দারিদ্র্য ও শিশুশ্রম

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

দারিদ্র্য বা দরিদ্রতা বলতে সাধারণত বুঝায় মানুষের জীবনযাত্রায় উন্নতির অক্ষমতা, যখন জীবনযাপনের জন‍্য কোনো ব‍্যক্তির নিকট তার ন্যূনতম অতি প্রয়োজনীয় দ্রব্য ক্রয়ের জন্য অর্থ ব‍্যয়ের সামর্থ‍্য থাকে না, তাকে চরম দরিদ্র‍্যতা বলে। এবং যে কোনো কাজ যা একটি শিশুর মর্যাদা কে ক্ষুব্ধ করে এবং একটি শিশুর শৈশব কেঁড়ে নিয়ে তাকে অর্থ উপার্জনে বাধ্য করে তাকে শিশুশ্রম বলে। দারিদ্ররেখা বলতে এমন একটি মাথাপিছু মাসিক ভোগ ব‍্যায়ের পরিমাণ বোঝায় যেখানে কোনো ব‍্যক্তি দৈনিক ২২৫০ ক‍্যালেরিযুক্ত খাদ্য গ্ৰহণ করতে সক্ষম। যাদের দরিদ্ররেখা বা তার নিচে অবস্থান, তাদের জীবনচালনা খুব দুষ্কর,কষ্টসাধ্য ও দুঃসাধ্য এবং যার মারাত্মক প্রভাব শিশুদের ‍উপর পড়ে, ফলে অল্প বয়সেই তারা শিশুশ্রমে জড়িয়ে পড়ে।

দরিদ্রতার পেছনে শিশুশ্রম[সম্পাদনা]

সমাজে বিভিন্ন আয়শ্রেনির মানুষের সাথে একে অন‍্যের তুলনা হয়ে থাকে, এক্ষেত্রে উচ্চ আয়ের ব‍্যক্তিগণের সাথে নিম্ম আয়ের ব‍্যক্তিদের সাথে তুলনা করা হয়, যারা উচ্চ আয়ের ব‍্যক্তিদের সাপেক্ষে জীবন উন্নয়নে ব‍্যর্থ।

বাংলাদেশে শিশুশ্রম[সম্পাদনা]

বাংলাদেশে সরকারি নিদর্শনা মতে ১৪ বছর বয়সের নিচে ছেলেমেয়েরা শিশু হিসেবে গণ‍্য। যারা ১৪ বছরের নিচে এবং কোনো কাজ বা শ্রমের সাথে জড়িত তা শিশুশ্রম হিসেবে গণ‍্য হয়। দক্ষিণ এশিয়ার অন‍্যান‍্য দেশের মতো বাংলাদেশেও শিশুশ্রম আছে। বাংলাদেশে শিশুশ্রমের প্রথম ও প্রধান কারণ হলো- অর্থনৈতিক দুরবস্থা বা দরিদ্রতা। দরিদ্র পরিবারের পক্ষে ভরণ-পোষণ মিটিয়ে সন্তানের লেখা পড়ার খরচ যোগানো বাবা-মার পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠেনা। তারা তাদের সন্তানদের বিদ‍্যালয়ে দেবার উৎসাহ হারিয়ে ফেলেন, এবং অভিভাবকগণ মনে করেন, সন্তান কোনো কাজে নিয়োজিত হলে পরিবার আর্থিকভাবে কিছুটা লাভবান হবে। ফলে আমাদের দেশে শিশুশ্রমের হার বৃদ্ধি পাচ্ছে।

দালাল ও ব‍্যবসায়িদের লাভ[সম্পাদনা]

যারা শিশুশ্রমে জড়িত তারা বেশির ভাগ অল্প বয়সী (৬-১৪)। তারা দরিদ্রতার কারনে কাজ করে, অল্প পারিশ্রমিকে দীর্ঘক্ষণ কাজে খাটানো যায় বলে নিয়োগ কর্তারা/মালিকেরা তাদেরকে কাজে লাগানোর জন্য উৎসাহিত করে। এসবের জন‍্য তারা বিভিন্ন দালাল নিযুক্ত করে। ফলে, মালিকরা বেশি লাভ পায় ও তার একটি অংশ দালালকে দেয়।

বাংলাদেশের সংবিধানে শিশুদের অধিকার[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের সংবিধানে শিশু সহ নাগরিকের মৌলিক অধিকার কে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। সংবিধানে রাষ্ট্র পরিচালনার মূলনীতি অংশে শিশুদের জন্য বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষাসহ শারীরিক ও মানসিক প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ ব‍্যবস্থা নিয়েছে সরকার।

বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬[সম্পাদনা]

বাংলাদেশের শ্রম আইন ২০০৬ - এ শিশুর ন্যূনতম বয়স ১৪ এবং ১৪ থেকে ১৮ বছর বয়সী হলো কিশোর। এছাড়া ও আইনে উল্লেখ করা হয়েছে যে, ১৪ বছরের কম বয়সী শিশুদের কাজে নিয়োগ করা যাবে না। শিশুর পিতা মাতা বা অভিভাবক শিশুকে দিয়ে কাজ করানোর জন্য কারো সাথে চুক্তি করতে পারবে না। কিশোর শ্রমিক নিয়োগের জন্য রেজিস্টার্ড ডাক্তার থেকে ফিটনেস সার্টিফিকেট সংগ্ৰহ করতে হবে। কিশোর শ্রমিকদের দৈনিক কাজের সময় ৫ ঘন্টা। তবে, সন্ধ্যা ৭ টা - ভোর ৭টা পর্যন্ত কোনো কিশোর শ্রমিক দিয়ে কাজ করানো যাবে না। আরো বলা হয়েছে, ১২ বছর বয়সী শিশুরা -কিশোররা কেবল হালকা কাজই করতে পারবে যাতে তাদের কোনো ক্ষতি না হয় এবং শিক্ষা গ্ৰহণে বাধাপ্রাপ্ত না হয়।

জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি ২০১০[সম্পাদনা]

জাতীয় শিশুশ্রম নিরসন নীতি- ২০১০ এ শিশুশ্রম বিলোপ সাধনে কিছু লক্ষ‍্য নির্ধারণ করা হয়েছে যা হলো:- - শিশুশ্রম প্রতিরোধ ও নির্মূলে কৌশল গত ব‍্যবস্থা গ্ৰহণ; - প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাত হতে ঝুঁকিপূর্ণ শিশুশ্রম থেকে শিশুদের সরিয়ে নিয়ে আসা এবং - সব ধরনের শিশুশ্রম বিলোপে দীর্ঘ মেয়াদি ব‍্যবস্থা গ্ৰহণ করা হয়েছে।

জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদ[সম্পাদনা]

১৯৮৯ সালে জাতিসংঘ কর্তৃক প্রণীত জাতিসংঘ শিশু অধিকার সনদে শিশুশ্রম বিষয়ে সুস্পষ্ট অঙ্গীকার ব‍্যক্ত করা হয়েছে। এই সনদে বলা হয়েছে, স্থানীয় পরিস্থিতি বিবেচনা করে সদস্য রাষ্ট্র গুলো শিশুশ্রমের জন্য নিদির্ষ্ট বয়স, বিশেষ কর্মঘণ্টা ও কর্মে নিয়োগের যথার্থ শর্তাবলি নিয়োগ করবে। তাছাড়া সনদে শিশুর সুরক্ষা, বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা ইত্যাদি বিষয়ে অঙ্গীকার ব‍্যক্ত করা হয়েছে যা শিশুশ্রম নিরসনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।বাংলাদেশ ১৯৯০ সালে এ সনদ অনুসমর্থন করেছে।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

১. বাংলাদেশ ও বিশ্বপরিচয় (নবম-দশম, NCTB)
২. ইউনিসেফ