জৈবিক যুদ্ধবিগ্রহ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
ল্যাবরেটরিতে সংক্রামক অণুজীবের জ্বিনগত বিকৃতি ও চাষ

জৈবিক যুদ্ধবিগ্রহ তথা জীবাণুভিত্তিক রণযুদ্ধ হলো মানুষ হত্যা কিংবা বিকলাঙ্গ করার উদ্দেশ্যে সামরিক যুদ্ধে জৈবিক বিষাক্ত পদার্থ কিংবা সংক্রামক অণুজীব যেমন ব্যাকটেরিয়া, ভাইরাস এবং ছত্রাকের ব্যবহার। জৈবিক অস্ত্রশস্ত্র তথা জৈব-অস্ত্র বা জৈব অশনিসংকেত বলতে কোনো জীবন্ত সত্ত্বা কিংবা নিজেদের বহুগুণিত প্রতিরূপ তৈরিতে সক্ষম (যেমন- ভাইরাস, যাকে সার্বজনীনভাবে জীবিত ধরা হয় না) অজীব বস্তুকে বোঝানো হয় যা তার শিকার তথা যে জীবিত সত্বায় আশ্রিত হয় তার অভ্যন্তরে বহুগুণিত হতে ও বংশবিস্তার করতে পারে। যুদ্ধবিগ্রহে পোকামাকড় ও কীটপতঙ্গের ব্যবহারকেও জৈবিক যুদ্ধাস্ত্র হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এই জৈবিক যুদ্ধবিগ্রহের ব্যাপারটি নিউক্লিয়ার এবং রাসায়নিক যুদ্ধগুলোর থেকে আলাদা। একসাথে জৈবিক, নিউক্লিয়ার ও রাসায়নিক যুদ্ধকে এনবিসি (নিউক্লিয়ার, বায়োলজিক্যাল এন্ড কেমিক্যাল ওয়ারফেয়ার ইউজিং ওয়েপনস অফ মাস ডেস্ট্রাকশন) তথা বিপুল ধ্বংসাত্মক ফলাফলবাহী অস্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে নিউক্লিয়ার, জৈবিক ও রাসায়নিক যুদ্ধ বলা হয়। এসব যুদ্ধে ব্যবহৃত কোন অস্ত্রই চিরাচরিত সাধারণ অস্ত্র নয়, যেগুলো প্রধানত তাদের বিষ্ফোরক, গতিশীলআগ্নেয় বৈশিষ্ট্যের দরুণ ব্যবহৃত হয়।

শত্রুসেনার সাথে যুঝে উঠতে তাদের চেয়ে বেশি পরিকল্পনা ও সামরিক কৌশলগত সুবিধা পেতে জৈবিক অস্ত্রশস্ত্রের ব্যবহার কিংবা ব্যবহারে ভয় দেখানো ফলপ্রসূ হতে পারে। শত্রুসেনার হাত থেকে নির্দিস্ট এলাকা বাঁচানোর হাতিয়ারস্বরূপ (area denial weapons) কিছু রাসায়নিক অস্ত্রের ন্যায় জৈবিক অস্ত্রসমূহও ব্যবহৃত হতে পারে। এই অস্ত্রগুলো হতে পারে মারণাস্ত্র কিংবা অমৃত্যুদায়ী এবং এর নিশানা হতে পারে একজন মানুষ, হতে পারে একদল মানুষ কিংবা একটি পুরো জনগোষ্ঠী। এই জৈবিক অস্ত্রগুলো জাতীয়ভাবে কিংবা জাতীয়তা-বহির্ভুত স্বতন্ত্র দলগুলোর দ্বারা প্রস্তুতকৃত, অর্জিত, সঞ্চিত কিংবা কার্যকর হতে পারে। জাতীয়তা-বহির্ভুত স্বতন্ত্র দলগুলোর এর সাথে এসব হাতিয়ারের সম্পৃক্ততা কিংবা কোনো জাতীয় অঙ্গরাজ্যের দ্বারা গোপনে এর ব্যবহার করা হলে তা জৈব-সন্ত্রাসবাদ হিসেবে পরিচিত।[১]

জৈবিক ও রাসায়নিক যুদ্ধবিগ্রহ কিছুক্ষেত্রে একে অপরের সাথে অঙ্গাঅঙ্গিভাবে জড়িত। কেননা, কিছু জীবসত্বায় উৎপাদিত বিষাক্ত পদার্থের ব্যবহার জৈবিকরাসায়নিক উভয় অস্ত্রনীতির (the Biological Weapons Convention and the Chemical Weapons Convention) বিধানেরই অধীন। বিষাক্ত পদার্থ এবং মানুষের মনস্তত্ত্বকে প্রভাবিতকারী রাসায়নিক পদার্থসমূহকে 'মিডস্পেক্ট্রাম এজেন্ট' (mid-spectrum agent) বা মধ্যবর্তী প্রভাবক-পদার্থ হিসেবে অভিহিত করা হয়। জৈব-অস্ত্রগুলোর মতো এসকল মধ্যবর্তী প্রভাবক-পদার্থ তাদের বাহকের শরীরে বংশবিস্তার করে না এবং সুপ্তাবস্থাও জৈব-অস্ত্র অপেক্ষা স্বল্পমেয়াদী।

প্রচলিত আন্তর্জাতিক মানবকল্যাণ আইন এবং নানান আন্তর্জাতিক চুক্তি অনুসারে জৈব-অস্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সশস্ত্রযুদ্ধে জৈব-পদার্থের ব্যবহার একপ্রকার যুদ্ধাপরাধ

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Wheelis, Mark; Rózsa, Lajos; Dando, Malcolm (2006). Deadly Cultures: Biological Weapons Since 1945. Harvard University Press. pp. 284–293, 301–303. ISBN 0-674-01699-8