বিষয়বস্তুতে চলুন

জাহানপানাহ

স্থানাঙ্ক: ২৮°৩১′১৬″ উত্তর ৭৭°১৪′৪৬″ পূর্ব / ২৮.৫২১° উত্তর ৭৭.২৪৬° পূর্ব / 28.521; 77.246
উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জাহানপানাহ
বিজয়মণ্ডল—মধ্যযুগীয় দিল্লির চতুর্থ নগরী জাহানপানাহর অংশ
লুয়া ত্রুটি মডিউল:অবস্থান_মানচিত্ এর 480 নং লাইনে: নির্দিষ্ট অবস্থান মানচিত্রের সংজ্ঞা খুঁজে পাওয়া যায়নি। "মডিউল:অবস্থান মানচিত্র/উপাত্ত/India New Delhi" বা "টেমপ্লেট:অবস্থান মানচিত্র India New Delhi" দুটির একটিও বিদ্যমান নয়।
সাধারণ তথ্যাবলী
ধরনদুর্গ, মসজিদসমাধি
স্থাপত্যশৈলীতুঘলক
অবস্থানদক্ষিণ দিল্লি
দেশভারত
স্থানাঙ্ক২৮°৩১′১৬″ উত্তর ৭৭°১৪′৪৬″ পূর্ব / ২৮.৫২১° উত্তর ৭৭.২৪৬° পূর্ব / 28.521; 77.246
নির্মাণ শুরু১৩২৬ খ্রিস্টাব্দ
সম্পূর্ণ১৩২৭ খ্রিস্টাব্দ
গ্রাহকতুঘলক রাজবংশ
স্বত্বাধিকারীদিল্লি সরকার
মাত্রা
অন্যান্য মাত্রাদুর্গের আয়তন: ২০ ha (৪৯.৪ একর)
তথ্যসূত্র
[]

জাহানপানাহ মধ্যযুগীয় দিল্লির চতুর্থ নগরী, যা দিল্লি সালতানাতের সুলতান মুহাম্মদ বিন তুঘলক ১৩২৬-১৩২৭ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠা করেন। ক্রমাগত মঙ্গোল আক্রমণের হুমকি মোকাবিলার জন্য তিনি এই সুরক্ষিত নগরী নির্মাণ করেন। "জাহানপানাহ" শব্দের অর্থ পার্সিয়ান ভাষায় "বিশ্বের আশ্রয়"। এটি আদিলাবাদ দুর্গ (১৪শ শতকে নির্মিত) এবং কিলা রাই পিথোরা ও সিরি দুর্গ-এর মধ্যবর্তী সমস্ত স্থাপনা একত্র করে গঠিত হয়েছিল। তবে নগরী ও দুর্গের অস্তিত্ব বর্তমানে বিলুপ্ত। এ অবস্থার নানা কারণ ব্যাখ্যা করা হয়েছে, যার মধ্যে একটি হলো মুহাম্মদ বিন তুঘলকের অদ্ভুত শাসননীতি। তিনি রাজধানী দাক্ষিণাত্য মালভূমির দৌলতাবাদে সরানোর নির্দেশ দেন, তবে কিছুদিন পরই পুনরায় রাজধানী দিল্লিতে ফিরিয়ে নিয়ে আসেন।[][][]

বর্তমানেও নগরীর ধ্বংসাবশেষ সিরি দুর্গ থেকে কুতুব মিনার পর্যন্ত সড়কের পাশে ছড়িয়ে আছে। এছাড়া, ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান (আইআইটি) দিল্লি, বেগমপুর, খিড়কি মসজিদ, সাতপুলা এবং আশেপাশের অনেক এলাকায় এর নিদর্শন দেখা যায়। সাতপুলার মতো কিছু স্থানে দুর্গপ্রাচীর এত প্রশস্ত ছিল যে, এর মধ্যে অস্ত্রাগার ও রসদ সংরক্ষণের জন্য আলাদা কক্ষ ছিল। পরবর্তী সময়ের খননকার্যে দক্ষিণ দিল্লির বিভিন্ন গ্রাম ও বসতিতে বিপুল পরিমাণ স্মৃতিস্তম্ভের সন্ধান পাওয়া গেছে।

দিল্লির অবিরাম নগর সম্প্রসারণের ফলে জাহানপানাহ বর্তমানে দক্ষিণ দিল্লির অভিজাত নগরায়ণের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। বর্তমানে জাহানপানাহ অঞ্চলটি পঞ্চশীল পার্ক, মালব্য নগর, আদচিনি ও অরবিন্দ আশ্রম দ্বারা বেষ্টিত। এটি উত্তর-দক্ষিণে আউটার রিং রোডকুতুব কমপ্লেক্স এবং পূর্ব-পশ্চিমে মেহরৌলি রাস্তা ও চিরাগ দিল্লি রোডের মধ্যে অবস্থিত। ভারতীয় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান মেহরৌলি রোডের অপর পাশে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা হিসেবে চিহ্নিত।[][][]

ব্যুৎপত্তি

[সম্পাদনা]

'জাহানপানাহ' শব্দটির গঠন ফার্সি 'জাহান' (جهان), যার অর্থ 'পৃথিবী' এবং 'পানাহ' (پناه), যার অর্থ 'আশ্রয়', এই শব্দদ্বয়ের সমন্বয়ে। এটির সম্মিলিতরূপের শাব্দিক অর্থ 'পৃথিবীর আশ্রয়'।

ইতিহাস

[সম্পাদনা]

গিয়াসউদ্দিন তুগলকের পুত্র মোহাম্মদ বিন তুঘলক, যিনি তুগলকাবাদ নগরী প্রতিষ্ঠার নির্দেশ দিয়েছিলেন, তিনি ১৩২৬ থেকে ১৩২৭ সালের মধ্যে সিরিলাল কোট নগরীগুলোকে বেষ্টন করে নতুন শহর জাহানপানাহ নির্মাণ করেন, যার ১৩টি প্রবেশদ্বার ছিল।[] তবে এই শহর ও আদিলাবাদ দুর্গের বেশিরভাগ অংশ এখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে, যা এর প্রকৃত অবস্থান ও নির্মাণকাল সম্পর্কে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে।

এখনও যে কয়েকটি স্থাপনা আংশিক টিকে রয়েছে, তার মধ্যে বিজয় মণ্ডল (যেখানে একসময় হাজার সুতুন প্রাসাদ অবস্থিত ছিল বলে ধারণা করা হয়), বেগমপুর মসজিদ, সরাই শাজি মহল, লাল গম্বুজ, বারাদারি এবং আরও কিছু ছোট স্থাপনা উল্লেখযোগ্য। ইবনে বতুতার বিবরণ অনুযায়ী (তিনি ১৩৩৩ থেকে ১৩৪১ সাল পর্যন্ত দিল্লিতে ছিলেন), লাল কোট ছিল নগর এলাকার কেন্দ্র, সিরি ছিল সামরিক ছাউনি এবং বাকি অংশে রাজপ্রাসাদ (বিজয় মণ্ডল) ও অন্যান্য স্থাপনা ছিল।[][]

ইবনে বতুতা উল্লেখ করেন যে, মোহাম্মদ বিন তুগলক লাল কোট, সিরি, জাহানপানাহ এবং তুগলকাবাদকে একটি সংযুক্ত দুর্গ হিসেবে পরিণত করতে চেয়েছিলেন, কিন্তু উচ্চ ব্যয়ের কারণে তিনি পরিকল্পনাটি মাঝপথে পরিত্যাগ করেন। তিনি আরও বলেন যে, হাজার সুতুন প্রাসাদ, যা সিরি দুর্গের সীমানার বাইরে ছিল কিন্তু জাহানপানাহ শহরের ভেতরে, সেটি ছিল তুঘলকদের আবাসস্থল।[][]

হাজার সুতুন প্রাসাদ জাহানপানাহ দুর্গের ভিতরে বিজয় মণ্ডল এলাকায় অবস্থিত ছিল। এই বিশাল প্রাসাদে একটি সুবিশাল সভাগৃহ, কাঠের খোদাই করা স্তম্ভ এবং সুসজ্জিত ছাদ ছিল, যা এখন সম্পূর্ণ বিলুপ্ত। দুর্গটি কিলা রাই পিথোরা ও সিরির মধ্যবর্তী এলাকার জনগণের জন্য একটি সুরক্ষিত আশ্রয়স্থল হিসেবে কাজ করত। তবে অজানা কারণে মোহাম্মদ বিন তুঘলক তার রাজধানী দৌলতাবাদে স্থানান্তরিত করেন, যদিও তিনি কিছুদিন পরেই দিল্লিতে ফিরে আসেন।[]

আদিলাবাদ

[সম্পাদনা]
আদিলাবাদ দুর্গের সম্মুখভাগ
আদিলাবাদ দুর্গের অভ্যন্তরভাগ

আদিলাবাদ হলো একটি মাঝারি আকারের দুর্গ, যা তুঘলকবাদের দক্ষিণে পাহাড়ের উপর নির্মিত হয়েছিল। জাহানপানাহ শহরের চারপাশের সীমানায় এই দূর্গটি প্রতিরক্ষামূলক বিশাল প্রাচীর দিয়ে সজ্জিত ছিল। দুর্গটি তার পূর্বের আরেকটি দূর্গ তুঘলকাবাদ দুর্গের তুলনায় অনেক ছোট ছিল, তবে স্থাপত্যশৈলী একই ছিল। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই) আদিলাবাদ দুর্গ সংরক্ষণ প্রকল্পের প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে যে, দুর্গটিতে ২টি প্রবেশদ্বার ছিল—

"...একটি বাবরকানসহ দক্ষিণ-পূর্ব দিকে এবং অন্যটি দক্ষিণ-পশ্চিম দিকে। ভেতরের দিকে, এটি একটি ব্যালি দ্বারা পৃথক একটি দুর্গোপদুর্গ, যেখানে প্রাসাদসমূহ অবস্থিত ছিল।"[][১০]

এটি 'মুহাম্মাদাবাদ' নামেও পরিচিত ছিল, তবে ধারণা করা হয় এটি নির্মাণের অনেক পরে প্রদানকৃত নাম। দুর্গের দক্ষিণ-পূর্ব ও দক্ষিণ-পশ্চিম প্রবেশদ্বারগুলোতে নীচের তলায় কক্ষ ছিল, আর পূর্ব ও পশ্চিম প্রবেশদ্বারে শস্যভাণ্ডার ও উঠান ছিল। এই দুর্গের প্রাচীরের পুরুত্ব ছিল প্রায় ১২ মি (৩৯.৪ ফু), এবং এটি প্রায় ৮ কিমি (৫.০ মা) বিস্তৃত ছিল।

তুঘলক শাসনামলে পানি সরবরাহ ব্যবস্থাও ছিল সুপরিকল্পিত। সাতটি প্রবাহপথবিশিষ্ট একটি জলাধার (সাতপুলা, অর্থাৎ "সাতটি সেতু") নির্মিত হয়েছিল, যা শহরের ভেতর প্রবাহিত একটি খালকে নিয়ন্ত্রণ করত। এই কাঠামো এখনো টিকে আছে, তবে বর্তমানে এটি অকেজো। আরেকটি ছোট দুর্গ, 'নাই-কো-কট' (শাব্দিক অর্থে "নাপিতের দুর্গ"), আদিলাবাদ থেকে প্রায় ৭০০ মি (২,২৯৬.৬ ফু) দূরে অবস্থিত ছিল, যেখানে একটি দুর্গোপদুর্গ ও সেনাশিবির ছিল, যা বর্তমানে ধ্বংসাবশেষে পরিণত হয়েছে।[১১] এটি খিরকি গ্রামের কাছে, জাহানপানাহর সীমানায় অবস্থিত। একই ধরনের জলসংরক্ষণ ব্যবস্থা তুঘলকাবাদ ও দিল্লির হাউজ খাস কমপ্লেক্সেও গড়ে তোলা হয়েছিল, যা পুরো শহরের পানি সরবরাহ নিশ্চিত করত।[১২]

রাজকীয় বেগমপুরি মসজিদ
বেগমপুরি মসজিদের পূর্ব পাশের প্রবেশদ্বার।
Begumpur Masjid central pishtaq on west wall

খিড়কি মসজিদ খিড়কি গ্রামে অবস্থিত।

বেগমপুর মসজিদ

[সম্পাদনা]

বর্তমানে বেগমপুর গ্রামে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা শহরের ধ্বংসাবশেষ তার প্রাচীন গৌরবের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। বেগমপুর মসজিদ, যা পুরনো শহরের একটি অবশিষ্ট নিদর্শন, এর সামগ্রিক বিন্যাস প্রায় ৯০ মি × ৯৪ মি (২৯৫.৩ ফু × ৩০৮.৪ ফু) এবং অভ্যন্তরীণ আঙিনার পরিমাপ ৭৫ মি × ৮০ মি (২৪৬.১ ফু × ২৬২.৫ ফু)। এটি ইরানীয় নকশার উপর ভিত্তি করে নির্মিত বলে ধারণা করা হয়, যা ইরানীয় স্থপতি জহির আল-দিন আল-জাইউশ দ্বারা প্রণীত ছিল।

শহরের কেন্দ্রস্থলে গৌরবমণ্ডিত এই ভবনটি একাধিক ভূমিকা পালন করত—এটি একদিকে যেমন একটি মাদ্রাসা, তেমনি একটি প্রশাসনিক কেন্দ্র, যেখানে রাজকোষ সংরক্ষিত থাকত, এবং একটি বৃহৎ মসজিদ হিসেবে সামাজিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু ছিল, যা বাজার এলাকার চারপাশে অবস্থিত ছিল। এর বিন্যাস একটু ব্যতিক্রমী; এতে তিনটি খিলানযুক্ত ঢাকা পথ এবং পশ্চিম দিকে "তিন/আট" আকারের গভীর নয়টি খোপবিশিষ্ট ইবাদতখানা রয়েছে।

এই মসজিদ নির্মাণ সম্পর্কে দুটি মত প্রচলিত। একদল মনে করেন, এটি ফিরোজ শাহ তুগলক-এর প্রধানমন্ত্রী খান-ই-জাহান মকবুল তেলাঙ্গানি নির্মাণ করেছিলেন, যিনি আরও ছয়টি মসজিদ নির্মাণ করেছিলেন (যার মধ্যে দুটি কাছাকাছি এলাকাতেই অবস্থিত)। অপরপক্ষে, অন্যদের মতে, এটি মুহাম্মদ বিন তুঘলক কর্তৃক নির্মিত, কারণ এটি বিজয় মণ্ডলের নিকটবর্তী এবং সম্ভবত ১৩৫১ খ্রিস্টাব্দে তার মৃত্যুর সময়েই বিদ্যমান ছিল। দ্বিতীয় মতবাদকে সমর্থন করে বলা হয় যে, সমসাময়িক ইতিহাসবিদ ইবনে বতুতা, যিনি ১৩৪১ খ্রিস্টাব্দ পর্যন্ত দিল্লিতে অবস্থান করেছিলেন, তিনি এই মসজিদ সম্পর্কে কোনো বিবরণ দেননি।

এই স্থাপত্যশৈলীটি এক অনন্য শিল্পকর্ম হিসেবে বিবেচিত হয়। এতে তিনটি প্রবেশদ্বার রয়েছে—উত্তর, পূর্ব (প্রধান প্রবেশদ্বার) এবং দক্ষিণ প্রবেশদ্বার। পশ্চিম দেয়ালে, যেখানে মিহরাব অবস্থিত, তুঘলকি-শৈলীর টেপারিং (চাপ কমানো) মিনার রয়েছে, যা কেন্দ্রের উঁচু খোলা অংশকে ঘিরে রয়েছে এবং যার উপর একটি বৃহৎ গম্বুজ স্থাপিত আছে। পশ্চিম দেয়ালের সারিবদ্ধ পথজুড়ে পঁচিশটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ বিদ্যমান।

ইবাদতখানার ভেতরের কারুকাজ বেশ সংযত হলেও স্তম্ভ ও দেয়াল অপেক্ষাকৃত সাধারণ। পূর্ব প্রবেশপথটি রাস্তার স্তর থেকে সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে যেতে হয়, কারণ এটি একটি উঁচু ভিত্তি বা প্লাটফর্মের উপর নির্মিত। উত্তর প্রবেশদ্বারটি সম্ভবত বিজয় মণ্ডল প্রাসাদের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল, কারণ এটি এক মিটার উঁচু ছিল। মসজিদের দেয়ালে ব্যবহৃত প্লাস্টারের আস্তরণ শতাব্দীর পর শতাব্দী টিকে রয়েছে এবং এখনও কিছু কিছু স্থানে টাইলস দেখা যায়।

জাহানপানাহ নগরীর অস্তিত্ব থাকা পর্যন্ত এই মসজিদ ব্যবহৃত হতো, যা ১৭শ শতকের মধ্যে পরিত্যক্ত হয়ে যায়। আধুনিক যুগে এটি দখল হয়ে যায়, তবে ১৯২১ সালে ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (এএসআই) এটি পুনরুদ্ধার করে। মসজিদের উত্তর পাশের একটি সরু রাস্তা রয়েছে, যা বর্তমানে শাটার দিয়ে বন্ধ করে রাখা আছে। ধারণা করা হয় যে এটি সুলতানের পরিবারের নারীদের নামাজ পড়ার জন্য ব্যবহৃত হতো।[][][][১১]

বিজয় মণ্ডল ও সংলগ্ন এলাকা
বিজয় মণ্ডল প্রাসাদের ধ্বংসাবশেষের দৃশ্য
বিজয় মণ্ডল প্রাসাদের পাশে অবস্থিত অনন্য নকশার গম্বুজ

বিজয় মণ্ডল

[সম্পাদনা]

বিজয় মণ্ডল একটি বিশাল কাঠামো, যার আয়তন ৭৪ বাই ৮২ মিটার (২৪৩ বাই ২৬৯ ফুট) এবং এতে একটি সুনির্বাচিত চৌকোণা গম্বুজ রয়েছে। এটি পুরোপুরি টাওয়ার বা প্রাসাদ হিসেবে সংজ্ঞায়িত করা যায় না।[][১৩]

এটি একটি তুঘলকি স্থাপনা, যা একটি অষ্টকোণ পরিকল্পনার উপর নির্মিত, এবং রাবল মেসনারি দ্বারা নির্মিত। পূর্ব, পশ্চিম ও দক্ষিণ দিকের বিশাল ঢালু দেয়ালগুলোর কারণে এটি অত্যন্ত দৃঢ় ছিল। এই অস্বাভাবিক স্থাপনার উদ্দেশ্য নিয়ে বিভিন্ন মত রয়েছে। ইবনে বতুতার বর্ণনায় এটিকে "হাজার সুতান প্রাসাদ" নামে উল্লেখ করা হয়েছে, যা বহুমুখী কক্ষবিশিষ্ট একটি রাজপ্রাসাদ ছিল। অন্যদের মতে, এটি সেনাদের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য তৈরি করা একটি পর্যবেক্ষণ টাওয়ার।

এই স্থাপনা একটি প্রশস্ত পথের মাধ্যমে সুলতানের ব্যক্তিগত কক্ষে সংযুক্ত ছিল। ভবনের অভ্যন্তরের কিছু বিশাল কক্ষ সম্ভবত রাজকোষ সংরক্ষণের জন্য ব্যবহৃত হতো। মেঝের বাইরে কিছু ছোট ছোট গর্ত দেখা যায়, সেগুলো সম্ভবত কাঠের স্তম্ভ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হতো। কাঠের স্তম্বগুলো যা একটি অস্থায়ী শ্যামিয়ানা (তাঁবু) বা ছাদ স্থাপনের জন্য ব্যবহৃত হতো।

বিজয় মণ্ডল সংলগ্ন এলাকায় একটি অনন্য গম্বুজ বিশিষ্ট ভবন রয়েছে, যার প্রতি তিন পাশে দুটি করে প্রবেশপথ রয়েছে। এটি সম্ভবত একটি সংলগ্ন স্থাপনার অংশ ছিল, কারণ এর সঙ্গে কিছু ভূগর্ভস্থ পথ যুক্ত ছিল। তবে এই গম্বুজ নির্মাণের প্রকৃত উদ্দেশ্য এখনো অজানা।[]

কালু সারাই মসজিদ

[সম্পাদনা]
কালু সারাই মসজিদের ধ্বংসাবশেষ
সেরাই শাহজি মহল

বিজয় মণ্ডল থেকে প্রায় ৫০০ মিটার (১,৬০০ ফুট) উত্তরে অবস্থিত কালু সারাই মসজিদ বর্তমানে অত্যন্ত জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। একটি ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে সংরক্ষণের জন্য এটিতে কিছু গুরুত্বপূর্ণ সংস্কার আবশ্যক। বর্তমানে এটি জন্য দখল করে সেখানে অবৈধভাবে অনেকে বসবাস করেছেন।

এই মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন খ্যাতনামা মসজিদ নির্মাতা খান-ই-জাহান মকবুল তেলাঙ্গানি, যিনি ফিরোজ শাহ তুঘলক-এর শাসনামলে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন। এটি তার নির্মিত সাতটি মসজিদের অন্যতম এবং অন্যান্য মসজিদের মতোই অনন্য স্থাপত্যশৈলী বহন করে। আজও মিহরাব-এর সজ্জা তুলনামূলকভাবে অন্যান্য মসজিদের চেয়ে বেশি জটিল বলে প্রতীয়মান হয়।

এই মসজিদটি মূলত খোয়া পাথরপ্লাস্টার করা পৃষ্ঠসমূহ দিয়ে নির্মিত হয়েছিল। এর সম্মুখভাগে সাতটি খিলানযুক্ত প্রবেশপথ ছিল এবং এটি গভীরতায় তিনটি বেহারার সমন্বয়ে গঠিত। এর উপরিভাগ একাধিক নিচু গম্বুজ দ্বারা আবৃত ছিল, যা তুঘলকি স্থাপত্যর একটি বিশেষ বৈশিষ্ট্য।[][][১৪]

তথ্যসূত্র

[সম্পাদনা]
  1. Mohan, Madan। "Historical Information System for Surveying Monuments and Spatial Data Modeling for Conservation of Cultural Heritage in Delhi" (পিডিএফ)। ২ ফেব্রুয়ারি ২০১৩ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৫ 
  2. Aitken, Bill (২০০১) [2002]। "Speaking Stones: World Cultural Heritage Sites in India"। The other Delhis। Eicher Goodearth Limited। পৃষ্ঠা 25। আইএসবিএন 81-87780-00-2। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৫“Whatever the cause of Tughalqabad’s demise, Ghiyasuddin’s successor Mohammed Bin Tughlaq returned to the original Rajput site. However, the Mongol threatened again and the new ruler decided to wall Qila Rai Pihora, Siri and the suburbs between them to build his Jahanpanah or ‘Refuge of the World’ 
  3. "Adilabad - The Fourth Fort of Delhi"। ২ জানুয়ারি ২০০৮ তারিখে মূল (Map) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-১৯ 
  4. Sharma, Y. D. (২০০১)। "Delhi and its Neighbourhood"। Siri Fort & A- Siris। New Delhi: Archaeological Survey of India। পৃষ্ঠা 25 & 73। ৩১ আগস্ট ২০০৫ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৪-২৪ 
  5. Peck, Lucy (২০০৫)। "Jahanpanah"। Delhi - A thousand years of Building। New Delhi: Roli Books Pvt Ltd.। পৃষ্ঠা 58–69। আইএসবিএন 81-7436-354-8 
  6. "Begumpuri Masjid"। ৫ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৪ 
  7. Verma, Amrit (১৯৮৫)। Forts of India। New Delhi: The Director of Publication Division, Ministry of Information and Broadcasting, Government of India। পৃষ্ঠা 7। আইএসবিএন 81-230-1002-8 
  8. "Forts of Delhi"India Profile। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-১৯ 
  9. Jackson, Peter (২০০৩)। "Zenith of the sultanate"। The Delhi Sultanate: A Political and Military HistoryCambridge University Press। পৃষ্ঠা 259–260। আইএসবিএন 9780521543293। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৩ 
  10. "Commonwealth Games-2010, Conservation, Restoration and Upgradation of Public Amenities at Protected Monuments" (পিডিএফ)Adilabad FortArchaeological Survey of India, Delhi Circle। ২০০৬। পৃষ্ঠা 65। ১১ অক্টোবর ২০১১ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২৯ মে ২০০৯ 
  11. Welch, Anthony; Crane, Howard (১৯৮৩)। "The Tughluqs: Master Builders of the Delhi Sultanate" (পিডিএফ)Muqarnas। Brill। 1: 129–130। জেস্টোর 1523075ডিওআই:10.2307/1523075। ১৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৬ 
  12. Tracy, James D., সম্পাদক (২০০০)। "Chapter 9: Delhi walled: Changing boundaries"। City Walls: The Urban Enceinte in Global Perspective। Cambridge University Press। পৃষ্ঠা 264–268। আইএসবিএন 978-0-521-65221-6 
  13. Anthony Welch; Howard Crane (১৯৮৩)। "The Tughluqs: Master Builders of the Delhi Sultanate" (পিডিএফ)Muqarnas। Brill। 1: 148–149। জেস্টোর 1523075ডিওআই:10.2307/1523075। ১৩ আগস্ট ২০১৬ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৩ আগস্ট ২০১৬ 
  14. "কালু সারাই মসজিদ"। ৬ জুলাই ২০০৯ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৫-২৪