জন শাটার

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
জন শাটার
১৮৯৭ সালের সংগৃহীত স্থিরচিত্রে জন শাটার
ব্যক্তিগত তথ্য
পূর্ণ নামজন শাটার
জন্ম৯ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৫
থর্নটন হিদ, সারে, ইংল্যান্ড
মৃত্যু৫ জুলাই, ১৯২০
ব্ল্যাকহিদ, লন্ডন, ইংল্যান্ড
উচ্চতা৫ ফুট ৬ ইঞ্চি (১.৬৮ মিটার)
ব্যাটিংয়ের ধরনডানহাতি
ভূমিকাব্যাটসম্যান
আন্তর্জাতিক তথ্য
জাতীয় দল
একমাত্র টেস্ট
(ক্যাপ ৫৮)
১৩ আগস্ট ১৮৮৮ বনাম অস্ট্রেলিয়া
খেলোয়াড়ী জীবনের পরিসংখ্যান
প্রতিযোগিতা টেস্ট এফসি
ম্যাচ সংখ্যা ৩০৬
রানের সংখ্যা ২৮ ১০,২০৬
ব্যাটিং গড় ২৮.০০ ২১.২৬
১০০/৫০ ০/০ ৮/৪৯
সর্বোচ্চ রান ২৮ ১৩৫
বল করেছে ৪৪
উইকেট
বোলিং গড় - -
ইনিংসে ৫ উইকেট
ম্যাচে ১০ উইকেট
সেরা বোলিং - -
ক্যাচ/স্ট্যাম্পিং ০/০ -
উৎস: ইএসপিএনক্রিকইনফো.কম, ৩০ অক্টোবর ২০১৯

জন শাটার (ইংরেজি: John Shuter; জন্ম: ৯ ফেব্রুয়ারি, ১৮৫৫ - মৃত্যু: ৫ জুলাই, ১৯২০) সারের থর্নটন হিদ এলাকায় জন্মগ্রহণকারী ইংরেজ আন্তর্জাতিক ক্রিকেটার ছিলেন। ইংল্যান্ড ক্রিকেট দলের অন্যতম সদস্য ছিলেন তিনি। ১৮৮৮ সালে সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্যে ইংল্যান্ডের পক্ষে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে অংশগ্রহণ করেছেন।

ঘরোয়া প্রথম-শ্রেণীর ইংরেজ কাউন্টি ক্রিকেটে কেন্টসারে দলের প্রতিনিধিত্ব করেন। দলে তিনি মূলতঃ ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন।

প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেট[সম্পাদনা]

১৮৭৪ সাল থেকে ১৮৮৮ সাল পর্যন্ত জন শাটারের প্রথম-শ্রেণীর খেলোয়াড়ী জীবন চলমান ছিল। জন শাটার মূলতঃ ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলতেন। অফের দিকেই অধিকতর স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করতেন।

সারের থর্নটন হিদে জন্মগ্রহণকারী জন শাটার কাঠ ব্যবসায়ী লিওয়ার্ড শাটার ও ক্যারোলিন দম্পতির সন্তান ছিলেন। উইনচেস্টার কলেজে অধ্যয়ন করেন তিনি। এ সময়েই ১৮৭১ থেকে ১৮৭৩ সাল পর্যন্ত প্রথম একাদশে খেলতেন। জন্মগতভাবে সারে এলাকার হলেও বেক্সলিতে ক্লাব ক্রিকেটে অংশ নিতেন। এক পর্যায়ে কেন্ট দলের পক্ষে আবাসকালীন খেলার যোগ্যতা লাভ করেন। ১৮৭৪ সালে একটি খেলায় অংশ নেন। এরপর কেন্ট দলের বাইরে অবস্থান করতে হয়।

১৮৭৭ সালে নিজ কাউন্টিতে প্রথম খেলেন। ঐ বছর তিনটি খেলায় অংশ নেন। ১৮৭৮ সালে সম্মুখসারিতে ব্যাটিং করার ন্যায় সময়োচিত সিদ্ধান্ত নেন। নিজের জাত চেনান এবং কাউন্টি দলের শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানের মর্যাদা পান। তৎকালে হোভে খসড়া পিচে সাসেক্স দলের বিপক্ষে সেঞ্চুরি করার গৌরব অর্জন করেন।

১৮৮০ সালে দলের অধিনায়ক হিসেবে নিযুক্ত হন তিনি। শুরুরদিকের তার এই স্থানান্তর ধীরগতিতে ছিল ও ১৮৮৩ সাল থেকে সারে দল গভীর সঙ্কটে নিপতিত ছিল। এ সময়েই সারে দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যানের মর্যাদাপ্রাপ্ত হন। তবে, ১৮৭৯ সাল থেকে বেশ কয়েকবার জেন্টলম্যানের সদস্যরূপে প্লেয়ার্সের বিপক্ষে নিজেকে মেলে ধরতে ব্যর্থতার পরিচয় দেন। ১৮৮২ থেকে ১৮৮৭ সালে পর্যন্ত শাটার তার সেরা মৌসুমগুলো অতিবাহিত করেন। তবে তিনি কখনো এক মৌসুমে সহস্র রানের সন্ধান পাননি।

অধিনায়কত্ব লাভ[সম্পাদনা]

১৮৮৭ সালে সারে দলকে প্রথমবারের মতো নেতৃত্ব দেন। পরবর্তী পাঁচ বছরে সন্দেহাতীতভাবে সারে দল স্বর্ণালী সময়ে অতিবাহিত করেছিল। ১৮৮৮ সালে ল্যাঙ্কাশায়ারনটিংহ্যামশায়ারের সাথে যৌথভাবে শিরোপা লাভ করে তার দল। এরপর, ১৮৯০ থেকে ১৮৯২ সাল পর্যন্ত একাধারে শিরোপা বিজয় করে সারে ক্লাব। শেষ বছরে অধিনায়কের দায়িত্বে থেকে ব্যাট হাতে নিয়ে দূর্দান্ত খেলেন। ১৮৭৩ সালে ৫২ রানের সুন্দর ইনিংস খেললেও কেবলমাত্র ১৮৭১ সালেই বিজয়ী দলে ছিলেন।

১৮৯০ সালে আনুষ্ঠানিকভাবে কাউন্টি চ্যাম্পিয়নশীপ প্রবর্তনকালে শিরোপা জয়ী সারে দলের অধিনায়কের দায়িত্বে ছিলেন। শীর্ষ পর্যায়ের কাউন্টি দলরূপে আবির্ভূত হতে লোহম্যানের বোলিংয়ের উপর অনেকাংশেই নির্ভরশীল ছিল। ১৮৮৫ থেকে ১৮৯১ সাল পর্যন্ত একাধারে সাত বছর প্রথম-শ্রেণীর ক্রিকেটে শীর্ষ উইকেট শিকারি ছিলেন লোহম্যান। এছাড়াও, ঐ সময়ে দলে জন শার্পউইলিয়াম লকউডের ন্যায় তারকা বোলার দলকে প্রয়োজনীয় সহায়তা করেছিলেন।

১৮৮৬ সালে অস্ট্রেলীয় একাদশের বিপক্ষে দ্বৈত জয়ে নটসের সাথে সারে দলও যুক্ত হয়। ১৮৮৭ সালে পূর্ণ শক্তিধর দলে পরিণত হয় ও ১৮৬৪ সালের পর প্রথমবারের মতো শীর্ষস্থানে পৌঁছে তার দল। পাশাপাশি ডব্লিউ ডব্লিউ রিডের ব্যাটিংও দলের সাফল্যকে স্ফীত করে তোলে।

১৮৯০ সালে একবারই পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছিলেন। তখনই স্পষ্ট হয়ে যায় যে, তিনি তার সেরা সময়গুলো ফেলে এসেছেন। তাসত্ত্বেও, সারে দলের অধিনায়ক হিসেবে ১৮৯৩ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেছিলেন তিনি। ববি অ্যাবল ও অন্যান্য শীর্ষসারির ব্যাটসম্যানের ব্যর্থতায় নয়টি কাউন্টি দলের মধ্যে প্রথম থেকে ষষ্ঠ স্থানে দল চলে গেলে তিনি দায়িত্ব পালন থেকে সড়ে আসেন। ঐ মৌসুমে ৪৪ রানের বেশি কোন ইনিংসে করতে পারেননি। এছাড়াও ব্যবসায়িক দায়বদ্ধতার কারণে অধিনায়কের দায়িত্ব থেকে দূরে সরে আসতে বাধ্য হন। ১৮৯৩ সালের পর দল দূর্বলতর হতে থাকলেও অস্ট্রেলীয়দের বিপক্ষে উভয় খেলাতেই জয় পায়। তার পরিবর্তে কে. জে. কী স্থলাভিষিক্ত হন ও নতুন নেতৃত্ব গুণে ১৮৯৪, ১৮৯৫ ও ১৮৯৯ সালে দলকে চ্যাম্পিয়নশীপের শিরোপা এনে দেন।

আন্তর্জাতিক ক্রিকেট[সম্পাদনা]

সমগ্র খেলোয়াড়ী জীবনে একটিমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ করেছেন।[১] ১৩ আগস্ট, ১৮৮৮ তারিখে ওভালে সফরকারী অস্ট্রেলিয়া দলের বিপক্ষে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক ঘটে তার। এরপর আর কোন টেস্টে অংশগ্রহণ করেননি তিনি। নিজ শহরে এটিই তার একমাত্র টেস্টে অংশগ্রহণ ছিল।

খেলোয়াড়ী জীবনের শেষদিকে কিছুটা মেলে ধরার চেষ্টা চালান। ওভালে সফররত অস্ট্রেলীয় একাদশের ফ্রেড স্পফোর্থের বিপক্ষে ৩৯ রানের ইনিংস খেলেন। সফরকারী দল থেকেও তার ব্যাটিংয়ের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করা হয় ও ইংল্যান্ডের সেরা ব্যাটসম্যানের স্বীকৃতি দেয়া হয়। এরপর ১৯০৯ সালে চুয়ান্ন বছর বয়সে সারের সদস্যরূপে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের বিপক্ষে প্রথম-শ্রেণীর খেলায় অংশ নেন। ঐ দলে বিল হিচের সাথে তার বয়সের পার্থক্য ছিল একত্রিশ বছর।

অবসর[সম্পাদনা]

ক্রিকেট খেলা থেকে অবসর গ্রহণের দীর্ঘদিন পর ১৯১২ সালের ত্রি-দেশীয় প্রতিযোগিতাকে ঘিরে টেস্টে দল নির্বাচকমণ্ডলীর সদস্যরূপে মনোনীত হন। ১৯১৯ সালে সারে দলের সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করলেও তা স্বল্পকালীন ছিল। ১৯২০ সালে দেহাবসানের পূর্ব-পর্যন্ত এ দায়িত্বে ছিলেন।

৫ জুলাই, ১৯২০ তারিখে ৬৫ বছর বয়সে লন্ডনের ব্ল্যাকহিদ এলাকায় নিজগৃহে মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণে জন শাটারের দেহাবসান ঘটে। মৃত্যুর পূর্ববর্তী শুক্রবার সুস্থদেহে ওভালে এসেছিলেন। আমৃত্যু সারের ক্রিকেটের সাথে নৈকট্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রেখেছিলেন।

খেলার ধরন[সম্পাদনা]

৫ ফুট ছয় ইঞ্চি উচ্চতার অধিকারী জন শাটার তুলনামূলকভাবে খাঁটো গড়নের অধিকারী হয়েও একাকী দর্শনীয় ভঙ্গীমায় প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হতেন। ব্যক্তিগত গড় কিংবা সাফল্যের দিকে মুখাপেক্ষী হতেন না। দলের জয়ের দিকেই তিনি দৃষ্টি নিবদ্ধ রাখতেন।

১৮৯০ সালে লর্ডসে এমসিসি ও অস্ট্রেলীয় একাদশের খেলায় দূর্দান্ত ক্রীড়াশৈলী প্রদর্শন করেন। এমসিসি দলের এক পর্যায়ে মাত্র ১১১ রানের জয়ের লক্ষ্যমাত্রায় সময়ের বিষয়টি মুখ্য ভূমিকা পালন করে। পঁচাশি মিনিট বাকী থাকাবস্থায় ডব্লিউ. জি. গ্রেস, জন শাটারকে নিয়ে মাঠে নামেন। চার্লস টার্নারজে. জে. ফেরিসের বোলিং আক্রমণ রুখে দিয়ে পনেরো মিনিটেই ৩২ রান তুলেন। এক ঘণ্টায় খেলা শেষ হয়ে যায় ও এমসিসি সাত উইকেটে জয়লাভ করে। সর্বমোট নয়বার জেন্টলম্যান বনাম প্লেয়ার্সের খেলায় অংশ নিয়েছিলেন।

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. [১] ESPNcricinfo, ESPN, সংগ্রহের তারিখ: ১৭ অক্টোবর ২০১৯

আরও দেখুন[সম্পাদনা]

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]