বিষয়বস্তুতে চলুন

দারিয়া-এ নূর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
দারিয়া-এ নূর
ওজন১৮২
রংহালকা গোলাপি
আকৃতিTabular, free-form. Inscribed.
মূল দেশভারত
মূল খনিকল্লুর খনি (বর্তমান অন্ধ্র প্রদেশ)
মালিকইরান কেন্দ্রীয় ব্যাংক, ইরান

দারিয়া-এ নূর (ফার্সি: دریای نور) আলোর নদী বা আলোর সাগর; বিশ্বের অন্যতম বড় হীরকখন্ড, যার ওজন প্রায় ১৮২ ক্যারেট (৩৬ গ্রাম)। এটির রঙ গোলাপি আভাযুক্ত, এ বৈশিষ্ট্য হীরার মধ্যে খুবই দুর্লভ। এটি বর্তমানে পারস্যের রাজ মুকুটের অংশ হিসেবে রয়েছে যা তেহরানে অবস্থিত সেন্ট্রাল ব্যাংক অফ ইরানে রক্ষিত আছে। [][][]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

কোহিনূর হীরার মত দারিয়া-এ নূর হীরাটিও গোলকোন্দা খনি, আরও নির্দিষ্ট করে বলা যায় ভারতের অন্ধ্র প্রদেশের[] পরিতলা-কোল্লুর খনি থেকে পাওয়া যায়। খুঁজে পাওয়ার পরেই হীরাটি মুঘল সম্রাটের দখলে যায়।[]

১৭৩৯ খ্রিষ্টাব্দে পারস্যের শাসক নাদির শাহ ভারতের উত্তরাঞ্চল আক্রমণ করে দিল্লী দখল করে নেয় এবং বহু দিল্লীবাসীকে হত্যা করে। মূঘল সম্রাট মোহাম্মদের কাছে রাজশক্তি ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে নাদির শাহ কোহিনূর হীরা, ময়ূর সিংহাসনের সাথে দারিয়া-এ নূর সহ মুঘল সম্রাটের সম্পূর্ণ বিপুল ধন-রত্নে পরিপূর্ণ কোষগার দখল করে নেয়। নাদির শাহ এ সমস্ত ধনরত্ন তার সাথে করে ইরান নিয়ে যান এবং দারিয়া-ই-নূর সেই থেকে সেখানেই রয়েছে।

নাদের শাহের মৃত্যুর পরে তার দৌহিত্র শাহরুখ মির্জা উত্তরাধিকার সূত্রে দারিয়া-এ নূরের মালিক হন। এরপর এটি আলম খান খোজেইমেহের দখলে আসে এবং পরে পারস্যের ঝান্ড সম্রাজ্যের সদস্য লুতফ্‌ আলি খান ঝান্ডের দখলে আসে। কাজার সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা আগা মোহাম্মদ খান ঝান্ডদের যুদ্ধে পরাজিত করলে দারিয়া-এ নূর কাজারদের দখলে চলে আসে। ফাতেহ আলি শাহ কাজার তার নাম হীরা এক পিঠে খোদাই করান। পরবর্তীতে নাসের-আল-দীন শাহ কাজার এটি প্রায়ই তার বাহুবন্ধনীতে পড়তেন। তিনি বিশ্বাস করতে এটি হীরা সাইরাস রাজমুকুটকেও সুশোভিত করেছিল। যখন রাজকীয় রীতিতে বাহুবন্ধনীর রেওয়াজ কমে আসে তখন তিনি এটি তার পোষাকে পিনের সাথে পরিধান করতেন। বিভিন্ন সময়ে এই রত্ন সম্মানের প্রতীক হিসেবে রাজ্যের সম্মানী ব্যক্তিদের কাছে গচ্ছিত রাখা হয়েছে।[] ১৯০২ সালে ইউরোপ ভ্রমণের সময় শাসক মোজাম্মর আল-দীন শাহ কাজার এ হীরাটি তার হ্যাটের অলঙ্কার হিসেবে পরিধানের আগ পর্যন্ত এটি গুলিস্তান প্রাসাদের কোষগারে লুকায়িত ছিল। পাহলভি সম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা রেজা শাহ ১৯২৬ সালে তার রাজ্যভিষেকের সময় এই হীরাটি তার সামরিক টুপিতে অলঙ্কার হিসেবে ব্যবহার করেন, এবং ১৯৬৭ সালেও মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভির রাজ্যভিষেক অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়।[]

সম্ভাব্য সংশ্লিষ্টতা

[সম্পাদনা]

১৯৬৫ সালে কানাডীয় এক গবেষক দলের প্ররস্যের রাজমুকুটের রত্ন সম্পর্কিত একটি গবেষণায় বলা হয়েছিল, দারিয়া-এ নূর একটি বড় গোলাপি হীরার অংশ ছিল এবং তা মুঘল সম্রাট শাহজাহানের সিংহাসনে খচিত ছিল। ফরাসি জহোরি জিন-বাপ্টিস্ট তাভেরনিয়ের ১৬৪২ খ্রিষ্টাব্দের এক জার্নালে এ সম্পর্কে বর্ণনা রয়েছে, যিনি একে "Diamanta Grande Table" নামে ডেকেছেন। হীরাটি হয়তো দুই ভাগে কাটা হয়েছে; বড় ভাগটি দারিয়া-এ নূর ("আলোর সাগর"); ছোট অংশটি নূর-উল-আইন হীরা যার ওজন মনে করা হয় ৬০ ক্যারেট (১২ গ্রাম), যা বর্তমানে ইরানের ইম্পেরিয়াল কালেশনে একটি টায়রায় খচিত রয়েছে।[][]

১৬৭৬ সালে তাভার্নিয়ার অঙ্কিত গ্রেট টেবিল হীরার চিত্র
নূর-উল-আইন টিয়ারা

১৯৬৫ সালে, ইরানি রাজকীয় রত্নসম্ভার নিয়ে গবেষণারত একটি কানাডিয়ান দল এই সিদ্ধান্তে পৌঁছায় যে দারিয়া-এ নূর সম্ভবত একটি বিশাল গোলাপি হীরার অংশ ছিল, যা মুঘল সম্রাট শাহজাহান-এর সিংহাসনে বসানো ছিল। এই হীরার বর্ণনা পাওয়া যায় ১৬৪২ সালে ফরাসি রত্ন ব্যবসায়ী জ্যঁ-ব্যাপটিস্ট তাভার্নিয়ে-এর জার্নালে, যেখানে তিনি এটিকে গ্রেট টেবিল হীরা ("Diamanta Grande Table") নামে উল্লেখ করেছিলেন।

ধারণা করা হয়, এই হীরাটি পরবর্তীতে কেটে দুটি ভাগ করা হয়েছিল—এর বড় অংশটি হচ্ছে দারিয়া-এ নূর এবং ছোট অংশটি হচ্ছে প্রায় ৬০-ক্যারেট (১২-গ্রাম) ওজনের নূর-উল-আইন হীরা, যা বর্তমানে একটি টিয়ারায় বসানো অবস্থায় ইরানি রাজকীয় সংগ্রহে রয়েছে।[]

আরও দেখুন

[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. 1 2 3 4 Bhatia, Shyam (২৮ মার্চ ২০১২)। "Meet Daria-i-Noor, the Koh-i-Noor's little-known sibling"The Tribune। সংগ্রহের তারিখ ২৫ আগস্ট ২০২৩
  2. www.iranchamber.com
  3. মোসলেম, সৈয়দ রিফাত (৩১ জুলাই ২০২৫)। "দরিয়া-ই-নূর হীরাসহ ১০৯ রত্নের মালিক কারা"দৈনিক প্রথম আলো। সংগ্রহের তারিখ ৩১ জুলাই ২০২৫
  4. Deccan Heritage, H. K. Gupta, A. Parasher and D. Balasubramanian, Indian National Science Academy, 2000, p. 144, Orient Blackswan, আইএসবিএন ৮১-৭৩৭১-২৮৫-৯
  5. "Koh-i-noor | Diamond, Controversy, & Facts | Britannica"www.britannica.com (ইংরেজি ভাষায়)। ২৩ এপ্রিল ২০২৫। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০২৫
  6. "Collections"Central Bank of The Islamic Republic of Iran। ২৬ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভকৃত। সংগ্রহের তারিখ ১২ মে ২০২৫
  7. "Darya-e Nur"Britannica (ইংরেজি ভাষায়)। ২৭ অক্টোবর ২০২২। সংগ্রহের তারিখ ২ মার্চ ২০২৩

বহিঃসংযোগ

[সম্পাদনা]