জ্যাক কার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জ্যাক কার
সিএনজেডএম ওবিই
১৯৩৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জ্যাক কার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজন ল্যাম্বার্ট কার
জন্ম(১৯১০-১২-২৮)২৮ ডিসেম্বর ১৯১০
ড্যানভার্ক, নিউজিল্যান্ড
মৃত্যু২৭ মে ২০০৭(2007-05-27) (বয়স ৯৬)
ক্রাইস্টচার্চ, নিউজিল্যান্ড
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
বোলিংয়ের ধরনডানহাতি মিডিয়াম
ভূমিকাব্যাটসম্যান, কোচ, প্রশাসক
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
টেস্ট অভিষেক
(ক্যাপ ১৯)
২৭ জুন ১৯৩১ বনাম ইংল্যান্ড
শেষ টেস্ট২৪ জুলাই ১৯৩৭ বনাম ইংল্যান্ড
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৮৯
রানের সংখ্যা ২১২ ৪৮২৯
ব্যাটিং গড় ১৯.২৭ ৩২.১৯
১০০/৫০ ০/১ ৮/২২
সর্বোচ্চ রান ৫৯ ১৯৬
বল করেছে ৯২
উইকেট
বোলিং গড় ২৩.০০
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং ২/৩২
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ৪/- ২৯/-
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ২৪ নভেম্বর ২০১৯

জন ল্যাম্বার্ট কার, সিএনজেডএম ওবিই (ইংরেজি: Jack Kerr; জন্ম: ২৮ ডিসেম্বর, ১৯১০ - মৃত্যু: ২৭ মে, ২০০৭) ড্যানভার্ক এলাকায় জন্মগ্রহণকারী নিউজিল্যান্ডীয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার, কোচ ও প্রশাসক ছিলেন। নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ সময়কালে নিউজিল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর নিউজিল্যান্ডীয় ক্রিকেটে ক্যান্টারবারি দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। এছাড়াও, ডানহাতে মিডিয়াম বোলিংয়ে পারদর্শী ছিলেন জ্যাক কার

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৯২৯-৩০ মৌসুম থেকে ১৯৪২-৪৩ মৌসুম পর্যন্ত জ্যাক কারের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। ১৯৩১ থেকে ১৯৩৭ সালের মধ্যে উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটের অধিকাংশ খেলাই ক্যান্টারবারির পক্ষে খেলেছেন। আটটি শতক সহযোগে ৩২.১৯ গড়ে ৪৮২৯ রান তুলেন।

নর্থ আইল্যান্ডের দক্ষিণের জেলা মানাওয়াতো - ওয়াঙ্গানুইয়ের ড্যানভার্কে জ্যাক কারের জন্ম। পিতার উৎসাহে ক্রিকেট খেলার দিকে মনোনিবেশ ঘটান। ওয়াঙ্গানুই টেকনিক্যাল কলেজে পড়াশুনো করেন। সেখানেই বিখ্যাত ক্রিকেটার স্টুই ডেম্পস্টারের কাছ থেকে প্রশিক্ষণ লাভের সুযোগ ঘটে তার। খাঁটিমানের উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান ছিলেন। বল আটকানোয় দক্ষ ছিলেন ও প্যাডে বল লাগার পূর্ব-মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষা করে আঘাত হেনে রান সংগ্রহ করতেন।

১৫ বছর বয়সে ওয়াঙ্গানুইয়ের পক্ষে হক কাপে খেলতে শুরু করেন। নিজস্ব দ্বিতীয় বছরেই দলকে এ প্রতিযোগিতার শিরোপা লাভে সহায়তা করেন। হিসাবরক্ষকের চাকরি নিয়ে ক্রাইস্টচার্চ থেকে সাউথ আইল্যান্ডে চলে যান। ১৯২৯-৩০ ও ১৯৩০-৩১ মৌসুমে ক্যান্টারবারির পক্ষে প্লাঙ্কেট শীল্ডে খেলেন।

নিজ দেশে প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে একাধিপত্য বজায় রেখেছিলেন। ১৯৩২ সালে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ প্রথম-শ্রেণীর রানের সন্ধান পান। ওয়েলিংটনের বিপক্ষে ১৯৬ রান করেন। ১৯৩৫-৩৬ মৌসুমে ওয়েলিংটনে এরল হোমসের নেতৃত্বাধীন সফররত এমসিসি দলের বিপক্ষে ক্যান্টারবারির সদস্যরূপে অপরাজিত ১৪৬ ও ৭১ রান করেন। এরপর ওয়েলিংটনে অনানুষ্ঠানিক টেস্টে ১৩২ ও ক্রাইস্টচার্চে ১৩২ রান করেন। এ সংগ্রহগুলো মৌসুমের সেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি এনে দেয় ও রেডপাথ কাপ জয় করেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে সাতটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন জ্যাক কার। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পূর্বে তিনি ঐ সাত টেস্টে অংশ নিয়েছিলেন। ২৭ জুন, ১৯৩১ তারিখে লর্ডসে স্বাগতিক ইংল্যান্ড দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। ২৪ জুলাই, ১৯৩৭ তারিখে ম্যানচেস্টারে একই দলের বিপক্ষে সর্বশেষ টেস্টে অংশ নেন তিনি। নিউজিল্যান্ডের পক্ষে সাত টেস্টে অংশ নিয়ে ১৯.২৭ গড়ে ২১২ রান তুলতে পেরেছিলেন।

১৯৩১ সালে ইংল্যান্ড সফরে নিউজিল্যান্ডের সদস্যরূপে অন্তর্ভুক্ত হন। টেস্ট খেলাগুলোয় গড়পড়তা সফলতা পান। লর্ডসে সিরিজের প্রথম টেস্টে ২ ও ০ এবং ওভালের দ্বিতীয় টেস্টে ৩৪ ও ২৮ রান তোলার পর ওল্ড ট্রাফোর্ডের তৃতীয় টেস্টে মাঠের বাইরে অবস্থান করেন। কিন্তু কাউন্টি দলগুলোর বিপক্ষে বেশ সফল ছিলেন। গ্রীষ্মের ভেজা আবহাওয়ায় ২২.৯৭ গড়ে ৮০৪ রান তুলেছিলেন তিনি। ১৯৩২ সালে সফররত দক্ষিণ আফ্রিকা দলের বিপক্ষে একটি খেলায় অংশ নিয়ে ও ৩ রান তুলেন। ১৯৩৩ সালে বিতর্কিত বডিলাইন সিরিজে খেলা শেষ করে সফররত ইংরেজ দলের বিপক্ষে নিজস্ব চতুর্থ টেস্টে খেলেন। ৫৯ রান তুলে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ও একমাত্র টেস্ট অর্ধ-শতরান করেন।

১৯৩৭ সালে পুনরায় ইংল্যান্ড গমনের সুযোগ ঘটে জ্যাক কারের। লর্ডস ও ওল্ড ট্রাফোর্ডে শেষ দুই টেস্টে অংশ নেন। এ সফরে দুই শতক সহযোগে ৩১.৭১ গড়ে ১,২০৫ রান তুলেন।

অবসর[সম্পাদনা]

১৯৩৭ সাল থেকে ১৯৮০-এর দশকে পর্যন্ত সঠিকমানের প্রশাসকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি। ক্রিকেটকে তিনি অসম্ভব ভালোবাসতেন। ক্রিকেটের সাথে অতিরিক্ত শখ্যতার কারণে বোর্ডের সদস্যতা লাভসহ জাতীয় দল নির্বাচক, সফরকারী দলের ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন।

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের পর নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট কাউন্সিলের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। এরপূর্বে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৫৩-৫৪ মৌসুমে দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে নিউজিল্যান্ড দলের ব্যবস্থাপকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিলেন তিনি।[১] এছাড়াও, বিশ্বযুদ্ধের পর টেস্ট দল নির্বাচক হিসেবে মনোনীত হন।[২]

তিনি স্যার জন অ্যান্ডারসনের স্থলাভিষিক্ত হন। জ্যাক কার স্মরণে তিনি মন্তব্য করেন যে, নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ও নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট ফাউন্ডেশনে অনেকগুলো বছর উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছেন। তার অংশগ্রহণে নিঃসন্দেহে প্রশংসার দাবী রাখে।[১]

১৯৫৬-৫৭ মৌসুম থেকে ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বার্নসাইড ওয়েস্ট ক্রাইস্টচার্চ ইউনিভার্সিটি ক্রিকেট ক্লাবের সভাপতি ও ১৯৭৭ থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত উপদেষ্টার দায়িত্বে ছিলেন। এ সময়ে ক্লাবটি বার্নসাইড ক্রিকেট ক্লাবের সাথে একীভূত হয়ে যায়। পাশাপাশি হল্যান্ড ও কার ফার্মে হিসাবরক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন।

ব্যক্তিগত জীবন[সম্পাদনা]

নিউজিল্যান্ড অর্ডার অব মেরিটে ভূষিত হন। সম্মাননা লাভের প্রতিক্রিয়ায় তিনি মন্তব্য করেন যে, ‘ক্রিকেট আমাকে অনেক কিছু দিয়েছে। আমি খেলাটিকে ভালোবাসি। আমিও চেষ্টা করবো কিছু দেয়ার জন্যে।’

ব্যক্তিগত জীবনে বিবাহিত ছিলেন। এডনা নাম্নী এক রমণীর পাণিগ্রহণ করেন। এ দম্পতির দুই সন্তান ছিল। তন্মধ্যে, রবার্ট বিচারক হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন। ২৭ মে, ২০০৭ তারিখে ৯৬ বছর বয়সে ক্রাইস্টচার্চে জ্যাক কারের দেহাবসান ঘটে। সতীর্থ দলীয় সঙ্গী এরিক টিন্ডিলের তুলনায় ১০ দিনের ছোট ছিলেন।[৩] মৃত্যুকালীন তিনি প্রবীণতম দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ জীবিত টেস্ট ক্রিকেটারের সম্মাননা লাভ করেন। এছাড়াও, এরিক টিন্ডিল ও ফ্রান্সিস ম্যাককিননের পর তৃতীয় প্রবীণতম জীবিত টেস্ট ক্রিকেটার ছিলেন।[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Jack Kerr dies at 96, Cricinfo, 29 May 2007.
  2. Obituary, NZCity, 29 May 2007.
  3. Obituary ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ১০ জুলাই ২০০৫ তারিখে, The Daily Telegraph, 4 June 2007.

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]