বিষয়বস্তুতে চলুন

দুবাই জাদুঘর

দুবাই জাদুঘর
দুবাই জাদুঘর সংযুক্ত আরব আমিরাত-এ অবস্থিত
দুবাই জাদুঘর
সংযুক্ত আরব আমিরাতে অবস্থান
স্থাপিত১৯৭১
অবস্থানআল ফাহিদি দুর্গ, দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাত
স্থানাঙ্ক২৫°১৫′৪৭″ উত্তর ৫৫°১৭′৫০″ পূর্ব / ২৫.২৬৩০৬° উত্তর ৫৫.২৯৭২২° পূর্ব / 25.26306; 55.29722
ধরনদুবাইয়ের প্রত্নতত্ত্ব ও ইতিহাসবিষয়ক, একইসঙ্গে একটি ঐতিহাসিক স্থাপনা
পরিদর্শক১০ লক্ষের বেশি (২০১৩)
নিকটতম গণপরিবহন সুবিধাআল ফাহিদি স্টেশন, দুবাই মেট্রো

দুবাই জাদুঘর হলো দুবাই, সংযুক্ত আরব আমিরাতের প্রধান জাদুঘর। এটি আল ফাহিদি দুর্গে অবস্থিত, যা ১৭৮৭ সালে নির্মিত এবং দুবাইয়ের সবচেয়ে পুরনো স্থাপনা যা আজও টিকে আছে।

১৯৭১ সালে দুবাইয়ের শাসকের উদ্যোগে জাদুঘরটি চালু করা হয়, যাতে দুবাই আমিরাতের ঐতিহ্যবাহী জীবনধারা সহজভাবে উপস্থাপন করা যায়। প্রবেশের সঙ্গে সঙ্গে দর্শকরা দুর্গের প্রাচীন কাঠামো এবং বিভিন্ন প্রদর্শনী দেখতে পান। দুর্গ থেকে একটি পথ গ্যালারির দিকে যায়, যেখানে মূলত ১৮০০-এর দশকের দুবাইয়ের সাধারণ জীবন ও সংস্কৃতি তুলে ধরা হয়েছে। এখানে স্থানীয় প্রাচীন সামগ্রী ছাড়াও আফ্রিকাএশিয়ার দেশগুলোর সঙ্গে দুবাইয়ের বাণিজ্যের নিদর্শন দেখা যায়।

জাদুঘরে কয়েকটি জীবন্ত ডিওরামা আছে, যা তেল আবিষ্কারের আগের আমিরাতের জীবনযাত্রা দেখায়। পাশাপাশি ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বের পুরাতাত্ত্বিক অনুসন্ধান থেকে পাওয়া নিদর্শনও রাখা হয়েছে। মুক্তা আহরণকারী নৌকা, তলোয়ার, গহনা এবং বাস্তব জীবনের মসলার বাজারের খাঁটি ঘ্রাণসহ জীবন্ত মসলার দোকানও দর্শকদের চোখে তুলে ধরা হয়েছে।

প্রদর্শনীর পাশাপাশি এখানে থ্রিডি ধরনের ভিডিও ও তথ্যকেন্দ্র রয়েছে, যা তৃতীয় সহস্রাব্দ খ্রিস্টপূর্ব থেকে বর্তমান পর্যন্ত বেদুইন জনগোষ্ঠীর জীবন ও ঐতিহাসিক কাহিনি তুলে ধরে।[]

২০০৭ সালে দুবাই জাদুঘরে গড়ে প্রতিদিন প্রায় ১,৮০০ জন দর্শনার্থী আসতেন, এবং পুরো বছরে সংখ্যাটি ছিল ৬১১,৮৪০ জন। ২০০৮ সালের মার্চে এই সংখ্যা ছিল ৮০,০০০। আগস্ট থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়টাই সবচেয়ে দর্শকপ্রিয়।[] ২০১৩ সালে জাদুঘরটি এক মিলিয়নেরও বেশি দর্শক গ্রহণ করেছে।[] দুবাই জাদুঘরের মোট আয়তন ৪,০০০ বর্গমিটার।[]

২০২১ সালে দুবাইয়ের শাসকের সাবেক সদর দফতরের তত্ত্বাবধানে জাদুঘরটির সংস্কার কাজ সম্পন্ন হয়।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]
আল ফাহিদি দুর্গ আনু.১৯৫৯

আল ফাহিদি দুর্গটি বিভিন্ন পর্যায়ে নির্মিত হয়েছিল। এর সবচেয়ে পুরানো টাওয়ারটি প্রায় ১৭৮৭ সালে তৈরি, যা দুবাইয়ের সবচেয়ে প্রাচীন ভবন বলে বিশ্বাস করা হয় এবং আজও অক্ষত রয়েছে। এই দুর্গটি মূলত শহরের জমিদারী পথ দিয়ে আসা আক্রমণ থেকে রক্ষা করার জন্য ব্যবহৃত হত। এটি শাসকের প্রাসাদ হিসেবে নয়, বরং একটি সামরিক ঘাঁটি ও কারাগার হিসেবেও কাজ করত।[][]

১৯৬৯ সালে শেখ হামদান বিন রশিদ আল মক্তুম কুয়েতের রাষ্ট্র দফতরের প্রধান শেখ বাদর মোহাম্মদ আল সাবাহকে একটি চিঠি পাঠান, যাতে দুবাইয়ের জন্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠার কাজে সহযোগিতার জন্য একজন জাদুঘর বিশেষজ্ঞ পাঠানোর অনুরোধ জানানো হয়।[]

দুর্গ

[সম্পাদনা]

আল ফাহিদি দুর্গটি চতুর্ভুজ আকৃতির, যার তিনটি কোণায় টাওয়ার রয়েছে। এটি কয়েক ধাপে কোরাল পাথর ও মর্টার দিয়ে নির্মিত। দক্ষিণ প্রাচীরের পাশে পুরোনো শহরের প্রাচীরের পুনর্নির্মিত অংশ দেখা যায়। তার পাশেই একটি বড় উঠোনে একটি উঁচু দৌ (প্রথাগত নৌকা) রাখা আছে, যা মাটির নিচে থাকা গ্যালারিগুলো ঢেকে রেখেছে। প্রাচীরের প্রধান প্রবেশপথের দু’পাশে দুটি তোপ আছে, যেগুলো দুবাই এবং সংযুক্ত আরব আমিরাতের পতাকা দ্বারা সজ্জিত। এই দুর্গটি আমিরাতের শাসকের সদর দফতর হিসেবে ব্যবহৃত হত এবং প্রয়াত শেখ রশিদ বিন সাঈদ আল মক্তুমের শাসনকালে এটি পুনর্নির্মাণ করা হয়।

দুর্গের তিনটি প্রাচীর বরাবর ভেতরে হল রয়েছে। প্রধান গেটের পাশে একটি হল টিকিট অফিস হিসেবে ব্যবহৃত হয়, আর অন্য হলগুলোতে বিভিন্ন ঐতিহাসিক সময়ের পুরানো অস্ত্র ও সরঞ্জামের সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়। এছাড়া ১৮২০ সালের শহরের একটি মডেল এবং ঐতিহ্যবাহী বাদ্যযন্ত্রের সংগ্রহও রয়েছে, যার পাশেই লোকসঙ্গীতের একটি ভিডিও প্রদর্শিত হয়।

হলগুলো একটি কেন্দ্রীয় উঠোনকে ঘিরে রেখেছে। সেখানে রয়েছে একটি ব্রোঞ্জের তোপ, তোপের গোলা, একটি কুয়া, এবং বিভিন্ন ধরনের নৌকা। এক কোণে স্থান পাওয়া ঐতিহ্যবাহী গ্রীষ্মকালীন বাড়ি ‘আরিশ’ সম্পূর্ণ বোনা পাম পাতার তৈরি। এতে বসার ও ঘুমানোর জায়গা এবং রান্নাঘর রয়েছে, যেখানে অতীতের স্থানীয়দের ব্যবহৃত গৃহস্থালির জিনিসপত্র রাখা আছে। আরিশে বিদ্যুতের পূর্বে ঠান্ডা রাখতে ব্যবহৃত বিশেষ বায়ু টাওয়ারের নকশা দেখা যায়।

গ্যালারি

[সম্পাদনা]
২০২৩ সালে দুবাই মিউজিয়ামের প্রবেশদ্বার

গ্যালারির প্রবেশপথ দুর্গের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের টাওয়ারে অবস্থিত। সেখানে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামলেই প্রথম গ্যালারিতে পৌঁছানো যায়, যেখানে দুবাইয়ের পুরনো মানচিত্রগুলো প্রদর্শিত হয়। এরপর ভিডিও রুম আছে, যেখানে ২০০৭ সালে হালনাগাদ করা[] একটি ভিডিও দেখানো হয়, যা ১৯৬০-এর দশকের তেল আবিষ্কারের আগে থেকে বর্তমান পর্যন্ত দুবাইয়ের পরিবর্তন ও উন্নয়নের গল্প বলে। ভিডিওর নিচে শহরের নগরায়নের মানচিত্র আছে, যা ভিডিওর সময়রেখার সঙ্গে মিল রেখে দর্শকদের বুঝতে সাহায্য করে।

এরপর পরবর্তী গ্যালারিতে প্রবেশ করলে দর্শকরা তেল আবিষ্কারের পূর্বের যুগের জীবনযাত্রার আকারে সাজানো ডায়োরামাগুলো দেখতে পাবেন। সেখানে প্রথমেই একটি দৌ (প্রথাগত নৌকা) দেখানো হয়েছে, যা মডেল করা ক্রীক-পারের সোউক থেকে মালামাল খালাস করছে। রাস্তার দুই পাশে স্থানীয় কারিগর, বিক্রেতা ও ক্রেতাদের ভরা দোকান সাজানো, যেমন দর্জি, বাঁশকার, লোহার কাজের কারিগর, বস্ত্র বিক্রেতা ইত্যাদি। কারিগরদের কাজের শব্দ ও জীবনমাপের ভিডিও মিলিয়ে দর্শকদের মনে হয় যেন তারা সত্যিকার জীবন্ত বাজারের মধ্যে হাঁটছেন।

রাস্তাটি এগিয়ে একটি মসজিদ, বাড়ি এবং পরিবারের মডেল পর্যন্ত পৌঁছায়। এরপর ডানদিকে মোড় নিলে মরুভূমির জীবন চিত্রিত ডায়োরামাগুলো দেখা যায় — খেজুর বাগান, উট, বন্যপ্রাণী এবং একটি বেদুইন তাঁবু, যা গহনা ও দৈনন্দিন ব্যবহারের জিনিসপত্রে পরিপূর্ণ। দেয়ালগুলোতে বেদুইনদের নক্ষত্রবিদ্যা ও তার ব্যবহার তুলে ধরা হয়েছে। পরবর্তী বৃহত্তম ডায়োরামাটি সমুদ্র জীবনকে কেন্দ্র করে, যেখানে একটি বিশাল দৃশ্যে দৌ নির্মাণের কাজ, স্থানীয় সামুদ্রিক প্রজাতি ও সামুদ্রিক সরঞ্জামের সংগ্রহ প্রদর্শিত হয়। শেষ ডায়োরামাটি আল কুসাইস এলাকার ৩০০০ খ্রিস্টপূর্বাব্দের প্রত্নতাত্ত্বিক খননস্থল তুলে ধরে, যেখানে সমাধি, খননকৃত কঙ্কাল ও প্রত্নতাত্ত্বিক ব্যক্তির মডেল আছে। গ্যালারির চারপাশে সাউন্ড ও ভিজ্যুয়াল এফেক্ট এবং ইলেকট্রনিক গাইড দর্শকদের অভিজ্ঞতাকে আরও জীবন্ত করে তোলে।

আল কুসাইসের প্রত্নতাত্ত্বিক খনন থেকে প্রাপ্ত নিদর্শনসমূহ ভর্তি ক্যাবিনেটগুলো খননস্থলের পাশে রাখা হয়েছে। অবশেষে বেঁকে চলা পথ একটি গ্যালারিতে নিয়ে যায়, যেখানে অন্যান্য স্থান ও ঐতিহাসিক সময়ের, যেমন উমাইয়া খিলাফতের যুগের জুমেইরাহর আবিষ্কারসমূহ প্রদর্শিত হয়। গিফট শপ শেষ গন্তব্য, যেখানে দর্শকরা স্মৃতিচিহ্ন কিনতে পারেন। এরপর একটি সিঁড়ি মাধ্যমে জাদুঘরের দক্ষিণ প্রবেশপথে পৌঁছানো যায়।

পরিবহন

[সম্পাদনা]

দর্শনার্থীরা ঘুবাইবা বা ফাহিদি বাস স্টেশনের কাছ থেকে সহজে পাবলিক বাসে দুবাই মিউজিয়ামে পৌঁছাতে পারেন[]। এছাড়া ঘুবাইবা বা ফাহিদি মেট্রো স্টেশন থেকেও মিউজিয়ারে যাতায়াত সম্ভব, কারণ এগুলো জাদুঘরের নিকটে অবস্থিত। ভাড়া করা গাড়ি বা ট্যুর অপারেটররাও পরিবহন সেবা প্রদান করে থাকে, যা আরও সুবিধাজনক যাত্রার সুযোগ দেয়।

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Butalia, Nivriti। "Have you been to the Dubai Museum"Khaleej Times (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  2. 1 2 3 Johnson, Alice (২ নভেম্বর ২০০৮)। "UAE Museum: Dubai Museum"gulfnews.com। ৩০ জানুয়ারি ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
  3. "Dubai Museum Gets Over 1 Million Visitors in 2013"Bihar Prabha। ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪। ২৫ এপ্রিল ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৪
  4. 1 2 "Dubai Museum and Al Fahidi Fort"dubaiculture.gov.ae (ইংরেজি ভাষায়)। ৩১ আগস্ট ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০১৮
  5. Staff Writer (২০২১)। "Renovation plan revealed for Al Fahidi Fort, former HQ of Dubai ruler"
  6. "General Department of Punitive and Correctional Establishments"Dubai Police। ৪ আগস্ট ২০০৯। ২২ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৩ ডিসেম্বর ২০১০
  7. O'Reilly, Mick (১৫ মে ২০১০)। "Taking the Pebbled Road to Excellence"gulfnews.com। ৭ অক্টোবর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ ডিসেম্বর ২০১২

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]
রেকর্ড
অজ্ঞাত দুবাইয়ের সর্বোচ্চ ভবন
১৭৯৯ – ১৯৭৩
উত্তরসূরী
শেখ রশিদ ভবন