বিষয়বস্তুতে চলুন

তেলেসুর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তেলেসুর
উদ্বোধন২৪ জুলাই ২০০৫; ১৯ বছর আগে (2005-07-24)
মালিকানাবলিভিয়া, ভেনেজুয়েলানিকারাগুয়ার সরকার
ভাষাস্পেনীয়
ইংরেজি
প্রধান কার্যালয়কারাকাস, ভেনেজুয়েলা
ওয়েবসাইট

তেলেসুর হল একটি লাতিন আমেরিকান টেরিস্ট্রিয়াল এবং স্যাটেলাইট সংবাদ টেলিভিশন নেটওয়ার্ক যার সদর দফতর কারাকাস, ভেনেজুয়েলায় অবস্থিত। নেটওয়ার্কটি ভেনেজুয়েলা, বলিভিয়া, কিউবা এবং নিকারাগুয়া সরকার দ্বারা পরিচালিত।[] এটি ২০০৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়।[]

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

তেলেসুরের প্রতিষ্ঠাতা ছিলেন আরাম আহারোনিয়ান, তিনি পেশায় একজন সাংবাদিক ছিলেন। তিনি কথিতভাবে ডানপন্থীদের চাপের কারণে উরুগুয়ে ছেড়েছিলেন। [] ২০১৩ সালে আহারোনিয়ান প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক পদ থেকে পদত্যাগ করেন। []

দ্য বোস্টন গ্লোবের মতে, ভেনেজুয়েলা সরকার তেলেসুরকে ৭০% তহবিল প্রদান করে,অন্যান্য বামপন্থী সরকারগুলিও নেটওয়ার্কটিকে সমর্থন করে। তেলেসুরকে "সিএনএন-এর লাতিন সমাজতন্ত্র বিরোধী প্রচার হিসেবে উল্লেখ করা হয়। [] তেলেসুর ২৪ জুলাই ২০০৫-এ চার ঘন্টার সীমিত সময়সূচীতে সম্প্রচার শুরু করে। নেটওয়ার্কটি ৩১ অক্টোবর ২০০৫ এ ২৪ ঘন্টা সম্প্রচার শুরু করে।

পৃষ্ঠপোষক দেশ

[সম্পাদনা]

বিভিন্ন লাতিন আমেরিকান দেশের সরকার এ নেটওয়ার্কটিতে অর্থায়ন করে থাকে। এর প্রাথমিক পৃষ্ঠপোষক ভেনেজুয়েলা সরকার; কিউবা, নিকারাগুয়া এবং বলিভিয়াও পৃষ্ঠপোষকতা করে। আর্জেন্টিনা এটির দ্বিতীয় প্রধান পৃষ্ঠপোষক ছিল। ২০১৬ সালে তারা 'বহুত্ববাদের' অভাবের কারণে এটিতে অর্থায়ন বন্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়।[]

৩ মার্চ ২০০৫ সালে ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি হুগো শ্যাভেজ তৎকালীন উরুগুয়ের রাষ্ট্রপতি তাবারে ভাজকুয়েজের সাথে উভয় দেশের যোগাযোগ একীকরণের বিষয়ে বেশ কয়েকটি চুক্তি স্বাক্ষর করেন, যার মধ্যে একটি হল যৌথভাবে তেলেসুর নির্মাণ এবং অর্থায়ন। চুক্তিগুলি স্বাক্ষর করার মাত্র এক বছরেরও কম সময় পরে, সেগুলি সম্পন্ন করা হয়নি, যদিও রাষ্ট্রপতি ভাজকুয়েজের দল উরুগুয়ের আইনসভা শাখায় সংখ্যাগরিষ্ঠ ছিল।[] পরবর্তীতে উরুগুয়ে নিশ্চিত করে যে এটি সে দেশের সংসদের অনুমোদন ব্যতীত তেলেসুরে অর্থায়ন করবে না। []

বিতর্ক

[সম্পাদনা]

২০০৫ সালে, তেলেসুর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পর, এটিকে লাতিন আমেরিকার বৈচিত্র্য প্রদর্শনকারী নেটওয়ার্ক হিসাবে বর্ণনা করা হয়েছিল। [] তেলেসুর "এর উচ্চ উৎপাদন মূল্য এবং লাতিন আমেরিকান মানুষের জন্য লাতিন আমেরিকা সম্পর্কে নিবিড় প্রতিবেদনের জন্য প্রশংসাও জিতেছে"। [] তবে অনেকের মতে, তেলেসুর ছিল ভেনেজুয়েলার রাষ্ট্রপতি উগো চাভেস এবং তার বলিভারিয়ান বিপ্লবের একটি প্রচারের হাতিয়ার। সমালোচকরা নেটওয়ার্কটিকে ভেনেজুয়েলার শাসনের মুখপত্র হিসাবে বর্ণনা করেন। [] [১০] [১১] [১২] [১৩] নেটওয়ার্কটির বামপন্থী মতামত রয়েছে যা এর পৃষ্ঠপোষক দেশ বলিভিয়া, কিউবা, নিকারাগুয়া, উরুগুয়ে এবং ভেনিজুয়েলার প্রতিনিধিত্ব করে। []

রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব

[সম্পাদনা]

সমালোচকরা যুক্তি দিয়েছেন যে তেলেসুর হুগো শ্যাভেজ এবং নিকোলাস মাদুরোর সরকারের একটি প্রচার নেটওয়ার্ক হিসাবে কাজ করে এবং এমন সংবাদ প্রদর্শন করে যা কিছু সরকারের জন্য সুবিধাজনক ও কিছু সরকারের জন্য বিপদজনক। [] [] [১০] [১৪] লা পাটিলা সংবাদ সংস্থা বলেছে যে তেলেসুর "প্রতিবেদনের মাধ্যমে দৃঢ়তার সাথে নির্দেশ করেছে যে ভেনেজুয়েলায় কোন মানবিক জরুরী, অভাব বা সাধারণ সংকট নেই" এবং "একটি উন্নত জীবনের সন্ধানে লক্ষ লক্ষ ভেনেজুয়েলানের দেশত্যাগের খবরকে প্রত্যাখ্যান করেছে"। [১৫]

আর্জেন্টিনার ওয়েবসাইট ইনফোবের মতে, ২০১৭ সালের ডিসেম্বরে আর্জেন্টিনায় একটি বিশাল বিক্ষোভের সময় মধ্য-ডানপন্থি আর্জেন্টিনার প্রেসিডেন্ট মাউরিসিও ম্যাক্রি (যিনি আগে ভেনিজুয়েলায় মানবাধিকার লঙ্ঘনের নিন্দা করেছিলেন) দ্বারা প্রস্তাবিত নীতির বিরুদ্ধে সংবাদ প্রচার করেছিল" [১৬] যদিও ভেনিজুয়েলায় একই বছরে রাষ্ট্রপতি নিকোলাস মাদুরোর অর্থনৈতিক নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ হয়েছিল, যেখানে ১০০ জনের মৃত্যু, হাজার হাজার মানুষ নির্বিচারে আটক এবং আহত হয়েছিল। সেসব ক্ষেত্রে, তেলেসুর ভেনিজুয়েলার ন্যাশনাল গার্ড এবং বলিভারিয়ান ন্যাশনাল পুলিশের প্রশংসা করে, বিক্ষোভকারীদেরকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে সম্পর্কিত বলে অভিযুক্ত করে এবং মাদুরোর সরকারকে শান্তির প্রবর্তক হিসেবে উল্লেখ করে।" [১৬]

অক্টোবর ২০১৮ সালে, তেলেসুরের অ্যাঙ্কর ড্যানিয়েলা ভিলম্যান নেটওয়ার্ক থেকে পদত্যাগ করেন। তিনি এক বিবৃতিতে বলেন, "তেলেসুরে নিযুক্ত কর্মীদের প্রতি 'এমন আচরণ করা হয় যেন তারা একটি রাজনৈতিক দলে কাজ করছে' এবং কর্মীদের বিদেশি নেটওয়ার্কগুলোর তুলনায় কম বেতন দেওয়া হয়। [১৭]

কৌশলগত চিত্র

[সম্পাদনা]

২০১৯ সালে ভেনিজুয়েলায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর সময়, তেলেসুর বিক্ষোভকারীদের ছবি ছড়িয়ে দিয়েছিল যে বিক্ষোভকারীরা মানবিক সহায়তাগুলো পেট্রোলে ঢেলে দিচ্ছে এবং তা পুড়িয়ে দিচ্ছে। [১৫] একটি তদন্তে প্রমাণ করা হয় যে,একটি জ্বলন্ত ট্রাকে পেট্রোল ঢালা হচ্ছিল ও তেলেসুরের করা অভিযোগ মিথ্যা ছিল। [১৮]

মানবাধিকার

[সম্পাদনা]

হিউম্যান রাইটস ওয়াচ আমেরিকার পরিচালক জোসে মিগুয়েল ভিভানকো তেলেসুর প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করেছিলেন। [১৯] ২০০৫ সালে, ভিভানকো বলেছিলেন, "এই কোম্পানির শেয়ারহোল্ডাররা কিউবার মতো একটি সরকারের অন্তর্গত যেখানে তাদের স্বাধীন মতামতের জন্য মুক্ত বাক এবং নূন্যতম সহনশীলতার কোন মৌলিক ধারণা নেই।"[১৯] [২০] হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ২০০৮ সালে ভেনেজুয়েলা সরকারের সমালোচনা করেছিল যে তারা দেশে তেলেসুর এবং অন্যান্য সরকারী মিডিয়ার উপস্থিতি জোরদার করার জন্য অন্যান্য বেসরকারি গণমাধ্যমের স্বাধীনতার উপর হস্তক্ষেপ করে। [২১]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Argentina President won't fund leftist TV network, NY Times, 29 March 2016, Retrieved on 15 April 2018.
  2. Lakshmanan, Indira (২৭ জুলাই ২০০৫)। "Channeling his energies Venezuelans riveted by president's TV show"The Boston Globe। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১২ 
  3. Rory, Carroll (২০১৪)। Comandante : Hugo Chavez's Venezuela। New York। পৃষ্ঠা 195–196। আইএসবিএন 978-0143124887 
  4. "Aram Aharonian: "Telesur no logró ser latinoamericano, sigue siendo venezolano"" (স্পেনীয় ভাষায়)। La Gaceta। ২৭ জুলাই ২০১৪। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৭ 
  5. Lakshmanan, Indira (২৭ জুলাই ২০০৫)। "Channeling his energies Venezuelans riveted by president's TV show"The Boston Globe। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১২ 
  6. Bernas, Frederick (২০১৬-০৩-২৯)। "Argentina: President Won't Fund Leftist TV Network"The New York Times (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0362-4331। সংগ্রহের তারিখ ২০২২-১২-৩০ 
  7. "Entrevista al presidente de Telesur, Andrés Izarra" ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ জুলাই ২০০৯ তারিখে NuestraAmérica.info ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৯ মার্চ ২০১৯ তারিখে, 20 January 2006 (স্পেনীয় ভাষায়) (Retrieved 18 January 2009)"NuestraAmérica.info"। Archived from the original on ২৮ মার্চ ২০১২। সংগ্রহের তারিখ ১৯ জানুয়ারি ২০০৯ 
  8. "El Parlamento discutió la integración del país a Telesur y la situación del Canal 5" Diario La República, 16 February 2006 (স্পেনীয় ভাষায়) (Retrieved 18 January 2009)
  9. Wyss, Jim (২৫ জুলাই ২০১৪)। "Venezuela's Telesur television goes bilingual with English programming"Miami Herald। ১০ জুন ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৫ 
  10. "Using oil to spread revolution"The Economist। ২৮ জুলাই ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৫ 
  11. "Chávez bid to counter Hollywood"BBC News। ৪ জুন ২০০৬। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১২ 
  12. Sreeharsha, Vinod (২২ নভেম্বর ২০০৫)। "Telesur tested by Chávez video"Christian Science Monitor। সংগ্রহের তারিখ ২৬ এপ্রিল ২০১২These clips bolster critics who claim the network is and will be a propaganda tool for Chávez. 
  13. Baggot Carter, Erin; Carter, Brett (২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২১)। "Questioning More: RT, Outward-Facing Propaganda, and the Post-West World Order": 49–78। ডিওআই:10.1080/09636412.2021.1885730 
  14. Hirst, Joel D.। "The Bolivarian Alliance and the Hugo Chavez Propaganda Machine"Council on Foreign Relations। ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুন ২০১৫ 
  15. "Periodista denuncia plagio de sus fotos para tergiversar quema de camiones en la frontera"La Patilla (স্পেনীয় ভাষায়)। ২০১৯-০২-২৫। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-০২-২৬ 
  16. "El doble estándar de los medios chavistas para cubrir la represión en Venezuela y Argentina" (স্পেনীয় ভাষায়)। Infobae। ১৮ ডিসেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ২০ ডিসেম্বর ২০১৭ 
  17. "Estas son las razones por las que renunció una periodista de Telesur"La Patilla (স্পেনীয় ভাষায়)। ১১ অক্টোবর ২০১৮। সংগ্রহের তারিখ ১২ অক্টোবর ২০১৮ 
  18. "AFP: Opositores no incendiaron vehículo con ayuda humanitaria"El Carabobeno। AFP। ১২ মার্চ ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১৩ মার্চ ২০১৯ 
  19. Fischlin, Daniel; Nandorfy, Martha (২০০৭)। The Concise Guide to Global Human Rights। Black Rose Books Ltd.। পৃষ্ঠা 176আইএসবিএন 9781551642949। সংগ্রহের তারিখ ৪ জুন ২০১৭ 
  20. Marx, Gary (১৭ জুলাই ২০০৫)। "Will truth go south on Telesur news?"The Chicago Tribune। ২০ ডিসেম্বর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ 
  21. World Report 2008Human Rights Watch। ২০০৮। পৃষ্ঠা 227–228। সংগ্রহের তারিখ ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ [স্থায়ীভাবে অকার্যকর সংযোগ]