চেজু দ্বীপ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চেজু দ্বীপ
স্থানীয় নাম:
제주도

ডাকনাম: সামু-সামডা-ডু (যেকোন তিন ধরনের বা অনেক তিন ধরনের দ্বীপ)
Image of Jeju Island
চেজু দ্বীপের স্যাটেলাইট চিত্র
চেজু দ্বীপের মানচিত্র
ভূগোল
অবস্থানপূর্ব এশিয়া
আয়তন১,৮২৬[১] বর্গকিলোমিটার (৭০৫ বর্গমাইল)
দৈর্ঘ্য৭৩ কিমি (৪৫.৪ মাইল)
প্রস্থ৩১ কিমি (১৯.৩ মাইল)
সর্বোচ্চ উচ্চতা১,৯৫০ মিটার (৬,৪০০ ফুট)
সর্বোচ্চ বিন্দুহালাসান
প্রশাসন
দক্ষিণ কোরিয়া
চেজু বিশেষ সায়ত্বশাসিত প্রদেশচেজু বিশেষ সায়ত্বশাসিত প্রদেশ
বৃহত্তর বসতিচেজু শহর (জনসংখ্যা ৫,০১,৭৯১)
জনপরিসংখ্যান
জনসংখ্যা৬,৯২,০৩২ (২০১৮)
জনঘনত্ব৩১৬ /বর্গ কিমি (৮১৮ /বর্গ মাইল)
ভাষাচেজু, কোরীয়
জাতিগত গোষ্ঠীসমূহকোরীয়, চীনা
চেজু দ্বীপ
হাঙ্গুল제주도
হাঞ্জা濟州島
সংশোধিত রোমানীকরণজেজুডো
ম্যাক্কিউন-রাইশাওয়াচেজুডো

চেজু দ্বীপ (কোরীয়제주도; হাঞ্জা濟州島; কোরীয় উচ্চারণ: [t͡ɕed͡ʑudo]) দক্ষিণ কোরিয়ার বৃহত্তম দ্বীপ, যা দেশটির চেজু প্রদেশে অবস্থিত৷ এই দ্বীপটি মূলত কোরিয়া প্রণালীতে অবস্থিত, কোরিয়ান উপদ্বীপ থেকে নিম্নে এবং দক্ষিণ জেলো প্রদেশের দক্ষিণে অবস্থিত৷ দ্বীপটির মধ্যে অবস্থিত চেজু আগ্নেয়গিরি ও লাভা নির্গমন নল একটি বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে পরিচিত।[২] চেজুতে সবসময় মাঝারি ধরনের জলবায়ু বিরাজ করে৷ এমনকি শীতকালেও এর তাপমাত্রা ০°সে (৩২° ফারেনহাইট) এর নিচে যায় না৷ দ্বীপটি অবসরে ছুটি কাটানোর জন্য খুবই জনপ্রিয়৷ দ্বীপটির অর্থনৈতিক অবস্থার একটি বৃহৎ অংশ পর্যটন শিল্পের উপর নির্ভরশীল।

ইতিহাস[সম্পাদনা]

তামনা রাজ্য প্রথম এই দ্বীপে রাজত্ব শুরু করে৷[৩] দ্বাদশ শতাব্দিতে কোরিয়া আক্রমণের পর, মোঙ্গলরা চেজু দ্বীপে তাদের ঘাটি স্থাপন করে৷[৪] মঙ্গোল সেনাবাহিনী পশুখাদ্যের জন্য এই দ্বীপকে চারণভূমি হিসেবে ব্যবহার শুরু করে৷ ১৫'শ সালের শুরুতে, দ্বীপটি জোসন সাম্রাজ্য দখল করে৷ এরপর প্রায় ২০০ বছর এখানে ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল এবং দ্বীপে স্থানীয় বহু গণজাগরণকে দমন করা হয়৷[৫]

চেজু গণজাগরণ[সম্পাদনা]

১৯৪৮ সালের মে মাসে, চেজু গণজাগরণের পরে কমিউনিস্টদের সমর্থনকারী সন্দেহভাজন ব্যক্তিরা মৃত্যুদন্ডের জন্য অপেক্ষা করছে

১৮৪৮ সালের ৩রা এপ্রিল থেকে ১৯৪৯ সালের মে মাস পর্যন্ত দ্বীপে সংঘটিত গণজাগরণ থামাতে দক্ষিণ কোরিয়ান সরকার কমিউনিস্ট বিরোধী ক্যাম্পেইন শুরু করে৷[৬][৭] ১৯৪৮ সালে কোরিয়ায় জাতিসংঘের অস্থায়ী কমিশন কর্তৃক আয়োজিত জাতীয় নির্বাচনই সরকার বিরোধী এই সশস্ত্র গণজাগরণের মূল কারণ ছিল ৷ চেজু দ্বীপের স্থানীয় ওয়ার্কারস দলের সদস্যারা মূলত কোরিয়া বিভক্তিকরণের বিপক্ষে ছিল ৷ যেহেতু দক্ষিণ কোরিয়াতে জাতীয় নির্বাচনের মাধ্যমে সরকার গঠন হচ্ছে যা বিভক্তিকরণকে পুনরায় বলবৎ করতে পারে, সেই ভয় থেকে ওয়ার্কারস দলের গেরিলা যোদ্ধারা স্থানীয় পুলিশ এবং ডানপন্থী দলের সদস্যদের উপর সশস্ত্র হামলা চালায়৷[৭][৮] অতঃপর এই সশস্ত্র হামলার পরে, দক্ষিণ কোরিয়ান সরকার চেজু দ্বীপে নৃশংস হত্যাকাণ্ড চালায় যার সুস্পষ্ট প্রমাণ রয়েছে৷[৭][৮][৯] মার্কিন সেনাবাহিনী প্রায় ৯৭ জন ব্যক্তির মৃতদেহ উদ্ধার করেছিল যারা সরকারী বাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছিল৷[৭] চেজুতে সংঘটিত বিদ্রোহে প্রায় ৩০,০০০ থেকে ৪০,০০০ মানুষ মৃত্যুবরণ করে যা এই দ্বীপের মোট জনসংখ্যার প্রায় ২৫ শতাংশ ছিল৷[৭][৮][৯][১০][১১] প্রায় ৪০,০০০ মানুষ জাপানে পালিয়ে যায়৷ এই নৃশংস হত্যাকাণ্ডের স্মৃতি বহুদিন ধরে ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করে সরকার৷[৯] ২০০৬ সালে কোরিয়ান সরকার এরজন্য জনগণের নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করে৷ ২০০৮ সালে চেজু আন্ত:জাতিক বিমান বন্দরের নিকটে চেজু হত্যাকাণ্ডে নিহতদের একটি গণকবর উদ্ধার করা হয়৷[১২]

ভূগোল[সম্পাদনা]

চেজু আগ্নেয়গিরিসম্পন্ন একটি দ্বীপ যার বৃহৎ অংশ হলো হলোসান৷ দক্ষিণ কোরিয়ার সর্বোচ্চ শৃঙ্গ এখানে অবস্থিত। আগ্নেয়গিরির উচ্চতা প্রায় ১,৯৫০ মিটার (৬,৪০০ ফু)৷ দ্বীপটি পূর্ব থেকে পশ্চিমে প্রায় ৭৩ কিলোমিটার (৪৫ মা) পর্যন্ত বিস্তৃত এবং উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রায় ৪১ কিলোমিটার (২৫ মা) পর্যন্ত বিস্তৃত৷[১৩]

সিনোজেনিক যুগে প্রায় ২ মিলিয়ন বছর আগে দ্বীপটিতে আগ্নেয়গিরি থেকে আগ্নুৎপাত ঘটেছিল ৷ দ্বীপটি লাভা ও ব্যাসাল্ট দ্বারা তৈরী।[১৪]

অর্থনীতি[সম্পাদনা]

পর্যটন শিল্প এই দ্বীপটির স্থানীয় অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে৷ এই দ্বীপটিকে অনেকসময় দক্ষিণ কোরিয়ার হাওয়াই বলা হয়৷ সমগ্র দক্ষিণ কোরিয়ার মত এখানেও চীনা পর্যটকদের জন্য ভিসা প্রদান করা হয় না৷

তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

  1. "Joshua Calder's World Island Info - Largest Islands of Selected Countries"। Worldislandinfo.com। সংগ্রহের তারিখ ২০১৬-০১-৩০ 
  2. "Unesco names World Heritage sites"BBC News। জুন ২৮, ২০০৭। সংগ্রহের তারিখ মে ৬, ২০১০ 
  3. "The Queen of Tamna"। ২৮ নভেম্বর ২০১৮ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০ 
  4. Henthorn, William E. (১৯৬৩)। Korea: the Mongol invasions। E.J. Brill। পৃষ্ঠা 190 
  5. Yang, Changyong; Yang, Sejung; O’Grady, William (২০১৯-১২-৩১)। Jejueo: The Language of Korea’s Jeju Island। University of Hawaii Press। পৃষ্ঠা 3। আইএসবিএন 978-0-8248-8140-5ডিওআই:10.2307/j.ctvwvr2qt.6 
  6. Hugh Deane (১৯৯৯)। The Korean War, 1945-1953। China Books&Periodicals, Inc। পৃষ্ঠা 54–58। আইএসবিএন 9780141912240 
  7. Merrill, John (১৯৮০)। "Cheju-do Rebellion"। The Journal of Korean Studies2: 139–197। ডিওআই:10.1353/jks.1980.0004 
  8. Deane, Hugh (১৯৯৯)। The Korean War 1945-1953। San Francisco: China Books and Periodicals Inc.। পৃষ্ঠা 54–58। আইএসবিএন 978-0-8351-2644-1 
  9. Kim, Hun Joon (২০১৪)। The Massacre at Mt. Halla: Sixty Years of Truth Seeking in South Korea। Cornell University Press। পৃষ্ঠা 13–41। আইএসবিএন 9780801452390 
  10. Suh, Jae-Jung (১৫ নভেম্বর ২০১০)। TRUTH AND RECONCILIATION IN SOUTH KOREA Confronting War, Colonialism, and Intervention in the Asia Pacific। Published online: Critical Asian Studies। পৃষ্ঠা 509। ডিওআই:10.1080/14672715.2010.515386 
  11. Hideko takayama in tokyo (জুন ১৯, ২০০০)। "Ghosts Of Cheju"newsweek। সংগ্রহের তারিখ ২০০৯-০৩-৩০ 
  12. Song Jung Hee, Islanders still mourn April 3 massacre ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ৪ অক্টোবর ২০১৫ তারিখে, Jeju Weekly, March 3, 2010
  13. Map of Korea: Cheju Island ওয়েব্যাক মেশিনে আর্কাইভকৃত ২০১৬-০৩-০৪ তারিখে The People's Korea. Accessed 8 July 2012
  14. Woo, Kyung; Sohn, Young; Ahn, Ung; Spate, Andy (জানুয়ারি ২০১৩), "Geology of Jeju Island", Jeju Island Geopark - A Volcanic Wonder of Korea, Geoparks of the World (closed), 1: 13–14, আইএসবিএন 978-3-642-20563-7, ডিওআই:10.1007/978-3-642-20564-4_5 

বহিঃসংযোগ[সম্পাদনা]