বিষয়বস্তুতে চলুন

দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি
প্রথম সংস্করণের প্রচ্ছদ
লেখকআর্নেস্ট হেমিংওয়ে
প্রকাশনার স্থানমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
ভাষাইংরেজি
ধরনকথাসাহিত্য
প্রকাশকচার্লস ক্রিবনার’স সন্‌স
প্রকাশনার তারিখ
১ সেপ্টেম্বর, ১৯৫২
পুরস্কারসমূহ
আইএসবিএন ৯৭৮-১-৯০৭৫-৯০২৭-৬
৮১৩.৫২
এলসি শ্রেণীপিএস৩৫১৫.ই৩৭

দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি (ইংরেজি: The Old Man and the Sea, অনু.বৃদ্ধ মানুষ ও সমুদ্র) হল মার্কিন লেখক আর্নেস্ট হেমিংওয়ের লেখা একটি ছোটো উপন্যাস (নভেলা)। ১৯৫০ সালের ডিসেম্বর থেকে ১৯৫১ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের মধ্যে হেমিংওয়ে লিখে ফেলেন এই উপন্যাসটি। এরপর অত্যন্ত অল্প সময়ের ব্যবধানে ১৯৫২ সালে প্রথমে পত্রিকার পৃষ্ঠায় ও পরে গ্রন্থাকারে এটি প্রকাশিত হয়। এটিই ছিল হেমিংওয়ের জীবদ্দশায় প্রকাশিত তাঁর সর্বশেষ উল্লেখযোগ্য কথাসাহিত্য-ধর্মী রচনা। সান্তিয়াগো নামে এক বৃদ্ধ জেলের একটি দৈত্যাকার মার্লিন মাছ ধরার বিবরণ এই উপন্যাসের মূল উপজীব্য।

কিউবাতে বসে দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি রচনা করেন হেমিংওয়ে। তাঁর ব্যক্তিগত জীবনে সেটি ছিল এক বিক্ষুব্ধ সময়। তাঁর পূর্ববর্তী উপন্যাস অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ সমালোচকদের আনুকূল্য লাভে অসমর্থ হয়েছিল। একদিকে পত্নী মেরি ওয়েলশ হেমিংওয়ের সঙ্গে সম্পর্কে তিক্ততা, অন্যদিকে প্রেরণাদাত্রী আদ্রিয়ানা ইভানকিচের প্রতি অতিরিক্ত প্রেমাসক্তি, এরই মধ্যে তাঁর পরিকল্পিত "সমুদ্র ত্রয়ী"-র প্রথম বইটি শেষ করার পর প্রায় পনেরো বছর আগে শোনা এক বৃদ্ধ জেলের মার্লিন মাছ ধরার একটি কাহিনী অবলম্বনে প্রাগুক্ত ত্রয়ী-উপন্যাসের একটি সম্পূরক উপন্যাস লিখতে শুরু করেন হেমিংওয়ে। প্রতিদিন প্রায় এক হাজার শব্দ লিখে ছয় সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ের মধ্যে ২৫,৫৩১ শব্দের এই ছোটো উপন্যাসটির পাণ্ডুলিপি সম্পূর্ণ করে ফেলেন তিনি।

পরের বছর হেমিংওয়ে সেই পাণ্ডুলিপিটিকে ত্রয়ী-উপন্যাসের পর্বের পরিবর্তে একটি স্বতন্ত্র নভেলার আকারে প্রকাশ করার সিদ্ধান্ত নেন। লাইফ পত্রিকার ১ সেপ্টেম্বর ১৯৫২ সংখ্যায় সম্পূর্ণ উপন্যাসটি প্রকাশিত হয়।

হেমিংওয়ের প্রকাশক স্ক্রিবনার’স পত্রিকায় উপন্যাসটির প্রকাশের এক সপ্তাহ পরে ৮ সেপ্টেম্বর তারিখে গ্রন্থাকারে দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি-র প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন। গোড়ার দিকে সমালোচকেরা বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। সেই সঙ্গে মুখে মুখে প্রচারিত সংবাদের কল্যাণে বইটির চাহিদা এত বেড়ে যায় যে, পত্রিকা ও বই দুটিই কালোবাজারে বিক্রি হতে শুরু করে। মাত্র দুই দিনে পত্রিকাটির ৫৩ লক্ষ কপি বিক্রি হয়ে একটি রেকর্ড সৃষ্টি করে। অন্যদিকে স্ক্রিবনার’সও প্রথম সংস্করণের দশ সহস্রাধিক কপি বিক্রি করেছিল। ১৯৫২ সালের শেষ দিকে নয়টি ভাষায় অনূদিত হয় উপন্যাসটি। তাছাড়া নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বেস্টসেলারের তালিকায় ছয় মাস থেকে যায় এই বইটির নাম। ১৯৫৩ সালে বইটি কথাসাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার লাভ করে এবং ১৯৫৪ সালে হেমিংওয়ে যখন সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার লাভ করেন, তখন তাঁর এই একটিমাত্র রচনার কথাই সুইডিশ অ্যাকাডেমির পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়।

প্রথম দিকে সমালোচকেরা বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। অনেকেই অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ উপন্যাসটি সমালোচকদের দ্বারা নিন্দিত হওয়ার পর হেমিংওয়ের প্রত্যাবর্তন দেখে বইটিকে স্বাগত জানান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বইটি সম্পর্কে সমালোচকদের মনোভাবের পরিবর্তন দেখা যায়। অনেকে মনে করেন, গোড়ায় বইটির যে প্রশংসা করা হয়েছিল তার অনেকটাই ছিল অতিরিক্ত উচ্ছ্বাস ও অত্যুৎসাহ-প্রসূত। সেই থেকে দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি বইটি হেমিংওয়ের অন্যান্য রচনার সমতুল্য নাকি অপেক্ষাকৃত নিকৃষ্ট একটি রচনা, তা নিয়ে বিশেষজ্ঞদের মধ্যে বিতর্ক রয়েই গিয়েছে। এই উপন্যাসে খ্রিস্টীয় দৃশ্যকল্প ও প্রতীকতত্ত্বের ব্যবহার, হেমিংওয়ের পূর্ববর্তী রচনার সঙ্গে এই উপন্যাসের বিষয়গত সাদৃশ্য এবং জেলে সান্তিয়াগোর চরিত্রটিকে কেন্দ্র করে উপন্যাসটির বিষয়গত বিশ্লেষণ ইত্যাদি নানা দিক আলোচনা করেছেন তাঁরা।

সান্তিয়াগো এক বৃদ্ধ জেলে। চুরাশি দিনের পরিশ্রমে একটিও মাছ ধরতে না পারায় লোকে তাকে সালাও (অত্যন্ত অপয়া) আখ্যা দেয়। মানোলিন নামে যে ছেলেটিকে সান্তিয়াগো মাছ-ধরা শিখিয়েছিল, তাকেও তার বাবা-মা বাধ্য করে অন্য এক পয়মন্ত নৌকায় গিয়ে কাজ করতে। মানোলিন তবুও আসে সান্তিয়াগোর কাছে। সকালে-সন্ধ্যায় প্রস্তুত করে দেয় তার সরঞ্জাম, এনে দেয় খাবার। তারা গল্প করে বেসবল নিয়ে, জো ডিম্যাগিওকে নিয়ে। মানোলিন চলে গেলে ঘুমিয়ে পড়ে সান্তিয়াগো। তার স্বপ্নে ফিরে আসে যৌবনের নানা ছবি, নানান অভিজ্ঞতা।

পঁচাশি দিনের মাথায় সান্তিয়াগো ভোরবেলা নিজের স্কিফ নৌকাটি নিয়ে বেড়িয়ে পড়ে উপসাগরীয় সমুদ্রস্রোতের উদ্দেশ্যে। সকালে সে একটা ছোটো অ্যালবাকোর মাছ ছাড়া আর কিছুই পায় না। কিন্তু তারপরই তার বঁড়শিতে ধরা পড়ে একটা বিশাল মার্লিন মাছ। অত ভারী মাছ সে টেনে তুলতে পারে না। মাছটাও তার নৌকাটিকে টানতে টানতে নিয়ে চলে সমুদ্রের আরও গভীরে। সারা রাত ছিপ হাতে বসে থাকে সান্তিয়াগো। সকাল হলে সে অ্যালবাকোরটি রান্না করে খায়। সেই প্রথম তার দৃষ্টি পড়ে মার্লিনটির দিকে। তার নৌকার থেকেও বড়ো মাছটি। সান্তিয়াগোর ভালো লাগতে শুরু করে মাছটিকে। মাছটি তার প্রতিপক্ষ হলেও তার কণ্ঠে শোনা যায় সেটির প্রতি শ্রদ্ধা ও সমবেদনার সুর। আবার সূর্যাস্ত হয়। সান্তিয়াগো খানিকটা ঘুমিয়ে নেওয়া সুযোগ পায়। কিন্তু মাছটা ছটফট করতে শুরু করলে তার ঘুম ভেঙে যায়। সে উঠে পড়ে শান্ত করে সেটাকে। তৃতীয় দিন সকালে মার্লিনটি নৌকার চারপাশে চরকি কাটতে শুরু করে। প্রায় উন্মত্ত অবস্থায় মাছটাকে টেনে নৌকার কাছে আনে সান্তিয়াগো, সেটাকে বিদ্ধ করে হারপুনে। তারপর সেটাকে দড়ি দিয়ে বাঁধে নৌকার সঙ্গে।

একটা মাকো হাঙর জলে রক্তের গন্ধ পেয়ে মার্লিনটার গায়ে কামড় বসায়। হাঙরটিকে মারতে সক্ষম হয় সান্তিয়াগো, কিন্তু তা করতে গিয়ে সে হারপুনটি খোয়ায়। তখন সে নিজের ছুরিটাকে দাঁড়ের সঙ্গে দড়ি দিয়ে বেঁধে একটা চলনসই বর্শা তৈরি করে নেয়। সেটা দিয়ে সে আরও তিনটি হাঙর মারে। তারপর সেই ছুরির ফলাটাও যায় ভেঙে। সমুদ্রের গভীরে এত দূরে চলে আসার জন্য নিজেকে গালাগালি দিতে দিতে মার্লিনটার ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহটার কাছে ক্ষমা চায় সে। তারপর লাঠির আঘাতে আরও দুটি হাঙরকে মারে। কিন্তু ততক্ষণে মার্লিনটার অর্ধেক খেয়ে গিয়েছে হাঙরে। তৃতীয় রাতে দলে দলে হাঙর আসতে থাকে মার্লিনটাকে খেতে। শেষে পড়ে থাকে শুধু সেটার কঙ্কালটুকুই। সান্তিয়াগো পৌঁছায় সৈকতে। মার্লিনের কঙ্কালটাকে নৌকায় বাঁধা অবস্থায় রেখেই নিজের চালাঘরে এসে ঘুমিয়ে পড়ে সে।

সকালে মানোলিন এসে সান্তিয়াগোর অবস্থা দেখে কেঁদে ফেলে। সে কফি আনে। সান্তিয়াগোর ঘুম না ভাঙা পর্যন্ত তার পাশে বসে অপেক্ষা করে। মানোলিন সান্তিয়াগোকে অনুরোধ জানায়, ভবিষ্যতে মাছ ধরতে গেলে যেন তাকে সঙ্গে নিয়ে যায় সান্তিয়াগো। একজন জেলে মার্লিনটাকে মেপে বলে যে, সেটি আঠারো ফুট লম্বা ছিল। দুজন পর্যটক সেই কঙ্কালটিকে হাঙরের কঙ্কাল বলে ভুল করে। সান্তিয়াগো আবার ঘুমোতে যায় এবং আফ্রিকার সৈকতে সিংহের স্বপ্ন দেখতে থাকে।

প্রেক্ষাপট ও প্রকাশনা

[সম্পাদনা]
Photograph of a man reclining on a chair on a porch, smiling at the camera and holding a drink.
১৯৪৬ সালে কিউবার বাসভবন ফিনকা ভিজিয়াতে হেমিংওয়ে; এখানে বসেই তিনি দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি লেখেন।

দ্য সান অলসো রাইজেস (১৯২৬), আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস (১৯২৯), টু হ্যাভ অ্যান্ড হ্যাভ নট (১৯৩৭), ফর হুম দ্য বেল টোলস (১৯৪০) ও অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ (১৯৫০) উপন্যাসের পরে আর্নেস্ট হেমিংওয়ের ষষ্ঠ প্রধান উপন্যাসটি হল দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি[] প্রকাশের পর এক মাসের মধ্যেই এটির ৭৫,০০০ কপি বিক্রি হয়ে যায়। নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বেস্টসেলার তালিকায় একুশ সপ্তাহ থেকে যায় বইটির নাম। তবুও পরবর্তীকালে সমালোচকেরা বইটির প্রতি বিরূপ হয়েছিলেন।[] পত্নী মেরি ওয়েলশ হেমিংওয়ের সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে ফাটল ধরার কালে হেমিংওয়ে আদ্রিয়ানা ইভানকিচ নামে এক ইতালীয় যুবতীর প্রেমে পড়েন। এই আদ্রিয়ানা ছিলেন তাঁর প্রেরণাদাত্রী। ১৯৫০-৫১ সালের শীতে হেমিংওয়ের সঙ্গে কিউবায় কিছুদিন কাটিয়ে যান আদ্রিয়ানা। ডিসেম্বর মাসের গোড়ার দিকে হেমিংওয়ে একটি বই লিখবেন বলে মনস্থ করেন। তখন তিনি তাঁর পরিকল্পিত "সমুদ্র ত্রয়ী"-র প্রথম বইটি লিখে ফেলেন (এই বইটিই ১৯৭০ সালে "আইল্যান্ডস ইন দ্য স্ট্রিম" নামে প্রকাশিত হয়)। তারপর আদ্রিয়ানার প্রতি তাঁর আকর্ষণ কিছুটা থিতিয়ে পড়লে তিনি আরেকটি গল্প লেখার উদ্যোগ নেন।[]

১৯৩০-এর দশকের মধ্যভাগে কিউবান গাইড কার্লোস গুতিয়েরেজ হেমিংওয়েকে এক বৃদ্ধের একটি দৈত্যাকার মার্লিন মাছ ধরার গল্পটি শুনিয়েছিলেন। পরবর্তীকালে এসকোয়ার পত্রিকায় প্রকাশিত "অন দ্য ব্লু ওয়াটার: আ গল্‌ফ্‌ স্ট্রিম লেটার" প্রবন্ধে গল্পটি পুনর্কথন করেন হেমিংওয়ে।[] মেরি ক্রুজের মতে, ১৮৯১ সালে গল্পটি সম্ভবত প্রথম বলেন কিউবান লেখক রামোন মেজা ই সুয়ারেজ ইনক্লান। এরপর চল্লিশ বছরে বারংবার পুনর্কথিত হয় সেই কাহিনী।[] মহাসাগরীয় সমুদ্রস্রোতে হেমিংওয়ের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে তিনি তাঁর রচনার অনেক উপাদান সংগ্রহ করেছিলেন। দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি লেখার আগের কয়েক দশকে তিনি এই সমুদ্রে ঘণ্টার পর ঘণ্টা নৌকা বাইতেন। বিগ-গেম ফিশিং নামে এক ধরনের মাধ-ধরার খেলা ছিল তাঁর বিশেষ পছন্দের। তিনি একাধিক ট্যুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে অনেক পুরস্কারও জয় করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন এক উৎসুক প্রকৃতিবাদী। হেনরি উইড ফাওলার, চার্লস ক্যাডওয়ালডার প্রমুখ ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ করে এনে তিনি তাঁর ধরা মাছের নমুনা নথিবদ্ধ ও সেগুলির বর্ণনা লিপিবদ্ধ করান। হেমিংওয়ের সঙ্গে নৌকায় একমাস কাটিয়ে মৎস-বিশারদ ফাওলার লেখকের মাছ-ধরা ও নৌ-চালনার দক্ষতার গুণে সমগ্র উত্তর আটলান্টিকের মার্লিনের বিভিন্ন বর্গ সম্পর্কে নিজের জ্ঞান পরিমার্জনার সুযোগ পেয়েছিলেন।[]

A bearded man sitting on cushions on a boat in the sea aims a gun at the camera; the man looking next to him looks exasperated.
Photograph of an old bearded man sitting under fishing rods in a dimly lit ship's cabin.
১৯৩৫ সালে (উপরে) ও আনুমানিক ১৯৫০ সালে (নিচে) সমুদ্রে পাইলার নৌকায় হেমিংওয়ে

ষোলো বছর উপন্যাস রচনা থেকে বিরত থাকার পরেও সমুদ্র ও মাছ-ধরার প্রতি তাঁর ভালোবাসা ও তৎ-সংক্রান্ত জ্ঞানকে সম্বল করে হেমিংওয়ে দিনে এক হাজার শব্দ লিখে ফেলতে শুরু করেন, যা তাঁর লেখার সাধারণ গতির দ্বিগুণ ছিল।[] ১৯৫১ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি আদ্রিয়ানা ফিরে গেলে হেমিংওয়ে কিছুটা অশান্ত হয়ে পড়েন। তবু ১৭ ফেব্রুয়ারির মধ্যেই তাঁর উপন্যাস লেখার কাজ মোটামুটি শেষ হয়ে যায়। মেরি প্রতিদিন সন্ধ্যায় সেই দিনের লেখা পড়ে দেখতেন। সম্পূর্ণ উপন্যাসটি পড়ে তিনি মন্তব্য করেছিলেন যে, এই লেখাটির জন্য তিনি হেমিংওয়ের সকল অন্যায় ক্ষমা করে দেওয়ার জন্য প্রস্তুত আছেন।[] মাত্র ছয় সপ্তাহের কিছু বেশি সময়ে লেখা এই আপাতদৃষ্টে সাদামাটা গল্পটির মান নিয়ে হেমিংওয়ে চিন্তিত ছিলেন। পরবর্তী কয়েক মাসে তিনি তাঁর প্রকাশক চার্লস স্ক্রিবনার ও তাঁর বন্ধু এ. ই. হচনার প্রমুখ বিশ্বস্ত বন্ধু ও সহকারীদের কাছে উপন্যাসটির কপি পাঠান। প্রত্যেকেই লেখাটির প্রশংসা করেন।[]

২৬,৫৩১ শব্দের পাণ্ডুলিপিটি এক বছর ফেলে রাখেন হেমিংওয়ে। এই সময়েই তাঁর মনে হয় যে, এটিকে "সমুদ্র ত্রয়ী"-র অংশ হিসেবে নয়, বরং স্বতন্ত্র একটি উপন্যাসের আকারেই প্রকাশ করবেন তিনি।[১০] লেল্যান্ড হেওয়ার্ড ও ওয়ালেস মেয়ারও তাঁকে সেটাই করতে উৎসাহিত করেন। ১৯৫২ সালের মে মাসে হেওয়ার্ড যখন লাইফ পত্রিকায় একক সংখ্যায় সমগ্র উপন্যাসটির প্রকাশ নিশ্চিত করেন, তখন হেমিংওয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হন। মেয়ারসকে লেখা হেওয়ার্ডের চিঠি থেকে জানা যায় যে, হেমিংওয়ে চাইতেন কেবলমাত্র ওয়ার অ্যান্ড পিস বা ক্রাইম অ্যান্ড পানিশমেন্ট ধাঁচের উপন্যাস রচনা থেকে বেরিয়ে আসতে।[১১] প্রকাশক চার্লস স্ক্রিবনার’স সন্‌স-এর প্রেরিত প্রাথমিক প্রচ্ছদ অলংকরণগুলি অনুমোদন করেননি হেমিংওয়ে। বরং আদ্রিয়ানাকে বলেছিলেন, কয়েকটি রেখাচিত্র এঁকে দিতে। সেগুলিকেই তাঁর বেশি মানানসই মনে হয়েছিল।[১২] প্রথমে তিনি বইটি মেরি ও তাঁর নৌকা পাইলার-এর প্রতি উৎসর্গ করার কথা ভেবেছিলেন। কিন্তু পরে যুক্তরাষ্ট্রের স্মরণ দিবসে হারানো বন্ধুদের কথা স্মরণ করে তিনি সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন এবং বইটি উৎসর্গ করেন স্ক্রিবনার ও ম্যাক্স পারকিনসের স্মৃতির উদ্দেশ্যে। মেরিও তাঁর এই সিদ্ধান্ত উদারতার সঙ্গে মেনে নেন।[১৩] এরপর ধীরে ধীরে সমালোচকেরা বইটির প্রশংসা করতে শুরু করেন। হেমিংওয়ের পুরনো প্রতিপক্ষ উইলিয়াম ফকনার পর্যন্ত উচ্চ প্রশংসায় পরিপূর্ণ একটি সমালোচনা প্রকাশ করেন। এছাড়া মুখে মুখে বইটির কথা এমনভাবে ছড়িয়ে পড়ে যে, লাইফ পত্রিকার সংখ্যাটি এবং স্ক্রিবনার’স-এর প্রথম সংস্করণ বিপুল সংখ্যায় কালোবাজারে বিক্রি হতে শুরু করে।[১৪]

১৯৫২ সালের ১ সেপ্টেম্বর লাইফ পত্রিকার শ্রম দিবস সংখ্যায় দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি প্রথম প্রকাশিত হয়। দুই দিনে পত্রিকাটির ৫৩ লক্ষ কপি বিক্রি হয়ে যায়। আমেরিকায় স্ক্রিবনার’স সংস্করণ এবং ব্রিটেনে জনাথান কেপ সংস্করণের অগ্রিম বিক্রিও ৭০,০০০ কপি স্পর্শ করে। এরপর প্রতি সপ্তাহে দুই দেশে গড়ে ৫,০০০ কপি বিক্রি হতে থাকে। দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস পত্রিকার বেস্টসেলার তালিকায় ছাব্বিশ সপ্তাহ বইটির নাম ছিল। ১৯৫৩ সালের আগেই বইটি নয়টি ভাষায় অনূদিতও হয়ে গিয়েছল।[১৫]

প্রতিক্রিয়া ও উত্তরাধিকার

[সম্পাদনা]

দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি বিপুল জনপ্রিয়তা লাভ করে। প্রকাশের তিন সপ্তাহের মধ্যেই হেমিংওয়ে শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে প্রতিদিন আশিটিরও বেশি চিঠি পেতে শুরু করেন। লাইফ পত্রিকার দফতরে আসতে থাকে আরও বেশি চিঠি। যাজকেরা এই বইটির পঙ্‌ক্তি উদ্ধৃত করতে থাকেন ধর্মোপদেশ প্রদানের সময়।[১৬] গোড়ায় সমালোচকেরা বইটির ভূয়সী প্রশংসা করেন। বইটিকে তাঁরা অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ-এর তুলনায় উন্নত মানের এবং হেমিংওয়ের পূর্ববর্তী রচনাগুলির সমতুল্য বলে উল্লেখ করেন। টাইম পত্রিকা বইটিকে একটি অন্যতম শ্রেষ্ঠ গ্রন্থের মর্যাদা প্রদান করে। সিরিল কনোলি এটিকে হেমিংওয়ের শ্রেষ্ঠ রচনা বলে উল্লেখ করেন। মার্ক শোরার মনে করেন, এই বইটি হেমিংওয়েকে বিশ শতকের মার্কিন উপন্যাসের শ্রেষ্ঠ রূপকার হিসেবে তুলে ধরেছে।[১৭] অনেকেই বইটিকে হেমিংওয়ের শ্রেষ্ঠ সাহিত্যকীর্তি বিবেচনা করে এটিকে ‘ক্লাসিক’ বা ধ্রুপদি গ্রন্থের মর্যাদা দেন।[১৮] শিল্প-ইতিহাসবিদ বার্নার্ড বেরেনসনের সমালোচনাটি হেমিংওয়ের খুব ভালো লাগে। বেরেনসন বইটিকে হারম্যান মেলভিলের মবি-ডিক উপন্যাসটির থেকে উন্নতমানের এবং অনেক দিক থেকেই হোমারীয় মহাকাব্যগুলির সমতুল্য আখ্যা দিয়েছিলেন।[১৯]

জর্জ লানডিনের দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য ক্যাট, হেমিংওয়ের কাহিনী থেকে অনুপ্রাণিত[২০]

প্রথম দিকের উচ্ছ্বসিত প্রশংসার পর্ব স্তিমিত হয়ে এলে ধীরে ধীরে শুরু হয় বইটির প্রতিকূল সমালোচনার পালা। ডেলমোর শোয়ার্ৎজ মনে করেন, গোড়ায় সমালোচকেরা এমন এক ধারণার দ্বারা পরিচালিত হয়েছিলেন যে, এই উপন্যাসটি হেমিংওয়ের পূর্ববর্তী অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য ট্রিজ উপন্যাসটির ন্যায় নিকৃষ্টমানের ছিল না। সেমোর ক্রিম অবশ্য লিখেছেন, দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি বইটির মান পূর্ববর্তী বইটির অনুরূপ। অন্যদিকে জন ডব্লিউ. অলড্রিজ বলেন যে, উপন্যাসটির বিষয়ে সাধারণ পাঠকের মতো উৎসাহী হয়ে উঠতে তিনি পারেননি।[২১] ১৯৮৫ সালে জেফরি মেয়ারস লেখেন যে, হেমিংওয়ের অন্যান্য সকল সাহিত্যকর্মের তুলনায় এই উপন্যাসটিকে সবচেয়ে বেশি অতিরঞ্জিত করে দেখা হয়। তাঁর মতে, এই উপন্যাসটি আসলে কাঠামোগত দুর্বলতার দোষে দুষ্ট একটি ছদ্ম-গম্ভীর উপকথা মাত্র।[২২] সমালোচকদের উৎসাহে ভাঁটা পড়লেও দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি ১৯৫৩ সালের ৪ মে কথাসাহিত্যে পুলিৎজার পুরস্কার জয় করে। উল্লেখ্য, ইতিপূর্বে আ ফেয়ারওয়েল টু আর্মস বা ফর হুম দ্য বেল টোলস-এর ন্যায় উপন্যাস লিখলেও এই পুরস্কারটি হেমিংওয়ের অধরাই থেকে গিয়েছিল।[২৩] কিউবায় ফালজেনসিও বাতিস্তা কর্তৃক সদ্য-প্রতিষ্ঠিত একনায়কতান্ত্রিক সরকারের একটি সাম্মানিক পদকও হেমিংওয়ে গ্রহণ করেন, যদিও ব্যক্তিগতভাবে এই নতুন শাসনব্যবস্থার সমর্থক তিনি ছিলেন না। [২৪] ১৯৫৪ সালের ২৮ অক্টোবর সুইডিশ অ্যাকাডেমি হেমিংওয়েকে সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার প্রদানের কথা ঘোষণা করার সময় তাঁর একমাত্র এই বইটিরই নাম উল্লেখ করে এবং এটিকে আধুনিক কথাসাহিত্যের ক্ষেত্রে একটি শক্তিশালী রচনা এবং শৈলীগত দিক থেকে অগ্রণী এক সাহিত্যকীর্তি হিসেবে উল্লেখ করে।[২৫]

দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটির উপর কয়েকটি সমালোচনামূলক টীকা রচিত হয়। সেগুলিকে বিভিন্ন সময়ের বিভিন্ন প্রজন্মের সমালোচকদের মতামত প্রতিফলিত হয়েছে। রিট উইলিয়ামস উল্লেখ করেছেন যে, গোড়ার দিকে গবেষকেরা বইটির প্রকৃতিবাদী ট্র্যাজেডি, খ্রিস্টীয় ট্র্যাজেডি, শিল্প ও শিল্পীর রূপক এবং আত্মজৈবনিক উপাদানগুলির উপর দৃষ্টিপাত করেছিলেন।[২৬] ১৯৬০-এর দশক পর্যন্ত এইসব বিষয়বস্তুর বিশ্লেষণ অব্যাহত ছিল। এই দশকে জন কিলিংগার উপন্যাসটিকে আলবের কামু, জঁ-পল সার্ত্রফ্রিডরিখ নিচে-এর সাহিত্যকর্মের সঙ্গে তুলনা করেন। রিচার্ড হোভি এই উপন্যাসের সঙ্গে যুক্ত করেন ইডিপাস কমপ্লেক্সের ধারণাটি। ফিলিপ ইয়াং ১৯৫২ সালে প্রথম প্রকাশিত আর্নেস্ট হেমিংওয়ে: আ রিকনসিডারেশন বইটি পরিমার্জনা সহ পুনরায় প্রকাশ করেন ১৯৬৬ সালে। বিগত কয়েক বছরে বিভিন্ন সমালোচকের মতদ্বৈতের প্রেক্ষাপটে এই পরিমার্জিত সংস্করণে উপন্যাসটি সম্পর্কে বিশেষ ইতিবাচক মনোভাব পোষণ করা হয়নি। ১৯৯১ সালে গেরি ব্রেনারের অতি-সমালোচনামূলক দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি: দ্য স্টোরি অফ আ কমন ম্যান প্রকাশিত হওয়ার পর নতুন উৎসাহে উপন্যাসটির বিশ্লেষণ শুরু হয় এবং সেই বিশ্লেষণ অদ্যাবধি হয়ে চলেছে।[২৭] ১৯৮৫ সালে মেয়ারস লিখেছিলেন যে, দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি সারা বিশ্বে ইংরেজি শিক্ষায় ব্যবহৃত হয় এবং বছরে ১০০,০০০ মার্কিন ডলার আয় করে রয়্যালটি বাবদ।[২৮] সিআইএ-র মতে, এই উপন্যাসটি সাদ্দাম হুসেনের অন্যতম প্রিয় বই ছিল। তিনি নিজেকে সান্তিয়াগোর মতোই পরাক্রমশালী বিরুদ্ধ শক্তির বিরুদ্ধে সাহস, অধ্যবসায় ও আত্মমর্যাদার সঙ্গে সংগ্রামরত এক চরিত্র মনে করতেন।[২৯] ২০০৩ সালে বিবিসি দ্য বিগ রিড নামে একটি সমীক্ষার আয়োজন করে। এই সমীক্ষা যুক্তরাজ্যের সর্বাধিক জনপ্রিয় ২০০টি উপন্যাসের একটি তালিকা প্রকাশ করা হয়। তালিকায় ১৭৩তম স্থানটি অধিকার করেছিল দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি। [৩০] এই উপন্যাস অবলম্বনে ১৯৫৮ সালে নির্মিত এবং স্পেনসার ট্রেসি অভিনীত চলচ্চিত্রটির নির্মাণের সঙ্গে সরাসরিভাবে যুক্ত ছিলেন হেমিংওয়ে। ছবিটি নির্মাণ করতে গিয়ে অনেক বাধাবিপত্তির সম্মুখীন হতে হয়েছিল নির্মাতাদের। দিমিত্রি তিওমকিন সুরারোপিত এই ছবির সাউন্ডট্র্যাক শ্রেষ্ঠ মৌলিক সুর বিভাগে অ্যাকাডেমি পুরস্কার করলেও ছবিটি শেষপর্যন্ত হেমিংওয়ের ভালো লাগেনি। [৩১] উপন্যাসটি অবলম্বনে আরও দুটি ছবি নির্মিত হয়েছে। ১৯৯০ সালের টেলিভিশন চলচ্চিত্রটিতে অভিনয় মুখ্য ভূমিকায় করেন অ্যান্টনি কুইন[৩২] এরপর আলেকসান্দর পেত্রোভ নির্মিত ১৯৯৯ সালের অ্যানিমেশন চলচ্চিত্রটি শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্যের অ্যানিমেশন চলচ্চিত্র বিভাগে অ্যাকাডেমি পুরস্কার জয় করে।[৩৩]

মূল্যায়ন

[সম্পাদনা]

মান ও যথার্থতা

[সম্পাদনা]

কোনও কোনও সমালোচক দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটিকে হেমিংওয়ের পূর্ববর্তী রচনাগুলির তুলনায় নিকৃষ্টতর বলে মন্তব্য করেছেন। ডুইট ম্যাকডোনাল্ড বইটিতে ব্যবহৃত ছদ্ম-ধ্রুপদি গদ্যভাষার সমালোচনা করে বলেছেন যে, এই ভাষাভঙ্গির আভিজাত্যের ভান করা হলেও আসলে উচ্চাঙ্গের কিছুই নেই এই উপন্যাসে।[৩৪] হেমিংওয়ের পূর্ববর্তী রচনাগুলির সঙ্গে তুলনা করে তিনি এই উপন্যাসটির একটি নেতিবাচক সমালোচনা করেন। হেমিংওয়ের দি আনডিফিটেড (১৯২৭) ছোটোগল্পটির সুসংহত ও সযত্ন স্বল্পভাষণের সঙ্গে তুলনা করে দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটিকে তিনি প্রগলভতা ও পুনরুক্তি দোষে দুষ্ট বলে মন্তব্য করেন।[৩৫] অনুরূপভাবে ব্রেনার উপন্যাসটির শৈলী ও গদ্যভাষায় অনেক ছেলেমানুষি ভুলভ্রান্তির কথা উল্লেখ করেছেন।[৩৬] মেয়ারস এই উপন্যাসের অতিনাটকীয়তা, প্রতীকতত্ত্ব ও বক্রোক্তি-ভাষণের সমালোচনা করেছেন এবং ম্যাকডোনাল্ডের মতো তিনিও এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন যে, বইটি হয় নিজের শিল্পদক্ষতার সঙ্গে আপোস করে, অথবা নিছক পাঠকরুচির পরিতৃপ্তিসাধনের জন্য রচনা করেছিলেন হেমিংওয়ে।[৩৭]

রবার্ট উইকস এই উপন্যাসে প্রচুর তথ্যগত অসম্ভাব্যতার কথা উল্লেখ করেন। মাছ চেনা ও আবহাওয়ার ধরন বিচারে সান্তিয়াগোর প্রায়-অলৌকিক ক্ষমতার কথাটিও তিনি উল্লেখ করেন। উইকস আরও বলেন যে, হেমিংওয়ে ইতিপূর্বে আখ্যানবস্তু নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা না করার জন্য সমালোচিত হতেন, অথচ তিনিই এই উপন্যাসের প্রাণকেন্দ্রে ধীরে ধীরে সঞ্চারিত করেন কপটতা। সব দিক বিবেচনা করে তিনিও দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি বইটিকে হেমিংওয়ের একটি নিকৃষ্ট উপন্যাস বলে মন্তব্য করেন।[৩৮] বিকফোর্ড সিলভেস্টার অবশ্য বলেন যে, উইকসের নির্দেশিত ভ্রান্তিগুলির কারণ হল সেই যুগে বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা। তাছাড়া কয়েকটি ভ্রান্তির প্রকৃত উদ্দেশ্য হিসেবে তিনি পাঠকের মনোযোগ গল্পের অন্তর্লীন অর্থ ও খুঁটিনাটি বর্ণনার দিকে আকর্ষণ করা বলেই মনে করেন।[৩৯] এছাড়া তিনি আরও মনে করেন যে, উপন্যাসে আপাতদৃষ্টে অসম্ভাব্য আখ্যানগত বিবরণগুলি প্রকৃতপক্ষে ইঙ্গিতমাত্র। সান্তিয়াগো ও মানোলিনের বেসবল-সংক্রান্ত কথোপকথনের সূত্র ধরে সিলভেস্টার বলেন যে, এই অংশটিকে একদিকে যেমন উপন্যাসের ঘটনাবলির সঠিক তারিখটি নির্দেশ করে (১২-১৬ সেপ্টেম্বর, ১৯৫০), অন্যদিকে তেমনই জেলে সান্তিয়াগোর সঙ্গে তার স্বপ্নের নায়ক ডিম্যাগিও-র একটি যোগসূত্র স্থাপন করে। উল্লেখ্য, এই ডিম্যাগিও-ও ছিলেন জেলের ছেলে এবং ঠিক সেই সপ্তাহেই তিনি খেলায় দুর্দান্ত ফল করেছিলেন।[৪০]

ধ্রুপদি বিষয়বস্তু

[সম্পাদনা]
Painting of a bearded man in brown robes praying next to a brown wall.
Painting of a haloed warrior on a white horse carrying a flag and killing a man, while an angel looks on from a cloud.
সান্তিয়াগোর সমনামী সন্ত জেমসের বিভিন্ন চিত্র।
বাঁদিকে: তীর্থযাত্রী সন্ত জেমস, ১৬৬১ সালে রেমব্র্যান্ট অঙ্কিত
ডানদিকে: যোদ্ধা জেমস মাতামোরোস, ১৭৪৯  ১৭৫০ সালে জিওভান্নি বাত্তিস্তা তিয়েপোলো অঙ্কিত।

দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসে ব্যবহৃত খ্রিস্টীয় প্রতীকতত্ত্ব বহু-আলোচিত। "সান্তিয়াগো" নামটি যিশু খ্রিস্টের প্রেরিত শিষ্য সন্ত জেমসের নামের স্পেনীয় পাঠ। নতুন নিয়মে বলা হয়েছে যে, সন্ত জেমস পূর্বজীবনে এক জেলে ছিলেন। মৃত্যুর পর তিনি স্পেনের রক্ষাকর্তা সন্তের মর্যাদা পান। স্পেনের সান্তিয়াগো দে কমপোস্তেলা শহরে তাঁর সমাধি অবস্থিত।[৪১] ১৯৫৪ সালে ফাদার ব্রাউনকে লেখা একটি চিঠিতে হেমিংওয়ে লিখেছিলেন যে, উপন্যাসে সান্তিয়াগো নামটির ব্যবহার কোনও কাকতালীয় ঘটনা নয়। হেমিংওয়ের এই বক্তব্যের সূত্র ধরে গবেষক এইচ. আর. স্টোনব্যাক মনে করেন যে, "দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি" উপন্যাসের সঙ্গে সান্তিয়াগোর তীর্থপথের এক গভীর সংযোগ বিদ্যমান, ঠিক যেমন ছিল হেমিংওয়ের "দ্য সান অলসো রাইজেস" উপন্যাসে। স্টোনব্যাক "দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি" উপন্যাসের সঙ্গে লুকের সুসমাচারে উল্লিখিত মাছ-ধরার অলৌকিক কাহিনীতে বর্ণিত ঘটনাবলির এক সুস্পষ্ট সংযোগ দেখিয়েছেন। উভয় কাহিনীতেই দেখা যায় যে, কোনও জেলে দুর্ভাগ্যের শিকার হচ্ছে, তারপর সমুদ্রে মাছ ধরতে যাচ্ছে এবং সেখানে একটি বড়ো আকারের মাছ ধরছে। এছাড়া স্টোনব্যাক হেমিংওয়ের রচনায় বারবার [[তারা|তারার] পরোক্ষ ইঙ্গিতের সঙ্গে প্রথাগত লাতিন শব্দ-ব্যুৎপত্তি অনুসারে "Compostela"—campus stellae (টেমপ্লেট:Literally) ধারণাটিরও সংযোগ দেখিয়েছেন।[৪২] স্টোনব্যাকের মতে, হেমিংওয়ে তীর্থযাত্রী সন্ত জোনস ধারণার বিনয় ও নম্রতা, দারিদ্র্য, দৃঢ়সংকল্প ও কষ্টসহিষ্ণুতার বিষয়গুলির উপর বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করেছেন, কিন্তু যোদ্ধা জেমস মাতামোরোস ধারণাটিকে আদৌ গুরুত্ব দেননি। এর ফলে সন্ত জেমস-সংক্রান্ত ধারণাটির নবরূপায়ণ করা গিয়েছে এই উপন্যাসে।[৪৩]

সান্তিয়াগোর অন্যতম নীতিবাক্যটি ছিল "মানুষ নির্মূল হয়ে যাবে, কিন্তু পরাজিত হবে না"। এই ধারণাটি হেমিংওয়ে সৃষ্ট অধিকাংশ প্রধান চরিত্র ও আখ্যানে পাওয়া যায়: "দ্য সান অলসো রাইজ"-এ জেক বার্নস, "ফর হুম দ্য বেল টোলস"-এ রবার্ট জর্ডন ও "অ্যাক্রস দ্য রিভার অ্যান্ড ইনটু দ্য উডস"-এ রিচার্ড ক্যান্টওয়েল চরিত্রে এবং "টু হ্যাভ অ্যান্ড হ্যাভ নট" উপন্যাসে অন্যতম প্রধান বিষয়বস্তু রূপে উঠে এসেছে এই ধারণাটি। [৪৪] ব্যাকম্যানের মতে, সান্তিয়াগো হল হেমিংওয়ের সাহিত্যকর্মে প্রাকৃতিক "ম্যাটাডোর" (ষাঁড়ের লড়াই খেলায় যে ব্যক্তির কর্তব্য ষাঁড়কে হত্যা করা)। হেমিংওয়ের পূর্ববর্তী উপন্যাসগুলিতে যে হিংস্র প্রথাগত ষাঁড়ের লড়াই অথবা অস্বস্তিকর হত্যাদৃশ্য চিত্রিত হয়েছে, তার পরিবর্তে এই উপন্যাসে সান্তিয়াগো চরিত্রটির মধ্যে দিয়ে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে অন্য এক ধরনের প্রাকৃতিক সহিংসতা।[৪৫] জোসেফ ওয়াল্ডমেয়ার বলেছেন যে, "ডেথ ইন দি আফটারনুন" (১৯৩২) বইটিতে নশ্বরতা সম্পর্কে হেমিংওয়ের দৃষ্টিভঙ্গি ফুটে উঠেছে; কিন্তু সেই দৃষ্টিভঙ্গি অনেক সুসংহত রূপ নিয়েছে "দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি" উপন্যাসে।[৪৬]

অনেক সমালোচক আবার শুধুমাত্র সান্তিয়াগো ও সন্ত জেমসের মধ্যে সাদৃশ্যই নয়, সেই সঙ্গে সান্তিয়াগো ও যিশু খ্রিস্টের সাদৃশ্যের প্রসঙ্গটিও তুলে ধরেছেন। তাঁদের আলোচনায় উঠে এসেছে খ্রিস্টের দুঃখভোগক্রুশারোহণের প্রসঙ্গ। মেলভিন ব্যাকম্যান এইরকম বেশ কিছু সাদৃশ্যের একটি রূপরেখা তুলে ধরেছেন, যার মধ্যে প্রথমটিই ছিল সান্তিয়াগোর বনে গিয়ে শান্তিতে বিশ্রামগ্রহণ ও কিছু না করার ইচ্ছাটি। সিলভেস্টার, গ্রিমস ও হেসও পূর্ববর্তী দৃশ্যে সান্তিয়াগোর চোখের কাছে ক্ষত এবং তা থেকে রক্ত পড়ার ঘটনাটিকে কাঁটার মুকুট পরার কারণে খ্রিস্টের কপালে সৃষ্ট ক্ষতের ধারণা থেকে উৎসারিত বলে মনে করেন।[৪৭] উপন্যাসের একটি বহুল-উদ্ধৃত অংশে দেখা যায়, সান্তিয়াগো দুটি হাঙরকে দেখছে:[৪৮]

"Ay," he said aloud. There is no translation for this word and perhaps it is just a noise such as a man might make, involuntarily, feeling the nail go through his hands and into the wood.

এই উদ্ধৃতাংশটিকে সিলভেস্টার, গ্রিমস ও হেস ক্রুশবিদ্ধকরণের একটি সুস্পষ্ট উল্লেখ বলে বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মতে, ঘটনাটি ঘটেছিল এক শুক্রবার বিকেল তিনটের সময়, ঠিক যে সময়ে খ্রিস্টকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয়েছিল বলে মনে করা হয়। তাই এই বিবরণটিই উপন্যাসে ধর্মীয় প্রতীকতত্ত্বের এক বিশিষ্ট উদাহরণের কাজ করছে বলে মনে করেন তাঁরা।[৪৯] ব্রেনার অবশ্য মনে করেন যে, খ্রিস্টীয় প্রতীকের পরোক্ষ উল্লেখগুলি বেশ সমস্যাবহুল। তাঁর মতে, অবলীলায় সান্তিয়াগোর নামের সঙ্গে খ্রিস্টের নাম যোগ করার কোনও প্রয়োজন নেই এবং তা নতুন নিয়মের প্রতি অসম্মানজনকও বটে। [৫০] ব্রেনারের সিদ্ধান্তু ও সান্তিয়াগোকে এক খ্রিস্ট-প্রতীম চরিত্র হিসেবে সংজ্ঞায়িত করার অতিসরলীকৃত প্রয়াস – এই দুটিকেই খারিজ করে দিয়ে স্টোনব্যাক বলেন যে, সান্তিয়াগোর চরিত্রটি প্রকৃত প্রস্তাবে হেমিংওয়ের আদর্শগুলিকেই তুলে ধরেছে এবং চরিত্রটিকে সেভাবেই দেখা উচিত।[৫১]

আধুনিক বিশ্লেষণ

[সম্পাদনা]

ব্রেনার ১৯৯১ সালে রচিত সমালোচনায় সান্তিয়াগোকে একটি বিশেষভাবে ত্রুটিপূর্ণ ব্যক্তি হিসেবে চিহ্নিত করেন। তিনি বলেন যে, সান্তিয়াগো নির্বোধ, উদ্ধত, পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন এবং পরিবেশ রক্ষার ধারণার প্রতি প্রতিকূল আচরণে লিপ্ত। সান্তিয়াগো যে অর্থনৈতিক দিক বিবেচনা না করেই সামুদ্রিক সম্পদ লুণ্ঠনে প্রবৃত্ত হয়েছে, তার জন্যও তিনি চরিত্রটির সমালোচনা করেন।[৫২] তিনি আরও বলেন যে, সান্তিয়াগো চরিত্রটিকে লিঙ্গবাদী এবং নারীর প্রতি বিদ্বেষ-মনোভাবাপন্ন করে অঙ্কন করা হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে তার চরিত্রের নারীসুলভ দিকটি ফুটে উঠেছে মানোলিনের প্রতি তার গোপন আকাঙ্ক্ষা থেকে। আবার নিজের আগ্রাসী মনোভাব ও কপটতার মাধ্যমে মানোলিনকে সান্তিয়াগো পরিচালনা করেছে নিজের স্বার্থে।[৫৩] ব্রেনারের এই বিশ্লেষণ অবশ্য বহুলভাবে সমালোচিত হয়েছে। স্টোনব্যাকের মতে, ব্রেনারের বক্তব্যটি পুরনো প্রশ্নে দীর্ণ নীরস নীতিকথা মাত্র। অন্যদিকে সিলভেস্টার, গ্রিমস ও হেস মনে করেন যে, উপন্যাসটির সম্পর্কে অনেক অন্ধ অতিকথন এবং মূল উপন্যাসের বক্তব্য বোঝার ভুল থেকেই এই সমালোচনাটি উৎপত্তি।[৫৪] গ্লেন লাভের অনুরূপ পরিবেশবাদী সমালোচনার প্রত্যত্তরে তাঁরা লেখেন যে, ব্রেনার ও লাভ দুজনেই অর্থনৈতিক বাস্তবতাকে অস্বীকার করে অশিক্ষিত সান্তিয়াগোকে এমন সব সমস্যা নিয়ে মাথা ঘামাতে বলছেন, ১৯৫০ সালে যেগুলি নিয়ে জীববিজ্ঞানের ছাত্র-শিক্ষকরা ছাড়া বিশেষ কেউ চিন্তাই করতেন না।[৫৫]

সুজান বিগেল দি ওল্ড ম্যান অ্যান্ড দ্য সি উপন্যাসটি বিশ্লেষণ করেন পরিবেশ-নারীবাদী দৃষ্টিকোণ থেকে।[৫৬] ব্রেনার সান্তিয়াগোকে লিঙ্গবাদী বললেও, তা মানেননি বিগেল। বিগেলের মতে, সান্তিয়াগো কার্যত নারীস্বরূপা সমুদ্রের সঙ্গেই বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ এবং পরিশেষে সেই সমুদ্রেরই সেবাতে নিয়োজিত।[৫৭] তবে বিগেলের মতে, সান্তিয়াগো নারীরূপা সমুদ্রকে ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ, নিষ্ঠুর ও বিশৃঙ্খল রূপেই দেখেছিল এবং সেই কারণে পুরুষালি শক্তির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে অভিভূত হয়ে পড়েছিল সে।[৫৮] সিলভেস্টার, গ্রিমস ও হেস সে-কথা অবশ্য স্বীকার করেননি। তাঁদের মতে, সমুদ্রের প্রতি সান্তিয়াগোর মনোভাব আগাগোড়াই ছিল সশ্রদ্ধ।[৫৬] জেফ্রি হারলিহি-মেরা মনে করেন, সান্তিয়াগোর চরিত্রটি কিউবার সংস্কৃতির সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িত হলেও তার রোজ রাতে স্পেনের স্বপ্ন দেখার বিষয়টি সান্তিয়াগোর অভিবাসী প্রেক্ষাপটটিকে এই উপন্যাসের একটি প্রধান অথচ অদৃশ্য দিকে পরিণত করেছে।[৫৯]

সূত্র নির্দেশ

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. বেকার ১৯৬২, p. ; কোসিবা ২০১২.
  2. রেনলডস ১৯৯৯, pp. ২৮৮–২২৯; বেকার ১৯৮৮, p. ৪৮৬.
  3. রেনল্ডস ১৯৯৯, pp. ২৫০–২৫৭; বেকার ১৯৮৮, pp. ৪৮৮–৪৮৯.
  4. সিলভেস্টার, গ্রিমস এবং হেস ২০১৮, পৃ. তেরো।
  5. ক্রুজ ১৯৮১, পৃ. ১৬৮–১৭০।
  6. বেকার ১৯৮৮, p. ২৬৪; সিলভেস্টার, গ্রিমস & হেস ২০১৮, p. চোদ্দো.
  7. বেকার ১৯৮৮, p. ৪৮৯; সিলভেস্টার, গ্রিমস & হেস ২০১৮, p. চোদ্দো.
  8. বেকার ১৯৮৮, pp. ৪৮৯–৪৯০; রেনল্ডস ১৯৯৯, p. ২৩৮.
  9. রেনল্ডস ১৯৯৯, pp. ২৩৮, ২৪৯; বেকার ১৯৮৮, pp. ৪৯০, ৪৯২.
  10. বেকার ১৯৮৮, পৃ. ৪৯২–৪৯৩, ৪৯৯।
  11. মেয়ারস ১৯৮৫, p. ৪৮৫; বেকার ১৯৮৮, pp. ৪৯৯–৫০১.
  12. বেকার ১৯৮৮, পৃ. ৫০১।
  13. রেনল্ডস ১৯৯৯, পৃ. ২৫০।
  14. বেকার ১৯৮৮, পৃ. ৫০৩–৫০৪।
  15. মেয়ারস ১৯৮৫, p. ৪৮৫; রেনল্ডস ১৯৯৯, p. ২৫৮; বেকার ১৯৮৮, pp. ৫০৪–৫০৫.
  16. বেকার ১৯৮৮, পৃ. ৫০৫।
  17. রেনল্ডস ১৯৯৯, pp. ২৫৮–২৫৯; মেয়ারস ১৯৮২, p. ৪১২; মেয়ারস 1985, pp. ৪৮৬–৪৮৭; শোরার 1962, p. ১৩৪.
  18. সিলভেস্টার, গ্রিমস এবং হেস ২০১৮, পৃ. উনিশ–কুড়ি।
  19. বেকার ১৯৮৮, p. ৫০৫; রেনল্ডস ১৯৯৯, p. ২৫৯.
  20. "নিউ হেমিংওয়ে স্কাল্পচার আইডিয়া ওয়াজ বর্ন ডিকেডস এগো ইন কিউবা"পেতোসকি নিউজ-রিভিউ। ৮ সেপ্টেম্বর ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৭ এপ্রিল ২০২৫
  21. মেয়ারস ১৯৮৫, pp. ৪৮৭–৪৮৮; রেনল্ডস ১৯৯৯, p. ২৫৯.
  22. মেয়ারস ১৯৮৫, পৃ. ৪৮৮–৪৮৯।
  23. রেনল্ডস ১৯৯৯, p. ২৬৩; বেকার ১৯৮৮, p. ৫১০; মেয়ারস ১৯৮৫, p. ৪৮৯.
  24. বেকার ১৯৮৮, পৃ. ৫০৬।
  25. অলিভার ১৯৯৯, p. ২৪৬; Nobel Prize citation.
  26. উইলিয়ামস ১৯৮১, p. ১৭৩; সিলভেস্টার, গ্রিমস & হেস ২০১৮, p. একুশ.
  27. সিলভেস্টার, গ্রিমস এবং হেস ২০১৮, পৃ. তেইশ-সাতাশ।
  28. মেয়ারস ১৯৮৫, পৃ. ৪৮৫।
  29. "Regime স্ট্র্যাটেজিক ইনটেন্ট – সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি"সেন্ট্রাল ইনটেলিজেন্স এজেন্সি। ১৩ জুন ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত।
  30. "বিবিস – দ্য বিগ রিড – টপ ২০০ (১৫০–২০০)"ব্রিটিশ ব্রডকাস্টিং কর্পোরেশন। ১৯ নভেম্বর ২০০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৩
  31. অলিভার ১৯৯৯, pp. ২৪৭–২৪৮; মেয়ারস ১৯৮৫, pp. ৪৮৯–৪৯৩.
  32. অলিভার ১৯৯৯, পৃ. ২৪৮।
  33. "দ্য সেভেনটি-সেকেন্ড অ্যাকাডেমি অ্যাওয়ার্ডস, ২০০০"Oscars.org। ১৭ এপ্রিল ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১৭ অক্টোবর ২০২৩
  34. ম্যাকডোনাল্ড ১৯৬০, পৃ. ৫৯৩, ৫৯৬।
  35. ম্যাকডোনাল্ড ১৯৬০, পৃ. ৫৯৭–৫৯৮।
  36. ব্রেনার ১৯৯১, পৃ. ৬৮–৭৮।
  37. মেয়ারস ১৯৮৫, পৃ. ৪৮৯।
  38. উইকস ১৯৬২, পৃ. ১৮৮–১৯২।
  39. সিলভেস্টার ১৯৯৬, পৃ. ২৬৫–২৬৬।
  40. সিলভেস্টার ১৯৯৬, পৃ. ২৪৬–২৪৯, ২৫৬–২৬১।
  41. অলিভার ১৯৯৯, পৃ. ২৪৬।
  42. স্টোনব্যাক ২০১৪, পৃ. ১৭০–১৭৩।
  43. স্টোনব্যাক ২০১৪, পৃ. ১৭৩, ১৭৬।
  44. অলিভার ১৯৯৯; মেয়ারস ১৯৮৫, p. ৪৮৯.
  45. ব্যাকম্যান ১৯৬২, পৃ. ১৪২–১৪৩।
  46. ওয়াল্ডমেয়ার ১৯৬২, পৃ. ১৪৫–১৪৯।
  47. ব্যাকম্যান ১৯৬২, p. ১৪২; সিলভেস্টার, গ্রিমস & হেস ২০১৮, p. ৬৯.
  48. ব্যাকম্যান ১৯৬২, p. ১৪৩; অলিভার ১৯৯৯, pp. ৫৭, ২৪৩; ওয়াল্ডমেয়ার ১৯৬২, p. ১৪৪.
  49. সিলভেস্টার, গ্রিমস এবং হেস ২০১৮, পৃ. ১০৪।
  50. ব্রেনার ১৯৯১, পৃ. ৩৭–৩৮।
  51. স্টোনব্যাক ২০১৪, পৃ. ১৭৬–১৭৭।
  52. ব্রেনার ১৯৯১, পৃ. ৫৪–৬৬।
  53. ব্রেনার ১৯৯১, পৃ. ৮০–৯৬।
  54. স্টোনব্যাক ২০১৪, pp. ১৬৭–১৬৮; সিলভেস্টার, গ্রিমস & হেস ২০১৮, p. ছাব্বিশ.
  55. সিলভেস্টার, গ্রিমস এবং হেস ২০১৮, পৃ. ছাব্বিশ।
  56. 1 2 সিলভেস্টার, গ্রিমস এবং হেস ২০১৮, পৃ. ৪৯।
  57. বিগেল ১৯৮৫, পৃ. ১৪১–১৪২, ১৪৬।
  58. বিগেল ১৯৮৫, পৃ. ১৪১–১৪৬।
  59. হারলিহি-মেরা ২০১১; হারলিহি-মেরা ২০১৭, p. ১১৭.

গ্রন্থপঞ্জি

[সম্পাদনা]

আরও পড়ুন

[সম্পাদনা]
পুরস্কার ও স্বীকৃতি
পূর্বসূরী
উইনস্টন চার্চিল
১৯৫৩
সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার
১৯৫৪
উত্তরসূরী
হলডর ল্যাক্সনেস
১৯৫৫