তরমুজ (ফিলিস্তিনি প্রতীক)
তরমুজ (দক্ষিণ লেভান্টাইন আরবি: بطيخ, রোমানাইজড: baṭṭīkh) ফিলিস্তিনি ভূখণ্ডে ইসরায়েলের দখলদারিত্বের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনিদের সংগ্রামের প্রতিচ্ছবি হিসেবে ব্যবহৃত একটি প্রতীক। [১][২][৩]
উৎস
[সম্পাদনা]প্যান আরব রঙে (লাল, সবুজ, সাদা এবং কালো) রঙিন ফিলিস্তিনের পতাকা ইসরায়েলে কিছু নির্দিষ্ট পরিস্থিতিতে নিষিদ্ধ হওয়ার ফলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত এবং একই রঙের তরমুজ ফিলিস্তিনি প্রতীক হিসেবে দীর্ঘ সময় ধরে বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে।[৪] ১৯৬৭ সালের ছয় দিনের যুদ্ধের পর, ইসরায়েল গাজা উপত্যকা এবং পশ্চিম তীরে ফিলিস্তিনি পতাকা এবং এর রঙ প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে। তখন কেউ এই পতাকা প্রদর্শন করলে ইসরায়েলি সেনাবাহিনী তাদের গ্রেফতার করত।[৫][৬]
১৯৮০ সালে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী রামাল্লাহতে একটি আর্ট গ্যালারি বন্ধ করে দেয়। প্রদর্শনী আয়োজকদের আইডিএফ জানায় যে নিয়ম অনুযায়ী ফিলিস্তিনিদের লাল, সবুজ, কালো এবং সাদা রঙ প্রদর্শন করা নিষিদ্ধ। তরমুজও সেই ধরণের শিল্পকর্মের একটি, যা ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নিয়মের লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য হয়েছিল।[৭]
১৯৯৩ সালে অসলো চুক্তির অংশ হিসেবে ইসরায়েল ফিলিস্তিনি পতাকার উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নেয়।[৮] সেই সময়, দ্য নিউ ইয়র্ক টাইমস জানায় যে অতীতে "তরমুজের টুকরো বহন করার জন্য তরুণদের গ্রেফতার করা হয়েছিল,"[৯] তবে ফিলিস্তিনি শিল্পী সুলেইমান মনসুর এই দাবির সত্যতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। পরে নিবন্ধে সম্পাদকীয় নোটে বলা হয়, "পরিস্থিতির অস্পষ্টতা বিবেচনায়, দ্য টাইমসের হয় এই গল্পটি বাদ দেওয়া উচিত ছিল বা স্পষ্ট করা উচিত ছিল যে রিপোর্টটি নিশ্চিত নয়।"[৯] যদিও মনসুর তরমুজ নিয়ে একটি প্রাথমিক আলোচনার কথা শুনেছেন, তিনি ২০০৭ সালের আগে তরমুজকে ফিলিস্তিনি প্রতীকে পরিণত করার কোনো উদাহরণ দেখেননি। তখন খালেদ হোরানি "সাবজেক্টিভ অ্যাটলাস অফ প্যালেস্টাইন" প্রকল্পের জন্য একটি ছবি তৈরি করেছিলেন।
তরমুজ ব্যবহার করেছেন এমন অন্যান্য শিল্পীদের মধ্যে রয়েছেন সারাহ হাতাহেত, সামি বুখারি, আয়া মোবাইদিন এবং বিসান আরাফাত।[১০]
পুনঃআবির্ভাব
[সম্পাদনা]২০২৩ সালে ইসরায়েলের জাতীয় নিরাপত্তা মন্ত্রণালয় জনসম্মুখে ফিলিস্তিনি পতাকা প্রদর্শন নিষিদ্ধ করে। এর প্রতিক্রিয়ায়, অনেক ইসরায়েলি তাদের গাড়ি বা বস্তুতে তরমুজের স্টিকার লাগায়, যার ওপর লেখা ছিল "এটি ফিলিস্তিনি পতাকা নয়।"[৭]
২০২৩ সালে ইসরায়েল-হামাস যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর থেকে এই তরমুজের প্রতীকটি নতুন করে জনপ্রিয়তা পায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানাতে অনেকে এটি ব্যবহার করতে থাকেন।[১] সরাসরি ফিলিস্তিনি পতাকা বা ফিলিস্তিনি প্রতীক ব্যবহার করলে বাঁধা বা ব্যানের শিকার হতে পারে এমন প্ল্যাটফর্মে ফিলিস্তিনের প্রতি সমর্থন জানানে ব্যবহারকারীগণ তরমুজ প্রতিকটি ব্যবহার করেন।[১১]
চিত্রশালা
[সম্পাদনা]-
ফিলিস্তিনের জেনিনে অবস্থিত তরমুজের একটি ভাস্কর্য (জানুয়ারি ২০২১)
-
ব্রাসেলসে ফিলিস্তিনের সমর্থনে জনসমাগম (২০২৩)
-
স্পেনে ফিলিস্তিনের সমর্থনে বিক্ষোভ (১৭ ডিসেম্বর ২০২৩)
-
বার্সেলোনার একটি সড়কে আঁকা একটি ম্যুরাল
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ Holtermann, Callie (২৭ ডিসেম্বর ২০২৩)। "Why the Watermelon Emoji Is a Symbol of Support for Palestinians"। The New York Times। সংগ্রহের তারিখ ৫ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ "Watermelon: A slice of Palestinian resistance"। Middle East Eye (ইংরেজি ভাষায়)। ১৭ আগস্ট ২০২২।
- ↑ Sharon, Jeremy (২১ জুন ২০২৩)। "Activists use watermelons to protest police crackdown on Palestinian flags"। The Times of Israel।
- ↑ Berger, Miriam (১২ জুলাই ২০২১)। "Why Palestinians are uniting around watermelon emoji"। Washington Post।
- ↑ Sella, Adam (৩১ আগস্ট ২০২৩)। "The fruits and vegetables of Palestine and their significance"। Al Jazeera (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ Chaves, Alexandra (৩০ মে ২০২১)। "How the watermelon became a symbol of Palestinian resistance"। The National (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ ক খ "How watermelon imagery, a symbol of solidarity with Palestinians, spread around the world"। PBS NewsHour (ইংরেজি ভাষায়)। PBS। ১৭ জানুয়ারি ২০২৪।
- ↑ Syed, Armani (২০ অক্টোবর ২০২৩)। "How the Watermelon Became a Symbol of Palestinian Solidarity"। TIME (ইংরেজি ভাষায়)।
- ↑ ক খ Kifner, John (১৬ অক্টোবর ১৯৯৩)। "Ramallah Journal; A Palestinian Version of the Judgment of Solomon"। The New York Times।
গাজা উপত্যকায় যেখানে একসময় তরমুজের টুকরো বহন করার জন্য তরুণদের গ্রেফতার করা হতো— কারণ এতে লাল, কালো এবং সবুজ ফিলিস্তিনি রং প্রদর্শিত হতো— সেখানে এখন সৈন্যরা নির্লিপ্তভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, যখন মিছিলগুলো নিষিদ্ধ পতাকা উড়িয়ে চলে যায়।
- ↑ Chaves, Alexandra (৩০ মে ২০২১)। "How the watermelon became a symbol of Palestinian resistance"। The National (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ১৯ নভেম্বর ২০২৩।
- ↑ Giulia, Carbonaro (১২ ডিসেম্বর ২০২৩)। "Meta's social media platforms are systemically censoring pro-Palestine content, NGO finds"। Euronews Next।
বহিঃসংযোগ
[সম্পাদনা]- উইকিমিডিয়া কমন্সে তরমুজ সম্পর্কিত মিডিয়া দেখুন।