তপোধীর ভট্টাচার্য
তপোধীর ভট্টাচার্য (জন্ম ১২ ফেব্রুয়ারি ১৯৪৯) আসামের একজন বাঙালি বুদ্ধিজীবী৷[১] পাঠক মহলে তিনি তাঁর সময়ের অন্যতম চিন্তাশীল প্রাবন্ধিক হিসেবে পরিচিত।[২]
জন্ম এবং পরিবার
[সম্পাদনা]তপোধীর ভট্টাচাৰ্যের জন্ম কাছাড়ের শিলচরে।[৩] তার পিতা তারাপদ ভট্টাচার্য ছিলেন একজন স্বাধীনতা সংগ্ৰামী এবং শিলচর পৌরসভার প্রাক্তন সদস্য।[৩] পরবর্তীতে, ১৯৬২ সালে, তারাপদ ভট্টাচার্য সন্মিলিত বিরোধী দলের প্রার্থী হিসাবে আসাম বিধানসভায় নির্বাচিত হন।[১] তারাপদ ভট্টাচার্য একসময় কাছাড় হাইস্কুলের (শিলচর) শিক্ষক ছিলেন।[৩] তপোধীর ভট্টাচাৰ্যের মা অরুণা ভট্টাচার্য ছিলেন সংস্কৃতের শিক্ষক। চাকরি থেকে অবসর গ্রহণের পর তিনি বাংলায় স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন।[৩] গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় অরুণা ভট্টাচার্যকে মরণোত্তর পিএইচডি ডিগ্রি প্রদান করেছে।[১] তপোধীর ভট্টাচার্য ১৯৭৭ সালের ১০ ফেব্রুয়ারিতে স্বপ্না ভট্টাচার্যকে বিয়ে করেন৷[৩]
শিক্ষা এবং কর্মজীবন
[সম্পাদনা]তপোধীর ভট্টাচার্য জয়কুমার বিদ্যালয় এবং অভয়চরণ ভট্টাচার্য পাঠশালায় তাঁর শিক্ষাজীবন শুরু করেন। তিনি যথাক্রমে কাছাড় হাইস্কুল, শিলচর (মাধ্যমিক), কাছার কলেজ এবং গুরুচরণ কলেজ, শিলচর থেকে ইংরেজি সাহিত্যে অনার্স সহ স্নাতক হন।[১] তিনি গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ে সংস্কৃতে (বৈদিক সাহিত্য) এমএ করার জন্য ভর্তি হন। কিন্তু পারিবারিক কারণে তাকে পড়ালেখা অসমাপ্ত করে ঘরে ফিরতে হয়, এবং গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সংস্কৃত (বৈদিক সাহিত্য) বিষয়ে তিনি প্রথম শ্রেণীর প্ৰথম হয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং যোগীরাজ বসু, শরৎচন্দ্র গোস্বামী এবং একাডেমিক স্বর্ণপদক লাভ করেন।[১][৩] ১৯৭০ সালে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিটি এবং পরমার্থ সাধক সংঘ, বারাণসী থেকে গীতা বিশারদ হন৷[১] তিনি ১৯৭৩ সালে গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা (সাহিত্য) বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন এবং গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলায় (ভাষাবিজ্ঞান) স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন।[১][৩] তপোধীর ভট্টাচার্য ১৯৬৯ সালে নরসিংহ উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন এবং ১৯৭৩ সালে সংস্কৃত শিক্ষক হিসেবে উন্নীত হন।[১][৩] তিনি ১৯৭৪ সালে কাছাড় কলেজে সংস্কৃতের প্রভাষক হিসাবে যোগদান করেন।[১][৩] তিনি ১৯৭৮ সালে কাছাড় কলেজের বাংলা বিভাগে খণ্ডকালীন প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।[১][৩] তিনি ১৯৮২ সালে ভারততত্ত্ববিদ সুকুমারী ভট্টাচার্যের তত্ত্বাবধানে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি লাভ করেন আর তিনি ১৯৮৫ গৌহাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন।[১][৩] ১৯৮৬ সালে তিনি উত্তরবঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগদান করেন আর ১৯৮৭ সালে, তিনি একই বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক পদে উন্নীত হন।[১][৩] ১৯৯৪ সালে তিনি আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে যোগ দেন৷[১][৩] ২০০৬ সালে, তিনি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভারতীয় ভাষা ও সাহিত্য বিভাগে রবীন্দ্র অধ্যাপক হিসেবে যোগদান করেন।[১] তিনি ২০০৭ সালে আসাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর পদে যোগদান করেন এবং ইতিমধ্যে অবসর নিয়েছেন।[১]
সাহিত্য কৰ্ম
[সম্পাদনা]তপোধীর ভট্টাচার্য এ পর্যন্ত প্রায় ১৯০টি বই প্রকাশ করেছেন। ‘তুমি সেই পীড়িত কুসুম’ তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ। তাহার ১৯০টি বইয়ের মধ্যে প্রায় ৩৭টি কবিতা সংকলন৷[১][৩][৪]
- আধুনিকতা, জীবনানন্দ ও পরাবাস্তব (স্বপ্না ভট্টাচাৰ্যের সাথে যুগ্মভাৱে), নৰ্বাক, কলকাতা, ১৯৮৭।
- আধুনিকতা, পৰ্ব থেকে পৰ্বান্তর (পুস্তক বিপনী, কলকাতা, ১৯৯৫)।
- বাখতিন : তত্ত্ব ও প্ৰয়োগ (পুস্তক বিপনী, কলকাতা, ১৯৯৬)।
- প্ৰতীচ্যের সাহিত্য তত্ত্ব (অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ, মেদিনীপুর, ১৯৯৭)।
- ঐতিহ্যের পুনৰ্নিৰ্মাণ (প্ৰমা, কলকাতা, ১৯৯৭)।
- মিশেল ফুকো : তাঁর তত্ত্ববিশ্ব (অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ, মেদিনীপুর, ১৯৯৭)।
- জাক দেরিদা : তাঁর বিনিৰ্মাণ (অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ, মেদিনীপুর, ১৯৯৮)।
- রোঁলা বাৰ্ত : তাঁর পাঠকৃতি (অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ, মেদিনীপুর, ১৯৯৮)।
- ছোটগল্পের অন্তৰ্ভূবন (মহাজাতি প্ৰকাশনী, কলকাতা, ১৯৯৮)।
- উপন্যাসের প্ৰতিবেদন (রাডিকেল, কলকাতা, ১৯৯৯)।
- উপন্যাসের সময় (এবং মুশায়েরা, কলকাতা, ১৯৯৯)।
- টেরি ঈগলটন (অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ, মেদিনীপুর, ২০০০)।
- জাঁ বদ্ৰিলার (অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ, মেদিনীপুর, ২০০১)।
- অদ্বৈতমল্লবৰ্মণ (পশ্চিমবঙ্গ বাংলা অকাডেমি, কলকাতা, ২০০১)।
- সময়ের নতুন সমিধ (মনোবীজ, আগৰতলা, ২০০১)।
- আধুনিকতার উন্মেষপৰ্বে সিলেটে কাব্যচৰ্চা (সাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়, সিলেট, বাংলাদেশ, ২০০২)।
- জীবনানন্দ : কবিতাৰ সংকেত বিশ্ব (প্ৰতিভাস, কলকাতা, ২০০২)।
- সুধীন্দ্ৰনাথ : ভাববিশ্ব ও কাব্যবীক্ষা (এবং মুশায়েরা, কলকাতা, ২০০২)।
- ছোটগল্পের বিনিৰ্মাণ (আবহমান, আগরতলা, ২০০২)।
- নিবিড় পাঠের নন্দন (অক্ষর, আগরতলা, ২০০২)।
- বাখতিন (অনুষ্টুপ, কলকাতা, ২০০২)।
- কবিতার রূপান্তর (সাহিত্যলোক, কলকাতা, ২০০৩)।
- কালবেলার কথকতা (প্ৰতিভাস, কলকাতা, ২০০৪)।
- সময়ের প্ৰত্নতত্ত্ব ও অন্যান্য (জ্ঞানবিচিত্ৰা, আগরতলা, ২০০৫)।
- আখ্যানের সাতকাহন (অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ, মেদিনীপুর, ২০০৫)।
- উপন্যাসের ভিন্ন পাঠ (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৫)।
- সময়-সমাজ-সাহিত্য (বিশ্ববাণী সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০০৫)।
- আখ্যানের স্বরান্তর (দিবারাত্ৰিৰ কাব্য, কলকাতা, ২০০৬)।
- চিত্ৰকলার দুই কিংবদন্তি গখ ও পিকাসো (অক্ষর, আগৰতলা, ২০০৯)।
- আশাপূণা : নারী পরিসর (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- আমাদের চিন্তাবিশ্ব (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- অসীমের চিরবিস্ময় (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- কথার সময় সময়ের কথা (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- প্ৰবন্ধের ভুবন : ব্যক্তি ও সৃষ্টি (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- কবিতা : নন্দন ও সময় (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০২২)।
- ভারতীয় নন্দনচিন্তা (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা, ২০২২)।
- আসামে বাঙালি মৃগয়া (একুশ শতক, কলকাতা)।
- নব্য তোতাকাহিনী ও অন্যান্য (একুশ শতক, কলকাতা)।
- পশ্চিমের জানালা (একুশ শতক, কলকাতা)।
- পড়ুয়ার ছোট গল্প (একুশ শতক, কলকাতা)।
- বাঙালির সৃষ্টি ও মনন : কালে কালান্তরে (একুশ শতক, কলকাতা)।
- সমবায়ী পাঠ (একুশ শতক, কলকাতা)।
- সময় অসময় নিঃসময় (একুশ শতক, কলকাতা)।
- অবসান, অবিরাম, পদধ্বনি ও অন্যান্য (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- শঙ্খ ঘোষ : সৃষ্টি ও নিৰ্মাণ (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- উপন্যাসের আলো আঁধার (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- কথাপরিসর বাংলাদেশ (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- উৎসে অববাহিকায় (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- নয়ানজুলির জীবন (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- নারীচেতনা মননে ও সাহিত্যে (বঙ্গীয় সাহিত্য সংসদ, কলকাতা)।
- ছোটগল্পের সুলুক-সন্ধান (পূবাৰ্ধ) (দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা, ২০১৭)।
- ছোটগল্পের সুলুক-সন্ধান (উত্তরাৰ্ধ) (দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা)।
- বাংলা কবিতার ছায়াতপ (পূবাৰ্ধ) (দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা)।
- বাংলা কবিতার ছায়াতপ (উত্তরাৰ্ধ) (দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা)।
সংবৰ্ধনা আর পুরস্কার
[সম্পাদনা]তিনি সংবৰ্ধনা আর পুরস্কার লাভ করেছেন অনেক [৩]-
- ২০০০ সালে, তিনি সাহিত্য তত্ত্ব ও সমালোচনায় অসামান্য অবদানের জন্য অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ থেকে জীবানন্দ পুরস্কার পান।
- ২০০৩ সালে, তিনি একাডেমি অফ থ্রি আর্চ, সিলেট, বাংলাদেশের দ্বারা লিজেণ্ডারি পাৰ্চনেলিটি অফ দি রিজিয়ন সম্মানে ভূষিত হন।
- ২০০৪ সালে, তিনি বাংলা সমালোচনা সাহিত্যে অসামান্য অবদানের জন্য শরিক সাহিত্য গ্রুপ কর্তৃক নাগরিক সংবৰ্ধনা পান।
- ২০০৬ সালে, তিনি অমৃতলোক সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক সম্মানিত হন।
- ২০০৬ সালে, তিনি জীবন দর্পণ ম্যাগাজিন দ্বারা সম্মানিত হন।
- ২০০৬ সালে, মেদিনীপুর পৌরসভা তাকে শহরের চাবি হস্তান্তর করে সম্মানিত করেছিল।
তথ্যসূত্ৰ
[সম্পাদনা]- 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 বিশ্বজিৎ চৌধুরি (মুখ্য সম্পাদক) (২০০৯)। তপোধীর ভট্টাচাৰ্য ৬০ সম্মাননাগ্ৰন্থ। শরিক সাহিত্য, করিমগঞ্জ - অসম। পৃ. ১২১ আর ২৬৭।
{{বই উদ্ধৃতি}}:|লেখক=প্যারামিটারে সাধারণ নাম রয়েছে (সাহায্য) - ↑ তপোধীর ভট্টাচাৰ্য (২০০৬)। প্ৰতীচ্যর সাহিত্য তত্ত্ব। দে'জ পাবলিশিং, কলকাতা - ৩। পৃ. Back flap of the dust jacket। আইএসবিএন ৯৭৮-৮১-২৯৫-১৪১৯-৬।
- 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 তপোধীৰ ভট্টাচাৰ্য (২০১৪)। রেখা আরু রঙর বিপ্লবত পাবলো পিকাছো। ভিকি পাবলিচাৰ্ছ, গুয়াহাটী - ৫। পৃ. ৮১–৮৬। আইএসবিএন ৯৭৮-৯৩-৮০৩৮২-৮৮-৩।
- ↑ "প্ৰকাশিত গ্ৰন্থ"। সংগ্রহের তারিখ ১১ অক্টোবর ২০২৪।