জ্বরাসুর
জ্বরাসুর | |
---|---|
জ্বর-দেবতা | |
দেবনাগরী | ज्वारासुर |
তামিল লিপি | ஜ்வரஷுற |
অন্তর্ভুক্তি | অসুর |
সঙ্গী | শীতলা |
জ্বরাসুর (হিন্দি: ज्वारासुर) হিন্দু পুরাণে জ্বর-দেবতা । তিনি বাংলার লৌকিক দেবতা।জ্বররোগ নাশক রূপে পূজিত বিচিত্র দেবতা জ্বরাসুর। অনুরূপী এই জ্বরের দেবতার সন্তুষ্টি বিধানের জন্য সুন্দরবন তথা বাংলার লোকসমাজ এর পূজা করেন। জ্বরাসুর অসংখ্য থানে শীতলা, মনসা, দক্ষিণ রায়, আটেশ্বর, প্রভৃতি লৌকিক দেবদেবীর সঙ্গে পূজা পান।
মূর্তি
[সম্পাদনা]এই দেবতার দেহাবয়ব বিচিত্র ধরনের। গায়ের রঙ ঘন নীল। তিনটি মাথা, নয়টি চোখ, ছয়টি হাত ও তিনটি পা ।পাল যুগ থেকে বাংলায় শীতলা মূর্তির সঙ্গী হতে শুরু করে জ্বরাসুর। এর মূর্তি পূজার প্রচলন খুব বেশি এবং শীতলার থানে বা মন্দিরে জ্বরাসুর নিত্যপূজা পান।
পূজা
[সম্পাদনা]প্রাচীন তন্ত্রপুথিতে জ্বরাসুরের যে উল্লেখ রয়েছে, সে কথা মনে করিয়ে দিয়ে গিয়েছেন সাহিত্যিক তারাদাস বন্দ্যোপাধ্যায়। ‘তারানাথ তান্ত্রিক’ গ্রন্থের এক আখ্যানে তিনি বিস্তারিত লিখেছিলেন জ্বরাসুরের পূজার কথা।
হিন্দু পুরাণে
[সম্পাদনা]এক কিংবদন্তি মতে জ্বরাসুর শিবের ধ্যান করার সময় কপালের ঘাম থেকে জন্মগ্রহণ করেছিলেন এবং দেবতাদের জন্য হুমকি ছিলেন। একবার বিষ্ণু হয়গ্রীব অবতারে জ্বরাসুরের জ্বরে পড়েন। পরে তিনি জ্বরাসুরকে হত্যা করেছিলেন।[১][২] তিনি সুদর্শন চক্র ব্যবহার করে জ্বরাসুরকে তিন টুকরো করেছিলেন। পরে জ্বরাসুর ব্রহ্মার দ্বারা পুনঃজীবিত হন। ব্রহ্মা তার তিনটি অংশ যোগ করেন। কিন্তু ততদিনে তিনটি অংশের প্রতিটির মাথা ও অঙ্গ গজিয়েছিল। এতে তার তিনটি মুখ, তিন পা এবং একযোগে সব দিক থেকে যাওয়ার অসাধারণ ক্ষমতা পেয়েছিল। পরবর্তীতে তিনি শীতলা সঙ্গী হিসাবে নির্বাচিত হন। [১]
শীতলা-জ্বরাসুর বাঙালি সংস্কৃতিতে ব্যাপক জনপ্রিয়। উল্লেখ্য, যে বাংলার মত ওড়িয়া এবং হিন্দি ভাষায় জ্বরকে জ্বর বলা হয়। [৩] আর অসুর অর্থ দানব। জ্বরাসুর নামটি এই দুটি শব্দের সমন্বয় - জ্বর (অর্থাত জ্বর) এবং অসুর (অর্থাৎ দৈত্য) - জ্বরাসুর। জ্বরাসুর মানে জ্বরের দৈত্য। জ্বরাসুর যুবকের ছদ্মবেশ ধারণ করেন। তার সঙ্গী শীতলা, ব্যাপকভাবে গ্রামের লোকজন দ্বারা ভারতের উত্তর, পূর্বে বসন্ত এবং জ্বর রোগের রক্ষাকর্তা হিসাবে পুজিত হন। [৪]
বৌদ্ধধর্মে
[সম্পাদনা]বাংলার বৌদ্ধ মন্ত্রযান, বজ্রযান ঐতিহ্যে জ্বরাসুর রয়েছে। বৌদ্ধ সংস্কৃতিতে, জ্বরাসুর কখনও কখনও রোগের বৌদ্ধ দেবী পর্ণশর্বরীর স্বামী হিসাবে বিবেচিত হন। কিছু ছবিতে এই দেবতাগুলি বৌদ্ধ দেবী এবং রোগের ধ্বংসকারী বজ্রযোগিনীর , রাগ থেকে পালাতে দূরে উড়ে যাচ্ছে দেখানো হয়। [২]
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ ক খ The Divine consort: Rādhā and the goddesses of India By John Stratton Hawley, Harvard University. Center for the Study of World Religions। ১৯৮২।
- ↑ ক খ P. K. Mishra (১৯৯৯)। Studies in Hindu and Buddhist art।
- ↑ Alf Hiltebeitel (১৯৯১)। On Hindu ritual and the goddess।
- ↑ Fruits of worship: practical religion in Bengal By Ralph W. Nicholas। ২০০৩।