জাকির হোসেন দিল্লি কলেজ
প্রাক্তন নামসমূহ |
|
|---|---|
| নীতিবাক্য | ভালোবাসা দিয়ে বাঁচুন (ইংরেজি: Live by Love) |
| স্থাপিত | ১৬৯৬[১] |
প্রাতিষ্ঠানিক অধিভুক্তি | দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় |
| অধ্যক্ষ | নরেন্দ্র সিং |
| ঠিকানা | জওহরলাল নেহেরু মার্গ , , ভারত |
| ওয়েবসাইট | www |
![]() | |
১৬৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত জাকির হোসেন দিল্লি কলেজ (পূর্বে জাকির হোসেন কলেজ, অ্যাংলো আরবি কলেজ এবং দিল্লি কলেজ নামে পরিচিত) হল ভারতের অন্যতম প্রাচীন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং এটি দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অধিভুক্ত কলেজ, যা NAAC কর্তৃক ‘A’ গ্রেডপ্রাপ্ত। কলেজটি ১৫০ একর এলাকা জুড়ে বিস্তৃত এবং দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থিত। ভারতে আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি উর্দু ও ইসলামী শিক্ষার প্রসারে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। এটি আজও দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের একমাত্র কলেজ যেখানে আরবি ও ফারসি ভাষায় বিএ (অনার্স) কোর্স চালু আছে।
ইতিহাস
[সম্পাদনা]

এই কলেজটি মূলত ১৬৯৬ সালে প্রতিষ্ঠা করেন গাজিউদ্দিন খান, যিনি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের একজন সেনাপতি এবং দক্ষিণ ভারতের একজন প্রভাবশালী জেনারেল ছিলেন। তিনি ছিলেন আসফ জাহ প্রথম-এর পিতা, যিনি হায়দ্রাবাদের নিজাম শাসনব্যবস্থার প্রতিষ্ঠাতা এবং প্রথম নিজাম হিসেবে পরিচিত। কলেজটি শুরুতে মাদ্রাসা গাজিউদ্দিন খান নামে পরিচিত ছিল।
তবে, মুঘল সাম্রাজ্যের দুর্বলতার কারণে ১৭৯০–১৭৯১ সালের মধ্যে এই মাদ্রাসা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে, স্থানীয় অভিজাতদের সহযোগিতায়, ১৭৯২ সালে এই স্থানেই সাহিত্য, বিজ্ঞান ও শিল্পচর্চার জন্য একটি প্রাচ্য কলেজ প্রতিষ্ঠা করা হয়।[১] প্রতিষ্ঠানের অবস্থান ছিল পুরান দিল্লির ঠিক বাইরে, আজমেরী গেটের পাশে, নয়াদিল্লি রেলওয়ে স্টেশন ও পাহাড়গঞ্জের কাছাকাছি। এটি একটি প্রাচীরবেষ্টিত ভবন ছিল, যা শহরের দুর্গ প্রাচীরের সঙ্গে সংযুক্ত ছিল এবং স্থানীয়ভাবে “কলেজ ঘাঁটি” নামে পরিচিত ছিল।[২][৩]
১৮২৮ সালে, ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি প্রতিষ্ঠানটিকে পুনর্গঠন করে এবং এর নাম দেয় “অ্যাংলো আরবি কলেজ”। এতে ঐতিহ্যবাহী পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি ইংরেজি ভাষা ও সাহিত্যে শিক্ষাদান শুরু হয়।[৪][৫]
দিল্লি কলেজ, যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে ধর্মনিরপেক্ষ ছিল, সেখানে রেভারেন্ড জেনিংস গোপনে বাইবেল ক্লাস চালু করেন। ১৮৫২ সালের জুলাই মাসে, দিল্লির দুই বিশিষ্ট হিন্দু—ডঃ চমন লাল (জাফরের ব্যক্তিগত চিকিৎসকদের একজন) এবং তাঁর বন্ধু মাস্টার রামচন্দ্র,[৬] যিনি কলেজে গণিতের প্রভাষক ছিলেন—সেন্ট জেমস চার্চে একটি জনসমক্ষে ধর্মান্তর অনুষ্ঠানে দীক্ষা গ্রহণ করেন।
১৮৪৫ সালে তৎকালীন অধ্যক্ষ ডঃ স্প্রেঙ্গার কলেজ প্রেস মাতবা'উল-উলুম প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রথম কলেজ সাময়িকী সাপ্তাহিক কিরানু'স-সা'দাইন চালু করেন।
কলেজের আরেকজন গুরুত্বপূর্ণ প্রাক্তন শিক্ষার্থী ছিলেন মোহন লাল কাশ্মীরি, যিনি একজন কূটনীতিক, লেখক এবং ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির কর্মী ছিলেন।[৭]
১৯৭৫ সালে প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সরকার কলেজটির নাম পরিবর্তন করে ডঃ জাকির হোসেনের নামে “জাকির হোসেন কলেজ” রাখে, যিনি একজন বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ এবং ভারতের রাষ্ট্রপতি ছিলেন।
পরবর্তীতে, ১৯৮৬ সালে কলেজটি তুর্কমান গেটের বাইরে অবস্থিত বর্তমান ভবনে স্থানান্তরিত হয়, যেখানে এখনও মাদ্রাসা গাজিউদ্দিন কমপ্লেক্সের পুরনো কাঠামোতে ছাত্রাবাস রয়েছে।
২০০২ সালে ভারতের প্রত্নতত্ত্ব সর্বেক্ষণ এটিকে একটি ঐতিহ্যবাহী স্মৃতিস্তম্ভ হিসেবে ঘোষণা করে। এরপর ২০০৮ সালে কলেজের লাইব্রেরিতে প্রতিষ্ঠানের ইতিহাস নিয়ে একটি আলাদা সংরক্ষণাগার স্থাপন করা হয়, যেখানে শতাব্দীপ্রাচীন বই এবং নথিপত্র প্রদর্শিত হয়, যা এই প্রতিষ্ঠানের ৩০০ বছরের দীর্ঘ ঐতিহ্যের বিবরণ তুলে ধরে।
শাসনব্যবস্থা
[সম্পাদনা]জাকির হোসেন দিল্লি কলেজ ১৯৭৫ সাল থেকে জাকির হোসেন মেমোরিয়াল ট্রাস্ট দ্বারা পরিচালিত হচ্ছে।[৮][৩]
মির্জা মেহমুদ বেগ লাইব্রেরি ও বুক ব্যাংক
[সম্পাদনা]কলেজটির লাইব্রেরিতে প্রায় ১,১৮,৪৬২টি বই রয়েছে। এটি খোলা তাক পদ্ধতিতে পরিচালিত হয়, তবে কিছু গুরুত্বপূর্ণ পাঠ্যবই সংরক্ষিত অংশে রাখা হয়। এই লাইব্রেরি কেবল একাডেমিক চাহিদা পূরণ করে না, বরং অবসরে পাঠ ও সাধারণ জ্ঞানের জন্য বইও সরবরাহ করে। কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ মির্জা মেহমুদ বেগের নামে এর নামকরণ করা হয়েছে।
সালমান গণি হাশমি অডিটোরিয়াম
[সম্পাদনা]কলেজে ৪১৭ আসনের একটি অডিটোরিয়াম রয়েছে, যেখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, বক্তৃতা এবং কলেজের বার্ষিক অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়। অডিটোরিয়ামটির নামকরণ করা হয়েছে প্রাক্তন অধ্যক্ষ সালমান গণি হাশমির নামে।
কলেজ আর্কাইভ
[সম্পাদনা]এম. এম. বেগ লাইব্রেরির একটি অংশে অবস্থিত দিল্লি কলেজ আর্কাইভস ২০০৮ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি উদ্বোধন করেন ইন্ডিয়ান কাউন্সিল অফ হিস্টোরিক্যাল রিসার্চ-এর চেয়ারম্যান অধ্যাপক সব্যসাচী ভট্টাচার্য।
এই আর্কাইভে ১৮২৩ সাল থেকে দিল্লি ও উত্তর ভারতে উচ্চশিক্ষার বিকাশ এবং কলেজ সম্পর্কিত বহু নথি ও ফাইল সংরক্ষিত রয়েছে। এসব নথি ভারতের জাতীয় আর্কাইভ ও দিল্লি আর্কাইভে রক্ষিত ছিল এবং গত কয়েক বছরে সেগুলোর বিশ্লেষণ করা হয়েছে।
এখানে কলেজের শিক্ষক ও প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের উর্দু, ফার্সি এবং ইংরেজিতে লেখা মূল রচনাও রয়েছে। এছাড়া উনিশ শতকে গণিত, ইতিহাস, ভূগোল, দর্শন ও সাহিত্যসহ নানা বিষয়ে ব্যবহৃত বা প্রস্তুতকৃত পাঠ্যপুস্তকও প্রদর্শিত হয়। আর্কাইভটিতে দিল্লি কলেজ এবং আঠারো ও উনিশ শতকে দিল্লি অঞ্চলে বৌদ্ধিক পুনরুত্থান সম্পর্কিত গৌণ উৎস ও বইও সংরক্ষিত আছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- 1 2 3 Firoz Bakht Ahmad (৩১ ডিসেম্বর ২০০৩)। "Anglo Arabic School: an academic legacy of the Mughals"। The Milli Gazette (newspaper)। সংগ্রহের তারিখ ১২ জানুয়ারি ২০১৮।
- ↑ "Plan of Delhi and its environs," by Edward Weller, for the "Weekly Dispatch," published in 1857, Retrieved 12 January 2018
- 1 2 "Zakir Husain College of Delhi will change its name"। TwoCircles.net website। ২১ ডিসেম্বর ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০২০।
- ↑ The Delhi College Traditional Elites, the Colonial State, and Education before 1857, The Madrasa of Ghaziu'd-Din Khan at Delhi, Ebba Koch
- ↑ Please provide a proper attribution for the quote.
- ↑ Gail Minault। "Master Ramchandra of Delhi College: Teacher, Journalist, and Cultural Intermediary (Annual of Urdu Studies vol. 18, 2003)"। সংগ্রহের তারিখ ৭ মার্চ ২০২০।
- ↑ Newell, Richard S. (১৯৮০)। "Book Review: Life of Amir Dost Mohammed Khan of Kabul. By Mohan Lal. With a new introduction by Nancy Hatch Dupre."। The Journal of Asian Studies। ৩৯: ৪২১। ডিওআই:10.2307/2054345। জেস্টোর 2054345।
- ↑ উদ্ধৃতি ত্রুটি:
<ref>ট্যাগ বৈধ নয়;TOIনামের সূত্রটির জন্য কোন লেখা প্রদান করা হয়নি
