তিনবিঘা করিডোর

স্থানাঙ্ক: ২৬°১৮′৩″ উত্তর ৮৮°৫৯′১″ পূর্ব / ২৬.৩০০৮৩° উত্তর ৮৮.৯৮৩৬১° পূর্ব / 26.30083; 88.98361
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
(তিন বিঘা করিডোর থেকে পুনর্নির্দেশিত)
বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ড থেকে তিন বিঘা করিডোরের প্রবেশদ্বার

তিনবিঘা করিডোর হল বাংলাদেশ–ভারত সীমান্তে একটি স্বতন্ত্র ভূমি যা ভারতের মালিকানাধীন তিন বিঘা জায়গার মধ্যে অবস্থিত। ২০১২ সালের সেপ্টেম্বরে বাংলাদেশের দহগ্রাম-আঙ্গরাপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের সুবিধার্থে এটি বাংলাদেশকে ইজারার মাধ্যমে দেওয়া হয়। এটি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার মেখলিগঞ্জ মহকুমা ও বাংলাদেশের লালমনিরহাট জেলার পাটগ্রাম উপজেলার সীমান্তে অবস্থিত।[১]

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তিনবিঘা করিডোরের মাঝে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ছিটমহলে যাতায়াতের রাস্তা।
তিনবিঘা করিডোরের চারপাশে কাটাঁতারের বেড়া।

১৬ মে ১৯৭৪-এর ইন্দিরা গান্ধী-শেখ মুজিবুর রহমান চুক্তি অনুসারে ভারত ও বাংলাদেশ তিনবিঘা করিডোর (১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু)) ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর (৭.৩৯ বর্গকিলোমিটার (২.৮৫ বর্গমাইল)) সার্বভৌমত্ব পরস্পরের কাছে হস্তান্তর করে। এরফলে উভয়দেশেই তাদের ছিটমহলে যথাক্রমে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ও দক্ষিণ বেরুবাড়ীর যাতায়াত সুবিধা তৈরি হয়। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ চুক্তি অনুসারে সাথে সাথেই দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের কাছে হস্তান্তর করে। তবে ভারত তিনবিঘা করিডোর বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে ভারতের সাংবিধান সংশোধনের প্রয়োজন ছিল, যা রাজনৈতিক কারণে সম্ভব হয়নি।[২][৩]

পরবর্তীতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক বিরোধিতার পর ২০১১ সালে ভারত পূর্ণভাবে এটি বাংলাদেশকে দেওয়ার বদলে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য বাংলাদেশ সরকারকে ইজারা হিসাবে দিয়েছিল এই শর্তে যে একই সময়ে দক্ষিণ বেরুবাড়ী ভারতের নিয়ন্ত্রণেই থাকবে।[৪]

১২ নং দক্ষিণ বেরুবাড়ী ইউনিয়নের মোট আয়তন ২২.৫৮ বর্গকিলোমিটার (৮.৭২ বর্গমাইল), যার ১১.২৯ বর্গকিলোমিটার (৪.৩৬ বর্গমাইল) বাংলাদেশ পেয়েছিল। এছাড়াও পূর্বের ভাগ অনুসারে কোচবিহারের চারটি ছিটমহল বাংলাদেশে পড়েছিল যার আয়তন ৬.৮৪ বর্গকিলোমিটার (২.৬৪ বর্গমাইল), এভাবে মোট আয়তন ১৮.১৩ বর্গকিলোমিটার (৭.০০ বর্গমাইল) যা বাংলাদেশে স্থানান্তর হওয়ার কথা ছিল। ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী এই ভূখন্ডগুলোর মোট জনসংখ্যার ৯০%ই ছিল হিন্দু ধর্মাবলম্বী। পক্ষান্তরে বাংলাদেশের ছিটমহল দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা ভারতে হস্তান্তরের কথা ছিল। যার মোট আয়তন ১৮.৬৮ বর্গকিলোমিটার (৭.২১ বর্গমাইল) ও ১৯৬৭ সালের হিসেব অনুযায়ী মোট জনসংখ্যার ৮০% ছিল মুসলমান। যদি এই হস্তান্তর সফল হতো তাহলে এটি জাতিগত দাঙ্গা সৃষ্টির সম্ভাবনা থাকত। ফলে তখন বেরুবাড়ীর জনগণ এই হস্তান্তরের বিরোধিতা করেছিল।

১৯৭১ এর পর ভারত বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেরুবাড়ীর অর্ধাংশ ভারতের অধীন থাকবে এবং দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা বাংলাদেশেই থাকবে। এই চুক্তি অনুসারে ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীর বাংলাদেশের মূল ভূখণ্ডের সাথে যোগাযোগ রক্ষার জন্য একটি তিনবিঘা আয়তনের জায়গা ইজারা হিসেবে দিয়েছিল। এটি বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত হয়েছিল এবং তিনবিঘার চারপাশে সতর্কতার সাথে বেষ্টনী দেওয়া হয়েছিল। ১৯৭৪ সালের ১৬ই মে ইন্দিরা গান্ধী ও শেখ মুজিবুর রহমানের মধ্যে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় এবং শেষ পর্যন্ত ১.১৪ ধারা অনুসারে বেরুবাড়ী বিরোধের অবসান ঘটে। চুক্তি অনুসারে: "ভারত দক্ষিণ বেরুবাড়ীর দক্ষিণাংশের অর্ধেক নিয়ন্ত্রণ করবে যার আনুমানিক আয়তন ৬.৮ বর্গকিলোমিটার (২.৬৪ বর্গমাইল) এবং বিনিময়ে বাংলাদেশ দহগ্রাম-আঙ্গরপোতা নিয়ন্ত্রণ করবে। ভারত দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাবাসীদের বাংলাদেশের মূল ভূখন্ডের সাথে যোগাযোগ স্থাপনের জন্য ১৭৮ বাই ৮৫ মিটার (৫৮৪ ফু × ২৭৯ ফু) আয়তনের একটি ভূমি বাংলাদেশকে ইজারা হিসেবে দেবে।" [৫]

করিডোরে প্রবেশ[সম্পাদনা]

তিনবিঘা করিডোরে ভারতীয় বর্ডার সিকিউরিটি ফোর্সের ক্যাম্প।

পূর্বে করিডোরটি দিনের ১২ ঘণ্টা সময়ের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হত,[৬][৭] এতে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতার অধিবাসীদের কঠিন সমস্যার সম্মুখীন হতে হত কারণ সে-সময় সেখানে কোন হাসপাতাল ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না।[৭]

৬ সেপ্টেম্বর ২০১১-এ ঢাকায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ও ভারতের প্রধানমন্ত্রীর মধ্যকার একটি চুক্তি অনুযায়ী বর্তমানে করিডোরটি ২৪ ঘণ্টাই উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়েছে।[৮][৯]

২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্তৃক আনুষ্ঠানিকভাবে করিডোরটি উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়।[১০]

অবকাঠামো[সম্পাদনা]

২০১১ সালের পূর্বে দহগ্রাম-আঙ্গরপোতাতে কোন হাসপাতাল[৭] বা কলেজ ছিল না। ২০১১ সালের ১৯শে অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দহগ্রামে একটি দশ শয্যার হাসপাতাল ও দহগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের উদ্বোধন করেন।[১০]

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Cover story"। ৬ ফেব্রুয়ারি ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  2. "Bangladeshis in Angarpota, Dahagram deserve better connectivity"The Financial Express। Dhaka। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। 
  3. কে. মওদুদ এলাহী (২০১২)। "ছিটমহল"ইসলাম, সিরাজুল; মিয়া, সাজাহান; খানম, মাহফুজা; আহমেদ, সাব্বীর। বাংলাপিডিয়া: বাংলাদেশের জাতীয় বিশ্বকোষ (২য় সংস্করণ)। ঢাকা, বাংলাদেশ: বাংলাপিডিয়া ট্রাস্ট, বাংলাদেশ এশিয়াটিক সোসাইটিআইএসবিএন 9843205901ওএল 30677644Mওসিএলসি 883871743 
  4. "Berubari plea to PM for place on map"telegraphindia.com (ইংরেজি ভাষায়)। 
  5. "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি"। ৪ মার্চ ২০১৬ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১৫ 
  6. "'Tin Bigha likely to be kept open 24 hrs within a short time'"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। নভেম্বর ২০, ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  7. "Dahagram-Angorpota's unending miseries"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। জুন ৩০, ২০১০। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  8. "Tin Bigha corridor to remain open 24 hours"Bangla News 24 (ইংরেজি ভাষায়)। ৬ সেপ্টেম্বর ২০১১। ২২ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  9. "Transit tumbles into Teesta abyss"bdnews24.com (ইংরেজি ভাষায়)। ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১। ২ এপ্রিল ২০১২ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ সেপ্টেম্বর ২০১১ 
  10. Shakhawat Liton; Dilip Roy (২০ অক্টোবর ২০১১)। "2 enclaves float in joy"The Daily Star (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০ অক্টোবর ২০১১