তেঙ্গাই শ্রীনিবাস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তেঙ্গাই শ্রীনিবাস
জন্ম
শ্রীনিবাস

(১৯৩৭-১০-২১)২১ অক্টোবর ১৯৩৭
মৃত্যু৯ নভেম্বর ১৯৮৭(1987-11-09) (বয়স ৫০)
পেশাঅভিনেতা, কৌতুকশিল্পী
কর্মজীবন১৯৬৫-১৯৮৭
দাম্পত্য সঙ্গীলক্ষ্মী
সন্তান

তেঙ্গাই শ্রীনিবাস (১৯৩৭-১৯৮৭) ভারতের তামিল চলচ্চিত্র জগতের একজন অভিনেতা ছিলেন। তিনি চলচ্চিত্রে অভিনয় ছাড়াও মঞ্চ নাটকে অভিনয় করতেন, এবং তার কর্মজীবন মঞ্চনাটকের দ্বারাই শুরু হয়েছিলো, তিনি ষাটের দশকে তার চলচ্চিত্র কর্মজীবন শুরু করেছিলেন। তামিল ভাষায় তেঙ্গাই শব্দের অর্থ নারকেল এবং তাকে তার নামের আগে তেঙ্গাই দেওয়া হয় তার কাল মানাম নামের একটি মঞ্চ নাটকে অভিনয়ের জন্য যেখানে তিনি নারকেল বিক্রেতার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কৌতুক চরিত্রে অভিনয় ছাড়াও তিনি বিভিন্ন চলচ্চিত্রে মুখ্য এবং খল চরিত্রেও অভিনয় করেছিলেন।[১]

পূর্ব জীবন[সম্পাদনা]

শ্রীনিবাস ১৯৩৭ সালের ২১শে অক্টোবর তুতিকোরিন জেলাতে জন্মগ্রহণ করেন, তার পিতার নাম ছিলো রাজাবেল মুদালিয়ার এবং মাতার নাম সুবাম্মাল।[২] তার দুই বোন ছিলো। শ্রীনিবাসের বয়স যখন সাত তখন তার পরিবার চেন্নাইতে স্থানান্তরিত হয়। শ্রীনিবাসের বাবা একজন মঞ্চনাটক অভিনেতা ছিলেন এবং শ্রীনিবাসকে অভিনেতা হতে এটা অনুপ্রাণিত করেছিলো।

বিদ্যালয় শেষ করে শ্রীনিবাস চেন্নাইতে ইনটেগ্র্যাল কোচ ফ্যাক্টরিতে যোগ দেন এবং পরে তার থিয়েটার কর্মজীবন শুরু করেন রেলওয়ে ড্রামাটিক ক্লাবে। শ্রীনিবাস অভিনীত প্রথম মঞ্চ নাটক ছিলো তার পিতার 'গালাট্টা কল্যাণম'। শ্রীনিবাস কে. কন্ননের মঞ্চ নাটকেও অভিনয় করেছিলেন এবং তার একটি নাটক 'কাল মানাম'-এ তিনি নারকেল বিক্রেতার চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। কৌতুক শিল্পী কে. এ. তাঙ্গাবেলু শ্রীনিবাসের কাল মানামের নাটকের অভিনয় দেখে শ্রীনিবাসের নাম 'তেঙ্গাই শ্রীনিবাস' রাখেন, তেঙ্গাই শব্দের অর্থ হছে নারকেল। সেখান থেকেই শ্রীনিবাস তেঙ্গাই শ্রীনিবাস নামে পরিচিত হয়ে ওঠেন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

শ্রীনিবাস অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ছিলো রহস্য রোমাঞ্চকর চলচ্চিত্র ওরু ভিরাল যেটি ১৯৬৫ সালে মুক্তি পেয়েছিলো।[৩] চলচ্চিত্রটিতে তিনি একজন গোয়েন্দা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এবং এটি ব্যবসাসফল ছিলো। শ্রীনিবাসের এরপর ১৯৬৫ সালেই মুক্তি পাওয়া ইরাভুম পাগালুম-এ মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করার কথা ছিলো কিন্তু অভিনেতা জয়শঙ্করের জন্য তাকে এই প্রকল্প থেকে বাদ দেওয়া হয়, শ্রীনিবাস এবং জয়শঙ্কর পরে ভালো বন্ধু হয়ে ওঠেন এবং জয়শঙ্করের শুরুর দিকের প্রায় ৮০ শতাংশ চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন।

শ্রীনিবাস অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কৌতুক শিল্পী বা সহ-অভিনেতা চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। তার অভিনীত উল্লেখযোগ্য চরিত্রগুলোর মধ্যে আছে নকল গুরুস্বামী এবং আদর্শ শিল্পপতির চরিত্র, তিনি নকল গুরুস্বামী চরিত্রে কাসেতান কাডাভুলাডা চলচ্চিত্র এবং আদর্শ শিল্পপতির চরিত্রে তিল্লু মুল্লু চলচ্চিত্রে অভিনয় করেন। ২০১৩ সালে ফোর্বস ইন্ডিয়া তার তিল্লু মুল্লু চলচ্চিত্রের অভিনয়ের প্রশংসা করে, সাথে সাথে চলচ্চিত্রটিতে রজনীকান্তের অভিনয়ও প্রশংসিত হয়েছিলো "ভারতীয় চলচ্চিত্রের ইতিহাসে সেরা ২৫টি অভিনয় দক্ষতা" তালিকায়।[৪] শ্রীনিবাস খল চরিত্রেও অভিনয় করেন, তন্মধ্যে রয়েছে এস. পি. মুথুরমণ পরিচালিত চলচ্চিত্র মায়াংগুকিরাল ওরু মাদু যেটাতে তিনি একজন ব্ল্যাকমেইলিং ফটোগ্রাফারের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন।

তিনি কবি বালির মঞ্চ নাটক শ্রী কৃষ্ণ বিজয়মে অভিনয় করেন, যেটার উপর ভিত্তি করে পরে চলচ্চিত্র কলিয়ুগা কান্নান তৈরি করা হয়। চলচ্চিত্রটিতে প্রথমে শিবাজি গণেশনকে নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছিলো, কিন্তু শিবাজি মঞ্চ নাটকে শ্রীনিবাসের অভিনয় দেখে প্রশংসিত হয়ে তাকেই চলচ্চিত্রটিতে নিতে অনুরোধ করেন। কলিয়ুগা কান্নান ব্যবসাসফল হয় এবং শ্রীনিবাস অভিনীত অন্যতম সেরা চলচ্চিত্র হিসেবে বিবেচিত হয়ে যায়।[২] শ্রীনিবাসের অন্যান্য চলচ্চিত্রগুলোর মধ্যে রয়েছে যেগুলোতে তিনি মুখ্য ভূমিকায় অভিনয় করেছিলেন নানড্রি কারাঙ্গাল, শ্রী রামাজায়াম, পোর্টার পোন্নুস্বামী এবং আড়ুক্কু মল্লি যেটা বক্স অফিস সফল ছিলো।[৫] ১৯৮৭ সালে শ্রীনিবাস কৃষ্ণন ভান্দান নামের একটি চলচ্চিত্র প্রযোজনা করেন যেখানে মুখ্য ভূমিকায় শিবাজি গণেশন ছিলেন, চলচ্চিত্রটি ব্যবসা করতে পারেনি এবং শ্রীনিবাস এই জন্য আর্থিক সমস্যায় পড়েছিলেন।[২]

মৃত্যু[সম্পাদনা]

শ্রীনিবাস ১৯৮৭ সালে তার মসীর মৃতদেহ সৎকার করার জন্য ব্যাঙ্গালোরে যান এবং হঠাৎ স্ট্রোক করেন।[২] ভালো চিকিৎসা করানো সত্ত্বেও তিনি ৯ নভেম্বর ১৯৮৭ তারিখে মারা যান। তার মৃতদেহ চেন্নাইয়ের গোপালপুরমের রামস্বামী সড়কে আনা হয়।[১][৬] তার মৃতদেহ সৎকারে চলচ্চিত্রের অনেক ভক্ত এবং ইন্ডাস্ট্রির অনেক লোকের সমাগম হয়েছিলো।[১][২]

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

শ্রীনিবাসের স্ত্রীর নাম ছিলো লক্ষ্মী। এই দম্পতির দুই কন্যা এবং পুত্র সন্তান রয়েছে, কন্যাদ্বয়ের নাম গীতালক্ষ্মী এবং রাজেশ্বরী এবং পুত্রের নাম শিবশঙ্কর।[২]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Majordasan। "Potpourri of titbits about Tamil cinema – Thengai Srinivasan"Kalyanamalai। ১১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  2. Raman, Mohan V. (২০ অক্টোবর ২০১২)। "He walked tall in tinsel town"The Hindu। ১১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৩ 
  3. Guy, Randor (১৫ সেপ্টেম্বর ২০১২)। "Oru Viral 1965"The Hindu। ১১ অক্টোবর ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৪ 
  4. "25 Greatest Acting Performances of Indian Cinema"Forbes India। ২৭ এপ্রিল ২০১৩। ১২ জানুয়ারি ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৬ 
  5. Pillai, Sreedhar (৭ সেপ্টেম্বর ২০১০)। "Piranha bares its fangs"The Times of India। ২৪ মে ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ মার্চ ২০১৩ 
  6. "'Thengai' Srinivasan dead"The Indian ExpressPTI। ১০ নভেম্বর ১৯৮৭। পৃষ্ঠা 9। 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]