জয়ন্তীয়া রাজ্য

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জয়ন্তীয়া রাজ্য

১৫০০–১৮৩৫
বেংগল গেজেটারে খাসি ও জয়ন্তীয়া পাহাড়, ১৯০৭
বেংগল গেজেটারে খাসি ও জয়ন্তীয়া পাহাড়, ১৯০৭
রাজধানীজয়ন্তীয়া রাজবাড়ি, জয়ন্তীপুর
ধর্ম
হিন্দু ধর্ম
সরকাররাজতন্ত্র
• (১৫০০-১৫১৬)
প্রভাত রায়
• (১৮৩২-১৮৩৫)
রাজেন্দ্র সিং
ইতিহাস 
• প্রতিষ্ঠা
১৫০০
• বিলুপ্ত
১৮৩৫
উত্তরসূরী
ভারতে কোম্পানী শাসন

জয়ন্তীয়া রাজ্য বর্তমান উত্তর-পূর্ব ভারতের একটি রাজ্য ছিল। আনুমানিক পঞ্চদশ শতকে প্রভাত রায় নামক এক রাজা এই রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। যষ্ঠদশ শতকে চিলারায় আক্রমণ করে জয়ন্তীয়া রাজাকে হত্যা করেন এবং রাজ্যটি কোচের অন্তর্গত করেন। ১৮৩৫ সালে এই রাজ্য ইংরেজ শাসিত অঞ্চলে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।

নামর উৎপত্তি[সম্পাদনা]

কারো কারোর মতে "জয়ন্তীয়া" শব্দটি হিন্দু দেবী দুর্গার রূপ জয়ন্তী দেবী বা জয়ন্তেশ্বরীর থেকে এসেছে। কিছুজনের মতে, শব্দটি নার (শাসকদের জাতি) শব্দ পূর্বের স্থান চুটনুগার থেকে এসেছে। জয়ন্তীয়া দেবীর কিংবদন্তি সম্ভবত জয়ন্তীয়া রাজ্যে হিন্দু প্রভাবের পর সৃষ্টি হয়েছে।[১]

নার (জয়ন্তীয়া) এবং বার লোকরা খাসির সঙ্গে সম্পর্ক থাকা মন-মার ভাষা বলে।

বিস্তৃতি[সম্পাদনা]

জয়ন্তীয়া রাজ্য বর্তমান মেঘালয়ের শিলং মালভূমির পূর্ব থেকে দক্ষিণের সমতল পর্যন্ত , এবং উত্তরে অসমের বরাক নদীর উপত্যকা পর্যন্ত বিস্তৃত ছিল।

বর্তমান ধ্বংসপ্রাপ্ত রাজধানী জয়ন্তীপুর জয়ন্তীয়া পাহাড়ের নিচের সমতলে ছিল। সম্ভবতঃ জয়ন্তীয়া পাহাড়ে একটি সেকালের রাজধানীও ছিল, কিন্তু সেখানে এখন একটি দুর্গা মন্দির এবং কিছু প্রাচীন স্মৃতিচিহ্নর বাইরে আর কিছু নেই।

বাংলাদেশের সিলেটেরও বহু অঞ্চল জয়ন্তীয়া রাজার অধীনে ছিল।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

জয়ন্তীয়া রাজ্যর শুরুর ইতিহাস স্পষ্ট নয়। অনুমান করা মতে, প্রায় পঞ্চদশ শতকে প্রভাত রায় নামের একজন রাজা এই রাজ্য স্থাপন করেছিলেন। সপ্তদশ শতকের প্রারম্ভে ধন মাণিক নামক জয়ন্তীয়া রাজাকাছাড়ির সঙ্গে যুদ্ধে পরাস্ত হয়ে অহোম রাজা প্রতাপ সিংহর সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপন করে এবং আহোমের সংগে সংগে কাছাড়ি রাজ্য আক্রমণ করে। ধন মাণিকের পর ক্রমে যশ মাণিক, সুন্দর রায়, ছোট পর্বত রায়, যশোমন্ত রায় রাজা হন। যশোমন্ত রায় আহোম স্বর্গদেউ চুত্যিণ্‌ফা বা প্রতাপ সিংহর (১৬৪৪-১৬৪৮) সমসাময়িক ছিলেন। আহোম রাজা চক্রধ্বজ সিংহের সময়ে যশোমন্ত রায় ডিমরুয়াা, গোভা, নেলী এবং খলা রাজ্য জয়ন্তীয়াকে ঘুরিয়ে দিতে হবে বলে দাবী জানান। এর পর দুই রাজ্যের মিত্রতার অন্ত হয়।[২]

ব্রিটিশ অঞ্চলে অন্তর্ভুক্তি[সম্পাদনা]

১৭৬৫ সালে বংগের দেওয়ানির মাধ্যমে ব্রিটিশরা প্রথম জয়ন্তীয়াদের সংস্পর্শে আসে। জয়ন্তীয়াগণ বংগ অঞ্চল পর্যন্ত চূণ রপ্তানি করত। কিন্তু ব্রিটিশদের সঙ্গে তাদের সম্পর্ক মধুর ছিল না এবং ১৭৭৪ সালে তারা আক্রমণের সন্মুখীন হয়। এর পর কোঠ এবং ১৭৯৯ সালের আইনর মাধ্যমে জয়ন্তীয়াগণ ভৈয়াম থেকে ক্রমে পৃথক হয়ে পড়ে।

প্রথম ইংগো বর্মী যুদ্ধর শেষে ব্রিটিশরা জয়ন্তীয়া রাজা রাম সিঙকে সুরমা নদীর উত্তরে শাসন করতে অনুমতি দেয়। ১৮৩৫ সালের ১৫ মার্চে জয়ন্তীয়া রাজ্য আনুষ্ঠানিকভাবে ব্রিটিশের অধীনে আনা হয়। রাজাকে সিলেটের সম্পত্তির সঙ্গে মাসে ৫০০ টাকা করে দেয়া হয়। ব্রিটিশরা ভৈয়ামর অঞ্চল প্রত্যক্ষভাবে শাসন করত। পার্বত্য অঞ্চলের জন্য পনেরোজন দলৈ এবং চারজন সর্দার নিযুক্ত করা হয়েছিল।[৩]

শাসকগণ[সম্পাদনা]

জয়ন্তীয়া রাজ্য শাসন করা রাজাদের তালিকা নিচে দেওয়া হ'ল।[৪]

  • প্রভাত রায় (১৫০০-১৫১৬)
  • মাজু গোসাঁই (১৫১৬-১৫৩২)
  • বুঢ়া পর্বত রায় (১৫৩২-১৫৪৮)
  • বর গোসাঁই (১৫৪৮-১৫৬৪)
  • বিজয় মাণিক (১৫৬৪-১৫৮০)
  • প্রতাপ রায় (১৫৮০-১৫৯৬)
  • ধন মাণিক (১৫৯৬-১৬১২)
  • যশ মাণিক (১৬১২-১৬২৫)
  • সুন্দর রায় (১৬২৫-১৬৩৬)
  • ছোট পর্বত রায় (১৬৩৬-১৬৪৭)
  • যশোমন্ত রায় (১৬৪৭-১৬৬০)
  • বান সিং (১৬৬০-১৬৬৯)
  • প্রতাপ সিং (১৬৬৯-১৬৭৮)
  • লক্ষ্মী নারায়ণ (১৬৭৮-১৬৯৪)
  • রাম সিং প্রথম (১৬৯৪-১৭০৮)
  • জয় নারায়ণ (১৭০৮-১৭৩১)
  • বর গোসাঁই (১৭৩১-১৭৭০)
  • ছত্র সিং (১৭৭০-১৭৮০)
  • বিজয় নারায়ণ (১৭৮০-১৭৯০)
  • রাম সিং দ্বিতীয় (১৭৯০-১৮৩২)
  • রাজেন্দ্র সিং (১৮৩২-১৮৩৫)

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. Soumen Sen (২০০৪)। Khasi-Jaintia folklore: context, discourse, and history। NFSC। পৃষ্ঠা 56। আইএসবিএন 978-81-901481-3-9। সংগ্রহের তারিখ ২ ডিসেম্বর ২০১১ 
  2. কৌশিক বরুয়া, শান্তনু (২০১৫)। অসম ইয়ার বুক ২০১৬। গুয়াহাটী: জ্যোতি প্রকাশন। পৃষ্ঠা ২৩৫। 
  3. Gait, E. A. (১৯০৬)। A History of Assam। Calcutta: Thacker, Spink & Co। পৃষ্ঠা 302 
  4. "Far East Kingdoms: Jayantia kingdom"। Academia.edu। সংগ্রহের তারিখ ২৪ আগস্ট ২০১৭