দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এন্ড ক্লাশ ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এন্ড ক্লাস ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া
পুস্তক প্রচ্ছদ
পুস্তক প্রচ্ছদ
লেখকড. অনুপম সেন
মূল শিরোনামThe State, Industrialization and Class Formations in India
দেশবাংলাদেশ
ভাষাইংরেজি
প্রকাশকরাউটলেজ
প্রকাশনার তারিখ
১৯৮২
পৃষ্ঠাসংখ্যা২৮৯
আইএসবিএন০৭১০০০৮৮৮০

দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এন্ড ক্লাস ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া হচ্ছে একুশে পদকপ্রাপ্ত সমাজবিজ্ঞানী ড. অনুপম সেন-এর ইংরেজি ভাষায় রচিত ১৯৮২ সালে প্রকাশিত একটি গ্রন্থ। বিশ্বের অন্যতম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রাউটলেজ এন্ড কেগানপল গ্রন্থটি প্রকাশ করে।[১] এই গ্রন্থে লেখক ব্রিটিশদের পুঁজিবাদে লুণ্ঠনে কীভাবে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ ভারতবর্ষ বা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ গরিব দেশে পরিণত হলো তা তথ্য ও তত্ত্বের সমাহারে তুলে ধরেছেন।

প্রেক্ষাপট[সম্পাদনা]

গ্রন্থটি রচনার প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ তত্ত্ব পাওয়া যায়। গ্রন্থটির লেখক ড. অনুপম সেন বলেন -

স্বাধীনতার মাত্র সাড়ে তিন বছরের মধ্যে ১৯৭৫-এর ১৫ আগস্ট এক সামরিক অভ্যুত্থানে সপরিবারে নিহত হন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাঁর অন্তর্ধানে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ভূলুণ্ঠিত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিল। সেই সময় ড. সেনের নজরে এলো পৃথিবী বিখ্যাত সমাজতত্ত্ববিদ ম্যানচেস্টার ইউনিভার্সিটির তখনকার অধ্যাপক হামজা আলভীর একটি তত্ত্ব। আলভী তার একটি গ্রন্থে বলতে চাইলেন, দক্ষিণ এশিয়ার দু’টি দেশ, বিশেষ করে পাকিস্তান ও বাংলাদেশে বারবার সামরিক অভ্যুত্থান ও সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা দখলের মূল কারণ হলো, দেশ দু’টিতে রাষ্ট্রের সোশ্যাল ক্লাস আন্ডার ডেভেলপ্ড আর রাষ্ট্র-যন্ত্র যেমন আর্মি, পুলিশ বিশেষত আমলাতন্ত্র ওভার ডেভেলপড। আর এটা করে গেছে ব্রিটিশরা।[২]

বিষয়বস্তু[সম্পাদনা]

গ্রন্থটিতে ব্রিটিশদের পুঁজিবাদী লুণ্ঠনে পৃথিবীর সবচেয়ে ধনী দেশ ভারতবর্ষ বা পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কীভাবে গরিব দেশে পরিণত হলো তা তুলে ধরা হয়েছে। গ্রন্থটির লেখক ড. অনুপম সেন এক স্বাক্ষাতকারে গ্রন্থটির মূল বিষয় তুলে ধরেন। তিনি বলেন-

ভারতবর্ষ বা বর্তমান বাংলাদেশে হাজার বছর ধরে চলমান ছিল গ্রামভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা। গ্রামের একটি বড় শ্রেণি ছিল কৃষক। তাদের জমির মালিকানা ছিল। আবার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ শ্রেণি ছিল কারিগর। যেমন কামার, কুমোর, ধোপা, স্বর্ণকার। তাদেরও কিছু জমি ছিল। গ্রামের মানুষ স্বনির্ভর ছিল। তারা অন্য কারও কাছে নির্ভরশীল ছিল না। মোগল থেকে শুরু করে সব আমলে জমিদার ছিল, তবে তাদের কাছে জমির মালিকানা ছিল না। তারা শুধু রাজার হয়ে খাজনা আদায় করত। কিন্তু ব্রিটিশরা জমিদারদের জমির মালিকানা দিয়ে দিল। আর তাতে কৃষকরা জমি থেকে উচ্ছেদ হলো। ফলে গ্রামভিত্তিক উৎপাদন ব্যবস্থা ভেঙে গেল। আর তাতে করে কারিগর শ্রেণি বিলুপ্ত হয়ে গেল। তার ফল ভোগ করল ব্রিটিশরা। তারা এই দেশ থেকে সহজে সম্পদ লুণ্ঠন করতে লাগল। ব্রিটিশদের আগমনের পরেও আমাদের বস্ত্রশিল্প ইংল্যান্ডের চেয়ে উন্নত ছিল। ব্রিটিশরা আমাদের পাট নিয়ে ড্যান্ডিতে জুট মিল করল। ব্রিটিশদের ১৯০ বছরের শাসনের সময় এই ভারতবর্ষ তথা বর্তমানের বাংলাদেশ পৃথিবীর অন্য ধনী দেশ থেকে গরিব দেশে পরিণত হলো। ব্রিটিশরা আসার অর্ধশতাব্দীর মধ্যে তখনকার ৫০০ কোটি পাউন্ড লুণ্ঠন করে এই দেশ থেকে। সেই অর্থ যদি আমাদের দেশে থাকত তাহলে আজ আমাদের মাথাপিছু আয় ব্রিটিশদের চেয়ে বেশি হতো। [৩]

সংস্করণ[সম্পাদনা]

দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এন্ড ক্লাশ ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া-১৯৮২ সালে প্রকাশিত সংস্কররণের প্রচ্ছদ

দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এন্ড ক্লাশ ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া গ্রন্থটি বিশ্বের অন্যতম প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান রাউটলেজ ১৯৮২ সালে প্রকাশ করে। ১৯৯২ সালে বার্চ বারবারোগলু-র সম্পাদনায় প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘সেজ’ থেকে ‘ক্লাস, স্টেট এন্ড ডেভেলপমেন্ট ইন ইন্ডিয়া’ গ্রন্থটি প্রকাশিত হলে তাতে ড. সেন লিখিত ‘মোডস অফ প্রোডাকশন এন্ড সোশ্যাল ফরমেশন ইন ইন্ডিয়া’ শিরোনামে আর্টিকেলটি প্রথম আর্টিকেল হিসেবে প্রকাশ করা হয়। গ্রন্থটি জনপ্রিয় হওয়ায় এবং তিন যুগ ধরে গবেষণা ও শিক্ষায় নিয়মিতভাবে ব্যবহৃত হওয়ায় রাউটলেজ গ্রন্থটি ২০১৭ সালে পুনরায় ‘রাউটলেজ লাইব্রেরি এডিশন’ হিসেবে প্রকাশ করে। এডিশনটির সম্পূর্ণ নাম দেয়া হয় ‘রাউটলেজ লাইব্রেরি এডিশন: ব্রিটিশ ইন ইন্ডিয়া’। এই এডিশনে ভারতীয় উপমহাদেশে প্রায় ১৯০ বছর ধরে ব্রিটিশ শাসনের ফলে সৃষ্ট নানা বিষয় বা সমস্যা, তাদের অপশাসন ও শোষণের চিত্র সংবলিত ৩০টি গ্রন্থ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[৪] এই চিত্র তুলে ধরে রাউটলেজ গত ২০০ বছরে অগণিত গ্রন্থ প্রকাশ করলেও এসব গ্রন্থের মধ্যে অল্পসংখ্যক গ্রন্থ থেকে এডিশনটির জন্য উক্ত ৩০টি গ্রন্থ নির্বাচন করা হয়। এডিশনটিতে ‘দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এন্ড ক্লাশ ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া’ ২৩ তম খন্ড হিসেবে সংযোজিত হয়েছে।[৫]

পাঠ্যসূচী[সম্পাদনা]

রাউটলেজ থেকে গ্রন্থটি প্রকাশিত হওয়ার পর বেশ কয়েকটি সুনামধন্য বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থটিকে তাদের পাঠসূচিভূক্ত করে। উত্তর আমেরিকার বহু বিশ্ববিদ্যালয় বিশেষ করে কানাডার টরেন্টো বিশ্ববিদ্যালয়, আমেরিকার ফ্লোরিডা বিশ্ববিদ্যালয় ও নিউইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়; সুইডেনের টিনবারজেন বিশ্ববিদ্যালয়, ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়, জওহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে সমাজবিজ্ঞান, উন্নয়ন অর্থনীতি (ডেভেলপমেন্ট ইকোনমিকস) ও রাষ্ট্র্রবিজ্ঞানের পাঠ্যতালিকায় গ্রন্থটি রাখা হয়।[৬]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "ড. অনুপম সেনের বইয়ের 'লাইব্রেরি এডিশন'"। ভোরের কাগজ। ২২ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০১৮ 
  2. শামসুল আরেফীন। "রাউটলেজ লাইব্রেরি এডিশন-এ ড. অনুপম সেন-এর 'দি স্টেট, ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন এন্ড ক্লাশ ফরমেশনস ইন ইন্ডিয়া'"। দৈনিক পূর্বকোণ। পৃষ্ঠা ৬। সংগ্রহের তারিখ ১৩ এপ্রিল ২০১৮ 
  3. নাসির উদ্দিন হায়দার। "ব্রিটিশ লুণ্ঠনের ক্ষত এখনও শুকায়নি"। দৈনিক সমকাল। পৃষ্ঠা ২৫ পৃষ্ঠা। সংগ্রহের তারিখ ১১ মার্চ ২০১৮ 
  4. "রাউটলেজ লাইব্রেরি এডিশনে অনুপম সেনের বই"। ইমদাদুল হক মিলন। দৈনিক কালের কণ্ঠ। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১৮ 
  5. "রাউটলেজ 'লাইব্রেরি এডিশনে' বাংলাদেশি লেখকের বই"। সারাবাংলা.নেট। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৮ 
  6. "রাউটলেজ লাইব্রেরি এডিশনে ড. সেনের বই, দাম ১৩৫ ডলার"। বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম। সংগ্রহের তারিখ ৬ মার্চ ২০১৮