জেন অস্টেন

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জেন অস্টেন
Watercolour-and-pencil portrait of Jane Austen
আনু. ১৮১০ সালে অঙ্কিত[ক]
জন্ম(১৭৭৫-১২-১৬)১৬ ডিসেম্বর ১৭৭৫
স্টিভেন্টন, হ্যাম্পশায়ার, ইংল্যান্ড
মৃত্যু১৮ জুলাই ১৮১৭(1817-07-18) (বয়স ৪১)
উইন্‌চেস্টার, হ্যাম্পশায়ার, ইংল্যান্ড
সমাধিস্থলউইন্‌চেস্টার ক্যাথেড্রাল, হ্যাম্পশায়ার, ইংল্যান্ড
সক্রিয় বছর১৭৮৭ থেকে ১৮১৭

স্বাক্ষরSignature from Austen's 1817 will

জেন অস্টেন (ইংরেজি: Jane Austen) (১৬ ডিসেম্বর, ১৭৭৫ – ১৮ জুলাই, ১৮১৭) একজন মহিলা ইংরেজ ঔপন্যাসিক, যিনি মূলত তাঁর ছয়টি প্রধান উপন্যাসের জন্য সুপরিচিত ছিলেন। তার উপন্যাসগুলি মূলত আঠারো শতকের শেষভাগে ইংরেজ ভূস্বামীকেন্দ্রিক সমাজকে উপজীব্য করে রচিত। সমাজে উপযুক্ত স্থানলাভ এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তার জন্য নারীদের বিবাহের উপর নির্ভরশীলতা অস্টিনের বেশির ভাগ উপন্যাসের মূল আখ্যান। আঠারো শতকের দ্বিতীয়ার্ধে ভাবপ্রধান উপন্যাসের বিরুদ্ধ প্রতিক্রিয়াস্বরূপ তার রচনাগুলিকে ঊনিশ শতকের ক্রান্তিলগ্নে উদ্ভূত বাস্তব নির্ভর সাহিত্য শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে।[২][৩]তার রচনায় তীক্ষ্ণ প্রহসনের সাথে সাথে তার বাস্তববোধ, হাস্যরস এবং সামাজিক পর্যালোচনা তাকে সমালোচক, বিদ্বান এবং অনুরাগী পাঠকদের মাঝে স্বমহিমায় উপস্থাপন করেছে।[৪]

সেনস অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি (১৮১১), প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডাইস (১৮১৩), ম্যানসফিল্ড পার্ক (১৮১৪) এবং এমা (১৮১৬) প্রকাশের মধ্য দিয়ে তিনি লেখক হিসেবে সাফল্য অর্জন করেছিলেন। আরও দুটি উপন্যাস লিখেছিলেন তিনি, নর্থেঙ্গার অ্যাবে এবং পারসুয়েশন, -এই দুটি উপন্যাস তার মৃত্যুর পরবর্তীকালে ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়েছিল। 'স্যান্ডিটন' শিরোনামে আরেকটি উপন্যাস তিনি শুরু করেছিলেন কিন্তু তা শেষ করে যেতে পারেননি। কিশোরদের জন্য লেখা তিন খন্ড পান্ডুলিপিও তিনি রেখে গিয়েছিলেন যার মধ্যে একটি ছিল সংক্ষিপ্ত দিনলিপির আকারে লেখা উপন্যাস লেডি সুসান এবং আরেকটি অসম্পূর্ণ উপন্যাস দ্য ওয়াটসন । তার ছয়টি পূর্ণ দৈর্ঘ্যের উপন্যাসের বেশিরভাগই বেনামে প্রকাশিত হয়েছিল এবং তাঁর জীবদ্দশায় সেগুলো সেভাবে তার জন্য সাফল্যও বয়ে আনেনি।

১৮৩৩ সালে মরণোত্তর কালে তার রচনাগুলি পুনরায় খ্যাতিলাভ করতে শুরু করে। তার উপন্যাসগুলি রিচার্ড বেন্টলির উপন্যাস সংকলনে ও ফার্দিনান্দ কিপারিং এর প্রচ্ছদ সহকারে পুনরায় প্রকাশিত হয়।[৪] ধীরে ধীরে এই সৃষ্টিকর্মগুলো আরও প্রশংসা এবং অসাধারণ পাঠকপ্রিয়তা অর্জন করেছিল। ১৯৬৯ সালে, তার মৃত্যুর বাহান্ন বছর পরে, তার ভ্রাতুষ্পুত্র জেন অস্টেনের মেমোয়ার বা স্মরণিকা প্রকাশ করেন যাতে লেখকের জীবনের এক নিরাভরণ চিত্র জনসম্মুখে উঠে আসে।

অস্টেন বহু সমালোচনামূলক প্রবন্ধ এবং সাহিত্যিক সংকলনকে অনুপ্রাণিত করেছেন। তার উপন্যাস থেকে অনুপ্রানিত কিছু বিখ্যাত চলচিত্র হল, ১৯৪০ এর প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস, সেনস এন্ড সেনসিটিবিলিটি (১৯৯৫), এমা (১৯৯৬), ম্যানসফিল্ড পার্ক (১৯৯৯), প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস (২০০৫ সালের), লাভ অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ (২০১৬) এবং এমা (২০২০) ইত্যাদি।

জীবনী সম্পর্কিত তথ্য[সম্পাদনা]

জেন অস্টেনের জীবন সম্পর্কে উল্লেখযোগ্য তেমন তথ্য পাওয়া যায় না কেবলমাত্র বেঁচে যাওয়া কয়েকটি চিঠি আর তার পরিবারের সদস্যরা যে জীবনীমূলক নোটগুলি লিখেছিলেন সেগুলো ছাড়া।[৫] জীবদ্দশায়, অস্টেন সম্ভবত ৩,০০০ টিরও বেশি চিঠি লিখেছিলেন যার মধ্যে ১৬১ টি চিঠি হয়তো অক্ষত থাকতে পারে।[৫] অনেকগুলো চিঠী অস্টেন তার বড় বোন ক্যাসান্দ্রাকে লিখেছিলেন, যিনি সেগুলোর বেশির ভাগ ১৮৪৩ সালে পুড়িয়ে ফেলেছিলেন এবং বাকি নিজের কাছে রাখা চিঠিগুলোকেও ছিড়ে ফেলেছিলেন। স্পষ্টতই, কাসান্দ্রা তার বোনের চিঠিগুলো যাতে আত্মীয়দের, বিশেষ করে তার ছোট ভ্রাতুষ্পুত্রীদের হাতে যেন না যায়, সেই উদ্দেশ্যে তিনি একাজ করেছিলেন। অস্টেন অনেক সময়ই তার প্রতিবেশি ও আত্মীয়দের সম্পর্কে স্পষ্টভাষায় তীর্যক মন্তব্য করেছেন।[৬][৭] ক্যাসান্দ্রা বিশ্বাস করতেন যে কলহ এড়ানোর স্বার্থে জেনের এই লেখাগুলো ধ্বংস করা উচিত। ফলে অস্টেনের জীবন সংক্রান্ত তথ্যের স্বল্পতা আধুনিক জীবনীবিদদের কাছে একটি বড় বাঁধা।[৮]

পরিস্থিতি আরও জটিল হয়েছিল যখন তার পরিবারের পরবর্তী প্রজন্মের সদস্যরা অস্টেনের জীবনের যেটুকু অস্বচ্ছ তথ্য অবশিষ্ট ছিল তাও নিশ্চিহ্ন করে দেয়। জেনের বড় ভাইয়ের উত্তরাধিকারিদের সূত্রে জানা যায়, বড় ভাই অ্যাডমিরাল ফ্রান্সিস, অস্টেনের আরও চিঠি ধ্বংস করেছিলেন; ১৮১৮ সালে তার ভাই লিখেছেন "জীবনী বিজ্ঞপ্তি" থেকে বিশদ বিবরণ বাদ দেয়া হয়েছে; এবং এই বাদ দেয়ার কাজ করেন সালে তার ভ্রাতুষ্পুত্ররা। ১৮৬৯ ও ১৯১৩ দ্বারা প্রকাশিত স্মৃতিকথা এ মেমোয়ার অফ জেন অস্টেন এবং উইলিয়াম ও রিচার্ড আর্থার অস্টেন লিঘের জেন অসটেন: হার লাইফ অ্যান্ড লেটারস- গ্রন্থে অস্টেনের জীবনের অনেক তথ্যই অনুপস্থিত ছিল।[৯] এভাবে তার পরিবার ও আত্মীয়স্বজনরা তাদের সৌম্য শান্ত জেনের যে ভাবমূর্তি গঠন করেছিলেন তা তাদের পক্ষপাতিত্বকে প্রতিফলিত করেছে এবং অস্টেনকে তারা এমন একজন নারী হিসেবে চিত্রায়িত করেছেন যার পারিবারিক পরিস্থিতি সুখী এবং যার পরিবারই তার জীবনের মূল ভিত্তি ছিল।[৫] আধুনিক জীবনীগুলোতে অস্টেনের চিঠিপত্র ও পারিবারিক জীবনী সম্পর্কিত বাদ দেয়া তথ্যগুলোকে আবারো সংযোজনের চেষ্টা করা হচ্ছে, অস্টেনের জীবনিকার ও গবেষক পণ্ডিত জ্যান ফার্গাসের মত অনুযায়ী, অস্টেন চরম অসুখী জীবনযাপন করতেন এবং তিনি "পুরোপুরি অপ্রীতিকর পারিবারিক পরিবেশে বন্দী একজন তিক্ত, হতাশাগ্রস্ত নারী ছিলেন" এ ধরনের বৈপরীত্যমূলক ধারণাকে এড়িয়ে থাকাটা একটি বড় চ্যালেঞ্জ।[১০]

সমাজের এক একান্নবর্তী পরিবারে।[১১] তিনি মূলত তার পিতা ও ভাইদের কাছে লেখাপড়া শেখেন এবং কিছুটা নিজে পড়াশোনা করেও শেখেন। পেশাদার লেখক হিসেবে তার উত্থানের পিছনে তার পরিবারের স্থায়ী সমর্থনের একটি বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।[১২] কৈশোর থেকে ৩৫ বছর বয়স পর্যন্ত তিনি সাহিত্য রচনার কাজ করে গেছেন। এই সময়কালের মধ্যে তিনি একাধিক সাহিত্যিক রূপ নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা করেন। এর মধ্যে তিনি পত্রোপন্যাস রচনার কাজেও হাত দিয়েছিলেন, কিন্তু লেখার ক্ষেত্রে পরে সেই বিশেষ শৈলীটি তিনি পরিত্যাগ করেন। তিনি তিনটি উপন্যাস রচনা করে সেই উপন্যাসগুলি বারংবার সংশোধন করেন এবং চতুর্থ একটি উপন্যাস রচনায় হাত দেন।[খ] ১৮১১ থেকে ১৮১৬ সালের মধ্যে তার সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি (১৮১১), প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস (১৮১৩), ম্যানসফিল্ড পার্ক (১৮১৪) এবং এমা (১৮১৬) নামে চারটি উপন্যাস প্রকাশিত হয়। লেখক হিসেবে তিনি সাফল্যও অর্জন করেন। এছাড়া তিনি নরদ্যাঙ্গার অ্যাবিপারসুয়েশন নামে দুটি উপন্যাসও রচনা করেন। এগুলি তার মৃত্যুর পর ১৮১৮ সালে প্রকাশিত হয়। অস্টেন স্যান্ডিটন শিরোনামে আরও একটি উপন্যাস রচনার কাজে হাত দিয়েছিলেন, কিন্তু সেটি সমাপ্ত করে যেতে পারেননি।

অস্টেনের উপন্যাসগুলি অষ্টাদশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধের ভাবোপন্যাসের সমালোচনামূলক পুনরীক্ষণ এবং ঊনবিংশ শতাব্দীর বাস্তবতাবাদী সাহিত্য শৈলীর উত্থানের এক গুরুত্বপূর্ণ সোপান।[১৩][গ] তার উপন্যাসের প্লট মূলত হাস্যোদ্দীপক [১৪]। ততকালীন সমাজে সামাজিক মর্যাদা ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে মহিলারা বিবাহ ব্যবস্থার উপর কতটা নির্ভরশীল ছিল, তারই প্রতিফলন তার লেখনিতে দেখা যায়।[১৫] তার জীবদ্দশায় তিনি বিশেষ খ্যাতি অর্জন করতে পারেননি। এই সময় মাত্র কয়েকজন সমালোচকই তার রচনার সঠিক মূল্যায়ন করতে পেরেছিলেন। ১৮৬৯ সালে তার এক ভ্রাতুষ্পুত্র আ মেমোয়ার অফ জেন অস্টিন নামে একটি গ্রন্থ প্রকাশ করলে, লেখিকার জনপ্রিয়তা বৃদ্ধি পায়। ১৯৪০-এর দশকের মধ্যে বিদ্বজ্জন সমাজে তিনি একজন মহান ইংরেজ সাহিত্যিকরূপে প্রতিষ্ঠা অর্জন করেন। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ার্ধে অস্টেনকে নিয়ে প্রচুর গবেষণামূলক কাজ হয় এবং এক বিশেষ জেনীয় অনুরাগী সংস্কৃতি গড়ে ওঠে।

২০১০ সালে অক্সফোর্ডের সেন্ট অ্যানি'জ কলেজের ক্যাথরিন সুদারল্যান্ড অস্টেনের ১০০০ পৃষ্ঠা পত্রাবলি ও পাণ্ডুলিপি পরীক্ষা করে জানিয়েছেন, যে পরিশীলিত গদ্যের জন্য অস্টিন বিখ্যাত তা হয়তো অন্য কোন ব্যাক্তির দ্বারা ব্যাপকভাবে সম্পাদিত। এই সম্পাদনার কাজটি সম্ভবত করেছিলেন অস্টেনের সম্পাদক তথা বিশিষ্ট কবি ও ধ্রুপদি সাহিত্য বিশারদ উইলিয়াম গিফোর্ড। পাণ্ডুলিপিতে অস্টিনের নিজের যে লেখা ও বানান পাওয়া যায় তা ব্যক্তিগত ধাঁচের লেখা এবং কিছুটা ভ্রান্তিজড়িত। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও লন্ডনের কিংস কলেজের উদ্যোগে তিন বছরের গবেষণার ফলে এই তথ্যটি জানা গিয়েছে।[১৬]

জীবনী[সম্পাদনা]

পারিবারিক পরিচিতি[সম্পাদনা]

জেন অস্টেন ১৬ ডিসেম্বর ১৭৭৫ সালে হ্যাম্পশায়ারের স্টিভেনটনে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা-মাতার প্রত্যাশিত সময়ের এক মাস পরে তিনি ভূমিষ্ঠ হন। তার জন্মের পর তার পিতা তার মাতাকে এক চিঠি লেখেন যাতে এই বিষয়ে তিনি উল্লেখ করেছিলেন। তিনি সেই চিঠিতে এও উল্লেখ করেছিলেন যে নবজাতক শিশুটি বর্তমানে ক্যাসির ক্রীড়ার সাথী মাত্র, সে তার ভবিষ্যতের উপযুক্ত সঙ্গী হয়ে উঠবে।[১৭] ১৭৭৬ সালের শীতঋতু ছিল অত্যন্ত কঠোর এবং সেকারনে এপ্রিল মাসের আগে নবজাতক শিশুটির ধর্মীয় দীক্ষা গ্রহণের রীতি সম্ভব হয়ে ওঠেনি। অবশেষে ৫ ই এপ্রিল স্থানীয় এক গির্জায় তার দীক্ষা গ্রহণের কাজ সম্পূর্ণ হয় এবং তার নামকরন করা হয় জেন।[১৮]

স্টিভেনটন চার্চ, এ মেমোয়ার অফ জেন অস্টেন -র পৃষ্ঠা থেকে।[১৯]

জেনের পিতা জর্জ অস্টেন স্টিভেনটনে এবং নিকটবর্তী ডিন অঞ্চলের ইংরেজ যাজকপল্লীতে ধর্মযাজক হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন।[২০] পারিবারিক সূত্রে তারা আঞ্চলিক উল ব্যাবসায়ী গোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। উত্তারাধিকার সূত্রে তাদের পরিবারের জ্যেষ্ঠ সন্তান পারিবারিক সম্পত্তির অগ্রাধিকার পেত এবং সেই অনুযায়ী সম্পত্তির বিভাজন হত। সেই কারনে জর্জ এবং তার পরিবার দারিদ্র্য অবস্থার সম্মুখীন হয়। তিনি ও তার দুই বোন বাল্যকালেই অনাথ হয়ে পরেন এবং আত্মীয়রা তাদের প্রতিপালনের ভার নিয়েছিলেন। তার বোন ফিলাডেলফিয়া একজন উপযুক্ত জীবনসঙ্গীর সন্ধান করতে ভারতে গমন করেন এবং জর্জ একটি শিক্ষাবৃত্তির সহায়তায় অক্সফোর্ডের সেন্ট জনস কলেজে প্রবেশ করেন। সম্ভবত সেখানেই ক্যাসান্দ্রা লেইয়ের সাথে তার প্রথম দেখা হয়।[২১] ক্যাসান্দ্রা সেই অঞ্চলের প্রসিদ্ধ লেই পরিবারের অন্তর্ভুক্ত ছিল। তার পিতা অক্সফোর্ডের অল সোলস কলেজে ধর্মযাজক পদে নিযুক্ত ছিলেন, যেখানে মধ্যবিত্ত পরিবারে ক্যসান্দ্রার প্রতিপালন হয়। ভাগ্যক্রমে তার বড় ভাই তার বড় পিসি পেরটের সম্পত্তির এক বৃহৎ অংশের অংশীদারী পেয়েছিল। সম্পত্তি গ্রহন করার একমাত্র শর্ত ছিল এই যে, তার বড় ভাইকে নাম পরিবর্তন করে লেই-পেরট উপাধি গ্রহন করতে হবে।[২২]

সম্ভবত ১৭৬৩ সালে উপহার বিনিময়ের মাধ্যমে জর্জ এবং ক্যাসান্দ্রার বাগদান হয়।[২৩] জর্জ তার আত্মীয়তা সূত্রে বিত্তশালী টমাস নাইটের অধিনে স্টিভেনটনের ধর্মযাজকদের কলোনিতে কাজ পান।[২৪] ক্যাসান্দ্রার পিতা মারা যাওয়ার দুই মাস পর ১৭৬৪ সালে্র ১৬ এপ্রিল তারিখে বাথের সেন্ট সুইথিন চার্চে একটি সাধারণ অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জর্জ এবং ক্যাসান্দ্রা বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।[২৫] জর্জের সামান্য বেতনের চাকরীতে তাদের পারবারিক আয় ছিল সীমিত। বিবাহ পরবর্তী সময়ে ক্যসান্দ্রার প্রত্যাশা ছিল যে তার মায়ের মৃত্যুর পর উত্তরাধিকার সূত্রে তিনি কিছু লাভ করবেন।[২৬]

অস্টেন পরিবার ডিন অঞ্চলে কিছুদিন অস্থায়ীভাবে বসবাদ করেছিলেন। পরবর্তীকালে স্টিভেন্টনে, ষষ্ঠদশ শতাব্দীর এক জরাজীর্ণ বাড়ির সংস্কার হওয়ার পর তারা সেখানে বসবাস করতে শুরু করে। ডিনে বসবাস কালে ক্যাসান্দ্রা তার তিন সন্তানের জন্ম দেয়। ১৭৬৫ সালে জেমস, ১৭৬৬ সালে জর্জ এবং ১৭৬৭ সালে এডওয়ার্ড অস্টেনের জন্ম হয়।[২৭] ক্যাসান্দ্রা তার নবজাতক শিশুদের জন্মের পর বেশ কয়েকমাস নিজ বাসস্থানে রাখতেন এবং তারপর এলিজাবেথ লিটলঊড নামক এক পরিচিত নার্সের সুপারিসে ১২ থেকে ১৮ মাস তাদের প্রতিপালন করতেন। [২৮]

স্টিভেনটন[সম্পাদনা]

স্টিভেনটন রেক্টরি, আ মেমোয়ার অফ জেন অস্টেন অনুযায়ী এই স্থান এক পাহাড়ি উপত্যকায় স্থিত এবং জঙ্গলাকীর্ণ। [১৯]

১৭৬৮ সালে অস্টেন পরিবার স্টিভেন্টনে স্থায়ীভাবে বসবাস করতে শুরু করে। সেখানে ১৭৭১ সালে তাদের সন্তান হেনরির জন্ম হয়।[২৯] এইসময় জেনের ভ্রাতা জর্জের বিকাশজনিত অসুখের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে ওঠে এবং ক্যাসান্দ্রার পক্ষে এই লক্ষণগুলি উপেক্ষা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে ওঠে। অনুমান করা হয় যে জর্জ খিঁচুনি জাতীয় রোগের শীকার হতে পারে অথবা মূক ও বধির হয়ে যেতে পারে। সেইকারনে ক্যাসান্দ্রা জর্জের প্রতিপালনের ব্যবস্থা অন্যত্র করতে চেয়েছিলেন।[৩০]

১৭৭৩ সালে তাদের আরেক সন্তান ক্যাসান্দ্রার জন্ম হয়। এরপর যথাক্রমে ১৭৭৪ সালে ফ্রান্সিস অস্টেন এবং ১৭৭৫ সালে জেনের জন্ম হয়।[৩১]

হোনানের মতে, অস্টেন বাড়ির পরিবেশ ছিল, "উন্মুক্ত, আনন্দদায়ক, বুদ্ধিজীবী আলোচনার উন্মুক্ত ক্ষেত্র"। রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে যাদের ধারণার সাথে অস্টেনরা দ্বিমত পোষণ করতে পারে তাদের সম্পর্কে খোলাখুলি বিবেচনা ও আলোচনা করা হত।[৩২] অস্টেন পরিবার তাদের আত্মীয়দের পৃষ্ঠপোষকতার উপর নির্ভর ছিলেন এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখার জন্য ততপর থাকতেন। এজন্য প্রায়শই তারা তাদের আত্মীয়স্বজনদের নিজ বাসভবনে আমন্ত্রন জানাতেন।[৩৩] মিসেস অস্টেন ১৭৭০ সালের গ্রীষ্মকাল লন্ডনে জর্জের বোন ফিলাডেলফিয়া এবং তার মেয়ে এলিজা, তার অন্য বোন মিসেস ওয়াল্টার এবং তার মেয়ে ফিলির সাথে কাটিয়েছিলেন।[৩৪] লে ফায়ের মতে, ফিলাডেলফিয়া এবং এলিজা হ্যানকক গ্রামীন হ্যাম্পশায়ারের সরল জীবনে প্রায়শই ধূমকেতুর ন্যায় আবির্ভূত হতেন। স্টিভেনটনে বসবাস কালে তারা তাদের লন্ডনের শহুরে জীবন এবং বিবিধ দেশভ্রমন সম্পর্কে প্রায়শই আলোচনা করতেন; যা পরবর্তীকালে জেনের রচিত গল্প এবং উপন্যাসে গভীর প্রভাব ফেলেছিল।[৩৫]

ক্যাসান্দ্রা অস্টেনের খুড়তুতো ভাই থমাস লেই ১৭৭০ এবং ১৭৮৯ এর দশকে বেশ কয়েকবার অস্টেনদের নিবাসস্থলে এসেছিলেন, ১৭৮১ সালে তিনি তরুণ ক্যাসিকে বাথ -এ তাদের বাড়িতে যাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বাথ থেকে তার প্রত্যাগমনের সময়কার কিছু নথি পাওয়া গেছে যাতে প্রথমবার জেনের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৩৬] লে ফায়ের লেখনি অনুযায়ী, ক্যাসান্দ্রা এবং জেন দুই বোনের মধ্যে গভীর সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক ছিল। তিনি এও বলেন যে অস্টেন পরিবারের সন্তান ও সন্ততিদের মধ্যে ক্যাসান্দ্রা ও এডওয়ার্ড এর মধ্যে বিশেষ সম্পর্ক ছিল এবং অপরদিকে জেন এবং হেনরি ভাই বোন হিসাবে ঘনিষ্ঠ ছিলেন।[৩৭]

১৭৭৩ সাল থেকে ১৭৯৬ পর্যন্ত জর্জ অস্টেন কৃষিকাজ এবং আশেপাশের ৩ থেকে ৪ জন বালক, যাদের প্রায়শই তাদের বাড়িতে আনাগোনা হত, তাদের শিক্ষাদানের মাধ্যমে তার পরিবারকে প্রতিপালনের মত সামান্য উপার্জন করতেন।[৩৮] শোনা যায় রেভারেন্ড অস্টেনের বার্ষিক আয় ছিল ২০০ পাউন্ডের মত।[৩৯] সেইসময় অনুসারে এটি ছিল মোটামুটি ভদ্রস্থ উপার্জন বিশেষ করে যখন, কামার, ছুতোর ইত্যাদি পেশায় নিবৃত্ত দক্ষ শ্রমিকদের বার্ষিক উপার্জন ছিল ১০০ পাউন্ড এবং সাধারণ ভদ্রস্থ পরিবারের বার্ষিক আয় ছিল ১০০০ পাউন্ড থেকে ৫০০০ পাউন্ড।[৩৯]

জীবনের এই সময়কালে অস্টেন নিয়মিত গির্জায় যেতেন, বন্ধুবান্ধব এবং প্রতিবেশীদের সাথে মেলামেশা করতেন এবং সন্ধ্যায় পারিবারিক জমায়েতে নিমন্ত্রিতদের সামনে প্রায়শই তার নিজস্ব রচনা - উপন্যাসগুলি পড়তেন। প্রায়শই তাকে প্রতিবেশীদের বাড়ির জমায়েতে, কারোর রাতের ডিনারের নিমন্ত্রনে অথবা টাউন হলের জনসমাবেশ নিয়মিত যোগদান করতে দেখা যেত।[৪০] তার ভাই হেনরির মতে জেনের নাচের শখ ছিল এবং সে নৃত্যকলায় বিশেষ পারদর্শী ছিল।[৪১]

শিক্ষাজীবন[সম্পাদনা]

জেনের বোন ক্যাসান্দ্রা অস্টেনের প্রতিকৃতি

১৭৮৩ সালে জেন এবং ক্যাসান্দ্রা অক্সফোর্ড গমন করেন এবং মিসেস অ্যান কয়েলের কাছে শিক্ষাগ্রহণ করতে শুরু করেন। একবছর পর মিসেস কয়েল তাদেরকে নিজের সাথে সাউদাম্পটন নিয়ে যান। কিন্তু শরতের সময় দুই অস্টেন ভগিনী কঠিন টাইফাস অসুখের শীকার হন এবং বিশেস করে জেনের অবস্থা গুরুতর হয়ে পরে এবং সেইকারনে তাদেরকে তাদের বাড়ি ফিরে আসতে হয়।[৪২] এরপর বেশ কিছুদিন বাড়িতেই অস্টেনের শিক্ষাদান হয়। অবশেষে ১৭৮৫ সালে জেন পুনরায় তার বোনের সাথে বার্ক‌শায়ারের রিডীং অ্যাবে গার্লস স্কুল -এ ভর্তি হন। বিদ্যালয়টি মিসেস লা টোর্নেল নামক এক মহিলার অধিনে ছিল যিনি থিয়েটারের প্রতি বিশেষ অনুরক্ত ছিলেন।[৪৩] স্কুলের পাঠ্যসূচিতে সামান্য ফরাসি ভাসাশিক্ষা, সেলাই-ফোরাইয়ের কাজ, নৃত্য, সঙ্গীত এবং সম্ভবত নাটক অন্তর্ভুক্ত ছিল। ১৭৮৬ সালে দুই বোনকে পুনরায় স্কুল ছাড়তে হয় কারন স্কুলের উচ্চ মাসিক বেতন অস্টেন পরিবারের পক্ষে দেওয়া অসম্ভব হয়ে উঠছিল।[৪৪] ১৭৮৬ সালের পর আর কখনোই অস্টেন তার পারিবারিক পরিবেশের থেকে দূরে জাননি।[৪৫]

এরপর জেনের পরবর্তী শিক্ষা সম্পূর্ণ হয় তার পিতা এবং ভাই জেমস তত্ত্বাবধানে এবং নানা বিষয় সম্পর্কিত বিবিধ বই পঠনের মাধ্যমে।[৪৬] আইরিন কলিন্সের মতে জর্জ অস্টেন তার গৃহশিক্ষকতার জন্য যে ছেলেদের স্কুলের বইগুলি ব্যবহার করতেন সেগুলিও জেন পড়তেন।[৪৭] পিতা জর্জের গ্রন্থাগার এবং পারিবারিক বন্ধু ওয়ারেন হেস্টিংসের গ্রন্থ সংগ্রহের উপর জেনের নিরবচ্ছিন্ন অধিকার ছিল। একত্রে এই সংগ্রহগুলি একটি বিশাল এবং বৈচিত্র্যময় গ্রন্থাগারের সমান ছিল। শোনা যায় অস্টেনের পিতা জেনের লেখার প্রতি আগ্রহ এবং বিভিন্ন বিষয়মূলক লেখনি চর্চার প্রতি সহনশীল ছিলেন এবং উভয় বোনকে তাদের লেখা ও আঁকার জন্য ব্যয়বহুল কাগজ এবং অন্যান্য উপকরণ সরবরাহ করতেন।[৪৮]

নাটক ও থিয়েটার অস্টেনের শিক্ষাজীবনের অপরিহার্য অংশ ছিল। তার শৈশবকাল থেকেই, পরিবার এবং বন্ধুরা মিলিতভাবে স্থানীয় এক গুদামঘরে বিবিধ ধারাবাহিক নাটক মঞ্চস্থ করতেন, যার মধ্যে রয়েছে রিচার্ড শেরিডানের দ্য রাইভালস (১৭৭৫) এবং ডেভিড গ্যারিকের বন টন। প্রাথমিকভাবে অস্টেনের বড় ভাই জেমস নাটকের প্রস্তাবনা এবং উপসংহার লেখার কাজ করতেন এবং জেন সম্ভবত প্রথমদিকে কেবলমাত্র একজন দর্শক ছিল; কিন্তু পরে সে নাটক সম্পর্কিত সমস্ত কার্যকলাপে স্বক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে শুরু করে।[৪৯] তাদের মঞ্চস্থ নাটকগুলির মধ্যে হাস্যরস বিষয়ক নাটকগুলি বিশেষ করে জেনের ব্যঙ্গাত্মক লেখনির উপর বিশেষ প্রভাব ফেলেছিল।[৫০] ১২ বছর বয়সে, তিনি তার স্ব-রচিত নাটক লেখার চেষ্টা শুরু করেছিলেন; তিনি তার কিশোর বয়সে তিনটি ছোট নাটক লিখেছিলেন।[৫১]

জুভেনিলিয়া(১৭৮৭-১৭৯৩)[সম্পাদনা]

সম্ভবত এগারো বছর বয়স, অথবা তার আগে থেকেই জেন কবিতা এবং গল্প লেখা শুরু করেছিল এবং তার এই গুন পরিবারে সকল ব্যাক্তিকে অবাক করে দিয়েছিল।[৫২] জ্যানেট টডের মতে, তার প্রাথমিক কাজগুলি ছিল প্রধানত দৈনন্দিন জীবনের অতিরঞ্জিত বিবরণ, যাতে সাধারণ গল্পের পটচিত্রের ব্যাঙ্গাত্মক উপস্থাপনা দেখা যেত। গল্পগুলিতে নারীশক্তির প্রভাব, নারী- স্বাধীনতা ইত্যাদির প্রভাব দেখা যেত।[৫৩] ১৭৮৭ থেকে ১৭৯৩ সাল অবধি অস্টেনের যত রচনা ছিল তা তার পূর্বতন ২৯ টি লেখাই অনুলিপির ন্যায় যা তিনটি নোটবুকে সংকলিত এবং অধুনা এই সংকলনটি জুভেনিলিয়া নামে পরিচিত।[৫৪] এই তিনটি নোটবুককে তিনি ভ্লুম দি ফার্স্ট, ভ্লুম দি সেকন্ড এবং ভ্লুম দি থার্ড নামে অভিহিত করেছিলেন; এই গল্পগুলিতে সব মিলিয়ে সর্বমোট ৯০,০০০ শব্দ সংযুক্ত।[৫৫] অনেক বিশেষজ্ঞ, জুভেনিলিয়াকে "উদ্ধত" এবং "নৈরাজ্যকর" বলে চিহ্নিত করেছেন। বিশেষ করে রিচার্ড‌ জেঙ্কিন্স এই লেখাগুলিকে ১৮ শতকের ঔপন্যাসিক লরেন্স স্টারনের কাজের সাথে তুলনা করেন।[৫৬]

চতুর্থ হেনরির প্রতিকৃতি। অস্টেনের বোন ক্যাসান্দ্রা দ্বারা চিত্রিত

এই রচনাগুলির মধ্যে একটি ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস পরবর্তীকালে লাভ এবং ফ্রেন্ডশিপ শিরোনামে প্রকাশিত হয়। ১৭৯০ সালে, চৌদ্দ বছর বয়সে অস্টেন এই উপন্যাসটি প্রথম রচনা করেছিলেন।[৫৭] এই বইতে তাকে ততকালীন কিছু জনপ্রিয় উপন্যাসের উপহাস করতে দেখা গেছে।[৫৮] পরের বছর, তিনি দ্য হিস্ট্রি অফ ইংল্যান্ড রচনা করেন। এটি একটি চৌত্রিশ পৃষ্ঠার পাণ্ডুলিপি যাতে জেনের লেখনির সাথে তার বোন ক্যাসান্দ্রার তেরোটি জলরঙের ক্ষুদ্রাকৃতি অন্তর্ভুক্ত ছিল।অস্টেনের জনপ্রিয় ঐতিহাসিক লেখার ব্যাঙ্গাত্মক অনুলিপি রচনা করেছিলেন, যার মধ্যে অলিভার গোল্ডস্মিথের ইতিহাসের ইংল্যান্ড (১৭৬৪) -র ব্যাঙ্গাত্মক অনুলিপি বিশেষ উল্লেখযোগ্য।[৫৯] প্রায় আঠারো বছর বয়স থেকে অস্টেন দীর্ঘ এবং পরিশীলিতভাবে লিখতে শুরু করেছিলেন।[৬০]

১৭৯২ সালে অস্টেন ক্যাথারিন অর দ্যি বোওয়ার উপন্যাস লিখতে শুরু করে যার সাথে তার লেখনি পরিপক্কতা লাভ শুরু করে। কারনবসত এটি স্থগিত রেখে তিনি সেসময় লেডি সুসান -এর কাজ শুরু করেন। এক বছর পরে তিনি একটি নাটক লেখার কাজ শুরু করেছিলেন যা পরে স্যার চার্লস গ্র্যান্ডিসন এবং আরও পরে হ্যাপি ম্যান নামে প্রকাশিত হয়, এই নাটকটি ৬ টি অঙ্কের একটি ব্যাঙ্গাত্মক নাটক। শুরু করার কিছুদিন পর জেন এই নাটকটির কাজ স্থগিত রেখেছিলেন এবং পরে ১৮৮০ সালে তিনি এটি সম্পূর্ণ করেন। এটি বিভিন্ন স্কুল পাঠ্যপুস্তক, বিশেষ করে অস্টিনের প্রিয় সমসাময়িক উপন্যাস, দ্য হিস্ট্রি অফ স্যার চার্লস গ্র্যান্ডিসন (১৭৫৩) -এর ব্যাঙ্গাত্মক অনুলিপি।[৬১]

অস্টেন যখন আঠারো বছর বয়সে প্রথমবারের মতো পিসি হয়েছিলেন, তখন তিনি নবজাতক ভাইঝি ফ্যানি-ক্যাথরিন অস্টেন-নাইটকে জুভেনিলিয়ার পাঁচটি ছোট গল্প উপহারস্বরূপ পাঠিয়েছিলেন, যেগুলি এখন 'স্ক্র্যাপস' নামে সুবিখ্যাত। তার আরেক ভ্রাতুস্পুত্র জেন-আনা-এলিজাবেথ অস্টেনকে(১৭৯৩ সালে জন্ম) উৎসর্গ করে তিনি ২রা জুন ১৭৯৩ সালে টু মোর মিসচেভিয়াস মরসেল গল্পটির কাজ শুরু করেন।[৬২] কিছু নথি থেকে জানা যায় যে ১৮১১ সাল অবধি অস্টেন এই বইটি রচনার কাজে নিযুক্ত ছিলেন এবং ১৮১৪ সালের শেষের দিকে তার ভাইঝি এবং ভাগ্নে, আনা এবং জেমস এডওয়ার্ড অস্টেন, এই গল্পে তাদের গুরত্বপুর্ন‌ সংযোজন রেখেছিলেন।[৬৩]

১৭৯৩ এবং ১৭৯৫ সালের মধ্যে (বয়স আঠারো থেকে বিশ), অস্টেন লেডি সুসান বইটির কাজ সম্পূর্ণ করেন, একটি ছোট উপন্যাস, যা তার লেখিকা জীবনের প্রথম পর্বের সবচেয়ে পরিশীলিত কাজ হিসাবে ধরা হয়।[৬৪]

জ্যানেট টডের মতে, অস্টেনের বহু গল্পের প্রধান চরিত্রে সম্ভবত তার খুড়তুতো বোন এলিজা ডি ফিউইলিড -এর প্রভাব ছিল। তার চটকদার জীবনের গল্প অস্টেনকে বিশেষভাবে প্রভাবিত করেছিল। ১৭৯৪ সালে এলিজার ফরাসি স্বামীর নিধন হয় এবং ১৭৯৭ সালে তিনি জেনের ভাই হেনরি অস্টেনকে বিয়ে করেন।[৩৩]

টম লেফ্রয়[সম্পাদনা]

টমাস ল্যাংলোইস লেফ্রয়, ততকালীন আয়ারল্যান্ডের প্রধান বিচারপতি। চিত্রকারঃ উইলিয়াম হেনরি মোট(১৮৮৫); বৃদ্ধ বয়সে, লেফ্রয় স্বীকার করেছেন যে তিনি অস্টিনের সাথে প্রেম করেছিলেন, তার মতে এটি ছিল বালকসুলভ প্রেম। [৬৫]

ডিসেম্বর ১৭৯৫ থেকে জানুয়ারী ১৭৯৬ -এর মধ্যে অস্টিনদের স্টিভেনটনের বসতবাড়িতে টম লেফ্রয় নামক এক প্রতিবেশি বালকের আনাগোনা ছিল, তখন অস্টেনের বয়স কুড়ি বছর। লেফ্রয় তখন সবেমাত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেছেন এবং ব্যারিস্টার হিসেবে প্রশিক্ষণের জন্য লন্ডনে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। সম্ভবত প্রতিবেশি বাড়িতে কোনও জমায়েতে জেন এবং ট্ম একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হন। ক্যাসান্দ্রার প্রতি অস্টেনের লেখা চিঠি থেকে এটা স্পষ্ট যে তারা প্রায়শই একসঙ্গে সময় কাটাতেন।[৬৬]

বোন ক্যাসান্দ্রার কাছে অস্টেনের লেখা এক চিঠিতে তিনি লেফ্রয়কে ভদ্র, সুদর্শন, সুপুরুষ যুবক হিসাবে বর্ণনা করেছেন।[৬৭] এই চিঠি লেখার পাঁচদিন পর জেন ক্যাসান্দ্রাকে আরেকটি পত্র লেখেন যেখানে পুনরায় লেফ্রয়ের উল্লেখ পাওয়া যায়।[৬৭] সেই সময়কার প্রায় সমস্ত চিঠিতে টমের উল্লেখ থাকত। একটি চিঠিতে তিনি টমের সঙ্গে আশু বিচ্ছেদের কথা উল্লেখ করে গভীর দুঃখ প্রকাশ করেছিলেন।[৬৭]

হ্যালপেরিন -এর মত অনুযায়ী অস্টেন প্রায়ই তার চিঠিতে জনপ্রিয় আবেগপূর্ণ উবাচের ব্যঙ্গ করতেন এবং লেফ্রয় সম্পর্কে চিঠিতে লেখা তার কিছু বিবৃতি বিদ্রূপাত্মক হতে পারে। যাইহোক, এটা স্পষ্ট যে অস্টেন লেফ্রয়ের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছিলেন এবং পরবর্তীকালে তার অন্য কোন সঙ্গী তার শূন্যস্থান পূরণ করতে পারেননি।[৬৭] লেফ্রয় পরিবারের হস্তক্ষেপে জানুয়ারির শেষের দিকে টম, জেনের জীবন থেকে বিদায় নেয়। লেফ্রয় এবং অস্টেন উভয়েই তাদের পরিস্থিতি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল ছিলেন এবং ভালো করেই জানতেন যে তাদের মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক হওয়া সম্ভব নয়। টম লেফ্রয় পরে যখনই হ্যাম্পশায়ারে এসেছিলেন, তাকে অস্টেন পরিবারের থেকে দূরে রাখা হয়েছিল এবং জেনও আর কখনও তার সঙ্গে দেখা করেননি।[৬৮]

১৭৯৮ সালে টম লেফ্রয় তার বোনকে একটি চিঠি লিখেছিলেন যাতে জেনের উল্লেখ ছিল, যা দেখে অনুমান করা যায় যে দীর্ঘ বিচ্ছেদ সত্ত্বেও তিনি তখন জেনকে ভুলে উঠতে পারেননি।[৬৯]

প্রারম্ভিক পাণ্ডুলিপি(১৭৯৬ থেকে ১৭৯৮)[সম্পাদনা]

লেডি সুসান শেষ করার পরে অস্টেন তার প্রথম পূর্ণ দৈর্ঘ্যের উপন্যাস এলিনর এবং মারিয়ান -এর কাজ শুরু করেন। তার বোনের মতে ১৭৯৬ সালের আগে কোনসময় জেন তার পরিবারের কাছে এই উপন্যাসের গল্প ও বিষয়বস্তু সম্পর্কে পড়ে শোনান। উপন্যাসটি প্রাথমিক ভাবে জেনের প্রেরিত কিছু পত্রের মাধ্যমে বিভিন্ন খণ্ডে তার পরিবারের কাছে এসে পৌছায়। সেই চিঠিগুলির পূর্ণ সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়নি। ১৮১১ সেই বেনামী উপন্যাস যখন সেন্স এবং সেন্সিবিলিটি নামে প্রকাশিত হয় তখন তাতে উপন্যাসের আসল খসড়াটির কতটুকু সংযোজিত হয়েছিল তা আর বোঝা সম্ভব নয়।[৭০]

অস্টেন ১৭৯৬ সালে তার দ্বিতীয় পূর্ণ দৈর্ঘ্যের উপন্যাস ফার্স্ট ইমপ্রেশনস শুরু করেন যা পরে প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস নামে প্রকাশিত হয়েছিল। ১৭৯৭ সালে তিনি উপন্যাসের প্রাথমিক খসড়ার কাজ সম্পূর্ণ করেন। তার অন্যান্য উপন্যাসের মতো এই উপন্যাসটি রচনা করার সময়ও তিনি তার পরিবারের সকলের কাছে এটি পড়ে শোনাতেন এবং এই কথা জানা যায় যে খুব সহজেই এই রচনাটি সকলের অন্যতম প্রিয় হয়ে উঠেছিল।[৭১] এইসময় জেনের পিতা তার মেয়ের লেখা উপন্যাস প্রকাশের জন্য চেষ্টা শুরু করেন। ১৭৯৭ সালের নভেম্বরে, জর্জ অস্টেন লন্ডনের একজন প্রতিষ্ঠিত প্রকাশক টমাস ক্যাডেলকে চিঠির মাধ্যমে ফার্স্ট ইমপ্রেশন উপন্যাসটি প্রকাশ করার বিষয়ে বিবেচনা করার জন্য অনুরোধ করেন। ক্যাডেল মিঃ অস্টেনের চিঠি প্রত্যাখ্যান করে ফেরত পাঠিয়ে দেন। সম্ভবত অস্টেন তার বাবার এই প্রচেষ্টার কথা জানতেন না।[৭২] ফার্স্ট ইমপ্রেশন সমাপনের পর অস্টেন তার আগের উপন্যাস এলিনর এবং মারিয়ান -এ পুনরায় মনঃসংযোগ করেন। নভেম্বর ১৭৯৭ থেকে ১৭৯৮ সালের মাঝামাঝি পর্যন্ত তিনি উপন্যাসটির ব্যাপক সংশোধন এবং মান-উন্নয়নের কাজে নিয়োজিত ছিলেন। সংশোধিত খসড়াটির সঙ্গে প্রকাশিত মূল উপন্যাস যা সেন্স এবং সেন্সিবিলিটি শিরোনামে প্রখ্যাত হয়েছিল; তার অনেকটাই মিল লক্ষ্য করা যায়।[৭৩]

১৭৯৭ সালে অস্টেনের সাথে এলিজা দে ফিউইলিড -এর সাক্ষাৎ হয়। তিনি ছিলেন একজন ফরাসি অভিজাত বংশের মহিলা। তার স্বামী ফিউইলিডকে গিলোটিনে হত্যা করা হয়েছিল এবং তিনি লন্ডনে পালিয়ে এসেছিলেন যেখানে অস্টেনের ভাই হেনরির সঙ্গে তার পুনরায় বিবাহ হয়।[৭৪] এলিজার কাছ থেকে জেন ফরাসি বিপ্লবের নারকীয়তা এবং ভয়াবহতা সম্পর্কে অবগত হয়েছিলেন এবং সেই বিপ্লবের বিভীষিকা সারাজীবনের জন্য তাকে বিতাড়িত করেছিল।[৭৪]

১৭৯৮ সালের মাঝামাঝি সময়ে, এলিনর এবং মারিয়ানের সংশোধনের কাজ শেষ করার পর, অস্টেন একটি তৃতীয় উপন্যাস লিখতে শুরু করেন। প্রাথমিকভাবে -এর নাম রাখা হয়েছিল সুসান কিন্তু পরে এর নাম পরিবর্তন করে নর্থ্যাঞ্জার অ্যাবে রাখা হয়। এটি তৎকালীন জনপ্রিয় গথিক উপন্যাস শৈলীর উপর ব্যাঙ্গাত্মক লেখনি।[৭৫] প্রায় এক বছর পরে অস্টেন উপন্যাসটি লেখার কাজ শেষ করেন। ১৮০৩ সালের প্রথম দিকে, হেনরি অস্টেন লন্ডনের একজন প্রকাশক বেঞ্জামিন ক্রসবিকে জেনের সুসান উপন্যাসটি প্রকাশ করার প্রস্তাব দেন। সেই প্রকাশক ১০ পাউন্ড দিয়ে বইটির গ্রন্থস্বত্ব কিনে নেন। ক্রসবি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব তিনি উপন্যাসটি প্রকাশ করবেন এবং বইটির প্রচারের জন্য তিনি তৎকালীন গনমাধ্যমে বিজ্ঞাপন দিতেও শুরু করেছিলেন, কিন্তু এর বেশি কিছুই করেননি।[৭৬] ১৮১৬ সাল অবধি বইয়ের পাণ্ডুলিপিটি ক্রসবির কাছে অপ্রকাশিত অবস্থায় পড়েছিল এবং সেইবছরই জেন পুনরায় বইটির স্বত্ব তার কাছ থেকে কিনে নেন।[৭৭]

বাথ এবং সাউদাম্পটনে নিবাস[সম্পাদনা]

অস্টেনদের বসতবাড়ি, চতুর্থ সিডনি প্লেস, বাথ, সমারসেট

১৮০০ সালের ডিসেম্বরে জর্জ অস্টেন অপ্রত্যাশিতভাবে মন্ত্রিত্ব থেকে অবসর নেওয়া এবং সপরিবারে স্টিভেনটন থেকে বাথ-এর চার নম্বর সিডনি প্লেসে স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করেছিলেন।[৭৮] বাড়ির অন্যান্য সদস্যরা তার এই সিদ্ধান্তে বিচলিত না হলেও আকস্মিক নিজের জন্মভিটে পরিত্যাগ করে অন্যত্র স্থানান্তরিত হওয়ার খবর জেনের জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলেছিল।[৭৯] তার মানসিক অবস্থা কিছুটা আন্দাজ করা যায় এই থেকে যে, বাথে বসবাসকালে তিনি খুব সামান্যই গল্প-উপন্যাস রচনা করেছিলেন। এইসময়ে তিনি সুসান -এর সামান্য পুনঃসংশোধনের কাজ করেছিলেন এবং দ্যি ওয়াটসনস নামক একটি নতুন উপন্যাসের কাজ শুরু করেছিলেন, কিন্তু ১৭৯৫ থেকে ১৭৯৭ সাল অবধি তার সেরকম কোন উল্লেখযোগ্য কাজ চোখে পড়েনা।[৮০] বিশেষজ্ঞ টমালিনের মতে হয়তো জন্মস্থান পরিত্যাগ করে আসার বিষণ্ণতা অস্টেনের লেখনিকে প্রভাবিত করেছিল কিন্তু হোনান এই উক্তির বিরোধিতা করে বলেন যে, অস্টেন কখনোই তার লেখনি এবং সংশোধনের কাজ পরিত্যাগ করেননি, কেবলমাত্র তার পিতার মৃত্যুর কয়েক মাস তিনি এইসকল কাজ থেকে বিরত ছিলেন।[৮১] প্রায়ই দাবি করা হয় যে অস্টেন বাথ -এ বসবাসকালে অসুখী ছিলেন, যার কারণে তিনি লেখালেখির প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছিলেন, কিন্তু এটাও সম্ভব যে, হয়তো বাথের অস্টেনের সামাজিক জীবন তাকে গল্প ও উপন্যাস লেখার কাজে মনঃসংযোগ করতে বাধা দিয়েছিল।[৮২]সমালোচক রবার্ট আরভিন যুক্তি দিয়েছিলেন যে গ্রামাঞ্চলে থাকাকালীন অস্টেনের কাছে হয়তো বেশি অবসর সময় থাকত এবং তার মানসিকতাও ভালো থাকার দরুন সেসময়ই তিনি লেখালেখিতে বেশি মনঃসংযোগ করতে পারতেন।[৮২] ভিন্নমতে অস্টেন প্রায়শই এই সময়কালে দক্ষিণ ইংল্যান্ডের বিবিধ স্থলে পরিভ্রমন করতেন যা হয়তো তার সুদীর্ঘ উপন্যাস লেখার কাজে বাধাদান করেছিল।[৮২]

১৭৯৮ এবং ১৮১৩ সালের মধ্যে অস্টেন তার ভাই এডওয়ার্ডের বাড়ি, কেন্টের গডমারশাম পার্কে নিয়মিত গমন করতেন।[৮৩]

১৮০১ থেকে ১৮০৪ সাল পর্যন্ত অস্টেনের জীবনের সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা বেশি কিছুই জানতে পারেননা কারন ক্যাসান্দ্রা তার সেইসময়কার বেশিরভাগ চিঠি পুড়িয়ে ফেলেছিল।[৮৪] ১৮০২ সালের ডিসেম্বরে অস্টেনের জন্য বিবাহপ্রস্তাব এসেছিল কিন্তু পরে তিনি সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে দেন।[৮৫] বিবাহপ্রস্তাব সম্পর্কে অস্টেনের মনোভাব কি ছিল তা পূর্ণতা জানার জন্য সেইসময়কার কোনও বিশ্বাসযোগ্য নথি বা চিঠি পাওয়া যায়না।[৮৬] শুধু এইটুকুই জানা গেছে যে অস্টেনের প্রস্তাবিত জীবনসংগী অভিজাত ও আর্থিকভাবে স্বচ্ছল পরিবারের ব্যাক্তি হলেও সে মানুষ হিসাবে ভালোবাসার যোগ্য ছিলনা।[৮৭]

১৮১৪ সালে অস্টেন তার ভাইঝি ফ্যানিকে এক পত্র লিখেছিলেন যাতে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, যে বিবাহবন্ধনে প্রেম নেই তার থেকে খারাপ কিছুই হতে পারেনা। [৮৮] ইংরেজ পণ্ডিত ডগলাস বুশ লিখেছেন যে অস্টেন, স্বামী এবং স্ত্রী -এর মধ্যে আদর্শ ভালোবাসার সম্পর্কে বিশ্বাসী ছিলেন এবং তার প্রভাব তার গল্পের নায়িকাদের মধ্যে খুবই স্পষ্ট।[৮৯] সেন্স ও সেন্সিবিলিটি গল্পে তার নিজস্ব জীবনের ছায়া লক্ষ্য করা যায়।[৮৯]

জেন অস্টেনের জলরঙের চিত্র, তার বোন ক্যাসান্দ্রার অঙ্কিত (১৮০৪).[৯০]

১৮০৪ সালে অস্টেন তার উপন্যাস দি ওয়াটসন রচনা করতে শুরু করেছিলেন যদি তিনি তা শেষ করে উঠতে পারেননি। গল্পটি একজন অবৈধ এবং দরিদ্র পাদ্রী এবং তার চার অবিবাহিত কন্যাকে কেন্দ্র করে রচিত। সাদারল্যান্ডের মতে এই উপন্যাসটিতে একজন আর্থিকভাবে পরনির্ভরশীল মহিলার কঠোর জীবনচিত্র অত্যন্ত বাস্তবতার সঙ্গে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে।[৯১] হোনান এবং টমালিন উভয়েরই মত অনুযায়ী ১৮০৫ সালের ২১ জানুয়ারি জেনের পিতার দেহান্ত হওয়ার পর কিছুকাল অস্টেন তার মানসিক পরিস্থিতি ও প্রতিকুলতার কারনে সাহিত্য রচনার কাজ থেকে বিরত ছিলেন।[৯২]

পিতার মৃত্যুর পর জেন, ক্যাসান্দ্রা এবং তাদের মা অনিশ্চিত আর্থিক পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়। এডওয়ার্ড, জেমস, হেনরি এবং ফ্রান্সিস অস্টেন (ফ্রাঙ্ক নামে পরিচিত) তাদের মা এবং বোনদের আর্থিক সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন।[৯৩] পিতার মৃত্যুর পর প্রায় চার বছর, অস্টেন ও তার পরিবার আর্থিক অনিশ্চয়তার মধ্যে জীবনযাপন করেছিল। ১৮০৫ সালে শহর ছেড়ে স্টিভেনটন ও গডমারশামে প্রত্যাগমন করার আগে অস্টেনরা ভাড়াবাড়িতে বসবাস করেছিলেন। শরতের সময় তারা কিছুকাল সাসেক্সের উপকূল অঞ্চলের স্ট্যান্ডফোর্ড‌ কটেজে বসবাস করেন। অনুমান করা হয় এখানেই জেন তার উপন্যাস লেডি সুসান -এর উপসংহার লেখেন। ১৮০৬ সালে অস্টেনরা সাউদাম্পটনে ফ্রাঙ্ক অস্টেন ও তার নব্য বিবাহিত স্ত্রী -এর সাথে বসবাস শুরু করেন। সেখানে তারা তাদের বিভিন্ন আত্মীয় ও পরিজনদের বাসায় গমন এবং তাদের সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপনে ব্যাস্ত ছিলেন।[৯৪]

১৮০৯ সালের ৫ ই এপ্রিল সপরিবারে চওটন -এ স্থানান্তরিত হওয়ার পূর্বে অস্টেন রিচার্ড‌ ক্রসবি নামক প্রকাশককে তার উপন্যাস সুসানের স্বত্ব ১০ পাউন্ডে বিক্রয় করেছিলেন। কারনবশত ক্রসবি সেই উপন্যাস প্রকাশনা করেননি এবং উপন্যাসের পাণ্ডুলিপিটি তার কাছেই বহুদিন ধরে পরে ছিল। উপন্যাসটির স্বত্ব পুনরায় ক্রয় করার মত আর্থিক সামর্থ্য তখন অস্টেনের ছিলনা[৯৫] পরে ১৮১৬ সালে তিনি উপন্যাসটির স্বত্ব পুনরায় ফিরে পেতে সক্ষম হয়েছিলেন।[৯৬]

চওটনে নিবাস[সম্পাদনা]

চওটন, সাউদাম্পটন -এর এই কটেজ -এ জেন অস্টেন তার জীবনের শেষ ৮ বছর কাটিয়ে ছিলেন।এই বাড়িটি এখন সংগ্রহশালায় রূপান্তরিত করা হয়েছে।

১৮০৯ সালের প্রথম দিকে অস্টেনের ভাই এডওয়ার্ড চওটন গ্রামে তার অধিকৃত এস্টেটের মধ্যে স্থিত একটি কটেজে তার মা এবং বোনের স্থায়ী বসবাসের ব্যাবস্থা করেন।[৯৭] সেই বছর জুলাইয়ের সাত তারিখে জেন, ক্যাসান্দ্রা এবং তাদের মা চওটনের সেই কটেজে বসবাস শুরু করেন।[৯৮] শোনা যায় যে, চওটনে বসবাস কালে অস্টেন পরিবার তাদের আত্মীয়-পরিজন ভিন্ন অন্য কারোর সাথে খুব বেশি মেলামেশা করতনা। জেনের ভাগ্নি আনার উক্তি অনুযায়ী চওটনে তাদের জীবন ছিল শান্ত এবং নির্বিঘ্ন, তার পিসি বেশিরভাগ সময় লেখাপড়া ও বাড়ির কাজ নিয়েই ব্যাস্ত থাকতেন এবং প্রতিবেশি কিছু বালক ও বালিকাদের শিক্ষকতা দান ও লেখাপড়ায় সাহায্য করতেন।[৯৯]

লেখিকা হিসাবে পরিচিতি লাভ[সম্পাদনা]

সেকালের অন্যান্য মহিলা সাহিত্যকারদের ন্যায় অস্টেনও তার রচিত গল্প এবং উপন্যাসগুলি বেনামে প্রকাশ করতেন।[১০০] সেইসময়, সমাজের চোখে একজন মহিলার জন্য আদর্শ ভূমিকা ছিল স্ত্রী এবং মা হিসাবে, এবং মহিলাদের সাহিত্য রচনাকে তার গৌণ কার্যকলাপ হিসাবে বিবেচনা করা হত; মহিলাদের এই আদর্শ ঘরোয়া নারী প্রতিচ্ছবি বজায় রাখতে এবং সত্য কথা বলতে, সাহিত্য জগতে মহিলারা যাতে তাদের পরিচিত লাভ করতে না পারে তার জন্য সেসময় বেশিরভাগ মহিলা সাহিত্যিকদের লেখনি বেনামে প্রকাশ করার রীতি ছিল।[১০১]

চওটনে বসবাস করার সময় তার ভাই হেনরির সহায়তায় তার চারটি উপন্যাস প্রকাশ করেছিলেন। টমাস এগারটন নামক এক প্রকাশক তার সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি উপন্যাসটি প্রকাশ করতে রাজি হন এই শর্তে যে প্রত্যেক মাথাপিছু বইয়ের বিক্রয়মূল্যের উপর তাকে দশ শতাংশ কমিশন দিতে হবে। প্রকাশকের এই শর্ত জেনের পক্ষে এক আর্থিক ঝুকির পরিস্থিতি তৈরি করেছিল, কারন বই বিক্রির মাধ্যমে যদি প্রকাশনার খরচ উঠে না আসে তাহলে তার সম্পূর্ণ দায়ভার লেখিকার উপর বর্তাবে।[১০২] এই পরিস্থিতি থেকে বাঁচার একটি একমাত্র উপায় ছিল প্রকাশকের কাছে বইটির স্বত্ব বিক্রি করা। এতে প্রকাশকে কমিশন দেওয়ার দরকার পরতনা এবং বইয়ের পান্ডুলিপির পরিবর্তে লেখিকা এককালীন কিছু অর্থলাভ করতেন এবং শোনা যায় যে পরবর্তীকালে প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস উপন্যাস প্রকাশের সময় লেখিকা এই পদ্ধতি অবলম্বন করেছিলেন।[১০৩] কিন্তু সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি প্রকাশ করার সময় লেখিকা তার সুসান উপন্যাসের সময়কার অভিজ্ঞতার কথা মাথায় রেখে[৯৬] বইটির স্বত্ব বিক্রি করার সাহস পাননি।[১০০] শেষ বিকল্প হিসাবে আরেকটা রাস্তা ছিল যে, বই প্রকাশের আগে কিছু ব্যাক্তিকে অগ্রিম বই কেনার জন্য চুক্তিবদ্ধ করা, যাতে প্রকাশের পর বই বিক্রির মাধ্যমে সেই ক্রেতাদের সাহায্যে বইয়ের কিছুটা প্রচার হয়। কিন্তু পরিস্থতির কারনে অস্টেনের কাছে সেটাও সম্ভব ছিলনা।[১০৩] ১৮১১ সালের অক্টোবর মাসে, একজন মহিলা লেখিকার লিখিত উপন্যাস হিসাবে সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি প্রকাশ পায়।[১০০] কমিশন পাওয়ার হেতু এগারটন বই মুদ্রনের সময় দামী কাগজ ব্যবহার করেছিলেন এবং মুদ্রিত প্রত্যেক বইয়ের মূল্য ১৫ শিলিং নির্ধারণ করেছিলেন।[১০০]

সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি-র প্রথম সংস্করণের শিরোনাম পৃষ্ঠার চিত্র, অস্টেনের প্রথম প্রকাশিত উপন্যাস (১৮১১)

প্রকাশনার পরবর্তী লগ্নে সাহিত্যকার এবং সমালোচকরা তাদের মুল্যায়নে নতুন উপন্যাসটির প্রতি ইতিবাচক বিবৃতি রাখেন এবং শীঘ্রই এটি ততকালীন তরুণ অভিজাত শ্রেণীর মানুষদের আলোচনার বিসয়বস্তু হয়ে ওঠে।[১০৪] ১৮১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ের মধ্যে উপন্যাসটির সমস্ত সংস্করন বিক্রি হয়ে যায়। এইসময়কালে অস্টিনের উপন্যাসগুলি বৃহৎ সংস্করণে প্রকাশিত হত। সেইসময়কার বাজারদর অনুসারে প্রকাশক এবং ঔপন্যাসিকের আর্থিক ঝুঁকি কমাতে বেশিরভাগ উপন্যাস ৫০০ কপি বা তার কম সংস্করণে প্রকাশিত হত; এর মধ্যে যদি গল্প ও উপন্যাসটি পাঠককুলের মধ্যে বিশেষ জনপ্রিয় হত এবং তাহলে তার বর্ধিত চাহিদা অনুসারে সাধারনত ৭৫০ থেকে ৮০০ কপি বেশি মুদ্রিত করা হত। অস্টেনের তৎকালীন প্রকাশিত উপন্যাসগুলি বিবেচনা করে দেখা যায় যে তার প্রথম উপন্যাস সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি -র প্রায় ৭৫০ কপি থেকে শুরু করে তার পরবর্তী‌কালে প্রকাশিত উপন্যাস এমা -র প্রায় ২০০০ কপির প্রাথমিক সংস্করণ প্রকাশিত হয়েছিল। অস্টেনের উপন্যাসগুলির এই বৃহৎ সংস্করণে প্রকাশনা করা সিদ্ধান্ত প্রকাশক ও লেখকের মধ্যে কার ছিল সেকথা নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় রয়েছে। যেহেতু অস্টেনের বেশিরভাগ বই মূলত "কমিশনে" প্রকাশিত হত, তাই অতিরিক্ত উৎপাদনের ঝুঁকি মূলত তার (বা তার মৃত্যুর পর ক্যাসান্দ্রার) ছিল এবং প্রকাশকদের পক্ষে তাদের নিজস্ব তহবিল ঝুঁকিতে রেখে স্বাভাবিকের তুলনায় বেশি বই মুদ্রনের বোঝা নেয়া সম্ভবপর ছিলনা। জনপ্রিয় তথ্যভিত্তিক সাহিত্য বা নন-ফিকশন স্বাভাবিকের তুলনায় বৃহৎ সংস্করণে প্রকাশিত হত।[১০৫]

সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি -র বিক্রয় থেকে অস্টেন প্রায় ৪১০ পাউন্ড অর্থলাভ করেন[১০৬]যা তাকে কিছুটা আর্থিক স্বাধীনতা এবং মানসিক সন্তুষ্টি দান করে।[১০৭] সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি -র সফলতার পর অস্টেনের বেশিরভাগ বই সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি -র লেখিকার দ্বারা রচিত -এই শিরোনামে প্রকাশ পেত। অস্টেনের জীবদ্দশায় তার রচিত কোন গল্প বা উপন্যাস তার নামে প্রকাশিত হয়নি।[১০০] এরপর এগারটন ১৮১৩ সালের জানুয়ারিতে ফার্স্ট ইমপ্রেশনের একটি পরিশোধিত সংস্করণ প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস নামে প্রকাশ করেন। অস্টেন ১১০ পাউন্ডে এগারটনের কাছে প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিসের স্বত্ব বিক্রি করেছিলেন।[১০০] অতিরিক্ত লাভের জন্য এগারটন মুদ্রনের সময় সস্তা কাগজ ব্যবহার করেছিলেন এবং প্রত্যেক কপির ১৮ শিলিং মূল্য নির্ধারণ করেছিলেন।[১০০] তিনি বইটির ব্যাপক প্রচার করেছিলেন এবং এটি সমালোচকদের ইতিবাচক পর্যালোচনা এবং বিপুল বিক্রিসহ, শীঘ্রই সাফল্য লাভ করে। পর্যালোচনা করে দেখা গেছে যে, অস্টেন যদি কমিশনে প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস বিক্রি করত, তাহলে তিনি ৪৭৫ পাউন্ড, বা তার বাবার বার্ষিক আয়ের দ্বিগুণ লাভ করতেন।[১০০] অক্টোবর ১৮১৩ -র মধ্যে এগারটন এই উপন্যাসের দ্বিতীয় সংস্করণ বিক্রি শুরু করে দেন।[১০৮]

অস্টেনের ম্যান্সফিল্ড পার্ক উপন্যাসটি ১৮১৪ সালে এগারটন প্রকাশ করেন। এই উপন্যাসটি সমালোচকদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে ব্যার্থ‌ হয়, কিন্ত পাঠক এবং অনুরাগীদের নিকট বিপুল জনপ্রিয়তা পায়। ছয় মাসের মধ্যে বইটির সমস্ত কপি বিক্রি হয়ে যায়। এই উপন্যাসে অস্টেনের উপার্জন তার অন্যান্য উপন্যাসের চেয়ে অনেক বেশি ছিল।[১০৯]

অস্টেনের অনুমোদন না নিয়ে তার উপন্যাসগুলি ফরাসি ভাষায় অনুবাদ করা হয় এবং ফ্রান্সে প্রকাশিত হয়।[১১০] সাহিত্য সমালোচক নোয়েল কিং ১৯৫৩ সালে মন্তব্য করেছিলেন যে, ইংল্যান্ডের মতোই ফ্রান্সেও অস্টেনের গল্প ও উপন্যাসের জনপ্রিয়তা কিছু কম ছিলনা।[১১১] ফ্রান্সে অস্টেনের গল্পের প্রধান অনুবাদক, মাদাম ইসাবেল ডি মন্টোলিউ, ইংরেজিতে শুধুমাত্র প্রাথমিক জ্ঞানের অধিকারী ছিলেন এবং তার অনুবাদগুলি যথাযথ অনুবাদের চেয়ে "অনুকরণ" বেশি ছিল কারন অনুবাদের আগে মন্টোলিউ উপন্যাসের সংক্ষিপ্ত বিষয়বস্তু জানতে সহায়কদের উপর নির্ভর করতেন এবং তাদের দেয়া উপন্যাসের সারসংক্ষেপের অপ্রতুলতার কারনে প্রায়শই অনুবাদিত গল্পে অস্টিনের গল্পের পটভূমিকা এবং চরিত্রগুলি আমূল পরিবর্তিত হয়ে যেত। ফ্রান্সের রাজা এই ব্যাপার লক্ষ্য করেন এবং অনুবাদিকাকে সতর্ক করে দেন।[১১২] ফ্রান্সে প্রকাশিত অস্টেনের প্রথম নামাঙ্কিত উপন্যাস ছিল পারসুয়েস্‌ন যা ফ্রান্সে ১৮২১ সালে লা ফ্যামিল ইলিয়ট ও ল'অ্যানসিয়েন ইনক্লিনেশন নামে প্রকাশিত হয় এবং এই উপন্যাসই প্রথম উপন্যাস যা ফ্রান্সে তাকে লেখিকা হিসাবে স্বীকৃতি দান করে।[১১৩]

অস্টেন জানতে পারেন যে যুবরাজ রিজেন্ট তার রচনার একজন প্রশংসক এবং তার বাসভবনে তিনি প্রতিটি উপন্যাসের একটি মুদ্রন সংগ্রহ করে রেখেছেন।[১১৪] ১৮১৫ সালের নভেম্বরে, প্রিন্স রিজেন্টের লাইব্রেরিয়ান জেমস স্ট্যানিয়ার ক্লার্ক অস্টেনকে যুবরাজের লন্ডনের বাসভবন পরিদর্শনের জন্য আমন্ত্রণ জানান এবং তিনি যেন তার আসন্ন উপন্যাস এমা যুবরাজের নামে উৎসর্গ করেন, তার ইঙ্গিত দেন। যদিও অস্টেন যুবরাজের খুব বড় প্রশংসক ছিলেননা। তার কামুক প্রকৃতি, জুয়া খেলা, মদ্যপান, উচ্ছৃঙ্খল জীবন এবং অসম্মানজনক আচরণের কারণে অস্টেন বরাবরই তাকে অপছন্দ করতেন।[১১৫] কিন্তু এই অনুরোধ উপেক্ষা করা তার পক্ষে কঠিন ছিল।[১১৬] শোনা যায় লাইব্রেরিয়ান ক্লার্ক প্রায়শই তাকে তার আসন্ন উপন্যাস সম্পর্কে উপদেশ দিতেন যা অস্টেনকে বিরক্ত করত।[১১৫] সেকারনেই প্রতিশোধ স্বরূপ ক্লার্কের আদর্শ গল্পের প্রত্যেক উপদেসের উপর ভিত্তি করে তিনি প্ল্যান অফ এ নভেল অ্যাকোরডিং টু ভেরিয়াস কোয়ার্টার নামক ব্যাঙ্গাত্মক লেখনিটি রচনা করেছিলেন।[১১৭]

১৮১৫ সালে অস্টেন এগারটনের প্রকাশনা সংস্থা ছেড়ে জন মুরে নামক লন্ডনের অপর এক প্রকাশকের সঙ্গে কাজ করতে শুরু করে।[১১৮] জন মুরের প্রকাশনায় ১৮১৫ সালের ডিসেম্বরে এমা উপন্যাস এবং ১৮১৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে ম্যানসফিল্ড পার্কের দ্বিতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হয়। এমা উপন্যাসটি ভালো বিক্রি হলেও ম্যানসফিল্ড পার্কের নতুন সংস্করণ তেমন সাড়া পায়নি। অস্টিনের জীবদ্দশায় প্রকাশিত উপন্যাসগুলোর মধ্যে এইদুটিই ছিল শেষ উপন্যাস।[১১৯]

যখন মুরের প্রকাশনা সংস্থা থেকে এমা -র প্রকাশনের জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছিল তখন অস্টেন তার নতুন উপন্যাস দ্য এলিয়টস -এর কাজ শুরু করেন যা পরে পারসুয়েস্‌ন নামে প্রকাশিত হয়। তিনি ১৮১৬ সালের জুলাই মাসে তার উপন্যাসের প্রথম খসড়াটি সম্পন্ন করেন। এমা প্রকাশিত হওয়ার পরই, হেনরি অস্টেন ক্রসবি থেকে সুসানের গ্রন্থস্বত্ব পুনঃক্রয় করেন। পারিবারিক আর্থিক সমস্যার কারণে অস্টেন এই সম্পূর্ণ উপন্যাসগুলির প্রকাশ স্থগিত করতে বাধ্য হন। ১৮১৬ সালের মার্চ মাসে হেনরি অস্টেন বিপুল আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন হন এবং ব্যাঙ্ক তার সমস্ত সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে নেয়। হেনরির বিপুল ঋণের কারনে এডওয়ার্ড, জেমস এবং ফ্রাঙ্ক অস্টেনের প্রচুর অর্থ ব্যয় হয়। ফলস্বরূপ হেনরি এবং ফ্রাঙ্ক -এর পক্ষে তাদের মা এবং বোনদের আর্থিক সাহায্য করা অসম্ভব হয়ে ওঠে।[১২০]

অসুস্থতা এবং মৃত্যু[সম্পাদনা]

উইনচেস্টারের ৮ কলেজ স্ট্রিট যেখানে অস্টেন তার জীবনের শেষ দিনগুলি কাটান

১৮১৬ সালের প্রথম দিকে অস্টেন অসুস্থ হয়ে পরেন, কিন্তু অসুস্থতার গুরুতর লক্ষণগুলি তিনি উপেক্ষা করে থাকেন। বছরের মাঝামাঝি সময়ে তার অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে।[১২১] ১৯৬৪ সালে জ্যাকারি কোপ জেনের মৃত্যুর কারন হিসাবে অ্যাডিসন রোগকে দায়ী করেন এবং জেনের বেশিরভাগ জীবনীকার তার মতকেই মান্য করেন, যদিও হজকিনের লিম্ফোমা -কে তার চূড়ান্ত অসুস্থতার কারন হিসাবে ধরা হয়।[১২২] যখন তার কাকার মারা গেলেন এবং তার আত্মীয়দের বঞ্চিত করে সমস্ত সম্পত্তি তার স্ত্রী -কে দান করে গেলেন, তখন জেন পুনরায় অসুস্থ হয়ে পরেন, তখনকার তার লিখিত একটি পত্রে তিনি এই কথা উল্লেখ করেছিলেন।[১২৩]

অসুস্থতা সত্ত্বেও তিনি তার সাহিত্য রচনার কাজ চালিয়ে যেতে থাকেন। দ্য ইলিয়টস -এর সমাপ্তি নিয়ে তিনি অসন্তুষ্ট ছিলেন, তাই চূড়ান্ত দুটি অধ্যায় তিনি পুনরায় সংশোধিত করে নতুনভাবে লেখেন এবং ১৮১৬ সালের ৬ আগস্ট তিনি সম্পূর্ণ লেখার কাজ শেষ করেন। ১৮১৭ সালের জানুয়ারিতে, অস্টেন দ্য ব্রাদার্স উপন্যাসটির কাজ শুরু করেছিলেন যা ১৯২৫ সালে স্যান্ডিটন শিরোনামে প্রকাশিত হয়েছিল, তিনি উপন্যাসটির বারোটি অধ্যায় লেখেন এবং সম্ভবত অসুস্থতার কারণে ১৮১৭ সালের মার্চের মাঝামাঝি সময়ে তাকে লেখার কাজ বন্ধ করতে হয়।[১২৪] লেখার কাজ বন্ধ করার পাঁচদিন পর তিনি তার নিজের সম্পর্কে লিখেছিলেন যে, তার বর্ন‌বিভ্রান্তি হচ্ছে এবং দিনের বেশিরভাগ সময় তিনি সোফায় বসে কাটাচ্ছেন।[১২৩] জানা যায় যে, ১৮১৭ সালের ১৮ ই মার্চ তিনি লেখার কাজ সম্পূর্ণ বন্ধ করে দেন।[১২৩] পারসুয়েসন উপন্যাসের চূড়ান্ত সংশোধিত পান্ডুলিপিটিই সম্ভবত তার নিজের হাতে লেখা শেষ লেখনি।[১২৫]

উইনচেস্টার ক্যাথেড্রালে জেন অস্টেনের সমাধিস্থান এবং সমাধিফলক।

অসুস্থতা বাড়ার সাথে সাথে অস্টেনের, হাটাচলার সমস্যা হতে শুরু করে এবং তিনি অত্যন্ত দুর্বল হয়ে পড়েন। এপ্রিলের মাঝামাঝি সময়ে তিনি শয্যাশায়ী হয়ে পড়েন।মে মাসে, ক্যাসান্দ্রা এবং হেনরি তাকে চিকিৎসার জন্য উইনচেস্টারে নিয়ে আসেন, সেই সময়ে তিনি অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক পরিস্থিতিতে ছিলেন।[১২৩] ১৮১৭ সালের ১৮ জুলাই উইনচেস্টারে ৪১ বছর বয়সে অস্টেন মারা যান। হেনরি তার করণিক সংযোগের মাধ্যমে, তার বোনকে উইনচেস্টার ক্যাথেড্রালে সমাধিস্থ করার ব্যবস্থা করেছিলেন। তার সমাধিফলকে তার ভ্রাতা জেমসের উক্তি খোদিত আছে যা তার গুনাগুন বর্ণনা করে রচনা করা হয়েছে কিন্তু আশ্চর্যের কথা এই যে সাহিত্যিক হিসাবে তার বিপুল জনপ্রিয়তার কথা সেভাবে উল্লেখ করা হয়নি।[১২৬]

মরণোত্তর প্রকাশনা[সম্পাদনা]

১৮১৭ সালের জুলাই মাসে অস্টেনের মৃত্যুর কয়েক মাস পরে, ক্যাসান্দ্রা, হেনরি অস্টেন এবং প্রকাশক মুরে জেনের দুই উপন্যাস পারসুয়েস্‌ন এবং নর্থ্যাঞ্জার অ্যাবে একত্রে প্রকাশের ব্যবস্থা করেন।[১২৭] হেনরি অস্টেন ১৮১৭ সালের ডিসেম্বর তারিখে একটি জীবনিমুলক বিবৃতি প্রকাশ করেছিলেন, যা প্রথমবার তার বোনকে ততকালীন জনপ্রিয় উপন্যাসের লেখিকা হিসাবে চিহ্নিত করেছিল। টমালিন এটিকে "একটি প্রেমপূর্ণ এবং মার্জিত প্রশংসা" হিসাবে বর্ণনা করেছেন।[১২৮] এক বছর ধরে তার প্রকাশিত উপন্যাসগুলির অত্যন্ত ভালো বিক্রি হয় এবং ১৮১৮ সালের বছরশেষে মাত্র ৩২১ টি মুদ্রন অবিক্রীত অবস্থায় পড়েছিল।[১২৯]

যদিও ১৮২০-এর দশকে আগে ইংল্যান্ডে অস্টেনের প্রকাশিত ছয়টি উপন্যাসের নতুন পুস্তকিত মুদ্রণ বন্ধ ছিল, তবুও ব্যক্তিগত এবং সার্বজনিক গ্রন্থাগারে রাখা উপন্যাসের পুরাতন কপিগুলির মাধ্যমে বিপুল সংখ্যক অনুরাগীরা তার রচনা পড়তে সক্ষম হয়েছিলেন। ১৮২৩ সালে দ্যি লেডি'জ ম্যাগাজিন নামক পত্রিকায় অস্টেনকে নিয়ে এক কাল্পনিক রচনা প্রকাশ পায়।[১৩০] সেই লেখায় অস্টেনের প্রতিভার বর্ণনা করা হয় এবং এই দাবি করা হয় যে তৎকালীন উচ্চাকাঙ্ক্ষী লেখকরা তার জনপ্রিয়তার প্রতি ঈর্ষান্বিত ছিলেন।[১৩১]

১৮২৩ সালে রিচার্ড বেন্টলি তার সমস্ত উপন্যাসের স্বত্ব কিনে নেন এবং আসন্ন শীতকালের মধ্যেই তার উপন্যাসের পাঁচটি সচিত্র মুদ্রন প্রকাশ করেন। ১৮৩৩ সালের অক্টোবরে বেন্টলি তার প্রথম সংগৃহীত সংস্করণ প্রকাশ করেন। তারপর থেকে অস্টেনের উপন্যাসগুলি অবিচ্ছিন্নভাবে মুদ্রিত হচ্ছে।[১৩২]

ধরন এবং শৈলী[সম্পাদনা]

জেন অস্টেন ৪১ বছর বয়সে ১৮১৭ সালে মৃত্যুবরণ করেন। কিন্তু মাত্র ৬টি সাহিত্যকর্ম (উপন্যাস) দিয়ে তিনি এখনো বেচে রয়েছেন সাহিত্যপ্রেমিকের হৃদয়ে। তাঁর সব উপন্যাসই বেনামে প্রকাশিত হয়, পরিবারের বাইরের খুব কম মানুষই তাঁর সাহিত্যিক প্রতিভা সম্বন্ধে অবগত ছিলেন। এই বিংশ শতাব্দীতে এসে মানুষ আজ তাকে চিনতে পারছে। তার রচিত উপ্ন্যাসগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস এখন পর্যন্ত বইটির দুই কোটি কপির বেশি বিক্রয় হয়েছে এবং পৃথিবীর অনেকগুলো ভাষায় বইটির অনুবাদ প্রকাশ পেয়েছে। প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডিস” উপন্যাসের প্রধান বিষয়বস্তু বিবাহ, দ্বন্দ্ব-কলহ, বিচ্ছেদ, পুনর্মিলন, ভালোবাসা, অবৈধ প্রেম ও এর অশুভ পরিণতি ইত্যাদি। একই সাথে লেখিকা দেখাতে চেয়েছেন যে অতিরিক্ত অহঙ্কারী হওয়া অথবা কারো সম্বন্ধে পর্যাপ্ত খোজখবর না নিয়ে তার চরিত্র সম্পর্কে মনগড়া সুধারণা অথবা কুধারনা করা অনুচিত। [১৩৩]

লেখিকার জীবদ্দশায় ইংল্যান্ডের সামাজিক ও রাজনৈতিক জীবনে ব্যাপক বিবর্তন চলছিল। শিল্পবিপ্লবের ফলশ্রুতিতে ইংল্যান্ডের কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি ক্রমশ শিল্পনির্ভর হয়ে পড়ছিল। সেই সময়ে আমেরিকার স্বাধীনতা যুদ্ধ শুরু,ব্রিটেন কর্তৃক মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে স্বীকৃতি প্রদান, ব্রিটিশ পার্লামেন্টে ক্রীতদাস-ব্যবসায় বিলুপ্তির জন্য বিল উত্থাপন, ফরাসি বিপ্লবের সূচনা,ব্রিটেন, হল্যান্ড এবং স্পেনের বিরুদ্ধে ফ্রান্সের যুদ্ধ ঘোষণা, ব্রিটেন এবং আয়ারল্যান্ড একত্রীকরণের জন্য প্রয়োজনীয় আইন প্রণয়ন ও কার্যকরীকরণ, ট্রাফালগারের যুদ্ধে নেলসন বাহিনীর কাছে ফ্রান্স ও স্পেনের যৌথ নৌবাহিনীর পরাজয় ,বাষ্পচালিত রেলইঞ্জিন চালু, ওয়াটারলুর যুদ্ধে নেপোলিয়নের পরাজয় ইত্যাদি বহু গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ঘটেছিল কিন্তু বিস্ময়কর হলেও এটা সত্য যে এসব ঘটনার কোনো প্রভাব অথবা স্পষ্ট উল্লেখ জেন অস্টেনের রচনায় নেই। তাঁর উপন্যাসে ইংলিশ সমাজ জীবনের যে চিত্র তিনি এঁকেছেন তার কথা ভাবলে ইউরোপে যে তখন এত বড়ো আলোড়ন চলছিল সেটা আঁচ করা একেবারেই অসম্ভব। জেন অস্টেনের জগৎ স্বল্প পরিসর। প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস -এর কাহিনি গড়ে উঠেছে কয়েকটি পরিবার নিয়ে। এই ক্ষুদ্র জগৎকে তিনি কিছুটা নির্মোহ দৃষ্টিতেই দেখেছেন। রোমান্টিক যুগের লেখিকা হওয়া সত্ত্বেও ভাবাতিশয্য তার মধ্যে ছিলনা। [১৩৩]

জেন অস্টেন চরিত্র চিত্রণের ক্ষেত্রে তার বিপুল দক্ষতার পরিচয় দিয়েছেন।মানুষের যেসব ত্রুটি লেখিকাকে পীড়া দিত, সেগুলোকে নিজের আঁকা কতিপয় চরিত্রের মাধ্যমে তিনি ব্যঙ্গ করেছেন। তিনি কখনই জোনাথন সুইফটের মতো কাউকে তীব্র আক্রমণ করেননি। মৃদু বুদ্ধিদীপ্ত রসিকতা এবং বক্রোক্তির দক্ষ ব্যবহারে তিনি তাঁর কার্য সিদ্ধি করেছেন। “প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডিস” সহ জেন অস্টেনের সকল উপন্যাসেই নৈতিকতা প্রচারের প্রবণতা লক্ষ্য করা যায়। “প্রাইড অ্যান্ড প্রিজুডিস” উপন্যাসে লেখিকা লেডি ক্যাথেরিন ডি বার্গকে ব্যঙ্গ করেছেন কারণ ঐ মহিলা সর্বদাই নিজের বংশমর্যাদা ও অর্থের বড়াই করেন। যদিও তিনি নিজের মেয়ের গুণ ও শিক্ষা-দীক্ষা দিয়ে প্রশংসায় পঞ্চমুখ, প্রকৃতপক্ষে তার মেয়ে অসুস্থ ও অন্তর্মুখী স্বভাবের। কলিন্স সাহেবের ধ্যান-জ্ঞানই হলো লেডি ক্যাথেরিন ডি বার্গকে সর্বদা তোষামোদ করা এবং বাগাড়ম্বর পূর্ণ ভাষা ব্যবহার করা। তাই জেন অস্টেন তাকে নিয়ে পরিহাস করেছেন। তিনি আরো দেখিয়েছেন যে নাক উঁচু স্বভাবের ক্যারোলিন বিংলে ও মিসেস হার্স্ট নিজেদের যতটা বড়ো মনে করে প্রকৃতপক্ষে তারা তেমন নয়। মানুষের ধারণা যে কত দ্রুত গড়ে উঠে আবার সহসাই তা পরিবর্তন হয়—এই ব্যাপার নিয়েও লেখিকা পরোক্ষভাবে ব্যঙ্গ করেছেন। মেরিটনের অধিকাংশ মানুষ একসময় উইকহ্যামের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল । সে সেনাবাহিনীতে চাকরি করে, সে সুদর্শন এবং মিষ্টভাষী ফলে বিবাহযোগ্য কন্যাদের অভিভাবকদের কাছে সে পরমারাধ্য ব্যক্তিতে পরিণত হয়। ডার্সি একটু অহঙ্কারী ও আত্মকেন্দ্রিক হওয়ায় উইকহ্যাম তার সম্বন্ধে যত গল্প করে সবাই সেগুলো সত্য বলে ধরে নেয়। কিন্তু যখন প্রকাশ হয়ে যায় উইকহ্যামের ব্যাপক ধার-দেনা রয়েছে এবং সে লিডিয়াকে নিয়ে পালিয়েছে, তৎক্ষণাৎ সে সকলের চক্ষুশূল হয়ে যায়।[১৩৩]

এভাবেই জেন অস্টেন মানুষের কপটতা, দম্ভ এবং নির্বুদ্ধিতাকে ব্যঙ্গ করেছেন। তিনি আমাদের দেখাতে চেয়েছেন মানুষ নিজেদের সম্বন্ধে যা ভাবে এবং তাদের প্রকৃত চেহারার মধ্যে বিস্তর ফারাক রয়েছে। সমাজের প্রত্যেকটা মানুষই যেন একটা ভালো মানুষের মুখোশ পড়ে রয়েছে। আর তিনি তাঁর নাটকে মানুষের প্রকৃত চেহারা অংকন করার চেষ্টা করেছেন। [১৩৩]

জেন অস্টেনের উপন্যাসগুলির বেশ কয়েকটি স্বাতন্ত্র্যসূচক বৈশিষ্ট্য রয়েছে যা তার রচনাকে সেই সময়ের অন্যান্য সাহিত্য থেকে আলাদা করে তোলে, তার লেখনির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হল, [১৩৪]

প্রথম, চলিত ভাষা ব্যাবহার। অস্টেন ধ্রুপদী সাহিত্যের গম্ভীর অলঙ্কারপুর্ন‌ ও আবেগপ্রবন ভাসাকে ব্যবহার না করে তার লেখনিতে তৎকালীন কথোপকথনের ভাষণ শৈলীকে অনুসরন করেছিল। যার ফলে তার উপন্যাসগুলি অনেক সহজবোধ্য এবং জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। [১৩৪]

দ্বিতীয়, বিদ্রূপাত্মক শব্দের ব্যাবহার। বিদ্রুপরস ছিল অস্টেনের লেখনির একটি প্রধান অস্ত্র। এমা, প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস ইত্যাদি গল্পে জেন তার সময়ের সামাজিক সংস্কৃতিকে বিদ্রূপ করেছেন। বিয়ের বাধ্যবাধকতা নিয়ে মাঝে মাঝে চরম মন্তব্য করেছেন। নর্থ্যাঙ্গার অ্যাবে তার অন্যতম ব্যঙ্গাত্মক উপন্যাস যা ক্যাথরিন মরল্যান্ড নামে এক তরুণ পাদরির কন্যাকে কেন্দ্র করে রচিত, যিনি তার ধনী প্রতিবেশীদের বল নৃত্যের অনুষ্ঠানে অংশ নিতে যান। এমা -তে রিজেন্সি ইংল্যান্ডে বসবাসকারী সমাজের মহিলাদের জীবন সংঘর্ষের কাহিনী কৌতুকপূর্ণ ভঙ্গিতে চিত্রিত করা হয়েছে। [১৩৪]

তৃতীয়, প্রেম সংক্রান্ত হাস্যরস। জেনের বেশিরভাগ লেখা প্রেমরস এবং কৌতুকের মিশ্রণ যা তার লেখনির বিশেষ বৈশিষ্ট্য। লেখনির এই ঘরানাটি তৎকালীন সামাজে ছিল বিরল। তার ম্যানসফিল্ড পার্ক, এমা ইত্যাদি বহু গল্পে এর উদাহরণ দেখা যায়। [১৩৪] তার রচিত প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস গল্পটিতেও প্রেম ও হাস্যরসের প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।

চতুর্থ, তৎকালীন সমাজের শ্রেণিবিন্যাসের চিত্র তার উপন্যাসে ধরা পরে। জেনের অনেক গল্পে দেখা যায় তরুণ, মধ্যবিত্ত বা শ্রম-শ্রেনী মহিলারা অনাহূত কারনে তাদের ধনী আত্মীয় বা প্রতিবেশীদের সাথে বসবাসের জন্য বাধ্য হয় যার ফলে তরুণ নায়িকাদের কাছে নতুন সামাজিক জগত উন্মুক্ত করে।[১৩৪] তার গল্প ম্যানসফিল্ড পার্কেই দেখা যায় ছােট্ট মেয়ে ফ্যানি প্রাইস দারিদ্র্যের কারণে সে নিজ পরিবার ছেড়ে থাকতে আসে ধনী আত্মীয়ের পরিবারে। ম্যানসফিল্ড পার্কের এই পরিবারের সবাই যে তাকে সাদরে বরণ করে নেয়, এমনটা নয়। ভাইবােনদের অবহেলার মধ্য দিয়ে বড় হতে থাকে সে। তবে খালাতাে ভাই এডমান্ড একসময় তার বন্ধু ও পথপ্রদর্শক হয়ে ওঠে। এভাবেই তার গল্পের মধ্যে ধনী ও গরীব শ্রেণিবিভাজনের চোরাস্রোতকে দেখিয়েছেন এবং তার সাথে গল্পের রোমান্টিক ভাবধারাও বজায় রেখেছেন।

পঞ্চম, জেনের চরিত্রগুলিতে তৎকালীন সামাজিক পরিস্থিতির সঙ্গে নৈতিকতার লড়াইয়ের প্রতিফলন দেখা যায়। [১৩৪]

ষষ্ঠ, জেন তাঁর উপন্যাসগুলিতে তৎকালীন পিতৃতান্ত্রিক সমাজে মহিলাদের জীবনযাপন এবং তাদের প্রতি কঠোর সামাজিক নিয়ন্ত্রন ও প্রত্যাশার বর্ণনা দেয়। তার উপন্যাস সেন্স ও সেন্সিবিলিটি তিন ড্যাশউড বোন — এলিনোর, মার্গারেট এবং মারিয়েন — এবং তাদের বিধবা মাকে কেন্দ্র করে লেখা, গল্পে দেখা যায় কীভাবে তাদের তাদের বাবা মারা যাওয়ার পর তারা তাদের সম্পত্তি থেকে বাস্তুচ্যুত হয়।[১৩৪]

অস্টেন ১৮ শতকের ভাবাতিশয্য পূর্ণ লেখনি শৈলীর সমালোচনা করতেন এবং তার বদলে ১৯ শতকের নব অনুমোদিত বাস্তববাদী সাহিত্যের স্বক্রিয় অংশ হয়ে ওঠেন।[১৩৫] ওয়াল্টার স্কট, হোরেস ওয়ালপোল, ক্লারা রিভ, অ্যান র‍্যাডক্লিফ এবং অলিভার গোল্ডস্মিথ -এর ন্যায় ততকালীন রোমান্টিক ধ্রুপদী ভাবধারার সাহিত্যকাররা পুরাতন ইংরেজ ঔপন্যাসিক, রিচার্ডসন, হেনরি ফিল্ডিং এবং টোবিয়াস স্মোলেটের লেখন শৈলীর অনুসরন করতেন; কিন্তু অস্টেনের সেই লেখন শৈলী একেবারেই পছন্দ ছিলনা। তিনি পুরাতন ভাবাবেগপূর্ণ লেখন শৈলীকে বরখাস্ত করে নতুন বাস্তববাদী লেখনশৈলীর উপর জোর দেন।[১৩৬] বিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি, সাহিত্য সমালোচক এফ.আর. লিভিস এবং ইয়ান ওয়াট -এর মতে অস্টেন তার সাহিত্যে যেভাবে বিদ্রূপ, বাস্তববাদ এবং ব্যঙ্গের ব্যবহার করেছেন তা তার সময়কালীন সমস্ত লেখকদের থেকে সর্বোত্কৃষ্ট।[১৩৭] ওয়াল্টার স্কট আধুনিক কথাসাহিত্যে অতিরিক্ত সংবেদনশীল ভাবাবেগের ব্যবহারের বিরুদ্ধে অস্টেনের প্রতিরোধের কথা উল্লেখ করেছেন।[১৩৮] তবে তিনি এই সাহিত্য ঘরানার পুরোপুরি প্রত্যাখ্যান করেছিলেন কি করেননি এটা একটি জটিল প্রশ্ন কারন এমা ও নর্থ্যাঙ্গার অ্যাবে উপন্যাসে এই শৈলীর ছায়া দেখা যায়।[১৩৮] যেমন উইলিয়াম ওয়ার্ডসওয়ার্থ তার লিরিক্যাল ব্যালাডস -এর প্রস্তাবনা অংশে আধুনিক ভাব- আতিশয্য পূর্ণ উপন্যাসের তীব্র সমালোচনা করেন, অস্টেন সরাসরি সেই পথ অবলম্বন না করলেও তিনি অবাস্তববাদী ও কল্পনাপ্রবন সাহিত্য থেকে নিজেকে দূরে সরিয়ে রাখতেন। অস্টেন তার লেখনিতে যে শৃঙ্খলা এবং নতুন পদ্ধতির পথ প্রদর্শন করেছিলেন তা অনেকটাই ওয়ার্ডসওয়ার্থ শৈলীর অনুরূপ; যাতে আলঙ্কারিক শব্দের ব্যাবহার কম, কিন্তু তাতে তার শিল্পগত মান কোনভাবেই ক্ষুদ্র হয়না। [১৩৮] তিনি জনপ্রিয় গথিক কথাসাহিত্যের গল্প, বিশেষত যেসকল গল্পের পটভুমিকায় গল্পের নায়িকা কোন দুর্গম স্থানের কোন দুর্গ বা অ্যাবেতে আটকা পড়তেন, সেইসকল গল্প তিনি সযত্নে এড়িয়ে চলতেন। গবেষণা করলে দেখা যায়, ১৭৮৪ এবং ১৮১৮ সালের মধ্যে ৩২টি উপন্যাসের শিরোনামে অ্যাবে ব্যাবহার হয়েছে। তিনি তার ব্যাঙ্গাত্মক উপন্যাস নর্থ্যাঙ্গার অ্যাবেতে এই বিশেষ শৈলীর উপর করেছেন যেখানে তিনি ইচ্ছাকৃতভাবে গল্পের নায়িকা ক্যাথরিনকে এক দূরবর্তী নির্জন স্থানে পাঠিয়েছিলেন। তিনি ব্যাঙ্গাত্মক লেখনি শৈলীর সামান্য পরিবর্তন ঘটিয়ে তাতে বাস্তবতার সংমিশ্রণ ঘটিয়েছিলেন। তার উপন্যাসে অভিজাত পরিবারের অন্দরমহলের সাজসজ্জা, আরামের বর্ণনা যেমন আছে তেমনই গল্পের নায়িকা চরিত্রদের আন্তরিক গোপন ইচ্ছার কথাও সুন্দরভাবে চিত্রিত করা হয়েছে।[১৩৯] তার উপন্যাসের নারী চরিত্রদের মাধ্যমে তৎকালীন সমাজে তাদের অবস্থান, তাদের বন্দীদশা ও তাদের প্রতি সামাজিক কঠোরতা ইত্যাদির বর্ণনা সুন্দরভাবে করা আছে।[১৪০] অস্টেন তার সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি উপন্যাসে জটিল চরিত্রের বর্ণনা করেছেন, সমালোচক কেইমারের মতে যদিও এটি তৎকালীন জনপ্রিয় ভাবপ্রবণ উপন্যাস মারিয়ান -এর বিদ্রুপাত্মক রচনা, কিন্তু এই উপন্যাস তার নিজস্বতা বজায় রেখেছে এবং এতে তৎকালীন নারীদের দুর্দশার একটি ন্যায়সঙ্গত চিত্র অঙ্কন করা হয়েছে।[১৪১]

কাজের মেয়েটি বিদায় নিল, এবং হতাশভাবে এমা চিন্তা করতে বসল। এটি একটি জঘন্য ব্যবসা ছিল, সত্যিই! সব কিছুর এমনই উৎখাত সে কামনা করছিল! সব কিছুর এমন ফলাফল সবচেয়ে অনাকাঙ্খিত!

— জেন অস্টেন, এমা[১৪২]

তৎকালীন রিচার্ডসন রচিত এক জনপ্রিয় উপন্যাস পামেলা এক ভাবপ্রবন উপন্যাস শ্রেণীর অন্তর্বর্তী শিক্ষামূলক প্রেমের গল্প। এই গল্পটি এমন এক সময় লেখা যখন নারীসমাজ নিজের পছন্দমতো স্বামী চয়ন করার অধিকার নিয়ে সরব হচ্ছিলেন কিন্তু তাদের সেই ইচ্ছার উপর সামাজিক রীতিনীতির বাধন ছিল।[১৪৩] অস্টেন রিচার্ডসনের পত্র উপন্যাসের শৈলীর অনুকরন করলেও তাতে তার বাস্তববাদী রচনা শৈলী যুক্ত করেছেন, যেখানে প্রতিটি চরিত্রের কথোপকথন এবং অঙ্গভঙ্গি একটি গুরুত্ব বহন করে। তার রচনা শৈলীতে পরোক্ষ উক্তির বিশেষ স্থান আছে এবং তিনিই প্রথম ইংরেজ ঔপন্যাসিক যিনি এতটা ব্যাপকভাবে এই শৈলীর ব্যবহার করেছেন। এর মাধ্যমে তিনি একটি চরিত্রের আন্তরিক চিন্তনকে সরাসরি পাঠকের কাছে উপস্থাপন করতে পারতেন। নিজের লেখনির উপর তার বিশেষ নিয়ন্ত্রন ছিল। তার এই নবীন রচনা শৈলী লেখকের নিজস্ব মতামত এবং গল্পের চরিত্রের দৃষ্টিকোনের মধ্যে পার্থক্য এবং নিজস্বতা বজায় রাখার অত্যন্ত উৎকৃষ্ট পদ্ধতি।[১৪৪]

উক্তি ও সংলাপের ব্যবহার ছিল অস্টেনের লেখনির অন্যতম অস্ত্র। পণ্ডিত মেরি ল্যাসেলেসের মতে, তৎকালীন লেখকদের রচনা শৈলী বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় গল্পের প্রতিটি বাক্যাংশে সঠিক শব্দের চয়ন এবং চরিত্রের আন্তরিক চিন্তাভাবনার প্রতিফলনের ক্ষেত্রে অস্টেনের থেকে বিচক্ষন আর কেউ ছিলনা।[১৪৫] গল্পের কোন চরিত্রের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য এবং কণ্ঠস্বরের প্রকৃতি নির্দেশ করতে অস্টেন খণ্ডিত বাক্যাংশের প্রয়োগ করতেন, যা বিভিন্ন চরিত্রের সামাজিক ব্যবধানকেও নির্দেশ করত।[১৪৬] গল্পের প্রতিটি সংলাপ একটি চরিত্রের আন্তরিক হতাশা, ক্রোধ, সুখ ইত্যাদি ভাবকে প্রকাশ করতে ব্যবহার করত। উদাহরণ স্বরূপ প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস গল্পে যখন এলিজাবেথ বেনেট ডার্সি‌র প্রেম প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন তখন বক্র সংলাপের মাধ্যমে ডার্সি‌র মানসিক দ্বন্দ এবং মনোভাবের আভাস পাঠকের কাছে তুলে ধরা হয়েছে।[১৪৭]

অস্টেনের গল্পের পটভূমিকায় মহিলাদের সামাজিক অবস্থান এবং অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য তাদের বিবাহ নির্ভরতার চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।[১৪৮] ১৮ শতকের উপন্যাসে ১৯ শতকের রচনা শৈলীর গুরুগম্ভীরতা ছিলনা। ১৯ শতক বা তার পরবর্তী সময়ের উপন্যাসের বিসয়বস্তু ছিল শব্দের আড়ালে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি জনসমক্ষে তুলে ধরা এবং আলোচনা করা।[১৪৯] জন বেইলির মতে কোন চরিত্রের অতীব গভীর মানসিক বিশ্লেষণ করার পরিবর্তে অস্টেন হাস্যরসের মাধ্যমে তা সরল্ভাবে পাঠকদের সামনে তুলে ধরতেন; তার রচনায় চতুর হাস্যরসের ব্যবহার তার লেখাকে অন্য মাত্রা দিয়েছিল এবং সত্যিকারেই তার লেখনিতে হাস্যরস "জীবনে বেঁচে থাকার গুরুত্বপূর্ণ রসদ" হয়ে উঠেছিল।[১৫০] তার লেখায় প্রখ্যাত স্যামুয়েল জন্সনের গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব লক্ষ্য করা যায়।[১৫১]

তার বিনয় এবং নিরহঙ্কারী স্বভাবের প্রতিফলন তার হাস্যরসের সঙ্গে যুক্ত হয়ে তার গল্পের সফল চরিত্রগুলিকে সৃষ্টি করেছে।[১৫০] অস্টেন নারীদের জীবন এবং লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতিফলন ঘটাতে হাস্যরসের ব্যবহার করেছিলেন। সমালোচক রবার্ট পোলহেমাস তার লেখায় অস্টেনের কৃতিত্বের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন।[১৫১]

অভ্যর্থনা[সম্পাদনা]

সমসাময়িক প্রতিক্রিয়া[সম্পাদনা]

১৮১৬ সালে দ্য নিউ মান্থলি ম্যাগাজিনের সম্পাদকরা এমার প্রকাশনার কথা উল্লেখ করেন , কিন্তু এটি পর্যালোচনা না করার সিদ্ধান্ত নেন।

যেহেতু অস্টেনের কাজগুলি বেনামে প্রকাশিত হয়েছিল, তাই তার ব্যক্তিগত খ্যাতি ছিল খুবই সামান্য। তৎকালীন মতামত নির্মাতাদের মধ্যে তার উপন্যাস আলোচনার বস্তু হলেও তাদের খুব কমই পর্যালোচনা করা হয়েছিল।[১০৪] যে সামান্য পর্যালোচনাগুলি করা হয়েছিল তারা বেশিরভাগই ছিল সংক্ষিপ্ত [১৫২][১৫৩] এবং তারা শুধুমাত্র উপন্যাস থেকে প্রাপ্ত নৈতিক শিক্ষার নিয়েই বেশি আলোচনা করেছিল।[১৫৪]

সেই সময়ের একজন অগ্রগামী ঔপন্যাসিক স্যার ওয়াল্টার স্কট ১৮১৫ সালে বেনামে এমা উপন্যাসটির একটি পর্যালোচনা লিখেছিলেন যাতে তিনি অস্টেনের বাস্তববাদী লেখনি শৈলীর প্রশংসা করেছিলেন। তার লিখিত মত অনুযায়ী, একটি কাল্পনিক জগতের চমৎকার দৃশ্যের পরিবর্তে চারপাশে যা প্রতিদিন ঘটছে তা সঠিক এবং আকর্ষণীয়ভাবে পাঠকের কাছে উপস্থাপন করার শৈলীটি সত্যিই প্রশংসাজনক।[১৫৫]

১৮২১ সালে রিচার্ড হোয়াটলি অস্টেনের উপন্যাসের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পর্যালোচনা প্রকাশ করেছিলেন যাতে হোমার এবং শেক্সপিয়ারের মতো স্বীকৃত লেখকদের সাথে অস্টেনের তুলনা করা হয়েছিল। যদিও হোয়াটলি তার এক বিবৃতিতে সেই পর্যালোচনাটি লেখার কথা অস্বীকার করেছিলেন। ১৯ শতকের অস্টেনের প্রায় সমস্ত সমালোচনার মধ্যে স্কট এবং হোয়াটলির পর্যালোচনা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।[১৫৬]

১৯ শতক[সম্পাদনা]

রিচার্ড বেন্টলি সংস্করণ থেকে প্রাইড এবং প্রেজুডিসের প্রথম দুটি প্রকাশিত চিত্রের মধ্যে একটি ।[১৫৭]

অস্টেনের উপন্যাসগুলি তৎকালীন রোমান্টিক এবং ভিক্টোরিয়ান শৈলীর সাথে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল না, লেখার শব্দের মাধ্যমে ছিলনা কোন শক্তিশালী আবেগ প্রদর্শন।,[১৫৮] ১৯ শতকের সমালোচক এবং শ্রোতারা চার্লস ডিকেন্স এবং জর্জ এলিয়টের কাজগুলি বেশি পছন্দ করেতেন।[১৫৯] স্কট অস্টেনের কাজ নিয়ে ইতিবাচক মনোভাব রাখলেও তার সাহিত্য শৈলী তৎকালীন যুগের ভাবধারা এবং প্রচলিত নান্দনিক মূল্যবোধের সাথে মেলেনি।[১৬০] ১৮৩০-এর দশক থেকে তার উপন্যাস ব্রিটেনে পুনঃপ্রকাশিত হয় এবং ক্রমাগত বিক্রিও হতে থাকে কিন্তু তখনও তার উপন্যাস বেস্ট সেলার তকমা পায়নি।[১৬১]

১৮৪২ সালের একটি প্রবন্ধে এক ফরাসি সমালোচক ফিলারেতে চ্যাসলেস প্রথম অস্টেনের উল্লেখ করেন। তিনি তার লেখাকে দুকথায় সারবত্তাহীন, বিরক্তিকর এবং অনুকরনমূলক ইত্যাদি বিশেষণে সম্বোধিত করে তার তীব্র নেতিবাচক সমালোচনা করেছিলেন।[১৬২] ১৮৭৮ সাল অবধি ফ্রান্সে অস্টেনের সাহিত্যকর্মকে প্রায় সম্পূর্ণরূপে অবহেলা করা হয়।[১৬২] প্রথমবার ফরাসি সমালোচক লিওন বাউচার তার লে রোমান ক্লাসিক এন অ্যাঙ্গলেটারে প্রবন্ধে প্রথমবার অস্টেনের প্রতিভাকে স্বীকৃতি দেয়।[১৬৩] ১৮৯৯ সালে ফেলিক্স ফেনন প্রথমবার নর্থ্যাঙ্গার অ্যাবে উপন্যাসের নির্ভুল অনুবাদ করেন এবং তার নাম দেয় ক্যাথরিন মোরল্যান্ড [১৬৩]

ব্রিটেনে শিক্ষিতসমাজে ধীরে ধীরে অস্টেনের কাজ জনপ্রিয়তা পাচ্ছিল। দার্শনিক এবং সাহিত্য সমালোচক জর্জ হেনরি লুইস ১৮৪০ এবং ১৮৫০ এর দশকে অস্টেন সম্পর্কিত উত্সাহব্যাঞ্জক কিছু নিবন্ধের শ্রেণি প্রকাশ করেছিলেন।[১৬৪] পরবর্তীকালে ঔপন্যাসিক হেনরি জেমস বহুবার অস্টেনের উল্লেখ করেছেন এবং তার কাজের অনুমোদন দিয়েছেন। এক অনুষ্ঠানে তিনি তাকে শেক্সপিয়র, সার্ভান্তেস এবং হেনরি ফিল্ডিং এর ন্যায় শিল্পীর সাথে একই শ্রেণিতে স্থান দিয়েছিলেন।[১৬৫] ১৮৬৯ সালে জেমস এডওয়ার্ড অস্টেন-লে-এর আ মেমোয়ার অফ জেন অস্টেন বা অস্টেনের স্মৃতিকথা প্রকাশের মাধ্যমে প্রথমবার অস্টেনের পরিচয় প্রকাশ্যে আসে এবং তার যোগ্য সম্মান পাওয়ার পথযাত্রা শুরু হয়। স্মৃতিকথা প্রকাশের পর অস্টেনের উপন্যাসগুলি পুনরায় চর্চার বস্তু হয়ে ওঠে এবং তাদের পুনঃপ্রকাশনার পদ্ধতিকে তরান্বিত করে। ১৮৮৩ সালে প্রথম জনপ্রিয় উপন্যাসের সংস্করণ প্রকাশ পায় এবং পরে তাদের চিত্রিত সংস্করণও প্রকাশ পায়।[১৬৬] লেখক ও সমালোচক লেসলি স্টিফেন ১৮৮০-এর দশকে অস্টেনের জন্য বিকশিত হওয়া নব্য জনপ্রিয়তা ও উন্মাদনাকে অস্টেনোল্যাট্রি নামে চিহ্নিত করেছেন। ২০ শতকের শুরুর দিকে, একটি বিশেষ বুদ্ধিজীবী চক্র অস্টেনের জনপ্রিয়করণের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানায়।

হেনরি জেমসও অস্টেনের জনপ্রিয়তার এই ক্রমবর্ধমান জোয়ারের কথা উল্লেখ করেছিলেন।[১৬৭] আমেরিকান সাহিত্য সমালোচক এ. ওয়াল্টন লিটজ উল্লেখ করেছেন যে ১৯ এবং ২০ শতকে মার্ক টোয়েন , হেনরি জেমস, শার্লট ব্রন্টে , ডিএইচ লরেন্স এবং কিংসলে অ্যামিসের একটি শক্তিশালী সাহিত্যিক দল গঠন করেছিলেন যা ছিল জেন-বিপরীতপন্থি বা অ্যান্টি-জেনাইটস[১৬৮]

আধুনিক প্রজন্মে অস্টেন[সম্পাদনা]

আ মেমোয়ার অফ জেন অস্টেন (১৮৭১) থেকে অস্টেনের চিত্রণ, বইটির লেখক ভাগ্নে জেমস এডওয়ার্ড এবং চিত্রটি তার বোন ক্যাসান্দ্রার স্কেচের উপর ভিত্তি করে অঙ্কিত।স্টেনের পরবর্তী সমস্ত প্রতিকৃতি সাধারণত এর উপর ভিত্তি করে তৈরি করা হয়।

সময়ের সাথে সাথে অস্টেনের কাজ পাঠককুল এবং বিদগ্ধজনদের আকৃষ্ট করেছে। হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র জর্জ পেলেউ ১৮৮৩ সালে অস্টেনের উপর প্রথম গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছিল।[১৬৯] ১৯১১ সালে অক্সফোর্ডের শেক্সপিয়রীয় পণ্ডিত এসি ব্র্যাডলির তার এক প্রবন্ধে অস্টেনের সাহিত্যকর্মের এক প্রারম্ভিক শিক্ষামূলক বিশ্লেষণ করেছিলেন।[১৭০] তিনি অস্টেনের উপন্যাসগুলিকে "প্রাথমিক" এবং "পরবর্তী" -এই দুই শ্রেণিতে বিভাজিত করেছিলেন যা আজও অস্টেন বিশেষজ্ঞদের দ্বারা মান্য করা হয়।[১৭১] ফ্রান্সে অস্টেনের প্রতি উৎসর্গ করা প্রথম শিক্ষামুলক গ্রন্থটি পল এবং কেট রাগ (১৯১৪) রচনা করেছিলেন এবং এর মাধ্যমে তারা ফরাসি সমালোচক এবং পাঠকদের অস্টেনের সাহিত্যকর্মের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছিলেন।[১৬৩] একই বছরে, লিওনি ভিলার্ড জেন অস্টেন, সা ভি এট সেস ওউভরেস প্রকাশ করেন যা আসলে ছিল তার পিএইচডি গবেষণাপত্র এবং ফ্রান্সে প্রকাশিত অস্টেন ও তার সাহিত্যকর্মের প্রথম গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষামূলক অধ্যয়ন।[১৬৩] ১৯২৩ সালে, আর ডব্লিউ চ্যাপম্যান পাণ্ডিত্যপূর্ণ উবাচসহ অস্টেনের সংগৃহীত কাজের প্রথম সংস্করণ প্রকাশ করেন। এই সংস্করনের উপর ভিত্তি করেই অস্টেনের পরবর্তী সমস্ত সংস্করণগুলি প্রকাশ পেয়েছে।[১৭২]

১৯৩৯ সালে মেরি ল্যাসেলেসের জেন অস্টেন অ্যান্ড হার আর্ট প্রকাশের সাথে সাথে অস্টেনের শিক্ষামূলক অধ্যয়ন কিছু সময়ের জন্য স্থগিত হয়।[১৭৩] ল্যাসেলেস অস্টিনের পঠিত সমস্ত বই এবং তার কাজের উপর তাদের প্রভাব বিশ্লেষণ করেছেন এবং সুচারুভাবে অস্টেনের শৈলী এবং "আখ্যান শিল্প" পরীক্ষা করেছেন। তখন হঠাতই এক বিতর্ক শুরু হয় যে গবেষকরা ভুল তথ্য দিয়ে অস্টেনের মহিমা খন্ডন করছেন এবং সেই বিতর্ক আজও চলে আসছে।[১৭৪]

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পরের সময় নারীবাদী তত্ত্ব, উত্তর-ঔপনিবেশিক তত্ত্ব -এর প্রভাব অস্টেনের কাজের বিশ্লেষণকে এক নতুন আলোকে দেখতে সাহায্য করে।[১৭৫] আধুনিক জেনপন্থীদের মধ্যে অস্টেনের সাহিত্যকর্মের বিষয় বিশ্লেষণ নিয়ে বিভাজন লক্ষ্য করা যায়।[১৭৬] ১৯৯৪ সালে, সাহিত্য সমালোচক হ্যারল্ড ব্লুম অস্টেনকে সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ পশ্চিমী লেখকদের মধ্যে স্থান দেন।[১৭৭]

১৯৪৯-এর পরে গণপ্রজাতন্ত্রী চীনে, অস্টেনের লেখাগুলিকে খুব তুচ্ছ বলে গণ্য করা হয়েছিল।[১৭৮] এইভাবে ১৯৬৬-৬৯ সালের মধ্যে চীনা সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সময় অস্টেনের কাজগুলি "ব্রিটিশ বুর্জোয়া সাম্রাজ্যবাদী" হিসাবে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল।[১৭৯] ১৯৭০ এর দশকের শেষের দিকে, যখন অস্টেনের কাজগুলি চীনে পুনঃপ্রকাশিত হয়েছিল তখন পাঠকসমাজে তার বিপুল জনপ্রিয়তা কর্তৃপক্ষকে বিভ্রান্ত করেছিল কারন এই সরল সত্য তাদের বুঝতে অসুবিধা হত যে, সাধারণ মানুষ আনন্দের জন্য বই পড়ে, রাজনৈতিক উন্নতির জন্য নয়।[১৮০]

রক্ষণশীল আমেরিকান অধ্যাপক জিন কপেল এক বিতর্কে একবার অস্টেন এবং তার পরিবারকে উদারপন্থীদের বিরোধী রক্ষণশীল সামাজের অন্তর্ভুক্ত বলে অভিহিত করেছিলেন যা তার উদারপন্থী ছাত্রদের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। ক্লডিয়া জনসন এবং মলি স্যান্ডকের ন্যায় নারীবাদী লেখকেরা নিজের সুবিধার্থে অস্টেনের কাজের অনুমোদন করেছেন। হ্যান্স-জর্জ গ্যাডামারের ব্যাখ্যাকে উল্লেখ করে কপেল যুক্তি দিয়েছিলেন যে, ভিন্ন ব্যক্তি তাদের ব্যক্তিগত দৃষ্টিভঙ্গী ও সুবিধা অনুযায়ী কোনও বিশেষ সাহিত্যকর্মের প্রতি তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যাক্ত করেন। এইভাবেই অস্টেনের কাজের বিভিন্ন বিশ্লেষণ চোখে পরে। অস্টেনকে একজন নারীবাদী আবার রক্ষণশীল মূল্যবোধ সমর্থনকারী এই উভয় ব্যাক্তিত্বের নিরিখেই বিশ্লেষণ করা যায়।[১৮১]

অভিযোজন[সম্পাদনা]

অস্টেনের উপন্যাসগুলির অবলম্বনে বহুকাল ধরেই বিবিধ ধারার চলচিত্র তৈরি হয়ে আসছে। ১৯ শতক থেকে, তার পরিবারের সদস্যরা তার অসম্পূর্ণ উপন্যাসগুলিকে সম্পূর্ণ করে প্রকাশ করে চলেছেন এবং ২০০০ সালের মধ্যে ১০০ টিরও বেশি মুদ্রন প্রকাশ পেয়েছে।[১৮২] অস্টেনের উপন্যাসের প্রথম নাটকীয় রূপান্তর হয়েছিল ১৮৯৫ সালে। রোজিনা ফিলিপির ডুওলোগস এবং অস্টেনের উপন্যাসের কিছু অংশ নিয়ে এক ক্ষুদ্র নাটক প্রস্তুত হয়। অস্টেনের কাজের প্রথম পেশাদার মঞ্চ উপস্থাপনটি ঘটেছিল ফিলিপিওর দ্য বেনেটস (১৯০১)-এর মাধ্যমে।[১৮৩] ১৯৪০ সালে এমজিএম -এর প্রযোজনায়, লরেন্স অলিভিয়ার এবং গ্রিয়ার গারসন অভিনীত প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস ছিল তার উপন্যাসের প্রথম চলচ্চিত্র রুপান্তরন।[১৮৪] ১৯৭০ সাল থেকে বি বি সি তাদের গনমাধ্যমে গল্পের পটভূমিকা, চরিত্রায়ন ও বৈশিষ্ট্যকে যথাসম্ভব অক্ষুন্ন রেখে অস্টেনের বিভিন্ন উপন্যাসের ধারাবাহিক চলচিত্র রুপান্তরন করে চলেছেন।[১৮৫] ব্রিটিশ সমালোচক রবার্ট আরভিন উল্লেখ করেছেন যে ১৯৪০ সালের পর থেকে আমেরিকায় প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস যেসকল চলচিত্রায়ন হয়েছে তাতে তৎকালীন ব্রিটিশ সমাজের চিত্রন করতে তারা পুরোপুরি সফল হতে পারেনি, তার মতে ব্রিটেনের তৎকালীন ভূস্বামীকেন্দ্রিক সমাজ সম্পর্কে আমেরিকানদের সীমিত জ্ঞানের জন্য তারা অস্টেনের উপন্যাসে বর্ণীত ব্রিটিশ সমাজের পরিপূর্ণ চিত্রায়ন করতে ব্যার্থ‌ হয়েছে।[১৮৬]

১৯৫৫ সাল থেকে অস্টেনের উপন্যাসের বহু সফল চিত্রায়ন হয়েছে। যাদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য অ্যাং লি' কর্তৃক সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি উপন্যাসের চলচিত্রায়ন যাতে অভিনয়ের জন্য তারকা এমা থম্পসন একাডেমি পুরস্কার জিতেছিলেন। বি বি সি -র কিছু জনপ্রিয় ধারাবাহিক চলচিত্রায়নের মধ্যে উল্লেখযোগ্য, ১৯৫৫ সালে জেনিফার এল এবং কলিন ফার্থ অভিনীত প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস[১৮৭] ২০০৫ সালে একটি ব্রিটিশ প্রযোজনা সংস্থা প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস -এর অপর এক চলচিত্রায়ন প্রস্তুত করে যার পরিচালনা করেন জো রাইট এবং কেইরা নাইটলি এবং ম্যাথু ম্যাকফ্যাডিন তাতে মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেন।[১৮৮] ২০০৭ সালে আই টিভি ম্যানসফিল্ড পার্ক, নর্থাঙ্গার অ্যাবে ও পারসুয়েস্‌ন উপন্যাসের চলচিত্রায়ন করেন।,[১৮৯] ২০১৬ সালে লাভ অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ উপন্যাসের চলচিত্রায়নে কেট বেকিনসেল লেডি সুসানের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন। লেডি সুসান ছিল লাভ অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ উপন্যাসের পূর্বনাম।[১৯০]

সম্মান[সম্পাদনা]

তিনটি সিংহের পাঞ্জা খোদাই করা অস্টেন'স আর্ম‌ [১৯১]

২০১৭ সালে জেন অস্টেনের প্রতি সম্মান জানিয়ে ১০ পাউন্ডের নোটে তার চিত্র মুদ্রিত করা হয়।[১৯২][১৯৩]

রচনাবলী[সম্পাদনা]

উপন্যাস[সম্পাদনা]

  • সেন্স অ্যান্ড সেন্সিবিলিটি (১৮১১)
  • প্রাইড অ্যান্ড প্রেজুডিস (১৮১৩)
  • ম্যান্সফিল্ড পার্ক (উপন্যাস)|ম্যান্সফিল্ড পার্ক (১৮১৪)
  • এমা (১৮১৬)
  • নর্থাঙ্গার অ্যাবি (১৮১৭) মরণোত্তর প্রকাশিত
  • পারসুয়েশন (১৮১৭) মরণোত্তর প্রকাশিত

বড় গল্প[সম্পাদনা]

  • লেডি সুসান (novella)
  • দি ওয়াটসন্স (incomplete novel)
  • স্যান্ডিটন (incomplete novel)

কিশোর উপন্যাস[সম্পাদনা]

  • দি থ্রি সিস্টার্স
  • লাভ অ্যান্ড ফ্রেন্ডশিপ
  • দি হিস্ট্রি অফ ইংল্যান্ড
  • ক্যাথেরিন, অর দি বাওয়ার
  • দি বিউটিফুল ক্যাসান্ড্রা

অস্টেনের বংশবৃক্ষ[সম্পাদনা]

Family tree of William Austen, Jane Austen's paternal grandfather, showing descendants for two generations
অস্টেন, তার বাবা-মা এবং তার ভাইবোন
Family tree of Rev. George Austen, Jane Austen's father, showing Jane's married brothers and their descendants
অস্টেনের ভাইবোন ও তাদের উত্তরসুরীরা

টীকা[সম্পাদনা]

  1. জেন অস্টেনের একটি জলরং ও পেন্সিল স্কেচ, অনুমিত হয় ছবিটি লেখকের ভগিনী জেন অস্টেনের একটি জলরং ও পেন্সিল স্কেচ, অনুমিত হয় ছবিটি লেখকের ভগিনী ক্যাসান্ড্রার আঁকা (১৮১০ খ্রি.)[১]

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Kirkham (2005), 68–72.
  2. Grundy (2014), 195–197
  3. MacDonagh (1991), 65, 136–137. Oliver MacDonagh says that Sense and Sensibility "may well be the first English realistic novel" based on its detailed and accurate portrayal of what he calls "getting and spending" in an English gentry family
  4. Scheidt, Deborah (২০১৭)। "LOOSER, Devoney. The making of Jane Austen. Baltimore: Johns Hopkins University Press, 2017. 291 p"Revista Scripta Uniandrade15 (2)। আইএসএসএন 1679-5520ডিওআই:10.5935/1679-5520.20170023 
  5. Fergus (2005), 3–4
  6. Le Faye (2004), 270; Nokes (1998), 1; Le Faye (2005), 33
  7. Nokes (1998), 1–2; Fergus (2005), 3–4 অস্টেনের পরিবার সম্পর্কীয় বিবরণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে বাদ দেওয়া হয়েছিল। উদাহরণস্বরূপ, অস্টেনের ভাই জর্জের উল্লেখ, যার মানসিক বিকাশজনিত রোগের কারনে তার পরিবার তাকে বাড়ি থেকে দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়, তার উল্লেখ খুব কমই করা হয়েছে। দুই ভাইকে অল্পবয়সেই নৌবাহিনীতে পাঠানো হয়েছিল; এছাড়াও চোর অপবাদে ধৃত ও বিচারাধীন ধনী আত্মীয়া লে-পেরটের কথাও এড়িয়ে যাওয়া হয়েছে।
  8. Nokes (1998), 1–2; Fergus (2005), 3–4
  9. Nokes (1998), 2–4; Fergus (2005), 3–4; Le Faye (2004), 279
  10. Fergus (2005), 4
  11. Lascelles, 2; for detail on "lower fringes", see Collins, ix–x.
  12. Lascelles, 4–5; MacDonagh, 110–28; Honan, 79, 183–85; Tomalin, 66–68.
  13. Litz, 3–14; Grundy, "Jane Austen and Literary Traditions", The Cambridge Companion to Jane Austen, 192–93; Waldron, "Critical Responses, Early", Jane Austen in Context, p. 83, 89–90; Duffy, "Criticism, 1814–1870", The Jane Austen Companion, 93–94.
  14. Litz, 142.
  15. MacDonagh, 66–75; Collins, 160–161.
  16. Singh, Anita. "Jane Austen's famous prose may not be hers after all", The Daily Telegraph, 22 October 2010.
  17. Le Faye (2004), 27
  18. Le Faye (2004), 27
  19. Le Faye (2004), 20
  20. Todd (2015), 2
  21. Le Faye (2004), 3–5, 11
  22. Le Faye (2004), 8; Nokes (1998), 51
  23. Le Faye (2004), 11
  24. Le Faye (2004), 6
  25. Le Faye (2004), 11; Nokes (1998), 24, 26
  26. Le Faye (2004), 12; Nokes (1998), 24
  27. Le Faye (2004), 11, 18, 19; Nokes (1998), 36
  28. Le Faye (2004), 19
  29. Nokes (1998), 37; Le Faye (2004), 25
  30. Le Faye (2004), 22
  31. Nokes (1998), 37; Le Faye (2004), 24–27
  32. Honan (1987), 211–212
  33. Todd (2015), 4
  34. Nokes (1998), 39; Le Faye (2004), 22–23
  35. Le Faye (2004), 29
  36. Le Faye (2004), 46
  37. Le Faye (2004), 26
  38. Honan (1987), 14, 17–18; Collins (1994), 54.
  39. Irvine (2005) p.2
  40. Tomalin (1997), 101–103, 120–123, 144; Honan (1987), 119.
  41. Quoted in Tomalin (1997), 102; see also Honan (1987), 84
  42. Le Faye (2004), 47–49; Collins (1994), 35, 133.
  43. Todd (2015), 3
  44. Tomalin (1997), 9–10, 26, 33–38, 42–43; Le Faye (2004), 52; Collins (1994), 133–134
  45. Le Faye (2004), 52
  46. Grundy (2014), 192–193; Tomalin (1997), 28–29, 33–43, 66–67; Honan (1987), 31–34; Lascelles (1966), 7–8
  47. Collins (1994), 42
  48. Honan (1987), 66–68; Collins (1994), 43
  49. Le Faye (2014), xvi–xvii; Tucker (1986), 1–2; Byrne (2002), 1–39; Gay (2002), ix, 1; Tomalin (1997), 31–32, 40–42, 55–57, 62–63; Honan (1987), 35, 47–52, 423–424, n. 20.
  50. Honan (1987), 53–54; Lascelles (1966), 106–107; Litz (1965), 14–17.
  51. Tucker (1986), 2
  52. Le Faye (2004), 66; Litz (1986), 48; Honan (1987), 61–62, 70; Lascelles (1966), 4; Todd (2015), 4
  53. Todd (2015), 4–5
  54. "Jane Austen's juvenilia"। British Library। ২৯ জুলাই ২০১৩ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৬ আগস্ট ২০২০ 
  55. Southam (1986), 244
  56. Jenkyns (2004), 31
  57. Todd (2015), 5; Southam (1986), 252
  58. Litz (1965), 21; Tomalin (1997), 47; Honan (1987), 73–74; Southam (1986), 248–249
  59. Honan (1987), 75
  60. Honan (1987), 93
  61. Southam (1986), 187–189
  62. Austen-Leigh, William; Austen-Leigh, Richard Arthur; Le Faye, Dierdre (১৯৯৩)। Jane Austen: A Family History। London: The British Library। পৃষ্ঠা 76–77। আইএসবিএন 978-0-7123-0312-5 
  63. Sutherland (2005), 14; Doody (2014) 87–89
  64. Honan (1987), 101–102; Tomalin (1997), 82–83
  65. Tomalin (1997), 118.
  66. Quoted in Le Faye (2004), 92.
  67. Halperin (1985), 721
  68. Le Faye (2014), xviii; Fergus (2005), 7–8; Tomalin (1997), 112–120, 159; Honan (1987), 105–111.
  69. Halperin (1985), 722
  70. Sutherland (2005), 16–18; LeFaye (2014), xviii; Tomalin (1997), 107, 120, 154, 208.
  71. Le Faye (2004), 100, 114.
  72. Le Faye (2004), 104; Sutherland (2005), 17, 21; quotations from Tomalin (1997), 120–122.
  73. Le Faye (2014), xviii–xiv; Fergus (2005), 7; Sutherland (2005), 16–18, 21; Tomalin (1997), 120–121; Honan (1987), 122–124.
  74. King, Noel "Jane Austen in France" Nineteenth-Century Fiction, Vol. 8, No. 1, June 1953 p. 2.
  75. Litz (1965), 59–60.
  76. Tomalin (1997), 182.
  77. Le Faye (2014), xx–xxi, xxvi; Fergus (2005), 8–9; Sutherland (2005), 16, 18–19, 20–22; Tomalin (1997), 199, 254.
  78. hubbard, susan। "Bath"seekingjaneausten.com। ১৬ জুন ২০১৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৭ মে ২০১৭ 
  79. Collins (1994), 8–9.
  80. Sutherland (2005), 21.
  81. Le Faye (2014) xx–xxii; Fergus (2005), 8; Sutherland (2005), 15, 20–22; Tomalin (1997), 168–175; Honan (1987), 215.
  82. Irvine, 2005 4.
  83. "Godmersham, Jane Austen's second home"। Press Reader। সংগ্রহের তারিখ ৩১ আগস্ট ২০২০ 
  84. Halperin (1985), 729
  85. Le Faye (2014), xxi; Fergus (2005), 7–8; Tomalin (1997), 178–181; Honan (1987), 189–198.
  86. Le Faye (2005), 51.
  87. Irvine (2005), 3
  88. Letter dated 18–20 November 1814, in Le Faye (1995), 278–282.
  89. Halperin (1985), 732
  90. Kirkham (2005), 68–72; Auerbach (2004), 19.
  91. Sutherland (2005), 15, 21.
  92. Le Faye (2014) xxii; Tomalin (1997), 182–184; Honan (1987), 203–205.
  93. Honan (1987), 213–214.
  94. Tomalin (1997), 194–206.
  95. Tomalin (1997), 207.
  96. Le Faye (2014), xx–xxi, xxvi; Fergus (2005), 8–9; Sutherland (2005), 16, 18–19, 20–22; Tomalin (1997), 182, 199, 254.
  97. Collins (1994), 89.
  98. Le Faye (2014), xxii; Tomalin (1997), 194–206; Honan (1987), 237–245; MacDonagh (1991), 49.
  99. Grey, J. David; Litz, A. Waton; Southam, B. C.; Bok, H.Abigail (১৯৮৬)। The Jane Austen companionবিনামূল্যে নিবন্ধন প্রয়োজন। Macmillan। পৃষ্ঠা 38আইএসবিএন 9780025455405 
  100. Irvine, 2005 15.
  101. Irvine, 2005 10–15.
  102. Fergus (2014), 6; Raven (2005), 198; Honan (1987), 285–286.
  103. Irvine, 2005 13.
  104. Honan (1987), 289–290.
  105. For more information and a discussion of the economics of book publishing during this period, see Fergus (2014), 6–7, and Raven (2005), 196–203.
  106. Irvine (2005) p.15
  107. Honan (1987), 290, Tomalin (1997), 218.
  108. Sutherland (2005), 16–17, 21; Le Faye (2014) xxii–xxiii; Fergus (2014), 10–11; Tomalin (1997), 210–212, 216–220; Honan (1987), 287.
  109. Le Faye (2014), xxiii; Fergus (1997), 22–24; Sutherland (2005), 18–19; Tomalin (1997), 236, 240–241, 315, n. 5.
  110. King, Noel "Jane Austen in France" from Nineteenth-Century Fiction pp. 1–28, Vol. 8, No. 1, June 1953 pp. 1–2.
  111. King, Noel "Jane Austen in France" from Nineteenth-Century Fiction pp. 1–28, Vol. 8, No. 1, June 1953 p. 2.
  112. King, Noel "Jane Austen in France" from Nineteenth-Century Fiction pp. 1–28, Vol. 8, No. 1, June 1953 pp. 5–6.
  113. King, Noel "Jane Austen in France" from Nineteenth-Century Fiction pp. 1–28, Vol. 8, No. 1, June 1953 p. 5.
  114. Le Faye (1995), 207–208.
  115. Halperin (1985), 734
  116. Austen letter to James Stannier Clarke, 15 November 1815; Clarke letter to Austen, 16 November 1815; Austen letter to John Murray, 23 November 1815, in Le Faye (1995), 296–298.
  117. Litz (1965), 164–165; Honan (1987), 367–369, describes the episode in detail.
  118. Honan (1987), 364–365; Le Faye (1995) 291.
  119. Le Faye (2014), xxv–xxvi; Sutherland (2005), 16–21; Fergus (2014), 12–13, 16–17, n.29, 31, n.33; Fergus (2005), 10; Tomalin (1997), 256.
  120. Le Faye (2014), xx, xxvi; Fergus (2014), 15; Tomalin (1997), 252–254.
  121. Honan (1987), 378–379, 385–395
  122. For detailed information concerning the retrospective diagnosis, its uncertainties and related controversies, see Honan (1987), 391–392; Le Faye (2004), 236; Grey (1986), 282; Wiltshire, Jane Austen and the Body, 221.
  123. Todd (2015), 13
  124. Tomalin (1997), 261.
  125. Tomalin (1997), 255.
  126. Le Faye (2014), xxv–xxvi; Fergus (1997), 26–27; Tomalin (1997), 254–271; Honan (1987), 385–405.
  127. Honan (1987), 317.
  128. Tomalin (1997), 272.
  129. Tomalin (1997), 321, n.1 and 3; Gilson (1986), 136–137.
  130. Looser, Devoney (১৩ ডিসেম্বর ২০১৯)। "Fan fiction or fan fact? An unknown pen portrait of Jane Austen"TLS: 14–15। 
  131. Looser, Devoney (১৩ ডিসেম্বর ২০১৯)। "Genius expressed in the nose The earliest known piece of Jane Austen-inspired fan fiction"TLS 
  132. Gilson (1986), 137; Gilson (2005), 127; Southam (1986), 102.
  133. Literature of Jane Austen Bangla discussion
  134. jane-austen-books-6-themes-jane-austen-s-writing
  135. Litz (1965), 3–14; Grundy (2014), 195–197; Waldron (2005), 83, 89–90; Duffy (1986), 93–94.
  136. Grundy (2014), 196
  137. Todd (2015), 21
  138. Keymer (2014), 21
  139. Keymer (2014), 24–25
  140. Keymer (2014), 29
  141. Keymer (2014), 32
  142. qtd. in Lodge (1986), 175
  143. Lodge (1986), 165
  144. Lodge (1986), 171–175
  145. Lascelles (1966) 101
  146. Lascelles (1966), 96, 101
  147. Baker (2014), 177
  148. MacDonagh (1991), 66–75; Collins (1994), 160–161.
  149. Bayley (1986), 24
  150. Bayley (1986), 25–26
  151. Polhemus (1986), 60
  152. Fergus (2014), 10; Honan (1987), 287–289, 316–317, 372–373.
  153. Southam (1968), 1.
  154. Waldron (2005), 83–91.
  155. Scott (1968), 58; Waldron (2005), 86; Duffy (1986), 94–96.
  156. Waldron (2005), 89–90; Duffy (1986), 97; Watt (1963), 4–5.
  157. Gilson (2005), 127.
  158. Duffy (1986), 98–99; MacDonagh (1991), 146; Watt (1963), 3–4.
  159. Southam (1968), 1; Southam (1987), 2.
  160. Litz, A. Walton "Recollecting Jane Austen" pp. 669–682 from Critical Inquiry, Vol. 1, No. 3, March 1975 p. 672.
  161. Johnson (2014), 232; Gilson (2005), 127.
  162. King, Noel "Jane Austen in France" from Nineteenth-Century Fiction pp. 1–28, Vol. 8, No. 1, June 1953 p. 23.
  163. King, Noel "Jane Austen in France" from Nineteenth-Century Fiction pp. 1–28, Vol. 8, No. 1, June 1953 p. 24.
  164. Southam (1968), 152; Southam (1987), 20–21.
  165. Southam (1987), 70.
  166. Southam (1987), 58–62.
  167. Southam (1987), 46–47, 230 (for the quote from James); Johnson (2014), 234.
  168. Litz, A. Walton "Recollecting Jane Austen" pp. 669–682 from Critical Inquiry, Vol. 1, No. 3, March 1975 p. 670.
  169. Devoney Looser, The Making of Jane Austen (Baltimore, MD: Johns Hopkins University Press, 2017), 185–196.
  170. Trott (2005), 92.
  171. Southam (1987), 79.
  172. Southam (1987), 99–100; see also Watt (1963), 10–11; Gilson (2005), 149–50; Johnson (2014), 239.
  173. Southam (1987), 107–109, 124.
  174. Southam (1986), 108; Watt (1963), 10–11; Stovel (2014), 248; Southam (1987), 127
  175. Said, Edward W. (১৯৯৪)। Culture and imperialism (1st Vintage books সংস্করণ)। New York। আইএসবিএন 0-679-75054-1ওসিএলসি 29600508 
  176. Rajan (2005), 101–110
  177. Bloom, Harold (১৯৯৪)। The Western Canon: The Books and School of the Ages। New York: Harcourt Brace। পৃষ্ঠা 2আইএসবিএন 0-15-195747-9 
  178. Zhu Hong "Nineteenth-Century British Fiction in New China: A Brief Report" pp. 207–213 from Nineteenth-Century Fiction, Volume 37, No. 2. September 1982 p. 210.
  179. Zhu Hong "Nineteenth-Century British Fiction in New China: A Brief Report" pp. 207–213 from Nineteenth-Century Fiction, Volume 37, No. 2. September 1982 p. 212.
  180. Zhu Hong "Nineteenth-Century British Fiction in New China: A Brief Report" pp. 207–213 from Nineteenth-Century Fiction, Volume 37, No. 2. September 1982 p. 213.
  181. Koppel, Gene (২ নভেম্বর ১৯৮৯)। "Pride and Prejudice: Conservative or Liberal Novel—Or Both? (A Gadamerian Approach)"। সংগ্রহের তারিখ ২৫ অক্টোবর ২০১৬ 
  182. Lynch (2005), 160–162.
  183. Devoney Looser, The Making of Jane Austen (Baltimore, MD: Johns Hopkins University Press, 2017), 85.
  184. Brownstein (2001), 13.
  185. Troost (2007), 79.
  186. Irvine, Robert Jane Austen, London: Routledge, 2005 pp. 158–159
  187. Troost (2007), 82–84.
  188. Carol Kopp, "The Nominees: Keira Knightley", CBS News, 20 October 2008.
  189. Julia Day, "ITV falls in love with Jane Austen", The Guardian, 10 November 2005.
  190. Alonso Duralde, Alonso, "'Love & Friendship' Sundance Review: Whit Stillman Does Jane Austen—But Hasn't He Always?", The Wrap, 25 January 2016.
  191. "An Armory of Famous Writers"। Heraldica। সংগ্রহের তারিখ ১৯ এপ্রিল ২০২১ 
  192. "Jane Austen is now on Britain's 10 pound note"ABC News (ইংরেজি ভাষায়)। ১৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ 
  193. Morris, Steven (১৮ জুলাই ২০১৭)। "Jane Austen banknote unveiled – with strange choice of quotation"The Guardian (ইংরেজি ভাষায়)। আইএসএসএন 0261-3077। সংগ্রহের তারিখ ৪ ডিসেম্বর ২০১৯ 

গ্রন্থপঞ্জি[সম্পাদনা]

Primary works Primary works

Secondary works

Biographies

Essay collections

Monographs and articles

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]

কর্মকাণ্ড[সম্পাদনা]

লেখকের তথ্য[সম্পাদনা]

ভক্তদের সাইট ও সংস্থা[সম্পাদনা]

অন্যান্য[সম্পাদনা]