বিষয়বস্তুতে চলুন

তুষার ধূলিকণা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

তুষার ধূলিকণা ছোট ছোট বরফ স্ফটিক দ্বারা গঠিত একটি ভূমি স্তরের মেঘ। এই আবহাওয়া ঘটিত ঘটনাটি বরফ স্ফটিক নামেও পরিচিত । আন্তর্জাতিক আবহাওয়া রিপোর্টে, তুষার ধূলিকণাকে METAR কোড-এ "IC" হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। স্বচ্ছ বা প্রায় স্বচ্ছ আকাশের নীচে গঠিত হয় বলে একে "স্বচ্ছ আকাশের বৃষ্টি" বলে উল্লেখ করা যেতে পারে।পৃথিবীর মেরু অঞ্চলগুলিতে, বিশেষত অ্যান্টার্কটিকা এবং আর্কটিকের মতো ঠান্ডা জায়গায় তুষার ধূলিকণা খুবই সাধারণ। তবে হিমাঙ্কের নিচে তাপমাত্রায় যেকোনো স্থানে এটি দেখা যেতে পারে ।পৃথিবীর মেরু অঞ্চলে এই ঘটনা কয়েকদিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়ে থাকে।

বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

তুষার ধূলিকণা কুয়াশার মতোই একটি মেঘ হিসেবে তৈরি হলেও, এদের মধ্যে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্য রয়েছে। প্রথমত, কুয়াশা বলতে বোঝায় তরল পানির মেঘ ( এখানে বরফের কুয়াশা আর তুষার ধূলিকণার পার্থক্য বোঝা জরুরি । বরফের কুয়াশা বলতে এমন কুয়াশাকে বোঝায় যা প্রথমে পানি হিসেবে থাকলেও পরবর্তীতে জমে বরফ হয়ে যায় ।ফাইরবাঙ্কস কিংবা আলাস্কা এর মত শহর যেখানে বায়ুদূষণ বেশি সেখানে এমন বরফের কুয়াশা প্রায়শ চোখে পরে ।অন্যদিকে , তুষার ধূলিকণা শুরু থেকেই বরফ হিসেবে থাকে।) দ্বিতীয়ত ,কুয়াশা বেশ পুরু হয়ে থাকে যার ফলে এটা দৃশ্যমানতায় বাঁধা তৈরি করে অথচ তুষার ধূলিকণা একেবারে পাতলা হওয়ায় এটার কারণে দৃশ্যমানতায় তেমন কোন বাঁধা তৈরি হয় না ।(সাধারণত সমপরিমাণ বায়ুতে থাকা পানির স্ফটিকের তুলনায় কুয়াশায় থাকা পানির ফোঁটার আয়তন বেশি হয়ে থাকে )যেহেতু , জলীয় বাষ্পের ধোঁয়াশার মতো তুষার ধূলিকণাও দেখার পথে তেমন বাঁধার সৃষ্টি করে না , একে বরফের ধোঁয়াশা বললেও ভুল হবে না ।তবে, কখনো কখনো তুষার ধূলিকণাও দৃশ্যমানতায় সর্বোচ্চ ৬০০ মিটার (২০০০ ফিট )পর্যন্ত বাঁধা সৃষ্টি করতে পারে । তুষার ধুলিস্তরের গভীরতা ২০ / ৩০ মিটার (৬৬/৯৮ ফিট) থেকে ৩০০ মিটার (৯৮০ ফিট) পর্যন্ত হতে পারে।যেহেতু এই ধূলিকণা দৃশ্যমানতায় কোন প্রভাব বিস্তার করে না , এর কনাগুলি যখন সূর্যের আলোকে প্রতিফলিত করে আলোর ঝলক তৈরি করে তখন এর উপস্থিতি টের পাওয়া যায়।এই ঝলমলে প্রভাব চোখে পরে বলে একে ইংরেজিতে ডায়মন্ড ডাস্ট বলা হয় , যেন ছোট ছোট হিরের কনা ঝলমল করছে

পৃষ্ঠে তাপমাত্রার প্রভেদ সৃষ্টি হলে যখন পৃষ্ঠের কাছাকাছি থাকা ঠাণ্ডা বায়ু উপরস্থ তুলনামূলক উষ্ণ বায়ুর সংস্পর্শে আসে তখন এদের মিশ্রণে বরফের কনা বা স্ফটিক তৈরি হয়।[] যেহেতু উষ্ণ বায়ুতে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি হয় , এই দুই বায়ু সংস্পর্শে এলে জলীয় বাষ্প পরিবাহিত হয়ে পৃষ্ঠের শীতল বায়ুর আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি করে। আপেক্ষিক আর্দ্রতা যথেষ্ট পরিমাণে বৃদ্ধি পেলে বরফের স্ফটিক সৃষ্টি হয়। তুষার ধুলিকণা সৃষ্টির জন্য বায়ুর তাপমাত্রা অন্ততপক্ষে হিমাঙ্ক অর্থাৎ,০° সেলসিয়াস ( ৩২° ফারেনহাইট) এর কম হ‌ওয়া জরুরি। তা নাহলে বরফের কণা বা স্ফটিক তৈরি হবেনা, গলে যাবে। যদিও হিমাঙ্কের কাছাকাছি তাপমাত্রায় সাধারণত তুষার ধুলিকণা দেখা যায় না। আপেক্ষিক আর্দ্রতা বৃদ্ধি পেলে ০° সেলসিয়াস (৩২°ফারেনহাইট) থেকে -৩৯° সেলসিয়াস(-৩৮° ফারেনহাইট) এর মাঝামাঝি তাপমাত্রায় হয় তুষার ধুলিকণা নয়তো কুয়াশা সৃষ্টি হতে পারে।এর কারণ, হিমাঙ্কের নিচে খুব কমই পানি তরল থাকতে দেখা যায় ( এইরূপ ঠান্ডা পানিকে অতি শীতল পানি বলা হয় )।যখন বায়ুতে মানবসৃষ্ট দূষণ থেকে উদ্ভূত কিংবা প্রাকৃতিক নানান রকম ছোট ছোট কণা (যেমন ধুলো )থাকে তখন পানির কণা -১০° সেলসিয়াস (১৪° ফারেনহাইট তাপমাত্রাতেই বরফের স্ফটিকে পরিণত হতে পারে। তবে, বিশুদ্ধ পরিবেশে পানির -৩৯° সেলসিয়াস(-৩৮° ফারেনহাইট) পর্যন্ত‌ও তরল থাকতে দেখা যায়। তবে , এরচেয়ে বেশি তাপমাত্রায় অতি ক্ষুদ্র পানির কণা‌ও বরফ হতে বাধ্য। অ্যান্টার্কটিকায় -২৫° সেলসিয়াস(-১৩° ফারেনহাইট) এর নিচে প্রায়শই তুষার ধুলিকণা দেখা যায়।

কৃত্রিম তুষার ধুলিকণার দেখা পাওয়া যায় স্কি রিসোর্টগুলোতে যেখানে তুষার তৈরির যন্ত্র হাওয়ায় বরফের স্ফটিক ছড়িয়ে দেয়। এছাড়াও কারখানার ঠান্ডা জলের কল থেকেও কখনো কখনো কৃত্রিম তুষার ধুলিকণার সৃষ্টি হতে পারে।

দৃশ্যমান বৈশিষ্ট্য

[সম্পাদনা]

তুষার ধূলিকণা সৃষ্টির সময় জলীয় বাষ্প সরাসরি বরফের স্ফটিকে পরিণত হয়।এই প্রক্রিয়া বেশ ধীরে ধীরে ঘটে।এই স্ফটিকগুলি ষড়ভূজাকার একতলীয় কিংবা সিলিন্ডারের আকারে তৈরি হতে দেখা যায়।‌[] এরা সহজেই কোনো নির্দিষ্ট দিকে আলোর প্রতিফলন/ প্রতিসরণ ঘটাতে পারে।

আবহবিজ্ঞান

[সম্পাদনা]

যদিও তুষার ধুলিকণা শীতপ্রধান যেকোনো অঞ্চলে দেখা যেতে পারে, এটি সবচেয়ে বেশি লক্ষণীয় অ্যান্টার্কটিকার অভ্যন্তরে, যেখানে এটি প্রায় সারা বছর‌ই দেখা যায়। শভেরডটফেগার (Schwerdtfeger, ১৯৭০) দেখিয়েছেন যে অ্যান্টার্কটিকার প্লাটো স্টেশনে বছরে গড়ে ৩১৬ দিন তুষার ধুলিকণা পর্যবেক্ষণ করা হয়েছে। রাডোক এবং লাইল (Radok and Lile, ১৯৭৭) অনুমান করেছেন যে ১৯৬৭ সালে প্লাটো স্টেশনে যে মোট বৃষ্টিপাত হয়েছিল, তার ৭০% এরও বেশি তুষার ধুলিকণার আকারে পড়েছিল। গলে যাওয়ার পর, পুরো বছরের মোট বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছিল মাত্র ২৫ মিমি (০.৯৮ ইঞ্চি)।

আবহাওয়া প্রতিবেদনে ব্যতিচার

[সম্পাদনা]

বিমানবন্দরে এর স্বয়ংক্রিয় আবহাওয়া প্রতিবেদন কেন্দ্রের কাছে তুষার ধূলিকণা বাধার সৃষ্টি করতে পারে।সিলোমিটার সঠিকভাবে তুষার ধূলিকণাকে শনাক্ত করতে না পারায় সাধারণত দৃশ্যমানতার পরিমাণ শূন্য দেখায় ( অর্থাৎ সম্পূর্ণ মেঘাচ্ছন্ন আকাশ হিসেবে চিহ্নিত করে)। যদিও একজন ব্যক্তি পর্যবেক্ষণ করে সঠিক তথ্য ( বাঁধাহীন দৃশ্যমানতা ) চিহ্নিত করতে পারেন। আন্তর্জাতিক আবহাওয়া প্রতিবেদনে (METAR) তুষার ধূলিকণাকে IC দিয়ে বোঝানো হয়।[]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Glossary of Meteorology (জুন ২০০০)। "Diamond Dust"American Meteorological Society। ২০০৯-০৪-০৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০১০-০১-২১ 
  2. Kenneth G. Libbrecht (২০০১)। "Morphogenesis on Ice: The Physics of Snow Crystals" (পিডিএফ)Engineering & ScienceCalifornia Institute of Technology (1): 12। সংগ্রহের তারিখ ২০০১-০১-২১ 
  3. Alaska Air Flight Service Station (২০০৭-০৪-১০)। "SA-METAR"Federal Aviation Administration via the Internet Wayback Machine। ২০১৮-০৯-০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৮-২৯