জীনাৎ জাহান

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে

বেগম জীনাৎ জাহান (১০ ডিসেম্বর ১৯৪০ - ৩১ জানুয়ারি ২০০১) ছিলেন একজন বাংলাদেশি নৃত্য শিল্পী, নৃত্য পরিচালক ও নৃত্য প্রশিক্ষক। নৃত্যকলায় অবদানের জন্য তিনি বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি কর্তৃক শিল্পকলা পদকে ভূষিত হন।

প্রারম্ভিক জীবন[সম্পাদনা]

জীনাৎ ১৯৪০ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন ব্রিটিশ ভারতের কুষ্টিয়ার অন্তর্গত চুয়াডাঙ্গার দামোরহুদা গ্রামের ব্রাহ্মণ পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম শ্রী বিশ্বনাথ ভট্টাচার্য্য এবং মাতা শ্রীমতি নীলিমা ভট্টাচার্য্য। তার পূর্বের নাম ছিল কুমারী জলি ভট্টাচার্য্য (সুলেখা)। ১৯৬৩ সালে তিনি ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হয়ে বর্তমান নাম এস. জেড. জীনাৎ জাহান গ্রহণ করেন। তার প্রথম নৃত্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ‘নৃত্য ভারতী ইন্সটিটিউট’ এবং প্রথম নৃত্য গুরু ছিলেন ‘শ্রী প্রহ্লাদ দাস’। ১৯৫৮-৫৯ সালে তিনি নৃত্যে ভারতীর জুনিয়র ডিপ্লোমা, ১৯৫৯-৬৩ সালে ভারতীর সিনিয়র ডিপ্লোমা, ১৯৬৪ সালে কলকাতার ব্রজেন্দ্রকিশোর সঙ্গীত মহাবিদ্যালয় থেকে নৃত্যকলায় স্নাতক অর্জন করেন।[১] এছাড়া তিনি এলাহাবাদের প্রয়াগ সঙ্গীত সমিতি থেকে ডিপ্লোমা লাভ করেন। তিনি সফিউল্লাহ নামে একজনের সাথে সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন।

কর্মজীবন[সম্পাদনা]

জীনাৎ ১৯৬০-এর দশক থেকে ভারতীয় উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে ‘নৃত্য ভারতী’র পক্ষ থেকে নৃত্য পরিবেশন করা শুরু করেন। ১৯৬৬ সাল থেকে তিনি বিভিন্ন নৃত্য প্রতিযোগিতায় বিচারকের দায়িত্ব পালনও শুরু করেন। ১৯৭০ সালে ঘূর্ণিঝরের পর ক্ষতিগ্রস্তদের সাহাযার্থ্যে গঠিত ৪০ সদস্য বিশিষ্ট শিল্পীদলের একজন সদস্য ছিলেন। যারা পূর্ব ও পশ্চিম পাকিস্তানের বিভিন্ন স্থানে নৃত্য পরিবেশনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল গঠনে ভূমিকা পালন করে। তিনি ৬০-এর দশকে নৃত্য প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ শুরু করেন ও কর্মজীবনে বেশ কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ছিলেন। এরমধ্যে উল্লেখযোগ্য হল সঙ্গীত একাডেমি, আলতাফ মাহমুদ সঙ্গীত বিদ্যানিকেতন, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, নজরুল একাডেমি, বাংলাদেশ শিশু একাডেমি। এছাড়াও তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরে নৃত্য প্রশিক্ষক হিসাবে ১৯৭৯ থেকে ১৯৮২ সাল পর্যন্ত কর্মরত ছিলেন। ১৯৮৩ সাল থেকে মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত তিনি সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধিদপ্তরে নৃত্য প্রভাষক কাজ করেছেন। তিনি ১৯৬৪ সাল থেকে বাংলাদেশ টেলিভিশনের তালিকাভূক্ত নৃত্যশিল্পী ছিলেন।

লেখালেখি[সম্পাদনা]

জীনাৎ রচিত প্রবন্ধসমূহের মধ্যে রয়েছে, নাচের ইতিকথা (চিত্রাকাশ পত্রিকা), রবীন্দ্রনাথের দৃষ্টিতে নৃত্যকলা (চিত্রাকাশ পত্রিকা), মণিপুরী নৃত্য সংক্ষেপিত (চলন্তিকা পত্রিকা), ইতিহাসমূলক রচনা; কথক, কথাকলি, ভরতনাট্যম ও মণিপুরীর উপর (পুলিশ সমবায় পত্রিকা) ‘দীপক’-এ লেখা। TAGORE AND HIS DANCE (বাংলাদেশ টাইমস পত্রিকায়)। নৃত্যে মুসলিম অবদান (তবলা শিক্ষালয়ের মিউজিক কনফারেন্স উপলক্ষ্যে স্মরণিকায় কথক নৃত্যে মুসলিম অবদান (দৈনিক দেশ পত্রিকা) ধারাবাহিকভাবে। বাংলার গ্রামীণ ও পল্লী নৃত্য (দীপক পত্রিকায়) নৃত্য সঙ্গীত ও বাংলাদেশ (দেশের একমাত্র সঙ্গীত পত্রিকা) দেশী নৃত্য ও মার্গ নৃত্যের তুলনা (সঙ্গীত পত্রিকা) লোকনৃত্যের ধারাবাহিক রচনা (সঙ্গীত পত্রিকা) নৃত্যে মুদ্রার ব্যবহার ও তার শ্রেণী বিন্যাস (ঢাকা নৃত্য শিল্পী সংস্থা বাংলাদেশ-এর অভিষেক অনুষ্ঠান উপলক্ষ্যে স্মরণিকা ও পত্রিকায়। এছাড়া বিভিন্ন সংগঠনের স্মরণিকা ও পত্রিকায় বহু লেখা প্রকাশ। ঢাকার উদীচী’র পত্রিকা ‘চারণ’, গেন্ডারিয়া সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানের পত্রিকা ‘পদক্ষেপ’ ইত্যাদি অগণিত পত্র-পত্রিকায় লেখা প্রকাশ।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "নৃত্যকলা"বাংলাপিডিয়া। সংগ্রহের তারিখ ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯