চেচেন-রুশ সংঘর্ষ

উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
চেচেন-রুশ সংঘর্ষ

রাশিয়ান ফেডারেশনের মধ্যে চেচেন প্রজাতন্ত্র (লাল অংশ)
তারিখআনু. ১৭৮৫–বর্তমান
অবস্থান
অবস্থা

রাশিয়ার বিজয়

  • ২০০০ সাল থেকে চেচনিয়া রাশিয়ার অন্তর্ভুক্ত
অধিকৃত
এলাকার
পরিবর্তন
  • ১৮১৭-৬৪ সালে ককেশীয় যুদ্ধের পর উত্তর ককেশাস টেরেক ওব্লাস্ট হিসাবে রুশ সাম্রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত হয়
    (১৮৬৪–১৯১৭)
  • চেচেন স্বাধীনতা এমআরএনসি
    (১৯১৭–২০)
  • উত্তর ককেশাস সোভিয়েত ইউনিয়নে স্বায়ত্বশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসাবে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে
    (১৯৩৬–৪৪)
  • নাৎসি জার্মানি দ্বারা সমর্থিত অস্থায়ী সরকার
    (১৯৪০–৪৪)
  • উত্তর ককেশাস রাশিয়ান এসএফএসআর এর স্বায়ত্বশাসিত প্রজাতন্ত্র হিসাবে সোভিয়েত ইউনিয়নের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে
    (১৯৫৭–৯১)
  • চেচেন স্বাধীনতা চেচেন রিপাবলিক অফ ইচেকেরিয়া
    (১৯৯১–২০০০)
  • বিবাদমান পক্ষ
    চেচেন বিদ্রোহীরা:
    উইলায়া আল-ককাজ (আইএসআইএল)
    (২০১৫ থেকে)
    বিভিন্ন অন্যান্য দল
     রাশিয়া
    (১৯৯১ থেকে)
    পূর্বেকার:
    ককেশাস আমিরশাহী
    (২০০৭–১৭)
    টেমপ্লেট:দেশের উপাত্ত চেচেন রিপাবলিক অফ ইচেকেরিয়া
    (১৯৯১–২০০৭)
    ককেশাসের মাউন্টেন পিপলস কনফেডারেশন
    (১৯৮৯–২০০০)
    পর্বতমালা প্রজাতন্ত্র
    (১৯১৭–২০)
    ককেশীয় ইমামত
    (১৮২৮–৫৯)
    চেচনিয়া
    (1785–91)
    বিভিন্ন অন্যান্য দল
    পূর্বেকার:
     সোভিয়েত ইউনিয়ন
    (১৯২২–৯১)
     রুশ সোভিয়েত যুক্তরাষ্ট্রীয় সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র
    (১৯১৭–২২)
    রাশিয়া হোয়াইট মুভমেন্ট
    (১৯১৭–২০)
     রুশ সাম্রাজ্য
    (১৭২১–১৯১৭)

    চেচেন-রুশ সংঘর্ষ (রুশ: Чеченский конфликт, Chechenskiy konflikt) হল রাশিয়ার (পূর্বে সোভিয়েত) সরকার এবং বিভিন্ন চেচেন বাহিনীগুলির মধ্যে শতাব্দীব্যাপী চলা দীর্ঘ বিরোধ, যা প্রায়শই সশস্ত্র হত। যদিও আনুষ্ঠানিকভাবে এই অশান্তির শুরু ১৭৮৫ সাল থেকে, কিন্তু যুদ্ধের শুরু আরও অনেক আগেই হয়েছিল।[১][২]

    শুরুতে উত্তর ককেশাসের ওপর রুশ সাম্রাজ্যের তেমন আগ্রহ ছিলনা। তারা তাদের সহযোগী জর্জিয়া এবং শত্রু পারসিক এবং উসমানীয় সাম্রাজ্যের মধ্যে একটি যোগাযোগ রাস্তা হিসাবে একে ব্যবহার করত, কিন্তু এই অঞ্চলে রাশিয়ান ক্রিয়াকলাপের ফলে উত্তেজনা সৃষ্টি হওয়ায়, ১৭৮৫ সালে রাশিয়ান উপস্থিতি বিরুদ্ধে চেচেনে বিদ্রোহ শুরু হয়। এরপর আরও সংঘর্ষ হয় এবং ১৮১৭ সালে ককেশীয় যুদ্ধ শুরু হয়। ১৮৬৪ সালে রাশিয়া চেচেন বিদ্রোহীদের দমন করতে সক্ষম হয়।

    রাশিয়ান গৃহযুদ্ধ এর সময়, চেচেন এবং অন্যান্য ককেশীয় দেশগুলি কয়েক বছর স্বাধীনভাবে বসবাস করছিল, অবশেষে ১৯২১ সালে তাদের সোভিয়েতায়ন করা হয়। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়, চেচেনরা সোভিয়েত শাসনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার জন্য, জার্মান আক্রমণের সুযোগ নিয়েছিল। এর জবাবে তাদের এন মাস (দলবদ্ধ ভাবে) মধ্য এশিয়াতে নির্বাসিত করা হয়, তারা সেখানে ১৯৫৭ সাল পর্যন্ত থাকতে বাধ্য হয়।

    চেচেন এবং রাশিয়া সরকারের মধ্যে সবচেয়ে সাম্প্রতিক সংঘাত ১৯৯০ এর দশকে ঘটে। সোভিয়েত ইউনিয়ন বিচ্ছিন্ন হওয়ায়, চেচেন বিচ্ছিন্নতাবাদীরা ১৯৯১ সালে স্বাধীনতা ঘোষণা করে। ১৯৯৪ সালের শেষের দিকে, প্রথম চেচেন যুদ্ধ শুরু হয় এবং দুই বছর যুদ্ধের পর রাশিয়া ঐ অঞ্চল থেকে বাহিনী থেকে প্রত্যাহার করে নেয়। ১৯৯৯ সালে, যুদ্ধ পুনরায় শুরু হয় এবং পরের বছর রাশিয়ান নিরাপত্তা বাহিনীর চেচনিয়ার উপর নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার পর শেষ হয়।

    উৎপত্তি[সম্পাদনা]

    উত্তর ককেশাসের একটি পার্বত্য অঞ্চল, যেখানে চেচনিয়া আছে, সেটি রাশিয়া এবং মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য ও যোগাযোগের রাস্তাগুলোর কাছাকাছি অবস্থিত। হাজার হাজার বছর ধরে এর নিয়ন্ত্রণের জন্য বিভিন্ন ক্ষমতার মধ্যে যুদ্ধ হয়ে এসেছে। [৩] অঞ্চলটিতে রাশিয়ার প্রবেশের শুরু ১৫৫৬ সালে জার ইভান দ্য টেরিবলের গোল্ডেন হোর্ডের খানাতেস অফ কাজান এবং আস্ট্রাকান বিজয়ের সূত্র ধরে। এর পরে ইরান, উসমানীয় সাম্রাজ্য এবং ক্রিমিয়ান খানাতে সহ অন্যান্য সমসাময়িক শক্তির সাথে উত্তর ককেশাসের পথগুলির নিয়ন্ত্রণের তাদের জন্য দীর্ঘ সংগ্রাম শুরু হয়েছিল।[৪] রাশিয়ার অন্তর্বর্তী বিভেদ, ১৮তম শতাব্দী পর্যন্ত, কার্যকরভাবে এই অঞ্চলে তার ক্ষমতা প্রবর্তনে বাধা হয়ে দাঁডিয়েছিল; যাইহোক, ইভানের বিজয়ের পর রাশিয়ান-সহযোগী কজাকস উত্তর ককেশাস নিম্নভূমিতে বসতি স্থাপন করতে শুরু করে। কিন্তু চেচেনের ঐতিহ্যবাহী পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিকূল জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এই সময়ে সেই অঞ্চলের অধিবাসীরা নিম্নভূমিতে বসতি স্থাপন করছিল, [ক] [৫][৬]এর ফলে এদের মধ্যে উত্তেজনা এবং মাঝে মাঝে সংঘর্ষ শুরু হয়।

    ১৭৭৪ সালে, রাশিয়া, উসমানীয়দের কাছ থেকে, ওসেটিয়ার ওপর এবং এটির সাথে কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ডারিয়েল পাসের ওপর নিয়ন্ত্রণ লাভ করে। কয়েক বছর বাদে, ১৭৮৩ সালে, রাশিয়া জর্জিয়ার সঙ্গে জর্জিভস্কের চুক্তি স্বাক্ষর করে, এর ফলে, প্রতিকূল মুসলিম রাষ্ট্র দ্বারা পরিবৃত খ্রিস্টান ছিটমহল জর্জিয়া রাশিয়ান আশ্রিত রাজ্যে পরিণত হয়। চুক্তির অধীনে তার বাধ্যবাধকতা পূরণ করতে, রাশিয়া সম্রাজ্ঞী গ্রেট ক্যাথারিন, পথটি রক্ষা করার জন্য অনেকগুলি সামরিক দুর্গ তৈরীর পাশাপাশি ডারিয়েল পাসে জর্জিয়ান মিলিটারি রোড নির্মাণ শুরু করেন।[৭] তবে এই কার্যক্রমগুলি চেচেনকে শত্রুতে পরিণত করেছিল। তারা এই দুর্গগুলিকে পর্বতমালার ঐতিহ্যবাহী অঞ্চলে দখলদারী হিসাবে এবং একটি সম্ভাব্য হুমকি হিসাবে দেখছিল।[৮]

    রাশিয়ান সাম্রাজ্যের সঙ্গে চেচেন দ্বন্দ্ব[সম্পাদনা]

    শেখ মনসুর বিদ্রোহ ও পরবর্তীকাল ১৭৮৫-১৭৯৪[সম্পাদনা]

    শেখ মনসুর

    প্রায় একই সময়, শেখ মনসুর নামে একজন চেচেন ইমাম, ইসলামের একটি পবিত্র সংস্করণের প্রচার শুরু করেন এবং উত্তর ককেশাসের বিভিন্ন পার্বত্য অঞ্চলের অধিবাসীকে উৎসাহিত করতে থাকেন ইসলামের অধীনে ঐক্যবদ্ধ হয়ে আরও বিদেশী দখলদারী থেকে নিজেদের রক্ষা করার জন্য। তার ক্রিয়াকলাপগুলি রাশিয়ানরা এই অঞ্চলে তাদের নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির বিপক্ষে হুমকি হিসাবে দেখছিল, এবং ১৭৮৫ সালে, একটি বাহিনী পাঠানো হয়েছিল তাকে ধরার জন্য। ব্যর্থ হয়ে, তার গ্রামের বাড়ি তারা পুড়িয়ে ফেলে। কিন্তু মনসুরের অনুসারীরা তাদের প্রত্যাবর্তনের সময় অতর্কিতে আক্রমণ চালিয়ে তাদের শেষ করে দেয়। এটি ছিল প্রথম চেচেন-রাশিয়ান যুদ্ধের শুরু। যুদ্ধ অনেক বছর চলে, মনসুর বেশিরভাগ গেরিলা কৌশলে যুদ্ধ চালান এবং রাশিয়ানরা চেচেন গ্রামে আরও দমনমূলক অভিযান চালায়। শেষপর্যন্ত ১৭৯১ সালে মনসুর ধরা পড়েন, এবং বন্দী অবস্থায় ১৭৯৪ সালে তার মৃত্যুর সঙ্গে সঙ্গে এই যুদ্ধ শেষ হয়। [৯][১০]

    ১৮০১ সালে, আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ায় জর্জিয়ার সংযুক্তি, এই অঞ্চলের প্রতি রাশিয়ার প্রতিশ্রুতিকে আরও গভীর করে।[১১][যাচাই প্রয়োজন] এর পরবর্তী সময়ে, ককেশাসের মধ্যে রাশিয়ান বাহিনীর ওপর চেচেন যোদ্ধাদের ক্রমবর্ধমান সংখ্যক ছোটো ছোটো অতর্কিতে হামলার ফলে রাশিয়ানরা চেচেন অঞ্চলে দুটি বড় সামরিক অভিযান পরিচালনা করে। দুটিতেই পরাজিত হয়ে রাশিয়ান নেতারা আরো কড়া পদক্ষেপ নেবার কথা ভাবতে শুরু করেন। ১৮১২ সালে নেপোলিয়নের রাশিয়া আক্রমণের ফলে এগুলো স্থগিত করা হয়।[১২]

    ককেশীয় এবং ক্রিমীয় যুদ্ধ, ১৮১৭-৬৪[সম্পাদনা]

    জেনারেল ইয়েমোলোভ (বামদিকে) এবং ইমাম শামিল (ডানদিকে)

    ১৮১২ সালের যুদ্ধে ফরাসি নেপোলিয়ন বাহিনীর হাতে রাশিয়ার পরাজয়ের পর, জার প্রথম আলেকজান্ডার উত্তর ককেশাসের দিকে আরও একবার তার দৃষ্টি দিলেন। তার সর্বাধিক বিখ্যাত জেনারেলদের একজন ইয়েমোলোভের হাতে দায়িত্ব দিলেন এই অঞ্চলের শান্তি স্থাপন করার জন্য। ১৮১৭ সালে, ইয়েমোলোভের অধীনে রাশিয়ার বাহিনী ককেশাসের ওপর রাশিয়ার বিজয় কাকেশাসের উপর বিজয় লাভ করে।[১৩] ইয়েমোলোভের নৃশংস কৌশল, যার মধ্যে অর্থনৈতিক যুদ্ধ, যৌথ শাস্তি ও জোরপূর্বক নির্বাসন অন্তর্ভুক্ত ছিল, প্রাথমিকভাবে সফল হয়েছিল, কিন্তু এর প্রতিক্রিয়া হিসাবে চেচেন সমাজ ও সংস্কৃতির উপর রাশিয়ান প্রভাবের পর চেচেনের দীর্ঘস্থায়ী শত্রুতা নিশ্চিত হয়ে যায়। ১৮২৭ সাল পর্যন্ত ইয়েমোলোভ কমান্ড থেকে মুক্তি পান নি।[১৪][১৫]

    ১৮২৮ সালে যখন মুরিডিজম আন্দোলন শুরু হলে এই আন্দোলনে একটি বাঁক আসে। এটির নেতৃত্ব দেন ইমাম শামিল। ১৮৩৪ সালে তিনি ইসলামের অধীনে উত্তর ককেশাসের জাতিগুলিকে একত্রিত করেছিলেন এবং রাশিয়ার বিরুদ্ধে "পবিত্র যুদ্ধ" ঘোষণা করেন।[১৬] ১৮৪৫ সালে শামিলের বাহিনী ডারগো যুদ্ধে হাজার হাজার রাশিয়ান সৈন্য এবং জেনারেলকে ঘিরে ধরে এবং হত্যা করে। এর ফলে রাশিয়ান সৈন্য পিছু হটতে বাধ্য হয়। [১৬]

    ১৮৫৩-৫৬ এর ক্রিমিয়ান যুদ্ধের সময়, চেচেনরা রাশিয়ার বিরুদ্ধে উসমানীয় সাম্রাজ্যকে সমর্থন করেছিল।[১৬] তবে, অভ্যন্তরীণ উপজাতীয় দ্বন্দ্বগুলি শামিলকে দুর্বল করে তোলে এবং ১৮৫৯ সালে তিনি বন্দী হন।[১৭] ১৮৬২ সালে রাশিয়া চেচনিয়া ও অন্যান্য ককেশীয় জাতিগত গোষ্ঠীর স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়াতে যুদ্ধের আনুষ্ঠানিক পরিসমাপ্তি ঘটে।[১৭] যাইহোক, চেচনিয়া এবং উত্তরের ডাগেস্টান সহ পার্শ্ববর্তী অঞ্চলকে রাশিয়ার টেরেক ওব্লাস্টএর অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল।

    রাশিয়ান গৃহযুদ্ধ এবং সোভিয়েত সময়ের[সম্পাদনা]

    রাশিয়ান বিপ্লব এর পর, উত্তর ককেশাসের পাহাড়ী মানুষ উত্তর ককেশাস পর্বতমালার প্রজাতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করতে এসেছিল। ১৯২১ সাল পর্যন্ত এটি চলেছিল, তারপর তারা সোভিয়েত শাসন গ্রহণ করতে বাধ্য হয়। যোসেফ স্তালিন ব্যক্তিগতভাবে ১৯২১ সালে ককেশীয় নেতাদের সাথে আলোচনায় বসেছিলেন এবং সোভিয়েত রাষ্ট্রের ভিতরেই ব্যাপক স্বায়ত্তশাসনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। পাহাড়ি স্বায়ত্বশাসিত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র সেই বছর তৈরি হয়েছিল, কিন্তু ১৯২৪ সাল পর্যন্ত এটি স্থায়ী হয় এবং তারপর এটি বিলুপ্ত করে ছয়টি প্রজাতন্ত্র নির্মিত হয়।[১৮] চেচেন-ইঙ্গুশ স্বায়ত্বশাসিত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র ১৯৩৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল। ১৯২০ এর দশকের শেষ দিকে, সংগ্রহীকরণের সময় চেচেন এবং সোভিয়েত সরকারের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়েছিল ১৯৩০ এর দশকের মাঝামাঝি সময়ে স্থানীয় নেতাদের গ্রেফতার বা হত্যা করার পর এটি কমে যায়।[১৯] ১৯৩২ সালের শুরুতে চেচেন বিদ্রোহ শুরু হয় এবং মার্চ মাসে বিদ্রোহীরা পরাজিত হয়।

    দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ[সম্পাদনা]

    নাৎসি জার্মানি ১৯৪১ সালের জুন মাসে সোভিয়েত ইউনিয়ন আক্রমণ করেছিল। সোভিয়েত সূত্র মতে, চেচেনরা ভেম্যাটে যোগদান করে, যদিও, এই দাবি বিতর্কিত, কারণ এর সপক্ষে বিশেষ কোন প্রমাণ পাওয়া যায় নি।[১৯] ১৯৪৩ এর জানুয়ারির মধ্যে, জার্মানদের পশ্চাদপসরণ শুরু হয়, এবং সোভিয়েত সরকার উত্তর ককেশাস থেকে চেচেন এবং ইঙ্গুশদের নির্বাসন নিয়ে আলোচনা শুরু করে। ১৯৪৪ এর ফেব্রুয়ারিতে, লাভার্নিটি বেরিয়ার সরাসরি আদেশবলে, প্রায় অর্ধ মিলিয়ন চেচেন এবং ইঙ্গুশকে তাদের বাড়ি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয় এবং জোরপূর্বক মধ্য এশিয়ায় বসতি স্থাপন করতে বাধ্য করা হয়। তাদের জোর করে কাজাখস্তান এবং কিরগিজিয়ার শ্রম শিবিরে রাখা হয়েছিল।[২০] ১৯৫৩ সালে স্তালিনের মৃত্যুর পরে, নিকিতা ক্রুশ্চেভ ক্ষমতায় আসেন এবং তার পূর্বসূরীর প্রতি নিন্দা প্রকাশ করেন।

    জাতিগত সংঘর্ষ (১৯৫৮–৬৫)[সম্পাদনা]

    ১৯৫৭ সালে, চেচেনদের নিজেদের বাড়িতে ফেরার অনুমতি দেওয়া হয়। চেচেন-ইঙ্গুশ স্বায়ত্বশাসিত সোভিয়েত সমাজতান্ত্রিক প্রজাতন্ত্র পুনর্নির্মাণ করা হয়।[২১] ১৯৫৮ সালে একটি রাশিয়ান নাবিক এবং একটি ইঙ্গুশ তরুণের মধ্যে একটি মেয়েকে নিয়ে দ্বন্দ্ব হয়, যাতে রাশিয়ান মারাত্মকভাবে আহত হয়। এই ঘটনাটি দ্রুত জাতিগত দাঙ্গার রূপ নেয়। স্ল্যাভিক জনতা চেচেন এবং ইঙ্গুশদের আক্রমণ করে এবং ৪ দিনএই ধরে এই অঞ্চলে ব্যাপক লুটপাট চালায়।[২২] জাতিগত সংঘর্ষ ১৯৬০ এর দশক জুড়ে চলেছিল, এবং ১৯৬৫ সালে ১৬টি সংঘর্ষের খবর নথিবদ্ধ হয়েছিল, যাতে ১৮৫ জন মারাত্মক আহত হয়েছিল এবং ১৯ জনের মারাত্মক আঘাতে মৃত্যু হয়েছিল।[২২] ১৯৬০ সালের শেষের দিকে, এই অঞ্চল শান্ত হয় এবং চেচেন-রাশিয়ান সংঘাত প্রায় বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ১৯৯০ সালে সোভিয়েত ইউনিয়নের বিভাগের পর চেচেন যুদ্ধ শুরু হয়।

    সোভিয়েত যুগের পরবর্তী অধ্যায়[সম্পাদনা]

    চেচেন যুদ্ধ[সম্পাদনা]

    বোরজ সাবমেশিন বন্দুক হাতে একটি চেচেন যোদ্ধা, ১৯৯৫

    ১৯৯১ সালে, চেচনিয়া স্বাধীনতা ঘোষণা করে এবং চেচেন রিপাবলিক অফ ইচকেরিয়া নামকরণ করা হয়। কিছু সূত্র অনুযায়ী, ১৯৯১ থেকে ১৯৯৪ পর্যন্ত, অ-চেচেন জাতিগত জনগোষ্ঠীর হাজার হাজার মানুষ (বেশিরভাগ রাশিয়ান, ইউক্রেনীয় এবং আর্মেনিয়ান) অ চেচেন জনসংখ্যার বিরুদ্ধে সহিংসতা এবং বৈষম্যের ফলে এই প্রজাতন্ত্র ছেড়ে চলে যায়।[২৩][২৪][২৫] অন্যান্য কিছু উৎস আবার এই যাওয়াকে এই সময়ের বিশেষ কোন ঘটনা বলে স্বীকার করেনা, পরিবর্তে তারা চেচনিয়ার গার্হস্থ্য পরিস্থিতির অবনতিক, চেচেন প্রেসিডেন্ট ঝোখার দুদাইভের আক্রমণাত্মক রাজনীতি এবং রাশিয়ান প্রেসিডেন্ট বরিস য়েলৎসিনের রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষাকে দায়ী করে।[২৬][২৭] ১৯৯৪ সালে রাশিয়ান আর্মি গ্রজনি প্রবেশ করে,[২৮] কিন্তু, দুই বছরের তীব্র যুদ্ধের পর, রাশিয়ান সৈন্যরা অবশেষে চেচনিয়া থেকে খাসাভিয়ার চুক্তি অনুযায়ী সৈন্য প্রত্যাহার করে নেয়।[২৯] চেচনিয়া তার 'ডি ফ্যাক্টো' স্বাধীনতা রক্ষা করে কিন্তু ১৯৯৯ সালে আবার দ্বিতীয় যুদ্ধ শুরু হয়।[৩০]

    ১৯৯৯ সালে, চেচেনের ইসলামী শক্তির ডাগেস্তান আক্রমণের প্রতিক্রিয়ায় রাশিয়ার সরকারী বাহিনী চেচনিয়ায় একটি সন্ত্রাসবিরোধী প্রচার শুরু করে।[৩০] ২০০০ সালের প্রথম দিকে রাশিয়া প্রায় পুরোপুরি গ্রজনি শহর ধ্বংস করেছিল এবং চেচনিয়াকে মস্কোর সরাসরি নিয়ন্ত্রণে রাখতে সফল হয়।[৩০] নর্মান নাইমার্ক এর মতে, "গুরুতর প্রমাণ ইঙ্গিত দেয় যে, রাশিয়ার সরকার ১৯৯০ এর দশকের মাঝামাঝি, যুদ্ধে পরাজিত হলে চেচেনদের নির্বাসনের পরিকল্পনা করেছিল।"[৩১]

    আখমদ কাদিরভ (ডানদিকে), পূর্বেকার নেতৃস্থানীয় বিচ্ছিন্নতাবাদী মুফতি, ২০০০ সালে দল পরিবর্তন করেছিলেন

    চেচেন বিদ্রোহ[সম্পাদনা]

    ২০০০ সালের মে মাসে দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে, বিশেষ করে চেচনিয়া, ইঙ্গুশেটিয়া এবং ডাগেস্তানে অল্পমাত্রার বিদ্রোহ চলছিল। রাশিয়ার নিরাপত্তা বাহিনী তাদের কিছু নেতা, যেমন শামিল বাসায়ভ কে হত্যা করে ফেলতে সফল হয়েছিল, তিনি ১০ই জুলাই, ২০০৬ তারিখে নিহত হন।[৩২] বাসায়ভের মৃত্যুর পর, ডক্কা উমারভ ২০১৩ সালে বিষক্রিয়ায় মৃত্যুর আগে পর্যন্ত, উত্তর ককেশাসে বিদ্রোহী বাহিনীর নেতৃত্ব দেন।[৩৩]

    চেচনিয়া এবং অন্যান্য উত্তর ককেশীয় প্রজাতন্ত্রের মৌলবাদী ইসলামপন্থীরা সারা রাশিয়া জুড়ে সন্ত্রাসী হামলার জন্য দায়ী বলে মনে করা হয়,[৩৪] বিশেষকরে ১৯৯৯ সালে রাশিয়ান অ্যাপার্টমেন্ট বোমা হামলা,[৩৫] ২০০২ সালে মস্কো থিয়েটার পণবন্দী সংকট,[৩৬] ২০০৪ সালে বেসলান স্কুল পণবন্দী সংকট, ২০১০ সালের মস্কো মেট্রো বোমা হামলা[৩৭] এবং ২০১১ সালে ডোমোডেডোভো আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর বোমা হামলা[৩৮][৩৯]

    বর্তমানে, চেচনিয়া এখন রাশিয়ান নিযুক্ত নেতা রমজান কাদিরভের শাসনের অধীনে রয়েছে। যদিও তেল সমৃদ্ধ অঞ্চলটি কাদিরভের অধীনে আপেক্ষিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে, সমালোচক ও নাগরিকদের বক্তব্য অনুযায়ী সংবাদপত্রের স্বাধীনতা হরণ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক ও মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগে তাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। এই চলমান রাশিয়ান শাসনের কারণে, এলাকার বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীগুলি দ্বারা ছোটখাটো গেরিলা হামলা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে, এই অঞ্চলে ইসলামী রাষ্ট্রের সাথে জিহাদী দলগুলির সংযুক্তিকরণ।[৪০]

    হতাহত[সম্পাদনা]

    পর্যাপ্ত নথির অভাবে এবং সংঘর্ষের দীর্ঘ সময়কালের কারণে এই সংঘর্ষের সঠিক ক্ষয়ক্ষতি নিরূপন করা কঠিন। এক উৎস থেকে জানা যায় যে,১৯৯০ এবং ২০০০ এর দশকে প্রথম এবং দ্বিতীয় চেচেন যুদ্ধে অন্তত ৬০,০০০ চেচেন নিহত হয়। [৪১] চেচিনিয়ার অন্তর্বর্তীকালীন পার্লামেন্টের প্রধান, টস জাবরাইলভের মতে অন্তত ১৫০,০০০ বা ১৬০,০০০ পর্যন্ত চেচেন মারা যেতে পারে।[৪২]

    তথ্যসূত্র[সম্পাদনা]

    সূচী
    1. Namely, the Little Ice Age.[৫]
    উদ্ধৃতিসমূহ
    1. "Chronology for Chechens in Russia"University of Maryland। ২০১৩-১২-২০ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৩ 
    2. "Chechnya – Narrative" (পিডিএফ)University of Southern California। ২০১৬-০৯-০২ তারিখে মূল (পিডিএফ) থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ১২ জুলাই ২০১৩Russian military involvement into the Caucasus started early in the 18th century and in 1785–1791 the first major rebellion in Chechnya against the imperial rule took place. 
    3. Schaefer 2010, পৃ. 49–50।
    4. Schaefer 2010, পৃ. 51–54।
    5. Schaefer 2010, পৃ. 52–53।
    6. Dunlop 1998, পৃ. 4–6।
    7. Schaefer 2010, পৃ. 54–55।
    8. Schaefer 2010, পৃ. 55–57।
    9. Schaefer 2010, পৃ. 55–58।
    10. Dunlop 1998, পৃ. 10–13।
    11. Dunlop 1998, পৃ. 13।
    12. Schaefer 2010, পৃ. 58।
    13. Shultz 2006, পৃ. 115।
    14. Daniel, পৃ. 13–18।
    15. Schaefer 2010, পৃ. 58–61।
    16. Shultz 2006, পৃ. 116।
    17. Shultz 2006, পৃ. 117।
    18. Shultz 2006, পৃ. 118।
    19. Shultz 2006, পৃ. 119।
    20. Shultz 2006, পৃ. 120–121।
    21. Shultz 2006, পৃ. 121।
    22. Seely, R. Russo-Chechen conflict, 1800–2000: A Deadly Embrace. Frank Cass Publishers. 2001.
    23. O.P. Orlov; V.P. Cherkassov। "সংরক্ষণাগারভুক্ত অনুলিপি" Россия — Чечня: Цепь ошибок и преступлений (Russian ভাষায়)। Memorial। ৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৭ তারিখে মূল থেকে আর্কাইভ করা। সংগ্রহের তারিখ ৭ জুলাই ২০১৯ 
    24. Kempton 2001, পৃ. 122।
    25. Smith 2005, পৃ. 134।
    26. King 2008, পৃ. 234–237।
    27. Ware 2005, পৃ. 79–87।
    28. Kumar 2006, পৃ. 61।
    29. Kumar 2006, পৃ. 65।
    30. James 2001, পৃ. 169।
    31. Naimark, Norman M. (২০০২)। Fires of Hatred: Ethnic Cleansing in Twentieth-century Europe। Cambridge, Mass: Harvard Univ. Press। পৃষ্ঠা 106। আইএসবিএন 9780674009943 
    32. Parsons, Robert (৮ জুলাই ২০০৬)। "Basayev's Death Confirmed"Radio Free Europe/Radio Liberty। সংগ্রহের তারিখ ৮ জুলাই ২০১৩ 
    33. Rogio, Bill (২৫ জুন ২০১০)। "US designates Caucasus Emirate leader Doku Umarov a global terrorist"Long War Journal। সংগ্রহের তারিখ ১০ জুলাই ২০১৩After Basayev's death in 2006, the Chechen and Caucasus jihadists united under the command of Doku Umarov, one of the last remaining original leaders of the Chechen rebellion and a close associate of al Qaeda. 
    34. Williams, Carol J. (১৯ এপ্রিল ২০১৩)। "A history of terrorism out of Chechnya"Los Angeles Times। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩ 
    35. Feifer, Gregory (৯ সেপ্টেম্বর ২০০৯)। "Ten Years On, Troubling Questions Linger Over Russian Apartment Bombings"। Radio Free Europe/Radio Liberty। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩ 
    36. Krechetnikov, Artem (২৪ অক্টোবর ২০১২)। "Moscow theatre siege: Questions remain unanswered"। BBC News। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩ 
    37. "Chechen rebel claims Moscow attacks"Al Jazeera। ৩১ মার্চ ২০১০। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩ 
    38. "Chechen terrorist claims responsibility for Domodedovo Airport bombing"Russia Today। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩ 
    39. "Chechen warlord Doku Umarov admits Moscow airport bomb"। BBC News। ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১১। সংগ্রহের তারিখ ১৩ জুলাই ২০১৩ 
    40. "Chechnya profile"। ১৭ জানুয়ারি ২০১৮ – www.bbc.com-এর মাধ্যমে। 
    41. Crawford ও Rossiter 2006, পৃ. 99।
    42. "Russia: Chechen Official Puts War Death Toll At 160,000"। Radio Free Europe/Radio Liberty। আগস্ট ১৬, ২০০৫। সংগ্রহের তারিখ ৪ অক্টোবর ২০১৭ 

    গ্রন্থপঞ্জী[সম্পাদনা]