কেষ্ট রায় মন্দির, বিষ্ণুপুর
কেষ্ট রায় মন্দির | |
---|---|
ধর্ম | |
অন্তর্ভুক্তি | হিন্দুধর্ম |
জেলা | বাঁকুড়া |
ঈশ্বর | কেষ্ট রায় (কৃষ্ণ) |
অবস্থান | |
অবস্থান | বিষ্ণুপুর |
রাজ্য | পশ্চিমবঙ্গ |
দেশ | ভারত |
স্থানাঙ্ক | ২৩°৪′১৮.১৫১২৫″ উত্তর ৮৭°১৯′৩৬.৪৪৩৫০″ পূর্ব / ২৩.০৭১৭০৮৬৮০৬° উত্তর ৮৭.৩২৬৭৮৯৮৬১১° পূর্ব |
স্থাপত্য | |
ধরন | বাংলার মন্দির স্থাপত্য |
স্থাপত্য শৈলী | চালা |
প্রতিষ্ঠাতা | রঘুনাথ সিংহ |
প্রতিষ্ঠার তারিখ | ১৬৫৫ |
বিনির্দেশ | |
সম্মুখভাগের দিক | দক্ষিণ |
দৈর্ঘ্য | ১১.৮ মিটার (৩৯ ফু) |
প্রস্থ | ১১.৭ মিটার (৩৮ ফু) |
উচ্চতা (সর্বোচ্চ) | ১০.৭ মিটার (৩৫ ফু) |
কেষ্ট রায় মন্দির,[১] যা জোড়-বাংলা মন্দির নামেও পরিচিত,[১] মেদিনীপুর বিভাগের বিষ্ণুপুর শহরের একটি কৃষ্ণ মন্দির। অতীতে, এই মন্দিরে হিন্দু দেবতা কৃষ্ণকে কেষ্ট রায় রূপে পূজার্চনা করা হলেও বর্তমানে কোনো পূজা করা হয় না।[২] মন্দিরে প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠা ফলক অনুযায়ী, মন্দিরটি ১৬৫৫ খ্রীস্টাব্দে (৯৬১ মল্লাব্দে) মল্লভূমের রাজা রঘুনাথ সিংহ দ্বারা প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।[৩] মন্দিরটি জোড়-বাংলা মন্দিরের স্থাপত্যের একটি দুর্দান্ত উদাহরণ, যা মধ্যযুগীয় বাংলায় বিকশিত চালা শৈলীর অন্তর্গত।[৩]
মন্দিরটি সর্ববৃহৎ টিকে থাকা জোর-বাংলা মন্দির। এটি সম্ভবত বাংলার সবচেয়ে পরিচিত টেরাকোটা মন্দির।[৪] বর্তমানে এটি ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা ভারতের অন্যতম একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন হিসাবে সংরক্ষিত রয়েছে।[১][৩]
স্থাপত্য[সম্পাদনা]
কেষ্ট রায় মন্দিরে চালা শৈলীর একটি শ্রেণি জোড়-বাংলা ও রতন শৈলীর সমন্বয় দেখা যায়, তবে মন্দিরটি মূলত জোড়-বাংলা স্থাপত্য শৈলীতে নির্মিত। মন্দিরের কাঠামোটি দো-চাল রীতিতে নির্মিত দুটি ঘর ও একটি রত্ন সহযোগে গঠিত। মন্দিরটি তার ঢালু ছাদ প্রাথমিক চালা শৈলীর উপাদানগুলিকে অন্তর্ভুক্ত করে, যা এই সময়ের মধ্যে নির্মিত বাংলার হিন্দু মন্দিরগুলিতে সাধারণ ছিল। মন্দিরের বহির্ভাগ ও অভ্যন্তর ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ দ্বারা সুন্দরভাবে সুরক্ষিত ও সংরক্ষিত করা হয়েছে।
মন্দিরটি পাথর নির্মিত একটি মঞ্চের উপর দাঁড়িয়ে আছে, যার দৈর্ঘ ১৫.৬৩ মিটার (৫১.৩ ফু) ও প্রস্থ ১৫.৬৭ মিটার (৫১.৪ ফু)। মন্দিরের পরিমাপ হল ১১.৭৭ মিটার (৩৮.৬ ফু) × ১১.৭ মিটার (৩৮ ফু) এবং দক্ষিণ দিকে মুখ করে দাঁড়িয়ে আছে।[৩] মন্দিরের উচ্চতা ১০.৭ মিটার (৩৫ ফু) মিটার।
বহির্ভাগ[সম্পাদনা]
মন্দিরটি হল একটি রত্ন সহ জোড়-বাংলা মন্দির, যেখানে দুটি দো-চালা কাঠামো একত্রে মিলিত হয়ে একক নিরবিছিন্ন চালা গঠন করেছে এবং দো-চালা কাঠামো দুটির সংযোগস্থলের উপরে চালা শৈলীতে নির্মিত একটি রত্ন রয়েছে। দক্ষিণ দিকের চালাটি মণ্ডপ হিসেবে কাজ করে এবং উত্তর দিকের চালাটি গর্ভগৃহ হিসাবে কাজ করে। মন্দিরটি পাথর নির্মিত একটি মঞ্চের উপর নিমান নির্মিত হয়েছে।[৩]
মন্দিরের তিনটি খিলানাকার প্রবেশ পথ রয়েছে, যেগুলো ৪ টি স্তম্ভের সাহায্য নির্মাণ করা হয়েছে। খিলানে ভুস্বায়া নেই, যা চালা শৈলীর মন্দিরের সাধারণ একটি বৈশিষ্ঠ। মন্দিরের উত্তর দিকের দেয়ালে ৪ টি স্তম্ভ সমর্থিত তিনটি খিলান রয়েছে, তবে খিলানগুলি ভিতর দিক থেকে ছদ্ম দেওয়াল দ্বারা বন্ধ করে দেওয়া আছে।[৪] উত্তর দিকের দেয়ালে খিলানগুলি প্রবেশপথ বা প্রস্থানপথ হিসাবে নয়, বরং দক্ষিণ দেয়ালের সাদৃশ্যপূর্ণ রেখে মন্দিরের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্য তৈরি করা হয়েছিল। খিলান গঠনকারী স্তম্ভগুলি ব্যতীত মন্দিরের দেয়ালগুলির বহির্ভাগে অপেক্ষাকৃত কম ব্যাসার্ধ বিশিষ্ট ১৬ টি স্তম্ভ প্রথিত রয়েছে। এছাড়া, দক্ষিণ ও উত্তরের খিলানগুলির উপরে দুটি করে মোট ৪ টি স্তম্ভ দেয়ালে প্রথিত রয়েছে। দূর থেকে দেখে মনে হয় যেন অপেক্ষাকৃত কম ব্যাসার্ধের স্তম্ভগুলি ছাদের (চালা) কার্নিশকে ধরে রেখেছে।
দো-চালা ঘর দুটি অর্থাৎ মণ্ডপ ও গর্ভগৃহের চালা বা ছাদ পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকলেও, গঠনগতভাগে দেয়াল দ্বারা পরস্পরের সঙ্গে সংযুক্ত নয়। মণ্ডপ ও গর্ভগৃহের দেয়ালের মাঝে ০.৭৫ মিটার (২.৫ ফু) এর ফাঁক রয়েছে।[৩]
ছাদ গঠনকারী দুটি চালার শীর্ষভাগের মাঝে যে উপত্যকা সেই উপত্যকার উপরে ইট দ্বারা নির্মিত একটি বর্গাকার মঞ্চ রয়েছে, যার উপরে একটি রত্ন রয়েছে। চার-চালা বিশিষ্ট রত্নটি চালা শৈলীতে নির্মিত।[৫]
অভ্যন্তর[সম্পাদনা]
মন্দিরের অভ্যন্তরে প্রবেশের জন্য তিনটি খিলানাকার প্রবেশ পথ রয়েছে, যেগুলি দক্ষিণমুখী সম্মুখভাগে অবস্থিত। মন্দিরের অভ্যন্তরভাগ দুটি কক্ষ নিয়ে গঠিত, যথাক্রমে - মণ্ডপ ও গর্ভগৃহ। প্রবেশপথগুলি মণ্ডপে প্রবেশের অনুমোতি প্রদান করে। ০.৭৫ মিটার (২.৫ ফু) দূরত্বে থাকা দেয়াল দুটির প্রতিটিতে একটি করে খিলান রয়েছে, এবং দেয়ালদুটির মাঝে ইটের দেয়াল রয়েছে; ফলে মণ্ডপ ও গর্ভগৃহ পরস্পরের সঙ্গে মাঝে একটি আবদ্ধ পথ দ্বারা সংযুক্ত আছে।[৪]
শিল্পকর্ম[সম্পাদনা]
কেষ্ট রায় মন্দিরটি বাংলা অঞ্চলের প্রযুক্তিগত ও শৈল্পিক উৎকর্ষের একটি মূর্ত প্রতীক। মন্দিরের ভিতরে ও বাইরে দেওয়ালের উপ ভার্স্কয্য খচিত চিত্র দিয়ে সুসজ্জিত।
আরও[সম্পাদনা]
তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]
গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]
- রায়, মৃন্ময়ী (২০১৬)। "Icon - NMI Journal of History of Art, Vol lt 2016"। দিল্লি।