ত্রিশূর জেলা

স্থানাঙ্ক: ১০°৩১′ উত্তর ৭৬°১৩′ পূর্ব / ১০.৫২° উত্তর ৭৬.২১° পূর্ব / 10.52; 76.21
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ত্রিশূর জেলা
ত্রিচূড় জেলা
কেরালার জেলা
ত্রিশূর পূরম
ত্রিশূর পূরম
ডাকনাম: শ্রীশিবপুরম
ত্রিশূর জেলার অবস্থান
স্থানাঙ্ক: ১০°৩১′ উত্তর ৭৬°১৩′ পূর্ব / ১০.৫২° উত্তর ৭৬.২১° পূর্ব / 10.52; 76.21
রাষ্ট্র ভারত
রাজ্যকেরল
সদরত্রিশূর
সরকার
 • জেলা সমাহর্তাসি শনবাস আইঅএস[১]
 • এস পি (শহর)আর আদিত্য আইপিএস
 • এস পি (গ্রামীণ)আর বিশ্বনাথ, আইপিএস
 • বিভাগীয় পুলিশ আধিকারিক, ত্রিশূরকুন্দ্র শ্রীনিবাস আইএফএস
আয়তন
 • মোট৩,০৩২ বর্গকিমি (১,১৭১ বর্গমাইল)
জনসংখ্যা (২০১১)[২]
 • মোট৩১,২১,২০০
 • জনঘনত্ব১,০০০/বর্গকিমি (২,৭০০/বর্গমাইল)
ভাষা
 • দাপ্তরিকমালয়ালম, ইংরাজি
সময় অঞ্চলভারতীয় প্রমাণ সময় (ইউটিসি+০৫:৩০)
যানবাহন নিবন্ধনKL08 (কেএল০৮),
KL45 (কেএল৪৫),
KL46 (কেএল৪৬),
KL47 (কেএল৪৭),
KL48 (কেএল৪৮),
KL64 (কেএল৬৪),
KL75 (কেএল৭৫)
ওয়েবসাইটthrissur.nic.in

ত্রিশূর জেলা হলো দক্ষিণ ভারতে অবস্থিত কেরল রাজ্যের ১৪ টি জেলার একটি জেলা৷ জেলাটির জেলাসদর ত্রিশূর শহরে অবস্থিত৷

মানচিত্র
ত্রিশূর জেলা

কেরালার মধ্যাংশে অবস্থিত এই জেলাটির মোট ক্ষেত্রফল ৩,০৩২ কিমি (১,১৭১ মা) এবং সমগ্র কেরালার জনসংখ্যার ৯.৩৪ শতাংশ লোক এই জেলায় বাস করেন৷

ত্রিশূর জেলার উত্তর ও পূর্ব দিকে রয়েছে পালঘাট জেলা, উত্তর-পশ্চিম দিকে রয়েছে মালাপ্পুরম জেলা, দক্ষিণ দিকে রয়েছে এর্নাকুলাম জেলা, দক্ষিণ-পূর্ব দিকে রয়েছে তামিলনাড়ু জেলার কোয়েম্বাটুর জেলা৷ জেলাটির পশ্চিম দিকে রয়েছে আরব সাগর এবং পশ্চিমপ্রান্তে রয়েছে পশ্চিমঘাট পর্বতমালা৷

১৯৪৯ খ্রিস্টাব্দের ১লা জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে জেলাটি গঠিত হয়৷ ত্রিশূর কেরালার সাংস্কৃতিক রাজধানী নামে অধিক পরিচিত এছাড়া পূরম-এর জন্য জেলাটি উল্লেখযোগ্য৷ জেলাটিতে রয়েছে একাধিক পূরাতন মন্দির, মসজিদ এবং গির্জা৷ কেরালার বর্ণময় মন্দিরভিত্তিক অনুষ্ঠানগুলির মধ্যে ত্রিশূর পূরম উল্লেখযোগ্য৷

নামকরণ[সম্পাদনা]

ত্রিচূড় বা ত্রিশূর (ত্রিশিব পেরূর) নামটি এসেছে তামিল-মালয়ালম শব্দবন্দ 'তিরু-শিব-পেরূর' থেকে, যার বাংলা অর্থ করলে হয় "ভগবান শিবের নামাঙ্কিত শহর"৷ প্রাচীন কালে ত্রিশূর "বৃষভদ্রীপুরম" নামে পরিচিত ছিলো আবার তামিল ভাষায় এটি "তেন কৈলাশম" বা দক্ষিণ কৈলাস নামেও পরিচিত ছিলো৷ [৩] আবার আরেকটি মতানুসারে ত্রিশূর (ত্রিশিব পেরূর) নামটি এসেছে মালয়ালম শব্দবন্দ 'ত্রি-শিব-পেরূর' থেকে, যার বাংলা অর্থ করলে হয় "শিবের নামে নামাঙ্কিত তিনটি শহর", এর সপক্ষে নির্দেশিত তিনটি শিবমন্দির হলো, বড়কুনাথন শিব মন্দির, পুঙ্কুন্নম শিব মন্দির বা অশোকেশ্বর শিব মন্দির এবং ইরাত্তচিরা শিব মন্দির৷ [৪] ১৯৯০ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত সরকারিভাবে এই জেলাটি ইঙ্গবিকৃত শব্দ ত্রিচূড় নামে পরিচিত ছিলো পরে কেরল সরকার স্থানীয় নামে নামস্থানান্তর ঘটায়৷

ইতিহাস[সম্পাদনা]

১৮১৬ খ্রিস্টাব্দে জন গুল্ডের তৈরী বড়কুনাথন মন্দির সহ ত্রিশূর শহরের মানচিত্র

বহু পুরাতন যুগ থেকেই ত্রিশূর জেলা দক্ষিণ ভারতের বৃহত্তর রাজনৈতিক ইতিহাসের অংশ ছিলো৷ স্বাধীনতার পূর্ব থেকে ১৯৫৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি এই জেলাটি মাদ্রাজ প্রদেশের অংশ হওয়ার দরুন এখানে বহু তামিল পরিবারের বাস রয়েছে৷ কেরালার পালঘাট এবং ত্রিশূর এই দুটি জেলা বহু তামিল ব্রাহ্মণদের বাসভূমি৷ জেলাটির প্রাচীন রাজনৈতিক ইতিহাস সঙ্গম সময়কালীন চের সাম্রাজ্যের সঙ্গে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত৷ এই চের রাজারা কেরালা বিস্তৃত অঞ্চলে রাজত্ব করতেন, তাদের রাজধানী ছিলো বঞ্চি শহরে৷ বর্তমান সমগ্র ত্রিশূর জেলাটিই পুরাতন চের সাম্রাজ্যের অংশ ছিলো৷ প্রাচীন ও মধ্যযুগীয় সময়কালে কেরালার বিভিন্ন অংশের সাথে বহির্বেশ্বের যোগাযোগ ও ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধিতে এই জেলাটির অবদান অপরিসীম৷ [৫] ব্যবসায়িক উপলক্ষ্যে ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দে পেরিয়ার নদীকে কেন্দ্র করে কোচিতে বন্দর গড়ে তোলা হয়৷ [৬]

প্রাচীন "ভারতের বৃহত্তর বাণিজ্যক্ষেত্র" হওয়ার জন্য কোদুঙ্গালুরে ছিলো উত্তর মালাবারের ধনৈশ্বর্যবর্ধনকারী তিনটি সম্প্রদায়েরই আবাসস্থল৷ এই তিনটি সম্প্রদায় হলো যথাক্রমে খ্রিস্টান, ইহুদি এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বী বাসিন্দারা৷ খ্রিস্টীয় নবম থেকে দ্বাদশ শতাব্দীর মধ্যে ত্রিশূর জেলার ইতিহাস মহোদয়পুরমের কুলশেখর"দের কীর্তি দ্বারা সজ্জিত আবার খ্রিস্টীয় দ্বাদশ শতাব্দী পর থেকে এই অঞ্চলের ইতিহাসে কোচিন রাজবংশ[৭] বা "পেরুম্বদপু স্বরূপম"-দের উত্থান ও উত্তোরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি আখ্যান লিপিবদ্ধ৷[৮][৯][১০]

১৭৯০ খ্রিস্টাব্দে সক্তন তম্পুরাম নামে পরিচিত রাজা রামবর্ম্মা (১৭৯০–১৮০৫) কোচিনের রাজপদে অধিরূঢ় হন৷ প্রসঙ্গত এই শাসকের সমর্থনেই ব্রিটিশরা এই অঞ্চলে আনাগোনা শুরু করে ও কোচিন তথা ত্রিচূড়ের(ত্রিশূর) আধুনিক যুগের সূত্রপাত ঘটে৷ বংশানুক্রমে নাইয়ার সেনাধ্যক্ষ পদে অধীষ্ট থেকে রাজকার্য সম্পন্ন করার যুগের অবসান হয় সক্তন তম্পুরামের সিংহাসন দখলের পরই৷ নাইয়ারদের পদদখল ছাড়াও ত্রিচূড় মূলত আরো যেদুটি সামাজিক সমস্যায় জর্জরিত ছিলো সেগুলি হলো নাম্বুদ্রী ব্রাহ্মণ ও রাজবংশজ মেনোন সম্প্রদায়৷ ত্রিশূর তালুকের একটি বড় অংশ বহুদিন যাবৎ যোগ্যাদ্রীপ্পড়দের অধীনে ছিলো, তারা ছিলেন বড়কুনাথন ও পেরুমানম দেবস্বোম মন্দিরের পুরোহিত তথা ধর্মযাজক সম্প্রদায়৷

অষ্টাদশ শতাব্দীর শুরুর দিকে সারা ভারতজুড়ে উত্থিত হওয়া জাতীয়তাবাদ এবং স্বদেশিকতা এই জেলাতেও যথেষ্ট পরিমাণে প্রভাব বিস্তার করে এবং রাজনৈতিক স্পর্শকাতরতা বৃদ্ধি করে। ত্রিশূর জেলা সারা ভারতে অস্থিরতা অন্ধকার দূরীকরণে অন্যতম পথিকৃৎ হিসেবে পরিচিত। জাতীয় আন্দোলন গুলির মধ্যে গুরুভায়ুর সত্যাগ্রহ আন্দোলন কি ছিল চিরস্মরণীয়। [১১]

জনতত্ত্ব[সম্পাদনা]

ঐতিহাসিক জনসংখ্যা
বছরজন.ব.প্র. ±%
১৯০১৬,৮৩,২৬৬—    
১৯১১৭,৬৯,৭০২+১.২%
১৯২১৮,১৩,৭৫৮+০.৫৬%
১৯৩১৯,৯৩,৯১৩+২.০২%
১৯৪১১১,৫৪,৫৯৮+১.৫১%
১৯৫১১৪,০৩,১৫০+১.৯৭%
১৯৬১১৬,৮৮,৩৩৩+১.৮৭%
১৯৭১২১,২৮,৮৭৭+২.৩৫%
১৯৮১২৪,৩৯,৬৩৩+১.৩৭%
১৯৯১২৭,৩৭,৩১১+১.১৬%
২০০১২৯,৭৪,২৩২+০.৮৩%
২০১১৩১,২১,২০০+০.৪৮%
উৎস:[১২]

Source: Official Statistics 2007[১৩]

জেলা ত্রিশূর
ক্ষেত্রফল ৩,০২৭
জনসংখ্যা ৩১,২১,২০০
পুরুষ ১৪,৮০,৭৬৩
নারী ১৬,৪০,৪৩৭
লিঙ্গানুপাত : প্রতি হাজার পুরুষে নারীর সংখ্যা ১,০৯২
জনঘনত্ব ১,০৩১
ক্যাপিটা প্রতি আয় (ভারতীয় মুদ্রায়) ২১,৩৬২
সাক্ষরতার হার ৯৫.০৮%; পুরুষ ৯৬.৭৮%; নারী ৯৩.৫৬%
উপকূল রেখা (কিলোমিটারে) ৫৪
জলাভূমি ক্ষেত্রফল (হেক্টরে) ৫,৫৭৩
বনভূমির ক্ষেত্রফল (হেক্টরে) ১,০৩,৬১৯

২০১১ খ্রিস্টাব্দে ভারতের জনগণনা অনুসারে ত্রিশূর জেলার জনসংখ্যা ছিল ৩১,২১,২০০ জন,[১৪] যা এশিয়ার মঙ্গোলিয়া রাষ্ট্রের[১৫] বা আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের আইওয়া রাজ্যের জনসংখ্যার সমতুল্য। [১৬] ঐ বছর ভারতের ৬৪০ টি জেলার মধ্যে এই জেলাটি জনসংখ্যার বিচারে ১১৩তম স্থান অধিকার করেছে। [১৪] ২০০১ থেকে ২০১১ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে ত্রিশূর জেলার জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৫৮ শতাংশ।[১৪] কেরালা এর্নাকুলাম জেলার পর নগরায়নের বিচারে দ্বিতীয় অধিক নগরায়ন জেলাটির নাম হল ত্রিশূর জেলা। [১৭]

ধর্ম[সম্পাদনা]

ত্রিশূর জেলায় বসবাসরত ভিন্ন ধর্মাবলম্বী
ধর্ম শতাংশ
হিন্দু
  
৫৮.৪%
খ্রিষ্টান
  
২৪.৩%
মুসলিম
  
১৭.১%
অন্যান্য
  
০.২%
ধর্মীয় অনুপাত
উৎস:[১৮]
মহা শিবরাত্রির দিন বড়কুনাথন মন্দিরের উদযাপন
গুরুভায়ুর মন্দিরের মূল প্রবেশ পথ

ত্রিশূর জেলার সংখ্যাগরিষ্ঠতার সহিত ৫৮.৪০ শতাংশ মানুষ হিন্দু ধর্মাবলম্বী এছাড়াও সংখ্যালঘু খ্রিস্টান এবং মুসলিম ধর্মাবলম্বীও রয়েছেন।

হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে মূলত রয়েছেন নাইয়ার এবং এলব সম্প্রদায়ের লোক৷ অম্বলবাসী ও ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের মধ্যে রয়েছেন স্থানীয় নাম্বুদ্রী ও নবাগত আইয়ার ও গৌড় সারস্বত ব্রাহ্মণ-এর মতো পরিযায়ী সম্প্রদায়ও৷ জেলাটির ১২ শতাংশের মতো জনসংখ্যা তফশিলি জাতি সংরক্ষণের আওতাভুক্ত, যাদের মধ্যে সিংহভাগই হিন্দু সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷

এই জেলায় অবস্থিত খ্রিস্টানরা হলেন মূলত ক্যাথলিক, সাইরো মালাবার চার্চ, লাতিন মালঙ্করা অর্থোডক্স সিরীয় চার্চ এবং চেলডীয় সিরীয় চার্চ সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত৷ ক্যাথলিকরাই জেলার খ্রিস্টানদের ৯০ শতাংশ৷ জেলার উত্তর প্রান্তে অবস্থিত কুন্নমকুলাম শহরটি অর্থোডক্স, জেকবীয় ও মার্থোমীয় খ্রিস্টানদের মূল কেন্দ্রস্থল৷

মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকেরা জেলার উপকূলভাগে উত্তর দিকে পুণ্যায়ুরকুলাম থেকে দক্ষিণে আলিকট পর্যন্ত অঞ্চলে অধিক পরিমাণে বসবাস করেন৷ এছাড়া তারা গুরুভায়ুর, চাবঘাট অঞ্চলেও যথেষ্ট পরিমাণে বাস করেন৷ কোদুঙ্গালুর, কৈপমঙ্গলম এবং নাত্তিকা অঞ্চলে সুন্নি মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ৷

ভূগোল[সম্পাদনা]

ত্রিশূর জেলার নদী ও হ্রদ

ত্রিশূর জেলাটি ভারতের দক্ষিণ পশ্চিম দিকে কেরালা রাজ্যের মধ্যভাগে (১০°৩১′ উত্তর ৭৬°১৩′ পূর্ব / ১০.৫২° উত্তর ৭৬.২১° পূর্ব / 10.52; 76.21) অক্ষাংশে অবস্থিত। জেলাটি পূর্ব থেকে পশ্চিম দিকে ঢালু এবং অধিকাংশ ভূমিই সমুদ্রতল থেকে ৫০ মিটার উচ্চতার মধ্যে অবস্থিত। পশ্চিমঘাট পর্বতমালার ঢাল বরাবর পশ্চিম থেকে পূর্ব দিকে ঢালু এই জেলাটির ভূমিরূপ তিনটি প্রাকৃতিক বিভাগে ভাগ করা যায় যথা: উচ্চভূমি সমতল এবং সমুদ্রতল। জায়গাটির সর্বোচ্চ শৃঙ্গ হল করিমালা গোপুরম, যা পালঘাট জেলা বরাবর পরম্বিকুলাম বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যর দিকে অবস্থিত।

এই জেলায় প্রবাহিত মূল নদীগুলি হলো; পেরিয়ার, চালাকুড়ি, করুবণ্ণুর, কুরুমালী এবং ভরতপ্পি(নিলা) নদী৷ প্রতিটি নদীই পূর্বদিকে অবস্থিত পশ্চিমঘাট পর্বতমালা থেকে সৃষ্টিলাভ করে পশ্চিমবাহিনী হয়ে আরব সাগরে পতিত হয়েছে৷ এছাড়া জেলাটিতে উক্ত নদীগুলি একিধিক উপনদীও প্রবাহিত৷ এখানে চালাকুড়ি নদীতে রয়েছে অধীরপিল্লী জলপ্রপাত, যা ভারতীয় নায়াগ্রা নামে পরিচিত এবং তৎসংলগ্ন অভয়ারণ্য৷

আবহাওয়া[সম্পাদনা]

জেলাটির আবহাওয়া উষ্ণ আর্দ্র উপক্রান্তীয় প্রকৃতির, গ্রীষ্মকাল অধিক উষ্ণ এবং বর্ষাকালে প্রচুর বৃষ্টিপাত হয়ে থাকে। যে দুটির গড় বার্ষিক বৃষ্টিপাত ৩,০০০ মিমি (১২০ ইঞ্চি)। মার্চ মাস থেকে মে মাস অবধি গ্রীষ্মকাল এবং জুন মাস থেকে সেপ্টেম্বর মাস অব্দি মৌসুমি বায়ুর প্রভাব লক্ষ্য করা যায়। ডিসেম্বর মাস থেকে ফেব্রুয়ারি মাস অবধি শীতকাল বিরাজ করে এবং ডিসেম্বর মাসের শেষ থেকে বৃষ্টিপাত বন্ধ হলে আবহাওয়া শুষ্ক প্রকৃতির হয়।

প্রশাসন[সম্পাদনা]

ত্রিশূর জেলার তালুক

জেলাটি দুটি মহকুমায় বিভক্ত এগুলি হল, ত্রিশূর এবং ইরিঞ্জালকুটা। প্রতিটি মহকুমায় মহকুমা শাসক বা রেভিনিউ ডিভিশনাল অফিসার এর অধীনে।

  • ত্রিশূর মহাকুমার তালুক গুলি হল: ত্রিশূর, চাওঘাট, তালপিল্লী, কুন্নকুলাম
  • ইরিঞ্জালকুটা মহাকুমার তালুক গুলি হল: মুকুন্দপুরম, চালাকুড়ি, কোদুঙ্গালুর

ত্রিশূর জেলার চারটি প্রশাসনিক স্তর রয়েছে:

  • তালুক এবং জেলা প্রশাসন, যা কেরালা সরকারের অধীন
  • পঞ্চায়েত প্রশাসন যা স্থানীয় প্রশাসনের অধীনে।
  • লোকসভা নির্বাচন কেন্দ্র, যা ভারত সরকারের অধীন।
  • রাজ্যসভা নির্বাচন কেন্দ্র যা কেরালা সরকারের অধীন।
তালুক ও সদর
ত্রিশূর
ত্রিশূর
মুকুন্দপুরম
ইরিঞ্জালকুটা
কোদুঙ্গালুর
কোদুঙ্গালুর
চাওঘাট
চাওঘাট
তালপিল্লী
বড়কাঞ্চেরি
চালাকুড়ি
চালাকুড়ি
কুন্নকুলাম
কুন্নকুলাম
পুরসভা সমূহ
কুন্নকুলাম
চালাকুড়ি
কোদুঙ্গালুর
চাওঘাট
গুরুভায়ুর
ইরিঞ্জালকুটা
বড়কাঞ্চেরি

ত্রিশূর নগর নিগম হইল এই জেলার একমাত্র নগর নিগম। জেলাটিতে অবস্থিত সাতটি তালুকে মোট ২৫৫ টি গ্রাম রয়েছে।

রাজনীতি[সম্পাদনা]

ত্রিশূর জেলায় রয়েছে তেরোটি বিধানসভা কেন্দ্র এবং তিনটি লোকসভা কেন্দ্র।[১৯][২০][২১][২২]

ত্রিশূর লোকসভা কেন্দ্র[সম্পাদনা]

ক্রমিক নির্বাচন কেন্দ্র সদস্য দল জোট
গুরুভায়ুর কে ভি আব্দুল কাদের সিপিআই(এম)       এলডিএফ
মনলুর মুরলী পেরুনেল্লি সিপিআই(এম)       এলডিএফ
ওল্লুর কে রাজন সিপিআই       এলডিএফ
ত্রিশূর ভি এস সুনীল কুমার সিপিআই       এলডিএফ
নাট্টিকা গীতা গোপী সিপিআই       এলডিএফ
ইরিঞ্জালকুটা কে ইউ অরুণন সিপিআই(এম)       এলডিএফ
পুদুঘাট সি রবীন্দ্রনাথ সিপিআই(এম)       এলডিএফ

আলাতুর লোকসভা কেন্দ্র[সম্পাদনা]

ক্রমিক নির্বাচন কেন্দ্র সদস্য দল জোট
চেলকরা ইউ আর প্রদীপ সিপিআই(এম)       এলডিএফ
কুন্নমকুলাম এ সি মৈদীন সিপিআই(এম)       এলডিএফ
১০ বড়কাঞ্চেরি অনিল আক্করা জা কং       ইউডিএফ

চালাকুড়ি লোকসভা কেন্দ্র[সম্পাদনা]

ক্রমিক নির্বাচন কেন্দ্র সদস্য দল জোট
১১ কৈপমঙ্গলম ই টি টাইসন সিপিআই       এলডিএফ
১২ চালাকুড়ি বি ডি দেবসি সিপিআই(এম)       এলডিএফ
১৩ কোদুঙ্গালুর ভি আর সুনীল কুমার সিপিআই       এলডিএফ

শিল্প[সম্পাদনা]

ত্রিশূর যন্ত্রচালিত তাঁত শিল্প এবং টেক্সটাইল শিল্পের জন্য বিখ্যাত। জেলাটির আলগপ্পানগরে অবস্থিত "আলগপ্পা টেক্সটাইল", পুল্লাড়িতে অবস্থিত "কেরালা লক্ষী মিল", অথানিতে অবস্থিত "রাজগোপাল টেক্সটাইলস", ত্রিশূরে অবস্থিত "সীতারাম স্পিনিং অ্যান্ড উইভিং মিলস" এবং "কুন্নাথ টেক্সটাইলস", কুরিচিকরাতে অবস্থিত "বনজ টেক্সটাইল", তানিকুড়মে অবস্থিত "ভগবতী স্পিনিং মিলস" উল্লেখযোগ্য। ত্রিশূর হোসিয়ারি দ্রব্য প্রস্তুতিতেও উল্লেখযোগ্য।

পূমালা পর্বত থেকে তোলা একটি দৃশ্য

নারকেলের ছোবড়া থেকে দড়ি তৈরি এবং টাইলস তৈরির কারখানা গুলি স্থানীয় বাসিন্দাদের চাকুরীর যোগান দেয়। ১৯০৫ খ্রিস্টাব্দে জেলায় প্রথম গাড়ির কারখানা তৈরি হয়। পার্শ্ববর্তী বনাঞ্চল থেকে প্রাপ্ত গাছের গুড়ি থেকে ত্রিশূর এবং চালাকুড়ি শহরে বনজ ও আসবাবপত্র তৈরি করা হয়। সম্প্রতি ত্রিশূরে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও ক্যানিঙের জন্য ডার্লকো ক্যানিংস এবং কায়ী প্ল্যাণ্টেশন্স ক্যানিংস কোম্পানির দুটির বড়ো শাখা চালু হয়েছে৷ নাদতরাতে অবস্থিত ত্রিশূর ফ্রুটস এণ্ড ভেজিটেবিলস মার্কেটিং সোসাইটি সফলতার সাথে চলছে৷ এছাড়া দিয়াশলাই শিল্প, ফার্মাসিউটিক্যাল, ছাপাখানা প্রভৃতি ত্রিশূরকে শিল্পোন্নত করে তুলেছে৷ ১৯৫৭ সালে রাজ্যের ত্রিশূর শহরেই খোলা হয় ইন্ডিয়ান কফি হাউজ৷

তানিকুড়মের নিকট মাদকতরাতে রয়েছে ৪০০ কালোভোল্ট ক্ষমতাযুক্ত তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র৷ এটি রাজ্যের ৩০ শতাংশের অধিক বৈদ্যুতিক চাহিদা পূরণ করে এবং উত্তর কেরালায় মুখ্য তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভূমিকা পালন করে৷ ত্রিশূর শহরের দক্ষিণ প্রান্তে অবস্থিত অভিনিসেরি গ্রামটি খাদিবস্ত্র ও গ্রামীণ শিল্পের কেন্দ্র৷

দর্শনীয় স্থান[সম্পাদনা]

ত্রিশূর শহর থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত চিম্মনি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
অধীরপিল্লী জলপ্রপাত
  • অধীরপিল্লী জলপ্রপাত (ত্রিশূর শহর থেকে ৬৩ কিমি (৩৯ মা) দূরে): শোলায়র পর্বতের ওপর ৮০ ফুট উচ্চতায় অবস্থিত জলপ্রপাতটি একটি পরিচিত পিকনিকের স্থান৷ ড্রিম ওয়ার্ল্ড এবং সিলভারস্টর্ম নামে নিকটেই দুটি এমিউমেণ্ট পার্ক রয়েছে৷
  • বাড়চাল জলপ্রপাত : অধীরপিল্লী থেকে অনতিদূরত্বে অবস্থিত চালাকুড়ি নদীর নিকট ঘনজঙ্গলে এই জলপ্রপাতটি অবস্থিত৷
  • পুন্নতুরকোট্টা হস্তী অভয়ারণ্য (শহর থেকে২৩ কিমি (১৪ মা) দূরে অবস্থিত): এটি বিশ্বের বৃহত্তম হস্তী অভয়ারণ্য, যেখানে বর্তমানে রয়েছে ৬০টির অধিক হাতি৷
  • পীচি বাঁধ: (শহর থেকে ২০ কিমি (১২ মা) দূরে অবস্থিত) এটি অন্যতম দর্শনীয় স্থান৷ নিকটেই রয়েছে পীচি বালানি বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্য
  • পূমালা বাঁধ: এটি একটি প্রাকৃতিক বাঁধ ও দর্শনীয় স্থল৷ এখানে একটি সেচখালও রয়েছে৷
  • চাওঘাট সমুদ্রসৈকত
  • বলানি বাঁধ (শহর থেকে ২৪ কিমি (১৫ মা) দূরে অবস্থিত): এটি একটি উল্লেখ্য পিকনিকের স্থান৷
  • স্নেহতীরম সমুদ্রসৈকত: এটি শহর থেকে প্রায় ২৩ কিমি (১৪ মা) দূরে নাট্টিকা গ্রামের নিকট অবস্থিত৷
  • চিম্মনি বাঁধ (শহর থেকে ৩৫ কিমি (২২ মা) দূরে অবস্থিত)
  • কেরল কলামণ্ডলম (৩০ কিমি (১৯ মা)): প্রাচীন কলা ও সংস্কৃতিকে জীবিত রাখার লক্ষ্যে শ্রী বলতোল নারায়ণ মেনোন চেরুতুরুতিতে এই বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠিত করেন৷ প্রাথমিকভাবে এখানে কথাকলিমোহিনীয়াট্টম শেখানো হয়ে থাকে৷
  • কুড়লমাণিক্কম মন্দির
  • ত্রিশূর চিড়িয়াখানা (শহরকেন্দ্র থেকে ২ কিলোমিটার দূরে): ১৩.৫ একর জমির ওপর নির্মিত এই চিড়িয়াখানাটি ১৮৮৫ খ্রিস্টাব্দে চালু করা হয়৷ এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির পশু, পাখি ও সরীসৃপ৷

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "T V Anupama steps down as Thrissur collector; C Shanawaz is the new collector"Keralakaumudi Daily। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০৭-০৫ 
  2. "Official Census 2001" (পিডিএফ)। Government of Kerala। ২০০৮-১২-০২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০৯-১৮ 
  3. "THRISSUR – HISTORY"। Thrissur district website। ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৫ এপ্রিল ২০১৪ 
  4. The Indian Encyclopaedia। Books.google.com। ২০০২। আইএসবিএন 9788177552577। সংগ্রহের তারিখ ২০ জানুয়ারি ২০১৩ 
  5. "Search for India's ancient city"। BBC। ১১ জুন ২০০৬। ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  6. "History of Kochi"। Centre For Heritage Studies, India। ১৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  7. Kerala.com (২০০৭)। "Kerala History"। ১০ জানুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০০৮ 
  8. "Excavations highlight Malabar maritime heritage"। Chennai, India: The Hindu। ১ এপ্রিল ২০০৭। ৩০ এপ্রিল ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  9. "Hunting for Muziris"। Chennai, India: The Hindu। ২৮ মার্চ ২০০৪। ১৯ নভেম্বর ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  10. "Archaeologists stumble upon Muziris"। The Hindu। ৯ আগস্ট ২০১০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১০ 
  11. Pillai, Elamkulam Kunjan (১৯৭০)। Studies in Kerala History 
  12. Decadal Variation In Population Since 1901
  13. Official website of Thrissur district http://www.tsr.kerala.gov.in/barefacts.htm ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে
  14. "District Census 2011"। Census2011.co.in। ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০ 
  15. US Directorate of Intelligence। "Country Comparison:Population"। ২৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-১০-০১Mongolia 3,133,318 July 2011 est. 
  16. "2010 Resident Population Data"। U. S. Census Bureau। ২০১১-০৮-২৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১১-০৯-৩০Iowa 3,046,355 
  17. http://www.censusindia.gov.in/2011-prov-results/paper2-vol2/data_files/kerala/Chapter_IV.pdf
  18. https://www.censusindia.gov.in/2011census/c-01.html
  19. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০২০ 
  20. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০২০ 
  21. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ২৬ ডিসেম্বর ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০২০ 
  22. "Delimitation of Parliamentary and Assembly Constituencies Order, 2008" (পিডিএফ)The Election Commission of India। ১৭ ডিসেম্বর ২০১৮। পৃষ্ঠা 30। ৩ অক্টোবর ২০১৮ তারিখে মূল (PDF) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৪ মে ২০১৯ 

টেমপ্লেট:কেরালা