দুই বিঘা জমি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দুই বিঘা জমি 
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কর্তৃক রচিত
মূল শিরোনামদুই বিঘা জমি
দেশভারত
ভাষাবাংলা
পূর্ণ পাঠ্য
উইকিসংকলনে দুই বিঘা জমি

দুই বিঘা জমি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি কাহিনী কবিতা।[১][২] এটি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের " কাহিনী" নামক কাব্যগ্রন্থের একটি কবিতা। বাংলার গ্রামীণ সমাজের শ্রেণীবিভেদ আর দুর্বলের উপর সবলের অনাচার-অবিচার নিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কবিতাটি লিখেছেন। এই কবিতায় গরীব শ্রেণীর অসহায়ত্বের দিক দেখানো হয়েছে। এখানে একটি লোকের জমি জোর করে জমিদার এর দখলে নেওয়ার ঘটনা অতি নিপুণভাবে কবিতার ছন্দে বলা হয়েছে। এই কবিতার উপর ভিত্তি করে হিন্দি দো বিঘা জমিন চলচ্চিত্রটি নির্মাণ করা হয়।

কাহিনী সংক্ষেপ[সম্পাদনা]

গরিব কৃষক উপেন একজন প্রান্তিক কৃষক। তার যে জমিজমা ছিল তার মধ্যে দুই বিঘা জমি ছাড়া সবই ঋণের দায়ে তাকে হারাতে হয়েছে। তার সম্বল এখন শুধু ভিটেমাটির এই দুই বিঘা জমি। কিন্তু উপেনের কপাল খারাপ। তার এলাকার জমিদার বাবুর ভূমির শেষ নেই। তবুও জমিদার বাবুর নজর পড়ে উপেনের দুই বিঘা জমির উপর। বাবু উপেনের জমি কিনতে চান। শুনে উপেন বলে, রাজা এই দেশের মালিক আপনি, জায়গার অভাব নেই কিন্তু আমার এই জায়গাটি ছাড়া মরার মতো ঠাঁই নেই; উপেন দুই হাত জোড় করে বাবুর কাছে ভিটেটা কেড়ে না নেওয়ার অনুরোধ করে। এতে বাবু রেগে চোখ গরম করে চুপ করে থাকেন। নাছোড়বান্দা বাবু দেড় মাস পরেই মিথ্যে ঋণের দায়ে উপেনের প্রতি ডিক্রি জারি করেন। উপেন নিজের ভিটে ছেড়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়।

এভাবে ১৫/১৬ বছর কেটে যায়। অনেক তীর্থস্থান, শহর, গ্রাম সে বিচরণ করে, তবুও উপেন তার দুই বিঘা জমির কথা ভুলতে পারে না। তাই মাতৃভূমির টানে উপেন একদিন নিজ গ্রামে ফিরে আসে। গ্রামে এসে নিজ বাড়ির সামনে এসে উপস্থিত হয়ে দেখে বাড়িতে আগের কোন চিহ্ন নেই। উপেনের মন বিষণ্ণ হয়ে পড়ে, তার বসতভিটা নিজ ঐতিহ্য ভুলে অন্য রূপ ধারণ করেছে। নিজের বাড়িতে এসে উপেন স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ে। তার চোখ জলে ভরে যায়। অবশেষে তার ছেলেবেলার সেই আমগাছটির দিকে চোখ পড়ে উপেনের। স্মৃতিময় আমগাছটি দেখে তার মনের ব্যথা দূর হয়ে যায়। আমগাছটির নিচে বসে সে ভাবতে থাকে ছেলেবেলার কথাগুলো। তখন হঠাৎ তার কোলের কাছে দুটি আম ঝরে পড়ে। ক্ষুধার্ত উপেন ভাবে আমগাছটি তাকে চিনতে পেরে দুটি আম উপহার দিয়েছে। কিন্তু আম দুটি হাতে নিতেই বাগানের মালি লাঠি হাতে এসে উপেনকে গালিগালাজ করে, উপনকে ধরে রাজার কাছে নিয়ে যায়। বাবু তখন মাছ ধরছিলেন। মালির কাছে সব শুনে বাবু রেগে উপেনকে বকা দেন, মারতে চান। উপেন কাতর হূদয়ে বাবুর কাছে আম দুটো ভিক্ষা চায়। কিন্তু বাবু উপেনকে সাধুবেশী চোর বলে উল্লেখ করেন। এতে উপেন হতভম্ব হয়ে যায়। চোর উপাধি শুনে উপেনের চোখ দিয়ে ভাগ্যের নিষ্ঠুরতা ও পরিহাসের কথা মনে পড়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে থাকে।[৩]

প্রভাব[সম্পাদনা]

রবীন্দ্রনাথের কবিতা ও শিরোনাম এবং স্ব-ঘোষিত মার্কসবাদী সলীল চৌধুরীর গল্প রিকশাওয়ালার উপর অনুপ্রাণিত হয়ে বিমল রায় একটি হিন্দি ভাষা চলচ্চিত্র দো বিঘা জমিন (১৯৫৩) নির্মাণ করেন; এটি ঔপনিবেশিক ভারত পরবর্তী সবচেয়ে স্মরণীয় চলচ্চিত্রগুলির মধ্যে একটি উল্লেখযোগ্য ছিল। কবিতাটি বিভিন্ন বই এবং কাহিনীতে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় রচিত দুই বাড়ী[৪]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kenneth Bo Nielsen (২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮)। Land Dispossession and Everyday Politics in Rural Eastern India। Anthem Press। পৃষ্ঠা 161–। আইএসবিএন 978-1-78308-748-8 
  2. Debali Mookerjea-Leonard (৭ এপ্রিল ২০১৭)। Literature, Gender, and the Trauma of Partition: The Paradox of Independence। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 205–। আইএসবিএন 978-1-317-29388-0 
  3. Debali Mookerjea-Leonard (৭ এপ্রিল ২০১৭)। Literature, Gender, and the Trauma of Partition: The Paradox of Independence। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 205–। আইএসবিএন 978-1-317-29388-0 
  4. বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায় (১৩ আগস্ট ২০১৬)। দুই বাড়ী। পাঠক পাবলিশার্স প্রাইভেট লিমিটেড। পৃষ্ঠা ১৬৫। আইএসবিএন 978-93-85246-60-9। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৮