তৃতীয় সোমেশ্বর

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
রাজা তৃতীয় সোমেশ্বরের প্রাচীন কন্নড় অভিলেখ, বল্লিগাবি, কর্ণাটক, ১১২৯ খ্রিস্টাব্দ

তৃতীয় সোমেশ্বর (আইএএসটি: Someśvara; শা. ১১২৭ – ১১৩৮ খ্রিস্টাব্দ) ছিলেন একজন পশ্চিম চালুক্য রাজা। ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের পুত্র ও উত্তরসূরি[১] তৃতীয় সোমেশ্বর ১১২৬[২] অথবা ১১২৭[১] খ্রিস্টাব্দে সিংহাসনে আরোহণ করেন।

তৃতীয় সোমেশ্বর ছিলেন চালুক্য বংশের তৃতীয় রাজা যাঁর নামকরণ করা হয়েছিল হিন্দু দেবতা শিবের নামানুসারে। তিনি শৈবধর্মের প্রসারে এবং শৈব মঠগুলিকে প্রচুর জমি দান করেছিলেন।[৩][৪] এই মঠগুলি ভারতীয় উপদ্বীপ বেদন্যায় প্রভৃতি হিন্দু দর্শন চর্চার কেন্দ্র হয়ে ওঠে।[৩] ১১৩৮ খ্রিস্টাব্দে তৃতীয় সোমেশ্বেরের মৃত্যু ঘটলে তাঁর পুত্র জগদেকমল্ল সিংহাসনে আরোহণ করেন।[৫]

সোমেশ্বর ছিলেন একজন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ, পণ্ডিত ও কবি।[১] তিনি মানসোল্লাস নামে একটি সংস্কৃত বিশ্বকোষতুল্য গ্রন্থ রচনা করেন। এই বইটি থেকে রাষ্ট্রনীতি, প্রশাসন, জ্যোতির্বিজ্ঞান, জ্যোতিষ, ছন্দশাস্ত্র, ঔষধবিজ্ঞান, খাদ্য, স্থাপত্য, চিত্রকলা, কাব্য ও সংগীত সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য পাওয়া যায়। একাদশ-দ্বাদশ শতাব্দীর ভারতের সামাজিক ও সাংস্কৃতিক তথ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ উৎস এই গ্রন্থটি।[৫][৬] সংস্কৃত ভাষায় তিনি নিজ পিতা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের একটি অসম্পূর্ণ জীবনী রচনা করেন। গ্রন্থটির নাম বিক্রমাঙ্কাভ্যুদয়[১] পাণ্ডিত্যের জন্য তিনি “সর্বদ্ন্যভূপ” (সর্বজ্ঞ রাজা) ও “ভূলোকমল” (সকল জীবের অধিপতি যে রাজা) উপাধি অর্জন করেন।[৫]

মানসোল্লাস[সম্পাদনা]

তৃতীয় সোমেশ্বর সংস্কৃত ভাষায় মানসোল্লাস (সংস্কৃত: मानसोल्लास, অর্থাৎ "চিত্ত প্রফুল্লকারী"[২]) বা অভিলাষার্থ চিন্তামণি (অর্থাৎ ইচ্ছাপূর্ণকারী পরশমণি) নামে একটি বিশ্বকোষতুল্য গ্রন্থ রচনা করেন।[৭] এই গ্রন্থে বিভিন্ন বিষয় (১০০টি বিষয়[৭]) অন্তর্ভুক্ত হয়েছে, যার মধ্যে রয়েছে একটি রাজ্য অধিগ্রহণের উপায়, সেই রাজ্য প্রতিষ্ঠার পদ্ধতি ও রাজকীয় বিনোদন। এছাড়াও এই গ্রন্থে ভারতীয় শিল্প, স্থাপত্য, খাদ্যাভ্যাস, অলংকার, খেলাধুলা, সংগীত ও নৃত্য সম্পর্কে মূল্যবান তথ্য পাওয়া যায়।[৬] সেই সঙ্গে আছে রাজার প্রিয় খাবারগুলির রন্ধনপ্রণালী, যার মধ্যে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের ভাত, সবজি, মাংস ও মিষ্টান্ন। দুধের মিষ্টি ছাড়াও গোলামু, পান্তুয়াঘরিকার মতো ভাজা মিষ্টিরও রন্ধনপ্রণালী এতে বর্ণিত হয়েছে।[৮]

বিক্রমাঙ্কাভ্যুদয়[সম্পাদনা]

১৯২৫ সালে আবিষ্কৃত বিক্রমাঙ্কাভ্যুদয় গ্রন্থটি হল তৃতীয় সোমেশ্বর রচিত একটি ঐতিহাসিক নথি। এটি তাঁর পিতার জীবনীর আকারে রচিত।[১] প্রথম অধ্যায়ে কর্ণাটকের ভূগোল ও জনগোষ্ঠীর বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায়, দ্বিতীয় অধ্যায়ে ব্যাখ্যাত হয়েছে পশ্চিম চালুক্য সাম্রাজ্যের রাজধানী কল্যাণের বিশালতা।[১] সুদীর্ঘ তৃতীয় অধ্যায়টিতে ধৃত হয়েছে চালুক্যদের ইতিহাস। এই অধ্যায়ের সূচনায় একটি কিংবদন্তি কাহিনির উল্লেখ পাওয়া যায়; এবং অধ্যায়টি শেষ হয়েছে তৃতীয় সোমেশ্বের পিতা ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্যের রাজত্বের ষোড়শ বর্ষে তাঁর ‘দ্বিগ্বিজয়’ শুরুর মধ্য দিয়ে।[৯] যদিও শেষ অধ্যায়টি অসম্পূর্ণ, কারণ এটির সমাপ্তি অংশটি আকস্মিক: "সেদিন ব্রাহ্মণ ও ভদ্রনারীগণ…"[৯]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. A Textbook of Historiography, 500 B.C. to A.D. 2000 by E. Sreedharan, p.328-329, Orient Blackswan, (2004) আইএসবিএন ৮১-২৫০-২৬৫৭-৬
  2. Snodgrass 2004, পৃ. 452।
  3. Prabhavati C. Reddy 2014, পৃ. 99-101।
  4. "नऊशे वर्षांपूर्वीचा शिलालेख जत तालुक्यात प्रकाशात"Loksatta (মারাঠি ভাষায়)। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০২১। সংগ্রহের তারিখ ২৮ মার্চ ২০২১ 
  5. Kincaid ও Parasanisa 1918, পৃ. 32-33।
  6. Banerji 1989, পৃ. 238।
  7. Prakash 2005, পৃ. 302।
  8. Krondl, Michael (২০১১)। Sweet Invention: A History of Dessert। Chicago Review Press। পৃষ্ঠা 41–42। 
  9. Sreedharan2004, পৃ. 328।

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

পূর্বসূরী
ষষ্ঠ বিক্রমাদিত্য
পশ্চিম চালুক্য
১১২৬–১১৩৮
উত্তরসূরী
দ্বিতীয় জগদেকমল্ল