জয়বাণ কামান
জয়বাণ কামান (হিন্দি:जयबाण तोप) ভারতের রাজস্থানের জয়গড় দুর্গে সংরক্ষিত অষ্টাদশ শতকের এক বৃহদাকৃতির কামান। ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে তৈরির সময়, এটি ছিল প্রারম্ভিক আধুনিক যুগের চাকায় বসানো বিশ্বের বৃহত্তম কামান। [১]
আরাবল্লী পাহাড়ে জয়গড় দুর্গের ডুংরি গেটে অবস্থিত এই কামানটি বর্তমানে এশিয়ার বৃহত্তম এবং সবচেয়ে ভারী কামান। দুর্গের নাম অনুসারেই কামানটির নামকরণ করা হয়।[২] এটির বর্তমান ভৌগলিক অবস্থান হল-২৬°৫৮′৪৮.০৩″ উত্তর ৭৫°৫০′৩৭.২৯″ পূর্ব / ২৬.৯৮০০০৮৩° উত্তর ৭৫.৮৪৩৬৯১৭° পূর্ব
ইতিহাস
[সম্পাদনা]জয়পুরের মহারাজা দ্বিতীয় সওয়াই জয় সিং (১৬৯৯-১৭৪৩) এর রাজত্বকালে জয়গড় দুর্গের এক ফাউন্ড্রিতে জয়বাণ কামান তৈরি করা হয়েছিল। তবে আমেরের রাজপুত শাসকদের সঙ্গে মুঘলদের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক থাকায় কামানটি কোন যুদ্ধে ব্যবহার করা হয়নি।[৩]১০০ কিলোগ্রাম (২২০ পাউন্ড) গানপাউডারের চার্জ সহ কামানটি শুধুমাত্র একবারই নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং গুলিটি প্রায় ৩৫ কিলোমিটার (২২ মাইল) দূরত্ব অতিক্রম করে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।[৪] কামান থেকে নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্র চাকসুতে একটি ছোট হ্রদ তৈরি করেছিল।
প্রযুক্তিগত তথ্য
[সম্পাদনা]- কামানের ব্যারেলের দৈর্ঘ্য ৬.১৫ মিটার (২০.২ ফুট) এবং এর ওজন ৫০ টন।
- ব্যারেলের অগ্রভাগের কাছে পরিধি হল ২.২ মিটার (৭.২ ফুট) এবং পিছনের পরিধি হল ২.৮ মিটার (৯.২ ফুট)। ব্যারেলের বোরের ব্যাস ২৮ সেমি (১১ ইঞ্চি) এবং ডগায় বা সামনের দিকে ব্যারেলের ২১.৬ সেমি (৮.৫ ইঞ্চি) পুরু। ব্যারেলের পিছনের দিকে বেধ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি প্রাপ্ত হয়। ব্যারেলে লাগানো দুটি মোটা রিং রয়েছে যার দ্বারা ক্রেনের সাহায্যে এটিকে তুলতে ব্যবহার করা হয়েছিল। ব্যারেলটিকে কমানো বা বাড়ানোর জন্য ৭৭৬ মিলিমিটার লম্বা (৩০.৬ ইঞ্চি) এলিভেটিং স্ক্রুর ব্যবহার করা হত।
- ব্যারেলটির উপর ফুলের নকশা রয়েছে। ব্যারেলের অগ্রভাগে বিশ্রামরত একটি হাতি এবং কেন্দ্রে এক জোড়া ময়ূর খোদাই করা আছে। ব্যারেলের পিছনে খোদাইয়ে দৃশ্যমান এক জোড়া হাঁস।
- জয়বাণ কামান একটি উঁচু দুই চাকার গাড়িতে বসানো হয়। গাড়ির চাকার ব্যাস ১.৩৭ মিটার (৪.৫ ফুট)। গাড়িটি পরিবহনের জন্য দুটি অপসারণযোগ্য অতিরিক্ত চাকা দিয়ে সজ্জিত। অপসারণযোগ্য চাকার ব্যাস ২.৭৪ মি (৯.০ ফুট)। কামানটিকে চাকার উপর এমন ভাবে বসানো হয়েছে যাতে পিছনের চাকায় লাগানো রোলার পিন বিয়ারিং মেকানিজমে এটিকে ৩৬০° পর্যন্ত ঘোরানো যায় এবং যেকোনো দিক থেকে আগুন লাগানো সম্ভব হয়।
কিংবদন্তি
[সম্পাদনা]জয়বাণ কামানটি ১৭২০ খ্রিস্টাব্দে দ্বিতীয় জয় সিং কর্তৃক শুধুমাত্র একবার পরীক্ষামূলক নিক্ষেপ করা হয়েছিল এবং তা ঘটেছিল তৎকালীন মুঘল সম্রাট মুহাম্মদ শাহ সৈয়দ ব্রাদার্সকে ক্ষমতা থেকে উৎখাত করার আগে। অতিরঞ্জিত মিথ হিসাবে আরো কথিত আছে যে, নিক্ষিপ্ত ক্ষেপণাস্ত্রটির জন্য চাকসুতে একটি ছোট হ্রদ সৃষ্টি হয়। এমনকি এর শক্তিশালী প্রভাবের কারণে কাছাকাছি বসবাসকারী গর্ভবতী মহিলারা গর্ভপাতের শিকার হন।[৫] বিজয়াদশমীর দিন এই কামানের বিশেষ পূজা করা হয়।[২]
আরো দেখুন
[সম্পাদনা]- জার কামান
- ক্যালিবার অনুসারে বৃহত্তম কামানের তালিকা
- দ্য প্রাইড অ্যান্ড দ্য প্যাশন,১৯৫৭ খ্রিস্টাব্দের কাল্পনিক ঐতিহাসিক ফিল্ম ড্রামা যেখানে একটি বৃহৎ অবরোধের কামান রয়েছে যার প্রায় অভিন্ন গাড়ি এবং একই আকারের ব্যারেল রয়েছে।
তথ্যসূত্র
[সম্পাদনা]- ↑ Pippa de Bruyn; Keith Bain; David Allardice; Shonar Joshi (১ মার্চ ২০১০)। Frommer's India। Frommer's। পৃষ্ঠা 521–522। আইএসবিএন 978-0-470-55610-8। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ ক খ "एशिया की सबसे बड़ी तोप, जो इतिहास में चली एक बार और बना दिया तालाब (হিন্দিতে)"। সংগ্রহের তারিখ ২০২৪-০২-১১।
- ↑ "Jaigarh Fort – Jaipur, India"। cs.utah.edu। ১১ মার্চ ২০১৪ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৪ এপ্রিল ২০১১।"Jaipur"। Jaipur.org.uk। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "Jaigarh Fort – Jaipur"। Jaipurhub.com। ১৩ জুলাই ২০১১ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১১। David Abram (১৫ ডিসেম্বর ২০০৩)। Rough guide to India। Rough Guides। পৃষ্ঠা 161। আইএসবিএন 978-1-84353-089-3। সংগ্রহের তারিখ ১৬ এপ্রিল ২০১১।
- ↑ "Efforts on to restore foundry that built world's largest cannon on wheels in Jaipur"। India Today (ইংরেজি ভাষায়)। সংগ্রহের তারিখ ২০১৮-১১-২৫।