তোফায়েল আহমেদ (লক্ষ্মীপুরের বীর প্রতীক)

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তোফায়েল আহমেদ
মৃত্যু২০০২
জাতীয়তাবাংলাদেশী
নাগরিকত্ব পাকিস্তান (১৯৭১ সালের পূর্বে)
 বাংলাদেশ
পরিচিতির কারণবীর প্রতীক

তোফায়েল আহমেদ (জন্ম: অজানা, মৃত্যু: ২০০২ ) বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতা যুদ্ধে তার সাহসিকতার জন্য বাংলাদেশ সরকার তাকে বীর প্রতীক খেতাব প্রদান করে। [১]

জন্ম ও শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

তোফায়েল আহমেদের জন্ম লক্ষ্মীপুর জেলার সদর উপজেলার মিরপুর গ্রামে। তার বাবার নাম বসিরউল্লাহ খান এবং মায়ের নাম আরেফাতুন নেছা। তার স্ত্রীর নাম আয়েশা খাতুন। তাদের সাত মেয়ে, দুই ছেলে।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

তোফায়েল আহমেদ চাকরি করতেন পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে। ১৯৭১ সালের জানুয়ারি মাসে দ্বিতীয় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট থেকে বদলি হয়ে তিনি অষ্টম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানিতে যোগ দেন। এর অবস্থান ছিল চট্টগ্রামে। তখন তার পদবি ছিল নায়েব সুবেদার। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে ঝাঁপিয়ে পড়েন যুদ্ধে। প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে ভারতে পুনর্গঠিত হয়ে জেড ফোর্সের অধীনে যুদ্ধ করেন। [২]

মুক্তিযুদ্ধে ভূমিকা[সম্পাদনা]

১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনায় প্রতিরোধযুদ্ধ শেষে একদল মুক্তিযোদ্ধা অবস্থান নিয়েছিলেন খাগড়াছড়ি জেলার রামগড়ে। এপ্রিলের তৃতীয় সপ্তাহে তারা খবর পেলেন, রামগড় দখলের জন্য পাকিস্তানি সেনারা সেদিকে আসছে। তখন মুক্তিযোদ্ধাদের একটি দল অবস্থান নেয় চিকনছড়ায়। এই দলে ছিলেন তোফায়েল আহমেদ। তাদের লক্ষ্য ছিল পাকিস্তান সেনাবাহিনী যাতে হেঁয়াকো থেকে রামগড়ে আসতে না পারে। ৩০ এপ্রিল বেলা একটায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী চিকনছড়ায় আক্রমণ করে। সেনারা বেশির ভাগ ছিল কমান্ডো। ঝোড়োগতিতে তারা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা অবস্থানের ভেতরে ঢুকে ১০০ গজের মধ্যে এসে অতর্কিত আক্রমণ চালায়। মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিরক্ষা তেমন সুবিধাজনক ছিল না। ফলে অতর্কিত এই আক্রমণে তারা বেশ বিপাকে পড়ে যান। তাদের পক্ষে পাকিস্তানি সেনা, বিশেষত কমান্ডোদের মোকাবিলা করা অসম্ভব হয়ে পড়ে। তারা ছিল বেপরোয়া প্রকৃতির। আক্রমণের প্রথম ধাক্কায় বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধা শহীদ ও আহত হন। এতে তাদের একাংশের মধ্যে যথেষ্ট ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। ভীতসন্ত্রস্ত মুক্তিযোদ্ধারা অধিনায়ক ও প্লাটুন কমান্ডারের নির্দেশ ছাড়াই পিছু হটতে থাকেন। এতে যাঁরা পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে প্রতিরোধ করছিলেন, তারা কিছুটা বিভ্রান্তিতে পড়ে যান। সেখানে এক প্রতিরক্ষা থেকে আরেক প্রতিরক্ষার মধ্যে যোগাযোগব্যবস্থা ছিল না। এ অবস্থায় প্রতিরোধরত মুক্তিযোদ্ধারা পিছু হটতে থাকাদের দেখে মনে করেন যে অধিনায়ক বা প্লাটুন কমান্ডারের নির্দেশেই তারা পিছু হটছেন। এরপর তারাও পিছু হটতে উদ্যত হন। বেশ কয়েকজন পিছু হটেনও। তোফায়েল আহমেদ এ সময় তার দলের সহযোদ্ধাদের নিয়ে বিপুল বিক্রমে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে মোকাবিলা করছিলেন। একপর্যায়ে দেখা গেল যুদ্ধক্ষেত্রে তার দল ছাড়া আর কেউ নেই বললেই চলে। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর বেপরোয়া আক্রমণে ক্রমশ তাদের অবস্থাও সংকটময় হয়ে পড়ে। তখন তাদেরও পশ্চাদপসরণ করা ছাড়া গত্যন্তর থাকল না। সহযোদ্ধাদের বাঁচাতে তোফায়েল আহমেদ বাধ্য হয়েই তাদের পিছু হটতে বললেন এবং তাদের নিরাপদ পশ্চাদপসরণের জন্য এ সময় তিনি নিজের জীবনের ওপর বিরাট এক ঝুঁকিও নেন। তিনি তার অস্ত্র দিয়ে গুলি করে পাকিস্তানি সেনাদের ব্যতিব্যস্ত রাখলেন। এই সুযোগে তার সহযোদ্ধারা পিছু হটে যান। শেষে তিনি একা। তখন তিনি গুলি বন্ধ করে পাকিস্তানি সেনাদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য দূরে ঢিল ছুড়তে থাকলেন। পাকিস্তানিরা শব্দ লক্ষ্য করে গোলাগুলি করছে। তিনি পিছু হটছেন। কিন্তু বেশি দূর যেতে পারলেন না। হঠাৎ গোলার স্প্লিন্টারের আঘাতে মারাত্মক আহত হয়ে গড়িয়ে পড়লেন পাহাড়ি ছড়ায়। [৩]

পুরস্কার ও সম্মাননা[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "দৈনিক প্রথম আলো, "তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না"| তারিখ: ২৭-০৬-২০১২"। ২০১৪-০৯-০৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১৪-০১-০৩ 
  2. একাত্তরের বীরযোদ্ধাদের অবিস্মরণীয় জীবনগাঁথা। প্রধান কার্যালয়, ১১০ মতিঝিল বাণিজ্যিক এলাকা, ঢাকা: জনতা ব্যাংক লিমিটেড। জুন ২০১২। পৃষ্ঠা ৩৫১। আইএসবিএন 978-984-33-5144-9 
  3. একাত্তরের বীরযোদ্ধা, খেতাব পাওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বীরত্বগাথা (দ্বিতীয় খন্ড)। প্রথমা প্রকাশন। মার্চ ২০১৩। পৃষ্ঠা ২৪০। আইএসবিএন 9789849025375 

পাদটীকা[সম্পাদনা]

বহি:সংযোগ[সম্পাদনা]