তালিকোটা যুদ্ধ

স্থানাঙ্ক: ১৬°২৮′২৪″ উত্তর ৭৬°১৮′৪৩″ পূর্ব / ১৬.৪৭৩৩৩° উত্তর ৭৬.৩১১৯৪° পূর্ব / 16.47333; 76.31194
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
তালিকোটা যুদ্ধ
মূল যুদ্ধ: মুসলমানদের ভারত বিজয়
তারিখ২৩ জানুয়ারি ১৫৬৫
অবস্থান
তালিকোটা যা বর্তমানে কর্ণাটক
১৬°২৮′২৪″ উত্তর ৭৬°১৮′৪৩″ পূর্ব / ১৬.৪৭৩৩৩° উত্তর ৭৬.৩১১৯৪° পূর্ব / 16.47333; 76.31194
ফলাফল

দাক্ষিণাত্য সালতানাত জোটের নির্ধারিত বিজয়

বিবাদমান পক্ষ

দাক্ষিণাত্য সালতানাত

বিজয়নগর সাম্রাজ্য
সেনাধিপতি ও নেতৃত্ব প্রদানকারী
  • আলিয়া রাম রাজা‍ মৃত্যুদণ্ড
  • ভেনকাদ্রত্রী 
  • তিরুমালা দেব রাজা
  • অচ্ছুথাপ্পা নায়েক
  • শক্তি
    ৮০০০০ পদাতিক সৈন্য[১]
    ৩০০০০০ অশ্বারোহী [১]
    কয়েক ডজন কামান[১]
    ১৪০০০০ পদাতিক সৈন্য
    ১০০০০ অশ্বারোহী এবং
    ১০০ এর অধিক যুদ্ধের হাতি[১]
    তালিকোটা যুদ্ধ কর্ণাটক-এ অবস্থিত
    তালিকোটা যুদ্ধ
    কর্ণাটক-এ অবস্থান

    ২৩ জানুয়ারী ১৫৬৫ সালে আলিয়া রাম রায়কে পরাজিত করার জন্য বিজয়নগর সাম্রাজ্য এবং ডেকান সুলতানদের একটি জোটের মধ্যে জলপথে যুদ্ধ হয়েছিল যা তালিকোটা যুদ্ধ নামে পরিচিত। যুদ্ধটি উত্তর কর্ণাটকের একটি শহর তালিকোটিতে হয়েছিল, যেটি বিজাপুর শহর থেকে দক্ষিণ-পূর্বে প্রায় ৮০ কিলোমিটার (৫০ মাইল) দূরে অবস্থিত।

    তালিকোটায় বিজয়নগর সাম্রাজ্যের পরাজয় এবং পরবর্তীকালে তাদের রাজধানী বিজয়নগরের ধ্বংস এবং লুটপাটের ফলে আলিয়া রাম রায়ের উত্তরসূরীদের অধীনে রাজ্যের ধীরে ধীরে পতন ও শেষ অবধি পতনই ঘটে।

    এই যুদ্ধ ভারতের মধ্য যুগের ইতিহাসে যৌথ পরিকল্পনার একটি উদাহরণ হিসেবে খ্যাত। কিছু হিন্দু রাজাদের সহযোগিতায় দাক্ষিণাত্য সুলতানরা বিজয়নগর দখলের সুযোগ পেয়েছিল। এই যুদ্ধে প্রায় ১ লাখ সৈন্য মারা যায়। এই যুদ্ধে বিজয়নগর সাম্রাজ্যের সম্পূর্ণ পতন ঘটে এবং দাক্ষিণাত্যের শেষ হিন্দু সাম্রাজ্যের অবসান ঘটে।[২]

    যুদ্ধ[সম্পাদনা]

    তালিকোটার যুদ্ধ

    বিজয়নগরের উত্তরে মুসলিম সুলতানিরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে আলিয়া রাম রায়ের সেনাবাহিনীকে আক্রমণ করেছিল, ২ জানুয়ারী, ১৫৬৫ সালে। তালিকোটার যুদ্ধ নামে যা পরিচিতি লাভ করে।[৩]

    রাক্কাসাগি ও তাঙ্গাদিগি গ্রামের নিকটে সমভূমিতে সেনাবাহিনীদ্বয়ের সংঘর্ষ হয়। (এটি রাক্কাসাগি-তাঙ্গাদি যুদ্ধ হিসাবেও পরিচিত)[৪][৫]

    বিজয়নগর সেনাবাহিনী যুদ্ধে জয়লাভ করেছিল, কিন্তু বিজয়নগর সেনাবাহিনীর দু'জন মুসলিম কমান্ডার (গিলানি ভাইয়েরা) পক্ষ ঘুরিয়ে নিয়ে ঐক্যবদ্ধ সুলতানিদের প্রতি তাদের আনুগত্য ফিরিয়ে নিলে জোয়ারের পালা শুরু হয়।[৬]

    যুদ্ধের ঐ সংকটময় মুহূর্তে, তারা একটি ধ্বংসাত্মক আক্রমণ চালিয়েছিল। হঠাৎ আলিয়া রাম রায় তার বিপরীতে দুটি দলকে দাঁড়াতে দেখলে অবাক হয়ে গিয়েছিলেন। তারা আলিয়া রাম রায়কে বন্দী করে এবং ঘটনাস্থলেই তার শিরশ্ছেদ করে।[৭][৮][৯]

    ফলাফল[সম্পাদনা]

    "মালিক-ই-ময়দান" (Master of the Field) কামানটি বিশ্বের সবচেয়ে বড় ব্রোঞ্জের তৈরি হিসাবে পরিচিত ছিল,[১০] দাক্ষিণাত্য সুলতানরা তালিকোটার যুদ্ধের সময় ব্যবহার করেছিলেন। এটি আলী আদিল শাহ প্রথম (বিজাপুরের সুলতান) সরবরাহ করেছিলেন।

    রাম রায়ের শিরশ্ছেদ করার ঘটনা বিজয়নগর সেনাবাহিনীর মধ্যে বিশ্বস্ত অংশগুলিতেও বিভ্রান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করেছিল। সুলতানিদের সেনাবাহিনী হাম্পিতে লুণ্ঠন চালায় এবং ধ্বংসস্তূপে পরিণত করে।[১০]

    রবার্ট সিওয়েল তাঁর দ্য ফরগোটেন এমপায়ার গ্রন্থে এই উপসংহারটি রেখেছেন - "আগুন এবং তরোয়াল দিয়ে, লৌহদন্ড এবং কুঠার দিয়ে তারা ধ্বংসের কাজটি দিনের পর দিন চালিয়েছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে কখনও এই ধরনের ধ্বংসাত্মক ঘটনা ঘটেনি এবং এত সুন্দরভাবে একটি শহর তৈরি হয়েছিল- ধনী ও পরিশ্রমী জনগোষ্ঠীর সমৃদ্ধির পূর্ণ প্রাচুর্যে একত্রিত হয়ে কিন্তু তারপরে বর্বর গণহত্যা ও ভিক্ষাবৃত্তির বিবরণের দৃশ্য, দখল প্রভৃতির ফলে ধ্বংসস্তূপে নেমে আসে।"[১১]

    হোসেন নিজাম শাহ বিজয়নগর থেকে আহমেদনগরে বিজয়ী হয়ে ফিরে আসেন। যুদ্ধে ব্যাপক রক্তপাত হয়েছিল।হোসেন নিজাম শাহ প্রচুর স্বর্ণ ওরৌপ্য সঙ্গে করে ফিরে আসেন। তবে সে বছরই তিনি মারা যান এবং কেউ কেউ  তার। পরিণতির কারণ হিসেবে অতিরিক্ত মদ্য পানকে  দায়ী  করেছিলেন। যদিও তার মৃত্যু নিয়ে দ্বিমত আছে । হোসেন নিজাম শাহের মৃত্যুর ফলে  স্ত্রী খুঞ্জা হুমায়ুন রাজনীতিতে আসতে বাধ্য হন। তবে দাক্ষিণাত্যে রাজনীতি শুরু করা  খুবই বিপজ্জনক ছিল। নিজাম শাহের মৃত্যুর ঘটনায়  তার স্ত্রী খুঞ্জা হুমায়ুনই দোষী হয়েছিলেন।বিভিন্ন ধরনের  রাজনৈতিক জটিলতায় খুঞ্জাহুমায়ুন রাজসিংহাসনে না বসে নিজের ছেলেকে বসিয়েছিলেন। [১২]

    তালিকোটার যুদ্ধের পরে, বিজনগরের রাজ পরিবারটি অন্ধ্রপ্রদেশের অনন্তপুর জেলাতে পেনুকন্ডার কাছে একটি রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করেছিল এবং পরে ১৫৯৭ সালে তারা তাদের রাজধানী চন্দ্রগিরিতে স্থানান্তরিত করে এবং ১৬৪৬ সাল অবধি রাজত্ব করে।[১৩][১৪]

    আরও দেখুন[সম্পাদনা]

    তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

    1. India Today Collector's edition of History[পূর্ণ তথ্যসূত্র প্রয়োজন]
    2. "২৬ জানুয়ারি, ১৫৬৫"আনন্দবাজার পত্রিকা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০২০ 
    3. Eaton 2006, পৃ. 96–98।
    4. Sen, Sailendra (২০১৩)। A Textbook of Medieval Indian History। Primus Books। পৃষ্ঠা 110। আইএসবিএন 978-9-38060-734-4 
    5. Kamath, Suryanath U. (২০০১)। A concise history of Karnataka : (from pre-historic times to the present)। Jupiter Books। ওসিএলসি 634688073 
    6. "History vs 'Crossing to talikota' play by Girish Karnad"Firstpost। সংগ্রহের তারিখ ২০১৯-১১-০১ 
    7. K. A. Nilakanta Sastri (1955), A History of South India, Oxford University Press, p. 267, আইএসবিএন ০১৯৫৬০৬৮৬৮
    8. Hermann Kulke; Dietmar Rothermund (২০০৪)। A History of India। Routledge। পৃষ্ঠা 191। আইএসবিএন 978-0-415-32920-0 , Quote: "When battle was joined in January 1565, it seemed to be turning in favor of Vijayanagara - suddenly, however, two generals of Vijayanagara changes sides. Aliya Rama Raya was taken prisoner and immediately beheaded."
    9. Eaton 2006, পৃ. 98, Quote: "Husain (...) ordered him beheaded on the spot, and his head stuffed with straw (for display)."।
    10. চিসাম, হিউ, সম্পাদক (১৯১১)। "Bijapur"। ব্রিটিশ বিশ্বকোষ3 (১১তম সংস্করণ)। কেমব্রিজ ইউনিভার্সিটি প্রেস। পৃষ্ঠা 927। 
    11. "A Forgotten Empire: Vijayanagar; A Contribution to the History of India" 
    12. "চাঁদ সুলতানার জননী: খুঞ্জা হুমায়ুন"বণিক বার্তা। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০২০ 
    13. Eaton, Richard Maxwell. (২০০৫)। A social history of the Deccan, 1300-1761 : eight Indian lives। Cambridge, UK: Cambridge University Press। আইএসবিএন 0-521-25484-1ওসিএলসি 58431679 
    14. "The British Colonies: Their History, Extent, Condition and Resources, Volume 10"