বিষয়বস্তুতে চলুন

টারগোভিস্তের হামলার রাত

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

 

তারগভিস্তের রাতের হামলা ( রোমানীয়: Atacul de noapte de la Târgoviște ) বলতে ওয়ালাচিয়ার যুবরাজ তৃতীয় ভ্লাদ এবং অটোমান সাম্রাজ্যের সুলতান দ্বিতীয় মুহাম্মদের বাহিনীর মধ্যে একটি ঐতিহাসিক যুদ্ধকে বোঝায় যা ১৪৬২ খ্রিস্টাব্দের ১৭ জুন তারিখে সংঘটিত হয়েছিল। যুদ্ধটি শুরু হয় যখন দ্বিতীয় মেহমেদ (মুহাম্মদ) আবিষ্কার করেন যে হাঙ্গেরির রাজা ম্যাথিয়াস করভিনাসের সাথে ভ্লাদের মিত্রতা হয়েছে। মেহমেদ তাদের আক্রমণ করার নির্দেশ দেন কিন্তু ভ্লাদ আক্রমণ ব্যর্থ করে দেয় এবং বুলগেরিয়া আক্রমণ করে। জবাবে মেহমেদ ওয়ালাচিয়া জয় করার লক্ষ্যে একটি বিশাল সেনাবাহিনী গঠন করে। দুই সমরনায়কের মধ্যে ধারাবাহিক সংঘর্ষ ঘটতে থাকে, যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য সংঘর্ষ ছিল যে রাতে ভ্লাদ মেহমেদকে হত্যা করার জন্য তুর্কি শিবিরে আক্রমণ করে। হত্যার চেষ্টা ব্যর্থ হয় এবং মেহমেদ ওয়ালাচিয়ান রাজধানী টারগোভিস্তের দিকে যাত্রা করেন। সেখানে তিনি কামান সহ কয়েকজন লোককে দেখতে পান। রাজধানী ত্যাগ করার পর, মেহমেদ ২৩,৮৪৪ জন তুর্কিকে শূলে বিদ্ধ অবস্থায় আবিষ্কার করেন যাদেরকে ভ্লাদ বুলগেরিয়া আক্রমণের সময় হত্যা করেছিল। ম্যাথিয়াস করভিনাসকে লেখা একটি চিঠিতে ভ্লাদ নিজেই এই সংখ্যাটি উল্লেখ করে। এরপর সুলতান এবং তার সৈন্যরা ব্রেইলার দিকে যাত্রা করে এবং আদ্রিয়ানোপলে ফিরে যাওয়ার আগে শহরটি পুড়িয়ে দেয়। মেহমেদের বাহিনী প্রচুর যুদ্ধবন্দী দাস, ঘোড়া এবং গবাদি পশু নিয়ে রাজধানীতে ফিরে আসেন।

পটভূমি

[সম্পাদনা]

১৪৫৩ সালে কনস্টান্টিনোপল পতনের পর, মেহমেদ তার মনযোগ অন্যান্য অভিযানের দিকে নিবিষ্ট করেন। আনাতোলিয়ায় ট্রেবিজন্ডের গ্রীক সাম্রাজ্য অটোমানদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ করে যাচ্ছিল। পূর্বে উজুন হাসানের সাদা মেষ তুর্কোমানেরা অন্যান্য ছোট রাজ্যগুলির সাথে মিলে অটোমানদের হুমকি দেয়। পশ্চিমে আলবেনিয়ার সেকেন্দার বেগ সুলতানকে প্রতিনিয়ত সমস্যার মুখে ফেলতে থাকে। অন্যদিকে বসনিয়াও কখনও কখনও জিজিয়া কর দিতে অনিচ্ছা প্রকাশ করছিল। তখন ওয়ালাচিয়া দানিউবের বাম তীর নিয়ন্ত্রণ করত আর মেহমেদ চাইতেন নদীর উপর নিয়ন্ত্রণ রাখতে, কারণ নদীপথে পবিত্র রোমান সাম্রাজ্য থেকে উসমানীয় সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে নৌ-আক্রমণ চালানোর সম্ভাবনা ছিল। ১৪৫৯ সালের ২৬ সেপ্টেম্বর পোপ দ্বিতীয় পিয়াস অটোমানদের বিরুদ্ধে একটি নতুন ক্রুসেডের ডাক দেন এবং ১৪ জানুয়ারী ১৪৬০ সালে মান্টুয়ার কংগ্রেসে পোপ আনুষ্ঠানিকভাবে ক্রুসেডের ঘোষণা করেন যা তিন বছর দীর্ঘায়িত হয়। তবে, পোপের পরিকল্পনা ব্যর্থ হয়। এই ক্রুসেডের প্রতি উৎসাহ প্রদর্শনকারী একমাত্র ইউরোপীয় নেতা ছিল ভ্লাদ সেপেস, যাকে পোপ অত্যন্ত সম্মান করতেন।[] ক্রুসেডের প্রতি ইউরোপীয়দের উৎসাহের অভাবের কারণে মেহমেদ আক্রমণাত্মক অবস্থান নেওয়ার সুযোগটি গ্রহণ করেন। পরে একই বছর (১৪৬০) তিনি শেষ স্বাধীন সার্বিয়ান শহর স্মেদেরেভো দখল করেন এবং ১৪৬১ সালে তিনি মোরিয়ার গ্রীক স্বৈরশাসককে দুর্গ ছেড়ে দিতে বাধ্য করেন; এর পরপরই রাজধানী মিস্ত্রা এবং করিন্থ একইভাবে কোনও সংগ্রাম ছাড়াই আত্মসমর্পণ করে।[]

ভ্লাদ সেপেসের একমাত্র মিত্র ছিল মিহালি স্যিলাগ্যি। ১৪৬০ সালে বুলগেরিয়া অতিক্রম করার সময় তুর্কিরা তাকে বন্দী করে। স্যিলাগ্যির লোকদেরকে প্রচুর নির্যাতন করা হয় যার ফলে তারা মৃত্যুমুখে পতিত হয়। এদিকে স্যিলাগ্যিকে করাত দিয়ে অর্ধেক করে দেয়া হয়। সে বছরের শেষদিকে, মেহমেদ ভ্লাদের কাছে দূত পাঠান এবং বিলম্বিত জিজিয়া পরিশোধের জন্য নির্দেশ দেন। ভ্লাদ সেপেস দূতদের হত্যা করে মেহমেদকে উত্তেজিত করে এবং ১৪৬০ সালের ১০ সেপ্টেম্বর ক্রোনস্টাড্টের (বর্তমান: ব্রাসোভ) ট্রান্সিলভেনিয়ান স্যাক্সনদের উদ্দেশ্যে লেখা একটি চিঠিতে মেহমেদের আক্রমণ পরিকল্পনা সম্পর্কে সতর্ক করে এবং তাদের সমর্থন কামনা করে। ১৪৫৯ সাল থেকে বার্ষিক ১০,০০০ ডুকাত পরিমাণ জিজিয়া পরিশোধ করেনি ভ্লাদ। এর পাশাপাশি, মেহমেদ তার কাছে ১০০০ যুবক চেয়েছিলেন যাদেরকে জেনিসারি হিসেবে প্রশিক্ষণ দেওয়ার কথা ছিল। ভ্লাদ সেপেস দাবি প্রত্যাখ্যান করে এবং তুর্কিরা দানিউব পার হয়ে নিজস্বভাবে সৈন্য রিক্রুট করতে শুরু করে। প্রতিক্রিয়ায় ভ্লাদ তুর্কিদের বন্দী করে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে দেয়। এই সংঘাত অব্যাহত থাকে ১৪৬১ সাল পর্যন্ত যখন মেহমেদ যুবরাজ ভ্লাদকে ইস্তাম্বুলে এসে তার সাথে আলোচনা করতে বলেন।

১৪৬১ সালের নভেম্বরের শেষের দিকে ভ্লাদ সেপেস মেহমেদকে চিঠি লিখে যে সে জিজিয়া পরিশোধ করতে পারবে না, কারণ ট্রান্সিলভেনিয়ার স্যাক্সনদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ তার সম্পদ শূন্য করে দিয়েছে। আর ওয়ালাচিয়াকে হাঙ্গেরীয় রাজার দখলে নেওয়ার ঝুঁকি নিতে পারবে না। সে আরও প্রতিশ্রুতি দেয় যে যখনই সে সক্ষম হবে, তখন সুলতানকে প্রচুর সোনা পাঠাবে এবং যদি সুলতান তার অনুপস্থিতিতে ওয়ালাচিয়ার শাসনের জন্য একজন পাশা পাঠান তবে তিনি কনস্টান্টিনোপলে যাবেন। ইতিমধ্যে সুলতান গোয়েন্দা প্রতিবেদনে তথ্য পান যে হাঙ্গেরীর রাজা ম্যাথিয়াস করভিনাসের সাথে ভ্লাদের মিত্রতা রয়েছে। তিনি নিকোপোলিসের শাসক হামজা পাশাকে গিউরগিউতে ভ্লাদের সাথে একটি কূটনৈতিক বৈঠকের জন্য পাঠান। কিন্তু বার্তা দেন যে সেখানে অতর্কিত আক্রমণ করার; এবং তারপরে তাকে কনস্টান্টিনোপলে নিয়ে আসার। ভ্লাদকে আগে থেকেই সতর্ক করা হয় এবং সে নিজেই একটি আক্রমণ চালানোর পরিকল্পনা করে। হামজা তার সাথে ১০০০ অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে এসেছিলেন এবং গিউরগিউর উত্তরে একটি সরু গিরিপথ অতিক্রম করার সময় ভ্লাদ একটি অতর্কিত আক্রমণ শুরু করে। ওয়ালাচিয়ানরা তুর্কিদের ঘিরে ফেলে এবং তাদের হ্যান্ডগানার দিয়ে গুলি চালায় যতক্ষণ না পুরো বাহিনী নিহত হয়। ইতিহাসবিদরা ভ্লাদ সেপেসকে "মারাত্মক শৈল্পিক উপায়ে" বারুদ ব্যবহারকারী প্রথম ইউরোপীয় ক্রুসেডারদের একজন হিসেবে কৃতিত্ব দেন।[] ১৪৬২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী করভিনাসকে লেখা একটি চিঠিতে ভ্লাদ লিখে যে হামজা পাশাকে গিউরগিউয়ের প্রাক্তন ওয়ালাচিয়ান দুর্গের কাছে বন্দী করা হয়েছিল। এরপর সে তুর্কীর ছদ্মবেশ ধারণ করে তার অশ্বারোহী বাহিনী নিয়ে দুর্গের দিকে অগ্রসর হয় যেখানে সে তুর্কি ভাষায় রক্ষীদের দরজা খোলার নির্দেশ দেয়।[] ভ্লাদ সেপেস দুর্গ আক্রমণ করে ধ্বংস করে দেয়।[] পরবর্তী পদক্ষেপে ভ্লাদ একটি অভিযানে শত্রু সৈন্য এবং তুর্কিদের প্রতি সহানুভূতিশীল জনগোষ্ঠীকে হত্যা করে; প্রথমে দক্ষিণ ওয়ালাচিয়ায়, তারপর বুলগেরিয়ায়, হিমায়িত দানিউব পার হয়ে। বুলগেরিয়ায় থাকাকালীন সে তার সেনাবাহিনীকে কয়েকটি ছোট ছোট দলে বিভক্ত করেছিল এবং দুই সপ্তাহে প্রায় "৮০০ কিলোমিটার" অতিক্রম করে । তারা ২৩,০০০ এরও বেশি তুর্কিকে হত্যা করেছিল। ১৪৬২ সালের ১১ ফেব্রুয়ারী করভিনাসকে লেখা একটি চিঠিতে সে লিখে:[]

আমি হত্যা করলাম কৃষক পুরুষ ও নারীদের, বৃদ্ধ ও যুবকদের যারা ওব্লুচিৎজা এবং নোভোসেলোতে বাস করছিল, যেখানে দানিউব সমুদ্রে গিয়ে মিলিত হয়, রাহোভা পর্যন্ত, যা অবস্থিত চিলিয়ার নিকটে, নিম্ন দানিউব থেকে সামোভিট এবং ঘিগেনের মতো জায়গা পর্যন্ত। আমরা ২৩,৮৮৪ জন তুর্কিকে হত্যা করেছি, তাদেরকে গণা ব্যতীত যাদেরকে আমরা ঘরে পুড়িয়ে মেরেছি বা যাদের মাথা আমাদের সৈন্যরা কেটে ফেলেছে... অতএব, মহামান্য, আপনার অবশ্যই জানা উচিত যে আমি তার (সুলতান মেহমেত দ্বিতীয়) সাথে শান্তি ভঙ্গ করলাম।

খ্রিস্টান বুলগেরিয়ানদের রক্ষা করা হয় এবং তাদের অনেকেই ওয়ালাচিয়ায় বসতি স্থাপন করে। তার সুনির্দিষ্ট সংখ্যা এভাবে গণনা করা হয়েছিল: গিউরগিউতে ৬৪১৪ জন শিকার; এনি সালায়, ১৩৫০ জন; দুরোস্তরে ৬৮৪০ জন; ওরসোভাতে ৩৪৩ জন; হারসোভাতে ৮৪০ জন; মারোতিনে ২১০ জন; তুরতুসায়াতে ৬৩০ জন; তুরনু, বাতিন, এবং নোভোগ্রাদে ৩৮৪ জন; সিস্তভে ৪১০ জন; নিকোপলিস এবং ঘিগেনে ১১৩৮ জন; রাহোভাতে ১৪৬০ জন। ধ্বংসযজ্ঞের কথা শুনে, মেহমেদ - যিনি তখন করিন্থের একটি দুর্গ ঘেরাও করতে ব্যস্ত ছিলেন - তার উজিরে আযম মাহমুদকে ১৮,০০০ সৈন্যের একটি সেনাবাহিনী দিয়ে ব্রেইলার ওয়ালাচিয়ান বন্দর ধ্বংস করার জন্য পাঠান। ভ্লাদ তেপেস পিছু হটে এবং বাহিনীকে পরাজিত করে। জিওভান্নি মারিয়া অ্যাঞ্জিওলেলোর হিস্টোরিয়া তুর্চেস্কা অনুসারে এবং একজন ইতালীয় ইতিহাসবিদ ডোনাডো দা লেজের মতে মাত্র ৮,০০০ তুর্কি বেঁচে ছিলেন। ভ্লাদ সেপেসের অভিযান ট্রান্সিলভেনিয়ার স্যাক্সন শহর, ইতালীয় রাজ্য এবং পোপের মধ্যে সমারোহে উদযাপন করা হয়েছিল। ৪ মার্চ করভিনাসের দরবারে এই খবর শুনে একজন ভেনিসীয় দূত অত্যন্ত আনন্দ প্রকাশ করে বলে যে সমগ্র খ্রিস্টধর্মের উচিত ভ্লাদ সেপেসের সফল অভিযান উদযাপন করা।[] পবিত্র ভূমিতে ভ্রমণকারী একজন ইংরেজ তীর্থযাত্রী উইলিয়াম ওয়ে রোডস দ্বীপের মধ্য দিয়ে বাড়ি ফেরার পথে লিখেছিলেন যে, "ভ্লাদ সেপেসের অভিযানের কথা শুনে রোডসের সামরিক কর্মীরা ঈশ্বরের প্রশংসা ও সম্মানে তে দেউম গান গাইতে থাকে যিনি এই ধরণের বিজয় দান করেছেন....রোডসের লর্ড মেয়র তার ভাতৃ সৈন্যদের ডেকেছিলেন এবং সকল নাগরিক ফল এবং ওয়াইন ভোগ করে।" কাফার জেনোসরা ভ্লাদ সেপেসকে ধন্যবাদ জানায় কারণ তার এই অভিযান তাদের বিরুদ্ধে সুলতানের প্রায় ৩০০ টি জাহাজের পাঠিয়ে আক্রমণ করা থেকে রক্ষা করে। অনেক তুর্কি ভ্লাদকে ভয় পেয়ে তাদের সাম্রাজ্যের ইউরোপীয় দিক ছেড়ে আনাতোলিয়ায় চলে যায়। ঘটনাটি শুনে মেহমেদ করিন্থে তার অবরোধ ত্যাগ করেন এবং ভ্লাদ সেপেসের বিরুদ্ধে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।

যুদ্ধের প্রস্তুতি

[সম্পাদনা]

তুর্কিরা

[সম্পাদনা]
মেহমেদ দ্বিতীয়, ছবি: জেন্টিল বেলিনি

মেহমেদ চারিদিকে দূত পাঠালেন একটি বিশাল সেনাবাহিনী গঠনের উদ্দেশ্যে, যা "সংখ্যা ও সমরাস্ত্রে সেই বাহিনীর সমতূল্য ছিল যে বাহিনী তিনি কনস্টান্টিনোপল অবরোধের সময় ব্যবহার করেছিলেন ।" ১৪৬২ খৃস্টাব্দের ২৬ এপ্রিল বা ১৭ মে তারিখে, সুলতান ওয়ালাখিয়া জয়ের লক্ষ্যে কনস্টান্টিনোপল থেকে তার সেনাবাহিনীসহ যাত্রা করেন। সুলতান নিজেই তার একজন প্রধান উজিরকে প্রেরিত একটি চিঠিতে উল্লেখ করেন যে, তিনি তার সাথে ১,৫০,০০০ সৈন্য নিয়ে অভিযানে বেরিয়েছেন। গ্রীক ইতিহাসবিদ লাওনিকোস খালকোকোন্দাইলিস মেহমেদের সেনাবাহিনীকে অভিহিত করেন, "বিশাল; প্রচণ্ড আকারের এক বাহিনী হিসেবে, যা এই সুলতানের কনস্টান্টিনোপলের বিরুদ্ধে নেতৃত্বাধীন সেনাবাহিনীর পর আকারে দ্বিতীয়।" তিনি সেনাসংখ্যা অনুমান করেন আড়াই লক্ষ, অপরদিকে তুর্কি ঐতিহাসিক তুরসুন বে ৩ লক্ষ উল্লেখ করেন। একই সংখ্যার উল্লেখ পাওয়া যায়ভেরোনায় প্রাপ্ত একটি বেনামী ইতালীয় পত্র-ক্রনিকলে, যা মনে করা হয় ক্রিস্টোফোরো স্কিয়াপ্পা নামে একজন ব্যবসায়ী রচনা করেছেন। মিলানের ডিউক ফ্রান্সেস্কো প্রথম স্ফোরজাকে লেখা লিওনার্দো টোক্কোর এক পত্রে বর্ণনা করা হয় যে, মেহমেদ রুমেলিয়া ও আনাতোলিয়া থেকে চার লক্ষ সৈন্য নিয়োগ করেছিলেন, যাদের মধ্যে ৪০ হাজার ছিল কুঠারধারী সেতুনির্মাতা। অন্যদিকে একটি অপেক্ষাকৃত কম অনুমান করেন বুদায় নিযুক্ত ভেনিসীয় দূত টম্মাসি, যিনি জানান যে, নিয়মিত বাহিনীর সংখ্যা ছিল ৬০ হাজার এবং প্রায় ৩০ হাজার অনিয়মিত সৈন্য ছিল। এই বাহিনীতে অন্তর্ভুক্ত ছিল জানিসারি (অভিজাত দাস বাহিনী); পদাতিক সৈন্য; সিপাহি (সামন্ত অশ্বারোহী বাহিনী); সাইয়ালেস (প্রাণবাজি রাখা ক্রীতদাসদের সমন্বয়ে গঠিত ইউনিট যারা বেঁচে থাকলে স্বাধীনতা অর্জন করতে পারত); আকিঞ্জি (তীরন্দাজ); সিলাহদার (সুলতানের অস্ত্ররক্ষক ও পার্শ্বদেশ রক্ষা কর্তা); আযাব (বর্শাবাহক); বেশ্লি (আগ্নেয়াস্ত্র বাহক) এবং সুলতানের ব্যক্তিগত দেহরক্ষীরা।

ভ্লাদের সৎ ভাই রাদু দ্য হ্যান্ডসাম যিনি স্বেচ্ছায় সুলতানের সেবা করছিলেন, তিনি ৪ হাজার ঘোড়সওয়ারের অধিনায়ক ছিলেন। এর পাশাপাশি, তুর্কিরা তাদের সাথে এনেছিল ১২০টি কামান, রাস্তা ও সেতু নির্মাণকারী প্রকৌশলী এবং শ্রমিক, উলামা, মুয়াজ্জিন, আফলাকি - যারা মেহমেদকে পরামর্শ দিয়ে সামরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে সাহায্য করতেন; এবং কামিনী নারীদের যাদেরকে "সৈন্যদের রাতের আনন্দের জন্য সংরক্ষিত" রাখা হয়েছিল। খালকোকোন্দাইলিস আরও উল্লেখ করেন, দানিউবের জাহাজ মালিকদের তিন লক্ষ স্বর্ণমুদ্রা প্রদান করা হয়েছিল সেনাবাহিনী পরিবহনের বিনিময়ে। এছাড়াও অটোমানরা তাদের নিজস্ব নৌবহর ব্যবহার করেছিল, যার মধ্যে ছিল ২৫টি ত্রিমার্গ (ত্রিরেম) এবং ১৫০টি ছোট জাহাজ।

ওয়ালাখিয়ানরা

[সম্পাদনা]
শ্লোস আমব্রাস, ইনসব্রুক-এ ভ্লাদের প্রতিকৃতি

ভ্লাদ তেপেশ হাঙ্গেরির রাজার কাছে সাহায্যের আবেদন জানান। যদিও করভিনাসের সহায়তার প্রতিশ্রুতি সত্ত্বেও বাস্তবে কোনও সমর্থন পায়নি। পরিবর্তে ভ্লাদ একটি গণআহ্বান জানান, যাতে "শুধুমাত্র সামরিক পুরুষরাই নয়, বরং অন্তর্ভুক্ত ছিল নারী এবং ১২ বছর বয়সী শিশুরাও; এমনকি ছিল জিপসি দাসদলের অন্তর্ভুক্তি।" বিভিন্ন সূত্রে তার সেনাবাহিনীর শক্তি ২২ হাজার থেকে ৩০ হাজারের মধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে, যার মধ্যে সর্বাধিক জনপ্রিয় গ্রহণযোগ্য সংখ্যাটি হল ৩০ হাজার। লিওনার্দো টোক্কোর চিঠিতে তুর্কি সেনাবাহিনীর সংখ্যা যেখানে অতিরঞ্জিতভাবে ৪ লক্ষ বলা হয়, একইভাবে ওয়ালাখিয়ান শক্তির সংখ্যা ২ লাখ বলেও উল্লেখ করা হয়। এই বাহিনীর বেশিরভাগই ছিল কৃষক এবং মেষপালকগণ, আর অল্পসংখ্যক ঘোড়সওয়ারবোয়ার অবিজাতগণ যারা সংখ্যায় কম ছিল, তারা বর্শা, তরবারি এবং ছোরা সজ্জিত ছিল এবং শিকলবর্ম হিসেবে চেইনমেইল পরিধান করত। ভ্লাদের ব্যক্তিগত রক্ষীরা ছিল বিভিন্ন দেশের ভাড়াটে সৈনিক এবং কিছু জিপসি যোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত। বিশ্বাস করা হয় যে যুদ্ধ শুরুর পূর্বে ভ্লাদ তার সৈন্যদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন:

“যারা মৃত্যুর কথা ভাবে, তাদের উচিত নয় আমার অনুগামী হওয়া।”

যুদ্ধ

[সম্পাদনা]

তুর্কিরা প্রথমে ভিদিন এলাকায় অবতরণ করার চেষ্টা করে, তবে তীরন্দাজদের আক্রমণে পিছু হটতে বাধ্য হয়। ৪ জুন রাতের বেলায় জানিসারিদের একটি দল টুর্নু সেভেরিনে অবতরণ করে, যেখানে ওয়ালাখিয়ান আক্রমণে তাদের ৩০০ জন শহিদ হয়ে যান। সার্বিয়ান বংশোদ্ভূত এক জানিসারি কনস্টান্টিন মিহাইলোভিচ, ভ্লাদ তেপেশের সাথে তাদের সেই সাক্ষাতের বর্ণনা দিয়েছেন নিম্নরূপে:

রাত যখন নেমে আসে, আমরা আমাদের নৌকাগুলোতে উঠে দানিউব নদী বেয়ে ভেসে চলি যেখানে ভ্লাদের বাহিনী অবস্থান করছিল, তার কয়েক মাইল নিচ দিয়ে নদীর অপর তীরে পার হয়ে যাই। সেখানে আমরা নিজেদের জন্য পরিখা খুঁড়ে রাখি, যেন শত্রুপক্ষের অশ্বারোহী বাহিনী আমাদের ক্ষতি করতে না পারে। এরপর আমরা আবারও নদী পার হয়ে পূর্বতীরে ফিরে যাই এবং অন্য জানিসারিদের দানিউব পার করিয়ে আনি। যখন সম্পূর্ণ পদাতিক বাহিনী পার হয়ে গেল, তখন আমরা ধীরে ধীরে ভ্লাদের সেনাবাহিনীর দিকে অগ্রসর হতে শুরু করি, সঙ্গে ছিল কামান ও আনুষঙ্গিক যন্ত্রপাতি যা আমরা সঙ্গে এনেছিলাম। সেখানে পৌঁছে আমরা কামান স্থাপন করি, তবে ততক্ষণে দেরি হয়ে গেছে—তিন শত জানিসারি ইতোমধ্যে নিহত হয়ে পড়েছে...আমাদের পক্ষ দুর্বল হয়ে যাচ্ছে দেখে আমরা প্রতিরক্ষায় অবতীর্ণ হই এবং আমাদের সঙ্গে আনা ১২০টি কামান দিয়ে এমন ঘনঘন গোলাবর্ষণ করি যে, অবশেষে আমরা রাজপুত্রের বাহিনীকে পিছু হটাতে সক্ষম হই এবং আমাদের অবস্থান শক্তিশালী করি।ভ্লাদ, বুঝতে পারে যে তিনি আমাদের নদী পার হওয়া থামাতে পারবেন না, শেষমেশ পিছু হটে। এরপর সম্রাট (মেহমেদ) তাঁর সম্পূর্ণ বাহিনী নিয়ে দানিউব পার হন এবং আমাদের মাঝে ৩০,০০০ মুদ্রা পুরস্কারস্বরূপ বিতরণ করেন।

অটোমান সেনাবাহিনী অগ্রসর হতে সক্ষম হলেও ভ্লাদ তেপেশ ভূমিদহন নীতি গ্রহন করে। পানির উৎস বিষাক্ত করে, ছোট নদীর জলপ্রবাহ অন্যদিকে সরিয়ে জলাভূমি তৈরি করে। সর্বত্র গর্ত খনন করে ফাঁদ তৈরি করা হয় যা কাঠ এবং পাতা দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। জনসংখ্যা এবং গবাদি পশুপাখিদের পাহাড়ে সরিয়ে নেওয়া হয়। মেহমেদ সাত দিন ধরে অগ্রসর হন, কিন্তু তার সেনাবাহিনী ভীষণ ক্লান্তিতে ভুগছিল; কারণ, "তিনি সে পথে কোনও মানুষ, কোনও উল্লেখযোগ্য প্রাণী এবং খাওয়া বা পান করার জন্য কিছুই খুঁজে পাচ্ছিলেন না।" ভ্লাদ গেরিলা কৌশল গ্রহণ করে, তার অশ্বারোহীরা বেশ কয়েকটি মেরে পালাও ধরণের আক্রমণ করে। তার কৌশলের মধ্যে আরও ছিল কুষ্ঠ, যক্ষ্মা এবং আরও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক রোগ বুবোনিক প্লেগে আক্রান্ত মারাত্মক রোগে আক্রান্ত অসুস্থ ব্যক্তিদের তুর্কিদের সাথে ছড়িয়ে দেওয়া যাতে তাদের সংক্রামিত করতে পারে। বুবোনিক প্লেগ অটোমান সেনাবাহিনীতে ছড়িয়ে পড়তে সক্ষম হয়। অটোমান নৌ-বহর ব্রেইলা এবং চিলিয়াতে কয়েকটি ছোটখাটো আক্রমণ চালায়, কিন্তু খুব বেশি ক্ষতি করতে পারেনি। কারণ ভ্লাদ বুলগেরিয়ার বেশিরভাগ বন্দর ধ্বংস করে দিয়েছিলেন। খালকোকোন্ডাইলিস লিখেছেন যে সুলতান একজন ওয়ালাখিয়ান সৈনিককে বন্দী করতে সক্ষম হন এবং প্রথমে তাকে অর্থলিপ্সা দেখিয়ে তথ্য আদায়ের চেষ্টা করে; যখন তা কাজে দেয়নি তখন তাকে নির্যাতনের হুমকি দেন, তবুও কোন লাভ হয়নি। বলা হয়ে থাকে যে, মেহমেদ সেই সৈনিকের প্রশংসা করে বলেছিল, "যদি তোমার প্রভুর তোমার মতো এ রকম বহু সৈন্য থাকত তাহলে সে অল্প সময়ের মধ্যেই পৃথিবী জয় করতে পারত!"

বুখারেস্টের দুর্গ এবং সুরক্ষিত দ্বীপ স্নাগভ দখল করতে ব্যর্থ হওয়ার পরও তুর্কিরা তারগোভিস্তের দিকে তাদের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখে। ১৭ জুন, যখন তুর্কিরা রাজধানীর দক্ষিণে শিবির স্থাপন করে, তখন ভ্লাদ সেপেস ২৪,০০০, অথবা সম্ভবত মাত্র ৭,০০০ থেকে ১০,০০০ ঘোড়সওয়ার নিয়ে তার রাতের আক্রমণ শুরু করেন। চালকোকোন্ডাইলেস সেই গল্পটি পুনরায় বর্ণনা করেছেন যে, আক্রমণ করার আগে, ভ্লাদ একজন তুর্কীর ছদ্মবেশে স্বাধীনভাবে তুর্কি শিবিরে প্রবেশ করেছিলেন এবং সুলতানের তাঁবুর অবস্থান খুঁজে বের করতে এবং তার সংগঠন সম্পর্কে জানতে ঘুরে বেড়াতেন। ভেরোনার বেনামী ইতালীয় ইতিহাসে উল্লেখ করা হয়েছে যে, আক্রমণের ক্ষেত্রে আতঙ্ক সৃষ্টি না করার জন্য মেহমেদ তার সৈন্যদের রাতে তাদের তাঁবু থেকে বের হতে নিষেধ করেছিলেন। ঘটনাপঞ্জিটি আরও ব্যাখ্যা করে যে, ভ্লাদ সেপেস, মেহমেদের কৌশল সম্পর্কে অবগত থাকায়, রাতে আক্রমণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন, কারণ তিনি জানতেন যে শত্রু সৈন্যদের যখন তাদের তাঁবুতে থাকতে হবে তখন কীভাবে আক্রমণে এগিয়ে যেতে হবে। [] এই সংঘর্ষ "সূর্যাস্তের তিন ঘন্টা পর থেকে পরের দিন ভোর চারটা পর্যন্ত" স্থায়ী হত এবং অটোমান শিবিরে ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি করত। ওয়ালাচিয়ানরা তাদের বাজনা থেকে শব্দ করত এবং তাদের মশাল দিয়ে যুদ্ধ আলোকিত করত; এবং সেই রাতে, তারা একটি নয়, বরং বেশ কয়েকটি আক্রমণ চালাত। [] সংঘর্ষের সঠিক ফলাফল সম্পর্কে নথিতে ভিন্নতা রয়েছে: কিছু সূত্র বলে যে ওয়ালাচিয়ানরা প্রচুর সংখ্যক তুর্কিকে হত্যা করেছিল, আবার অন্যরা বলে যে অটোমানদের ক্ষয়ক্ষতি খুব কম ছিল। তবে অনেক ঘোড়া এবং উট নিহত হয়েছিল। কিছু ইতিহাসে গ্যালেস নামে একজন ওয়ালাচিয়ান বোয়ারকে দোষারোপ করা হয়েছে, যিনি দ্বিতীয় সেনাবাহিনী নিয়ে তুর্কিদের উপর একযোগে আক্রমণের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন বলে ধারণা করা হয়, তিনি শত্রুর উপর প্রত্যাশিত ধ্বংসযজ্ঞ চালানোর মতো সাহসী ছিলেন না। ভ্লাদ সেপেস নিজে এশীয় অশ্বারোহী বাহিনীকে পরাজিত করার সময় সুলতানের তাঁবুর দিকে লক্ষ্য রেখেছিলেন, কিন্তু ভুল করে দুই উজির ইসহাক পাশা এবং মাহমুদ পাশার তাঁবুতে গিয়েছিলেন।

পোপের উত্তরাধিকারী নিকোলো মড্রুসা বহু বছর পরে বুদার দরবারে ঘটনাগুলির একটি ওয়ালাচিয়ান দৃষ্টিভঙ্গি লিপিবদ্ধ করেছিলেন যখন ভ্লাদ করভিনাস কর্তৃক বন্দী ছিলেন। বলা হয় যে এটি একজন ওয়ালাচিয়ান অভিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছিলেন:

সুলতান তাকে অবরোধ করেন এবং একটি নির্দিষ্ট পাহাড়ে তাকে আবিষ্কার করেন যেখানে ওয়ালাচিয়ানরা সেই স্থানের প্রাকৃতিক শক্তি দ্বারা সমর্থিত ছিল। সেখানে ভ্লাদ তার ২৪,০০০ লোকের সাথে লুকিয়ে ছিল যারা স্বেচ্ছায় তাকে অনুসরণ করেছিল। যখন ভ্লাদ বুঝতে পারলেন যে তিনি হয় ক্ষুধায় মারা যাবেন, নয়তো অত্যন্ত নিষ্ঠুর শত্রুর হাতে পড়বেন, এবং উভয় ঘটনাকেই সাহসী পুরুষদের জন্য অযোগ্য মনে করে, তিনি এমন একটি কাজ করার সাহস করলেন যা স্মরণীয়: তার সৈন্যদের একত্রিত করে এবং তাদের পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করে, তিনি সহজেই তাদের শত্রু শিবিরে প্রবেশ করতে রাজি করান। তিনি সৈন্যদের বিভক্ত করলেন যাতে হয় তারা গৌরব ও সম্মানের সাথে যুদ্ধে সাহসিকতার সাথে মৃত্যুবরণ করে, অথবা যদি ভাগ্য তাদের অনুকূল হয়, তাহলে তারা একটি ব্যতিক্রমী বিষয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রতিশোধ নেবে। তাই, কিছু তুর্কি বন্দীকে কাজে লাগিয়ে, যারা সন্ধ্যাবেলায় অযত্নে ঘুরে বেড়াচ্ছিল, রাতের বেলায় ধরা পড়েছিল, ভ্লাদ তার সৈন্যদের একটি অংশ নিয়ে দুর্গের উপরে তুর্কি শিবিরে প্রবেশ করে। এবং সারা রাত ধরে সে বিদ্যুৎ চমকের মতো সব দিকে ছুটে গেল এবং বিরাট হত্যাযজ্ঞ চালাল, এতটাই যে, যদি অন্য সেনাপতি যার উপর সে তার অবশিষ্ট বাহিনী অর্পণ করেছিল, সেও সমান সাহসী হত, অথবা তুর্কিরা সুলতানের বারবার তাদের সেনানিবাস ত্যাগ না করার নির্দেশ পুরোপুরি পালন না করত, তাহলে নিঃসন্দেহে ওয়ালাচিয়ানরা সবচেয়ে বড় এবং উজ্জ্বল বিজয় অর্জন করত। কিন্তু অন্য কমান্ডার (গ্যালেস নামে একজন বোয়ার) সম্মতি অনুসারে অন্য দিক থেকে শিবিরে আক্রমণ করার সাহস করেনি... এত বড় সংঘর্ষে অনেক লোককে না হারিয়ে ভ্লাদ একটি অবিশ্বাস্য গণহত্যা চালিয়েছিল, যদিও অনেকেই আহত হয়েছিল। ভোর হওয়ার আগেই তিনি শত্রু শিবির ত্যাগ করেন এবং যে পাহাড় থেকে এসেছিলেন সেই পাহাড়েই ফিরে যান। কেউ তাকে তাড়া করতে সাহস করেনি, কারণ সে এত সন্ত্রাস ও অশান্তি সৃষ্টি করেছিল। এই যুদ্ধে অংশগ্রহণকারীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আমি জানতে পেরেছি যে সুলতান পরিস্থিতির উপর সমস্ত আস্থা হারিয়ে ফেলেছিলেন। সেই রাতে সুলতান শিবির ত্যাগ করে লজ্জাজনকভাবে পালিয়ে যান। আর সে এভাবেই চলতে থাকত, যদি না তার বন্ধুরা তাকে তিরস্কার করে ফিরিয়ে না আনত, প্রায় তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে।

মিহালোগলু আলি বে- এর নেতৃত্বে জানিসারিরা ওয়ালাচিয়ানদের তাড়া করে এবং তাদের মধ্যে ১,০০০-২,০০০ জনকে হত্যা করে। পোর্টেতে ভেনেটান বেইলো, ডোমেনিকো বালবির ইতিহাস অনুসারে, সংঘর্ষে মোট হতাহতের সংখ্যা ওয়ালাচিয়ান পক্ষের ৫,০০০ এবং অটোমানদের ১৫,০০০। সুলতান এবং তার সেনাবাহিনীর মনোবল কম থাকলেও, মেহমেদ রাজধানী অবরোধ করার সিদ্ধান্ত নেন, কিন্তু পরিবর্তে তিনি দেখতে পান যে এটি জনশূন্য এবং এর দরজাগুলি খোলা ছিল। তুর্কি সেনাবাহিনী রাজধানীতে প্রবেশ করে এবং আধা ঘন্টা ধরে, সেনাবাহিনী প্রায় ২০,০০০ অটোমানদের দ্বারা বেষ্টিত রাস্তা ধরে মার্চ করে। সেখানে তারা হামজা পাশার পচা মৃতদেহ দেখতে পায়, যা তার 'উচ্চ পদমর্যাদার' প্রতীক হিসেবে সর্বোচ্চ দণ্ডে ঝুলানো ছিল। [] অন্যান্য সূত্র অনুসারে, শহরটি সৈন্যরা রক্ষা করেছিল, যখন শূলবিদ্ধ মৃতদেহগুলি শহরের প্রাচীরের বাইরে ৬০ মাইল দূরত্বে পড়ে ছিল। [] সুলতানের প্রতিক্রিয়ার কথা উল্লেখ করে চালকোকোন্ডাইলস লিখেছিলেন: "সুলতান অবাক হয়ে বললেন যে, এমন একজন ব্যক্তিকে তার দেশ থেকে বঞ্চিত করা সম্ভব নয় যিনি এত মহান কাজ করেছেন, যার নিজের রাজ্য এবং এর জনগণকে কীভাবে শাসন করতে হয় সে সম্পর্কে এত শয়তানী বোধগম্যতা ছিল। এবং তিনি বলেছিলেন যে একজন ব্যক্তি যিনি এই ধরনের কাজ করেছেন তিনি অনেক মূল্যবান।"

পরিণতি

[সম্পাদনা]

শত্রুদের অনুপ্রবেশ রোধ করার জন্য মেহমেদ তুর্কি শিবিরের চারপাশে একটি গভীর পরিখা খননের নির্দেশ দেন এবং পরের দিন (২২ জুন), তুর্কিরা পিছু হটে। ১৪৬২ সালের ২০ জুনের দিকে, ভ্লাদ প্রায় ৬,০০০ ওয়ালাচিয়ানের একটি বাহিনী রেখে যান "জঙ্গলে লুকিয়ে থাকা এবং যদি কেউ পথভ্রষ্ট হয়, তাহলে অবিলম্বে আক্রমণ করে তাকে চূর্ণ করা" এই লক্ষ্যে, যখন তিনি তার বাকি যোদ্ধাদের সাথে দ্রুত অন্য ফ্রন্টে চলে যান। সুলতানের সেনাবাহিনীর বেশিরভাগ অংশের উপর নজরদারিরত ৬,০০০ সৈন্য তারগোভিস্তে থেকে প্রত্যাহার শুরু হলে আক্রমণ শুরু করার জন্য ছুটে যায়। তুর্কি কর্মকর্তা "ইউসুফ", যিনি সম্ভবত পিছনের রক্ষীবাহিনীর কমান্ডার ছিলেন, পরাজিত হন, কিন্তু তাকে তুরাহানোগলু ওমের বে সাহায্য করেন, যিনি যুদ্ধের সম্ভাবনা তুর্কিদের পক্ষে পরিবর্তন করেন এবং প্রায় ২০০০ ওয়ালাচিয়ানকে হত্যা করেন। কয়েকদিন পর, ভ্লাদের চাচাতো ভাই, মোল্দাভিয়ার তৃতীয় স্টিফেন, যিনি আক্কারম্যান এবং চিলিয়া পুনরুদ্ধার করতে চেয়েছিলেন, তিনি আক্কারম্যানের উপর আক্রমণ চালানোর সিদ্ধান্ত নেন। ওয়ালাচিয়ানরা ৭,০০০ সৈন্য নিয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসে এবং শহর রক্ষা করতে সক্ষম হয়, যদিও কামানের গোলায় স্টিফেনের পায়ে আঘাত লাগে। চিলিয়া থেকে ফিরে আসা ভ্লাদ বুজাউয়ের কাছে সুলতানের সেনাবাহিনীর মুখোমুখি হন। ওয়ালাচিয়ানরা অটোমানদের আক্রমণ করে কিন্তু ভারী ক্ষয়ক্ষতির মধ্য দিয়ে তাদের প্রতিহত করা হয়। ২৯শে জুন, সুলতান ব্রিলা পৌঁছান, যা তিনি পুড়িয়ে দেন এবং তারপর জাহাজে করে আদ্রিয়ানোপলে যান, যেখানে তারা ১১ই জুলাই পৌঁছান। ১২ জুলাই, তুর্কিরা ভ্লাদ তেপেসের উপর তাদের "মহান বিজয়" উদযাপনের ডাক দেয়। তুর্কিরা স্থানীয় অনেক বাসিন্দাকে দাস বানিয়েছিল, যাদের তারা ২০০,০০০ গবাদি পশু এবং ঘোড়া সহ দক্ষিণের পথে যাত্রা করেছিল।

জনপ্রিয় সংস্কৃতি

[সম্পাদনা]
  • ফরাসি লেখক ভিক্টর হুগো তার কবিতা "লা লেজেন্ডে ডেস সিক্লেস " ( শতাব্দীর কিংবদন্তি ) -এ এই সংঘাত সম্পর্কে লিখেছেন।
  • ব্রাম স্টোকারের ড্রাকুলা ছবিটি ১৪৬২ সালে ওয়ালাচিয়ায় অটোমান আক্রমণের মাধ্যমে শুরু হয়; একটি রাতের যুদ্ধ (দৃশ্যত এই আক্রমণ) সংঘটিত হয়, যা ভ্লাদ তেপেসের জয়ের মাধ্যমে শেষ হয়।
  • বিগ ফিনিশ প্রোডাকশনের অডিও ড্রামা সন অফ দ্য ড্রাগন পঞ্চম ডাক্তার এবং তার সঙ্গীদের দৃষ্টিকোণ থেকে যুদ্ধকে চিত্রিত করে।
  • ২০১৪ সালের ড্রাকুলা আনটোল্ড ছবিতে এই আক্রমণের একটি পরিবর্তিত চিত্রায়ন রয়েছে, যেখানে ড্রাকুলা রাতে সংঘটিত যুদ্ধের পরিবর্তে কালো মেঘ দিয়ে সূর্যকে আটকে দেয়।
  • ভিডিও গেম এজ অফ এম্পায়ার্স II: দ্য ফরগটেন-এ, এই আক্রমণটি ড্রাকুলা-র শেষ প্রচারণার একটিতে প্রদর্শিত হয়েছে। বেশ কিছু অটোমান সৈন্যকে হত্যা এবং নিজের ক্ষতির পর, ড্রাকুলা আক্রমণ বন্ধ করে দেয় কারণ সে বুঝতে পারে যে দ্বিতীয় মেহমেদ আক্রমণ শুরু হওয়ার আগেই শিবির থেকে পালিয়ে গেছে।
  • টিভি সিরিজ রাইজ অফ এম্পায়ার্স: অটোমান তার দ্বিতীয় সিজনের ৫ এবং ৬ পর্বে এই যুদ্ধকে চিত্রিত করেছে।

আরো দেখুন

[সম্পাদনা]

    পাদটীকা

    [সম্পাদনা]
    1. ফ্লোরেস্কু, ম্যাকন্যালি, ড্রাকুলা, পৃ. ১২৯
    2. ফ্লোরেস্কু, ম্যাকন্যালি, ড্রাকুলা, পৃ. ১৩০
    3. Geringer, Joseph, Staggering the Turks ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত নভেম্বর ৭, ২০০৬ তারিখে, Crimelibrary.com
    4. 1 2 উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; Dracp133 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
    5. Miranda Twiss (২০০২)। The most evil men and women in history। Barnes & Noble Books। পৃ. ৭১। আইএসবিএন ৯৭৮-০-৭৬০৭-৩৪৯৬-৪
    6. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; p. 99 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
    7. 1 2 উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; izvoare নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
    8. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; p.148 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
    9. উদ্ধৃতি ত্রুটি: <ref> ট্যাগ বৈধ নয়; p.147 নামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি

    তথ্যসূত্র

    [সম্পাদনা]