দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় প্রভাবের ইতিহাস

খ্রিস্টপূর্ব ২৯০ সাল থেকে ১৫ শতক পর্যন্ত দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রভাবের বলয়ের অধীনে ছিল। এই সময়ে স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যবস্থার সঙ্গে হিন্দু - বৌদ্ধ প্রভাব যুক্ত হয়েছিল। ভারতীয় উপমহাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূলীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গে বার্মা, ভুটান, থাইল্যান্ড, সুন্দা দ্বীপপুঞ্জ, মালয় উপদ্বীপ, ফিলিপাইন, কম্বোডিয়া, লাওস এবং চম্পার বিভিন্ন রাজ্যের মধ্যে বাণিজ্যিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারতীয়করণ এবং সংস্কৃতায়ন ঘটে। এই অঞ্চলের শাসনব্যবস্থা ইন্দোস্ফিয়ার -এর মধ্যে এসে বৃহত্তর ভারতীয় হিন্দু-বৌদ্ধ মন্ডল (রাজনৈতিক ব্যবস্থা, নগর-রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্য) রূপে গঠিত হয়েছিল।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] ভারতীয় সংস্কৃতি বিকাশ নিজেই বিভিন্ন স্বতন্ত্র সংস্কৃতি ও জনগোষ্ঠীর সংমিশ্রণে হয়েছে, যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন, বিশেষত অস্ট্রো-এশীয় জনগোষ্ঠীরও প্রভাব ছিল।[২] দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ভারতীয় সংস্কৃতি ও ধর্মীয় ঐতিহ্যের গ্রহণযোগ্যতার অন্যতম কারণ ছিল এটি ভারতীয় সংস্কৃতির সাথে ইঅনেক ক্ষেত্রে মিল খুঁজে পাওয়া। এটি ব্যাখ্যা করা যায় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীন অস্ট্রোএশীয় জনগোষ্ঠী, যেমন প্রাথমিক মুন্ডা এবং মোন খেমার গোষ্ঠী এবং পরবর্তী হিমালয় অঞ্চল, বিশেষত তিব্বতী ভাষা ও সংস্কৃতির প্রভাব দ্বারা। বিভিন্ন গবেষক, যেমন প্রফেসর প্রজিলুসকি, জুল ব্লশ এবং লেভির মতো পণ্ডিতরা মনে করেন যে প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতি ভাষাগত, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক প্রভাব ছিল। ভারতকে পশ্চিমা, পূর্বাঞ্চলীয় ও স্থানীয় ঐতিহ্যের সংমিশ্রণে এক বৈচিত্র্যময় সংস্কৃতির কেন্দ্র হিসেবে দেখা হয়। এই স্বতন্ত্র ভারতীয় সাংস্কৃতিক ব্যবস্থা পরবর্তীকালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার স্থানীয় সমাজ ও রাষ্ট্রব্যবস্থার অংশ হয়ে ওঠে। এর ফলে শাসকেরা রাজনৈতিক ক্ষমতা ও স্থিতিশীলতা অর্জন করে, ছোট ছোট গোত্রপ্রধানরা বৃহত্তর আঞ্চলিক শক্তিতে পরিণত হতে পেরেছিলেন।[২]
ভারতীয় উপমহাদেশের অন্যান্য রাজ্যগুলোর তুলনায় পল্লব সাম্রাজ্য, যা ভারতীয় উপদ্বীপের দক্ষিণ-পূর্ব উপকূল শাসন করেছিল, সমুদ্র পাড়ি দেওয়ার ক্ষেত্রে কোনো সাংস্কৃতিক বাধা আরোপ করেনি।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন] চোল সাম্রাজ্য, বিশেষ করে রাজেন্দ্র চোলের দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অভিযান এবং শ্রীবিজয়ের আক্রমণ এই অঞ্চলে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই প্রভাবের ফলে সমুদ্রপথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক আরও নিবিড় হয়ে ওঠে।যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে বৌদ্ধধর্ম যেখানে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অনেক দেশে বৌদ্ধ ধর্ম বিকশিত হয়ে প্রধান ধর্মে পরিণত হয়, সেখানে ভারতে এটি সংখ্যালঘু ধর্মে পরিণত হয়।
সমুদ্রপথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বর্তমান মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং ফিলিপাইনের জনগোষ্ঠী আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ থেকে ১৫০০ সালের মধ্যে দক্ষিণ চীন থেকে দক্ষিণ দিকে অভিবাসিত হয়েছিল বলে মনে করা হয়। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে, ভারতীয় উপমহাদেশে বিকশিত সভ্যতার প্রভাব তাদের ওপর প্রবল হয়ে ওঠে। এই প্রভাব দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের জনগোষ্ঠীর মধ্যেও বিস্তৃত হয়।
প্রায় ১৫০০ খ্রিস্টাব্দ পপর্যন্ত দক্ষিণ ভারতীয় ব্যবসায়ী, অভিযাত্রী, শিক্ষক ও পুরোহিতরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় প্রধান প্রভাবশালী শক্তি হিসেবে সক্রিয় ছিলেন। হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্ম উভয়ই ভারত থেকে এই অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে এবং শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে পারস্পরিক সহাবস্থানে টিকে ছিল। পরবর্তী সময়ে, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের অধিকাংশ রাষ্ট্র প্রধানত বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারতীয়করণের চালিকাশক্তি
[সম্পাদনা]দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভারতীয়করণের প্রধান চালিকাশক্তি ছিল অস্ট্রোনেশীয়[৩][৪] এবং ভারতীয় সামুদ্রিক বাণিজ্য, বিশেষ করে মসলা বাণিজ্য সমুদ্রপথে সিল্ক রোডের সংযোগ। এছাড়া, সম্রাট অশোকের দূত এবং বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারকদের প্রচেষ্টাও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতীয় সমুদ্র বাণিজ্য
[সম্পাদনা]

দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দ্বীপ অঞ্চলের অস্ট্রোনেশীয় নাবিকেরা খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ সালের দিকেই দক্ষিণ ভারত এবং শ্রীলঙ্কার সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপন করেছিল। এর ফলে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বস্তুগত সংস্কৃতি ও কৃষিপণ্য দক্ষিণ এশিয়ায় প্রবেশ করে এবং একই সঙ্গে ভারত ও চীনের সংস্কৃতির মধ্যে সংযোগ সৃষ্টি হয়। দ্বীপ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ভারতে যে প্রাচীন সমুদ্রপথ তৈরি হয়েছিল, তা পরবর্তীকালে বৃহত্তর মশলা বাণিজ্য নেটওয়ার্কের গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে ওঠে। পরে এই পথ তামিল এবং আরব নাবিকদের মাধ্যমেও ব্যবহৃত হয়। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে দীর্ঘমেয়াদি সংযোগ কেবল বাণিজ্যিক আদান-প্রদানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না, বরং এটি সাংস্কৃতিক বিনিময়ের পথকেও প্রশস্ত করেছিল।[৩][৪][৫][৬]
ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রথম সুস্পষ্ট উল্লেখ পৌরাণিক মহাকাব্য মহাভারতে পাওয়া যায়। ঐতিহাসিকভাবে, ভারতে প্রথম নৌবাহিনী গঠনের চেষ্টা করেন চন্দ্রগুপ্ত মৌর্য (রাজত্বকাল ৩২২-২৯৮ খ্রিস্টপূর্বাব্দ), যার বিবরণ মেগাস্থিনিস (আনুমানিক ৩৫০-২৯০ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) দিয়েছেন।[৭] মৌর্য সাম্রাজ্যের (৩২২-১৮৫ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) নৌবাহিনী সম্রাট অশোকের (রাজত্বকাল ২৭৩-২৩২ খ্রিস্টপূর্বাব্দ) সময়েও কার্যকর ছিল। তিনি এই নৌবাহিনী ব্যবহার করে গ্রীস, সিরিয়া, মিশর, সাইরিন, ম্যাসেডোনিয়া এবং ইপিরাসে বিশাল কূটনৈতিক মিশন পাঠিয়েছিলেন।[৭] সাইবেরিয়ায় যাযাবর সম্প্রদায়ের হস্তক্ষেপের কারণে, যা ভারতের রৌপ্যমুদ্রার অন্যতম উৎস ছিল, ভারত বাণিজ্যের দৃষ্টি মালয় উপদ্বীপের দিকে ফেরায়। মালয় উপদ্বীপ দ্রুত সোনার নতুন উৎস হয়ে ওঠে এবং সমুদ্রপথে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত হয়ে যায়।[৮] মৌর্য সাম্রাজ্যের সময় ভারত মহাসাগরের বিভিন্ন অঞ্চলের সঙ্গে সমুদ্রপথে বাণিজ্য উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।[৮]
বৌদ্ধ মিশন
[সম্পাদনা]শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্য অনুসারে, অশোকের পৃষ্ঠপোষকতায় মোগ্গালিপুত্ত-তিষ্য প্রায় ২৫০ খ্রিস্টপূর্বাব্দে "সীমান্ত অঞ্চলে" বৌদ্ধ ধর্ম প্রচারের জন্য নয়টি মিশন পাঠিয়েছিলেন। তবে এই ঐতিহ্য সরাসরি অশোককে এই মিশনগুলোর প্রেরণার জন্য কৃতিত্ব দেয় না। প্রতিটি মিশনে পাঁচজন ভিক্ষু ছিলেন এবং একজন প্রবীণ ভিক্ষুর নেতৃত্বে তা পরিচালিত হতো।[৯] শ্রীলঙ্কায় তিনি তার নিজ ছেলে মহিন্দকে পাঠিয়েছিলেন, যার সঙ্গে ছিলেন আরও চারজন থেরা— ইত্তিয, উত্তিয, সাম্বল ও ভদ্দসাল।[১০] এরপর, মোগ্গলিপুত্ত তিস্সের সহায়তায়, অশোক কাশ্মীর, গান্ধার, হিমালয়, যবনদের দেশ (গ্রিক অঞ্চল), মহারাষ্ট্র, সুবর্ণভূমি এবং শ্রীলঙ্কার মতো দূরবর্তী অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মপ্রচারকদের প্রেরণ করেন।[১০]
শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্য অনুসারে, এই অভিযানগুলি অশোকের ১৮তম রাজত্বকালের, নিম্নলিখিত অভিযানকারীদের নামকরণ করা হয়েছে: [১১]
- মহিন্দ → শ্রীলঙ্কা
- মজ্ঝন্তিক → কাশ্মীর ও গান্ধার
- মহাদেব → মহিষমণ্ডল (সম্ভবত আধুনিক মহীশূর অঞ্চল)
- রক্ষিত → বনবাস
- ধর্মরক্ষিত (গ্রিক বংশোদ্ভূত) → অপরান্তক (পশ্চিম ভারত)
- মহাধর্মরক্ষিত → মহারাষ্ট্র
- মহারক্ষিত → গ্রিক দেশ
- মজ্ঝিম → হিমালয়
- সোণ এবং উত্তরা → সুবর্ণভূমি (সম্ভবত নিম্ন বার্মা ও থাইল্যান্ড)
পরবর্তীতে, রাজত্বের ১৯তম বছরে, অশোকের কন্যা সংঘমিত্রা শ্রীলঙ্কায় যান সেখানে নান সম্প্রদায় প্রতিষ্ঠার জন্য এবং তিনি পবিত্র বোধিবৃক্ষের একটি চারা নিয়ে যান।[৯][১২]
এরিখ ফ্রাউভালনার ও রিচার্ড গমব্রিচের মতো পণ্ডিতরা মনে করেন যে, শ্রীলঙ্কার ঐতিহ্যে উল্লিখিত এই মিশনগুলো ঐতিহাসিকভাবে সত্য।[১৩] একিছু প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণও এটি সমর্থন করে। বিনয় নিদানে গ্রন্থে পাঁচজন ভিক্ষুর নাম পাওয়া যায়, যাঁরা হিমালয় অঞ্চলে গিয়েছিলেন বলে বলা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে তিনজনের নাম ভিলসা ( বিদিশার কাছে) থেকে পাওয়া অবশেষের একটি পাত্রে উৎকীর্ণ অবস্থায় পাওয়া গেছে। এই পাত্রটি খ্রিস্টপূর্ব ২য় শতকের শুরুর দিকে নির্মিত বলে ধারণা করা হয় এবং এতে লেখা আছে যে তারা হিমালয়ের স্কুলের ভিক্ষু ছিলেন।[৯] এই মিশনগুলো সম্ভবত মধ্য ভারতের বিদিশা থেকে শুরু হয়েছিল, কারণ মহিন্দ সেখানে এক মাস অবস্থান করেছিলেন শ্রীলঙ্কায় যাওয়ার আগে।[১৪]
গমব্রিচের মতে, এই মিশনে অন্যান্য ধর্মের প্রতিনিধিরাও থাকতে পারেন, এবং সেই কারণে লামোতের "ধর্ম" বিষয়ক আপত্তি গ্রহণযোগ্য নয়। বৌদ্ধ ইতিহাসবিদরা সম্ভবত অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের উল্লেখ করেননি, যাতে বৌদ্ধ ধর্মের গুরুত্ব ক্ষুণ্ন না হয়।[১৫] ফ্রাউভালনার ও গমব্রিচ আরও মনে করেন যে, এই মিশনগুলো পরিচালনার জন্য যে সম্পদ ও সংগঠন প্রয়োজন, তা কেবল একজন শক্তিশালী শাসকের পক্ষেই সম্ভব ছিল। শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক গ্রন্থগুলো, যা থেরবাদ বৌদ্ধ মতবাদের অন্তর্ভুক্ত, মোগ্গলিপুত্ত তিস্সের ভূমিকা অতিরঞ্জিত করেছে, যাতে থেরবাদ সম্প্রদায়ের গৌরব বৃদ্ধি পায়।[১৫]
কিছু ইতিহাসবিদ মনে করেন যে, অশোকের রাজকীয় পৃষ্ঠপোষকতার কারণেই বৌদ্ধধর্ম একটি প্রধান ধর্মে পরিণত হয়েছিল।[১৬]
প্রাচীন যুগ থেকে মধ্যযুগের উচ্চ পর্যায়
[সম্পাদনা]
এই সময়কালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলি অর্থনৈতিক কার্যকলাপ এবং বাণিজ্যের সঙ্গে যুক্ত হয়ে ওঠে। ধনী পৃষ্ঠপোষকরা প্রচুর সম্পদ দান করতেন, যা পরে জমির পরিচালনা, কারুশিল্প এবং বাণিজ্যের প্রসারের মাধ্যমে স্থানীয় অর্থনীতির উন্নয়নে ব্যবহৃত হতো।[১৭] বিশেষ করে বৌদ্ধধর্ম সমুদ্রপথে বাণিজ্যের সঙ্গে ছড়িয়ে পড়ে এবং মুদ্রা প্রবর্তন, শিল্পকলার প্রসার ও শিক্ষা বিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।[১৮]
জাভা এবং বোর্নিওতে, ভারতীয় সংস্কৃতির প্রসারের ফলে সুগন্ধিযুক্ত দ্রব্যের চাহিদা বৃদ্ধি পায়। এখানকার বাণিজ্যকেন্দ্রগুলো পরে চীনা ও আরবীয় বাজারের সঙ্গে যুক্ত হয়।[১৯] পেরিপ্লাস অব দি ইরিথ্রিয়ান সী গ্রন্থে বেশ কয়েকটি ভারতীয় বন্দরের নাম উল্লেখ করা হয়েছে, যেখান থেকে বিশাল জাহাজ পূর্বদিকে ক্রাইসে অভিমুখে যাত্রা করত।[২০] মালুকু দ্বীপপুঞ্জের পণ্য আরব বন্দর হয়ে নিকটপ্রাচ্যে পৌঁছাত এবং সেগুলো ভারত ও শ্রীলঙ্কার বন্দরেও আসত।[২১] কখনো কখনো ভারত ও শ্রীলঙ্কা থেকে এই পণ্য পূর্ব আফ্রিকায় পাঠানো হতো, যেখানে সেগুলো বিভিন্ন কাজে, এমনকি অন্ত্যেষ্টিক্রিয়াতেও ব্যবহৃত হতো।[২১]
ওড়িশার (প্রাচীন কালে যাকে কলিঙ্গ বলা হতো) সমুদ্রবাণিজ্যের ইতিহাস খ্রিস্টপূর্ব ৩৫০ সালেরও আগে শুরু হয়েছিল বলে প্রাচীন সূত্রগুলোতে উল্লেখ আছে। বঙ্গোপসাগরের উপকূলবর্তী এই অঞ্চলের মানুষ ভারতীয় উপকূল ধরে উত্তর-দক্ষিণে যাতায়াত করতেন এবং ইন্দোচীন ও সমুদ্রপথে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন অঞ্চলে যেতেন। তারা স্থানীয়দের সঙ্গে বাণিজ্য করতেন এবং ভারতীয় সংস্কৃতির নানা দিক তাদের মধ্যে ছড়িয়ে দিতেন। ষষ্ঠ শতাব্দীর মঞ্জুশ্রীমূলকল্প গ্রন্থে বঙ্গোপসাগরকে 'কলিঙ্গোদ্র' নামে অভিহিত করা হয়েছে, যা প্রমাণ করে যে বঙ্গোপসাগরকে একসময় 'কলিঙ্গ সাগর' (কলিঙ্গোদ্র এবং কলিঙ্গ সাগর উভয়ের অর্থ কলিঙ্গ সাগর) বলা হয়েছে, যা সামুদ্রিক বাণিজ্যে কলিঙ্গের গুরুত্ব নির্দেশ করে। [২২] অক্টোবর/নভেম্বর মাসে পাঁচ দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত বার্ষিক বালি যাত্রা বা বৈটা বন্দনা উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।[২৩]
চোল রাজবংশ (২০০-১২৭৯ খ্রিস্টাব্দ) মধ্যযুগে তাদের শক্তি ও প্রভাবের শীর্ষে পৌঁছেছিল।[২৪] সম্রাট প্রথম রাজরাজ চোল (৯৮৫-১০১৪ খ্রিস্টাব্দ) এবং প্রথম রাজেন্দ্র চোল (রাজত্বকাল ১০১২-১০৪৪) (১০১২-১০৪৪ খ্রিস্টাব্দ) চোল সাম্রাজ্যের সীমানা প্রচলিত সীমারেখার বাইরে প্রসারিত করেন।[২৫] সাম্রাজ্যের বিস্তার শ্রীলঙ্কা থেকে উত্তর ভারতের গোদাবরী অববাহিকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। [২৬] ভারতের পূর্ব উপকূলবর্তী রাজ্যগুলোও চোলদের আধিপত্য মেনে নেয়।[২৬] দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বৃহত্তম সাম্রাজ্য শ্রীবিজয় আক্রমণ ও দখল করে।[২৭] ভারতীয় পণ্য ও ধারণাগুলো এই সময় থেকে বিশ্বব্যাপী "ভারতীয়করণ" প্রক্রিয়ায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে শুরু করে। [২৮]
কেরালা উপকূলবর্তী শহর কুইলন বা কোল্লম, যা একসময় দেশিংগানাডু নামে পরিচিত ছিল, প্রাচীন যুগ থেকেই বাণিজ্যের জন্য বিখ্যাত ছিল।[২৯] ফোনিশীয় ও রোমান ব্যবসায়ীরা এই বন্দর ব্যবহার করতেন। চীনা বাণিজ্যের জন্য প্রসিদ্ধ এই স্থানটি বিখ্যাত পরিব্রাজক ইবনে বতুতা ১৪ শতকে পরিদর্শন করেন। তিনি ২৪ বছর ধরে বিভিন্ন দেশ ভ্রমণের সময় এটি দেখেছিলেন এবং পাঁচটি গুরুত্বপূর্ণ ভারতীয় বন্দরের মধ্যে এটিকে অন্যতম বলে উল্লেখ করেন।[৩০] কোল্লাম বন্দর ৮২৫ খ্রিস্টাব্দে চালু হয়।[৩১] দেশিংগানাডুর শাসকেরা চীনা শাসকদের সঙ্গে দূতাবিনিময় করতেন, এবং এখানে একটি সমৃদ্ধ চীনা বসতি গড়ে ওঠে। সপ্তম ও অষ্টম শতাব্দীতে আরব ও পারস্যের বণিকদের কাছে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাণিজ্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।[১৯]
বিজয়নগর এবং কলিঙ্গ রাজ্য মালয়, সুমাত্রা এবং পশ্চিম জাভার বিভিন্ন অঞ্চলে নিজেদের উপস্থিতি স্থাপন করে।[৩২]
চোলরা বৈদেশিক বাণিজ্য ও সমুদ্রগামী অভিযানে বিশেষ দক্ষতা অর্জন করেছিল এবং তারা চীন ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করেছিল।[৩৩] নবম শতাব্দীর শেষের দিকে দক্ষিণ ভারতে ব্যাপক সমুদ্রবাণিজ্য ও বাণিজ্যিক কার্যক্রম গড়ে ওঠে।[৩৪][৩৫] চোলদের হাতে ভারতীয় উপদ্বীপের পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলের গুরুত্বপূর্ণ অঞ্চল থাকায় তারা এই কর্মকাণ্ডে নেতৃত্ব দেয়।[৩৬][৩৭][৩৮] এই সময়ে চোলদের প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদার ছিল চীনের তাং রাজবংশ (৬১৮-৯০৭), দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার শ্রীবিজয় সাম্রাজ্য (শৈলেন্দ্র বংশ) এবং বাগদাদের আব্বাসীয় খিলাফত।[৩৯]
পাণ্ড্য শাসক পরান্তক নেদুমজাদৈয়ানের (৭৬৫-৭৯০ খ্রিস্টাব্দ) রাজত্বকালে চের রাজবংশ পল্লবদের ঘনিষ্ঠ মিত্র ছিল। [৪০] ল্লবমল্ল নাদীবর্মন চের শাসকের সহায়তায় পাণ্ড্য রাজা বরাগুণকে পরাজিত করেন।[৪০] এই সময়ে পল্লব রাজদরবার ও চেরা রাজ্যের মধ্যে সংস্কৃতিক বিনিময় স্বাভাবিক বিষয় ছিল।[৪০] ভারতীয় মসলা রপ্তানির উল্লেখ পাওয়া যায় ইবনে খুরদাদবেহ (৮৫০), আল-গাফিকী (১১৫০ খ্রিস্টাব্দ), ইসহাক বিন ইমরান (৯০৭) এবং আল কালকাশান্দি (১৪শ শতাব্দী) লেখায়।[২১] চীনা পরিব্রাজক হিউয়েন সাং পুরী শহরের কথা উল্লেখ করেছেন, যেখানে তিনি বলেছেন— "এই শহরের ব্যবসায়ীরা দূরবর্তী দেশগুলোতে পণ্য রপ্তানি করে।"[৪১]
মধ্যযুগের শেষভাগ
[সম্পাদনা]
চীনা পরিব্রাজক মা হুয়ান (১৪১৩–১৪৫১ খ্রিস্টাব্দ) কোচিন ভ্রমণ করেন এবং সেখানে ভারতীয় মুদ্রার ব্যবহার লক্ষ্য করেন। তিনি উল্লেখ করেন যে কোচিনে ফানাম নামে পরিচিত স্বর্ণমুদ্রা প্রচলিত ছিল। চীনা মানদণ্ড অনুযায়ী এই মুদ্রাগুলোর মোট ওজন ছিল এক ফেন ও এক লি।[৪২] এগুলো অত্যন্ত উন্নতমানের ছিল এবং চীনে বিনিময়ের ক্ষেত্রে প্রতিটি ফানামের বিনিময়ে ১৫টি রৌপ্যমুদ্রা পাওয়া যেত, যেগুলোর ওজন ছিল চার লি করে।[৪২]
সামুদ্রিক পথ
[সম্পাদনা]সামুদ্রিক রেশম পথ বলতে ঐতিহাসিক রেশম পথের সামুদ্রিক অংশ বোঝানো হয়, যা চীনকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জ, ভারতীয় উপমহাদেশ, আরব উপদ্বীপ, মিশর এবং ইউরোপের সঙ্গে সংযুক্ত করেছিল।[৪৩]
এই বাণিজ্য পথের অন্তর্ভুক্ত ছিল বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জলপথ, যার মধ্যে দক্ষিণ চীন সাগর, মালাক্কা প্রণালী, ভারত মহাসাগর, বঙ্গোপসাগর, আরব সাগর, পারস্য উপসাগর উল্লেখযোগ্য।
এই সমুদ্রপথ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ঐতিহ্যবাহী সমুদ্রবাণিজ্য, মসলা বাণিজ্য, ও ভারত মহাসাগরীয় বাণিজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল। অষ্টম শতাব্দীর পর থেকে এটি আরব নৌবাণিজ্য নেটওয়ার্কের অংশ হয়ে ওঠে। এই পথ পূর্বদিকে পূর্ব চীন সাগর ও পীতসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল, যা চীনকে কোরীয় উপদ্বীপ এবং জাপানের দ্বীপপুঞ্জের সঙ্গে যুক্ত করেছিল।
ধর্মের বিস্তার
[সম্পাদনা]
ইতিহাসবিদ রিচার্ড ফল্টজ, সিনরু লিউসহ অনেকে উল্লেখ করেছেন যে, রেশম পথের বাণিজ্য কার্যক্রম শুধু পণ্য আদান-প্রদানেই সীমাবদ্ধ ছিল না; এটি ধর্ম ও সংস্কৃতিরও আদান-প্রদানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।রেশম পথের মাধ্যমে পারসিক ধর্ম, ইহুদি ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রিস্টধর্ম, মানিচেয়ন ধর্ম এবং ইসলাম ইউরেশিয়াজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে। প্রতিটি ধর্ম নির্দিষ্ট সম্প্রদায় ও প্রতিষ্ঠানকে কেন্দ্র করে বাণিজ্যের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল।[৪৪] বিশেষত, রেশম পথ ধরে গড়ে ওঠা বৌদ্ধবিহারগুলো বণিকদের জন্য শুধু আশ্রয়ের স্থানই ছিল না, বরং নতুন ধর্ম গ্রহণের ক্ষেত্রেও ভূমিকা রেখেছিল।[৪৫]
ইতিহাসবিদ জেরি এইচ. বেন্টলি উল্লেখ করেছেন যে, রেশম পথের মাধ্যমে ধর্ম ও সাংস্কৃতিক ধারা ছড়িয়ে পড়ার ফলে সমন্বয়বাদের দিকে পরিচালিত করে। এর একটি উদাহরণ হলো চীনা ও শিওংনু যাযাবরদের মধ্যে সাংস্কৃতিক বিনিময়। এই অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক মিথস্ক্রিয়ার ফলে উভয় সম্প্রদায় একে অপরের কিছু বৈশিষ্ট্য গ্রহণ করেছিল। শিওংনুরা চীনা কৃষিকৌশল, পোশাকশৈলী ও জীবনধারা গ্রহণ করে, অন্যদিকে চীনারা শিওংনুদের সামরিক কৌশল, কিছু পোশাকশৈলী, সংগীত ও নৃত্য নিজেদের মধ্যে আত্মস্থ করে।[৪৬] চীএমনকি কিছু চীনা সৈন্য শিওংনুদের সমাজে আত্মীকরণ করেছিল। অনেক সময় তারা শিওংনুদের জীবনযাত্রাকে গ্রহণ করত এবং শাস্তির ভয়ে চীনে ফিরে না গিয়ে তৃণভূমিতে থেকে যেত। [৪৬]
যাযাবর সম্প্রদায়ের যাতায়াত প্রাচীন রেশম পথে আন্তঃআঞ্চলিক সংযোগ ও সাংস্কৃতিক বিনিময়ের ক্ষেত্রে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছিল।[৪৭][৪৮]
বৌদ্ধধর্মের প্রসার
[সম্পাদনা]

রেসশম পথের মাধ্যমে বৌদ্ধধর্ম চীনে প্রবেশ করতে শুরু করে খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দীতে। একটি আধা-প্রবাদমূলক কাহিনিতে উল্লেখ রয়েছে যে, চীনা সম্রাট মিং (৫৮–৭৫ খ্রিস্টাব্দ) পশ্চিমে একজন রাষ্ট্রদূত পাঠান, যার মাধ্যমে বৌদ্ধধর্ম চীনে আসে। এই সময় থেকেই বৌদ্ধধর্ম দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া, পূর্ব এশিয়া এবং মধ্য এশিয়ায় ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে।[৪৯] মহাযান, থেরবাদ এবং তিব্বতীয় বৌদ্ধধর্ম—এই তিনটি প্রধান ধারা সিল্ক রোডের মাধ্যমে সমগ্র এশিয়ায় বিস্তার লাভ করে।[৫০]
বৌদ্ধধর্মই ছিল বিশ্বের ইতিহাসে প্রথম বৃহৎ ধর্মপ্রচারমূলক আন্দোলন। চীনা ধর্মপ্রচারকরা বৌদ্ধধর্মকে স্থানীয় দাওবাদীদের সঙ্গে এমনভাবে মিশিয়ে নিয়েছিলেন যে, দুটি বিশ্বাস পরস্পর সংযুক্ত হয়ে যায়।[৫১] বুদ্ধের অনুসারীদে সংঘ, ছিল ভিক্ষু, ভিক্ষুণী এবং সাধারণ উপাসকদের নিয়ে গঠিত। এই সংঘ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চল ছাড়িয়ে দূরবর্তী স্থানে গিয়েও বৌদ্ধধর্ম প্রচার করত।[৫২] সংঘের সদস্য সংখ্যা বাড়তে থাকলে তাদের ভ্রমণের খরচও বেড়ে যায়, ফলে কেবলমাত্র বড় শহরগুলোই বুদ্ধ ও তাঁর শিষ্যদের আমন্ত্রণ জানানোর সামর্থ্য রাখত।[৫৩] বিশেষজ্ঞদের মতে, কুষাণ সাম্রাজ্যের প্রথম শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে তৃতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি পর্যন্ত) বৌদ্ধধর্ম চীনসহ এশিয়ার অন্যান্য অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ে।[৫৪] দ্বিতীয় শতাব্দী থেকে এই সংযোগ আরও গভীর হতে থাকে। কুষাণ সাম্রাজ্য যখন তার অঞ্চল বিস্তৃত করে তারিম অববাহিকার প্রবেশ করে, তখনই চীনে বৃহৎ পরিসরে বৌদ্ধধর্ম প্রচারের সূচনা হয়। চীনে বৌদ্ধধর্ম প্রচার এবং বৌদ্ধগ্রন্থ অনুবাদের কাজে প্রথমদিকে যাঁরা নিয়োজিত ছিলেন, তাঁদের অধিকাংশই পার্থিয়ান, কুষাণ, সগদীয় বা কুচিয়ান ছিলেন।[৫৫]

সিল্ক রোডের মাধ্যমে বৌদ্ধধর্ম বিস্তারের ফলে কিছু জায়গায় স্থানচ্যুতি ও সংঘাতের সৃষ্টি হয়। দ্বিতীয় শতাব্দীর শুরুতে পার্থিয়ানদের উত্থানের কারণে গ্রিক সেলিউসিডদের ইরান ও মধ্য এশিয়ায় নির্বাসিত হতে হয়। পার্থিয়ানরা বাণিজ্যে মধ্যস্থতাকারী হয়ে ওঠে, তখন রোমানরা সিল্কের প্রধান ক্রেতা ছিল। পার্থিয়ান পণ্ডিতরা চীনা ভাষায় প্রথম বৌদ্ধগ্রন্থ অনুবাদের কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। রেশম পথের একটি প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ছিল মার্ভ শহর। দ্বিতীয় শতাব্দীর মাঝামাঝি সময়ে, যখন চীনে বৌদ্ধধর্ম প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে, তখন মেরভ একটি গুরুত্বপূর্ণ বৌদ্ধ কেন্দ্র হয়ে ওঠে।[৫৬] রেশম পথ ধরে মানুষ আরও বেশি জ্ঞান অর্জন করতে থাকে, বিশেষত মৌর্য সম্রাট অশোকের (২৬৮–২৩৯ খ্রিস্টপূর্ব) শাসনকালে। তিনি বৌদ্ধধর্ম গ্রহণ করেন এবং উত্তর ভারতীয় সাম্রাজ্যে এটিকে রাষ্ট্রীয় ধর্মের মর্যাদা দেন। এর ফলে বৌদ্ধধর্ম আরও শক্তিশালী হয়ে উঠে এবং সিল্ক রোডের মাধ্যমে বহির্বিশ্বে ছড়িয়ে পড়ে।[৫৭]
চতুর্থ শতাব্দী থেকে, চীনা তীর্থযাত্রীরা মূল বৌদ্ধ গ্রন্থগুলোর উন্নত সংস্করণ পাওয়ার উদ্দেশ্যে সিল্ক রোড ধরে ভারতে আসতে শুরু করেন। এই সময়ের মধ্যে, ফা-হিয়েন (৩৯৫–৪১৪) ভারতে তীর্থযাত্রা করেন। পরে হিউয়েন সাঙ (৬২৯-৬৪৪) এবং হাইচো কোরিয়া থেকে ভারতে আসেন।[৫৮] হিউয়েন সাঙ - এর এই ভ্রমণ ষোড়শ শতাব্দীতে একটি কল্পকাহিনিভিত্তিক রোমাঞ্চকর উপন্যাসে চিত্রিত হয়, যার নাম জার্নি টু দ্য ওয়েস্ট। এতে তার পথের দুর্দশা, দানবদের সঙ্গে সংঘর্ষ এবং শিষ্যদের সহায়তার বিবরণ দেওয়া হয়।

রেশম পথ ধরে বিভিন্ন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রসার ঘটেছিল। ধর্মগুপ্তক এবং সর্বাস্তিবাদী—এই দুটি প্রধান নিকায় সম্প্রদায় ছিল, তবে পরে মহাযান মতবাদ তাদের স্থান দখল করে। মহাযানকে "মহান যান" নামেও ডাকা হয়। এই মতবাদ প্রথম কোতানের অঞ্চলে প্রভাব বিস্তার করে।[৫৭] মহাযান কোনো নির্দিষ্ট বৌদ্ধ সম্প্রদায় ছিল না, বরং এটি ছিল একটি "বৃহত্তর বৌদ্ধ আন্দোলন"। মনে করা হয়, এটি উত্তর-পশ্চিম ভারত বা মধ্য এশিয়ায় প্রথম গঠিত হয়। খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে এটি গঠিত হলেও প্রাথমিক পর্যায়ে বেশ ছোট ছিল এবং এর সঠিক উৎপত্তি এখনো স্পষ্ট নয়। কিছু মহাযান শাস্ত্র বর্তমান পাকিস্তানের উত্তরাঞ্চলে পাওয়া গেছে, তবে মূল গ্রন্থগুলো মধ্য এশিয়ার রেসশম পথ অঞ্চলে সংকলিত হয়েছিল বলে ধারণা করা হয়। সিল্ক রোডে বিভিন্ন ধরনের সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় আদান-প্রদানের ফলে বৌদ্ধ ধর্মে বিভিন্ন মতবাদের বিকাশ ঘটে।[৫৯] মহাযান মতবাদের বিস্তারের ফলে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারের ধরনও পরিবর্তিত হয়। এই মতবাদ, ইতিহাসবিদ জিনরু লিউ-এর ভাষায়, "বাস্তব জগতের অস্থায়িত্ব, এমনকি বস্তুগত সম্পদের ক্ষণস্থায়িত্বকেও" গুরুত্ব দেয়। এটি মানুষকে বস্তুগত আকাঙ্ক্ষা থেকে মুক্তি লাভের শিক্ষা দেয়, যদিও অনেক অনুসারীর জন্য এই ধারণা বোঝা কঠিন ছিল।[৬০]
খ্রিস্টীয় ৫ম এবং ৬ষ্ঠ শতাব্দীতে,বৌদ্ধ ধর্মের প্রসারে ব্যবসায়ীদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। বৌদ্ধ ধর্মের নৈতিক ও নীতিগত শিক্ষা ব্যবসায়ীদের কাছে আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল, কারণ এটি তাদের পূর্ববর্তী ধর্মবিশ্বাসের চেয়ে সহজ ও ব্যবহারিক ছিল। ফলে, ব্যবসায়ীরা সিল্ক রোডের পথে অবস্থিত বৌদ্ধ মঠগুলোর পৃষ্ঠপোষকতা করেন। এর বিনিময়ে বৌদ্ধ সন্ন্যাসীরা ব্যবসায়ীদের জন্য বিশ্রামের ব্যবস্থা করতেন, যা তাদের এক স্থান থেকে আরেক স্থানে যাওয়ার সুবিধা দিত। এই প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করতে থাকেন।[৬১] ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে বিভিন্ন অঞ্চলে বৌদ্ধ ধর্মের চর্চা ও সম্প্রসারণ ঘটে। তারা যেখানে বাণিজ্য করতে যেতেন, সেখানে তাদের মাধ্যমে নতুন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সৃষ্টি হতো। ধীরে ধীরে এই সম্প্রদায়গুলো শিক্ষা ও সংস্কৃতির কেন্দ্র হয়ে ওঠে। এসব অঞ্চলে সুসংগঠিত বাজার, আবাসন ও গুদামের ব্যবস্থা গড়ে ওঠে।[৬২] চীনের শাসক শ্রেণির অনেকেই স্বেচ্ছায় বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেন, যা পূর্ব এশিয়ায় এর প্রসারকে আরও ত্বরান্বিত করে। এর ফলে চীনা সমাজে বৌদ্ধ ধর্ম ব্যাপকভাবে প্রচলিত হয়।[৬৩] তবে সপ্তম শতাব্দীর দিকে মধ্য এশিয়ায় ইসলামের উত্থানের ফলে সিল্ক রোড ধরে বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার কার্যত বন্ধ হয়ে যায়।
ব্রুনাই
[সম্পাদনা]হিন্দু-বৌদ্ধ রাজ্য (? - ~১৪০০)
[সম্পাদনা]১৫১৯-১৫২২ খ্রিস্টাব্দে ম্যাগেলানের জাহাজ ব্রুনাই উপকূলে পৌঁছানোর আগে পর্যন্ত ব্রুনাইয়ের ইতিহাস মূলত চীনা সূত্র ও স্থানীয় কিংবদন্তির ব্যাখ্যার ওপর নির্ভর করে। ইতিহাসবিদরা মনে করেন যে, বর্তমান ব্রুনাই সালতানাতের পূর্বসূরি হিসেবে একটি ভারতীয় প্রভাবিত হিন্দু-বৌদ্ধ রাজ্য ছিল। এই ধরনের একটি পূর্ববর্তী রাষ্ট্র ছিল বিজয়পুরা, যা সপ্তম শতাব্দীতে বোর্নিওর উত্তর-পশ্চিম অংশে অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়।[ক] এটি সম্ভবত সুমাত্রা ভিত্তিক শক্তিশালী ভারতীয় হিন্দু-বৌদ্ধ শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের অধীনস্থ ছিল।ব্রুনাইয়ের আরেকটি পূর্ববর্তী রাষ্ট্র ছিল পো-নি (চীনা উচ্চারণ: বনি)। [৬৪] দশম শতকের মধ্যে পো-নি প্রথমে চীনের সঙ রাজবংশের সঙ্গে যোগাযোগ স্থাপন করে এবং পরে চীনের করদ রাজ্যে পরিণত হয়। চতুর্দশ শতকের মধ্যে, পো-নি ভারতীয় প্রভাবিত হিন্দু জাভার মজপহিৎ সাম্রাজ্যের অধীনে আসে। ১৩৬৫ সালে লিখিত নগরকৃতাগম গ্রন্থের ১৪ নম্বর অংশে ব্রুনাইকে (তৎকালীন "বেরুনে") মজপহিৎের একটি করদ রাজ্য হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৬৫] তবে, এটি হয়তো শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক ছিল, কারণ এক হিসাব অনুযায়ী, মজাপাহিত সাম্রাজ্যের জন্য ব্রুনাইয়ের বার্ষিক কর ছিল মাত্র একটি পাত্রে ভরা সুপারি পাতার রস।১৩৭০-এর দশকে মিং রাজবংশ পুনরায় পো-নির সঙ্গে কূটনৈতিক যোগাযোগ শুরু করে। ১৪০৮ সালে পো-নি শাসক মা-না-জিহ-চিয়া-না চীনের রাজধানী নানজিং সফরে যান এবং সেখানেই মারা যান। তার সমাধি বিংশ শতাব্দীতে পুনরাবিষ্কৃত হয় এবং এটি বর্তমানে সংরক্ষিত ঐতিহাসিক স্থাপনা।
ভারত প্রভাবিত ইসলামী সালতানাত (~১৪০০ - বর্তমান)
[সম্পাদনা]১৪০২ সালে সুলতান মুহাম্মদ শাহের মৃত্যু হয়। তিনি ছিলেন প্রথম শাসক যিনি হিন্দু-বৌদ্ধ ধর্ম থেকে ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হন। ইসলাম গ্রহণের আগে তার নাম ছিল আওয়াং আলাক বেতাতার।
বার্মা (মিয়ানমার)
[সম্পাদনা]দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের পশ্চিম প্রান্তে, নিম্ন বার্মা অঞ্চলে মন জনগোষ্ঠীর বসতি ছিল, যাদের ধারণা করা হয় যে তারা মূলত পশ্চিম চীন থেকে এসেছিল। নিম্ন বার্মায় তারা আগের একটি জনগোষ্ঠী, পিউদের স্থান দখল করে। পিউ জনগোষ্ঠী সম্পর্কে খুব কম তথ্য পাওয়া যায়, তবে জানা যায় যে তারা হিন্দু ধর্ম অনুসরণ করত।
বৌদ্ধ ধর্মের প্রচার এবং ভারতীয় সাহিত্যের প্রভাব (খ্রিস্টীয় তৃতীয় শতাব্দীর পর থেকে)
[সম্পাদনা]খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগের ফলে মন জাতিগোষ্ঠী ভারতীয় সাহিত্য, শিল্প ও বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে। মনরা দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যতম প্রাচীন সভ্যতা গড়ে তোলে। এখানে তারা দ্বারবতী রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা বার্মার নিম্নাঞ্চল থেকে শুরু করে থাইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল। তাদের অন্যতম বসতি ছিল থাটন রাজ্য এবং পেগু।
তিব্বতি-বর্মি বৌদ্ধ রাজ্য (১১-১৩ শতাব্দী)
[সম্পাদনা]নবম শতক থেকে তিব্বতি-বর্মি জনগোষ্ঠী তিব্বতের পূর্ব দিকের পার্বত্য অঞ্চল থেকে দক্ষিণে ইরাবতী উপত্যকার দিকে অভিবাসন শুরু করে। তারা দশম শতকে বর্তমান মিয়ানমারের উপরের অংশে তাদের রাজধানী বাগান প্রতিষ্ঠা করে। পরবর্তীতে তারা মন জাতিগোষ্ঠীকে একীভূত করে এবং তাদের নগর ও সংস্কৃতি গ্রহণ করে। বাগান রাজ্য একাদশ থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীপর্যন্ত দুইশ বছর ধরে সমগ্র বার্মাকে একত্রিত করে একক শাসনের অধীনে আনে। এই সাম্রাজ্যের শক্তিশালী অবস্থান ছিল রাজা আনাওরথার (১০৪৪–১০৭৭) শাসনামলে। তিনি থাটন রাজ্য জয় করেন এবং বাগানে অসংখ্য বৌদ্ধ মন্দির নির্মাণ করেন। অনুমান করা হয় যে, একসময় এই শহরে প্রায় ১৩,০০০ মন্দির ছিল, যার মধ্যে এখনো প্রায় ৫,০০০ মন্দির দাঁড়িয়ে আছে।
১৩-২১ শতাব্দী
[সম্পাদনা]চতুর্দশ শতাব্দীতে দিল্লি সালতানাত প্রায় সমগ্র বর্তমান ভারতের ভূখণ্ড নিয়ন্ত্রণ করত। তবে মধ্য এশিয়ার আক্রমণকারীরা এই সালতানাতকে দুর্বল করে এবং পরবর্তীতে মোগলরা ১৫২৬ সালে দিল্লি সালতানাতকে উৎখাত করে নতুন সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে।[৬৬]
কম্বোডিয়া
[সম্পাদনা]হ্বূণন
[সম্পাদনা]
দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রথম গুরুত্বপূর্ণ হিন্দু-প্রভাবিত রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল হ্বূণন রাজ্য যা খ্রিস্টীয় প্রথম শতকে বর্তমান কম্বোডিয়া অঅঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। কিংবদন্তি অনুসারে, এই রাজ্যের সূচনা হয়েছিল এক বৌদ্ধ সন্ন্যাসী ও ব্যবসায়ী কাউন্ডিন্য প্রথমের সাথে স্থানীয় নাগ বংসম্প্রদায়ের প্রধানের কন্যা রাজকুমারী সোমার বিবাহের মাধ্যমে। হ্বূণন প্রায় পাঁচশো বছর ধরে সমৃদ্ধি লাভ করেছিল। এই সময়ে তারা ভারত ও চীনের সাথে বাণিজ্য সম্পর্ক গড়ে তোলে এবং তাদের প্রকৌশলীরা বিস্তৃত খাল ব্যবস্থা তৈরি করেছিল। এই রাজ্যের উচ্চশ্রেণির মানুষরা ভারতীয় সংস্কৃতির উপর ভিত্তি করে রাজনীতি, শিল্প ও বিজ্ঞান চর্চা করত। হ্বূণনের শাসন বলয় পূর্ব দিকে দক্ষিণ ভিয়েতনাম এবং পশ্চিমে মালয় উপদ্বীপে ছড়িয়ে পড়ে।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
চেন্ল়া এবং আংকর
[সম্পাদনা]খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতাব্দীর শেষের দিকে, রাজবংশীয় খ্রিস্টীয় ষষ্ঠ শতকের শেষের দিকে হ্বূণন সাম্রাজ্য রাজবংশীয় দ্বন্দ্বের কারণে ধসে পড়ে। এর পরবর্তী সময়ে একটি নতুন হিন্দু-খেমার রাষ্ট্র, চেন্ল়া, প্রতিষ্ঠিত হয়, যা নবম শতক পর্যন্ত টিকে ছিল। এরপর খ্রিস্টীয় নবম শতকের শুরুতে খেমার রাজা দ্বিতীয় জয়বর্মণ (প্রায় ৮০০-৮৫০ খ্রিস্টাব্দ) বর্তমান কম্বোডিয়ার কেন্দ্রীয় অঞ্চলে আংকর তার রাজধানী স্থাপন করেন। তিনি একটি ধর্মীয় মতবাদ প্রতিষ্ঠা করেন, যেখানে রাজাকে হিন্দু দেবতা শিবের সঙ্গে অভিন্ন হিসেবে গণ্য করা হতো। হিন্দু ধর্মের তিনটি প্রধান দেবতা হলেন ব্রহ্মা (সৃষ্টিকর্তা), বিষ্ণু (সংরক্ষক) এবং শিব (ধ্বংস ও পুনর্জন্মের প্রতীক)। আংকর সাম্রাজ্য নবম শতক থেকে ত্রয়োদশ শতকের গোড়া পর্যন্ত সমৃদ্ধি লাভ করে। দ্বাদশ শতকের শেষ দিকে রাজা জয়বর্মন সপ্তমের শাসনকালে এই সাম্রাজ্য তার শ্রেষ্ঠ সময়ে পৌঁছে যায়। সে সময় অঙ্কোরের শাসনপাঠ পশ্চিমে থাইল্যান্ড পর্যন্ত বিস্তৃত হয় এবং সেখানে তারা মন রাজ্য দ্বারাবতী দখল করে। এছাড়াও পূর্বদিকে চাম্পা পর্যন্ত তাদের আধিপত্য বিস্তার লাভ করে। আংকর সাম্রাজ্যের সবচেয়ে বিখ্যাত নিদর্শন হলো আংকর বাটের মন্দির, যা দ্বাদশ শতকের প্রথমদিকে নির্মিত হয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের এই শাসনব্যবস্থা প্রায় দ্বাদশ শতক পর্যন্ত স্থায়ী ছিল। এদিকে ষষ্ঠ শতক থেকে চতুর্দশ শতক পর্যন্ত ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা ও জাভা দ্বীপে একাধিক শক্তিশালী সামুদ্রিক সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে। সেই সময়ে প্রধানত ভারতের কলিঙ্গ থেকে বহু ভারতীয় ইন্দোনেশিয়ায় গমন করত। ইন্দোনেশিয়ায় ভারতীয়দের এখনো "ক্লিং" নামে ডাকা হয়, যা কলিঙ্গ শব্দ থেকেই এসেছে।
পূর্ব তিমুর
[সম্পাদনা]পরবর্তী সময়ের তিমুরবাসীরা নৌচালনায় দক্ষ ছিল না, বরং তারা ভূমির ওপর নির্ভরশীল ছিল এবং সমুদ্রপথে অন্যান্য দ্বীপ বা জনগোষ্ঠীর সাথে যোগাযোগ করত না। তিমুর ছিল ছোট ছোট দ্বীপের একটি অঞ্চলের অংশ, যেখানে স্বল্প জনসংখ্যার অনুরূপ ভূমিকেন্দ্রিক জনগোষ্ঠীর বসবাস ছিল, যা বর্তমানে পূর্ব ইন্দোনেশিয়ার অংশ। বাইরের বিশ্বের সাথে তাদের যোগাযোগ হতো বিদেশি নাবিকদের মাধ্যমে, যারা চীন ও ভারত থেকে আসত এবং এই দ্বীপপুঞ্জে বাণিজ্য পরিচালনা করত। এই অঞ্চলে আনা বাইরের পণ্যের মধ্যে ছিল ধাতব জিনিসপত্র, চাল, সূক্ষ্ম বস্ত্র এবং স্থানীয় মশলার বিনিময়ে মুদ্রা, চন্দন কাঠ, হরিণের শিং, মৌমাছির মোম এবং দাস। [৬৭]
ভারতীয় প্রভাবসম্পন্ন হিন্দু-বৌদ্ধ রাজ্য (খ্রিস্টপূর্ব ৩ শতাব্দী - খ্রিস্টীয় ১৪ শতাব্দী)
[সম্পাদনা]শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের আশ্রিত ভারতীয় হিন্দু-বৌদ্ধ মালয় রাজ্যগুলি (৭ - ১২ শতাব্দী)
[সম্পাদনা]পূর্ব তিমুরের ওয়েহালি রাজ্যের মানুষের মৌখিক ঐতিহ্যে উল্লেখ করা হয়েছে যে, তারা প্রাচীনকালে ‘সিনা মুতিন মালাকা’ বা "চীনা শ্বেতাঙ্গ মালাক্কা " ( ভারতীয় হিন্দু-বৌদ্ধ শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের অংশ) থেকে অভিবাসিত হয়েছিল।[৬৮]
মজপহিৎের ভারতীয়কৃত জাভার হিন্দু সাম্রাজ্যের (১২ - ১৬ শতাব্দী) সামন্ত
[সম্পাদনা]মজপহিৎ সাম্রাজ্যের ঐতিহাসিক দলিল নগরকৃতাগমতে তিমুরকে একটি করদ রাজ্য বা করদাতা অঞ্চল হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে।[৬৯] তবে, পর্তুগিজ ঐতিহাসিক টমে পাইরেস ষোড়শ শতকে লিখেছিলেন যে, জাভার পূর্বের সব দ্বীপকে "তিমুর" নামে অভিহিত করা হতো।[৭০] পরবর্তীতে ইন্দোনেশিয়ার জাতীয়তাবাদীরা মজাপাহিত সাম্রাজ্যের দলিল ব্যবহার করে পূর্ব তিমুরকে ইন্দোনেশিয়ার অংশ হিসেবে দাবি করেছিল।[৭১]
চীনের সাথে বাণিজ্য
[সম্পাদনা]তিমুর দ্বীপ ১৩ শতকের চীনা গ্রন্থ ঝু ফান ঝিতে তি-উ বনামে উল্লেখিত হয়েছে, যেখানে এটিকে চন্দনকাঠের জন্য প্রসিদ্ধ অঞ্চল হিসেবে বর্ণনা করা হয়েছে। ১৩৪৫ সালে সং রাজবংশের ইতিহাসে একে তি-মেন নামে অভিহিত করা হয়েছে। ১৩৫০ সালের দিকে ওয়াং দাইউয়ান এটিকে ‘কু-লি তি-মেন’ নামে উল্লেখ করেন, যা গিরি তিমোর শব্দের বিকৃত রূপ।[৭২] সংস্কৃত শব্দ ‘গিরি’ অর্থ ‘পর্বত’, তাই ‘গিরি তিমুর’ মানে ‘পর্বতময় তিমুর দ্বীপ’।
প্রধানতন্ত্র বা রাজনীতি
[সম্পাদনা]{
প্রথম দিকের ইউরোপীয় অভিযাত্রীদের বিবরণ অনুসারে, ১৬শ শতকের প্রথমদিকে দ্বীপটিতে বেশ কয়েকটি ছোট ছোট রাজ্য বা প্রধানদের অধীনস্থ অঞ্চল ছিল। এর মধ্যে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ছিল কেন্দ্রীয় তিমুরের ওয়েহালি বা ওয়েহালে রাজ্য, যেখানে তেতুম, বুনাক এবং কেমাক জাতিগোষ্ঠীর মানুষের বসবাস ছিল।
ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ এবং খ্রিস্টীয়করণ (ষোড়শ শতাব্দীর পর থেকে)
[সম্পাদনা]ষোড়শ শতকের গোড়া থেকে ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তিগুলো— দ্বীপের পশ্চিম অংশে ওলন্দাজরা এবং পূর্ব অংশে পর্তুগিজরা— তিমুর দ্বীপকে দুই ভাগে বিভক্ত করে। ফলে পূর্ব তিমুরকে আশেপাশের দ্বীপপুঞ্জের ইতিহাস থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলা হয়।[৬৯]
ইন্দোনেশিয়া
[সম্পাদনা]প্রায় এক সহস্রাব্দ ধরে, ৫ম থেকে ১৫শ শতকের মধ্যে, ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জে বিভিন্ন ভারতীয় প্রভাবিত রাষ্ট্র ও সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটেছিল। তারুমানগর থেকে শুরু করে মজপহিৎ যুগ পর্যন্ত বিভিন্ন রাজ্য গড়ে ওঠে। যদিও এগুলোর প্রতিষ্ঠা হয়েছিল হয়তো ভারতীয় অভিবাসীদের দ্বারা অথবা স্থানীয় রাজ্যগুলোর মাধ্যমে, যারা ভারতীয় সংস্কৃতি গ্রহণ করেছিল, তবুও এই দ্বীপপুঞ্জের হিন্দু-বৌদ্ধ রাজ্যগুলো ভারতীয় উপমহাদেশের রাজ্যগুলোর রাজনৈতিক কর্তৃত্বের বাইরে স্বাধীন ছিল।
শ্রীবিজয় সাম্রাজ্য
[সম্পাদনা]ইন্দোনেশীয় দ্বীপপুঞ্জের মধ্যে অন্যতম প্রথম সংগঠিত রাষ্ট্র ছিল সুমাত্রা এবং জাভার হিন্দু-বৌদ্ধ সাম্রাজ্য। এর মধ্যে সর্বপ্রথম খ্যাতি অর্জন করে বৌদ্ধ মালয় রাজ্য শ্রীবিজয়, যার রাজধানী ছিল দক্ষিণ সুমাত্রার পালেমবাং-এ। এর বাণিজ্যিক সাফল্য মূলত ভারত ও চীনের মধ্যকার সামুদ্রিক পথ নিয়ন্ত্রণের ওপর নির্ভরশীল ছিল, যা মালয় উপদ্বীপ ও সুমাত্রার মধ্যবর্তী সমুদ্রপথ, পরবর্তীতে যা মালাক্কা প্রণালী নামে পরিচিত হয়। ৬ষ্ঠ থেকে ৭ম শতকের মধ্যে শ্রীবিজয় দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রধান শক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয় এবং হ্বূণন সাম্রাজ্যকে প্রতিস্থাপন করে। এর শাসক ছিলেন মালয় উপদ্বীপ, পশ্চিম জাভা এবং সুমাত্রার অধিপতি। এই সময় শ্রীবিজয়ে বৌদ্ধ ধর্ম শক্তিশালীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়।
শৈলেন্দ্র রাজবংশ
[সম্পাদনা]
শ্রীবিজয়ের সম্প্রসারণ জাভার পূর্বাংশে প্রতিরোধের সম্মুখীন হয়, যেখানে শক্তিশালী বৌদ্ধ শৈলেন্দ্র রাজবংশের উত্থান ঘটে। ৭ম শতকের পর থেকে কেন্দ্রীয় জাভায় ব্যাপক মন্দির নির্মাণ কার্যক্রম শুরু হয়। এর মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হল বোরোবুদুর, যা বিশ্বের বৃহত্তম বৌদ্ধ মন্দির হিসেবে বিবেচিত হয়। শৈলেন্দ্র শাসন সুমাত্রার দক্ষিণ অংশ, মালয় উপদ্বীপ এবং কম্বোডিয়া প৯ম শতকে, শৈলেন্দ্র রাজবংশ সুমাত্রায় স্থানান্তরিত হয় এবং শ্রীবিজয়ের সাথে একীভূত হয়ে একটি শক্তিশালী সাম্রাজ্য গঠন করে। যা পরবর্তী পাঁচ শতাব্দী ধরে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বেশিরভাগ অংশে আধিপত্য বিস্তার করে। ৫০০ বছরের শ্রেষ্ঠত্বের পর, মজপহিৎ শ্রীবিজয়কে ক্ষমতাচ্যুত করেন।
মাতারাম রাজ্য
[সম্পাদনা]
দশম শতাব্দীতে, মাতারাম রাজ্য শ্রীবিজয়ের আধিপত্যকে চ্যালেঞ্জ করে, যার ফলে একাদশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে শ্রীবিজয়া মাতারামের রাজধানী ধ্বংস করে। পরে রাজা এয়ারলাঙ্গা (১০২০-১০৫০ খ্রিস্টাব্দ) পুনরায় এই রাজ্য পুনর্গঠন করেন। তবে তার মৃত্যুর পর, এটি বিভক্ত হয়ে নতুন কেদিরি রাজ্য গঠিত হয়, যা পূর্ব জাভায় প্রতিষ্ঠিত হয়।
কেদিরি রাজ্য
[সম্পাদনা]কেদিরি রাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার পূর্ব অংশে প্রভাব বিস্তার করে এবং পরবর্তী দুই শতকের জন্য জাভানি সংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল হয়ে ওঠে। এই সময় মসলা বাণিজ্যের গুরুত্ব বৃদ্ধি পায়, কারণ ইউরোপীয় দেশগুলোর মধ্যে মসলার চাহিদা বাড়তে থাকে। শীতকালে মাংস সংরক্ষণে তারা লবণযুক্ত মাংস ব্যবহার করত, যা মসলা যোগ করে খাওয়া হত। এই মসলার অন্যতম প্রধান উৎস ছিল ইন্দোনেশিয়ার মালুকু দ্বীপপুঞ্জ (বা "মসলা দ্বীপপুঞ্জ"), নামে পরিচিত ছিল), এবং কেদিরি তখন একটি শক্তিশালী বাণিজ্যিক রাষ্ট্রে পরিণত হয়।
সিংহসারি রাজ্য
[সম্পাদনা]ত্রয়োদশ শতাব্দীর দিকে কেদিরি রাজবংশ এক বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতা হারায়, এবং সিংহসারি রাজ্য পূর্ব জাভায় প্রতিষ্ঠিত হয়। এই নতুন রাজ্যের সীমান্ত যুদ্ধবীর রাজা কের্তানাগারার শাসনকালে উল্লেখযোগ্যভাবে বিস্তৃত হয়। তবে পরে কেদিরির এক রাজপুত্র তাকে হত্যা করে এবং পূর্ববর্তী কেদিরি রাজবংশ পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। এরপরই গঠিত হয় শেষ প্রধান হিন্দু-জাভা সাম্রাজ্য, মজপহিৎ।
মজপহিৎ সাম্রাজ্য
[সম্পাদনা]শৈলেন্দ্রদের পতন এবং সিঙ্গাসারীর ধ্বংসের পর, পূর্ব জাভায় মজপহিৎ সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে। এই রাজ্য পুনরায় বৌদ্ধ ধর্ম থেকে হিন্দু ধর্মে ফিরে যায়। ১৪শ শতকের মাঝামাঝি সময়ে মজাপাহিত সাম্রাজ্য জাভা, সুমাত্রা, মালয় উপদ্বীপ, বোর্নিওর কিছু অংশ, সুলাওয়েসির দক্ষিণাংশ এবং মলুকাস অঞ্চলের ওপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে। এটি মূল ভূখণ্ডের ওপরও উল্লেখযোগ্য প্রভাব বিস্তার করেছিল।
লাওস
[সম্পাদনা]হ্বূণন রাজ্য
[সম্পাদনা]ইন্দোচীনে আবির্ভূত প্রথম স্থানীয় রাজ্যটি চীনা ইতিহাস গ্রন্থে হ্বূণন রাজ্য উল্লেখিত হয়েছে। এই রাজ্যটি আধুনিক কম্বোডিয়া দক্ষিণ ভিয়েতনামের উপকূল এবং দক্ষিণ থাইল্যান্ডের কিছু অঞ্চলজুড়ে বিস্তৃত ছিল এবং এটি খ্রিস্টীয় প্রথম শতাব্দী থেকে বিদ্যমান ছিল। হ্বূণন ছিল একটি ভারতীয় প্রভাবসম্পন্ন রাজ্য, যেখানে ভারতের রাষ্ট্রনীতি, ধর্ম, প্রশাসন, সংস্কৃতি, লিপি, লিখনপদ্ধতি এবং স্থাপত্যের মূল উপাদানগুলি অন্তর্ভুক্ত ছিল। এই রাজ্য ভারত মহাসাগরের বাণিজ্যের সঙ্গেও যুক্ত ছিল এবং এর মাধ্যমে প্রচুর লাভবান হতো।[৭৩][৭৪]
চম্পা রাজ্য
[সম্পাদনা]খ্রিস্টীয় দ্বিতীয় শতাব্দীর মধ্যে, অস্ট্রোনেশীয় জনগোষ্ঠী বর্তমান মধ্য ভিয়েতনামের অঞ্চলে চম্পা নামে একটি ভারতীয় প্রভাবসম্পন্ন রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল। চ্যাম জনগোষ্ঠী বর্তমান লাওসের চম্পাসাক অঞ্চলের কাছাকাছি প্রথম বসতি স্থাপন করেছিল। হ্বূণন রাজ্য ক্রমশ বিস্তৃত হয়ে ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে চাম্পাসাক অঞ্চলকে অন্তর্ভুক্ত করে নেয়, তবে পরে এটি চেনলা রাজ্যের দ্বারা প্রতিস্থাপিত হয়। চেন্লা আধুনিক লাওসের বিশাল অংশ দখল করেছিল এবং এটি লাওসের মাটিতে গঠিত প্রথম রাজ্য হিসেবে বিবেচিত হয়।[৭৪][৭৫]
চেন্লা রাজ্য
[সম্পাদনা]আদি চেন্লার রাজ্যের রাজধানী ছিল শ্রেষ্ঠপুর, যা চম্পাসাক এবং ইউনেস্কোর বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান ওয়াট ফুর আশপাশে অবস্থিত ছিল। ওয়াট ফু দক্ষিণ লাওসের একটি বিশাল মন্দির কমপ্লেক্স, যেখানে প্রাকৃতিক পরিবেশের সঙ্গে সুন্দর খোদাই করা বালিপাথরের স্থাপত্য মিশে আছে চেন্লা জনগণ নবম শতাব্দী পর্যন্ত এই মন্দির সংরক্ষণ ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ চালিয়েছিল, পরে দশম শতাব্দীতে খেমাররা টিকে পুনরায় আবিষ্কার করে এবং আরও সমৃদ্ধ করে। খ্রিস্টীয় অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে চেনলা দুটি ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়—"স্থলচেনলা" যা লাওসে অবস্থিত ছিল এবং "জলচেনলা" যা মহেন্দ্রবর্মনের নেতৃত্বে সাম্বর প্রেই কুক অঞ্চলে (বর্তমান কম্বোডিয়া) প্রতিষ্ঠিত হয়। স্থলচেনলা চীনা ঐতিহাসিক গ্রন্থে "পো লু" বা "ওয়েন দান" নামে পরিচিত ছিল এবং ৭১৭ খ্রিস্টাব্দে তাং রাজবংশের দরবারে একটি বাণিজ্য মিশন পাঠায়। অন্যদিকে, জলচেন্লা, জাভা ভিত্তিক ইন্দোনেশিয়ার মেদাং সমুদ্র রাজ্য চম্পা এবং জলদস্যুদের বারবার আক্রমণের শিকার হয়। এই অস্থিতিশীলতা থেকেই খেমার সাম্রাজ্যের উত্থান ঘটে।[৭৬]
খেমার রাজ্য
[সম্পাদনা]খ্রিস্টীয় নবম শতাব্দীতে রাজা দ্বিতীয় জয়বর্মণের অধীনে খেমার সাম্রাজ্য সাম্রাজ্য গঠিত হতে শুরু করে।[৭৬][৭৭]
দ্বারবতী নগর রাজ্য রাজ্যসমূহ
[সম্পাদনা]আধুনিক উত্তর ও মধ্য লাওস এবং উত্তর-পূর্ব থাইল্যান্ডের অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে মন জনগোষ্ঠী নিজেদের পৃথক রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিল, যা চুক্তিবদ্ধ চেন্লা রাজ্যের নিয়ন্ত্রণের বাইরে ছিল। ষষ্ঠ শতাব্দীর মধ্যে, চাও ফ্রায়া নদী উপত্যকায় মন জনগোষ্ঠী একত্রিত হয়ে দ্বারবতী রাজ্য গঠন করেছিল। অষ্টম শতাব্দীর মধ্যে, শ্রী গোটাপুর (শিখোত্তবং) ছিল এই নগররাষ্ট্রগুলোর মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী, যা মধ্য মেকং অঞ্চলের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করত। এই নগররাষ্ট্রগুলি রাজনৈতিকভাবে শিথিলভাবে সংযুক্ত ছিল, তবে সাংস্কৃতিকভাবে তারা পরস্পরের কাছাকাছি ছিল এবং শ্রীলঙ্কার মিশনারিদের কাছ থেকে থেরেবাদ বৌদ্ধধর্ম প্রবর্তন করেছিল। [৭৮][৭৯]
মালয়েশিয়া
[সম্পাদনা]মালয় উপদ্বীপে মালয় উপদ্বীপে ৮০,০০০ বছর আগে থেকেই প্রাগৈতিহাসিক জনগোষ্ঠী বসতি স্থাপন করেছিল। এরপর প্রায় ১০,০০০ বছর আগে, দক্ষিণ চীন থেকে দ্বিতীয় দফার জনগোষ্ঠী, ডিউট্রো মালয়রা, এই অঞ্চলে প্রবেশ করে। উপদ্বীপে পৌঁছে তাদের কিছু অংশ অস্ট্রেলীয় আদিবাসীদের (অস্ট্রালয়েড) সঙ্গে মিশে যায়। এর ফলে আধুনিক মালয় জনগোষ্ঠীর চেহারা গঠিত হয়। ধারণা করা হয়, প্রাচীন দ্রাবিড়ীয় পর্যটকেরা মালয় উপদ্বীপ এবং সুমাত্রার জনগণকে "মালয় উর" বলে অভিহিত করেছিলেন, যেখানে "উর" শব্দের অর্থ ছিল পাহাড় এবং নগরী। এটি সম্ভবত মালয় উপদ্বীপ এবং সুমাত্রার ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে রাখা হয়েছিল। গ্রিক ভূগোলবিদ ও জ্যোতির্বিদ ক্লডিয়াস টলেমি (গ্রীক: Κλαύδιος Πτολεμαῖος; আনুমানিক ৯০ - আনুমানিক ১৬৮), তার লেখায় "গোল্ডেন চেরসোনিজ" বা "সুবর্ণ উপদ্বীপ" সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন। এটি প্রমাণ করে যে, প্রথম শতাব্দী থেকেই ভারতীয় উপমহাদেশ এবং চীনের সঙ্গে এই অঞ্চলের বাণিজ্যিক সম্পর্ক ছিল।[৮০] প্রত্নতাত্ত্বিকরা মালয়েশিয়ার বুকিট বুঞ্জাং উপত্যকায় এমন নিদর্শন খুঁজে পেয়েছেন, যা ১১০ খ্রিস্টাব্দের একটি প্রাচীন সভ্যতার অস্তিত্ব নির্দেশ করে। এটি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার প্রাচীনতম সভ্যতা বলে মনে করা হয়, যা প্রাচীন ভারতীয় সংস্কৃতির দ্বারা গভীরভাবে প্রভাবিত হয়েছিল। বর্তমানে, মালয়েশিয়ার মোট জনসংখ্যার আনুমানিক ৭ শতাংশ (প্রায় ২০ লাখ মানুষ) সরাসরি ভারতীয় বংশোদ্ভূত বলে জানা যায়।[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
ভারতের হিন্দুধর্ম এবং বৌদ্ধধর্ম প্রাচীন মালয়েশিয়ার ইতিহাসে গভীর প্রভাব ফেলেছিল। এই ধর্মগুলো সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে সুমাত্রা -ভিত্তিক শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের শাসনামলে সর্বোচ্চ শিখরে পৌঁছেছিল। এই সাম্রাজ্যের প্রভাব সুমাত্রা, জাভা, মালয় উপদ্বীপ এবং বোর্নিওর বিশাল অংশজুড়ে বিস্তৃত ছিল। পরবর্তী সময়ে, চতুর্দশ ও পঞ্চদশ শতাব্দীর মধ্যে এই অঞ্চলে ধীরে ধীরে ইসলামের বিস্তার ঘটে, যা ইউরোপীয় উপনিবেশ স্থাপনের (ষোড়শ শতাব্দী) আগেই সম্পন্ন হয়।
ভারতীয়কৃত হিন্দু-বৌদ্ধ রাজ্যসমূহ
[সম্পাদনা]প্রারম্ভিক বাণিজ্য ও ভারতীয় বসতি
[সম্পাদনা]খ্রিস্টীয় প্রথম সহস্রাব্দে মালয়রা মালয় উপদ্বীপের প্রধান জনগোষ্ঠীতে পরিণত হয়। এই সময়ে গঠিত ক্ষুদ্র রাজ্যগুলো ভারতীয় সংস্কৃতির গভীর প্রভাবের মধ্যে পড়েছিল, যা তখন সমগ্র দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেই বিস্তৃত ছিল।[৮১] এই অঞ্চলে ভারতীয় প্রভাব অন্তত খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতাব্দী থেকেই বিদ্যমান ছিল। তামিল পল্লব রাজবংশের (চতুর্থ ও পঞ্চম শতাব্দী) শাসনামলে তামিল সংস্কৃতি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।[৮২]

প্রাচীন ভারতীয় সাহিত্যে, রামায়ণে সুবর্ণদ্বীপ বা "সোনার উপদ্বীপ" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে, যা রামায়ণ গ্রন্থে উল্লেখ রয়েছে। অনেকে মনে করেন, এটি সম্ভবত মালয় উপদ্বীপেরই একটি প্রাচীন নাম। ভারতীয় পুরাণ বায়ু পুরাণেও মালয়দ্বীপ নামে একটি স্থানের উল্লেখ রয়েছে, যেখানে স্বর্ণখনির অস্তিত্ব থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়। কেউ কেউ মনে করেন, এটি সম্ভবত সুমাত্রা এবং মালয় উপদ্বীপকে নির্দেশ করে।[৮৩] টলেমির মানচিত্রে মালয় উপদ্বীপকে " গোল্ডেন খেরসোনিজ " নামে দেখানো হয়েছে এবং তিনি মালাক্কা প্রণালিকে সাইনাস সাবারিকাস হিসেবে উল্লেখ করেছিলেন। [৮৪]
খ্রিস্টপূর্ব প্রথম শতাব্দীতে মালয় উপদ্বীপের সঙ্গে চীন ও ভারতের সাথে বাণিজ্যিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়।[৮৫] বোর্নিও অঞ্চলে প্রথম শতাব্দীর চীনা মৃৎপাত্রের টুকরো পাওয়া গেছে, যা হান রাজবংশের দক্ষিণমুখী সম্প্রসারণের ফলে এসেছিল বলে ধারণা করা হয়।[৮৬] প্রথম সহস্রাব্দের শুরুতে মালয় উপদ্বীপের জনগণ ভারতীয় ধর্ম— হিন্দু এবং বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করে, যা মালয়েশিয়ার ভাষা ও সংস্কৃতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।[৮৭] সংস্কৃত লিপি চতুর্থ শতাব্দী থেকেই ব্যবহার শুরু হয়েছিল।[৮৮]
ভারতীয় প্রভাবিত হিন্দু-মালয় রাজ্য (তৃতীয় শতাব্দী থেকে সপ্তম শতাব্দী)
[সম্পাদনা]দ্বিতীয় এবং তৃতীয় শতাব্দীতে মালয় উপদ্বীপে বহু সংখ্যক রাজ্য গড়ে উঠেছিল, যাদের সংখ্যা প্রায় ৩০টির মতো ছিল। বেশিরভাগ রাজ্যই মালয় উপদ্বীপের পূর্ব অংশে অবস্থিত ছিল।[৮১] মালয় উপদ্বীপের প্রাচীনতম রাজ্যগুলোর মধ্যে লাংকাসুকা অন্যতম, যা উপদ্বীপের উত্তর অংশে, পশ্চিম উপকূলের কোনো এক স্থানে অবস্থিত ছিল।[৮১] এই রাজ্য কম্বোডিয়ার হ্বূণন সাম্রাজ্যের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বজায় রেখেছিল, যা ষষ্ঠ শতক পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উত্তরাঞ্চলের কিছু অংশ নিয়ন্ত্রণ করত। ৫ম শতাব্দীতে, গানের বইতে পাহাং রাজ্যের উল্লেখ ছিল। সেজারাহ মেলায়ু ("মালয় অ্যানালস") অনুসারে, খমের রাজপুত্র রাজা গাঞ্জি সারজুনা 700-এর দশকে গাঙ্গা নেগারা (আধুনিক বেরুয়াস, পেরাক ) রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। ৫ম শতাব্দীর চীনা ইতিহাসে দক্ষিণে গুয়ানতোলি নামে একটি মহান বন্দরের কথা বলা হয়েছে, যা মালাক্কা প্রণালীতে অবস্থিত বলে মনে করা হয়। ৭ম শতাব্দীতে, শিলিফোশি নামে একটি নতুন বন্দরের উল্লেখ পাওয়া যায় এবং এটি শ্রীবিজয়ের একটি চীনা অনুবাদ বলে মনে করা হয়।
ভারতীয় প্রভাবিত হিন্দু-বৌদ্ধ মালয় রাজ্যসমূহ শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত (৭ - ১৩ শতাব্দী)
[সম্পাদনা]সপ্তম থেকে ত্রয়োদশ শতাব্দীর মধ্যে, মালয় উপদ্বীপের অধিকাংশ অঞ্চল বৌদ্ধ শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের অধীনে ছিল। শ্রীবিজয়ের কেন্দ্রস্থল পূর্ব সুমাত্রার একটি নদীর মোহনায় বলে মনে করা হয়, অবস্থিত ছিল বলে মনে করা হয়, যা বর্তমানে পালেমবাং অঞ্চলের কাছাকাছি[৮৯] প্রায় ছয় শতাব্দী ধরে শ্রীবিজয়ের মহারাজারা একটি সামুদ্রিক সাম্রাজ্য শাসন করতেন, যা দ্বীপসমূহে সবচেয়ে শক্তিশালী শক্তিতে পরিণত হয়। এই সাম্রাজ্য মূলত বাণিজ্যের ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠেছিল। স্থানীয় রাজারা (ধাতু বা সম্প্রদায়ের নেতা) পারস্পরিক লাভের জন্য কেন্দ্রীয় শাসকের কাছে আনুগত্য স্বীকার করতেন।[৯০]
তামিল চোল সাম্রাজ্যের সাথে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের সম্পর্ক
[সম্পাদনা]চোল সাম্রাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় গভীর প্রভাব ছিল। প্রথম রাজেন্দ্র চোলের নেতৃত্বে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় চোলদের সামরিক অভিযান পরিচালিত হয়েছিল এবং তারাশ্রীবিজয় সাম্রাজ্য আক্রমণ করেছিল।
প্রথম দিকে, দক্ষিণ ভারতের চোল সাম্রাজ্য ও শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের মধ্যে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল, বিশেষত প্রথম রাজারাজ চোলের শাসনামলে। তবে রাজেন্দ্র চোল প্রথমের আমলে চোল সাম্রাজ্য শ্রীবিজয়ের বিভিন্ন শহর আক্রমণ করে।[৯১] ১০২৫ এবং ১০২৬ সালে রাজেন্দ্র চোল প্রথম গঙ্গা নগর আক্রমণ করেন। ধারণা করা হয়, এই অভিযানে তিনি কোটা গেলাঙ্গি শহর ধ্বংস করে দেন। কেদাহ, যা পল্লব বা সংস্কৃত ভাষায় কেদারাম, চেহ-চা ( আই-চিং অনুসারে) বা কাটাহ নামে পরিচিত ছিল, চোলদের আক্রমণের প্রধান পথের মধ্যে পড়েছিল এবং ১০২৫ সাল থেকে চোলদের শাসনাধীন ছিল। একাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে চোল রাজবংশের বীররাজেন্দ্র চোল কেদাহ জয় করে দ্বিতীয় আক্রমণ পরিচালনা করেন।[৯২] তার উত্তরসূরি, বিরা রাজেন্দ্র চোল, কেদাহ অঞ্চলে চোলদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ দমন করেন। চোল সাম্রাজ্যের আক্রমণের ফলে শ্রীবিজয়ের গৌরব অনেকটাই ক্ষুণ্ন হয় এবং তাদের কেদাহ, পাত্তানি ও লিগর অঞ্চলের উপর প্রভাব কমে আসে। প্রথম কুলোত্তুঙ্গ চোলের রাজত্বকালে একাদশ শতাব্দীর শেষের দিকে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের কেদাহ প্রদেশ চোল সাম্রাজ্যের অধীনে আসে।[৯৩] মধ্যযুগীয় মালয় গ্রন্থ সেজারাহ মেলায়ু-তে "রাজা চুলান" নামে চোল সম্রাটদের উল্লেখ রয়েছে, যা চোল রাজাদের নামের বিকৃত রূপ বলে মনে করা হয়।.[৯৪][৯৫][৯৬] এখনও মালয়েশিয়ায় ইতিহাসে চোল শাসনের প্রভাব দেখা যায়। অনেক মালয় রাজবংশের শাসকের নামের শেষে "চোলান" বা "চুলান" শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে। পেরাকের এক রাজাকে "রাজা চুলান" নামে অভিহিত করা হয়েছিল। [৯৭][৯৮]
দ্বিতীয় শতাব্দীর তামিল কবিতা পট্টিনপালাই কেদাহ থেকে আনা পণ্যের বিশাল স্তূপের বর্ণনা দিয়েছে, যা চোল রাজধানীর প্রশস্ত রাস্তাগুলোতে সজ্জিত ছিল। সপ্তম শতাব্দীর একটি ভারতীয় নাটক, কৌমুধীমহোত্স, কেদাহকে কাটাহা-নাগরী হিসাবে উল্লেখ করে। অগ্নিপুরাণে অন্দ-কাটাহা নামে একটি অঞ্চলের কথা বলা হয়েছে, যার একটি সীমানা একটি শৃঙ্গ বা পাহাড় দ্বারা নির্ধারিত ছিল। গবেষকরা মনে করেন এটি বর্তমান গুনুং জেরাই পর্বত। কথাসরিতসাগর গনামক কাহিনীগুলিতেও কটাহ অঞ্চলের সমৃদ্ধ জীবনযাত্রার বর্ণনা পাওয়া যায়। এরপর, বৌদ্ধ রাজ্য লিগোর কেদাহ দখল করে। এর রাজা চন্দ্রভানু ১১শ শতকে এটি ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করে শ্রীলঙ্কার ওপর আক্রমণ চালান এবং উত্তর শ্রীলঙ্কার কিছু অংশ শাসন করেন। তামিলনাড়ুর নাগাপট্টিনমে পাওয়া এক শিলালিপি এবং শ্রীলঙ্কার ঐতিহাসিক গ্রন্থ মহাবংশ- এই ঘটনার উল্লেখ আছে।
শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের পতন ও আঞ্চলিক সংঘর্ষ (১২ - ১৩ শতাব্দী)
[সম্পাদনা]দ্বাদশ শতাব্দী থেকে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের শক্তি দুর্বল হতে থাকে। রাজধানী ও তার অধীনস্থ রাজ্যগুলোর মধ্যে সম্পর্ক ভেঙে পড়ে। কখনো কখনো খমের রাজ্য, শ্যাম (সিয়াম) রাজ্য এবং চোলরাও মালয় রাজ্যগুলোর ওপর কর্তৃত্ব স্থাপনের চেষ্টা করে।[৮১] জাভার সঙ্গে যুদ্ধের ফলে শ্রীবিজয়া চীনের সাহায্য চাইতে বাধ্য হয় এবং ধারণা করা হয় যে এটি ভারতীয় রাজ্যগুলোর সঙ্গেও যুদ্ধ করেছিল। ১১শ শতকে শাসনকেন্দ্র স্থানান্তরিত হয়ে মালয়ু অঞ্চলে চলে যায়, যা সম্ভবত সুমাত্রার উত্তর দিকের জাম্বি নদীর কাছে অবস্থিত ছিল।[৯০] এই সময়ে বৌদ্ধ মহারাজাদের ক্ষমতা আরও কমে যায়, কারণ ইসলামের ধর্মের প্রসার ঘটতে থাকে। ইসলাম গ্রহণ করা এলাকাগুলোর মধ্যে অন্যতম ছিল আচেহ, যা শ্রীবিজয়ার নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে যায়। ১৩শ শতকের শেষের দিকে শ্যাম রাজ্য সুখোথাই মালয় উপদ্বীপের বেশিরভাগ অঞ্চল অধিকার করে নেয়। এরপর, ১৪শ শতকে হিন্দু-জাভাভিত্তিক মজপহিৎ সাম্রাজ্য উপদ্বীপের নিয়ন্ত্রণ নেয়।[৮৯]
ইসলামি সুলতানদের অভ্যুত্থান (১৪-১৫ শতাব্দী)
[সম্পাদনা]চতুর্দশ শতাব্দীতে প্রথম ইসলামী সালতানাত প্রতিষ্ঠিত হয়। ইসলাম গ্রহণের ফলে বেশ কয়েকটি নতুন সুলতানত গড়ে ওঠে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য হলো মালাক্কা সালতানাত। ইসলাম মালয় জনগণের সংস্কৃতি ও জীবনযাত্রার ওপর গভীর প্রভাব ফেলে।
ইউরোপীয় উপনিবেশবাদ ও আধুনিক যুগ (১৬ শতাব্দী - ২০ শতাব্দী)
[সম্পাদনা]পর্তুগিজরা ছিল প্রথম ইউরোপীয় ঔপনিবেশিক শক্তি যারা মালয় উপদ্বীপ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় নিজেদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে। তারা ১৫১১ সালে মালাক্কা দখল করে। এরপর ১৬৪১ সালে ওলন্দাজরা মালাক্কা দখল করে পর্তুগিজদের স্থান গ্রহণ করে। তবে ব্রিটিশরাই শেষ পর্যন্ত এই অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম হয়। প্রথমে ব্রিটিশরা জেসেলটন, কুচিং, পেনাং এবং সিঙ্গাপুরে স্থাপন করে। এরপর তারা ধীরে ধীরে পুরো অঞ্চলে তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করে, যা বর্তমানে মালয়েশিয়ার ভূখণ্ডের অংশ। ১৮২৪ সালের ইঙ্গ-ওলন্দাজ চুক্তি ব্রিটিশ মালয় এবং নেদারল্যান্ডস ইস্ট ইন্ডিজ(বর্তমান ইন্দোনেশিয়া) অঞ্চলের মধ্যে সীমান্ত নির্ধারণ করে দেয়। এই সময়ে উপনিবেশিক অর্থনীতির চাহিদা পূরণের জন্য ব্রিটিশরা মালয় উপদ্বীপ ও বোর্নিওতে বিপুল সংখ্যক চীনা ও ভারতীয় শ্রমিক নিয়ে আসে। এটি ছিল বিদেশি প্রভাবের চতুর্থ ধাপ, যা মালয়েশিয়ার জনসংখ্যাগত কাঠামোতে দীর্ঘমেয়াদি পরিবর্তন আনে।[৯৯]
ফিলিপাইন
[সম্পাদনা]ফিলিপাইনে ভারতীয়কৃত রাজ্যসমূহ
[সম্পাদনা]লুয়া ত্রুটি মডিউল:অবস্থান_মানচিত্ এর 13 নং লাইনে: নির্দিষ্ট অবস্থান মানচিত্রের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায়নি। "মডিউল:অবস্থান মানচিত্র/উপাত্ত/Philippines" বা "টেমপ্লেট:অবস্থান মানচিত্র Philippines" দুটির একটিও বিদ্যমান নয়।
- লুজন
- ম্যানিলা ও পাশিগ নদীর আশেপাশে তিনটি রাজ্য ছিল, যা প্রথমে হিন্দু-বৌদ্ধ সংস্কৃতির ছিল। পরে এই রাজ্যগুলো ইসলাম গ্রহণ করে এবং ১৬শ শতকে স্প্যানিশদের দ্বারা দখল ও ক্যাথলিক ধর্মে রূপান্তরিত হয়।
- নামায়ন
- ময়নিলা (ঐতিহাসিক রাষ্ট্র)
- রাজা সুলাইমান (বা তৃতীয় সুলাইমান, ১৫৫৮–১৫৭৫), মায়নিলার রাজা।
- রাজা মাতান্ডা (১৪৮০–১৫৭২), মায়নিলার শাসক, যিনি রাজা সুলাইমানের সঙ্গে যৌথভাবে শাসন করতেন। তাদের চাচাতো ভাই লাকানদুলা টোন্ডো রাজ্য শাসন করতেন। রাজা সুলাইমান ছিলেন ম্যানিলার তিন শাসকের একজন, যিনি স্প্যানিশ উপনিবেশবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করেছিলেন।
- আধুনিক মেট্রো ম্যানিলায় পাশিগ নদীর তীরে টোন্ডো (ঐতিহাসিক রাষ্ট্র)
- লাকানদুলা, রাজা সুলাইমান ও রাজা মাতান্ডার চাচাতো ভাই।
- ফিলিপাইনসে পাওয়া প্রাচীনতম লিখিত দলিল। এটি ভারতীয়কৃত কাবি লিপিতে লেখা, যেখানেসংস্কৃত ভাষার প্রভাব রয়েছে।
- মিন্দোরো দ্বীপের একটি হিন্দু-বৌদ্ধ রাজ্য, যা দশম শতাব্দীর আগে থেকে চতুর্দশ শতাব্দী পর্যন্ত বিদ্যমান ছিল।
- সান্দাও, পালাওয়ানের কাছে মা-ই-এর প্রতিবেশী ভাসাল-রাজ্য
- পুলিলু, মা-ই-এর কেজোন প্রদেশে অবস্থিত আরেকটি সামন্ত-রাজ্য।
- ম্যানিলা ও পাশিগ নদীর আশেপাশে তিনটি রাজ্য ছিল, যা প্রথমে হিন্দু-বৌদ্ধ সংস্কৃতির ছিল। পরে এই রাজ্যগুলো ইসলাম গ্রহণ করে এবং ১৬শ শতকে স্প্যানিশদের দ্বারা দখল ও ক্যাথলিক ধর্মে রূপান্তরিত হয়।
- ভিসায়াস
- দক্ষিণ সেবু দ্বীপের রাজধানী সিঙ্গাপালা ছিল একটি হিন্দু রাজ্য, যা শ্রী লুমাই বা রাজামুদা লুমায়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন আধা-মালয় ও আধা-তামিল বংশোদ্ভূত, এবং সুমাত্রা থেকে এসেছিলেন।
- শ্রী লুমাই মিন্দানাও থেকে আসা মোরো মুসলিম আক্রমণকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিরক্ষা নীতি গ্রহণ করেছিলেন। তার "পুড়িয়ে ধ্বংস করা" কৌশলের ফলে এই অঞ্চলটি "শ্রী লুমায়ের আগুনের স্থান" বা "সুগ্বু" নামে পরিচিতি পায়, যা পরে সংক্ষেপে সুগ্বু নামে পরিচিত হয়।
- শ্রী বানতুগ, শ্রী লুমায়ের পুত্র ও উত্তরাধিকারী।
- রাজা হুমাবন, শ্রী বানতুগের পুত্র ও পরবর্তী শাসক।
- রাজা হুমাবন ও ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান-এর মধ্যে ২৭ এপ্রিল ১৫২১ ম্যাকতানের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। এই যুদ্ধে লাপু-লাপু রাজা হুমাবনের পক্ষে লড়াই করেন এবং ম্যাগেলান নিহত হন।
- Lapulapu, warrior under Rajah Humabon, Lapulapu fought Spanish[স্পষ্টকরণ প্রয়োজন]
- ফার্দিনান্দ ম্যাগেলান হলেন স্প্যানিশ সাম্রাজ্যের একজন পর্তুগিজ পরিব্রাজক
- রাজা তুপাস (শ্রী তুপাস) হলেন রাজা হুমাবনের ভাইপো ও উত্তরাধিকারী। তিনি ১৫৬৫ সালে সেবু যুদ্ধে স্প্যানিশ মিগুয়েল লোপেজ দে লেগাজপি-এর কাছে পরাজিত হন।
- প্রাচীন ভিসায়ান সমাজে শাসকশ্রেণির নিচে বিভিন্ন সামাজিক শ্রেণি বিদ্যমান ছিল, যা সামাজিক, রাজনৈতিক ও সামরিক কাঠামোর উপর ভিত্তি করে গঠিত হয়েছিল। সর্বোচ্চ স্তরে ছিল তুমাও, যারা রাজপরিবারের সদস্য ও উচ্চপদস্থ অভিজাত ছিলেন। তাদের পরেই ছিল তিমাওয়া শ্রেণি, যারা স্বাধীন যোদ্ধা ও ভূমির মালিক ছিল। তিমাওয়ারা রাজাকে সামরিক ও আর্থিক সহায়তা প্রদান করত এবং যুদ্ধের সময় শাসকদের পক্ষে লড়াই করত। লাপু-লাপু ছিলেন এই তিমাওয়া শ্রেণির একজন বিখ্যাত যোদ্ধা। তিমাওয়াদের নিচে ছিল উরিপন শ্রেণি, যেখানে সাধারণ কৃষক, শ্রমিক ও দাস অন্তর্ভুক্ত ছিল। তাদের সামাজিক অবস্থান মূলত ঋণের পরিমাণ বা যুদ্ধের বন্দি হিসেবে নির্ধারিত হত। এই শ্রেণিবিন্যাস তাগালগ সমাজের কাঠামোর সঙ্গে তুলনাযোগ্য, যেখানে তিমাওয়া শ্রেণির সমতুল্য ছিল মহারলিকা।
- ১৯২১ সালে হেনরি ওটলি বেয়ার পুরাতন প্রত্নস্থল পুয়ের্তো প্রিন্সেসা, পালাওয়ান এবং ম্যাকটান, সেবু-তে প্রত্নতাত্ত্বিক অনুসন্ধান চালিয়ে একটি অপরিশোধিত বৌদ্ধ মেডেলিয়ন এবং তামার তৈরি হিন্দু দেবতা গণেশের একটি মূর্তি আবিষ্কার করেন।[১০০] প্রত্নতাত্ত্বিক বিশ্লেষণে দেখা গেছে যে, এই নিদর্শনগুলোর নির্মাণশৈলী স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত বলে মনে করা হয়। তবে, দুঃখজনকভাবে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তবে, সৌভাগ্যবশত, এই নিদর্শনগুলোর সাদা-কালো চিত্র সংরক্ষিত রয়েছে।
- মাদজা-আস হল পানায় দ্বীপের একটি শক্তিশালী রাজনৈতিক গঠন, যা চতুর্দশ শতাব্দী থেকে ষোড়শ শতাব্দী পর্যন্ত টিকে ছিল। পরে স্প্যানিশরা এটি দখল করে।
- দক্ষিণ সেবু দ্বীপের রাজধানী সিঙ্গাপালা ছিল একটি হিন্দু রাজ্য, যা শ্রী লুমাই বা রাজামুদা লুমায়া কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত হয়। তিনি ছিলেন আধা-মালয় ও আধা-তামিল বংশোদ্ভূত, এবং সুমাত্রা থেকে এসেছিলেন।
- মিন্দানাও
- মিন্দানাওয়ের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত বুটুয়ান ছিল একটি হিন্দু রাজ্য, যা দশম শতকেরও আগে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। গবেষক এরিক ক্যাসিনোর মতে, এর প্রথম রাজা রাজা কিলিং ছিলেন স্থানীয় ফিলিপিনো নন; বরং তিনি ভারতীয় বংশোদ্ভূত ছিলেন। ফিলিপাইনে কিলিং শব্দটি ভারতীয়দের বোঝাতে ব্যবহৃত হত, যেমন মালয়েশিয়াতেও কেলিং শব্দটি ভারতীয় অভিবাসীদের বোঝাতে ব্যবহৃত হয়। বুটুয়ান রাজ্য দীর্ঘ সময় ধরে সমৃদ্ধ ছিল, তবে ষোড়শ শতকে এটি স্প্যানিশদের দ্বারা দখল ও অন্তর্ভুক্ত হয়।
- সানমালান (জাম্বোয়াঙ্গা উপদ্বীপ)
- দিবাতা পাহাড়: এই নামটি ফিলিপাইনের দিবাতা (দেবতা) ধারণা থেকে এসেছে, যা হিন্দুধর্মের দেবতা শব্দ থেকে উদ্ভূত।
- জাম্বোয়াঙ্গা দেল সুরের কুমালারং-এ অবস্থিত কুমালারং রাজ্য
- মিন্দানাওয়ের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে মাগুইন্দানাওতে অবস্থিত লানাও-এর সম্মিলিত রাষ্ট্র ছিল একটি মুসলিম শাসিত অঞ্চল, যা ১৫তম শতক থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত টিকে রয়েছে। এটি ঐতিহাসিকভাবে স্বশাসিত মুসলিম সমাজ ছিল, যা মিন্দানাও অঞ্চলের ইসলামী সংস্কৃতি ও রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।
- মিন্দানাওয়ের দূর পশ্চিমে কোটাবাতো অঞ্চলে অবস্থিত মাগুইন্দানাও সালতানাত ১৬শ শতকে শ্রীবিজয় রাজ্যের হিন্দু পূর্বপুরুষদের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গঠিত হয়েছিল এবং এটি ২০শ শতকের শুরু পর্যন্ত টিকে ছিল। ১৬শ শতকে জোহরের সুলতানের মাধ্যমে এটি ইসলাম গ্রহণ করে। তবে, তাদের হিন্দু আত্মীয়দের সঙ্গে একটি অনানুষ্ঠানিক সম্পর্ক বজায় রাখে, যাদের অনেকে পরবর্তীতে সম্ভবত খ্রিস্টধর্ম গ্রহণ করেন।
- মিন্দানাওয়ের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থিত সুলুর সালতানাত ১৪৫৭ সালে জোহর থেকে আগত এক মুসলিম অভিযাত্রী দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৫৭৮ সালে এটি ব্রুনাই সাম্রাজ্যের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে এবং ১৯৮৬ সাল পর্যন্ত টিকে ছিল। এই সালতানাতের শাসন কেবল মিন্দানাও নয়, বরং বোর্নিও দ্বীপের উত্তর-পূর্বাঞ্চলেও বিস্তৃত ছিল, যা বর্তমান ইন্দোনেশিয়ার কালিমান্তান অঞ্চলের মারুদু উপসাগর থেকে তেপিয়ান দুরিয়ান পর্যন্ত প্রসারিত ছিল।
- লুপাহ সুগ ছিল সুলু সালতানাত প্রতিষ্ঠার পূর্ববর্তী একটি হিন্দু রাষ্ট্র।[১০১]
- মাইম্বুং রাজ্য ছিল একটি হিন্দু শাসিত রাষ্ট্র, যা পরে লুপাহ সুগ মুসলিম সালতানাতের পূর্বসূরি হিসেবে বিবেচিত হয়। সেই সময় সুলু অঞ্চলকে লুপাহ সুগ নামে পরিচিত ছিল।[১০১] The Principality of Maimbung, populated এই রাজ্যটি প্রধানত বুরানুন (বা বুদানন) জনগোষ্ঠী দ্বারা বাসযোগ্য ছিল, যাদের নামের অর্থ "পর্বতের অধিবাসী"। রাজ্যটির প্রথম শাসক ছিলেন এক রাজা, যিনি রাজা সিপাদ উপাধি গ্রহণ করেছিলেন। গবেষক মাজুলের মতে, "রাজা সিপাদ" উপাধির উৎপত্তি হিন্দু শব্দ শ্রী পদ থেকে এসেছে, যা কর্তৃত্ব ও ক্ষমতার প্রতীক।[১০২] এই রাজ্যটি রাজাদের শাসনব্যবস্থার মাধ্যমে পরিচালিত হতো। সিপাদ দ্য ওল্ডার এর পরে তাঁর উত্তরসূরি সিপাদ দ্য ইয়ঙ্গার শাসনভার গ্রহণ করেন।
- লুজন
উপনিবেশিক যুগে ফিলিপাইনে ভারতীয়দের ভূমিকা
[সম্পাদনা]- ১৭৬২–১৭৬৪ ব্রিটিশ ম্যানিলা
- ১৭৬২ সালের মানিলা যুদ্ধ ইঙ্গ-স্প্যানিশ যুদ্ধের সময় (১৭৬১-৬৩ ) ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির ভারতীয় সৈন্যদের দ্বারা সংঘটিত হয়েছিল।
- রিজালে কাইন্টা : ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির পলাতক ভারতীয় সিপাহিদের ঐতিহাসিক ঔপনিবেশিক যুগের বসতি
- ভারতীয় ফিলিপিনো : আংশিক বা সম্পূর্ণ ভারতীয় বংশোদ্ভূত ফিলিপিনো নাগরিক
ফিলিপাইনে আবিষ্কৃত মূল ভারতীয় হিন্দু-বৌদ্ধ নিদর্শন
[সম্পাদনা]- লুজন
- লুজোনে পাওয়া লাগুনা কপারপ্লেট লিপি ফিলিপাইনে আবিষ্কৃত প্রাচীনতম লিখিত নথি। এটি ভারতীয় প্রভাবযুক্ত কাবি লিপিতে লেখা, যেখানে সংস্কৃত শব্দের ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়।
- পালাওয়ানের তাবন গুহায় পাওয়া গরুড় সোনার দুল হল একটি গরুড়ার আকৃতির গহনা। হিন্দু ধর্মে গরুড় হল দেবতা বিষ্ণুর বাহন। এই দুলটি পালাওয়ান দ্বীপের তাবন গুহা থেকে আবিষ্কৃত হয়েছে। [১০৩]
- ভিসায়াস
- সেবু রাজ্য থেকে পাওয়া বৌদ্ধ মেডেলিয়ন ও হিন্দু দেবতার তামার মূর্তি: ১৯২১ সালে গবেষক হেনরি ওটলি বেয়ার পালাওয়ানের পুয়ের্তো প্রিন্সেসা এবং সেবুর ম্যাকতান শহরের প্রাচীন স্থানে একটি বৌদ্ধ পদক এবং হিন্দু দেবতা গণেশের তামার মূর্তি আবিষ্কার করেন।[১০০] এই প্রত্নবস্তুগুলোর অমসৃণ ও অপরিষ্কার কারুকাজ দেখে ধারণা করা হয় যে, সেগুলো স্থানীয়ভাবে নির্মিত হয়েছিল। দুর্ভাগ্যবশত, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় এই প্রতিমাগুলো ধ্বংস হয়ে যায়। তবে, এই প্রত্নবস্তুগুলোর কিছু সাদা-কালো ছবি এখনো সংরক্ষিত রয়েছে।
- মিন্দানাও
- উত্তর-পূর্ব মিন্দানাওয়ের বুটুয়ান রাজ্যের সোনালী তারা ( আগুসানের ছবি ) হল একটি সোনার মূর্তি যা উত্তর-পূর্ব মিন্দানাওয়ের আগুসান দেল সুরে পাওয়া গেছে।
সিঙ্গাপুর
[সম্পাদনা]গ্রিকো-রোমান জ্যোতির্বিদ টলেমি ( ৯০ – ১৬৮) তার মানচিত্রে গোল্ডেন চেরসোনিজ (মালয় উপদ্বীপ বলে ধারণা করা হয়) এর দক্ষিণ প্রান্তে সাবানা নামে একটি স্থানের উল্লেখ করেছেন। এটি দ্বিতীয় ও তৃতীয় শতাব্দীর মধ্যে চিহ্নিত হয়েছিল।[১০৪] সিঙ্গাপুরের প্রাচীনতম লিখিত উল্লেখ তৃতীয় শতাব্দীর একটি চীনা নথিতে পাওয়া যায়, যেখানে পু লুও চুং (蒲羅中) নামের একটি দ্বীপের কথা বলা হয়েছে। ধারণা করা হয়, এটি মালয় মালয় ভাষার " পুলাউ উজং ", (অর্থাৎ "মালয় উপদ্বীপের শেষ প্রান্তে অবস্থিত দ্বীপ") নামের প্রতিলিপি।[১০৫]
১০২৫ খ্রিস্টাব্দে চোল সাম্রাজ্যের প্রথম রাজেন্দ্র চোল ভারত মহাসাগর পেরিয়ে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে আক্রমণ চালান, যার মধ্যে মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার বেশ কিছু অঞ্চল অন্তর্ভুক্ত ছিল।[১০৬][১০৭] ধারণা করা হয়, চোল বাহিনী কিছু সময়ের জন্য তেমাসেক (অধুনা সিঙ্গাপুর ) নিয়ন্ত্রণ করেছিল। [১০৮] তবে, চোল রাজ্যের নথিতে তেমাসেক নামে কোনো উল্লেখ নেই, কিন্তু আধা-ঐতিহাসিক মালয় ইতিহাস গ্রন্থ সেজারাহ মেলায়ু-তে রাজা চুলান (সম্ভবত রাজেন্দ্র চোল) এবং তেমাসেকের মধ্যে সম্পর্কের কথা বলা হয়েছে।[১০৯]
১৩৬৫ সালে রচিত জাভার প্রশস্তিগাথা নাগরক্রেতাগামাতে তুমাসিক নামে একটি বসতির উল্লেখ পাওয়া যায়, যার অর্থ হতে পারে "সমুদ্র নগর" বা "সমুদ্র বন্দর"।[১১০]
হিন্দু-বৌদ্ধ রাজ্য (? - ~১৫১১)
[সম্পাদনা]তেমাসেক নামটি সেজারাহ মেলায়ু ( মালয় অ্যানালস ) -এও পাওয়া যায়, যেখানে ১৩শ শতকে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের এক রাজপুত্র, শ্রী ত্রি বুয়ানা (সং নিলা উত্তমা নামেও পরিচিত), তেমাসেক প্রতিষ্ঠা করেন বলে উল্লেখ আছে। শ্রী ত্রি বুয়ানা একবার শিকার অভিযানে তেমাসেকে আসেন এবং সেখানে একটি অদ্ভুত প্রাণী দেখেন, যাকে তিনি সিংহ বলে মনে করেন। তিনি এটিকে শুভ লক্ষণ ভেবে সেখানে সিংগাপুরা নামের একটি বসতি স্থাপন করেন, যার অর্থ সংস্কৃতে "সিংহ নগর"। তবে নামটির প্রকৃত উৎস সম্পর্কে গবেষকদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।[১১১]

১৩২০ সালে, মঙ্গোল সাম্রাজ্য একটি বাণিজ্য প্রতিনিধি দল পাঠায় লং ইয়া মেন (অথবা ড্রাগনের দাঁতের ফটক) নামে পরিচিত এক স্থানে, যা সম্ভবত আজকের কেপেল বন্দর বলে মনে করা হয়। [১১২] চীনা পর্যটক ওয়াং দায়ুয়ান ১৩৩০ সালের দিকে এই দ্বীপে আসেন এবং লং ইয়ামেনকে তিনি দান মা শি (মালয় ভাষায় তেমাসেক) অঞ্চলের দুটি স্বতন্ত্র বসতির মধ্যে একটি হিসেবে বর্ণনা করেন। অন্যটি ছিল বান জু (মালয় ভাষায় "পানচুর" থেকে আগত)। বর্তমানে ফোর্ট ক্যানিং হিল অঞ্চলকেই বান জু বলে মনে করা হয়। সাম্প্রতিক প্রত্নতাত্ত্বিক খননে এখানে এমন নিদর্শন পাওয়া গেছে যা প্রমাণ করে যে ১৪শ শতাব্দীতে সিঙ্গাপুর একটি গুরুত্বপূর্ণ জনপদ ছিল।[১১৩][১১৪] ওয়াং আরও উল্লেখ করেন যে, লং ইয়ামেন অঞ্চলের স্থানীয় বাসিন্দারা (সম্ভবত ওরাং লাউত) এবং চীনা বণিকেরা একসঙ্গে বসবাস করত।[১১৫][১১৬] সিঙ্গাপুর হচ্ছে প্রাচীনতম স্থানগুলোর মধ্যে একটি, যেখানে চীনের বাইরেও একটি চীনা সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব ছিল। প্রত্নতাত্ত্বিক প্রমাণের মাধ্যমে এটি নিশ্চিত করা হয়েছে।[১১৭]
কোনো এক সময় তেমাসেক নামটি পরিবর্তিত হয়ে সিংগাপুর হয়ে যায়। সেজারাহ মেলায়ু ( মালয় অ্যানালস ) গ্রন্থে বলা হয়েছে যে, শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের রাজপুত্র শ্রী ত্রি বুয়ানা এক ভয়াবহ ঝড়ের কবলে পড়ে কোনো রকমে তেমাসেকে পৌঁছান। সেই সময় তিনি একটি অদ্ভুত প্রাণী দেখেন, যাকে সিংহ বলে মনে করা হয়। তিনি এটিকে শুভ লক্ষণ হিসেবে ধরে নিয়ে এখানে একটি নতুন জনপদ স্থাপন করেন এবং এর নাম দেন সিংগাপুর, যার অর্থ সংস্কৃতে "সিংহ নগরী"। যদিও প্রকৃতপক্ষে সিঙ্গাপুরে কখনও সিংহ ছিল বলে প্রমাণ মেলে না, তবে ২০শ শতাব্দীর গোড়া পর্যন্ত এখানে বাঘের অস্তিত্ব ছিল। তবে, সিংহ প্রতীকটি হিন্দু পুরাণে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়, যা ঐ সময় এই অঞ্চলে প্রভাবশালী ছিল। মালয় ভাষায় "সিংগাসনা" শব্দের অর্থ "সিংহাসন", যা সংস্কৃত থেকে এসেছে এবং এর অর্থ "সিংহের আসন"। এটি ধারণা করা হয় যে "সিংগাপুর" নাম এবং সিংহের গল্পটি মূলত মালাক্কা সালতানাতের রাজদরবারের ইতিহাসবিদদের দ্বারা সৃষ্টি করা হয়েছিল, যাতে সাঙ নিহলা উত্তমা ও তার বংশধরদের গৌরবান্বিত করা যায়।[১১৮]
পর্তুগিজ সূত্রে এই অঞ্চলের ইতিহাসের ভিন্ন ভিন্ন বিবরণ পাওয়া যায়। কিছু তথ্যে বলা হয়েছে যে তেমাসেক একসময় সিয়ামের (বর্তমান থাইল্যান্ড) অধীন একটি রাজ্য ছিল, যার শাসককে পালেমবাং-এর পারামেসওয়ারা হত্যা করেন।[১১৯] ঐতিহাসিকদের মতে, ১৪শ শতাব্দীর শেষের দিকে শ্রীবিজয় সাম্রাজ্যের শেষ রাজপুত্র পারামেসওয়ারা, যাকে মজপহিৎ সাম্রাজ্য ক্ষমতাচ্যুত করেছিল, পালেমবাং থেকে পালিয়ে তেমাসেকে আসেন। পর্তুগিজ সূত্র অনুসারে, তেমাসেকে স্বাগত জানানোর মাত্র আট দিনের মাথায় তিনি স্থানীয় শাসক সাং আজিকে হত্যা করেন।[১২০]

চতুর্দশ শতাব্দীর মধ্যে, শ্রীবিজয় ইতোমধ্যেই দুর্বল হয়ে পড়েছিল এবং সিঙ্গাপুর সিয়াম (বর্তমানে থাইল্যান্ড ) এবং জাভা-ভিত্তিক মজপহিৎ সাম্রাজ্যের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। সেজারাহ মেলায়ু অনুযায়ী, একবার মজাপাহিতদের আক্রমণে সিঙ্গাপুর পরাজিত হয়। তখনকার শেষ রাজা, সুলতান ইস্কান্দার শাহ (যিনি ইসলাম গ্রহণের আগে পারামেসওয়ারা নামে পরিচিত ছিলেন) কয়েক বছর দ্বীপটি শাসন করেন, কিন্তু পরে তাকে মালাক্কায় পালিয়ে যেতে হয়, যেখানে তিনি মালাক্কা সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন।[১২১] পর্তুগিজ সূত্রে অবশ্য বলা হয়েছে যে তেমাসেক সিয়ামের একটি রাজ্য ছিল এবং পারামেসওয়ারা (যাকে অনেকেই সুলতান ইস্কান্দার শাহ মনে করেন) স্থানীয় শাসককে হত্যা করার পর তাকে মালাক্কায় পালিয়ে যেতে হয়, হয় সিয়ামের হাতে পরাজিত হয়ে, নয়তো মজাপাহিতদের হাতে।[১২২] আধুনিক প্রত্নতাত্ত্বিক গবেষণায় দেখা গেছে যে এই সময়ের পর ফোর্ট ক্যানিং-এর জনপদটি পরিত্যক্ত হয়ে যায়। তবে কিছুদিনের জন্য সিঙ্গাপুরে একটি ছোট বাণিজ্যকেন্দ্র টিকে ছিল।[১১১]
ইসলামী সালতানাত (১৫১১ - ১৬১৩)
[সম্পাদনা]মালাক্কা সালতানাত দ্বীপের উপর তার কর্তৃত্ব প্রসারিত করে এবং সিঙ্গাপুর মালাক্কা সালতানাতের অংশ হয়ে ওঠে। [১০৫] তবে, খন ষোড়শ শতাব্দীর গোড়ার দিকে পপর্তুগিজরা এখানে পৌঁছায়, তখন সিঙ্গাপুরা এক সময়কার সমৃদ্ধ জনপদ থেকে "একটি বিশাল ধ্বংসাবশেষ"-এ পরিণত হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন আলফোনসো দে আলবুকার্ক। [১২৩][১২৪] ১৫১১ সালে পর্তুগিজরা মালাক্কা দখল করে নেয়। মালাক্কার সুলতান দক্ষিণে পালিয়ে যান এবং জোহর সালতানাত প্রতিষ্ঠা করেন। এরপর সিঙ্গাপুর জোহর সালতানাতের অধীনে চলে যায়, কিন্তু ১৬১৩ সালে এটি সম্পূর্ণভাবে ধ্বংস হয়ে যায়।[১২৫]
ব্রিটিশ উপনিবেশ এবং আধুনিক যুগ (১৯ শতক - বর্তমান)
[সম্পাদনা]১৬১৩ সালে পর্তুগিজরা সিঙ্গাপুরের জনবসতি ধ্বংস করে দেয়। এরপর প্রায় দুই শতাব্দী ধরে এই দ্বীপ অজ্ঞাত ও গুরুত্বহীন অবস্থায় ছিল।[১২৫][১২৬]
থাইল্যান্ড
[সম্পাদনা]সম্রাট অশোক কর্তৃক থাইল্যান্ডে বৌদ্ধধর্মের প্রচার (খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দী)
[সম্পাদনা]ভারত ও থাইল্যান্ডের সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্কের ইতিহাস আনুমানিক খ্রিস্টপূর্ব ৬ষ্ঠ শতক পর্যন্ত অনুসরণ করা যায়। তবে, ভারতের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ সাংস্কৃতিক অবদান, যার জন্য থাইল্যান্ড ভারতের প্রতি ঋণী, তা হলো বৌদ্ধধর্ম । খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীতে সম্রাট অশোকের পাঠানো বৌদ্ধ ভিক্ষুরা থাইল্যান্ডে বৌদ্ধধর্ম প্রচার করেন। এরপর এটি থাইল্যান্ডের রাষ্ট্রধর্ম হিসেবে গৃহীত হয় এবং আজও থাই জনগণের জীবন ও সংস্কৃতিতে গভীরভাবে প্রোথিত রয়েছে। বর্তমানে থাইল্যান্ডের প্রায় ৫৮ মিলিয়ন মানুষ, যা দেশটির মোট জনসংখ্যার ৯৪ শতাংশ, বৌদ্ধধর্মের অনুসারী। তবে, সরাসরি যোগাযোগের সূত্রপাত আসলে খ্রিস্টপূর্ব ৩য় শতকেই ঘটে, যখন সম্রাট অশোকের পাঠানো ভিক্ষুরা ইন্দো-চীন উপদ্বীপে বৌদ্ধধর্ম প্রচার শুরু করেন। বৌদ্ধধর্ম ছাড়াও থাইল্যান্ডে বিভিন্ন ভারতীয় ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য গৃহীত হয়েছে। বিশেষত রাজপরিবারের বিভিন্ন আচার ও রীতিনীতিতে হিন্দু ধর্মের গভীর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।
সুখোথাই যুগ: থাইল্যান্ডে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও ব্রাহ্মণদের বসতি (১২৭৫-১৩৫০)
[সম্পাদনা]সুখোথাই আমলে (১২৭৫–১৩৫০) ভারতে থেকে আসা মানুষদের মধ্যে দুই ধরনের অভিবাসী ছিল। একদল ছিলেন ব্যবসায়ী, যারা থাইল্যান্ডে বাণিজ্যের উদ্দেশ্যে আসতেন। আরেক দল ছিলেন ব্রাহ্মণ, যারা থাই রাজদরবারে জ্যোতিষশাস্ত্র ও বিভিন্ন রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠানের বিশেষজ্ঞ হিসেবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতেন। সুখোথাই রাজধানী প্রতিষ্ঠার আগেই (১২৭৫–১৩৫০) থাইল্যান্ডে ব্রাহ্মণদের উপস্থিতি ছিল এবং তারা হিন্দু বিশ্বাস ও ঐতিহ্য জনপ্রিয় করেছিলেন। সুখোথাই আমলে ব্রাহ্মণ মন্দিরও স্থাপিত হয়েছিল। রাজদরবারে ব্রাহ্মণরা নানা ধর্মীয় অনুষ্ঠান পরিচালনা করতেন। রাজশক্তির ঐশ্বরিক ধারণা ও রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠান ছিল ব্রাহ্মণ্য সংস্কৃতির স্পষ্ট নিদর্শন।
থাই রাজাদের অভিষেক অনুষ্ঠান আজও মূলত তার প্রাচীন আকারেই পালিত হয়। থাইল্যান্ডে রাজাকে হিন্দু দেবতা বিষ্ণুর অবতার হিসেবে দেখার ধারণা ভারতীয় ঐতিহ্য থেকে এসেছে। যদিও বর্তমানকালে এই বিশ্বাস টিকে নেই, তবু আজও চক্রি রাজবংশের প্রতিটি রাজাকে "রামা" বলা হয় (যেমন, রামা প্রথম, রামা দ্বিতীয় ইত্যাদি)। "রামা" শব্দটি বিষ্ণুর অবতার রামের নাম থেকে নেওয়া হয়েছে, যা ভারতীয় সংস্কৃতির স্পষ্ট প্রভাবের একটি উদাহরণ।
অয়ুধ্যা যুগ: থাইল্যান্ডে তামিল ব্যবসায়ীদের বসতি স্থাপন (১৩৫০–১৭৬৭)
[সম্পাদনা]অয়ুধ্যা রাজ্যের সময়ে (১৩৫০–১৭৬৭) আরও বেশি সংখ্যক তামিল বণিক সমুদ্রপথে থাইল্যান্ডের দক্ষিণ অঞ্চলে প্রবেশ করেন। এই অঞ্চলে খননকাজে পাওয়া হিন্দু দেবদেবীদের মূর্তিগুলি থেকে বোঝা যায় যে তামিল ব্যবসায়ীদের একটি শক্তিশালী উপস্থিতি ছিল।
আধুনিক যুগে থাইল্যান্ডে ভারতীয় অভিবাসন (১৮৫৫ খ্রিস্টাব্দ - বর্তমান)
[সম্পাদনা]১৮৫৫ সালের পর, থাইল্যান্ডে অভিবাসী তামিলদের তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের উপর ভিত্তি করে তিনটি দলে ভাগ করা যেতে পারে, যথা: হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম এবং ইসলাম।
থাইল্যান্ডের উপর ভারতীয় সাংস্কৃতিক প্রভাব
[সম্পাদনা]নৃত্য
[সম্পাদনা]থাই সাহিত্য এবং নাটক ভারতীয় শিল্পকলা এবং পুরাণ থেকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত হয়েছে। হিন্দু মহাকাব্য রামায়ণ ভারতে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি থাইল্যান্ডেও জনপ্রিয়।থাইল্যান্ড অতীতে রামায়ণকে স্থানীয় জীবনধারার সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছে এবং তাদের নিজস্ব সংস্করণ, রামাকিয়েন নিয়ে এসেছে।
থাইল্যান্ডের দুটি জনপ্রিয় ধ্রুপদী নৃত্য—"খোন" এবং "লাখোন"—মূলত রামাকিয়েন থেকে অনুপ্রাণিত। "খোন" নৃত্যে পুরুষরা ভয়ংকর মুখোশ পরে পারফর্ম করে, আর "লাখোন" নৃত্যে (যার বিভিন্ন শৈলী হলো লাখোন নাই, লাখোন চাত্রি, লাখোন নক) নারীরা পুরুষ ও নারীর উভয় চরিত্রে অভিনয় করে। এই নৃত্যে পারকাশন বাদ্যযন্ত্র ও "পিপহাট" নামক বাঁশির ব্যবহার করা হয়।[১২৭]
এছাড়াও থাইল্যান্ডে ছায়া নাটকের প্রচলন রয়েছে, যা "নাং তালুং" নামে পরিচিত। এখানে গরু বা মহিষের চামড়া কেটে মানুষের অবয়ব তৈরি করা হয়, যার হাত-পা নড়ানো যায়। এরপর এগুলোর ছায়া পর্দায় ফেলে দর্শকদের জন্য প্রদর্শন করা হয়। দক্ষিণ ভারতে এই ধরনের ছায়া নাটক "বোম্মালাট্টাম" নামে পরিচিত।
ভাষা
[সম্পাদনা]থাই ভাষার সঙ্গে সংস্কৃত ও দ্রাবিড়ীয় ভাষার গভীর সম্পর্ক রয়েছে। ভারত ও থাইল্যান্ডের ভাষাগত সংযোগের প্রমাণ হিসাবে থাই ভাষায় ব্যবহৃত কিছু সাধারণ শব্দ উল্লেখ করা যায়—যেমন, "রত" (রথ), "মন্ত্রী" (মন্ত্রী), "বিদ্যা" (বিদ্যা), "সমুৎ" (সমুদ্র), "করুণা" (করুণা), "গুলাব" (গোলাপ), "প্রাণী" (প্রাণী) ইত্যাদি। থাই ভাষা মূলত একমাত্রিক শব্দ নিয়ে গঠিত, যা স্বতন্ত্রভাবে পূর্ণ অর্থ বহন করে। ১২৮৩ সালে রাম খামহেং রাজা থাই বর্ণমালা তৈরি করেন, যা সংস্কৃত ও পালির প্রাচীন ভারতীয় লিপির উপর ভিত্তি করে গঠিত এবং প্রাচীন খেমার লিপির মাধ্যমে বিকশিত হয়েছিল। থাই ভাষা বিভিন্ন উৎস থেকে গঠিত হয়েছে, যেখানে সংস্কৃত, পালি, খমের, মালয়, ইংরেজি ও চীনা ভাষার সংমিশ্রণ রয়েছে।[১২৭]
ধর্মীয় আচার ও উৎসব
[সম্পাদনা]ভারতীয় ঐতিহ্য থেকে থাইল্যান্ডে বিভিন্ন ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান গৃহীত হয়েছে। এসবের মধ্যে রয়েছে উপাস্য গ্রহণ, বিবাহ, ধর্মীয় দান এবং অন্ত্যেষ্টিক্রিয়া সম্পর্কিত নানা রীতি। যদিও থাইল্যান্ডে প্রধান ধর্ম বৌদ্ধধর্ম, তবু ব্রহ্মা ও অন্যান্য হিন্দু দেবতাদের উপাসনা জনপ্রিয়। বিশেষ করে রাজকীয় আচার-অনুষ্ঠানে হিন্দু ধর্মের প্রভাব গভীর।
(১) ত্রিয়াম্পাওয়াই অনুষ্ঠান বা বিশাল দোল অনুষ্ঠান – এটি মূলত শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি ব্রাহ্মণ অনুষ্ঠান, যা ওয়াট সুথাত মন্দিরের সামনে অনুষ্ঠিত হতো। রাজা ও রানি সোনালি রেশমের মণ্ডপ থেকে এই অনুষ্ঠান দেখতেন। অর্থনৈতিক দুরবস্থার কারণে সপ্তম রামের শাসনকালে এটি বাতিল করা হলেও ব্রাহ্মণ পুরোহিতদের এখনও এই উপলক্ষে শিবের উদ্দেশ্যে নিবেদন করার জন্য অর্থ বরাদ্দ দেওয়া হয়।
(২) রাজকীয় হাল চাষ উৎসব – প্রতি বছর মে মাসে রাজা এটি পরিচালনা করেন, যা কৃষি মৌসুমের সূচনা চিহ্নিত করে এবং কৃষকদের জন্য সমৃদ্ধির আশীর্বাদ স্বরূপ। এটি মূলত একটি ব্রাহ্মণ্য আচার যা পরে রাজপরিবারের অন্যতম ঐতিহ্যে পরিণত হয়।
(৩) স্বর্গীয় ভাত প্রস্তুতির রাজকীয় অনুষ্ঠান বা খাও থিপ – এটি মূলত দেবরাজ ইন্দ্রের উদ্দেশ্যে নিবেদিত একটি আচার। বলা হয়, এটি স্বর্গীয় দেবতাদের দ্বারা প্রস্তুত হতো। এই ভাতের একাংশ ভিক্ষুদের নিবেদন করা হতো, বাকিটা রাজপরিবার, অভিজাত ও অন্যান্য সদস্যদের মধ্যে বণ্টন করা হতো। তবে কুমারীরা একমাত্র এই ভাত প্রস্তুত ও নাড়ানোর কাজ করত বলে, কালের বিবর্তনে এই আচার বিলুপ্ত হয়ে গেছে।
(৪) কঠিন উৎসব – এটি অক্টোবর-নভেম্বর মাসে পালিত হয়, যেখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা নতুন গেরুয়া বসন গ্রহণ করেন।
(৫)লয় ক্রাথং উৎসব – আলোর উৎসব যা দ্বাদশ চান্দ্র মাসের পূর্ণিমার রাতে পালিত হয়। সুখোথাই রাজ্যের আমলে শুরু হওয়া লোই ক্রাথং লণ্ঠনের ভাসমান প্রচলন থাই ইতিহাসের বিভিন্ন পর্যায়ে অব্যাহত ছিল। বর্তমান সময়ের ধারণা হল, এই উৎসবটি সারা বছর ধরে প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করার জন্য জলের দেবী চাও মে কাংকার প্রতি উপাসনা হিসেবে পালিত হয় এবং তারা যদি এটি দূষিত করে থাকে বা অসাবধানতাবশত ব্যবহার করে থাকে তবে ক্ষমা প্রার্থনার একটি উপায় হিসেবে পালিত হয়।
(৬) সংক্রান উৎসব – এটি থাইল্যান্ডের নববর্ষ উদযাপন। "সংক্রান" শব্দের অর্থ সূর্যের রাশিচক্রের প্রথম ঘরে প্রবেশ। এটি ভারতের হোলি এবং মকর সংক্রান্তির অনুরূপ।
(৭) বিশাখা পূজা দিবস – এটি বৌদ্ধ ধর্মের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দিবস, যা গৌতম বুদ্ধের জন্ম, বোধিপ্রাপ্তি ও মহাপরিনির্বাণের স্মরণে পালিত হয়।
অন্যান্য বিখ্যাত আনুষ্ঠানিক পবিত্র দিনগুলির মধ্যে রয়েছে ফেব্রুয়ারিতে মাঘ পূজার দিন এবং জুলাই মাসে অসল পূজার দিন, যেদিন বুদ্ধ তাঁর পাঁচ শিষ্য, যথা কৌন্তন্য, ভাসপ, ভট্টিয়া, মহানাম এবং আশাশিকে এসিপটানামরুয়েকথায়ওয়ানে (ভারতের সারনাথের ইসিপটানা বন) প্রথম ধর্মোপদেশ দিয়েছিলেন এবং সেখানে চারটি আর্যসত্য (আরিয়াসাই) সম্পর্কে তাঁর ধারণা ব্যাখ্যা করেছিলেন। [১২৭]
হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্র
[সম্পাদনা]থাইল্যান্ডে হিন্দু জ্যোতিষশাস্ত্রের ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। থাই জনগণ এখনও বিভিন্ন শুভ-অশুভ মুহূর্ত জানতে অভিজ্ঞ বৌদ্ধ ভিক্ষু বা ব্রাহ্মণ জ্যোতিষীদের পরামর্শ নেন। বিশেষ করে গৃহপ্রবেশ, বিবাহ, বা গুরুত্বপূর্ণ আচার-অনুষ্ঠানের সময় এটি পালন করা হয়।
থাই ঐতিহ্যবাহী ঔষধ এবং ম্যাসাজের উপর আয়ুর্বেদের প্রভাব
[সম্পাদনা]থাই সন্ন্যাসী পূজনীয় বুদ্ধদাস ভিক্কুর লেখা, 'থাইল্যান্ডের প্রতি ভারতের কল্যাণ' অনুসারে, থাইরা ভারতীয়দের কাছ থেকে ভেষজ ওষুধ (আয়ুর্বেদ) তৈরির পদ্ধতিও অর্জন করেছিল। গুটিফেরা পরিবারের সরবি, কণিকা বা হরসিংহার, ফিকুন বা মিমুসোপস এলেঙ্গি এবং বুন্নাক বা গোলাপের বাদাম ইত্যাদি কিছু উদ্ভিদ ভারত থেকে আনা হয়েছিল। [১২৭]
থাই খাবারের উপর ভারতীয় খাবার এবং মশলার প্রভাব
[সম্পাদনা]বুদ্ধদাস ভিক্ষু তার লেখায় উল্লেখ করেছেন যে থাই খাবারও ভারতীয় রান্নার প্রভাব রয়েছে। থাইরা ভারতীয়দের কাছ থেকে মশলার ব্যবহার শিখেছে, যা তাদের খাবার তৈরির কৌশলে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।[১২৭]
ভিয়েতনাম
[সম্পাদনা]প্রাথমিক চীনা সামন্ত রাজ্যসমূহ
[সম্পাদনা]দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের পূর্ব প্রান্তে, উত্তর ভিয়েতনাম মূলত অস্ট্রো-এশীয় জনগোষ্ঠীর দ্বারা অধিষ্ঠিত ছিল। তবে, যখন আঞ্চলিক ক্ষমতার কাঠামো পরিবর্তিত হতে থাকে, তখন দক্ষিণ চীন থেকে ক্রা-দাই ভাষাভাষী গোষ্ঠীগুলি এই অঞ্চলে বসতি স্থাপন করে। খ্রিস্টপূর্ব ২০৭ সালে, চীনের কিন রাজবংশেরএক সেনাধ্যক্ষ ট্রিয়েউ দা সাম্রাজ্যের পতনের সুযোগ নিয়ে উত্তর ভিয়েতনামে নান্যুয়ে নামে একটি রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন। খ্রিস্টপূর্ব ১ম শতাব্দীতে নান্যুয়ে চীনের হান সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয় এবং ১০ম শতাব্দীর গোড়ার দিকে তাং সাম্রাজ্যের পতন পর্যন্ত এটি চীনা সাম্রাজ্যের একটি প্রদেশ হিসেবে টিকে ছিল। এরপর এটি স্বায়ত্তশাসন লাভ করে, যদিও বহু সময় এটি চীনের সম্রাটের নামমাত্র করদ রাজ্য হিসেবে ছিল।
ভারতীয় প্রভাবযুক্ত হিন্দু রাজ্য চম্পার প্রতিষ্ঠা (১০ শতাব্দী -)
[সম্পাদনা]দক্ষিণ-মধ্য ভিয়েতনামে অস্ট্রোনেশীয় জনগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত চামরা চতুর্থ শতকের দিকে চম্পা নামে একটি হিন্দু সংস্কৃতির প্রভাবিত রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে। এটি আনামিজ ও কম্বোডিয়ার খমেরদের দ্বারা সময়ে সময়ে আক্রমণের শিকার হলেও দীর্ঘদিন ধরে টিকে ছিল এবং সমৃদ্ধিও লাভ করেছিল। ১৪৭১ সালে, ভিয়েতনামের সম্রাট লে থান টং-এর (黎聖宗) নেতৃত্বে প্রায় ২,৬০,০০০ সেনার এক বাহিনী চাম্পার ওপর আক্রমণ চালায়। চম্পার রাজা ট্রা তোয়ানের নেতৃত্বে চম্পা রাজ্য ১৪৭০ সালে ভিয়েতনামের বিরুদ্ধে আক্রমণ চালানোর পর এর প্রতিশোধ স্বরূপ এই আক্রমণ শুরু হয়। ভিয়েতনামি বাহিনী চম্পার বিরুদ্ধে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালায়, যেখানে প্রায় ৬০,০০০ চাম নাগরিক নিহত হয়। চাম্পার অধিকাংশ অঞ্চল ধ্বংস, লুণ্ঠন ও আগুনে পুড়িয়ে দেওয়া হয় এবং পুরো রাজ্যটি দখল করা হয়। হাজার হাজার চাম জনগণ কম্বোডিয়ায় পালিয়ে যায়, আর বাকিদের জোরপূর্বক ভিয়েতনামী সংস্কৃতির সঙ্গে একীভূত হতে বাধ্য করা হয়। বর্তমানে, ভিয়েতনামে মাত্র ৮০,০০০ চাম জনগোষ্ঠীর অস্তিত্ব রয়েছে।
চীনা সংস্কৃতির মাধ্যমে ভিয়েতনামে ভারতীয় বৌদ্ধধর্মের প্রভাব
[সম্পাদনা]ভিয়েতনাম, যা তখন আননাম (安南; পিনয়িন: Ānnán) নামে পরিচিত ছিল, সরাসরি খুব একটা হিন্দু প্রভাবের আওতায় আসেনি, তবে চাম্পার মাধ্যমে কিছুটা প্রভাব পেয়েছিল। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার অন্যান্য দেশগুলোর (সিঙ্গাপুর ও ফিলিপাইনের ব্যতিক্রম) তুলনায় ভিয়েতনামে ভারতীয় উৎসের বৌদ্ধ ধর্ম প্রধানত চীনা সংস্কৃতির মাধ্যমে প্রবেশ করেছিল।
আরও দেখুন
[সম্পাদনা]- ভারতীয় প্রভাবের বিস্তার
- বাণিজ্য পথ
- অন্যান্য
আরও পড়ুন
[সম্পাদনা]- Cœdès, George (১৯৬৮)। The Indianized States of Southeast Asia। trans.Susan Brown Cowing। University of Hawaii Press। আইএসবিএন 978-0-8248-0368-1।
- Lokesh, Chandra, & International Academy of Indian Culture. (2000). Society and culture of Southeast Asia: Continuities and changes. New Delhi: International Academy of Indian Culture and Aditya Prakashan.
- R. C. Majumdar, Study of Sanskrit in South-East Asia
- R. C. Majumdar, India and South-East Asia, I.S.P.Q.S. History and Archaeology Series Vol. 6, 1979, আইএসবিএন ৮১-৭০১৮-০৪৬-৫.
- R. C. Majumdar, Champa, Ancient Indian Colonies in the Far East, Vol.I, Lahore, 1927. আইএসবিএন ০-৮৩৬৪-২৮০২-১ISBN 0-8364-2802-1
- R. C. Majumdar, Suvarnadvipa, Ancient Indian Colonies in the Far East, Vol.II, Calcutta,
- R. C. Majumdar, Kambuja Desa Or An Ancient Hindu Colony In Cambodia, Madras, 1944
- R. C. Majumdar, Hindu Colonies in the Far East, Calcutta, 1944, আইএসবিএন ৯৯৯১০-০-০০১-১ Ancient Indian colonisation in South-East Asia.
- R. C. Majumdar, History of the Hindu Colonization and Hindu Culture in South-East Asia
- Daigorō Chihara (১৯৯৬)। Hindu-Buddhist Architecture in Southeast Asia। BRILL। আইএসবিএন 90-04-10512-3।
- K.P. Rao, Early Trade and Contacts between South India and Southeast Asia (300 B.C.-A.D. 200), East and West Vol. 51, No. 3/4 (December 2001), pp. 385–394
টীকা
[সম্পাদনা]তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Kulke, Hermann (২০০৪)। A history of India। Rothermund, Dietmar, 1933– (4th সংস্করণ)। Routledge। আইএসবিএন 0-203-39126-8। ওসিএলসি 57054139।
- ↑ ক খ Lévi, Sylvain; Przyluski, Jean (১৯৯৩)। Pre-Aryan and Pre-Dravidian in India (ইংরেজি ভাষায়)। Asian Educational Services। আইএসবিএন 978-81-206-0772-9।
- ↑ ক খ Bellina, Bérénice (২০১৪)। "Southeast Asia and the Early Maritime Silk Road"। Lost Kingdoms of Early Southeast Asia: Hindu-Buddhist Sculpture 5th to 8th century। Yale University Press। পৃষ্ঠা 22–25। আইএসবিএন 978-1-58839-524-5।
- ↑ ক খ Mahdi, Waruno (১৯৯৯)। "The Dispersal of Austronesian boat forms in the Indian Ocean"। Archaeology and Language III: Artefacts languages, and texts। One World Archaeology। Routledge। পৃষ্ঠা 144–179। আইএসবিএন 978-0-415-10054-0।
- ↑ ক খ Manguin, Pierre-Yves (২০১৬)। "Austronesian Shipping in the Indian Ocean: From Outrigger Boats to Trading Ships"। Early Exchange between Africa and the Wider Indian Ocean World। Palgrave Macmillan। পৃষ্ঠা 51–76। আইএসবিএন 978-3-319-33822-4।
- ↑ Blench, Roger (২০০৪)। "Fruits and arboriculture in the Indo-Pacific region": 31–50।
- ↑ ক খ Chakravarti (1930)
- ↑ ক খ Shaffer, 309
- ↑ ক খ গ Gombrich 1995, পৃ. 10।
- ↑ ক খ Strong 1995, পৃ. 143।
- ↑ Guruge, Unresolved 1995, পৃ. 50।
- ↑ Guruge, Unresolved 1995, পৃ. 51।
- ↑ Gombrich 1995, পৃ. 11।
- ↑ Gombrich 1995, পৃ. 11–12।
- ↑ ক খ Gombrich 1995, পৃ. 12।
- ↑ Thapar 1995, পৃ. 32।
- ↑ Donkin, 67
- ↑ Donkin, 69
- ↑ ক খ Donkin, 59
- ↑ Donkin, 64
- ↑ ক খ গ Donkin, 92
- ↑ The Journal of Orissan History, Volumes 13-15। Orissa History Congress। ১৯৯৫। পৃষ্ঠা 54।
- ↑ "Bali Yatra"। Orissa Tourism। ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ নভেম্বর ২০১০।
- ↑ Nilakanta Sastri, A History of South India, 5
- ↑ Kulke & Rothermund, 115
- ↑ ক খ Majumdar, 407
- ↑ The kadaram campaign is first mentioned in Rajendra's inscriptions dating from his 14th year. The name of the Srivijaya king was Sangrama Vijayatungavarman—Nilakanta Sastri, The CōĻas, 211–220.
- ↑ Shaffer, Lynda Noreen (২০০১)। "Southernization"। Agricultural and Pastoral Societies in Ancient and Classical History। Critical perspectives on the past। American Historical Association। Temple University Press। পৃষ্ঠা 308। আইএসবিএন 978-1-56639-832-9। সংগ্রহের তারিখ ২০১৩-১২-২৪।
- ↑ Sastri, K. A. Nilakanta (১৯৫৮)। History of South India (2nd সংস্করণ)। Oxford University Press।
- ↑ "Kollam - Mathrubhumi"।
- ↑ Ring, Trudy; Watson, Noelle (১২ নভেম্বর ২০১২)। Page No.710, International Dictionary of Historic Places: Asia and Oceania। Routledge। আইএসবিএন 978-1-136-63979-1। সংগ্রহের তারিখ ২৩ নভেম্বর ২০১৬।
- ↑ Kulke & Rothermund, 116–117.
- ↑ Kulke & Rothermund, 12
- ↑ Kulke & Rothermund, 118
- ↑ Kulke & Rothermund, 124
- ↑ Tripathi, 465
- ↑ Tripathi, 477
- ↑ Nilakanta Sastri, The CōĻas, 604
- ↑ ক খ গ See A History of South India – pp 146 – 147
- ↑ Donkin, 65
- ↑ ক খ Chaudhuri, 223
- ↑ "Maritime Silk Road"। SEAArch। ৫ জানুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Richard Foltz, Religions of the Silk Road, New York: Palgrave Macmillan, 2nd edition, 2010, আইএসবিএন ৯৭৮-০-২৩০-৬২১২৫-১
- ↑ Xinru Liu, The Silk Road in World History (New York: Oxford University Press, 2010), 77.
- ↑ ক খ Jerry H. Bentley, Old World Encounters: Cross-Cultural Contacts and Exchanges in Pre-Modern Times (New York: Oxford University Press, 1993), 38.
- ↑ Hermes, Taylor R.; Frachetti, Michael D. (২৬ মার্চ ২০১৮)। "Urban and nomadic isotopic niches reveal dietary connectivities along Central Asia's Silk Roads" (ইংরেজি ভাষায়): 5177। আইএসএসএন 2045-2322। ডিওআই:10.1038/s41598-018-22995-2। পিএমআইডি 29581431। পিএমসি 5979964
।
- ↑ Frachetti, Michael D.; Smith, C. Evan (৮ মার্চ ২০১৭)। "Nomadic ecology shaped the highland geography of Asia's Silk Roads" (ইংরেজি ভাষায়): 193–98। আইএসএসএন 0028-0836। ডিওআই:10.1038/nature21696। পিএমআইডি 28277506।
- ↑ Jerry H. Bentley, Old World Encounters: Cross-Cultural Contacts and Exchanges in Pre-Modern Times (New York: Oxford University Press, 1993), 69, 73.
- ↑ Anderson, James A. (২০০৯)। "China's Southwestern Silk Road in World History"। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১৩।
- ↑ Jerry Bentley, Old World Encounters: Cross-Cultural Contacts and Exchanges in Pre-Modern Times (New York: Oxford University Press, 1993), 16.
- ↑ Foltz, Richard C. (১৯৯৯)। Religions of the Silk Road: Overland Trade and Cultural Exchange from Antiquity to the Fifteenth Century। St Martin's Press। পৃষ্ঠা 37।
- ↑ Xinru Liu, "The Silk Road in World History" (New york: Oxford University Press, 2010), p. 51.
- ↑ Xinru Liu, "The Silk Road in World History" (New York: Oxford University Press, 2010), p. 42.
- ↑ Foltz, "Religions of the Silk Road", pp. 37–58
- ↑ Foltz, Richard C. (১৯৯৯)। Religions of the Silk Road: Overland Trade and Cultural Exchange from Antiquity to the Fifteenth Century। St Martin's Press। পৃষ্ঠা 47।
- ↑ ক খ Foltz, Richard C. (১৯৯৯)। Religions of the Silk Road: Overland Trade and Cultural Exchange from Antiquity to the Fifteenth Century। St Martin's Press। পৃষ্ঠা 38।
- ↑ Silkroad Foundation; Adela C.Y. Lee। "Ancient Silk Road Travellers"। ৬ আগস্ট ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ Foltz, Richard C. (১৯৯৯)। Religions of the Silk Road: Overland Trade and Cultural Exchange from Antiquity to the Fifteenth Century। St Martin's Press। পৃষ্ঠা 41।
- ↑ Xinru Liu, "The Silk Road in World History" (New York: Oxford University Press, 2010), p. 21.
- ↑ Jerry H. Bentley, Old World Encounters: Cross-Cultural Contacts and Exchanges in Pre-Modern Times (New York: Oxford University Press, 1993), 43–44.
- ↑ Jerry H. Bentley, Old World Encounters: Cross-Cultural Contacts and Exchanges in Pre-Modern Times (New York: Oxford University Press, 1993), 48.
- ↑ Jerry H. Bentley, Old World Encounters: Cross-Cultural Contacts and Exchanges in Pre-Modern Times (New York: Oxford University Press, 1993), 50.
- ↑ This view recently has been challenged. See Johannes L. Kurz "Boni in Chinese Sources: Translations of Relevant Texts from the Song to the Qing Dynasties", paper accessible under http://www.ari.nus.edu.sg/article_view.asp?id=172 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৪-১০-১৮ তারিখে (2006)
- ↑ "Naskah Nagarakretagama" (ইন্দোনেশীয় ভাষায়)। Perpustakaan Nasional Republik Indonesia। ২৩ মে ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ অক্টোবর ২০১৪।
- ↑ https://study.com/academy/lesson/india-1000-1300-ce-dynasties-religions.html#:~:text=In%20the%2014th%20century%2C%20the,by%20the%20Mughals%20in%201526 ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২১-১১-২৬ তারিখে. [অনাবৃত ইউআরএল]
- ↑ Taylor, Jean Gelman (২০০৩)। Indonesia: Peoples and Histories। Yale University Press। পৃষ্ঠা 378। আইএসবিএন 0-300-10518-5।
- ↑ H.J. Grijzen (1904), 'Mededeelingen omtrent Beloe of Midden-Timor', Verhandelingen van het Bataviaasch Genootschap 54, pp. 18-25.
- ↑ ক খ Taylor, Jean Gelman (২০০৩)। Indonesia: Peoples and Histories। Yale University Press। পৃষ্ঠা 377। আইএসবিএন 0-300-10518-5।
- ↑ Population Settlements in East Timor and Indonesia ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২ ফেব্রুয়ারি ১৯৯৯ তারিখে – University of Coimbra
- ↑ History of Timor ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০০৯-০৩-২৪ তারিখে – Technical University Lisbon (PDF-Datei; 805 kB)
- ↑ Ptak, Roderich (১৯৮৩)। "Some References to Timor in Old Chinese Records": 37–48। ডিওআই:10.1179/014703783788755502।
- ↑ Carter, Alison Kyra (২০১০)। "Trade and Exchange Networks in Iron Age Cambodia: Preliminary Results from a Compositional Analysis of Glass Beads"। Indo-Pacific Prehistory Association। ডিওআই:10.7152/bippa.v30i0.9966। সংগ্রহের তারিখ ১২ ফেব্রুয়ারি ২০১৭।
- ↑ ক খ Kenneth R. Hal (১৯৮৫)। Maritime Trade and State Development in Early Southeast Asia। University of Hawaii Press। পৃষ্ঠা 63। আইএসবিএন 978-0-8248-0843-3।
- ↑ National Library of Australia. Asia's French Connection : George Coedes and the Coedes Collection ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ অক্টোবর ২০১১ তারিখে
- ↑ ক খ "Encyclopedia of Ancient Asian Civilizations by Charles F. W. Higham – Chenla – Chinese histories record that a state called Chenla..." (পিডিএফ)। Library of Congress। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৫।
- ↑ "Considerations on the Chronology and History of 9th Century Cambodia by Dr. Karl-Heinz Golzio, Epigraphist – ...the realm called Zhenla by the Chinese. Their contents are not uniform but they do not contradict each other." (পিডিএফ)। Khmer Studies। ২৪ মে ২০১৫ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জুলাই ২০১৫।
- ↑ Maha Sila Viravond। "HISTORY OF LAOS" (পিডিএফ)। Refugee Educators' Network। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭।
- ↑ M.L. Manich। "HISTORY OF LAOS (including the history of Lonnathai, Chiangmai)" (পিডিএফ)। Refugee Educators' Network। সংগ্রহের তারিখ ডিসেম্বর ২৯, ২০১৭।
- ↑ Imago Mvndi (ইংরেজি ভাষায়)। Brill Archive। ১৯৫৮।
- ↑ ক খ গ ঘ World and Its Peoples: Eastern and Southern Asia। Marshall Cavendish। ২০০৭। আইএসবিএন 978-0-7614-7642-9।
- ↑ History of Humanity: From the seventh century B.C. to the seventh century A.D. by Sigfried J. de Laet p.395
- ↑ Braddell, Roland (ডিসেম্বর ১৯৩৭)। "An Introduction to the Study of Ancient Times in the Malay Peninsula and the Straits of Malacca" (3 (129)): 64–126। জেস্টোর 41559897।
- ↑ ASEAN Member: Malaysia ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০২০-০২-১৯ তারিখে Retrieved 29 May 2008.
- ↑ Derek Heng (১৫ নভেম্বর ২০০৯)। Sino–Malay Trade and Diplomacy from the Tenth through the Fourteenth Century। Ohio University Press। পৃষ্ঠা 39–। আইএসবিএন 978-0-89680-475-3।
- ↑ Gernet, Jacques (১৯৯৬)। A History of Chinese Civilization। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 127। আইএসবিএন 978-0-521-49781-7।
- ↑ Ishtiaq Ahmed; Professor Emeritus of Political Science Ishtiaq Ahmed (৪ মে ২০১১)। The Politics of Religion in South and Southeast Asia। Taylor & Francis। পৃষ্ঠা 129–। আইএসবিএন 978-1-136-72703-0।
- ↑ Stephen Adolphe Wurm; Peter Mühlhäusler (১৯৯৬)। Atlas of Languages of Intercultural Communication in the Pacific, Asia, and the Americas। Walter de Gruyter। আইএসবিএন 978-3-11-013417-9।
- ↑ ক খ "Malaysia"। State.gov। ১৪ জুলাই ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১০।
- ↑ ক খ Barbara Watson Andaya; Leonard Y. Andaya (১৫ সেপ্টেম্বর ১৯৮৪)। A History of Malaysia। Palgrave Macmillan। আইএসবিএন 978-0-312-38121-9।
- ↑ Power and Plenty: Trade, War, and the World Economy in the Second Millennium by Ronald Findlay, Kevin H. O'Rourke p.67
- ↑ History of Asia by B. V. Rao (2005), p. 211
- ↑ Singapore in Global History by Derek Thiam Soon Heng, Syed Muhd Khairudin Aljunied p.40
- ↑ History Without Borders: The Making of an Asian World Region, 1000–1800 by Geoffrey C. Gunn p.43
- ↑ Nagapattinam to Suvarnadwipa: Reflections on the Chola Naval Expeditions to Southeast Asia by Hermann Kulke, K Kesavapany, Vijay Sakhuja p.71
- ↑ Buddhism, Diplomacy, and Trade: The Realignment of Sino-Indian Relations by Tansen Sen p.226
- ↑ Aryatarangini, the Saga of the Indo-Aryans, by A. Kalyanaraman p.158
- ↑ India and Malaya Through the Ages: by S. Durai Raja Singam
- ↑ Annual Report on the Federation of Malaya: 1951 in C.C. Chin and Karl Hack, Dialogues with Chin Peng pp. 380, 81.
- ↑ ক খ http://www.asj.upd.edu.ph/mediabox/archive/ASJ-15-1977/francisco-indian-prespanish-philippines.pdf ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৮-০২-১৯ তারিখে [অনাবৃত ইউআরএল পিডিএফ]
- ↑ ক খ Julkarnain, Datu Albi Ahmad (৩০ এপ্রিল ২০০৮)। "Genealogy of Sultan Sharif Ul-Hashim of Sulu Sultanate"। Zambo Times। ১৮ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ডিসেম্বর ২০১০।
- ↑ Ibrahim 1985
- ↑ "Palawan Tabon garuda"। ২০২১-০২-২৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০২০-০৪-০৫।
- ↑ Hack, Karl। "Records of Ancient Links between India and Singapore"। National Institute of Education, Singapore। ২৬ এপ্রিল ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ আগস্ট ২০০৬।
- ↑ ক খ "Singapore: History, Singapore 1994"। Asian Studies @ University of Texas at Austin। ২৩ মার্চ ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০০৬।
- ↑ Coedès, George (১৯৬৮)। The Indianized States of Southeast Asia। trans. Susan Brown Cowing। University of Hawaii Press। পৃষ্ঠা 142–143। আইএসবিএন 978-0-8248-0368-1।
- ↑ Epigraphia Carnatica, Volume 10, Part 1, page 41
- ↑ Sar Desai, D. R. (৪ ডিসেম্বর ২০১২)। Southeast Asia: Past and Present। Avalon। পৃষ্ঠা 43। আইএসবিএন 978-0-8133-4838-4।
- ↑ "Sri Vijaya-Malayu: Singapore and Sumatran Kingdoms"। History SG।
- ↑ Victor R Savage; Brenda Yeoh (২০১৩)। Singapore Street Names: A Study of Toponymics। Marshall Cavendish। পৃষ্ঠা 381। আইএসবিএন 978-981-4484-74-9।
- ↑ ক খ C.M. Turnbull (২০০৯)। A History of Modern Singapore, 1819–2005। NUS Press। পৃষ্ঠা 21–22। আইএসবিএন 978-9971-69-430-2।
- ↑ Community Television Foundation of South Florida (১০ জানুয়ারি ২০০৬)। "Singapore: Relations with Malaysia"। Public Broadcasting Service। ২২ ডিসেম্বর ২০০৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা।
- ↑ "Archaeology in Singapore – Fort Canning Site"। Southeast-Asian Archaeology। ২৯ এপ্রিল ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ জুলাই ২০০৬।
- ↑ Derek Heng Thiam Soon (২০০২)। "Reconstructing Banzu, a Fourteenth-Century Port Settlement in Singapore": 69–90।
- ↑ Paul Wheatley (১৯৬১)। The Golden Khersonese: Studies in the Historical Geography of the Malay Peninsula before A.D. 1500। University of Malaya Press। পৃষ্ঠা 82–85। ওসিএলসি 504030596।
- ↑ "Hybrid Identities in the Fifteenth-Century Straits of Malacca" (পিডিএফ)। Asia Research Institute, National University of Singapore। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০১৭।
- ↑ John Miksic (২০১৩)। Singapore and the Silk Road of the Sea, 1300–1800। NUS Press। পৃষ্ঠা 120। আইএসবিএন 978-9971-69-574-3।
- ↑ Baker, Jim (২০০৮)। Crossroads: A Popular History of Malaysia and Singapore। Marshall Cavendish International Asia।
- ↑ John N. Miksic (১৫ নভেম্বর ২০১৩)। Singapore and the Silk Road of the Sea, 1300_1800। NUS Press। পৃষ্ঠা 155–163। আইএসবিএন 978-9971-69-574-3।
- ↑ John N. Miksic (১৫ নভেম্বর ২০১৩)। Singapore and the Silk Road of the Sea, 1300–1800। NUS Press। পৃষ্ঠা 155–156। আইএসবিএন 978-9971-69-574-3।
- ↑ "Singapore – Precolonial Era"। U.S. Library of Congress। সংগ্রহের তারিখ ১৮ জুন ২০০৬।
- ↑ John N. Miksic (২০১৩)। Singapore and the Silk Road of the Sea, 1300_1800। NUS Press। পৃষ্ঠা 155–163। আইএসবিএন 978-9971-69-574-3।
- ↑ "Singapura as "Falsa Demora""। Singapore SG। National Library Board Singapore।
- ↑ Afonso de Albuquerque (২০১০)। The Commentaries of the Great Afonso Dalboquerque, Second Viceroy of India। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 73। আইএসবিএন 978-1-108-01154-9।
- ↑ ক খ Borschberg, P. (২০১০)। The Singapore and Melaka Straits. Violence, Security and Diplomacy in the 17th century। NUS Press। পৃষ্ঠা 157–158। আইএসবিএন 978-9971-69-464-7।
- ↑ "Country Studies: Singapore: History"। U.S. Library of Congress। সংগ্রহের তারিখ ১ মে ২০০৭।
- ↑ ক খ গ ঘ ঙ "Historical Ties India and Thailand"।
উদ্ধৃতি
[সম্পাদনা]- Gombrich, Richard (১৯৯৫)। "Aśoka – The Great Upāsaka"। Anuradha Seneviratna। King Aśoka and Buddhism: Historical and Literary Studies। Buddhist Publication Society। আইএসবিএন 978-955-24-0065-0। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
- Guruge, Ananda W. P. (১৯৯৫)। "Emperor Aśoka and Buddhism: Unresolved Discrepancies between Buddhist Tradition & Aśokan Inscriptions"। Anuradha Seneviratna। King Aśoka and Buddhism: Historical and Literary Studies। Buddhist Publication Society। আইএসবিএন 978-955-24-0065-0।
- Ibrahim, Ahmad; Siddique, Sharon; Hussain, Yasmin (১৯৮৫)। Readings on Islam in Southeast Asia। Institute of Southeast Asian Studies। আইএসবিএন 978-9971-988-08-1।
- Strong, John S. (১৯৯৫)। "Images of Aśoka: Some Indian and Sri Lankan Legends and their Development"। Anuradha Seneviratna। King Aśoka and Buddhism: Historical and Literary Studies। Buddhist Publication Society। আইএসবিএন 978-955-24-0065-0। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
- Thapar, Romila (১৯৯৫)। "Aśoka and Buddhism as Reflected in the Aśokan Edicts"। Anuradha Seneviratna। King Aśoka and Buddhism: Historical and Literary Studies। Buddhist Publication Society। আইএসবিএন 978-955-24-0065-0। সংগ্রহের তারিখ ২৬ নভেম্বর ২০১৯।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার ভূ-প্রকৃতি বিস্তারিত ( পিডিএফ )
- ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় আর্কাইভ, আরভাইন।
- "দক্ষিণ-পূর্ব এশীয় শরণার্থী অভিজ্ঞতার ডকুমেন্টেশন", ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়, আরভিন, লাইব্রেরিতে প্রদর্শনী।
- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ভিশনস, ঐতিহাসিক ভ্রমণ কাহিনীর একটি সংগ্রহ কর্নেল বিশ্ববিদ্যালয় গ্রন্থাগার ডিজিটাল সংগ্রহ
- www.southeastasia.org আসিয়ান ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট
- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার টাইম ল্যাপস ভিডিও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার টাইম ল্যাপস ভিডিও
- আর্ট অফ আইল্যান্ড সাউথইস্ট এশিয়া, দ্য মেট্রোপলিটন মিউজিয়াম অফ আর্ট থেকে একটি পূর্ণাঙ্গ প্রদর্শনী ক্যাটালগ
- দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার একটি সংক্ষিপ্ত ইতিহাস [তারিখের তথ্য]