী’র আরেকটি স্থাপনা রয়েছে পশ্চিম মকসুদ খাঁ ডাক্তার পাড়া গ্রামের ঘাঘট নদীর তীরে। এই স্থাপনার জায়গায় গড়ে উঠেছে নার্সারি, আম বাগান, আখ ও সবজির খেত। জায়গাটির চারপাশে রয়েছে একটি খাল। নদীভাঙলে ‘দেবী চৌধুরানী’র স্থাপনার ইট দেখতে পাওয়া যায়। পূর্ব মকসুদ খাঁ হাজীপাড়া গ্রাম থেকে পশ্চিম মকসুদ খাঁ ডাক্তার পাড়া জামে মসজিদের পাশে দিয়ে পশ্চিম দিকে স্থাপনাটিতে হেঁটে যেতে সময় লাগবে প্রায় ১০ মিনিট।

স্থানীয়রা জানায়, ‘দেবী চৌধুরানী’র স্থাপনা দুটি মাটির নিচে ডেবে গেছে অনেক আগেই। বর্তমানে ‘দেবী চৌধুরানী’র স্থাপনার সম্পত্তি বংশ পরম্পরায় ভোগদখলে আছে। দুটি স্থাপনা অনেক উঁচু ছিল। সময়ের বিবর্তনে এখন স্থাপনার জায়গাগুলো নিচু হয়ে গেছে। বিভিন্ন সময়ে ভারতসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে মানুষ আসেন ‘দেবী চৌধুরানী’র স্থাপনা দেখতে।

দেবী চৌধুরানীর স্মৃতিচিহ্ন ভারতের পশ্চিমবঙ্গেও পাওয়া যায়। যেমন- জলপাইগুড়ির দেবী চৌধুরানী কালী মন্দির, শিকারপুরের সন্ন্যাসী ঠাকুরের মন্দির, বেলাকোবা-রাধামালি রোডের মন্থনী মন্দির।[৩] [৪][৫][৬]এছাড়া দুর্গা‌পুরে তার স্মৃতিবিজড়িত স্থান ভবানী পাঠকের টিলা,সুড়ঙ্গ,ভবানী পাঠকের কালী মন্দির আছে।[৭]

বর্তমানে পীরগাছাতে দেবী চৌধুরানী গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়েছে। পীরগাছা কলেজের সাবেক শিক্ষার্থীরা তাঁর বিষয়ে গবেষণা করছেন। দেবী চৌধুরানী গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেন সাংবাদিক ও গবেষক রিবেল মনোয়ার। তিনি নিজেই পীরগাছার পারুল ইউনিয়নের সন্তান। তিনি বলেন, নিজের এলাকার একজন বিপ্লবীর আদর্শ আগামি প্রজন্মের কাছে তুলে ধরাই আমাদের প্রচেষ্টা।

তাঁর স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে রংপুরের পীরগাছাতে দেবী চৌধুরানী আইন বিশ্ববিদ্যালয় তৈরি করা হচ্ছে।[৮]

জনপ্রিয় সংস্কৃতিতে[সম্পাদনা]

‘দেবী চৌধুরানী’ মানে এক জীবন সংগ্রামীর কাহিনী। বাল্যকালেই যিনি হয়েছেন পিতৃহারা, লাঞ্ছনা আর অপমানের শিকার। সহায়-সম্বলহীন মায়ের সঙ্গেই বেড়ে ওঠেন ‘দেবী চৌধুরানী’।

সব প্রতিকূলতার সঙ্গে লড়াই করে দুঃখ-কষ্ট জয় করে একসময় ইংরেজ ও জমিদারদের শাসন-শোষণের শিকার নিরীহ মানুষদের নয়নের মণি হয়ে ওঠেন ‘দেবী চৌধুরানী’।

সেসব ঐতিহাসিক ঘটনা ১৮৮৪ সালে লেখনির মাধ্যমে ফুটে তুলেছেন লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। উপন্যাসটি গ্রন্থাকারে প্রথম প্রকাশিত হয় ১৮৮৪ সালেই।

লেখক বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় ইংরেজ শাসনামলে রংপুর জেলায় ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। লেখক এবং একজন ইতিহাস গবেষক হিসেবে তিনি ‘দেবী চৌধুরানী’র জীবনভিত্তিক এই উপন্যাস রচনা করেন। বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের জীবিতকালে ‘দেবী চৌধুরানী’ উপন্যাসটির ছয়টি সংস্করণ প্রকাশিত হয়।

‘দেবী চৌধুরানী’ নামে ভারতের কোলকাতার স্টার জলসা চ্যানেলে যে সিরিয়াল (নাটক) দেখানো হচ্ছে সেই সিরিয়ালের গল্প বাংলাদেশের রংপুরের সত্য ঘটনার ওপর নির্ভর করে রচিত বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাস অবলম্বনে নির্মিত।[৯]‘দেবী চৌধুরানী’ সিরিয়ালটি গত ১৬ জুলাই থেকে স্টার জলসায় বাংলাদেশ সময় প্রতিদিন রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টা পর্যন্ত দেখানো শুরু হয়।

‘দেবী চৌধুরানী’র এই ঘটনা ১৭০০-১৮০০ খ্রিষ্টাব্দের দিকের। প্রথমে ‘দেবী চৌধুরানী’র নাম ছিল প্রফুল্ল। তার বাড়ি ছিল রংপুরের প্রত্যন্ত এক গ্রাম দুর্গাপুরে। এই গ্রাম থেকে ছয় ক্রোশ (প্রায় ১৪ কিলোমিটার) দূরে ভুতনাথ গ্রামের জমিদার হরবল্লভের একমাত্র ছেলের সঙ্গে বিয়ে হয় প্রফুল্লের। বিয়ের পর শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যাওয়া হলে শ্বশুর হরবল্লভ পুত্রবধূ হিসেবে প্রফুল্লকে মেনে না নিয়ে বাড়ি থেকে বের করে দেন।

এ সময় প্রফুল্ল বলেন, এবার কোথায় যাব আমি। এর উত্তরে হরবল্লভ বলেন, যেখানে খুশি যাও। চুরি করো, ভিক্ষে করো, পারলে ডাকাতি করো। পরে বিভিন্ন ঘটনার মধ্য দিয়ে প্রফুল্ল হয়ে ওঠেন ডাকাতদের রানী, নতুন নাম হয় ‘দেবী চৌধুরানী’।

ধনীদের কাছে থেকে ডাকাতি করা অর্থ এনে গরিব-দুঃখী মানুষদের মাঝে অকাতরে বিলিয়ে দিতেন ‘দেবী চৌধুরানী’। রংপুরের পীরগাছা উপজেলার কৈকুড়ী ইউনিয়নের মকসুদ খাঁ গ্রামে ছিল এই ‘দেবী চৌধুরানী’র ভবন। ‘দেবী চৌধুরানী’ এই গ্রামেই থাকতেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. হাসান, এইচ এম শরিফুল। "বাংলার 'দস্যুরানি'- দেবী চৌধুরানী"bdnews24। সংগ্রহের তারিখ ২০২৩-০৫-২৪ 
  2. প্রভাত, শুভ (২০২১-০৬-২৩)। "দেবী চৌধুরানী: একজন ব্রিটিশ বিরোধী বিপ্লবীর ইতিহাস জানুন"শুভ প্রভাত। ২০২১-০৭-৩১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  3. চক্রবর্তী, সুমনা (২০২১-০৭-১৫)। "দেবী চৌধুরানী, বাংলার 'ব্যান্ডিট কুইন'!"EiSamay Gold। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  4. "দেবী চৌধুরানী মন্দির : শতবর্ষ পার করেও একই রকম রহস্যময়"Aaj Tak বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  5. "দেবী চৌধুরানী এবং ভবানী পাঠকের মিথ আঁকড়ে তৈরি হচ্ছে শিকারপুর"Aaj Tak বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  6. "Rituporno Ghosh : সোনম কাপুরকে দেবী চৌধুরানী করতে চেয়েছিলেন ঋতুপর্ণ"Aaj Tak বাংলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  7. "আনন্দবাজার পত্রিকা - উৎসব"archives.anandabazar.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  8. "দেবী চৌধুরাণী আইন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার কার্যক্রম শুরু"মানবজমিন। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১ 
  9. "রংপুরের চৌধুরানী এখন স্টার জলসার জনপ্রিয় সিরিয়াল"jagonews24.com। সংগ্রহের তারিখ ২০২১-০৭-৩১