তুলসী মুন্ডা

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তুলসী মুন্ডা
২০১১-র এক অনুষ্ঠানে তুলসী মুন্ডা
জন্ম (1947-07-15) ১৫ জুলাই ১৯৪৭ (বয়স ৭৬)
জাতীয়তাভারতীয়
অন্যান্য নামতুলসী আপা
পেশাশিক্ষক, সমাজকর্মী
পরিচিতির কারণআদিবাসী ও জনজাতির মধ্যে শিক্ষার প্রচার
পুরস্কারপদ্মশ্রী (২০০১)
লক্ষ্মীপত সিংহানিয়া-আইআইএম লক্ষ্ণৌর জাতীয় নেতৃত্ব পুরস্কার গ্রহণ করছেন তুলসী দেবী

তুলসী মুন্ডা (জন্ম: ১৫ই জুলাই ১৯৪৭) ভারতের ওড়িশা রাজ্যের একজন শিক্ষিকা এবং সমাজকর্মী। ওড়িশার দরিদ্র আদিবাসী জনগণের মধ্যে সাক্ষরতা বিস্তারে অবদানের জন্য ২০০১ সালে ভারত সরকার তাঁকে দেশের চতুর্থ সর্ব্বোচ্চ পুরস্কার পদ্মশ্রী পুরস্কারে ভূষিত করেন[১]। স্থানীয় আদিবাসী জনগোষ্ঠীর শিশুদের শিক্ষিত করার জন্য তুলসী দেবী ১৯৬৪ সালে ওড়িশার লৌহ আকরিক খনি এলাকায় একটি অনানুষ্ঠানিক স্কুল শুরু করে স্থানীয় আদিবাসী শিশুদের লৌহখনিতে স্বল্পমূল্যের শিশুশ্রমিক হওয়া রোধ করতে সহায়তা করেন। শৈশবে তিনি নিজে কেওনঝড়ের খনিতে শিশু শ্রমিক ছিলেন[২]

তুলসী মুন্ডা নিজে নিরক্ষর এবং তাঁর কোন প্রথাগত শিক্ষা নেই[৩]। তিনি আদিবাসীদের মুন্ডা নৃগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত; মুন্ডা শব্দটি দক্ষিণ এশিয়ার মূল ভূখণ্ডের আদিবাসীদের পরিচয়জ্ঞাপক শব্দ।

তুলসী দেবীকে স্থানীয় মানুষজন ভালোবেসে 'তুলসী আপা' (তুলসী দিদি) বলে ডাকেন।

প্রাথমিক জীবন[সম্পাদনা]

তুলসী মুন্ডার জন্ম ১৯৪৭ সালের ১৫ই জুলাই ওড়িশাকেওনঝর জেলার ক্যানশি গ্রামে[৪]কেওনঝড় ওড়িশার অর্থনৈতিকভাবে অনুন্নত জেলার অন্যতম। ছোটবেলায় তুলসীদেবীর পড়াশোনার আগ্রহ থাকলেও সেই সময় মেয়েদের, বিশেষত দরিদ্র পরিবারের কন্যাশিশুদের শিক্ষিত করার ধারণাটি মূলত সামাজিকভাবে অপ্রচলিত ছিল[২]। ১২ বছর বয়সে তাঁকে তাঁর দিদির বাড়ি থাকতে পাঠিয়ে দেওয়া হয় এবং সেখানেই তিনি শিশুশ্রমিক রূপে খনিতে কাজ করতে থাকেন।

সামাজিক সচেতনতা সংক্রান্ত কর্মজীবন[সম্পাদনা]

১৯৬১ সালে তুলসী মুন্ডার সাথে দেখা হয়েছিল সমাজ সংস্কারক রমাদেবী চৌধুরী, নির্মলা দেশপাণ্ডে এবং মালতী চৌধুরির সাথে যাঁরা মহিলাদের শিক্ষার পক্ষে ছিলেন। তুলসীও তাঁদের সাথে দেশের বিভিন্ন স্থানে তাঁদের প্রকল্পে যোগ দিয়েছিলেন[২]। ১৯৬৩ সালে ভূদান আন্দোলনের সময় আচার্য বিনোবা ভাবে ওড়িশা সফরে এলে, তুলসী মুন্ডা তাঁর সাথেও দেখা করেছিলেন[৩]। তাঁর সমাজসেবা প্রশিক্ষণ এবং সমাজ সংস্কারকদের দিকনির্দেশনা তুলসীর ভবিষ্যতের প্রচেষ্টাকে অনুপ্রাণিত করেছিল।

তিনি ১৯৬৪ সালে সারান্ডায় ফিরে এসে বাড়ির বারান্দায় স্থানীয় বাচ্চাদের জন্য একটি অনানুষ্ঠানিক বিদ্যালয় শুরু করেছিলেন[২][৫]। পরে তিনি "আদিবাসী বিকাশ সমিতি স্কুল" শুরু করেন[৩]। ২০১৯ সালের হিসাবে, এই বিদ্যালয় প্রতি বছর প্রায় ৫০০ শিক্ষার্থীদের দশম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষা প্রদান করে। তাঁর প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টি এই এলাকায় শিক্ষার স্তর এবং জীবনযাত্রার মান বাড়িয়েছে[৬]। ১৯৬৪ সাল থেকে, তিনি ২০,০০০ এরও বেশি শিশুকে শিক্ষিত করেছেন এবং প্রাথমিক বা মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য সরকারকে ১৭ টি স্কুল স্থাপনে সহায়তা করেছেন[৭]

সম্মাননা ও স্বীকৃতি[সম্পাদনা]

  • সামাজিক কাজ এবং শিক্ষা বিস্তারে তাঁর অবদানের জন্যে ভারত সরকার দ্বারা প্রদত্ত পদ্মশ্রী পুরস্কার, ২০০১.[১][৮]
  • কাদম্বিনী পুরস্কার, ২০০৮.[৯]
  • সামাজিক সেবার জন্য ওড়িশা লিভিং লেজেন্ড পুরস্কার, ২০১১.[১০]
  • সামাজিক মানোন্নয়নের জন্যে লক্ষ্মীপত সিংহানিয়া-আই আই এম লক্ষ্ণৌর দ্বারা প্রদত্ত নেতৃত্ব পুরস্কার, ২০০৯[১১]

বায়োপিক[সম্পাদনা]

তুলসী আপা, তার জীবনের উপর ভিত্তি করে একটি জীবনী চলচ্চিত্র ২০১৫ সালে কলকাতা চলচ্চিত্র উৎসবে মুক্তি পেয়েছিল, যেখানে এটি প্রশংসিত হয়েছিল[১২]। ছবিটি ৩০শে অক্টোবর, ২০১৬ তে তেহরান জেসমিন আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব (টিজেআইএফএফ) এর চতুর্থ সংস্করণেও প্রদর্শিত হয়েছিল[১৩]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Padma Awards" (পিডিএফ)। Ministry of Home Affairs, Government of India। ২০১৫। ১৫ নভেম্বর ২০১৪ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২১ জুলাই ২০১৫ 
  2. S., Lekshmi Priya (১৫ মে ২০১৭)। "12 Facts About Tulasi Apa, the Odisha Woman Who Taught 20,000+ Children in 50 Years"The Better India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৯ 
  3. Tewary, Amarnath (২৭ মার্চ ২০০০)। "Illiterate Herself, She Brings Education To Fellow Tribals"Outlook India। ১৩ ফেব্রুয়ারি ২০০৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৯ 
  4. Priya (১১ আগস্ট ২০১৩)। "Story of Tulasi Munda – Adivasi Warrior Princess who empowered her people with education"Be Positive (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৯ 
  5. "What you should know about inspiring story of Tulasi Munda of Odisha who has taught more than 20,000 children"Bhubaneshwar Buzz। ১৮ মে ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৯ 
  6. "Odia Film Tulasi Apa Based on Life of Eminent Social Activist Tulasi Munda-2016"Odisha News। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৯ 
  7. "Here's The Story Of Tulasi Munda a.k.a Tulasi Apa"Kutchina Foundation (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ জুলাই ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৯ 
  8. "Padma Awards"Department of General Administration and Public Grievance, Odisha। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৯ 
  9. "Tulasi Munda gets Kadambini Samman"The Hindu। ৩ জুলাই ২০০৮। সংগ্রহের তারিখ ৯ মার্চ ২০১৯ 
  10. "Odisha Living Legend Award (Excellence in Social Service): Ms. Tulasi Munda"Odisha Diary। ১১ নভেম্বর ২০১১। ৭ মার্চ ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২২ অক্টোবর ২০১২ 
  11. "Lakshmipat Singhania- IIM, Lucknow National Leadership Awards"LPSIIML Awards। ৯ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৯ 
  12. "Wait for Tulasi Munda biopic in city"Telegraph India (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ৭ জানুয়ারি ২০১৯ 
  13. "Award-winning Biography 'Tulasi Apa' to be Screened at Tehran Film Festival"Discover Bhubaneswar (ইংরেজি ভাষায়)। ২২ অক্টোবর ২০১৬। ৫ জানুয়ারি ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০১৯