জ্যারি ব্রুডোস

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্যারি ব্রুডোস
Jerry Brudos
ব্যক্তির তথ্য
জন্মের নামজ্যারোম হ্যানরী ব্রুডোস
নামেও পরিচিতদ্য লাস্ট কিলার
দ্য শ্যু ফ্যাটিশ স্লেয়ার
জন্ম(১৯৩৯-০১-৩১)৩১ জানুয়ারি ১৯৩৯
ওয়েবস্টার, সাউথ ডাকোটা, যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যু২৮ মার্চ ২০০৬(2006-03-28) (বয়স ৬৭)
স্যালেম, অরেগন, যুক্তরাষ্ট্র
মৃত্যুর কারণযকৃত ক্যান্সার
শাস্তিআজীবন কারাবাস
হত্যাকাণ্ড
শিকারের সংখ্যা
দেশমার্কিন যুক্তরাষ্ট্র
রাজ্যঅরেগন
ধরার তারিখমে ২৫, ১৯৬৯

জেরোম হেনরি "জেরি" ব্রুডোস (ইংরেজি: Jerry Brudos) (জন্মঃ জানুয়ারী ৩১, ১৯৩৯ - মৃত্যুঃ মার্চ ২৮, ২০০৬) একজন মার্কিন ধারাবাহিক খুনী এবং নেক্রোফিলিয়াক (যারা মৃতদেহের প্রতি শারীরিকভাবে আকর্ষিত) যিনি "দ্য লাস্ট কিলার" এবং "দ্য শ্যু ফেটিশ স্ল্যায়ার" হিসেবেও পরিচিত।

প্রারম্ভিক জীবনী[সম্পাদনা]

ব্রুডোস যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ডাকোটার অঙ্গরাজ্যের ওয়েবস্টার শহরে জন্মগ্রহণ করেন এবং দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি ছিলেন কনিষ্ঠতম। তার জন্মের পূর্বে ব্রুডোসের মা একটি কন্যাসন্তান চেয়েছিলেন কিন্তু তার পরিবর্তে ব্রুডোস জন্ম নেওয়ায় তার মা অসন্তুষ্ট হন। জন্মের পর থেকেই তার মা তার সাথে ক্রমাগত তুচ্ছতাচ্ছিল্য, অবজ্ঞা এবং খারাপ আচরণ করতেন। শৈশবে ব্রুডোস এবং তার পরিবার অরেগন অঙ্গরাজ্যের রাজধানী স্যালেম-এ পাকাপাকিভাবে বসবাসের পূর্বে প্যাসিফিক নর্থওয়েস্টের নানা জায়গায় স্থানান্তরিত হয়।

পাঁচ বছর বয়সে ব্রুডোস যখন আবর্জনার স্তুপে পাওয়া একটি স্পাইক হিল জুতো নিয়ে খেলতে শুরু করেন, তখন থেকেই তিনি মেয়েদের হিল-জুতোর প্রতি তার শারীরিক আকর্ষণ আবিষ্কার করেন।[১] জনশ্রুতি অনুযায়ী, ব্রুডোস একবার তার প্রথম শ্রেণীর শিক্ষিকার জুতো চুরি করার চেষ্টা করেছিলেন। মেয়েদের অন্তর্বাসের প্রতিও তার প্রবল যৌন-আকর্ষণ ছিল এবং শোনা যায়, শৈশবে ব্রুডোস তার প্রতিবেশী মহিলাদের অন্তর্বাস চুরিতেও সিদ্ধহস্ত ছিলেন। ব্রুডোস তার কৈশোর জীবন কাটিয়েছেন মানসিক চিকিৎসার মধ্য দিয়ে। কৈশোর কাল থেকেই ব্রুডোস স্থানীয় মহিলাদের হয়রানী করতে থাকেন, উদাহরণস্বরূপঃ তিনি মহিলাদের মাটিতে ধাক্কা দিয়ে শুইয়ে দিতেন অথবা তাদের শ্বাসরোধ করতেন এবং তাদের জুতো নিয়ে পালিয়ে যেতেন।[২]

১৭ বছর বয়সে ব্রুডোস একজন যুবতী মহিলাকে অপহরণ ও নির্যাতন করেন এবং তার ইচ্ছানুযায়ী যৌন চাহিদা পূরণ না করলে তাকে প্রাণে মেরে ফেলারও হুমকি দেন। উক্ত অপহরণের অপরাধে আটক হওয়ার কিছুদিন পর, তাকে অরেগন স্টেট হাসপাতালের মনোচিকিৎসা ওয়ার্ডে ভর্তি করানো হয় এবং সেখানে তার এই উদ্ভট যৌন-চাহিদার পেছনে তার মা এবং সমস্ত নারী জাতির প্রতি তার ঘৃণা এবং প্রতিশোধপরায়ণতা খুঁজে পাওয়া যায়। ব্রুডোস মানসিক চিকিৎসার নানা স্তরের মধ্য দিয়ে তার জীবন অতিবাহিত করেছেন এবং একসময় তার শীৎজোফ্রেনিয়া রোগও ধরা পরেছিলো। নাানা বাধা বিপত্তির মধ্যেও ব্রুডোস ১৯৫৭ সালে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন এবং তার স্নাতক সম্পন্ন করার কিছুকাল পর তিনি বৈদ্যুতিক প্রকর্মী (ইলেকট্রোনিক্স ট্যাকনিশিয়ান) হিসেবে কর্ম-জীবন শুরু করেন।

১৯৬১ সালে ব্রুডোস স্যালেমের শহরতলীতে বসবাসের সময় ১৭ বছর বয়সী একজন মহিলাকে বিয়ে করেন এবং তার সাথে তিনি দুইটি সন্তানের জন্ম দেন। ব্রুডোস যখন তার স্ত্রীর ছবি তুলতেন তখন তিনি তার নব-বিবাহিতা স্ত্রীকে হাই হিল জুতো পরা অবস্থায় উলঙ্গ হয়ে ঘরের কাজকর্ম করার নির্দেশ দিতেন। বিয়ের পরেও তিনি তার মাইগ্রেন উপশমের অজুহাতে রাতে মহিলাদের জুতো ও অন্তর্বাস চুরি করা অব্যাহত রেখেছিলেন। ব্রুডোস তার চুরি করা জুতো, অন্তর্বাস এবং তার অপরাধে শিকার হওয়া মহিলাদের মৃতদেহ তার গ্যারেজে লুকিয়ে রাখতেন। এমনকি সেই গ্যারেজে ব্রুডোস একটি ইন্টারকমের ব্যবস্থা করেছিলেন এবং পূর্ব থেকে তার সাথে ইন্টারকমে যোগাযোগ ব্যতীত তিনি তার স্ত্রীকে তার গ্যারেজে প্রবেশের অনুমতি দিতেন না।

অপরাধসমূহ[সম্পাদনা]

১৯৬৮ থেকে ১৯৬৯ সালের মাঝামাঝি সময়ে ব্রুডোস চারজন মহিলাকে নিদারূণভাবে প্রহার এবং শ্বাসরোধ করেছিলেন। ব্রুডোস তার গ্যারেজে মহিলাদের মৃতদেহের থেকে কেটে নেওয়া স্তনকে পেপারওয়েট হিসেবে ব্যবহার করতেন। কোন মহিলাকে খুন করার পর ব্রুডোস পেন্সিল হিল পরতেন এবং হস্তমৈথুন করতেন। আটক হওয়ার পর আদালতে ব্রুডোস "লিন্ডা স্লসোন", "জ্যান হুইটনি", "কারেন স্প্রিঙ্কার" এবং "লিন্ডা স্যালি"-কে হত্যার কথা স্বীকার করেন এবং উক্ত হত্যাকান্ডসমূহের জন্য তাকে আজীবন কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়।

কারাগারে বন্দী অবস্থায় তার কারা-কক্ষে ব্রুডোস ক্যাটালগ অনুযায়ী মহিলাদের জুতোর স্তুপ সঙ্গে রেখেছিলেন এবং এটিকে তিনি তার পর্ণোগ্রাফির বিকল্প হিসেবে বর্ণনা করেছিলেন। ব্রুডোস আদালতে অগণিত আবেদন উত্থাপন করেছিলেন, যেখানের একটিতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন যে একটি ব্যক্তির মৃতদেহের সাথে তার যে ছবি নেওয়া হয়েছিল সেই ছবির ব্যক্তিটির মৃত্যুর জন্য তিনি কোনরূপ দায়ী নন কেননা সেই ব্যক্তির খুনের সাথে তিনি কোনরূপ জড়িত নন।

ব্রুডোস ২০০৬ সালের ২৮শে মার্চ মাসে যকৃত ক্যান্সারে মৃত্যুবরণ করেন। তার মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ব্রুডোস ছিলেন "অরেগন সংশোধনী বিভাগে দীর্ঘতম বন্দী বাসিন্দা (মোট ৩৭ বছর, ১৯৬৯ থেকে ২০০৬ সাল অব্দি)।[৩]

সঙ্গীত[সম্পাদনা]

মার্কিন থ্রাশ/ড্যাথ মেটাল ব্যান্ড ম্যাকাবের তাদের মার্ডার মেটাল অ্যালবামে ব্রুডোসকে নিয়ে "ফ্যাটাল ফুট ফেটিশ" নামের একটি গান বানিয়েছিলো।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Ronald M. Holmes, "Sequential Predation: Elements of serial fatal victimization", Sexual Addiction & Compulsivity, Volume 4, Issue 1 January 1997, pages 33 - 42 ডিওআই:10.1080/10720169708400129
  2. Ramsland, Katherine। "The Fetish Killer"truTV Crime Library। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১২ 
  3. "Inmate Jerome Brudos Passes Away"DOC Public Affairs। ২১ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৪ এপ্রিল ২০১২