জলদানব আরাপাইমা
| জলদানব আরাপাইমা | |
|---|---|
| বেইজিং অ্যাকোয়ারিয়ামে Arapaima gigas | |
| বৈজ্ঞানিক শ্রেণীবিন্যাস | |
| জগৎ/রাজ্য: | অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) |
| পর্ব: | কর্ডাটা (Chordata) |
| শ্রেণি: | অ্যাক্টিনোটেরিগি (Actinopterygii) |
| বর্গ: | Osteoglossiformes |
| পরিবার: | Osteoglossidae |
| গণ: | Arapaima (Schinz, 1822) |
| প্রজাতি: | A. gigas |
| দ্বিপদী নাম | |
| Arapaima gigas (Schinz, 1822) | |
| প্রতিশব্দ[৩] | |
| |
জলদানব আরাপাইমা (Arapaima gigas) দক্ষিণ আমেরিকার আমাজন নদী অববাহিকার একটি বৃহৎ স্বাদুপানির মাছ। এটি আরাপাইমার সবচেয়ে বড় প্রজাতি। এটি বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ স্বাদুপানির মাছ, যাদের দৈর্ঘ্য সাধারণত ২ মিটার পর্যন্ত হতে পারে, যদিও এদের দৈর্ঘ্য ব্যতিক্রমীভাবে সাড়ে ৪ মিটার পর্যন্ত হওয়ার সংবাদ পাওয়া গেছে। এদের ওজন ২০০ কেজি পর্যন্ত হতে পারে[৪]। এই মাছটি বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে, যা কম অক্সিজেনযুক্ত পানিতে বেঁচে থাকার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
শ্রেণিবিন্যাস
[সম্পাদনা]জলদানব আরাপাইমা (Arapaima gigas) হল Arapaimidae পরিবারভুক্ত একটি স্বাদুপানির মাছ। এটি Arapaima গণের অন্তর্ভুক্ত, যা দক্ষিণ আমেরিকার আদিবাসী একটি মাছের দল। প্রথমে Arapaima gigas-কেই এই গণের একমাত্র প্রজাতি হিসেবে বিবেচনা করা হতো। পরে আরও গবেষণার মাধ্যমে জানা যায় যে, এই গণে আরও কয়েকটি প্রজাতি রয়েছে, যেমন Arapaima leptosoma, Arapaima mapae এবং Arapaima agassizii।
শারীরিক গঠন
[সম্পাদনা]জলদানব আরাপাইমার দেহ লম্বাটে ও টর্পেডোর মতো আকৃতির। এর শরীরের রঙ ধূসর থেকে সবুজাভ, এবং লেজের দিকে লালচে দাগ থাকে। পুরুষ মাছের শরীরে যৌন পরিপক্বতার পর লালচে রঙ দেখা যায়, যা মোট দেহের প্রায় ৭০% পর্যন্ত হতে পারে। এই মাছের আঁশগুলো শক্ত ও খাঁজযুক্ত, যা পিরানহার মতো শিকারিদের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা দেয়।
কৃত্রিম পরিবেশে আবদ্ধ অবস্থায় এরা ১৫ হতে ২০ বছর পর্যন্ত বাচে।[৫]
শ্বাস-প্রশ্বাস
[সম্পাদনা]এই প্রজাতির মাছ ফুলকা ছাড়াও একটি বিশেষ অঙ্গের মাধ্যমে বাতাস থেকে অক্সিজেন গ্রহণ করতে পারে। এই অঙ্গটি রক্তনালিতে সমৃদ্ধ এবং মুখের সঙ্গে সংযুক্ত, যা কম অক্সিজেনযুক্ত পানিতে বেঁচে থাকার জন্য সহায়ক। তারা প্রতি ৫ থেকে ১৫ মিনিটে একবার পানির উপরে উঠে বাতাস গ্রহণ করে।
বাসস্থান ও বিস্তার
[সম্পাদনা]জলদানব আরাপাইমা মূলত আমাজন ও টোকান্টিনস-আরাগুয়াইয়া নদী অববাহিকায় পাওয়া যায়। তবে, এটি পেরু, বলিভিয়া, ইকুয়েডর, কলম্বিয়া এবং গায়ানার কিছু অঞ্চলেও দেখা যায়। কিছু অঞ্চলে এটি স্থানীয় প্রজাতির জন্য হুমকি হিসেবে বিবেচিত হয়।
প্রজনন ও জীবনচক্র
[সম্পাদনা]এই মাছটি সাধারণত কম পানির মৌসুমে ডিম পাড়ে। পুরুষ মাছ মুখে ডিম বহন করে এবং স্ত্রী মাছ চারপাশে ঘুরে শিকারিদের দূরে রাখে। একটি প্রজনন চক্রে স্ত্রী মাছ প্রায় ৫০০টি ডিম পাড়ে।
মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক
[সম্পাদনা]জলদানব আরাপাইমা স্থানীয় জনগণের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ খাদ্য উৎস। এর মাংস লবণ দিয়ে সংরক্ষণ করে দীর্ঘ সময় রাখা যায়। এছাড়া, এর আঁশ ও জিভ স্থানীয়ভাবে বিভিন্ন কাজে ব্যবহৃত হয়।
সংরক্ষণ
[সম্পাদনা]অতিরিক্ত শিকার ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এই প্রজাতির সংখ্যা হ্রাস পেয়েছে। তবে, কিছু অঞ্চলে টেকসই ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে এর সংখ্যা পুনরুদ্ধার হয়েছে। বর্তমানে এটি IUCN-এর "Data Deficient" তালিকায় রয়েছে এবং CITES-এর Appendix II-তে অন্তর্ভুক্ত।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ "Arapaima gigas"। IUCN Red List of Threatened Species। International Union for Conservation of Nature। ২০১৭। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২৫।
- ↑ "Appendices"। CITES.org। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২৫।
- ↑ "Arapaima gigas"। FishBase। সংগ্রহের তারিখ ১২ এপ্রিল ২০২৫।
- ↑ Marková, Jana; Jerikho, Rikho; Wardiatno, Yusli; Kamal, Mohammad Mukhlis; Magalhães, André Lincoln Barosso; Bohatá, Lucie; Kalous, Lukáš; Patoka, Jiří (২০২০)। "Conservation paradox of giant arapaimaArapaima gigas(Schinz, 1822) (Pisces: Arapaimidae): endangered in its native range in Brazil and invasive in Indonesia"। Knowledge & Management of Aquatic Ecosystems (421): ৪৭। ডিওআই:10.1051/kmae/2020039। আইএসএসএন 1961-9502।
- ↑ "Arapaima gigas (arapaima)"। CABI Compendium। ২২ নভেম্বর ২০১৯। সংগ্রহের তারিখ ১১ এপ্রিল ২০২৫।