বিষয়বস্তুতে চলুন

তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ড

স্থানাঙ্ক: ২৩°৪৩′৩৩″ উত্তর ৯০°২৪′১২″ পূর্ব / ২৩.৭২৫৯° উত্তর ৯০.৪০৩৪° পূর্ব / 23.7259; 90.4034
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তোফাজ্জল হোসেন হত্যা
মব জাস্টিসবাংলাদেশ ছাত্রলীগের সহিংসতা অংশ
তোফাজ্জল হোসেন
স্থানফজলুল হক মুসলিম হল, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
স্থানাংক২৩°৪৩′৩৩″ উত্তর ৯০°২৪′১২″ পূর্ব / ২৩.৭২৫৯° উত্তর ৯০.৪০৩৪° পূর্ব / 23.7259; 90.4034
তারিখ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
হামলার ধরনগণপিটুনি, হত্যা, মব জাস্টিস
ভুক্তভোগীতোফাজ্জল হোসেন
হামলাকারী দলফজলুল হক মুসলিম হল শিক্ষার্থী, ছাত্রলীগ
সন্দেহভাজন হামলাকারী দল
৬ জন[]
মামলাচলমান (সিআরপিসির ১৬৪ সেকশনের অধীনে জমা দেওয়া স্বীকারোক্তি , ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের তদন্তাধীন মামলা)[]
কারণমোবাইল চুরির সন্দেহ

তোফাজ্জল হোসেন হত্যাকাণ্ড বলতে এক মানসিকভাবে অসুস্থ ব্যক্তিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরদের দ্বারা খুনের ঘটনাকে বোঝানো হয়েছে।[] ২০২৪ সালের ১৮ সেপ্টেম্বরে ফজলুল হক মুসলিম হলে ঘটনাটি ঘটে।[][][] তাকে মোবাইল চুরির অভিযোগে আটক করা হয় এবং পরে শিক্ষার্থীরা তাকে নির্মমভাবে মারধর করে, যার ফলে তার মৃত্যু হয়।[][] হত্যাকাণ্ডের প্রধান আসামি আটককৃত ছয়জনই ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য ছিলো।[]

প্রেক্ষাপট

[সম্পাদনা]

তোফাজ্জল হোসেন বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার কাঁঠালতলী ইউনিয়নে জন্মলাভ করেন।[] তিনি সরকারি সোহরাওয়ার্দী কলেজে হিসাববিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর করেন।[১০] তার পিতার নাম আব্দুর রহমান, তিনি ২০১৬ সালে একটি সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান।[১১] একই বছর তার মা বিউটি বেগম ক্যান্সারে মারা যান।[১১] তার বড় ভাই নাসির উদ্দিন, যিনি বাংলাদেশ পুলিশের একজন সাব-ইন্সপেক্টর, ২০২৩ সালের ৭ এপ্রিল ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।[১০] তার চাচাতো ভাইদের মতে এসব মৃত্যুর পর তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ঘুরে বেড়াতেন এবং শিক্ষার্থীদের দেওয়া খাবার গ্রহণ করতেন।[১১]

ক্রিকেট ম্যাচ চলাকালীন ছয়টি মোবাইল চুরির ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তোফাজ্জল হোসেনকে আটক করে। হোসেনকে ফজলুল হক মুসলিম হলে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে তাকে শারীরিক নির্যাতন ও নির্যাতন করা হয়।[১১][১২] ছাত্রলীগের তিনজন নেতা এবং দুই সক্রিয় সদস্যসহ ছাত্ররা তাকে ক্রিকেট ব্যাট ও স্টাম্প ব্যবহার করে আহত করে।[১৩][১৪] এসময়ে তাকে ক্রিকেট ব্যাট ও স্টাম্প দিয়ে আঘাত করা হয়। কিছুক্ষণ পর তোফাজ্জলকে হলের ক্যান্টিন থেকে খাবার সরবরাহ করা হয়, কিন্তু তার খাওয়া শেষ করার পরপরই এক্সটেনশন বিল্ডিংয়ের গেস্টরুমে নিয়ে সহিংসতা চালানো হয়।[১১] শিক্ষার্থীরা হোসেনের স্বজনদের সঙ্গে যোগাযোগ করে টাকা দাবি করে।[১৫] একটি প্রক্টর দল ঘটনাস্থলে পৌঁছালেও হোসেনের তাৎক্ষণিক মুক্তি নিশ্চিত করতে পারেনি।[১৬] হোসেনের অবস্থার অবনতি হলে তাকে প্রক্টরদের কাছে হস্তান্তর করা হয়, যারা তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে নিয়ে গেলে সেখানে পৌঁছালে তাকে মৃত ঘোষণা করা হয়।[১৭]

প্রতিক্রিয়া

[সম্পাদনা]

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্ত্বাবধায়ক উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী তোফাজ্জল হোসেনের মৃত্যু ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আরেকটি মব জাস্টিসে মৃত্যুর ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন।[১৮] সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না অবশ্য পরবর্তী ব্যবস্থা না নিয়ে শুধুমাত্র দুঃখ প্রকাশ করার জন্য উপদেষ্টার সমালোচনা করেছেন।[১৮] আরেক আইনজীবী জ্যোতির্ময় বড়ুয়া মব জাস্টিস নিয়ে মন্তব্য করেছেন,

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এই ঘটনার নিন্দা করেছে। ছাত্র সংগঠন ডেমোক্রেটিক স্টুডেন্ট অ্যালায়েন্স এবং স্টুডেন্টস অ্যাগেইনস্ট রিপ্রেশন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় উভয় স্থানে বিক্ষোভের আয়োজন করে।[১৯] বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলও এই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। গণসংহতি আন্দোলনের জোনায়েদ সাকি হত্যাকাণ্ডের সমালোচনা করেছেন এছাড়াও বাম গণতান্ত্রিক জোট অপরাধীদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানিয়েছে।[১৯][২০]

গ্রেপ্তার ও বিচার

[সম্পাদনা]

এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট অফিসের তত্ত্বাবধায়ক মোহাম্মদ আমানউল্লাহ বাদী হয়ে শাহবাগ থানায় একটি হত্যা মামলা করেন।[২১] পুলিশ ১৯ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছয় শিক্ষার্থীকে আটক করে।[১৩] হত্যাকাণ্ডে অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে তিনজন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাবেক নেতা এবং দুইজন সক্রিয় সদস্য।[২২] ২০ সেপ্টেম্বর আটককৃত ছয় শিক্ষার্থী ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।[১৪] এছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয় আইন প্রয়োগকারী কর্তৃপক্ষের কাছে অপরাধের সাথে জড়িত সন্দেহে আরও দুই শিক্ষার্থীকে হস্তান্তর করে।[২৩]

আসামিদের তালিকা

[সম্পাদনা]

ইত্তেফাক পত্রিকার বর্ণনা অনুসারে, তোফাজ্জলকে পেটানোতে প্রায় ১৫ জন ব্যক্তি অংশগ্রহণ করে।[২৪] এরা কোটা আন্দোলনেও অংশগ্রহণ করেছিলো।[২৫] এরমধ্য থেকে প্রধান ৬ আসামিকে গ্রেপ্তার করা হয়, এদের সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত ছিলো।[২৬]

গ্রেপ্তারকৃত আসামিদের তালিকা
নাম বিভাগ সেশন রাজনৈতিক দল
মো. জালাল মিয়া পদার্থবিজ্ঞান ২০১৮-১৯ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক উপসম্পাদক, ছাত্রলীগ
আল হুসাইন সাজ্জাদ ভূগোল ২০২০-২১ এনভায়রনমেন্টাল সায়েন্সের দপ্তর সম্পাদক, ছাত্রলীগ
আহসান উল্লাহ গণিত ২০১৮-১৯ ফজলুল হক মুসলিম হলের গণযোগাযোগ ও উন্নয়ন উপসম্পাদক, ছাত্রলীগ
সুমন মিয়া মৃত্তিকা পানি ও পরিবেশ ২০২১-২২ সক্রিয় কর্মী, ছাত্রলীগ
ওয়াজিবুল আলম সমুদ্রবিজ্ঞান ২০২১-২২ সক্রিয় কর্মী, ছাত্রলীগ
মো. মোত্তাকিন সাকিন শাহ পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ২০২১-২২

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. "তোফাজ্জল হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগের"দৈনিক ইনকিলাব। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  2. "Eight identified at DU, six give statements"দৈনিক প্রথম আলো। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  3. আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "চোর সন্দেহে যুবককে ধরে ভরপেট খাওয়ালেন ঢাকার ছাত্রেরা, তার পর গণপিটুনি, মৃত্যু! ক্ষোভ বাংলাদেশে"আনন্দবাজার পত্রিকাকলকাতা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  4. "Suspected thief killed in 'mass beating' at Dhaka University"Bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪We have learnt that he was mentally unstable. 
  5. "Tofazzal: The man who lost everything"Somoy TV। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  6. "Who was Tofazzal, killed at Dhaka University?"The Financial Express (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  7. "Youth suspected of theft beaten to death at DU"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  8. "Suspected thief killed in 'mass beating' at DU"The South Asian Times (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  9. "ঢাবিতে যুবককে পিটিয়ে হত্যায় ছাত্রলীগ নেতাসহ গ্রেফতার ৬"Jugantor। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৩ 
  10. Hossain, Sohrab (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "Life lost to a mindless mob"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  11. Mizan, Mashfiq; Rubel, Sirajul Islam (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "Savagery at DU: They beat him, fed him, then killed him"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  12. ঢাবি প্রতিনিধি (১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "ঢাবির হলে চোর সন্দেহে যুবককে পিটিয়ে হত্যা, মামলা করবে প্রশাসন"বাংলা ট্রিবিউন। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  13. "Mob lynching at DU: 6 students, including ex-BCL leader, arrested"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  14. "Six DU students accused of Tofazzal murder belong to Chhatra League"The Daily Observer। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  15. বরগুনা প্রতিনিধি (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "ঢাবিতে পিটিয়ে হত্যা: ২ লাখ টাকা মুক্তিপণ চাওয়া হয়েছিল, দাবি স্বজনদের"বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  16. আফ্রাদ, কুদ্দুস; মাঝি, সুমন (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "ভবঘুরেকে ভাত খাইয়ে পিটিয়ে হত্যা ছাত্রদের, খুন লিগ নেতাও"এই সময় (সংবাদপত্র)ঢাকা 
  17. নিজস্ব প্রতিবেদক (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "তিন দফায় পেটানো হয় তোফাজ্জলকে, অংশ নেন অন্তত ১৫ জন"প্রথম আলোঢাকা। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  18. Hossain, Sajjad (২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "Lynch mobs acting with impunity"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  19. "Protests erupt as two beaten to death at DU, JU"New Age। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  20. "Mob killing in DU hall: Students protest outside proctor's office"দ্য ডেইলি স্টার (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  21. "DU admin files murder case over mob lynching of youth on theft suspicion"The Business Standard (ইংরেজি ভাষায়)। ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  22. "ঢাবিতে তোফাজ্জল হত্যায় আটক পাঁচজনই ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী"যায়যায়দিন। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  23. "DU mob lynching: 'Several students' named in case, 2 handed over to police"Bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪ 
  24. "তিন দফায় অন্তত ১৫ জন মিলে পেটান তোফাজ্জলকে"ইত্তেফাক। ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২৪ অক্টোবর ২০২৪ 
  25. কালবেলা (২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪)। "আটক ছয়জনের পাঁচজনই ছাত্রলীগ ছেড়ে আন্দোলনে যোগ দেন"কালবেলা। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৩ 
  26. "ঢাবিতে তোফাজ্জল হত্যার দায় স্বীকার করা ৬ জনই ছাত্রলীগ কর্মী"Jugantor। ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-১০-২৩